#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সকাল সারে সাতটার দিকে আরহামদের বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো আরুহি গিয়ে দরজা খুলতে গেল এতো সকালে কে এলো। আরুহি দরজা খুলে আনোয়ার খান আর উনার স্ত্রী কে দেখে তো পুরো অবাক । তারা এখানে কেন? আরুহি তাদের দেখে মুচকি হেসে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম দাদুভাই দাদিজান!”
আনোয়ার খান বললেন,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“ভেতরে আসুন। আপনারা কেমন আছেন? আর আপনারা আসবেন আমাদের বলবেন তো?”
আনোয়ার খান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,
“আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি! আর ছেলের বাড়িতে আসবো নাতি নাতনি আর নাতবউ কে দেখতে আবার বলে আসতে হবে নাকি। আর সবাই কই? তুমি কেমন আছো?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ভাইয়া কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছে তাই এখনো ঘুমাচ্ছে। আর ভাবির ও ভালো ঘুম হয় নি। তাই এখন ও ঘুমাচ্ছে। তা অবশ্য ঠিক বলেছেন আমাদের দেখতে আসবেন বলতে হবে নাকি।
তখন আনোয়ার গিন্নি বললেন,,
“এই সময় রাতে একটু ঘুম কমই হয়। আসলে নাত বউয়ের খবর পেয়েই তো এলাম। তোদের দেখতে কিন্তু তোরা আরো আগে আমাদের জানালি না কেন?”
“আসলে দাদি জান একটু সময় নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম কখন কি হয় বলা তো যায় না। তাই বলিনি!”
“ওহ আচ্ছা।”
“আপনারা ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি নাস্তা দিচ্ছি। এতটা জার্নি করে এসেছেন নিশ্চয়ই ক্লান্ত লাগছে!”
“হ্যা তা তো একটু লাগছেই।”
“বড়চাচা কিংবা শিহাব ভাইয়া কে নিয়ে আসতেন আপনারা একা একা এখানে আসতে গেলেন কেন?”
“আর বলিস না তোর দাদুভাই একাই একশো। শিহাব চেয়েছিল আমাদের সাথে আসতে। কিন্তু তিনি বললেন তিনি এখনো চলতে পারে বিছানায় পড়ে যায় নি যে তাকে কোথাও যেতে হলে কাউকে দিয়ে আসতে হবে। অগত্যা আমরা দুই বুড়ো বুড়ি একাই এলাম।”
“আপনারা এসেছেন আমি খুব খুশি হয়েছি দাদি জান। এখন যান আমার রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসুন ততক্ষনে আমি আমেনা চাচি কে দিয়ে আপনাদের রুম পরিস্কার করে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আনোয়ার খান আর আনোয়ার গিন্নি আরুহির রুমে গেল। আরুহি আমেনার থেকে রান্নার দায়িত্ব নিয়ে ওনাকে পাঠালো তাদের রুম পরিস্কার করতে। কিছুক্ষণ পর তারা ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো। তাদের বয়স হলে কি হবে এখনো শক্ত পোক্ত আছেন তারা। আরুহি তাদের ড্রাইনিং টেবিলে বসিয়ে নাস্তা দিল। তখন আরহাম আর আফরিন নিচে আসলো। আরহাম আর আফরিন হুট করে তাদের দেখে অবাক হয়ে গেছে। আরহাম আর আফরিন এসে তাদের সালাম দিল। কুশল বিনিময় করলো তারপর আরহাম বলল,,,
“তা দাদুভাই আপনারা কি রাতের ট্রেনে এসেছেন?”
“হ্যা কেন?”
“ঐ এমনি! আপনাদের দেখে খুশি হলাম।”
তখন আনোয়ার গিন্নি বললেন,,,
“তা নাতবউ শুনলাম তো জমজ বাচ্চা হইবো। তোমার কি খাইতে মন চায় আমারে বলো আমি রাইন্দা তোমারে খাওয়ামু!”
তখন আরুহি বলল,,
“আর দাদি জান বলবেন না। ভাবি তো তেমন কিছুই খেতে পারে না। জোর করে খাওয়াতে হয়।’
“আর কইয়ো না নাতবউ আহমদ যখন আমার পেটে ছিল আমিও খাইতে পারতাম না। তোমার দাদুভাই খালি আমারে বকাঝকা করতো কেন খাইনা। আমার জন্যে নাকি তার পুলাপাইন খাইতে পারতেছে না।”
তখন আফরিন বলল,,
“আপনার নাতি ও তাই বলে দাদি জান।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“বাবার কাছে তার সন্তান যে কিরকম সেটা শুধু বাবারাই জানে তোমরা তো মেয়েমানুষ সহজেই সব প্রকাশ করতে পারো কিন্তু ছেলেমানুষ তা পারেনা।”
তখন আরুহি বলল,,
“ঠিক বলেছেন দাদুভাই নারীরা অভিমানে মনের সবটা বলে দিতে পারলেও পুরুষ তা পারে না।
পাওয়া না পাওয়ার গল্প গুলো আড়ালে রেখে নিজের মানুষদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যায়!”
আরুহির কথা শুনে আনোয়ার খান ওর দিকে তাকালো। তা দেখে আরুহি মুচকি হাসলো। কি আছে সেই হাসিতে সেটা তিনি জানেন। তিনিও মুচকি হাসলো কিন্তু সেই হাসিটা কি প্রানবন্ত ছিল, নাকি না পাওয়ার যন্ত্রনা। আরুহি আর কথা বাড়ালো না। ওরা সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষে আনোয়ার গিন্নি একটা বোতল নিয়ে এলেন। আর আফরিন কে খেতে বললেন তখন আরহাম বলল,,
“এই বোতলে কিসের পানি দাদি জান। পড়াপানি নাকি যদি ভুলভাল পড়া পানি থাকে তাহলে আফরিন খাবে না কিন্তু!”
“পড়াপানি না এটা হচ্ছে পবিত্র জমজমের পানি। তোমরা তো জানোই কয়েক দিন আগে আমি আর তোমার দাদুভাই হজ্জ থেকে ফিরেছি তখন এই পানিটা নিয়ে এসেছিলাম। তাই নিয়ে এসেছি তোদের জন্য! তোরা জানিস তো, “জমজমের পানি” যে যেই উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা অবশ্যই পূরণ হবে!
-ইবনে মাজাহ-৩০৬২!
নাতবউ তুমি তোমার মন থেকে কোন একটা কিছু ভেবে আল্লাহর নামে পানিটুকু খাও ইনশাআল্লাহ আল্লাহ পাক সেটা কবুল করবে।”
“আমাদের দিবেন না। শুধু কি নাতবউয়ের জন্যই এনেছেন নাকি!”
“তোদের জন্যও এনেছি। এই নে আর আরুহি তুই বরং তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা ভেবে পানি পান করিস। ”
“আপনি আবার আমার বিয়ে নিয়ে পড়লেন কেন?”
“বয়স হয়েছে আর কতোদিন আছি জানিনা কখন রবের ডাক এসে পড়ে। মরার আগে যেনো তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারি।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“আহ হা হচ্ছে টা কি? শুধু শুধু ওদের মন খারাপ করে দিচ্ছো! এসব রাখো চলো ওপরে যাই একটু রেস্ট নিতে হবে।”
“হুম চলুন।”
“ওহ হো দাদুভাই তোমাদের বলা হয় নি। আজ আফরিনদের বাড়ির লোক আসছে।”
“সে তো খুব ভালো কথা। ওদের সাথেও দেখা হয়ে যাবে।”
“হুম আপনারা এখন গিয়ে রেস্ট নিন। ওরা এলে আমি খবর পাঠাবো। ওরা বোধহয় দুপুরের আগে আসবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
ওনারা ওপরে চলে গেলেন। তখন আরহাম বলল,,
“কি হয়েছে বলতো আরুহি ওনারা হুট করে আমাদের বাড়িতে এলেন তাও আবার আমাদের কিছু না বলে। উনি কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন। আমি যা ভাবছি তুই ও কি তাই ভাবছিস।”
“হুম সেটাই হবে হয়তো। তবে সে যে আমাদের খুব ভালোবাসে সেটায় সন্দেহ নেই।”
তখন আফরিন বলল,,
“এই তোমরা দুজন কি ভাবছো?” আমাকেও বলো আমিও শুনি।”
“ভাবলাম কিভাবে একজন কে ভালোবেসেও আরেকজন কে দায়িত্বের সহিত ভালোবেসে সংসার করা যায়।”
“আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।খুলে বলুন।”
“তোমার এই ছোট্ট মাথায় এতো চাপ নিতে হবে না।”
“আপনারা দুই ভাই-বোন সবসময় আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করেন। ধুর আমি আজ বাবা এলে তার সাথে চলে যাবো। যেখানে আমাকে কেউ পাত্তা দেয় না। আমি সেখানে থাকবো না।”
“আরে আমরা কখন আন্ডারেস্টিমেট করলাম। তোমার কষ্ট হবে ভেবে আমি বললাম মাথায় বেশি চাপ দিও না।”
“আমার ভালো আপনার দেখতে হবে না।আপনি আপনার টা দেখুন।”
তখন আরুহি বলল,,
“ভাইয়া ওকে ছেড়ে দাও। এখন ওর মুড সুয়িং হচ্ছে। এখন তুমি যা বলবে তাই ও উল্টো বুঝবে তার থেকে বরং তুমি তোমার দোষ শিকার করে চুপ থাকো। নাহলে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে নেবে।”
“এই আরু কি বললি আমি বাড়ি মাথায় উঠিয়ে নেই। কথাই বলবো না তোদের সাথে আজ একবার বাবা আসুক আমি আর থাকবো না এখানে।”
“সরি আফা আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেন!”
“আবার আমাকে ভেঙাসিস। এটাকে সরি বলে।”
“সরি ভাবি মাফ করে দিন। এবার ঠিক আছে।”
“হুম ঠিক আছে।”
“যাক এবারকার মতো মাথা ঠান্ডা হয়েছে। এখন যান ওপরে গিয়ে রেস্ট নিন। আরেকটু পর আপনার বাপের বাড়ির লোকজন এসে পরবে।”
“ঠিক আছে যাচ্ছি। কিন্তু মনে যেনো থাকে আমাকে আর আন্ডারেস্টিমেট করবি না। নাহলে সত্যি সত্যি বাপের বাড়ি চলে যাবো।”
আফরিন আস্তে আস্তে রুমে চলে গেল। তখন আরহাম বলল,,,
“সাবাশ মেয়েরা তোমরা ধন্য। তোমাদের মুড সুইং হলে কোথা থেকে কথা কোথায় চলে যায়। সেদিন তো আফরিনের মুখ সুইং এর ঠেলায় আমার সংসারটাই ভাঙতে বসে ছিল। কোনরকম মাফ চেয়ে ফিরেয়েছি।”
“এই সময়টা মেয়েদের মুড সুইং হয় ।”
“সেই জন্যই তো ছেড়ে দেই। নাহলে আমি আরহাম কাউকে ছেড়ে দেয় নাকি।”
“হুম বুঝতে পেরেছি আমার ঝগরুটে ভাই। তা কাল সব বাজার হয়ে গেছে না কিছু বাকি আছে। তুমি যা যা এনেছো আমি সব আমেনা চাচি কে বুঝিয়ে দিয়েছি।”
“আর কিছু বাকি নেই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ভাবির কাছে যাও। আমি রান্নাঘর টা দেখছি।”
“হুম!”
____________________
দুপুরবেলা নাহিয়ান খান তার পরিবার কে নিয়ে হাজির। সবাই এসেছে আরুহি আরহাম সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। আফরিন সোফায় বসে ছিল সবাই ওর সাথে দেখা করলো। আর মিস্টি সে তো শুধু আফরিনের পাশে বসে আফরিন কে বলছে,,
“ফুপি আমি যা বলবো ওরা শুনতে পাবে।”
“সবে তো চার মাস এখনো ওদের মনে হয় কান হয় নি তাই শুনতে পাবে না।”
“ওহ আচ্ছা আমি কতো কি বলতে চাইছিলাম। আচ্ছা থাক আরেকটু বড় হয়ে নিক তারপর সব বলবো।”
“তা কি বলবি শুনি?”
“ওটা তোমাকে বলা যাবে না সিক্রেট।”
“ওহ আচ্ছা!”
“কিন্তু বলতে তো হবে আমার সামনেই।”
“আমি তো আস্তে আস্তে ওদের কানে কানে বলবো। তোয়ার সামনে বললেও শুনতে পাবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বলিস।”
তখন আরুহি সবার জন্য হালকা নাস্তা নিয়ে এলো। আর আরুহি বলল,,
“আংকেল দাদুভাই আর দাদিজান এসেছে আমি গিয়ে ওনাদের ডেকে নিয়ে আসি। ততক্ষনে আপনারা এগুলো শেষ করুন।”
“কাকা এসেছে !”
তখন আরহাম বলল,,
“হ্যা বাবা দাদুভাই আজ সকালেই কাউকে কিছু না বলেই এসেছে।”
“ওহ আচ্ছা! ঠিক আছে আরুহি তুমি তাদের কে ডেকে নিয়ে এসো। অনেক দিন হলো তাদের সাথে কথা বলা হয় না।”
আরুহি ওপরে গিয়ে তাদের ডেকে আনলো। নাহিয়ান খান তাদের দেখে বললেন,,
“আসসালামু আলাইকুম কাকা!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো তোমরা সকলে?’
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।”
“তা তোমরা খাওয়া দাওয়া করেছো?”
“এই তো হালকা নাস্তা করছি।”
আরুহি আবরারের হাতে একটা বাটি তুলে দিয়ে বলল,,
“আরে মিস্টার আপনি তো খাচ্ছেন-ই না।”
“যাক শেষ মুহূর্তে ম্যাডামের আমার দিকে নজর পরেছে।”
“আজ একটু অন্যরকম মুডে আছেন দেখছি?”
“সরি মিস আপনার কথা মতো আমি অপেক্ষা করলেও আমার পরিবার অপেক্ষা করলো না। সেবারের মতো এবারো আমার কথা শুনলো না।”
“মানে?”
“মানে আজই বুঝতে পারবেন মিস।”
“আমাকে রহস্যময়ী বলেন অথচ আজ নিজেই রহস্য করে কথা বলছেন!”
“আপনার বাতাসে হয়ে গেছি আর কি?”
“এত হেঁয়ালি করছেন কেন?”
“জানিনা তবে ব্যপারটা আমার কাছে মন্দ লাগছে না।”
“ধুর আপনি থাকেন আমার কাজ আছে!”
এই বলেই আরুহি ওখান থেকে চলে গেল। তা দেখে আবরার মুচকি হেসে বলল,,,
কাউকে শেষ অবদি চাওয়া আর পাওয়াটাই
হচ্ছে পৃথিবীর শেষ্ঠতম ভালোবাসা !
আর আমিও তোমায় খুব তাড়াতাড়ি পেতে চলেছি।
________________________
দুপুরের সবার খাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসলো। তখন হুট করে নাহিয়ান খান বললেন,,
“ভালোই হয়েছে সবাই এখানে আছে । আর কাকা আর কাকি ও আছে। আজ আমি শুধু এখানে আফরিন কে দেখতে আসিনি আরেকটা কারনেও এসেছি!”
তখন আরহাম বলল,,
“কি কারন বাবা? আমাদের তো আগে কিছু বলেন নি?”
“আসলে আরহাম আমি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এই কথাটা বলবো। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। তাই ভাবলাম আর দেরি না করি?”
“কি কথা বাবা?”
“আসলে আমরা চাইছিলাম আবরার আর আরুহির বিয়ে দিতে। তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা আরুহিকে আমাদের বাড়ির বউ করতে চাই।”
আরহাম আরুহির দিকে তাকালো। আরুহি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরুহি এখন আবরারের কথার মানে বুঝতে পারলো। ও খুশি না দুঃখী কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আবরার ও আরুহির দিকে তাকিয়ে আছে। ও আরুহির মতি গতি কিছুই বুঝতে পারছে না। মুহুর্তেই পরিবেশ একবারে শান্ত হয়ে গেল। নাহিয়ান খান বললেন,,
“আরহাম কিছু বলছো না কেন? তোমাদের কি প্রস্তাবটা পছন্দ হয় নি।”
তখন আরহাম বলল,,
“এখানে আমার কিছু বলার নেই। সম্পূর্ন জিনিস টাই আরুহির ওপর কারন জীবনটা ওর । ও যা বলবে তাই হবে।”
“তাহলে আরুহি তোমার কি মত?’
তখন আরুহি বলল,,
“সেসব কিছু পরে বলছি তার আগে আমার মিস্টার নিশান এর সাথে একটু কথা আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আর নিশান কথা বলো তারপর এসে আমাকে জানাও তোমার কি মত। নিশানের মত আমি জানি।”
আরুহি কিছু বললো না। আরুহি আবরার কে বলল “ছাদে আসুন। ”
আরুহি ছাদে গেল আবরার ও গেল। তবে আবরার একটু ভয়ে আছে মনে হয় আরুহি এত তাড়াতাড়ি সব মানতে পারছে না। আবরার গিয়ে বলল,,
“আপনি বিশ্বাস করুন। আমি বলেছিলাম আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি।”
“আপনার অনুভূতির কথা তারা জানতে পারলো কিভাবে মিস্টার নিশান?” নিশ্চয়ই তারা আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জ্ঞাত নাহলে আংকেল এভাবে বলতেন না।”
“আরে আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?”
“আমি রাগছি না নিশান কিন্তু কেন যেন সব বিরক্ত লাগছে!”
“আসলে সেদিন রাতে ছাদে আমরা কথা বলার সময় হুট করে মিসেস খান কোন একটা কারনে ছাদে গিয়েছিলেন। আমরা অবশ্য এটা বুঝতে পারিনি। উনি সেদিন আমার অনুভূতির কথা শুনেছিলেন। আর সেটাই মিস্টার খান কে বলেছে। পরশুদিন রাতে এ কথা আমাকে জানায়। আমি তখন বলেছিলাম আরো কিছুদিন সময় নিতে কিন্তু তারা খুব তাড়াতাড়ি করতে চায়।”
আরুহি সব শুনে বলল,,
“বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি তো এখন এসব কিছু চাই না।”
“আপনি কি ভয় পাচ্ছেন মিস।”
“আপনি জানেন আমি কেন বলেছি NS জীবন থেকে সরে গেলে আমরা কেন বিয়ে করবো। কারন আমি জানি না শেষে আমাদের সাথে কি হবে। তার সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে আমি মারাও যেতে পারি আমার এ জীবনের কোন গ্যারান্টি নেই। আমি চাইনা আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে আপনাকে জরাতে। আমি নিশ্চিত ভাবে আপনার জীবনে আসতে চাই। আপনার চোখে আমি আমার জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা দেখেছি। আমাকে না পেয়ে যদি আপনি হাড়িয়ে ফেলেন তাহলে আপনি বেশি দুঃখ পাবেন না। কিন্তু আমাকে যদি পেয়েও হাড়িয়ে ফেলেন তাহলে আপনি সেটা সহ্য করতে পারবেন না। এমনিতেও আগে থেকেই আপনি জীবনে কম কিছু সহ্য করেন নি। না পেলে নিজেকে সামলানো যায় কিন্তু পেয়ে হাড়িয়ে ফেলার থেকে বড় কোন কষ্ট হয় না।”
আবরার বুঝতে পারল আরুহির অবস্থা।আরুহির চোখ পানিতে চিকচিক করছে। আবরার মুচকি হেসে বলল,,
“আমাকে ভালোবাসেন মিস!”
“জানি না!”
“কেন জানেন না আপনি আমার জন্য এত চিন্তা করছেন কি এমনি এমনিই। এগুলো কি তাহলে?”
“আমি সত্যিই জানি না। তবে এটা জানি আমি আমার অগোচরে না আমার সজ্ঞানেই আপনার শহরে রেখেছি পা। উঁহু #তোর_শহরে_রেখেছি_পা!”
“বাহ আপনি থেকে একবারে তুই তে চলে গেছেন।”
“উঁহু আপনি থেকে তুই তে যাই নি আপনার রুমের ডায়রিটার কথা মনে করে বললাম নামটা আমার পছন্দ হয়েছে।”
“আপনি আমার ডায়রি দেখেছেন?”
“না শুধু নামটা দেখেছি! তার মানে আপনি আমার অগোচরে আমাকে তুই বলেন।”
“আরে না আমি আপনাকে শুধু তুই বলি না! আপনি , তুমি, তুই বলি সবগুলোই বলি যখন যেটা ইচ্ছে হয় আর কি!”
“এটা আবার কিরকম হেঁয়ালি!”
“ভালোবাসার মানুষ কে সব রকম সম্বোধন করা যায়। তা আপনি হোক ,তুমি হোক বা তুই!”
“তা অবশ্য ঠিক।”
“তা মিস আমার অনুভূতি তো প্রকাশিত কিন্তু আপনার টা যে এখনো অপ্রকাশিত। আমি আপনার অনুভূতির কথা শোনার জন্য কতো কাল ধরে অপেক্ষা করছি।”
“সব কথা মুখে বলতে হয় না। থাকনা কিছু অপ্রকাশিত।”
“অনুভূতি প্রকাশ করলে সম্পর্ক মিস্টি হয়। এবার বলুন!
“বাইরের সৌন্দর্য একটি উপহার! কিন্তু ভেতরের সৌন্দর্য একটি অর্জন! যেটা আপনি আমার কাছে অনেক আগেই অর্জন করেছিলেন।”
“ভাঙবেন তবুও মচকাবেন না।”
আরুহি মুচকি হেসে বলল,,
“আমি আপনার জন্য বাগানবিলাসের রুপ নিয়ে বসে থাকবো, আপনি না হয় বাতাস হয়ে আমার ভালোবাসার রং পুরো শহরে ছড়িয়ে দিয়েন!”
আবরার আরুহির কথা শুনে মুচকি হাসলো আর বলল,,
“আমি মুগ্ধ হয়েছি তোমার ওই মাতাল করা মুচকি হাসিতে, আমি মায়ায় পড়েছি তোমার ওই চোখেতে,, আমি ভালোবেসেছি তোমার ব্যক্তিত্বকে!”
“এবার নিচে যাওয়া যাক।”
“আরে আপনি কি বলবেন নিচে গিয়ে সেটাই তো বললেন না।”
“সেটা নাহয় নিচে গিয়েই শুনতে পাবেন।”
“আপনি এখনো আমার কাছে রহস্যময়ী কন্যা হয়েই রয়ে গেলেন!”
আরুহি কিছু বললো না মুচকি হেসে নিচে চলে গেল। আবরার ও নিচে চলে এলো কিন্তু আবরারের মুখে মুচকি হাঁসি রয়েছে। আরুহি নিচে গিয়ে বলল,,
“আংকেল আমি এ বিয়েতে রাজি তবে আমাদের বিয়েটা কখন হবে সেটা সঠিক বলতে পারছি না। তবে আমরা ডেট জানিয়ে দেব পরে। ”
“যাক আলহামদুলিল্লাহ! ধন্যবাদ মামনি আমাদের কথা রাখার জন্য।”
আবরার আরুহির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আরুহির কানে কানে বলল,,
“ধন্যবাদ মিস যেটুকু বলেছেন সেটুকুর জন্যই।”
আরুহি কিছু বললো না মুচকি হাসলো। বিকেলে সবাই চলে গেল। সবাই যাওয়ার পরে আরুহি আরহাম কে রুমে ডাকলো। আরহাম রুমে আসতেই আরুহি বলল,,
“তুমি সব জানতে?”
“কি জানতাম?”
“একদম আমার কাছে স্মার্ট সাজার চেষ্টা করবে না।”
“তুই সব বুঝে যাস! আবরার তোকে প্রপোজ করার আগে আমাকে বলেছে। যেদিন ও ডাক্তার হলো সেদিন ও আমাকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে ডাকে। তারপর জানায় তোকে পছন্দ করে । আমি বলেছি আমার বোন তোমাকে পছন্দ করলে আমার কোন অসুবিধা নেই।”
“তাই তো বলি তুমি নাহিয়ান খানের কথা শুনে অবাক হলেও না কেন। তা আমার উত্তর কি হয়েছে সেটা বলেনি তোমায় মিস্টার নিশান আবরার?
“আমার বোন কেমন সেটা আমি জানি। তার উত্তর কি হতে পারে সেটাও জানি তাই শোনার প্রয়োজন বোধ করি নি।”
তখন আফরিন এলো আরুহির রুমে। আফরিন বলল,,
“ভাইয়া কিন্তু আমাকেও বলেছিল তোকে প্রপোজ করার আগে?”
“হুম ভালো।”
“আমি খুব খুশি তুই আমার ভাবি হবি!”
“হুম ভালো!”
“কি হুম ভালো ভালো করছিস!”
“হুম ভালো।”
“এই তুই কি ভাবসিস বলতো?”
“কিছুই না তোমরা এখন রুমে যাও। আমি একটু ঘুমাবো।”
“এই অবেলায়?”
“কিছু কিছু জিনিস অবেলায় ভালো। আপাতত আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।এক মিনিট দাদুভাই আর দাদিজান কোথায়?”
“কোথায় আবার রুমে !”
“তাহলে ঘুম ক্যানসেল একটু দাদা দাদির সাথে গল্প করে আসি।”
“তোকে বোঝা আমাদের কাজ নয়। কখন কি বলিস আর করিস বুঝতে পারি না।”
“তোমরাও চলো একটু আড্ডা দিয়ে আসি!”
“ঠিক আছে চল।”
আরুহি আফরিন আর আরহাম দাদুভাই এর রুমে গেল। আরহাম বলল,,
“দাদুভাই আসবো?”
“আরে এসো তোমাদের বাড়ি তোমরা অনুমতি নিচ্ছো কেন?”
ওরা ভেতরে ঢুকলো। তখন আরুহি ওর দাদিজান এর সামনে গিয়ে বলল,,
“দাদিজান আমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দিন। আপনার কথা শুনে আমি জমজমের পানি না খেলেও আমার বিয়ের কথা হলো। এর কারন কি আপনি কি আমার বিয়ের কথা ভেবে জমজমের পানি খেয়েছেন?
“আল্লাহ চেয়েছেন তোমার বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি হয় তাই হয়েছে।”
“যাই হোক এখন আমাদের কে আপনাদের বিয়ের গল্প বলুন !”
আরুহিরা ওনাদের সাথে বসে গল্প করলো। প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ওরা গল্প করলো আজকেই প্রথম আরহাম আর আরুহি ভালোভাবে তাদের সাথে মিশলো। আরুহিরা সন্ধ্যায় যার যার রুমে গিয়ে নামাজ পড়ে নিল।
____________________
আফরিন আর দাদিজান ঘুমিয়ে পড়েছে। ড্রয়িংরুমে আরহাম আরুহি আর আনোয়ার খান মুখোমুখি বসে আছে। হুট করে আনোয়ার খান বললেন,,
“আমি তো ওকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম তাহলে ও কেন আমার সাথে এরকম করলো। আমার ছেলে মেয়েকে মেরে ফেললো।”
তখন আরহাম বলল,,
“উনি আপনাকে ভালোই বাসেনি দাদুভাই। উনি শুধু আপনাকে পেতে চেয়েছেন। ভালোবাসা এটাকে বলে না দাদুভাই।”
“হ্যা আজ হয়তো অন্যকারো সাথে সংসার করছি কিন্তু তাকে তো আমি আজও আমার মনের গহীনে লুকিয়ে রেখেছি। তোমার দাদি জান এর ওপর যাতে অন্যায় না হয় তার জন্য আমি তার দায়িত্ব পালনের সবরকম চেষ্টা করেছি।”
তখন আরুহি বলল,,
“আপনি দাদি জানের ওপর কোন অন্যায় করেন নি। কিন্তু আপনার প্রথম ভালোবাসা সে আপনাকে ভালোবাসে নি। সত্যিকারের ভালোবাসা হলো তার প্রিয় মানুষটাকে সুখী দেখতে চাওয়া তার থেকে কোন প্রতিদান এর আশা করা না। প্রত্যাশার চাপে একসময় ভালোবাসা মরে যায়। তিনিও তাই করেছে আপনার ভালোবাসাকে মেরে ফেলেছে। আপনি নাহয় আপনার বাবার চাপে বিয়ে করেছেন কিন্তু সে কি করেছে সে তো নিজ ইচ্ছায় পরে গিয়ে বিয়ে করেছে। এবং তার পরের ঘরের সন্তান ও ছিল এমন কি সে হলো নওশাদ শিকদার। ওরফে NS এর ছোট ভাই নওশাদ শিকদার। NS এর পুরো নাম নয়না শিকদার। শিকদার হচ্ছে রোজিনা শিকদার এর বাবার বংশের নাম। আর ওরা ওদের নানার সারনেম শিকদার টাই ইউজ করে। ”
“কি নয়না শিকদার!”
“হুম নয়না শিকদার!
“কিন্তু আপনি সব জানলেন কিভাবে দাদুভাই যে আপনার মেয়েই NS ?”
“বাড়ি থেকেই জেনেছি আনোয়ার খান ওদের সব খুলে বলল। ***************************সবার শেষে বলল,, তবে এটাও জানি সে তোমাদের ওপর খুব তাড়াতাড়ি অ্যাটাক করবে!”
“তাই আপনি এখানে তাই তো?”
“হুম তাই।”
“ভালোই হলো NS এর আর কষ্ট করতে হলো না।”
“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো।”
“আপাতত আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।আমি আর ভাইয়া দেখছি।”
আনোয়ার খান রুমে চলে গেল। তখন আরুহি বলল,,
“ভাইয়া রুহানি আপু কে ফোন করো তো!”
______________________
দুই দিন পর,,
—-ব্রেকিং নিউজ,,
সি আই ডি অফিসার আরহাম মাহমুদ ও তার পরিবার কে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে তাদের দাদা আনোয়ার শিকদার ও তার স্ত্রী ছিলেন তাদের কেউ অপহরণ করা হয়েছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে নাহিয়ান খান এর ছেলে নিশান আবরার তার বোন কে দেখতে গিয়েছিলেন উনাকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরহাম মাহমুদ খান এর স্ত্রী আফরিন চার মাসের প্রেগন্যান্ট।সি আই ডি, পুলিশ সবাই তাদের খোঁজার চেষ্টা করছে। তাদের বাড়ির ফ্লোরে একটু রক্ত ও পাওয়া গেছে সেখানে অফিসার আরহাম এর বোন আরুহি খানের রক্ত সনাক্ত করা গেছে। সি আই ডি রা আশংকা করছেন হয়তো আরুহি কে তুলে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তি তে হয়তো কোথাও কেটে গেছে। তাদের কে যে অপহরণ করা হয়েছে সেটা তাদের বাড়ির সামনে সি সি টিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে সি আই ডি সনাক্ত করেছেন। আর আশেপাশের লোকজন ও তাই বলেছে। আপাতত সবাই তাদের খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা কোন ক্লু পাচ্ছে না।
~চলবে,,