দখিনা দুয়ারে প্রেমের ছোয়া পর্ব-১১+১২

0
120

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ১১ (❌কপি করা নিষেধ❌)

আশেপাশের সবাই কানাঘুসো করছে। আজকাল এর ছেলেমেয়েরা পারেও বটে। বিয়ের আগে একসাথে গায়ে হলুদ দিবে, আবার আলাদা দেখাও করছে। গ্রামে অবশ্য এসব বিষয় একদমই নরমাল নয়।

নবনী মুখে মিথ্যা হাসি রেখে হলুদের স্টেজে বসে আছে। আর এক এক করে সবাই মুগ্ধকে হলুদ লাগিয়ে পরে ওর কাছে আসছে। এইতো একটু আগে মুগ্ধ ওকে নিয়ে বাড়িতেই ফেরত আসল। তবে কাউকে কিছু ভাবতে দেয়ার আগেই সে সবাইকৃ বলে উঠে,

“আজকাল শহরে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একসাথেই হয়। তাই আমরা ভাবলাম আমাদেরটাও একসাথে হোক।”

অনেকের কাছে বিষয়টা ভালো লাগলেও গ্রামের কারো কারো কাছে বিষয়টা দৃষ্টিকটু। বিয়ের আগে বর কণের মিলামেশা একদমই ঠিক নয়। তবে শাওনকে দিয়ে মুগ্ধ আগে থেকেই সব ম্যানেজ করে রেখেছিল। ও বাড়ির লোক এসেই বলেছে, তারা ছেলেকেও সাথে নিয়ে এসেছে। ছেলে মেয়ের একসাথে হলুদ দিবে বলে। সবকিছু এত দ্রুত হয়েছে যে, কেউ কিছুই টের পায় নি।

তবে নবনীর মায়ের কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে নবনীর উপর। মেয়েটা কি কিছু লুকাচ্ছে।

“নবনী।”

নবনীর বুকটা আতকে উঠে। না জানি মাকে কি উত্তর দিবে।

“সত্যি করে বলতো তুই কোথায় ছিলি? আসতে এতো সময় লাগলো কেন?”

নবনী আমতা আমতা করে বলে, “আসলে পিছনে বৃষ্টিতে পিছলা হয়ে ছিল তো। তাই পড়ে গিয়েছিলাম। সব পরিষ্কার করে আসতে আসতে একটু দেরী হলো।”

“তাহলে নাফিজা গিয়ে তোকে বাড়িতে কোথাও পায় নি কেন? কত ভয় পেয়েছিলাম জানিস?”

নবনী ওর মায়ের মুখের দিকে তাকায়। পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে সে কতটা ভয় পেয়েছিল। নবনী নিজের ভুল বুঝতে পারে। পরিবারের কথা না ভেবে আবেগের বশে সে যা করতে যাচ্ছিল সেটা একদমই ঠিক নয়। তার একটা ভুলের শাস্তি পুরো পরিবারকে পেতে হতো। মনে মনে মুগ্ধকে একটা থ্যাংকস দেয় সে।

এদিকে শাওন মুগ্ধকে হলুদ লাগাতে গিয়ে কানে কানে বলে,

“ভাই বখশিশ কিন্তু দিয়ো। সমাজের চোখে তোমাকে বিয়ে ভাঙা পুরুষ হওয়া থেকে বাচালাম।”

মুগ্ধ ইশারা দিয়ে বুঝালো এখন এসব না বলতে। শাওনও ভদ্র ছেলের মতো পাশে বসে একটার পর একটা ফল, মিষ্টি সব পেটের ভিতর চালান করে দিচ্ছে। আর ভাবছে আজ বিকেলের কথা। ভাগ্যিস সে আগে থেকেই সবটা জানতে পেরেছিল।

বিকেলের ঘটনা..

“এইজন্যই শীত আমার কাছে ভাল লাগে না। একতো বৌ নেই, তার উপর তাড়াতাড়ি আশেপাশে অন্ধকার নেমে যায়। ঠিক আমার ভবিষ্যতের মতো।”

একা একা বকবক করতে করতে যেতে থাকে শাওন। কি সব ফুল হাবিজাবি কিনা বাকি। মেইন রোডে কাজ চলছে, মানে ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যেতে হবে।

“কি কপাল আমার। শত্রুপক্ষের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হচ্ছে।”

শাওন বিহানদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে থাকে। বিহানদের বাছুরগুলো সব বাধা। গোবর দিয়ে একপাশ পুরু নোংরা হয়ে গিয়েছে। যদিও এই পাশে তেমন একটা কেউ আশে না হয়ত এজন্য।

“নবনীকে আমি ঠিকই নিজের করে নিবো। মুগ্ধ কিছুই করতে পারবে না।”

বিহানের কন্ঠে এমন কথা শুনে থেমে যায় শাওন। তার মুগ্ধ ভাইকে নিয়ে কিছু বলছে নাকি এই বিহানের বাচ্চা? শাওন দেখে গাছের একপাশে বিহান হেলান দিয়ে ফোনে কথা বলছে। শাওন আরেকটা গাছের আড়াল থেকে কান পেতে শুনার চেষ্টা করে কি বলছে।

“আরে আজ রাতেই সব হবে।”

বিহান একে একে নবনীকে নিয়ে কীভাবে পালাবে সব প্লান বলতে থাকে। শাওনের চোখ কপালে উঠে যায়। যেভাবে হোক মুগ্ধ ভাইকে সব বলতেই হবে, তবে সমস্যাটা হয় বাছুরটাকে নিয়ে। হঠাৎ একটা ছাগলের বাচ্চা আস্তে আস্তে ঘাস খেতে খেতে শাওনের কাছে চলে আসে। আর তখনই হঠাৎ বাছুরটা শাওনের পশ্চাৎ বরাবর দেয় একটা গুতা।

“ও মা গো!”

বিহান তাড়াতাড়ি ফোন রেখে পিছনে তাকায়। চিৎকার করল কে? বিহান কে কে বলে চেচাতে থাকে। তবে শাওন দেয় চোখ কান বুঝে উল্টো পথে দৌড়। ফলসরূপ শাওনে পা গিয়ে পড়ে গোবরের উপর।

সে ব আকারে একটা শব্দ উচ্চারণ করে দেয় দৌড়। এখন পায়ের কথা ভাবলে চলবে না। এক দৌড়ে মেইন রাস্তায় উঠে একটা অটোর সামনে পড়ে।

“মামা গাড়ি থামাও। আমারে লইয়া মেম্বারগো বাড়ি চলো। তাড়াতাড়ি।”

এতক্ষণ বসে সেসব কথাই ভাবছিল শাওন। ভাগ্যিস সে সবটা যেনে মুগ্ধ ভাইকে বলে দিয়েছিল। নয়ত না জানি কি হয়ে যেত।

এদিকে মাহির মেজাজ পুরো খারাপ। নবনী মেয়েটা একতো শিক্ষিত, দ্বিতীয়ত শহুরের মেয়ে। স্মার্ট আর বুদ্ধিমান হবে নিশ্চয়ই। এতে শ্যামলীর মতো কথা শুনানো যাবে না।

“মুগ্ধকে আমি তোকে কেড়ে নিতে দিবো না।”

নবনীর দিকে তাকিয়ে বলে মাহি। আর ভাবে এখন একটু কথা শুনানো যাক মেয়েটাকে। তবে সেটা আর হয়ে উঠে না স্নিগ্ধর জন্য। সে আর শ্যামলী নবনীর দুপাশে বসে আছে। ওরা জানে, মাহি নবনীকে একা পেলে ভুলভাল ঠিকই বুঝিয়ে দিবে।

এদিকে গানের তালে তালে সবাই নাচছে। নাফিজা খুব সুন্দর করে একটা হলুদ লেহেঙ্গা পড়েছে। সেও গান ছেড়ে মনমতো নাচতে থাকে। তবে চোখে চোখে বিহানকে খুজে।

উঠতি বয়স মেয়েটার। টিনেজ বয়সের প্রথম ভালো লাগা। মাত্র এইটে পড়ে। প্রেম, ভালোবাসা সম্পর্কে আইডিয়া নেই একদমই। তবু এইটুকু বুঝে বিহান ভাইকে তার ভালো লাগে। নিজের ছোট ছোট টেলেন্ড, নিজের সৌন্দর্য, সবকিছু যেন বিহানের চোখে পড়ে সেটা চায়।

অথচ বিহান ভাই তার থেকে কত বড়। তার দিকে এমন ভাবে তাকায়, সে একটা ছোট্ট বাচ্চা।

সব অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবে শেষ হলো। হলুদের পর্ব শেষে খিচুড়ি খেয়ে সবাই যারযার বাসায় চলে গিয়েছে। ছেলে পক্ষের সবাইও রওনা দিয়ে দিয়েছে।

নবনী রুমে এসে একা একা ভাবে,

“বিহান ভাই কোথায় গেল? একবারও দেখলাম না তাকে। কি করেছে মুগ্ধ তার সাথে?”

এসব ভাবতে ভাবতেই নবনী ঘুমিয়ে যায়। আজ আর পালানো হলো না।
…….

রাত প্রায় তিনটা। মুগ্ধ তার রুমে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।

“আজব তো ঘুম কেন আসছে না আমার?”

মুগ্ধ বারবার ভাবছে বিয়েটা করা কি ঠিক হচ্ছে। এই মেয়ে বিয়ের পর পালাবে না তার কি গ্যারান্টি? আর মুগ্ধ যে নবনীকে কথা দিয়ে এসেছে।

সত্যিই যদি নবনীর কথা সত্য হয়, তবে শর্ত মতে তাকে মুগ্ধ মুক্ত করে দিবে। কি আশ্চর্য তাই না! তাদের বিয়েই হয় নি। অথচ এখনি ছেড়ে দেয়ার ভয়।
…….
এত রাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছে স্নিগ্ধর। সে শ্যামলীর দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা খুব সাবধানে মাঝখানে কোলবালিশ রেখে একপাশে গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে।

স্নিগ্ধ কোলবালিশ সরিয়ে শ্যামলীকে জড়িয়ে ধরে একটু কাছে টেনে নেয়।

“আহহহ!”

স্নিগ্ধ তাড়াতাড়ি শ্যামলীর মুখ চেপে ধরে বলে,

“কি হয়েছে? আমিই তো।”
“আমি ভেবেছিলাম বোবা ভূত।”

“বোবা ভুত জড়িয়ে ধরে?”

“জানিনা।”

“জানতে হবে না। কাছে আসো। অন্য জিনিস জানাই।”

“আপপ….”

আর কিছু বলতে পারে না শ্যামলী। স্নিগ্ধ এখদম ওকে কাছে টেনে নেয়।

( আমরা জানি তারা কি করছে। তাই লেখার দরকার নেই।)

পরেরদিন দুপুরবেলা….

মেম্বার বাড়িতে সবাই খুব ব্যস্ত। বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা। বৌ আনতে যাবে। স্নিগ্ধ শ্যামলীকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে। খোপায় ফুল গুজে দিয়েছে। মাহির অবশ্য এসব একদম ভালো লাগছে না। একবার তো মুখ খুলে বলেই বলে,

“কালির আবার এতো সাজ কিসের?”

স্নিগ্ধও জবাব দেয়,

“তোর মতো মেকাপ সুন্দরী পেতনির মুখে এসব মানায় না।”

মাহি রাগে রুমে চলে যায়। এদিকে মুগ্ধ….

#চলবে…

গল্পের নাম : #দখিনা_দুয়ারে_প্রেমের_ছোয়া
লেখনীতে : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্বসংখ্যা : ১২ (❌কপি করা নিষেধ❌)

লাল পানজাবির উপর গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানিটা পড়তে পড়তে মুগ্ধ আয়নার দিকে তাকায়। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে বলে উঠে,

“কাম অন মাই বয়। আজ একটা বিশেষ দিন। তোর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলোর একটি। আজ তোকে এতটাই ঘাবড়ে গেলে চলবে না। লেটস ডু ইট।”

মুগ্ধ চুলটা ঠিক করে গায়ে আতর লাগিয়ে নেয়। হাসিটা আরেকটু প্রশস্ত করে, পিছনে ফিরে তাকায়। মুগ্ধর মা হাসি মুখে হাতে একটা বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

“এদিকে আয় তো। হা কর।”

“এখন আবার কী?”

“রসমালাই। শুভ কাজের আগে একটু মিষ্টিমুখ করে নে।”

কয়েক চামচ রসমালাই খাইয়ে, দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দেয় মুগ্ধর মা।

“যা নিচে যা সবাই রেডি হয়ে আছে।”

মুগ্ধ মাকে সালাম করে নিচে চলে যায়। মুগ্ধদের বাড়িটা দোতলা। টিন আর কাঠের। তবে এডজাস্ট বাথরুম, গোসলখানা এসব এখনো বানানো হয়নি। সব কাজ পিছনের পুকুরের কাছে গিয়েই করতে হয়। বাড়ির একদম সামনে উঠোনের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা চলে যায়। সেখানে বিয়ের গাড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মুগ্ধ নেমে দেখে সবাই রেডি। স্নিগ্ধ একটা হাসি দিয়ে বলে,

“ভাই চল। তোর বৌটাও নিয়ে আসি।”

মুগ্ধ কিছু না বলে লজ্জামাখা মুখে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিচে নামে। বাহিরে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পা বাড়ায়। এখন সব ঠিকঠাক হলেই হলো।
……

নবনী আজ একটা টকটকে লাল জামদানি শাড়ি পড়েছে। মুখে ভারি মেকাপ, গয়নার বাড়ে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা। নবনীর মা কান্না করা চোখের কোনা থেকে একফোটা কাজল নিয়ে নবনীর কানের গোড়ায় লাগিয়ে দিলো।

“মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর লাগছে তোকে। কারো নজর যেন না লাগে আমার মেয়েটার উপর।”

নবনী কিছু বলে না। সে জানে তার মায়ের খুব কান্না পাচ্ছে। নবনীও সকালে খুব কেদেঁ ছিল। তবে এখন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কাদবে না। তার অনুভূতির মূল্য যখন কেউ দিতেই পারবে না, সেখানে খামোখা কান্না করে কষ্ট কেন পাবে সে। নাহ, একদমই কাদবে না নবনী।

“আপু, বিয়ে করে আমাদের ভুলে যাস না কিন্তু।”

নাফিজার কথায় আরো দুর্বল হয়ে পড়ে নবনী। এমন একটা পরিবেশে, এমন মানুষদের সাথে সে কীভাবে থাকতে পারবে। এমন সময় বাহিরে হট্টগোল শোনা গেল। নবনীর কাজিনরা সবাই গেট ধরে দাড়িয়ে আছে।

মুগ্ধরা কী এসে গিয়েছে? নিজের বুকে একটা চাপা ভয় আর আর্তনাদ অনুভব করতে পারে নবনী। আর কিছুক্ষণ পর এই মানুষটার সাথে সারাজীবনের জন্য সে এক অদৃশ্য বন্ধনে আটকে যেতে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর খাওয়া দাওয়ার জামেলা সব শেষ হয়। নবনীর বুকটা ধরফর করছে। একটু পর না জানি কি হবে! অবশেষে সেই সময় ঘনিয়ে এলো। নবনীর দাদা মেম্বারকে নিয়ে ও একজন কাজী কে নিয়ে নবনির রুমে এলো।

নবনের মামী নবনীর হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,

“কোন ঝামেলা করিস না মা। সুন্দরভাবে কবুল বলে দিস।”

কাজি এসে নবনীর ঠিক পাশে বসলো। বিয়ে পড়ানো শুরু করতেই বুক ফেটে কান্না চলে আসে। সে কেন কাদছে? সেতো নিজেকে বলেছিল সে সবার সামনে কান্না করবে না। এত শক্ত মনের মেয়ে সে। হঠাৎ এতটা দুর্বল লাগছে কেন নিজেকে। উত্তর পায় না নবনী।

এদিকে কাজি বারবার তাকে কবুল বলতে বলছে। শেষে নবনী আর সহ্য না করতে পেরে কবুল বলে দেয়। সবাই বলে উঠে,

” আলহামদুলিল্লাহ।”

নবনীর দাদা মতিসুর মেম্বারের সাথে কোলাকোলি করে। নবনীর কান্নার রেশ আরো বেড়ে যায়। যেন তাকে ব/ লি দেয়া হলো। কাজী চলে যায়, মুগ্ধর কাছে বিয়ে পড়াতে।
…….

বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে। নবনীকে ধরে সবাই গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। মুগ্ধ নবনীর মা ও সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে। এক পরিবারে কান্নার রোল, অন্য পরিবারে আনন্দের।

নবনী গাড়িতে উঠেও কান্না থামাচ্ছে না। মাথা নিচু করে কান্না করেই যাচ্ছে। মুগ্ধদের এক গাড়িতে পরিবারের সবাই, অন্য গাড়িতে শাওন, মুগ্ধ, স্নিগ্ধ, শ্যামলী আর নবনী। নবনীর কান্নায় প্রথমে খুব খারাপ লাগলেও এখন কানটা পুরো জ্বালাপোড়া করছে। মুগ্ধ বিরক্ত হয়ে নবনীর কানের কাছে গিয়ে বলল,

“আর এক ফোটা যদি কান্না করছ, আজ রাতে এর তিন গুন বেশি কাদিয়ে ছাড়ব। বলে দিলাম কিন্তু।”

নবনী এই কথা শুনে যেন আরো চিল্লিয়ে কান্না করা শুরু করে। গাড়ির সামনে থেকে শাওন বলে,

“ভাই। ভাবীর কানে কি কইলা? ভলিউম তো বাইরা গেল।”

পাশ থেকে শ্যামলী বলে উঠে,

“আহারে। মেয়েটাকে কেউ বিরক্ত করো নাতো। মুগ্ধ ভাইয়া, নবনীকে চেতাবেন না এখন। প্লিজ। এসময় একটা মেয়ের উপর দিয়ে কি যায়, শুধু মেয়েরাই বুঝবে।”

মুগ্ধ কিছু বলে না। নবনীর একটা হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে শক্ত করে ধরে তার দিকে তাকায়। নবনীর কাদো কাদো চেহারা দেখে খুব কিউট লাগছে মুগ্ধর।

“তুমি কান্নাও করতে জানো? অবিশ্বাস্য ! আরো একটু বেশি করে কাদো। মেয়েদের কান্না দেখলে ছেলেদের ভালো লাগে।”

শেষের লাইনটা যেন ইচ্ছে করেই শুনিয়ে বলে মুগ্ধ। আর কথাটা জাদুর মতো কাজে লেগে যায়। নবনী একদম কান্না থামিয়ে রাগী চোখে মুগ্ধর দিকে তাকায়। মুগ্ধ হাসে। সে জানত এমনই হবে।

যেন চোখ দিয়ে বলতে চাইছে,

“আপনারা পুরুষ জাতটাই এমন। কাদবো না আমি আর। যান।”
…..

মুগ্ধর মা ও শাওনের মা সব কিছু রেডি করেই রেখেছে। মুসলিম পরিবারে সাধারণত বিয়ের পর তেমন আহামরি কোনো রীতিনীতি থাকে না। শুধু আনন্দের জন্য বিয়ের পর ছোটোখাটো কিছু খেলার আয়োজন করা হয়।

যেমন দুধে আংটি খোজা ইত্যাদি। তবে এখন এসব আর করা হবে না। মুগ্ধ কল করে জানিয়ে দিয়েছে, নবনীর শরীর ভালো নেই। এখন আর এসব জামেলা না করতে। দেরী করে বের হওয়ায় আসতে আসতে রাতই হয়ে গিয়েছে।

একটু পর গাড়ি এসে মতিসুর মেম্বারের বাড়ির সামনে থামে। নবনীকে হাত ধরে মুগ্ধ নামায়। তবে কান্না করতে করতে ও এতোটাই ক্লান্ত হয়ে যায়, যে দাড়িয়ে একটু হাটার ক্ষমতা নেই। তার উপরে রাতের বেলা। যদিও নানান লাইটে পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে আছে। মুগ্ধ বুঝতে পেরে সবার সামনেই ওকে কোলে তুলে নেয়। নবনী কিছু বলে না। তার একদমই হুশ নেই।

উপস্থিত সবাই হা করে তাকিয়ে থাকেহ। স্নিগ্ধতো বলেই উঠে,

“ভাই এতোটা নির্লজ্জ না হলেও পারতি। তোরই তো বৌ। আমরা খেয়ে ফেলবো না তো।”

“আরে ও হাটতে পারবে না। তাই।”

“বুজলাম। তবে তুই কেন?”

“মানে?”

“এটা পুরোনত রীতি। নতুন বৌকে ভাসুর কোলে করে নিয়ে ঘর অব্দি দিয়ে আসে। তোকেও কেউ একজন কোলে নিবে।”

“কোন হাদিসে আছে? আর তুইতো ওর কাছে পরপুরুষ। স্বামীর আগে ভাসুর শরীর স্পর্শ করবে এটা কেমন কথা? তোর মনে হয়না, গ্রামের কিছু পুরোনো নিয়ম এখন পাল্টানো উচিত। এসবে তো কারো উপকার হয়ই না উল্টা পাপ হচ্ছে।”

উপস্থিত সবাই মুগ্ধর কথায় সায় দেয়। ঠিকই তো। কিছু কুসংস্কার, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তা এখনো টিকে আছে। মুগ্ধ আরো বলে উঠে,

“দেবর, ভাসুরতো একটা মেয়ের কাছে নন মাহরাম। আর বর কি সবাই পঙ্গু নাকি, যে তাকেও কোলে নিতে হবে?”

“আচ্ছা ভাই। তোর বৌ, তুইই কোলে নিস। এখন ভিতরে চল।”

মুগ্ধ নবনীকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। নবনীকে দাড় করিয়ে বলে,

“এই আমার মা, উনি আমার চাচী। আরেকজন পিছনের গাড়িতে আছে। সে সবার সাথে তেমন একটা মিশে না।”

নবনী গিয়ে শাশুড়ি আর চাচী শাশুড়িকে সালাম করে। কিছু ছোট নিয়ম পালন করে নবনীকে নিয়ে সবাই ঘরে চলে যায়। মুগ্ধর মা নবনীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলে,

“শোন মা। আমার ছেলে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে আমাকে বলবি। ওকে একদম তক্তা বানিয়ে দিবো।”

নবনী হাসে। শাশুড়িকে তার পছন্দ হয়েছে। খুব সরল সোজা মানুষ। নবনীকে একা বাসর ঘরে রেখে সবাই চলে যায়।

নবনী চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে। খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। বিশেষ করে তার রুমটা। গ্রামের মানুষ হলেও কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি। নবনীর শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগে। তার উপরে খিদায় পেটের অবস্থা খারাপ। প্রতিটা মেয়েই বিয়ের রাতে খিদের যন্ত্রণায় ভোগে। তবে কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।

কারো স্বামী ভালো হলে, এই রাতটা একটু যত্ন নেয়। বৌয়ের শরীরের কথা ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। তবে দুর্ভাগ্যবসত, বাস্তবে বেশিরভাগ ছেলেরা এত ভালো হওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। কেউ কেউ তো ভাবে কাবিনের টাকা না দিয়ে বৌকে ছুলেই চলবে। তবে সেটা নাজায়েজ। বৌয়ের হাতে পরিপূর্ণ টাকা তুলে দিয়েই তাকে স্পর্শ করতে হয়। ডিবোর্সের সময় না।

পাশাপাশি একটা মেয়ে পুরো পরিবারকে ছেড়ে, এত অসুস্থ শরীর নিয়ে, নতুন এক জায়গায় চলে এসেছে। সে হিসেবেও তাকে কিছুটা সময় দেয়া উচিত। আচ্ছা, মুগ্ধ কি তাকে জোর করবে?

নবনী এসব ভাবতে ভাবতে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর রাত ১২ টায়….

#চলবে ….