#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১১
দীপা ইউসুফের মাথায় হাত রাখলো। এখন অবশ্য জ্বর নেই। তবে মুখ শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে আছে। সন্ধ্যায় কাঁদায় মাখামাখি করে মাছ ধরেছে আবার বাসায় এসে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল। শরীরে আর কতো সইবে। নিজের যত্নতো এই ছেলে নেয়ই না। বরং রোদ নেই, বৃষ্টি নেই এখানে ওখানে থাকে দৌড়ের উপর।
সে এই বাসায় এসেছে দু-বছরের উপরে। কখনও এই বাসার কারো প্রতি তার আগ্রহ’ই হয়নি। নিজের কষ্টে এতো ডুবে ছিলো। কারোটা আর চোখেই পরেনি। এই ছেলেটা তাঁর আশে পাশে ঘুরতো। মিষ্টি করে ভাবি ডাকতো। তবে সেই ডাক তাঁর শরীরে গরম সীসার মতো পড়তো। সে ভালো লাগলে কথা বলেছে, না লাগলে নেই। তবুও কখনও এরা তাঁর প্রতি বিরক্ত হয়নি। দূরে ঠেলে দেয়নি। বরং তাঁরা ধরেই নিয়েছে। যা খুশি করুক! এটা তাঁদের ভাবি। তাঁর প্রিয় বড় ভাইয়ের একমাএ বউ। তার কোন কিছুতেই কোন দোষ নেই। কোন ভুল নেই।
— আমি ঠিক আছি ভাবি।
দীপা হালকা হাসলো! আস্তে করে বললো,—- হুম! তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
— তোমার শরীর এখন কেমন ? এতো সকালে উঠেছো কেন?
— ভালো!
— আমাদের পুচি পাঁচি কেমন আছে?
— ভালো!
— ওরা তোমাকে খুব জ্বালায় না?
দীপা কিছু বললো না! মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তখনি হাই তুলতে তুলতে দিলশাদ আসলো। এসে ইউসুফের সামনে এসে বললো,– আসসালামু আলাইকুম বেয়াইসাব। কেমন আছেন বেয়াইসাব?
ইউসুফ মুখ ভোঁতা করে বললো, — আমাকে বেয়াই বলবে নাতো।
দিলশাদ আবাক হওয়ার ভান করে বললো,– ওমা বেয়াই কে বেয়াই বলবো নাতো কি বলবো?
ইউসুফ কিছু বললো না। ঠোঁট চেপে চুপ হয়ে রইলো।
দিলশাদ হেসে পাশে বসতে বসতে বললো,– তোমাদের তিনো ভাইয়েদের মধ্যে ফ্রিজিং একটা ভাব আছে। কথা বলতে বলতে জমে যাও। ব্যাপার টা কি?
— জমি টমি যাই করি আমাদের তিন ভাইয়ের মতো ভালো মানুষ আর কোথাও পাবে না।
— ইশ! এসেছে আমার ভালো মানুষ। ভালোতো আমরা। তাইতো এরকম ফ্রিজিং হাতি দেখেও চুপচাপ আছি। তবে তোমার বউ নিয়ে টেনশনে আছি। সেই বেচারি না আবার এতো জমা জমি সহ্য না করতে পেরে ছেনি, খুন্তি নিয়ে মারতে আসে । জমা পুরুষ প্লাস ভালো মানুষ কিন্তু মেয়েদের একদম অপছন্দ। তাঁদের পছন্দ দুষ্টু, হট, স্পইসি।
— আমাদের তিন ভাইয়ের মতো হট, স্পইসি তুমি দূরবীন দিয়ে খুঁজলেও পাবে না। মেজো ভাইকে দেখেছো? আর তাছাড়া তোমরা দু-জন কেন আছো। বউ বেশি তিড়িংবিড়িং করলে দিবে এক ঠেংগানি।
দিলশাদ অবাক হয়ে বললো,– মাগো! মুখতো চলে রকেটের গতিতে। আর ও তোমার ভাবি, সে বাঁচাবে। আমি বাঁচাতে যাবো কোন দুঃখে! বরং আমিতো খুন্তি হাতে নিলে দা দিয়ে বললো, —- নারে বোন, প্রতিদিন এতো কষ্টের দরকার নেই। একদিনেই দফারফা করে দে।
ইউসুফ হেসে ফেললো! হাসলো দীপাও! এই মেয়ে এত্তো ফাজিল। সে দিলশাদের বাহুতে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বললো, — চুপ করবি। তারপর ইউসুফের দিকে তাঁকিয়ে বললো,—- তুমি কি নাস্তা এখানেই করবে ?
— হ্যাঁ! অসুস্থ যখন হয়েছি। পুরো ফয়দাই নেই।
— ঠিক আছে! আমি মুক্তাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ইউসুফ খুশি হয়ে গেলো! দীপার এই স্বাভাবিক ব্যবহারে। ইশ! তাঁর ভাবি যেন সব সময় এমন থাকে।
তাঁরা যেতেই সে মোবাইল বের করলো। দুই ভাইকে এক্ষুণি রুমে আসতে বললো।
উমর আর উসমান রুমে আসলো সাথে সাথেই।
তাঁদের দেখে ইউসুফ বললো,—- দরজা লক করে আসো।
দু- জনেরই ভ্রু কুঁচকে গেলো। তবে কিছু বললো না। উসমান যেয়ে দরজা লক করলো আর উমর ভাইয়ের পাশে বসে কপালে হাত রেখে বললো,— কি হয়েছে? হঠাৎ এতো জুরুরী তলব।
ইউসুফ মাথা কাত করে হাত সরালো! সে ডানে বামে না গিয়ে সোজা ভাবে বললো, — আমি দিলশাদ আপুকে মা বানাতে চাই।
উমর, উসমান মাথায় ঠাটা পড়লেও হয়তো এতো অবাক হতো না। যতোটা হলো এই কথায়।
উমরতো বুকে হাত রেখে বলেই উঠলো, — আস্তাগফিরুল্লাহ।
উসমান রেগে এগিয়ে গিয়ে ইউসুফের কান মুচড়ে বললো,– জ্বরে মাথা গেছে নাকি? বাবার এক বিয়ে নিয়ে বাঁচিনা।, সে আবার মেয়ে তূল্য মেয়েকে গছাতে চাইছে।
ইউসুফ বিরক্ত নিয়ে বললো,—- কান ছাড়ো! আর এখানে বাবা আসলো কোথা থেকে?
উসমানও বিরক্ত নিয়ে বললো —- মা বানাতে চাইছো! আর বাবা আসবে না?
— সেতো ভাবিকেও বানিয়েছি! সেখানে বাবা এসেছে? সেখানে তো এসেছে বড় ভাই। আমার কাছে বড় ভাই’ই বাবা, বড় ভাবি’ই মা। এখন আসবে তুমি। সুমি ডাইনী বাদ। আমার দিলশাদ আপুকে চাই।
উমর বড় একটা শ্বাস ফেললো!তাঁর হার্ট অ্যাটাক হতে হতে বেঁচে গেছে। উসমান আর কিছু বললো না। সে শান্ত ভাবে সাইডের সোফায় গিয়ে বসলো।
— আমরা চাইলেই হবে? উমর ভ্রু নাচিয়ে বললো।
— হ্যাঁ! হবে! না হলে জোর করে রেখে দেবো। তবুও তাঁকেই আমার ভাবি হিসেবে চাই।
উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে মনে মনে বললো,-“একজনকে জোর করে জীবন দফারফা! আবার আরেক জনকে। তাও আবার দিলশাদ! দীপাতো ভালো যা করে তার সাথেই করে। কিন্তু দিলশাদ! পুরো গুষ্টিকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে লবণ ছাড়াই টুপ করে গিলে ফেলবে।
সাথে সাথেই সে উসমানের দিকে তাকালো! এ আবার এতো ঠান্ডা রিয়েকশন দিচ্ছে কেন? এই ছেলের যে স্বভাব! এতোক্ষণে তো সোফা তুলে ইউসুফের মাথায় ভাঙার কথা। তাহলে কি?
উমর ঢোক গিললো! তাঁরা তিন ভাই তিন মেরুর। তবুও একটা জিনিস তাঁদের মধ্যে কমন। ঘাড়ত্যাড়ামি! মাথায় কিছু একটা বসলেই হয়েছে কাজ। দুনিয়া একদিকে সেই জিনিস একদিকে। এখন? দীপা নিজেকেই এই বাড়ির বউ মানেনা আবার তাঁর বোনকে হতে দেবে। দুনিয়া উলটে গেলেও না ।
সে দীপাকে ভালোবাসে। তাঁর জন্য সব করতে পারে। সে তাঁর ভাইদেরও ভালোবাসে। তাঁদের জন্যও সব করতে পারে। এদের মধ্যে থেকে যদি এক জনের সাইড নিতে হয় সে কার নেবে?
উমর বাক্য শূণ্য হয়ে বসে রইলো! সে শেষ, খতম। আল্লাহ রক্ষা করো।
উসমান অবশ্য তাঁর অবস্থা বুঝলো। বুঝলো বলেই তাঁর মুখ হাসি হাসি। একেই বলে হয়তো ফাটা বাঁশের চিপায় বেলুন চুপসে যাওয়া ।
_____
দিলশাদ নাস্তা করছিলো! উমর, উসমান দু – ভাই এসে তাঁর দুই – সাইডে বসলো।
উমর বসেই সোফার দিকে তাকালো! দীপা বসে আছে। মুক্তাকে কি জেনো আস্তে আস্তে বলছে। মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে টুকটুক করে ঘর ভরে হাঁটছে। উমরের দেখতে ভালো লাগছে। এমন না সে আগে হাঁটেনি। তবে মৃত মানুষের হাঁটা আর ফুলের মতো সৌরভ ছাড়িয়ে হাঁটার মধ্যে পার্থক্য আছে।
দিলশাদ কোমল সুরে বললো,— গুড মরনিং! আমিও এখানে আছি, একটু নজর টজর দিন। ওয়ান এন্ড ওনলি শ্যালিকা আমি।
উমরও মুখ করুণ করার ঢং করে বললো,— এতো মিষ্টি করে বলোনা শ্যালিকা! যখনি তুমি মিষ্টি করে কিছু বলো আমার সুগার বেড়ে যায়।
দিলশাদ এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করার ঢং করে বললো– শ্যালিকার জন্য একেকজনে কতো কিছু করে। আর আপনি সামান্য সুগার বাড়াতে পারবেন না। সেম অন ইউ।
উমর হাসলো! দিলশাদ অবশ্য হাসলো না! সে কন্ঠে রহস্য মাখিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,– দরজা জানালা লক করে তিন ভাইয়ে কি নিয়ে এতো মিটিং করলেন? হুম?
উসমান খুক খুক করে কেশে উঠলো! দিলশাদ ঘুরে তাঁর দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এর আবার কি হলো? তবে কিছু বললো না। বললো উমর।
— মিটিং যাই করি! মেন টপিক তুমিই ছিলে।
— আচ্ছা! এতো ফেমাস আমি? যে আমাকে নিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে মিটিং বসে।
— তা বসে।
— তো, আমাকে নিয়ে কি এতো আলোচনা হলো?
— সেটা সময় হলে অবশ্যই জানতে পারবে। বাই দ্য ওয়ে। থ্যাঙ্কিউ।
— কোন সুখে! জানতে পারি।
— হ্যাঁ! অবশ্যই। এতোক্ষণ ফাজলামি করে কথা বললেও উমর এবার সিরিয়াস হয়ে নরম সুরে বললো,– রাতে ইউসুফের পাশে থাকার জন্য।
এই কথায় দিলশাদের মাঝে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না। সে নির্বিকার ভাবেই বললো,– তাহলে তো আরেকটাও ধন্যবাদের প্রাপ্য আমি।
— আচ্ছা! তা কেন জানতে পারি ?
দিলশাদ উসমান কে দেখিয়ে বললো,— এটা ওনাকে জিজ্ঞেস করুন।
উমর জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো! উসমান মাএই নাস্তা মুখে তুলেছিলো। উমর তাকাতেই বিষম খেলো। কাশতে কাশতে দম বেড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা।
দিলশাদ পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,– আমার মনে হয় আপনার কফ টেষ্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। সময় অসময় যেখানে সেখানে খুক খুক করতে থাকেন। যক্ষ্মা টক্ষ্মা হলো কিনা কে জানে। ভয় নেই! যক্ষ্মা এখন আর মরন ব্যাধি না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে অবশ্যই ঠিক হয়।
উসমান আর পানি খাবে কি? দিলশাদের কথায় তাঁর শুধু কাশি না। বাকি আরো অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে গেলো। আর এদিকে উমর হেসে গড়াগড়ি। তাঁর হাসি শব্দে রুবিনা কিচেন রুম থেকে উঁকি দিলেন । দীপাও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
দিলশাদ অবাক হওয়ার ভান করে বললো– আশ্চর্য! এতো হাসির কি আছে? ভালো চাই বলেই তো বললাম। হাজার হলেও এক একটা মহামূল্যবান বেয়াই আমার।
উসমান আর দিলশাদের কোন কথায় আর কানই নিলো না। সে আগেও বলেছে, এখনও বলছে, ভবিষ্যতেও বলবে। এই মেয়ে ডেনজারাস। ভেরি ভেরি ডেনজারাস। ডেনজারাস জিনিস থেকে একশ হাত দূরে থাকতে হয়। আর সে এক রাম গাধা। নেচে নেচে এগিয়ে যাচ্ছে।
সে কোন রকম নাস্তা করেই বেড়িয়ে গেলো। উমর সে দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললো,— তো দিলশাদ! সামনের প্ল্যান কি?
— প্ল্যান ট্ল্যান কিছু নেই! রেজাল্ট বেরুলেই অনার্সে ভর্তির আয়োজনে লেগে যাবো।
— তাহলেতো বেশি সময় নেই!
— তা নেই!
— আমাদের জন্য তোমার পড়ার খুব ক্ষতি হচ্ছে না?
— তা হচ্ছে! তবে বেশি হবে না। আমি আপুকে নিয়ে যাবো।
এই কথা শুনেই উমরের মুখ কালো হয়ে গেলো। দিলশাদ ঠিক দেখলো। মুচকি হেসে বললো,— আপনার মতো বউ নেউটা আমি জীবনে দেখিনি। কিছুদিনের জন্যই তো নেবো। তাছাড়া প্রেগনেন্সির সময় বাবার বাড়ি যাবে না কবে যাবে?
রুবিনা এগিয়ে এলেন! এগিয়ে এসে বললেন, — শোনো মেয়ে! তুমি মেয়েটা যেমনি হও তবে এই কথাটা বলেছো একদম ঠিক। শুধু তুমি তোমার জীবনে কেন? আমি আমার জীবনেও এতো বউ নেউটা ছেলে আর একটাও দেখি নাই।হুহ্! বলেই ভেংচি কেটে তিনি আবার কিচেনে চলে গেলেন।
দিলশাদ হাসলো! উমর অবশ্য হাসলো না। সে চুপচাপ বসে রইলো। এমন না সে চায়না দীপা বাবার বাড়ি যাক। যদি দীপা সব মেনে তাঁর সাথে ভালো ভাবে থাকতো। তাহলে সে নিজেই নিয়ে যেতো। কিন্তু সমস্যা হলো! দীপা তাঁকে এখনও মেনে নিতে পারে নি। তাইতো এতোদিন সে তাঁর বাবা, মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি। যাও দিয়েছে তা সে নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে। যাতে সে কিছু বলতে না পারে।
এখন যদি দীপা গিয়ে সব বলে দেয়।তাঁরা নিশ্চয়ই চাইবে না দীপা এখানে থাকুক। তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, আমার কাছ থেকে দীপাকে নিতে। আর পারবেও। কারণ দীপাই তাঁর কাছে থাকতে চায় না।
সে আর ভাবতে পারলো না। যে ভাবেই হোক দীপাকে যেতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে তাঁরা আসুক! দেখে যাক! দরকার হলে সারা জীবন থেকে যাক। তবুও সে দীপাকে যেতে দেবে না। দীপা একবার এখান থেকে বেরুতে পারলে আর আসবে না। তখন সে কি নিয়ে বাঁচবে? তাঁর বেঁচে থাকার, ভালো থাকার একমাএ উৎস হলো দীপা।
চলবে……..
#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১২
দিলশাদ বিছানার এক মাথা থেকে আরেক মাথা গড়াগড়ি খেলো। বাইরে ঝুম বৃষ্টি । উপরে ছাদ থাকায় অবশ্য বেশি বোঝা যাচ্ছে না। তবুও দিলশাদের কানে বৃষ্টির ঝুম ঝুম গান বাজতে থাকলো।
এখন বাজে ছয়টা! তার এতো সকালে ওঠার খুব একটা অভ্যাস নেই। তবে এখানে এসেছে পর থেকে একদিনও এর বেশি ঘুমিয়েছে বলে মনে পরে না। না ঘুমানেরও অবশ্য কারণ আছে। কারণ টা হলো আপু। আপুকে ব্যস্ত রাখার জন্যই ওঠা।
কারণ অবশ্য আরেকটাও আছে। তা হলো শ্রদ্ধেও হামিদা বানু। এই বানু উঠেন খুব ভোরে। উঠেই শুরু করেন তার বিখ্যাত চিল্লাচিল্লি। এই বয়সে এসে এমন এনার্জি সে পায় কোথা থেকে কে জানে? কাজের লোক গুলো জন্য তার মায়াই হয়। টিকে যে আছে কিভাবে একমাএ আল্লাহ’ই জানেন ? তার নিজের মাথার’ই এই কয়দিনেই বারোটা বেজে গেছে।
টিভির মতো সব মানুষের সাথে একটা রিমোট থাকলে ভালো হতো। যখনি বেশি জ্বালাবে তখনি মিউট বাটন টিপে অফ। যা! এখন যা খুশি, যতো খুশি চিল্লা। কার কি আসে যায়।
সে ঝট করে উঠে বসলো। আজ শ্রদ্ধেও হামিদা বানুর এখনো রে গা মা পা শুনে নি। ব্যাপার টা কি? সত্যি সত্যিই আবার মিউট হয়ে গেলো নাকি? কি জানি ভাই। এদের নিয়ে তার মাথা ব্যাথা নেই। তবে ব্যাপার যাই হোক, একটা দিন অন্তত আল্লাহ এই শান্তিটুকু দিলেন। এর জন্য তোমার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া।
বলেই দিলশাদ দাঁড়ালো। খাট থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে সোজা চলে গেলো তাঁর অতি পেয়ারের বোন জামাই এর রুমের দিকে। দুনিয়া একদিকে তার বোন জামাই একদিকে। এর শান্তি তার সহ্য’ই হয়না ।
দরজায় নক পড়তেই উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে বললো,—- দরজা খোলাই দিলশাদ! ভেতরে এসো। বলেই কম্বলের নিচে মাথা ঠুকিয়ে ফেললো! কারণ সে জানে দিলশাদ রুমে এসেই প্রথম যে কাজটা করবে তা হলো, জানালার পর্দা টেনে খোলা। এই মেয়ে সম্ভবতো অন্ধকার খুব একটা পছন্দ করে না। উসমানের কপালে দুঃখ আছে। সে আবার অন্ধকারের মানব।
দিলশাদ তাই করল। রুমে এসেই পর্দা টেনে সরালো। জানালাও খুলে দিলো। এতোক্ষণ বৃষ্টির শব্দ শোনা যায়নি। এখন ঝিম ঝিম শব্দ শোনা গেলো।
এখন দিলশাদ কি করবে উমর তাও জানে। ইশ! তাঁর বউটা! কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। এখন এই মেয়ে তাঁকে টেনে তুলবে। অবশ্য এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। দিলশাদ আসার পর থেকে দীপার অসুস্থতা অনেকটাই কমে গেছে। আগের কিছু নিয়ে ভাবছে না। দিলশাদ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এটা সেটা হাবিজাবি দিয়ে ব্যস্ত রাখে। যার কারনে আর আগের মতো রাতে নিশ্বাস বন্ধের মতো অবস্থা হয় না। সারাদিনের ব্যস্ততায় রাত হলেই টুপ করে ঘুমিয়ে পরে।
দিলশাদ এবারো তাই করলো! দীপার বাহু ধরে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে বললো,— এই আপু! ওঠ! তাড়াতাড়ি ওঠ! কতো ঘুমাবে?
দীপার ঘুম ভাঙলো! দিলশাদকে দেখে অবশ্য কোন হেলদোল হলো না। এই কয়দিনে মোটামুটি অভ্যস্থ হয়ে গেছে। সে চোখে মুখে ঘুম নিয়েই দিলশাদের হাত ধরে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। চোখে মুখে কাঁচা ঘুমের রেশ থাকলেও, বিরক্তির ছিটেফোঁটাও দেখা গেলো না।
— দেখো কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
দীপা তাঁকালো! তাঁকিয়ে হালকা হাসলো। অনেকদিন বৃষ্টি উপভোগ করা হয়না। সে দিলশাদকে ধরেই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। জানালার পাশে গিয়ে হাত বাড়ালো। বাড়াতেই অন্য রকম একটা আনন্দ তার পুরো শরীরে ছেঁয়ে গেলো। সে সেই বৃষ্টি ভেজা হাত পেটের উপরে রাখলো। রাখতেই হাতে একটা অনভূতি।
সাথে সাথেই দীপার চোখে পানি চলে এলো। চোখে পানি থাকলেও ঠোঁটে হাসি। না আজকে প্রথম না, তবুও এই প্রথম তার মনে হলো সে মা হচ্ছে, এই যে তার খুশিতে যারা তারই গর্ভে নেচে উঠলো। এরা তার সন্তান। এদের জন্য হলেও তার ভালো থাকতে হবে। সে সাথে সাথেই দিলশাদের হাত নিয়ে পেটে রাখলো।
দিলশাদ প্রথমে থমকে গেলো, যখন বুঝলো সে লাফিয়ে উঠলো।
উমর মুগ্ধ নয়নে এই দু- বোনের দৃশ্য দেখলো। তার চোখের কোণেও পানি। এই মেয়েটা কি কখনও বুঝবে সে তাকে কতোটুকু ভালোবাসে। উঁহু! বুঝবে না। কখনও না। সে আবার কম্বলের নিচে ঢুকে গেলো। চোখের পানি মুছলো। মনে মনে বললো, — আজকের এই সকাল জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিলশাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
দিলশাদ এক চোট খুশিতে নাচানাচি করে বললো, — অনেক হয়েছে পরের বংশের বাতিদের নিয়ে নাচানাচি। এখন চলতো! যার জন্য এসেছি সেটাই মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে।
দীপা হেসে বললো — কি বেড়িয়ে গেছে?
— এরকম ওয়েদারে আমরা কি করি?
দীপা ভ্রু কুঁচকালো! সে বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকেই বললো, — কি করি?
দিলশাদ আকাশ থেকে পড়ার মতো করে বললো,– তুমি ভুলে গেছো?
— কি ভুলে গেছি?
দিলশাদ সাথে সাথেই করুন মুখে উমরের দিকে তাঁকালো! তাকিয়ে বললো, —- সব এর দোষ।
উমর ঝট করে কম্বলের নিচ থেকে মাথা বের করলো। করে বললো, — আল্লাহ! আমি আবার কি করলাম?
— আপনিই তো যতো নষ্টের মাথা। বলেই দিলশাদ কাঁদো কাঁদো মুখ করলো।
উমর অসহায় ভাবে ঢোক গিললো! সে ভালো করেই জানে। এই মেয়ে যতোই কাঁদো কাঁদো মুখ করুক। কাঁদবে কখনও না। বরং তখন কাঁদবে অন্য কেও। আর সেই অন্য কেওটা বেশিভাগ সময় সে’ই হয়।
দিলশাদ মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ! উমর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অসহায় ভাবে তাঁকিয়ে রইলো । তাদের তাকাতাকি ভাঙল দীপার কন্ঠ শুনে।
— দিলশাদ! আমাকে তাড়াতাড়ি ধর। বাথরুমে নিয়ে চল।
উমর ভ্রু কুঁচকে দীপার দিকে তাঁকালো। দীপা বড় বড় নিশ্বাস আর বারবার ঢোক গিলছে। সে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে সাইড থেকে বালতি নিবে তার আগেই যা হবার তা হয়েই গেলো।
দিলশাদ স্থবির মতো দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর পেটের নিচ থেকে পা পর্যন্ত বমিতে মাখামাখি। উমর মনে মনে হাসলো! অবশ্য উপরে হাসার তার সাহস নেই। এই দু- বোনের জুটি তাকে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে। এতো বোন বোন করো না। তো বোনের বমিতে দু-একদিন গোসল করবে না তা কি করে হয়।
দিলশাদ উমরের দিকে তাকালো। তাঁকিয়ে ঠোঁট ওলটে বললো,—- সব দোষ আপনার।
উমর অবাক হওয়ার ভান করে বললো,— এটা কেমন কথা দিলশাদ, বমি করলো তোমার বোন আর সব দোষ আমার?
— অবশ্যই আপনার! আপনি না থাকলে আপুর এই অবস্থা হতো?
উমর হোঁচট খেলো! বলে কিরে এই মেয়ে!
— না এই অবস্থা হতো, না এখানে থাকতো, না আমাদের সব কথা ভুলে যেতো। তারপর দীপার দিকে তাঁকিয়ে বললো, —- আমি তোমাকে লাস্ট বার বলে গেলাম। মনে করো! ভালো করে মনে করো। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যদি দেখি তুমি মনে করতে পারোনি। তবে এই সবের জন্য যে দায়ী তাঁর মাথায় আমি একটাও চুল রাখবো না। হুম! বলেই দিলশাদ হনহনিয়ে চলে গেলো।
দীপা হাসলো! হেসে খাটে হেলান দিয়ে বসলো। বমি করে তাঁর এখন ভালো লাগছে। দিলশাদ কিসের কথা বলছে, তাঁর মনে পড়েছে। আগে বৃষ্টি হলেই দু-বোন কিচেনে চলে যেতো। তখন তো এতো রান্না বান্না পারতো না। তবুও মাকে ছুটি দিয়ে আনাড়ি হাতে খিচুড়ি রান্না করতো। তারপর সবাই একসাথে খেত।
উমর দীপার হাসি দেখলো! তাঁর এখন মনে হলো, এর চেয়ে সুন্দর সকাল তার জীবনে কখনও আসবে না । সে এগিয়ে গেলো! ঘর পরিষ্কার করা দরকার। সে এগুতেই দীপা ভ্রু কুঁচকে বললো,— বয়সতো কম হচ্ছে না! এখন একটু লজ্জাতো আনাই দরকার।
উমর অবাক হলো দীপার কথা শুনে। আরো অবাক হলো, লজ্জার কথা শুনে। লজ্জা নিয়ে আবার সে কি করলো। অবশ্য আজকাল সে বুঝতেই পারেনা কখন কি করে। আর যাই হোক সব দোষ তো তাঁরই ঘাড়ে।
দীপা ভ্রু উঠিয়ে তাঁর দিকে ইশারা করলো।
উমর ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাঁকালো! তাঁকিয়ে হেসে ফেললো! তাঁর খালি গা! নিচে শুধু হাফপ্যান্ট।
সে হেসে বললো,—- যাক খেয়াল করো তাহলে আমাকে?
সাথে সাথেই দীপার চোয়াল শক্ত হলো। সে অন্য দিকে তাঁকালো। তাঁকাতেই উমর বললো,— সমস্যা নেই! দিলশাদ আমার বোনের মতো। অবশ্য তাঁকে আমি বোনের মতো মনে করি না। বোন ই মনে করি।আর তোমার ঐ আধা পাগলা বোন তোমাকে ছাড়া আশে পাশে অন্য কিছু চোখে দেখেও বলে মনে হয়না।
দীপা এই দু- বছরে কখনও উমরের কথার পিঠে কথা তো ভালোই, কোন কথার উত্তরই দেয় নি। তবে আজ বললো,— অথচো এই মনে করা বোনেরই একদিন ক্ষতি করতে চেয়েছো।
উমরের মুখ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। শান্তভাবে বললো,
— তখন সময় ভিন্ন ছিলো।
— তখনের ঐ ভিন্ন সময়টা কি বাদলাতে পারবে?
— না! আর আমি বদলাতে চাইও না। ওই ভিন্ন সময়ের জন্যই আমি তোমাকে পেয়েছি। সেটা ভালো হোক আর খারাপ। আমি যা করেছি, তোমাকে পাওয়ার জন্য। আর তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। তখনও পেরেছি, এখনও পারি, ভবিষ্যতেও পারবো।
সব পারবো! এই শব্দটা শুনলেই দীপার মাথায় আগুন ধরে যায়। কেন সব পারতে হবে। কেন এতো ভালোবাসতে হবে। কেন সব কিছুতেই এতো বেশি বেশি। সেতো বেশি চায় নি। সে তো চেয়েছে অল্প! এই একটুখানি! শ্রভ্র, সুন্দর ভালোবাসা। যেখানে সবাই থাকবে। থাকবে তাঁর পরিবারও। এরকম দম বন্ধের ভালোবাসা সে তো কখনও চায়নি।
অনেক দিন পরে দীপার রাগ হলো! তাঁর খাটের সাইডে বেড টেবিলে ড্রাই ফুডের জার আর পানির জগ রাখা। এই দু- বছরে যা করেনি সে আজ তাই করলো, —- হাত দিয়ে ছিটকে সব নিচে ফেলে দিলো।
কাঁচের বোতল, পানির মগের শব্দে এই সাত সকালে পুরো বাড়ি ঝনঝনিয়ে উঠলো।
উমরের মধ্যে অবশ্যই তেমন কোন পরির্বতন দেখা গেলো না । দিলশাদ আসবে পুরোনো দীপার ঝলক দেখবে না তা কি করে হয়। অবশ্য সে এটাই চায়। তার দীপা ফিরে আসুক।
থামিদা বানু প্রায় লাফিয়ে উঠলেন! কিসের শব্দ হলো সে বুঝতে পারছে না। সে খুব সকালে উঠে।বৃষ্টির কারনে নামাজ পড়ে আবার চোখ লেখে গিয়েছিলো। সে চেঁচিয়ে উঠলেন, — ওই রুবিনা, রুবিনা। কোথায় মরছোস! ভাইঙ্গা চুইড়া কি পড়লো। আল্লাহগো একদিন একটু চোখ লাগতে না লাগতেই দেহি সব লন্ডভন্ড শুরু হইয়া গেলো। ওই রুবিনা।
সাথে সাথেই তাঁর ফোন বেঁজে উঠলো। এই ফোন দেখেও সে আরো চিল্লাতে লাগলো। এই সাত সকালে আবার জসিম ফোন দেয় ক্যা। মরলো কেরা। ওই রুবিনা।
উসমান ভ্রু কুঁচকে রুম থেকে বের হলো। সে রেডি হচ্ছিলো। আজকে সে একটু তাড়াতাড়ি বেরুবে। তাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে গোসল করে রেডি হচ্ছিলো। তখনই শব্দ তাঁর কানে এলো। সে দরজার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো!
শব্দ কোন দিক থেকে আসলো সে বুঝতে পারছে না। সে আবার রুমে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই দেখলো, দিলশাদ রুম থেকে বের হচ্ছে। সম্ভবতো গোসল করেছে! ভেজা চুল পিঠে দোল খাচ্ছে। সে মুগ্ধ চোখে তাঁকালো। একটা সাধারণ সকাল বুঝি এভাবেই অসাধারণ হয়ে যায় ।
দিলশাদও উসমানকে দেখলো! দেখেই হালকা হেসে লজ্জামাখা ভাব ধরলো। এগিয়ে এসে ঢং করে বললো,— বারে বাহ্! সকাল সকাল গোসল টোসল করে একদম ফিটফাট। ব্যাপার কি?
উসমান হাসলো! মেয়েটা ইচ্ছে করে ঢং করে কথা বলে। কেন বলে এখন সে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে। অবশ্য শিউর না। অতি বুদ্ধিমতি মানুষদের বোঝা এতো সোজা না। তবে ইচ্ছে করেই হোক আর যাই হোক। ঢং করে যখন কথা বলে দেখতে খুব মিষ্টি লাগে। সে হেসে দেয়ালে হাত রাখলো। রেখে একটু ঝুকে বললো,— গোসলতো আপনিও করেছেন? কই আমিতো সেই ব্যাপার কিছু জিজ্ঞেস করিনি।
— আমার করার অবশ্যই যথাযোগ্য কারণ আছে। আপনি জিজ্ঞেস করুন আর না করুন।
— আমার যে নেই আপনাকে কে বললো?
দিলশাদ মিচকে হাসলো! হেসে ফিসফিস করে বললো,— ও হ্যাঁ ! ছেলেদের তো আবার অবশ্যই যোথাযোগ্য কারণ থাকে। উপস্! স্যরি! স্লিপ অফ টাং।
— বাবারে, এতো কিছু জানা?
দিলশাদ আগের মতোই ফিসফিস করে বললো,— আমি যা জানি তা আপনিও জানেন না।
— অনেক অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।
— হ্যাঁ অবশ্যই! না জানলে শুকনো খরখরে পহাড় – পর্বতের বুকে এতো সহজে ঝড় তুলতে পারতাম?
বলেই দিলশাদ চলে যেতে নিলো।
উসমান পেছন থেকে বললো,— এই পাহাড়- পর্বতটা কে?
— আপনি বের করুন।
— আমি তো আপনার মতো এতো অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ না।
— তাহলে আবার নতুন করে স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। পাহাড় – পর্বত কি, কে, অর্থ সব জেনে যাবেন।
— মিস দিলশাদ.. দিলশাদ দাঁড়ালো! তবে ঘুরলো না।
— আমি কি আপনার স্কুলে ভর্তি হতে পারি। না মানে এতো অভিজ্ঞতা আপনার। আমার মনে হয় আমার জন্য আপনার চেয়ে ভালো শিক্ষিকা আর কেও হবে না।
দিলশাদ ঘুরলো! তাঁর ঠোঁটের কোণে এখনো মুচকি হাসি। নিজের দু- হাত বুকে বেঁধে বললো,—- হজম করতে পারবেন তো মিষ্টার উসমান শেখ ?
উসমান হাসলো! সেও বুকে দু- হাত বেঁধে বললো ,— আপনি পারবেন তো মিস দিলশাদ? না মানে স্টুডেন্ট হিসেবে আমি খুবই দুষ্টু টাইপের।
— আমিও যে ভদ্র, ভালো আর্দশ শিক্ষিকা তা আপনাকে কে বললো? বলেই দিলশাদ আর দাঁড়ালো না। ঘুরে চলে যেতে নিলো। যেতে যেতে আবার পেছনে ফিরে হাত উঠিয়ে দু- আঙ্গুল বন্দুকের মতো তাঁক করে বললো,— শেষ হয়ে যাবেন। বিশ্বাস করুন একদম শেষ।
উসমান আবারো হাসলো! হেসে দু- হাত পকেটে পুরে বুক ফুলিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে বললো,– আপনার ইচ্ছা আমার শিরোধার্য। আমি নিজ ইচ্ছায় শেষ হতে রাজি।
চলবে……..