দর্পণ পর্ব-১৩+১৪

0
135

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৩

হামিদা বানু টেবিলের আয়োজন দেখে অবাক হলেন। সাত সকালে এতো কিছু। যাক তবুও ভালো। মেয়ে মাইনষের আবার এতো আরাম আয়েশ কি? এমন বৃষ্টি মুখোর দিনে বাড়ির বউরা যদি এমন আয়োজনই না করতে পারে তো করলো টা কি?

সে হাসিখুশি ভাবেই বসলো। রুবিনাও বসলো! তবে তাঁর মুখ ভার। তাঁর হাতের এতোদিনের সংসার। সে ভাগ দিতে নারাজ! বউরা কাজ করবে ঠিক আছে। মাতব্বরি করবে কেন? এই যে আজ দীপা সোজা রান্না ঘরে এসে বললো, সকালে সে খিচুড়ি করবে। তাঁর আপত্তি ছিলো। কি দরকার সাত সকালে এগুলো করার। কিন্তু এই মেয়ে সেই না গনায়ও ধরে নি। নিজের মতো সব করেছে আর তাঁর সাথে ছিলো আরেক নতুন বান্দরনী। দু- জনে পুরো বাড়িকে একেবারে মাথায় করে রেখেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আজ সকালের দেখা দৃশ্য। যা দেখে তার তো মাথাই ঘুরে গেছে।

এই মেয়ে যে এই বাসায় পাকাপোক্ত থাকার ব্যবস্থা করছে সে ঠিক বুঝে গেছে। মাকে বলতে হবে! সকাল থেকে অবশ্য সুযোগ পায়নি। তবে বলে ফেলতে হবে। দু-দিনের জন্যই এসেই এই মেয়ে বাড়ির চেহেরা পালটে দিচ্ছে। সব সময়ের জন্য হলে না জানি কি হবে।

উমর দীপার দিকে তাঁকালো। দীপা তাঁর পাশেই বসেছে । নেয়ে ঘেমে একাকার ! ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে। ওড়না দিয়ে কপালে ঘাম বার বার মুছচ্ছে। অনেক দিন পরে কাজ করে সে হাঁপিয়ে গেছে। অবশ্য সে শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রান্না করেছে। বাকি সব করেছে দিলশাদ। তবুও অনেকদিন পরে এতোটুকুই অনেক। সে আস্তে করে বললো — ঠিক আছো?

দীপা কিছু বললো না! শুধু হালকা করে উপর নিচে মাথা নাড়ালো।
— হাত দিয়ে খেতে পারবে?
— হুম।
তখনি দিলশাদ সবার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো, — আমি কি কিছু বলতে পারি?

সবাই তার দিকে তাকালো! ইউসুফ হেসে বললো, — অবশ্যই পারো!
— আমিতো অনেক দিন হলো এখানে থাকলাম। তাই এখন আমার যাওয়া উচিত। আমি জানি আপুর বিয়েটা দু- পরিবার মিলে হয়নি। সম্পর্কগুলো স্বভাবিকও নেই। তবে এই অবস্থায় তো অন্য কিছু করা সম্ভবও না। তাই আপুকে কি আমি আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে পারি? আমার মনে হয় ঘুরে আসলে আপুর ভালো লাগবে।

উমরের চোয়াল শক্ত হয়েছে। আর কেও খেয়াল না করলেও দীপা ঠিকিই খেয়াল করলো। সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

উমর শান্ত, ধীর কন্ঠে বললো,—- তোমার আপু অসুস্থ! আর এই অবস্থায় এতো লং জার্নি তাঁর জন্য ঠিক না।
দিলশাদও তার দিকে তাকিয়ে তার মতো করেই বললো — লং জার্নি কোথায়? মাএই তো দু- ঘন্টার রাস্তা। তাছাড়া আপনাদের নিজস্ব গাড়ি আছে। ধীরে ধীরে যাওয়া যাবে। তাছাড়া আপনার কি মনে হয় না, দু- বছর অনেকটা সময়। আপনি নিজেও এখন বাবা হচ্ছেন। অন্য বাবা, মায়ের কষ্ট কিছুটা হলেও বুঝবেন, এইটুকু আশাতো করতেই পারি।

উমর কথা বললো না তবে হামিদা বানু বললেন, —- নিয়ে যাইতে চাও যাইও। বিয়ের পরেতো আর বাপের বাড়ি যায় নাই। তবে তোমার বাবা, মা আসলেই দেবো। সব কিছুর একটা সৌন্দর্য আছে না। আর আমি চাইতেছি এই সাপ্তাহের শক্রবারেই সুমি আর উসমানের কাবিনটা করে ফেলবো। দীপার ঝামেলা ভালোই ভালোই শেষ হলে, পরে বড় অনুষ্ঠান করা যাবে। আপাততো ঝামেলার কাজটা শেষ করে রাখি। তাই তুমি যদি তোমার আপারে নিতো চাও। এই কাবিনের পরেই নিয়ে যাইয়ো। ছোট থাক বড় থাক, অনুষ্ঠানের সময় বাড়ির বউ বাড়িতে থাকা ভালো। দেখতে সুন্দর লাগে।

দিলশাদ আর কিছু বললো না। সে নির্বিকার ভাবে খেতে লাগলো। বললোনা উমরও! তাঁর ভেতরে ভয় হচ্ছে। দীপাকে হারানোর ভয়। সে টেবিলের সাইড দিয়ে দীপার হাতের উপরে হাত রাখলো। দীপা আস্তে করে হাত সরিয়ে নিলো।

ইউসুফ উঠে দাঁড়ালো! তাঁর বিরক্ত লাগছে। উসমান ভাই কই? তাঁর এতো কিসের কাজ। যে সাত সকালেই বেড়িয়ে যেতে হবে। আর এদিকে একজন তাঁর বিয়ের ঘন্টা বাজাচ্ছে আর একজন চলে যাওয়ার পায়তারা করছে। সে দু- টোর একটাও হতে দেবে না।

তাঁর ওঠা দেখে হামিদা বানু বললেন, — আধা খাওন খাইয়া উইঠা পড়লি ক্যা।
ইউসুফ সে কথার উত্তর দিলো না। হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

উমর ইউসুফের যাওয়ার দিকে তাকালো! তবে কিছু বললো না। সে জানে ইউসুফ কেন এভাবে চলে গেছে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! তার নিজেরও গলা দিয়ে খাবার নামছে না। সে দীপার দিকে অসহায় ভাবে তাকালো। মনে মনে বললো , – সব ভুলে একটু ভালোবাসলে কি হয় দীপা?

তখনি দীপা তাকালো! চোখে চোখ পড়লো। উমরের অসহায় মুখটা পড়বে তখনি দিলশাদ উঠে এলো। উমরের সামনে দাঁড়িয়ে কোমল সুরে বললো, — একটু উঠবেন প্লিজ! আপু রসুন মরিচের ভর্তা হাতে মাখাতে পারেনা। মাখলেই হাত জ্বলে। কিন্তু খিচুড়ির সাথে এটা তার খুবই প্রিয়। দেখি আপুকে আমি আমার এখান থেকেই দু- লুকমা খাইয়ে দেই।

উমর চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইউসুফ উঠে গেছে তার পাশের চেয়ার খালি। সে নিঃশব্দে সেখানে বসলো। দিলশাদ তাদের মাঝে বসে উমরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

আলি হোসেন ঘুমাচ্ছিলেন! এখন তাঁর কাজের তারা টারা নেই। তাই সকালে খুব একটা ওঠেনও না। আর এই বৃষ্টির দিনেতো আরো না। তাঁকে ডেকে তুললো সাবিহা।

সে বিরক্ত হলো! বিরক্ত হয়ে বললো,— কি হয়েছে?
সাবিহা বিস্ময় মাখা কন্ঠে বললেন,— ইউসুফ আসছে।
আলি হোসেন হতবাক হয়ে গেলেন ! তাঁর তিন ছেলের কোন ছেলে কখনও এই বাসায় আসে না। এমনি এই বাড়ি সম্পর্কে কোন কথাও বলে না। আর ইউসুফ! সে তো ঐ বাসায় গেলেও তাঁর ধারের কাছে আসে না। আজ কি হলো? সব ঠিক আছে তো? সে হুড়মুড় করে বেড়িয়ে গেলো।
____

উসমান এসে দাঁড়ালো দিলশাদের ঠিক পেছনে।
সে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ঘেঁষে। বৃষ্টির কারণে আজ আবহাওয়া শীতল। হালকা হালকা মৃদু বাতাসে দিলশাদের চুল, ওড়না এলোমেলো হচ্ছে। উসমান সেই দিকেই তাকিয়ে রইলো।

সে দাঁড়াতেই দিলশাদ মিটিমিটি হাসলো! পেছনে ফিরলো না অবশ্য। হেসে ঢং করে বললো,—- কি খবর বিয়ের বর? বিয়ে খবর শুনে এখনি ঘুম টুম উধাও হয়ে গেছে নাকি?
— তা গেছে! এতো সাধনার বিয়ে।
— সাধনার নাকি?
— হ্যাঁ! অবশ্যই। প্রত্যেক মানুষের কাছেই বিয়ে সাধনার। সেটা লভ হোক আর অ্যারেঞ্জ।

দিলশাদ আবারো হাসলো! এবার অবশ্য খিলখিলানো হাসি! হেসে সে ঘুরে দাঁড়ালো! তাঁর আর উসমানের মাঝে দূরত্ব আধা হাতের।

উসমান মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে রইলো! এই মেয়েটা কতো রকমের যে হাসি হাসতে জানে, কে জানে? অবশ্য সব রকমের হাসিতেই তাঁকে কেমন মোহনীয় লাগে। লাগে বলেই কি সে হাসে? হয়তো! মন নিয়ে খেলতে এই মেয়েটা খুব জানে।

— ভালো! কনগ্রাচুলেশনস! এতো সাধানার বিয়ে হচ্ছে বলে কথা। তবে আপনি যেমন আপনার বিয়ের অপেক্ষায় আছেন তেমনি আমি কিন্তুও আছি। তাই প্লিজ আরো দু- দিন আগে আনতে পারেন কিনা দেখেন তো।

— একটু কাছে এসে ঢং করে বলেন । তাহলে হয়তো আনতেও পারি। এতো মহামূল্যবান একমাএ বেয়াইনের আবদার বলে কথা।

দিলশাদের ভ্রু কুঁচকে তাকালো! বুঝতে চেষ্টা করলো। এই লোককে আজ অন্য রকম লাগচ্ছে কেন? সে সাথে সাথেই হেসে আবার ঢং করে বললো,

— এতো রাতে ছাদে কি করছেন হুম ? আপনি তো আবার গুড বয়। কাজ টাজ করে খেয়ে দেয়ে সোজা ঘুম।
— সত্য বলবো না মিথ্যা।
— মিথ্যাই শুনি।
— আমি আপনাকে দেখে ছাদে আসিনি।

দিলশাদ একটু এগিয়ে ফিসফিস করে বললো, —- তাহলে কেন এসেছেন?

— এক মোহনীর নাটক দেখতে। সে খুব ভালো অভিনেএী। সে অভিনয় করছে জেনেও আমি তাঁর মোহনে প্রতিমূহুর্তে মোহনীয় হচ্ছি।

— তাই! তো, কে সে?

— আমার চোখের দিকে তাকান! তাহলেই দেখতে পাবেন।

— কি দরকার দেখার?

— সেটাই কি দরকার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার।

— কেন খেলতে শুধু আপনারাই পারেন?

— এটা আপনার বোঝার ভুল। এতো অভিনয় না করে মন থেকে একবার কাছে আসুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

দিলশাদ আর হাসলো না! তাঁর চেহেরায় এবার কোন ঢংও দেখা গেলো না। এতোদিন সব ফাজলামি করে উত্তর দিলেও আজ যে দিচ্ছেনা সে এবার বুঝলো। তাই শান্ত ভাবে বললো,—- চলে যান প্লিজ।
— কেন?
— কেও দেখলে অন্য কিছু ভাববে।
— অন্য কিছু নেই?

দিলশাদ কিছু বললো না। কিন্তু আগুন চোখে ঠিকিই তাকিলো।

উসমান হালকা হাসলো! যাক এতোদিন পরে তাহলে আসল দিলশাদের দেখা পাওয়া গেলো। যাকে সে দেখেছিলো সেই প্রথম দিন। সে হেসেই বললো— গ্রাম গঞ্জে একটা সুবিধা আছে। কোন ছেলে মেয়েকে এক সাথে দেখলে, বিশেষ করে এমন রাতের অন্ধকারে, ধরে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। মজার না ব্যাপার টা।

দিলশাদ এবারো কিছু বললো না! কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। সে বোকা না। এই কথার দিয়ে কি বুঝাতে চাইছে সে অনায়াসেই বুঝলো। বুঝেই চোখে মুখে আগুন নিয়েই চলে যেতে নিলো।

উসমান ফট করে হাত বাড়িয়ে দিলশাদের পেটের জামা খামচে ধরে এক টান মারলো।

দিলশাদের ছোট খাটো দেহ তড়িৎ গতিতে উসমানের চওড়া বুকের সাথে মিশে গেলো । তবে তাঁর মধ্যে কোন ছটফটানি লক্ষ্য করা গেলো না। সে নির্বিকার ভাবে হাত দিয়ে ঠেলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তবে কাছাকাছি! উসমান এখনও তাঁর জামা ছাড়েনি। বরং আরো মুচড়ে ধরলো। ধরে শান্ত শীতল ভাবে বললো,
— আমাদের দেখতে পারোনা, জানি! মুখের ঢং চোখের আগুকে কখনও আড়াল করতে পারে না। তোমার টা তো আরো না। তবুও দেখার অভিনয় করছো কেন ?

দিলশাদ এবার ডাইরেক্ট উসমানের চোখে দিকে তাঁকালো! একটা ছেলের এতো কাছে তবুও লজ্জা ছিটেফোঁটাও দেখা গেলো না। সে স্বভাবিক ভাবেই বললো,– ছাড়ুন!
— না।
— এটা অসভ্যতামি।
— এটা করার সাহস আপনিই দিয়েছেন।
— ছাড়ুন।
— না! আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।
— বলছি ! আগে ছাড়ুন।
— না।

দিলশাদ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো, — আগে আমার দুটো- প্রশ্নের উত্তর দিন।

— যদি না দিই?

— দিলশাদ উত্তর নিতে জানে।

উসমান হাসলো! হেসে বললো,
— বলেন কি জানতে চাও?

— আপু আর আপনার ভাই দু- জন দুজকে ভালোবাসে?

— আমার ভাই তোমার কি হয়?

— কিছু না।

— স্বীকার না করলে সত্য বদলে যায় না।

— আমার কাছে সত্য আমার আপু! সে আমাকে বলেনি, এমন কি বুঝায়ও নি। আপনার ভাই সম্পর্কে আমার কিছু হয়।

— তাঁদের টা তাদের ভাবতে দাও দিলশাদ।

— দিলাম! কিন্তু সমস্যা হলো তাদের শব্দটার মধ্যে আমার আপু নেই। শুধু আপনার ভাই। সে যা চেয়েছে। তাই হয়েছে! তবে এবার আমার আপু চাইবে।

— ভাবি এটাই চাইবে! তোমার নামের মধ্যে দিল থাকলেও তোমার ভিতরে নেই। তা না হলে তুমি নিশ্চয়ই দেখতে।

দিলশাদ তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো! হেসে বললো,— তাহলে আপনার ভাই ভয় পাচ্ছে কেন?

উসমান কিছু বললো না। সে একধ্যানে দিলশাদের দিকে তাঁকিয়ে রইলো । কি শান্ত, স্নিগ্ধ, মায়াবী একটা মুখ। তবে ভেতরটা কঠিন। খুব কঠিন! এতোটাই যে সহজে তা টের পাওয়া যায় না। অবশ্য সে এমন কিছুই মনে করেছিলো। তা না হলে আসতে না আসতেই সব কিছু এতো সহজেই স্বহজ – স্বভাবিক হতো না।

— এসব কথা থাক। তর্ক করতে ইচ্ছা করছে না। হাত সরান। আমাকে যেতে দিন।
উসমান আগের চেয়েও কঠিন করে বললো — না।

দিলশাদ এবার রাগে ঠোঁটে ঠোঁট চাপলো। উসমান দেখে হাসলো। হেসে বললো, — কি যেন বলছিলেন ? কথা শেষ করেন মহামূল্যবান বেয়াইন।

উসমানের ঢং দেখে দিলশাদের শরীর জ্বলে গেলো। তবে তা দমিয়ে বললো, — আপু আর আপনার ভাই দু-জন দুজনকে ভালোবাসে?

— হ্যাঁ!

— মিথ্যা! বাসতো!

— আর?

— আপু কি নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ে করেছে ?

উসমান উত্তর দিলো না! চুপচাপ তাঁকিয়ে রইলো এই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মেয়েটার দিকে। মেয়েটার বুদ্ধিতো আছে। তবে হ্নদয় নেই।

দিলশাদ এবার হাসলো! তাঁর সেই মিষ্টি টোল পড়া হাসি! হেসে বললো,— আমি আমার বোন কে নিয়ে যাবো। যে ভাবেই হোক! আমি চাইলে অন্য রাস্তাও নিতে পারি। তবে এতে আমার আপুর সম্মানেও আঙুল উঠবে। তাই এমন এক ব্যবস্থা। সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। আর এই কাজটা আমি করাবো আপুর হাত দিয়েই। আর সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন। আপনি সব জানবেন সব দেখবেন। তবে কিছু বলতে পারবেন না। ঐ যে দিল! যেটা আমার ভেতরে নেই। তবে আপনারটা আমি আটকে দিয়েছি। আপনার ভাইয়ের জন্য আমার বোন, আমার পরিবার দু- বছর কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে। আপনারা যাবেন না কেন?

সন্তান নিখোঁজ হলে কেমন লাগে আপনারা জানেন না। সন্তানের সাথে দু-বছর যোগাযোগ না থাকলে মা, বাবার কেমন লাগে আপনারা জানেন না। তবে জানবেন! বউ, সন্তান থেকেও যখন থাকবেনা । তখন আপনার ভাই জানবেন। কষ্ট কি? আরেক ভাই যখন ভালোবেসে দেবদাস হবে। উপস্! ভুল হয়েছে! এলরেডি হয়ে গেছে। সেটাই যখন আপনার ভাই জানবে। একমাএ তাঁর জন্যই তাঁর ভাইয়ের এই অবস্থা। তখন জানবে কষ্ট কি? ইউসুফ কে মাফ করলাম! সে আমাকে মা বলে ডেকেছে। মায়ের কাছে সন্তানের সব মাফ। তা না হলে প্রাণ প্রিয় ছোটভাই বড় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মজার না ব্যাপার টা।

দিলশাদ মুচকি হেসে ঢং করে বললো,—আপনার উত্তর নিশ্চয়ই পেয়েছেন মিষ্টার উসমান শেখ, কেন আমি এমন করছি?

উসমান নিশ্চুপ তাকিয়েই রইলো! কিছু বললো না।

দিলশাদও আর তাকালো না। পেট জ্বলছে তাঁর! রাক্ষস বেটা চামড়া তুলে নিয়েছে নাকি। ছাড়ছেও না ধুর! সে নিজেই ছাড়াতে চাইলো। উসমান ছাড়লে তো! সে টেনে আরো কাছে আনলো। তারপর হুট করেই দিলশাদের ঠোঁট দখল করে নিলো।

নির্বিকার দিলশাদ কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো। যখন বুঝলো! সে উসমানের হাত, পিঠ, গলা এফোড় ওফোড় করে ফেললো।

উসমান অবশ্য থামলো না। জংগলি বিড়ালকে ভালোবেসেছে। বশ মানাতে বেগতো পেতে হবেই। সে পেট থেকে হাত সরিয়ে দু- হাতে দিলশাদকে জাপটে ধরলো। কপালে কপাল রেখে বললো,— যদি আমার বিয়ে হয়, সেটা তোমার সাথেই হবে।যদি আমি দেবদাস হই, তুমিও হবে। আমার দিল আটকে বড় ভুল করে ফেলেছো মেয়ে। আমি তোমাকে ভাবির মতো আটকে রাখবো না, জোরও করবো না, তবে ছেড়েও দেবো না। তুমি আমার ভালো মানুষি দেখেছো, পাগলামি দেখোনি মিস. দিলশাদ।

চলবে…….

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৪

দিলশাদ বিরক্ত মুখে টেবিলে এসে বসলো! সারা রাত তাঁর ঘুম হয়নি। হবেই কিভাবে? কাল রাতের কথা মনে হলেই, তাঁর খুন টুন করে ফেলতে ইচ্ছা করছে। অবশ্য সে করবে! অতি শীঘ্রই করবে। এই পাহাড়- পর্বতকে কেটে কেটে ছোট টিলা না বানিয়েছে তাহলে তাঁর নাম দিলশাদ না।

সে বিরক্ত মুখেই সামনে তাকালো। রুবিনা ফুপু বসে চা খাচ্ছে। এই মহিলা আবার চাও খায়? তাঁর তো ধারণা দিন ভরে এই বাড়ির মানুষদের মাথা কিভাবে হাড়িতে ঘুটে ঘুটে মুড়িঘণ্ট বানাবে সেই তালে থাকে।

— তুমি ওতো রাতে ছাদে গিয়েছিলে কেন ?

দিলশাদ প্রথমে চমকালো! সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলো। সামলে মনে মনে হাসলো! পাগলামি দেখাবি বেটা, দিলশাদকে চিনিস তুই?

সে ভয় পাওয়ার ঢং করে আমতা আমতা করে বললো,— আসলে, ঘুম আসছিলো না। তাই ভাবলাম একটু ছাদে যাই। আমি সত্যিই জানতাম না উসমান ভাইয়াও যাবে।

রুবিনা চমকে উঠলো! উসমানও ছিলো নাকি? সে তো শুধু এই মেয়েকে যেতে দেখেছিলো। খুশিতে বাকবাকুম হয়ে নেচে নেচে যাচ্ছে। কি এমন খুশিতে মেতে থাকে কে জানে। সে মাথা ঘামায়নি। এই মেয়ে রাতে ছাদে যাক, জাহান্নামে যাক তার কি? এই সপ্তাহের’ই তো কথা। গেলেই বাঁচে! তাছাড়া উসমান বিয়ে নিয়ে ঝামেলাও করেনি। তাই সকালের কথা মাকে এখনও বলেনি। এখনতো তো মনে হয়েছে ভুল হয়েছে। এতো রাতে একটা ছেলে আর মেয়ে একা ছাদে। তাঁর মাথায় ধপ করে আগুন জ্বেলে উঠলো। সে তেঁতে উঠে বললো,— লজ্জা শরম নাই! বাবা,মা এই শিক্ষা দিছে। এটা উসমানের বাড়ি! সে যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারে। আর তুমি মেহমান! তাঁর মধ্যে মেয়ে মানুষ! ঘুম না আসলেই ছাদে যেতে হবে? অসভ্য মেয়েছেলে কোথাকার। বড় লোক ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে যেতে ইচ্ছে করে?

দিলশাদ ছল ছল চোখে কিছুক্ষণে তাকিয়ে রইলো। তারপরে এক দৌড়ে দীপার রুমের দিকে গেলো। আজকে নকও করলো না। সোজা ঢুকে গেলো।

উমর চমকে উঠলো। তাঁর ঘুম সবসময়ই পাতলা। তবে অতো মাথা ঘামালো না। সে জানে এটা দিলশাদ! এই ঘরে একমাএ সে’ই সময় অসময় আসে আর যায়।

সে সব সময়ের মতো কম্বলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ফেললো। তবে স্থায়ী হলো না। ফুঁপানির শব্দ কানে যেতেই সে ফট করে মাথা বের করলো।

দিলশাদ আজকে পর্দা টেনে খুলে নি! দীপাকেও টেনে তোলেনি। সোফায় বসে কাঁদছে। সে অবাক হলো। আস্তে করে উঠলো! দীপার আজকাল সকালেই ঘুম ভাঙে। সে উঠে গায়ে টিশার্ট জড়িয়ে এগিয়ে গেলো। শান্ত ভাবে বললো, — কি হয়েছে দিলশাদ?

দিলশাদ ফুঁপাতে ফুঁপাতেই মাথা ঝাকিয়ে বললো – কিছু না। আমি আজকে চলে যাবো।

উমর পাশে বসলো! কোমল সুরে বললো,— যেতে চাইলে যাবে। আমি নিজেই দিয়ে আসবো। তবে কাঁদছো কেন?

দিলশাদ কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো। তার চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে। চোখ, মুখ লাল। উমর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো! তারপর দিলশাদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। তাঁকে নিয়ে বাইরে আসলো।

রুবিনা টেবিলেই বসে ছিলো! তাঁদের দেখে মুখ বাঁকিয়ে বললো,— হুহ্! নালিশ করাও হয়ে গেছে। এখন কি করবি? ফুপুকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবি। দে এই দিন দেখার জন্যইতো তোগো কোলো পিঠে আগলায়া রাখছি। এখন ফুপুরা তো পর। আপনতো শুশুর বাড়ির লোক।

উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! এই মানুষগুলো যে রকমই হোক। সত্যিই তাদের পাশে ছিলো। ঐ সময়ে তাদের পাশে না থাকলে তারা ভেসে যেতো। তাই তাদের হাজার দোষ থাকলেও উমর কখনও কিছু বলেনা। আজও বললো না। তবে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো, — ওকে কি বলেছো?

— কেন সেটা তোমার আদরের দুলালী বলে নি?
— ও যা বলার বলেছে। আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
— এই মেয়ে একটা অসভ্য, বেয়াদব, লাজ লজ্জাহীন মেয়ে।
— ফুপু! উমর না চাইতেও চেঁচিয়ে উঠলো!

রুবিনা অবশ্য দমলো না! সে উঠে দাঁড়ালো! চেঁচিয়ে বললো,— আমার কথা বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস কর তোর আদরের শালীরে, — সকালে গোসল টোছল করে উসমানের রুমের সামনে কি? রাত বিরাতে উসমানের সাথে ছাদে কি?

— ফুপু!

উমর, দিলশাদ দু-জনেই চমকে উঠলো। দীপা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর শরীর কাঁপছে। দিলশাদ তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে দীপাকে ঝাপটে ধরলো। ধরে বললো, — রুমে চলো আপু! এসব কিছু না। এসব তো এই বাসায় চলতেই থাকে। নতুন কি? তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। আসোতো !

দীপা নড়লো না! সে উমরের দিকে তাঁকালো!

উমরের ভিতর কেঁপে উঠলো! সে কাতর চোখে দীপার দিকে তাঁকালো।

দীপাও তাকিয়ে রইলো! উমরের কাতরতা তাকে ছুঁলো বলেও মনে হলো না। তাঁর চোখ শান্ত! আজকে না আছে আগুন, না আছে পানি। এই শান্ত দীপাকে সে ভয় পায়, ভীষণ ভীষণ ভয়।

দীপা উমরের দিকে তাকিয়েই দিলশাদের হাত তাঁর শরীর থেকে ছাড়ালো। তাঁরপর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো। এতোক্ষণে হামিদা বানুও বেড়িয়ে এসেছে। সে এখনও বুঝতেই পারছেনা কি হয়েছে? সকাল সকালতো তিনি নিজেই চেঁচান। আজকে বাকি সবাই চেঁচাচ্ছে কেন?

দীপা রুবিনার সামনে দাঁড়ালো! দাঁড়িয়ে শান্ত ভাবে বললো,— এখন বলেন! কি যেন বলছিলেন?

রুবিনা রেগে ফেঁটে পড়লো! দু- দিনের পুচকে মেয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে। সে চেঁচিয়ে বললো,— আমি তোর কাছে জবাব দিহি দেব। কে তুই! নিজে তো গলায় ঝুলেছিস আবার বোনকেও ঝোলার পায়তারা করছিস?

দীপা হাসলো! অবজ্ঞার হাসি! হেসে বললো,— আমি ঝুলেছি না কি করেছি সেটা আর বলতে চাইছি না। বললে আর আপনাদের মুখ থাকবে না। আর এই পৃথিবীতে যদি একমাএ ছেলেও উসমান হয়। তবুও আমি আমার বোনকে দেব না। আর রইলো আমি কে?

আপনি কে? এই সংসারে আপনার ভূমিকা কি? না এটা আপনার বাবার সংসার, না ভাইয়ের, তো? এটা আমার সংসার। নিদানের সময় পাশে ছিলেন! ভালো! থাকেন, খান, আরাম আয়েশ করেন। কিন্তু… মুখ বন্ধ। আমাকে বলেন, বলেন! আমার বোনের ব্যাপারে এর পরে যদি একটা শব্দও এই মুখ দিয়ে বের হয়, তাহলে এই সংসারে আমি থাকবো না হয় আপনি! আর সেটা ডিসাইড কে করবে জানেন? আপনার প্রিয় ভাজিতা উমর। যাকে নিদানের সময় কোলে পিঠে মানুষ করেছেন।

বলেই দীপা উমরের দিকে তাকালো! এবার অবশ্য শান্ত না। চোখ ভর্তি আগুন। সে এই আগুন চোখেই বুঝালো। পুরো গুষ্টি নিয়ে সাবধান।

উমর হতম্বভ হয়ে তাকিয়ে রইলো। শুধু সে না বাকি সবাই। যে মেয়ে গত দু- বছরে টু – শব্দ করেনি। আজ এই আগুনরুপ দেখে।

দীপা আস্তে আস্তে দিলশাদের দিকে এগিয়ে গেলো। চোখ, মুখ পরম মমতায় মুছে দিলো। হাত ধরে এগুতে এগুতে বললো, –আয়! এটা তোর বোনের বাড়ি, বোনের সংসার। যেখানে খুশি, সেখানে যাবি। আর তোর বোন যখন চাইবে তুই তখনই এখান থেকে যাবি।

দিলশাদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বোনের দিকে তাকালো! অবশ্য উপরে, ভেতরে রে তো মন প্রাণ উজার করে সে হাসছে। এই তো তার বোন। ছোট বেলা থেকে যার ছায়ায় বড় হয়েছে সেই বোন। যাকে তিলে তিলে শেষ করেছে এই বাড়ির মানুষরা। কেমন লাগে এখন?

সে মনের খুশি মনে চেপেই দীপাকে জাপটে ধরলো! রুমের দিকে আস্তে আস্তে যেতে যেতে সে একবার রুবিনার দিকে তাকালো। এবার তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি! বিদ্রুপের হাসি।

সে সেই হাসি নিয়েই রুমে গেলো। ভাতিজাদের কোন চাঁদ মনে করেন কে জানে। এদের গলায় ঝুলতে আবার নাকি পায়তারা করতে হবে। হুহ্! শুধু আপু আছে বলে বেঁচে যাচ্ছিস, তা না হলে তোদের খবর ছিলো। অবশ্য আপুকে এরমধ্যে টানার তার ইচ্ছে ছিলো না। ইচ্ছে তো ছিলো ভাতিজা আর ফুপুর ড্রামা দেখার। তবে মাঝখানে আপু এসে ছক্কা পিটিয়ে দিয়েছে। তার আপু বলে কথা। বাই দ্যা ওয়ে মেজো ভাতিজা কোথায়? এতো এতো কাহিনী, বেটার কানে যাইনি? শখ না চুমু খাওয়ার হুম, এবার জনে জনে কৈফিয়ত দে, বেটা পাহাড় – পর্বত।

দিলশাদ, দীপা চলে গেছে কিন্তু রুবিনা ডাঙায় তোলা মাছের মতো হা হয়ে আছে। নিশ্বাস ফেলছে ঘন ঘন। এই ঘর সংসারে সে নাকি কিছু না।

উসমান বেরুলো অনেকটা পরে। তখন প্রায় সব কিছুই ঠান্ডা। সে অবশ্য ইচ্ছে করেই বেরুইনি। এই মেয়ে যে চুপচাপ বসবে না, সে জানতো। অবশ্য ফুপুরও একটু শিক্ষা হওয়ার দরকার। সবাই কি আর ভাবি? সে তো আর জানে না, এবার কার সাথে লাগতে গেছে। সে শুধু নিজের চাল দেয় না, সামনের জনের চালও নিজে ঠিক করে।

তাই ঠিকই আছে। যখন যা খুশি যাকে খুশি বলতে থাকে। একটা ঝটকার দরকার আছে। এমন না তাঁরা ফুপুকে পছন্দ করে না। কিন্তু দিন দিন তাদের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। ভাবি ভালো বলে চুপ ছিলো। ভাবির জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে এই আগুন আরো অনেক আগেই লাগতো।

সে হাই তুলে টেবিলে বসলো! ফুপু, দাদী এখনো বসে আছে। ফুপু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর দাদী বিরক্ত মুখে বসে আছে। সে এখনও ব্লাস্ট হয়নি কেন, কে জানে? এরও একটু শিক্ষা হওয়া দরকার। বয়স হয়েছে আল্লাহ, আল্লাহ করবে, তা না। করে সংসার, সংসার।

— নাস্তা দাও ফুপু!

রুবিনার নিভে যাওয়া রাগ আবার দপ করে জ্বলে উঠলো। জ্বলে বললো, —- আমাকে বলিস কেন?আমি নিদানের বান্দী ছিলাম। বান্দীগিড়ি করেছি। এখন সময় শেষ। এখন নতুন মেডাম আইছে, তাঁর সংসার। তাঁরে ক..

উসমান বিরক্ত হলো! বিরক্ত মুখে বললো —– এতো সংসার সংসার করো নাতো ফুপু। দোষতো তোমাদেরই। ভাবি কখনও কিছু বলেছে। এই সংসার নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে। তোমারাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মুখ খুলিয়েছো। এখন লও ঠেলা। বেশি করবে, ভাবি আরো বেঁকে যাবে । যেয়ে ভাইকে নিয়ে ফুরুৎ! একটা কথা মনে রেখে। ভাইয়ে মুখ খুলুক আর না খুলুক। ভাবি যেই দিকে ভাইয়েও সেই দিকে। আর আমাদের কি! আমাদের ভাই যেখানে আমরাও সেখানে। পরে কইরো সংসার, সংসার। আজকাল দিনে মা, বাবারে নিয়াই বউরা খায়না। আর তোমরা কোথাকার দাদী, ফুপু। পরে যেও নিজের ছেলেদের কাছে। তাঁরা তোমারে যত্নেই রাখবে। তবে তোমাদের যে মুখ। দু-দিনেও টিকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।

রুবিনা রেগে আগুন হয়ে তাকিয়ে রইলেন! আঁতকে উঠলেন হামিদা। তাঁর এতো দিনের সংসার এহনি ভাইঙ্গা যাইবো। এমন না তাঁর যাওয়ার জায়গা নাই। তিন ছেলে তাঁরে মাথায় কইরাই রাখবো। তবুও সেটা বউদের সংসার। এই বাসায় যেমন মন খুইলা নিজের মতো আছে তা কি আর পারবো। সব কিছু হইবো বউগো ইচ্ছায়।

সে রেগে গেলো। রেগে রুবিনার হাতে লাঠির খোঁচা মেররে বললো,— কোন দুঃখে তুই সাত সকালে চেঁচাইতে গেছোস। আর ঐ মেয়েটা দু-দিনের মেহমান। তাঁকে কেন বকতে গেলি। উমর আগেই কি কইছিলো কানে ঢুকে নাই।

রুবিনাও সমান তালে বললো — হ হ সব দোষ এখন আমার! তা তোমার আদরের নাতিরে জিগাও। ঐ দু- দিনের মেহমানরে নিয়ে রাতে ছাদে কি ?

হামিদা বানু উসমানের দিকে তাকালো! তাকিয়ে বললো,—- তুই ঐ মাইয়া নিয়া ছাদে কি করছোস?

— কি করবো?
— সেই ডাই জিগাইতাছি কি করছোস তুই?

উসমান এবার হেসে ফেললো! মন দেওয়ার আর মানুষ পায়নি। জীবন তার এখনি শেষ। পরে যে কপালে কি আছে কে জানে? সে হেসে বললো,—- ছাদে কি করবো! ছাদ কি কিছু করার জায়গা?

হামিদা বানু লাঠি তুললেন! তুলে বললেন, — হারামজাদা! করার জায়গা থাকলে তুই করতি?

— তুমিও না দাদী! আমি ওমন ছেলে?

হামিদা বানু কিছু বললেন না। ঠোঁট চেপে বসে রইলেন। কারে কি কইবো সে! সব কয়টা নাতি নাতনী বদমাইশের হাড্ডি। ঐ দিকে সেই দিন সকালে জসিম ফোন দিছে! বিয়ে করাইলে তাড়াতাড়ি করাও। সুমির নাকি কোন ছেলের সাথে লটরপটর। পরে না আবার কোন নাক টাক কাটাই ফেলে।

তাইতো সে এই সপ্তাহেই কাবিন টা রাখলো। এখন আবার এই উসমাইনা। আরে বেটা দু-দিন পরে তোর বিয়া। আরেকটু ধৈর্য্য ধর, না! এহন তার ছাদে যাইয়া লটরপটর করা লাগবো।? আর এই দিকে রুবিনা! এই গুলা কি চিল্লায়ে মানুষরে শুনানোর কথা।
আরে বেটি! তুই দেখছোস চুপ থাক। নিজেগো পুলাপান। তাও আবার দু-দিন পরে বিয়া। বিয়া হইলে বউর পেদানিতে এইসব কোথায় যাইবো। তা না! সাত সকালে চিল্লায়ে সাত বাড়ির মানুষরে শোনানো। আল্লাগ গো! যে কদিন তাঁর হায়েত আছে, এদের জ্বালায় মনে হয় সেই পর্যন্ত আর যাইতে পারবো না। তাঁর আগেই শ্যাষ।

চলবে…….