দর্পণ পর্ব-১৭+১৮

0
116

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৭

সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো হাসি, এতো আনন্দ সব এক মূহুর্তেই ফ্যাকাশে রুপ ধারণ করেছে । সুমির মার অবস্থা খারাপ! প্রেশার বেড়ে হাই। মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে পালা ক্রমে।

সে সেই অবস্থা’ই আহাজারি করছে। তার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, তাঁর মেয়ে বিয়ের আসর থেকে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। আহারে! তাঁর সাদাসিধা মেয়েটা! সকাল থেকে কি সুন্দর হেসে খেলে পুরো বাড়ি ঘুরলো। সে ভাবলো! ভাবিদের মধ্যে হয়তো আছে। তাইতো ওতো খেয়ালও রাখেন নি। সেই মেয়ে নাকি নাই। নাই তো নাই।

কোন ছেলের সাথে নাকি চলে গেছে। আবার মেসেজ করেও নাকি দিয়েছে, সে নাকি বিয়েও করে ফেলেছে।
আল্লাহ! সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তাঁর পিচ্চি মেয়েটা! সে দুনিয়া দারির কি বুঝে? নিশ্চয়ই কুলাঙ্গার ছেলে জাদু টুনা করছে। বড়লোক বাপের একমাএ মেয়ে। নিলেই তো লাভ। সে আর ভাবতে পারলো না। বুক চাপড়ে কাঁদতে লাগলো ।

জসিম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে! সে অবশ্য জানতো! তবে এভাবে চুনকালি মাখবে সেটা বুঝতে পারে নি।

সবার চেয়ে খারাপ অবস্থা আলি হোসেনের! সে ডাঙায় তোলা মাছের মতো হা করে নিশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। তাঁকে জাপটে ধরে বসে বিলাপ করছে সাবিহা।

উমর সেই দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে ইউসুফকে বললো,—- বাবার কি হয়েছে? এমন করছে কেন? মেয়ে কি তাঁর পালিয়ে গেছে?

ইউসুফও বিরক্ত হলো! সুমি ডাইনিকে সে নিজেই পালাতে সাহায্য করছে। এমন না খারাপ ছেলে। ভালো ছেলে! দু- জন দু- জনকে ভালোবাসে। কি দরকার জোর করে আরেক জায়গায় বিয়ে দেওয়ার। এটাই সে বাবাকে বুঝিয়েছে! সুমিও অবশ্য বাবার খুব হাতে পায়ে ধরেছে। তা না হলে সম্ভব হতো না। বাবা নিজে গিয়ে ছেলের খোঁজ খবর নিয়েছে। হাজার হলেও নিজেদের মেয়ে বলে কথা। তবেই সে রাজি হয়েছে।

কথা ছিলো খবর ব্লাস্ট হলে বাবা যেন একটু অ্যাক্টিং করে । কিন্তু এতো অভার অ্যাক্টিং করছে কেন? আরেক পাগল হলো এই মহিলা! যেই ডায়লগ দেয়া হয়েছে সেটার খবর নেই। মরা বাড়ির মতো বিলাপ করে বাড়ি মাথায় তুলছে। ধুর!

আর এই সব কিছুর মধ্যে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে উসমান। তাঁর দৃষ্টি দিলশাদের দিকে। মেয়েটা হতম্বভ হয়ে গোলগোল চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছে। এইভাবে তাকিয়ে থাকলে মেয়েটা কে খুব কিউট লাগে। পুতল পুতুল একটা ভাব আসে। ইচ্ছে করে আদুরে হাতে গালগুলো টেনে দিতে।

সে মনে মনে হাসলো! এই মেয়ে এখনও ধরতে পারেনি চাল কোন দিকে যাচ্ছে। সে নাটক হজম করার চেষ্টায় আছে।

সে মোবাইল বের করে মেসেজ দিলো,— হাজমোলা লাগবে?
মেসেজ দেখতেই দিলশাদ তার দিকে কঠিন চোখে তাকালো! তাকিয়ে সেও মেসেজ দিলো,—- এই সব আপনি করেছেন তাইনা?

উসমান মৃদু হাসলো! হেসে লিখলো,—- একদম না! আমিতো বাসর ঘরেরও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম। আহারে! সব আশায় পানি পড়ে গেলো। ইশ! এখন আবার একটা চোখ মারোতো! দুধের সাধ ঘোলে মিটাই।

দিলশাদের খুব রাগ হলো! একটা মেয়ে চলে গেছে। তার বাবা, মার এই অবস্থা। এই খবিশ ব্যাটা মরে যাচ্ছে বাসরের চিন্তায়। সে দাঁতে দাঁত চেপে আরো কিছু কিঠিন শব্দ লিখতে চাইলো। তখনি সাবিহা আহাজার করে উঠলো,—- আহারে এই মানুষটা এখন সমাজে মুখ দেখাবে কি করে? মান সম্মান আর রইলো না। সবাই এখন দেখলেই আঙ্গুল তুলে বলবে, —- ওই যে আলি হোসেন! সবাই তাঁকে ভয় পেলেও নিজের সন্তানেরা পায় না। তাই তো নাক কেটে চলে গেছে। আর তাঁর এই নিষ্পাপ ছেলেটার কি হবে? রাস্তায় বেরুলেই বলবে,— এর বউ পালায় গেছে! আল্লাহ! আমার স্বামীটা এখন কি করবে? তুমিই রাস্তা দেখায় দেও।

উমর, উসমান ঝটকা খেলো! বলে কি এই মহিলা। মেয়ে গেছে যাক এতে তাঁদের আবার কি হবে? আর লোকের কথা বাবা আবার গনায় ধরা শুরু করলো কবে?

হামিদা বানু বসে আছে চুপচাপ । ঐ হারামজাদি যে তাঁদের এভাবে নাক কাটবে সে ভাবতেই পারে নাই। এখন যদি আলি জানে সম্পর্কের কথা আমি আগেই জানতাম। জাইনাও এই বিয়ের আয়োজন করছি তো?
হামিদা বানুর ভেতর কেঁপে উঠলো! মনে মনে বিলাপ শুরু করলো। হায়! হায়রে! আলি আমারে কোনদিনও মাফ করবো না। আল্লাহরে তাঁর ছেলেটা! তারে কতো আদরে, যত্নে, সম্মানে রাখছে। আর সে নিজের হাতে তার এতো কষ্টের অর্জনের এই সম্মান নষ্ট করলো। তার জেদের কারণেই এইসব হইতাছে? আল্লাহগো, এখন তিনি কি করবেন? কি করে সব ঠিক করবেন?

রাজ্জাক সাহেব এগিয়ে এলেন! তাঁর নিজের খুব খারাপ লাগছে। তাঁরা নিজেরাও এই অবস্থার ভিতরে দিয়ে গেছেন। তখন মা, বাবার উপর দিয়ে কি যায় তাদের চেয়ে ভালো কে জানে? সে আলি হোসেনের হাত ধরে বললেন, —- এতো টেনশন নিয়েন না ভাই। আল্লাহ সব ঠিক করে দিবে। উঠেন! আপনি বড়! আপনিই এভাবে ভেঙে পড়লে বাকি সবাইকে সামলাবে কে?

আলি হোসেন সুযোগের সৎ ব্যবহার করলেন। তাঁর দু- হাত আকড়ে ধরে বললেন,— আমার সম্মানটা বাঁচান ভাই! এখন একমাএ আপনিই পারেন। আমার এই ডুবে যাওয়া নৌকা বাঁচাতে।

রাজ্জাক সাহেব অবাক হলেন! অবাক হয়ে বললেন,— কি বলেন ভাই ? আমি কিভাবে?

— আপনার ছোট মেয়েটা আমারে দেন? এই আসরে বিয়ে না হলে আমি আর মুখ দেখাইতে পারবো না।

ঘরে বোমা ফাটলেও হয়তে সবাই এতো অবাক হতো না। যতোটা এই কথায় হলো। রুবিনা সাথে সাথেই চেঁচিয়ে উঠলেন, — তোমার মাথা গেছে ভাই?
সাথেই সাথেই হামিতা বানু লাঠি দিয়ে রুবিনার বাহুতে বাড়ি মারলেন! মেরে বললেন, —- চুপ! চুপ কর হারামজাদি। খারাপ কি কইছে? আমাগো উসমানের মতো আর পোলা পাইবো।

রুবিনা অবাক হয়ে বললো,—- উসমানের মতো পোলা পাইবো মানে কি? উসমানের জন্য মেয়ের অভাব আছে?
রাজ্জাক সাহেব হতম্বভ হয়ে বসে আছে। হতম্বভ উমরও! কি হচ্ছে এখানে?

উসমান কে তেমর বিচলিত মনে হলো না! সে দিলশাদের দিকে তাকালো! তাকিয়ে অবাক হলো! দিলশাদ সেখানে নেই! আশ্চর্য! এই মেয়ে আবার কোথায় গেলো?

সুমিরটা সে আগেই জানতো! এমন কিছু করবে সে আগেই বুঝেছিলো। আর ইউসুফ! তাদেরটাও সে কিছুটা আন্দাজ করেছিলো। তা না হলে হঠাৎ করে এতো বাপের নেওটা হওয়ার মানে কি? তো মিস বুদ্ধিমতি দিলশাদ! বাবার ব্রেইন ওয়াস করে সাবিহা ওনাকে এনেছো। যাতে তিন বাবা ছেলের মাঝে গেঞ্জাম লাগে। এখন দেখো এরাই তোমাকে ফাসানোর জন্য কি সুন্দর অভিনয় করছে। পরের জন্য কুয়া খুঁড়লে নিজেই পড়তে হয়। এখন দেখি কি করে বাঁচো মিস দিলশাদ।

দিলশাদ রুমে আসলো! খাদিজা দীপাকে নিয়ে ভিতরে এসে পড়েছিলো। মেয়েটার শরীর তাঁর কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না । ভেবেছিলেন বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলবে। এখন লেগে গেছে আরেক ঝামেলা। কখন ঠিক হবে কে জানে।
সে দিলশাদের দিকে তাকালো! মুখ শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে আছে। এর আবার কি হলো?

সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দীপা বললো, — কি হয়েছো তোর?
দিলশাদ কেঁদে ফেললো! না, এবার কোন ঢংগের কান্না না, আসল কান্না। আঙ্কেলের কথায়’ই সে বুঝে গিয়েছে এখন কি হবে? বাবা যদি একবার হ্যাঁ করে দেয়, তখন সে কি করবে?

দীপা আস্তে আস্তে উঠে বসলো! দিলশাদ কে কাছে ডাকলো।

দিলশাদ এগিয়ে এসেই দীপাকে জড়িয়ে ধরলো!ধরে বললো,—- আমি বিয়ে করবো না আপু! তোমার দেবরকে তো অবশ্যই না । কিছু করো আপু। তাড়াতাড়ি করো! আব্বু একবার হ্যাঁ বললে, আমি আর কিছু করতে পারবো না। তোমার শুশুর, তোমার জামাই, তোমার শুশুর বাড়ির লোক সবাই খারাপ আপু! সবাই খারাপ! তোমার মতো আমাকে আটকে রাখার প্ল্যান করছে। আমি তোমার মতো জীবন চাই না আপু! একদম চাই না।

দীপার মাথা ঘুরে গেলো! কি বলে এই মেয়ে। সে আগা মাথা না বুঝলেও কিছুটা আন্দাজ করলো। আর করেই পুরো শরীরে কিছু একটা জ্বলে উঠলো।দু- বছরের জামানো রাগ, জেদ, ক্ষোভ সব একসাথে বেড়িয়ে এলো।

সে দিলশাদকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো! খাদিজা বারণ করলো! সে বললো,— “তোর যেতে হবে না। আমি দেখছি!”

সেই কথা দীপা কানে গেলেও বলে মনে হলো না। সে এখন তাঁর নিজের মধ্যে নেই। তাঁর নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়েছে। তাঁর বোনের সাথে তো এ হতে দেবে না। মরে গেলেও না। সে আস্তে আস্তে হেঁটে বাইরে এলো! এসে শান্ত ভাবে বললো,— কি হচ্ছে এখানে?

সবাই দীপার দিকে তাকালো! দীপাকে পাগলের মতো লাগলো। তারচোখ টকটকে লাল।

উমর ভয় পেলো! সে এগিয়ে এসে আস্তে করে বললো,— কিছু না! আমি দেখছি! তুমি ভিতরে যাও।

দীপা উমরের দিকে তাকিয়ে হাসলো! তাছিল্যের হাসি! তারপর তার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললো,—- কি করবে তুমি? তোমার কিছু করার ক্ষমতা আছে? থাকলে এই নাটক এখনও চলতো? তোমার ক্ষমতা কতোদূর জানো? অসহায় এক মেয়েকে জোর করে বিয়ে করা, জোর করে আটকে রাখা আর জোর করে বাচ্চা পয়দা করা।

উমরের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো! দীপা যা বলেছে সবই সত্য। তবুও তাঁর বুক এফোড় ওফোড় হয়ে গেলো। এতো কিছু দেখলে, শুধু তার ভালোবাসাটা একবারও দেখলো না।

দীপা রাজ্জাক সাহেবের দিকে তাকালো! তাকিয়ে বললো, —- তোমার মেয়ের হাত চাইছে আব্বু। যারা চাচ্ছে! হ্যাঁ বা না বলার আগে তাদের সম্পর্কে একটু জানবে না?

রাজ্জাক সাহেব উঠে দাঁড়ালেন! বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন! কি বলে তাঁর মেয়ে। দীপা ভালোবেসে বিয়ে করেনি? দাঁড়ালেন আলি হোসেনও! তবে এখন আর তিনি অভিনয় করছেন না। তাঁর চোখে মুখে অনুতপ্ত। তাঁর চোখে অনুতপ্ত থাকলেও বাকি সবার চোখে বিস্ময়। সবাই জানে উমর আর দীপা প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছে। এখন তো শুনছে ভিন্ন।

—- যেই মানুষটার দুঃখে কাতর হয়ে হাত ধরে বসে আছো না। সেই কিন্তু সব জানতো। তার ছেলে কি করছে না করছে। তখন কিন্তু সে তোমার সম্মান তোমার দুঃখের কথা একবারও ভাবেনি। ছেলে যা করেছে চুপচাপ তাঁর সাথে সায় দিয়েছে। এখনও দিচ্ছে! তুমি এদের চেনোনা বাবা। এরা নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে।

দীপা থামলো! ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে সে ! তাঁর শরীরও কাঁপছে। সে তাঁর কাঁপা কাঁপা হাত পেটে রাখলো। কিছু একটা হচ্ছে। তবে সে বুঝতে পারছে না।
সে সেই অবস্থায়’ই আবার বললো, — এই যে যা দেখছো সব নাটক! এরা নিজেদের প্রয়োজনে সব করতে পারে। তোমার এক মেয়ের জীবন তার ভুলেই নষ্ট হয়েছে। সেই ভুলের মাশুল আরেক মেয়েকে দিয়োনা না বাবা। আমি… দীপা আর কথা বলতে পারলো না।

তাঁর অবস্থা দেখে উমরের চোখে পানি এসে গেলো। তাঁর জন্য আর কতো কষ্ট করবে মেয়েটা। যাও সব কষ্টের সমাপ্তি টানলাম। তোমার জন্য সব করতে পারি না হয় এটাও করলাম।

উমর চোখের পানি মুছলো! দীপার কিছু বলবে তার আগেই সে নিস্তেজ, শান্ত ভাবে বললো,— আমি দীপাকে জোর করে বিয়ে করেছি। তাঁকে তুলে এনেছিলাম আপনাদের বাড়ির সামনে থেকেই। এনে বলতে গেলে একপ্রকার আটকেই রেখেছি। বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি বাইরের দুনিয়া থেকে।

তারপর রাজ্জাক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,— আপনাদের কাছ থেকেও। এই পরিবার আপনাদের যোগ্য না! তাই হ্যাঁ বা না বলার আগে অনন্ত দশ বার ভাববেন।

দীপা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। আস্তে আস্তে বসে পড়লো! তাঁর চোখ থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে। উমরের এগিয়ে যেতে ইচ্ছা করলো। বুকের মধ্যে জাপটে ধরতে ইচ্ছা করলো। তবে সে গেলো না। সে উসমানের দিকে এগিয়ে আগের মতোই শান্ত ভাবে বললো,— গাড়ি বের কর! ওকে হসপিটালে নিতে হবে।

খাদিজা আর দিলশাদ দৌড়ে এলো। খাদিজা দীপার পায়ের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন। রাজ্জাক সাহেকের দিকে তাকিয়ে বললেন, —- ওকে হসপিটালে নিতে হবে! এক্ষুণি নিতে হবে । তাড়াতাড়ি করো তোমরা।

সবাই এগিয়ে আসলো! উসমান দৌড়ে গেলো গাড়ি বের করতে। সবাই ধরাধরি করে দীপা কে গাড়িতে বসালো। কিন্তু দীপা, আশেপাশে শুধু একজনকেই খুঁজলো! কিন্তু সে নেই! কোথাও নেই।

চলবে…….

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৮

দিলশাদ মুখ ভার করে সব কিছু গোছগাছে মোনোযোগ দিলো। গোছগাছের ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে দীপার দিকে তাকালো। সে চুপচাপ শুয়ে আছে। তার দৃষ্টি তার ছেলেদের দিকে। এই গুষ্টির মনে হয় মেয়ে ভাগ্য খারাপ। গন্ডায় গন্ডায় ছেলে আর ছেলে। তার আপুরও হয়েছে দুইটা । শুধু আপুর না! দিলশাদের ধারণা এদের তিন ভাইয়ের কারো কপালেই মেয়ে নেই। যতোবারই বাচ্চা হোক, হবে গন্ডায় গন্ডায় ছেলে আর ছেলে। এদের মধ্যে অবশ্য কোন সমস্যাও দেখা যাচ্ছে না। এরা মহাখুশি। হবেই না কেন? বংশের সৈন্য সামন্ত যে বাড়ছে। যতো বাড়বে ততোই তো লাভ। হুহ্! এই দিক দিয়ে সৈন্য সামন্ত বাড়াবে আর অন্য দিক দিয়ে অন্য বাড়ির মেয়েদের নিয়ে টানাটানি করবে। একটা মেয়ে হলে হতো টা কি?

সে মুখ বাঁকিয়ে আফসোস করতে করতে চুপচাপ বসলো! বসে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো! গত চারদিন বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে তার ফুসফুস মনে হয় দু- হাত আরো বেশি ফুলে গেছে। ফুলবেই না কেন? তার আপু কথা বলছে না। কারো সাথেই না। যেটুকু দরকার সে’ই টুকুই। তারতো ধারণা ছিলো এই মুক্তিতে আপু খুশি হবে, ভালো থাকবে। এই হলো ভালো থাকার নমুনা। এ জন্যই বলে বেশি ভালো করতে নেই, পরে সব বোঝা নিজের ঘাড়েই পরে। এখন বসে বসে টানো। হুহ্!

সেদিন আপুকে হসপিটালে আনতেই ডাক্তার বললো ইমার্জেন্সি সিজার করতে হবে। অল্প অল্প করে ওয়াটার ব্রেক হয়েছে। আপু হয়তো বুঝতে পারে নি। কাওকে বলেও নি। তখন অতিরিক্ত টেনশন আর কথা বলার কারণে বেশি হয়েছে। তাই পানির পরিমাণ কমে গেছে। তাই এখন সিজার না হলে বাচ্চাদের বাঁচাতে সমস্যা হবে।

তা শুনেই উমর ভাইয়া! মনে মনে ভাইয়া বলতেই দিলশাদ থামলো। ভাইয়া তা হলে হয়েই গেলো। আপুর আর দোষ দিয়ে লাভ কি? তার মতো কাঠখোট্টা মেয়েই গলে গলো পানি হয়ে গেলো। ধুর!
যাইহোক! তখন সে শান্ত ভাবে শুধু বলেছে, — যেভাবে ভালো হয় সেটাই করবেন। আমাদের সমস্যা নেই, শুধু দীপার যেন কোন ক্ষতি না হয়। সে যেন সুস্থ থাকে।

দিলশাদ অবাক হয়েছিলো! সে বাচ্চাদের কথা বলেনি। অথচো বাচ্চাদের কথাই আগে আসার কথা ছিলো।

যেহেতু নয় মাস হয়ে গিয়েছিলো। সঠিক সময়ে হসপিটালে আনাতে তেমন সমস্যা হয়নি। বাচ্চা, মা দুজনেই সুস্থ আছে।
আজকে চারদিন! হসপিটাল থেকে রিলিজ দেবে। এই চারদিনে উমর ভাইয়া একবারের জন্যও হসপিটালে আসেনি। প্রথম দিন অবশ্য এসেছিলো। সবার শেষে। সেই দিন প্রথম দিলশাদ এই মানুষটাকে ভালো ভাবে খেয়াল করেছে। তখনি তার প্রথম মনে হয়েছে। হয়তো তার রাস্তা ভুল ছিলো। তবে ভালোবাসাটা সত্যি।

সাবিহা আন্টি যখন বাচ্চাদের তার কোলে দিলো। তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। সে দুজনকেই বুকে আগলে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সেই যে গেলো আর আসেনি।

দিলশাদের খারাপ লাগছে। অথচো সে এটাই চেয়েছে। আর সবাই অবশ্য ঠিকিই আসছে, যাচ্ছে। কি লাগবে, না লাগবে হসপিটালের সব দেখছে উসমান! আলি হোসেনও দু- বেলা করে আসছেন। আসার সময় দু-হাত ভরে জিনিসপএ নিয়ে আসছেন। হামিদা বানু আসতে না পারলেও ফোন দিচ্ছেন। ফোন দিয়ে এতো এতো জ্ঞান! এটা করবা না, ঐ করবা না! এটা খাইবে না।

আর সবচেয়ে বড় কথা ইউসুফ আর সাবিহা। তারা তাদের সাথে হসপিটালেই আছে। আর আছে রুবিনাও। সে অবশ্য কারো সাথে তেমন কথা বলছে না। বাচ্চাদের নিয়ে আছে। নিয়ে আছে সাবিহাও। তার বাচ্চা, কাচ্চা নেই। বিয়ের পরে এই পরিবারকেও তেমন পাইনি। তবে আজ পেয়ে যা করছে মন থেকেই করছে। আলি হোসেন একবার বাড়ি যেতে বলেছিলেন। সে যায় নি! তাকে কেও আর বারণও করেনি। রুবিনা আর সাবিহা বাচ্চাদেরই আগলে রাখছে।

আর ইউসুফ! সেইদিন দীপাকে বেডে দিতেই তার হাত ধরে কেঁদে ফেললো! সে খুব ভয় পেয়েছিলো। তার অবস্থাও যদি তার মায়ের মতো হয়। সে হাত ধরেই কেঁদে বললো,—- কারো কোন দোষ নেই ভাবি। বড় ভাইয়ের তো নে’ই। সে কিছু জানতোই না। সব দোষ আমার। সেই দিলশাদ আপুকে তার কাছে রাখতে এতো এতো প্ল্যান করেছিলো। তার তো মা নেই! মায়ের আদরও কখনও পায়নি। তোমাদের দেখলে আমার মা মনে হয়। তাইতো যেতে দিতে চাই নি। আমিতো বুঝিনি এতো কিছু হয়ে যাবে। তুমি আমাকে মাফ করবে না?

দীপা সেই অবস্থাই একটু হাসলো! হেসে চোখ দিয়ে ইউসুফ কে কাছে ডাকলো। ইউসুফ এগিয়ে একটু নিচু হয়ে বললো,— কি?

—- কিছু না।

ইউসুফ হেসে ফেললো! সে হাসলেও তার দু- চোখ পানিতে চিকচিক করছে। দিলশাদের মনে হলো,এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য হয়তো পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।

সেই দিন থেকে ইউসুফ তাদের সাথেই আছে। তার এক কথা সে যাবে না। এক কেবিনে এতো মানুষের জায়গা হওয়ার কথা না। তবে আলি হোসেন পাশের কেবিনও বুক করেছেন।

আর এতো এতো কাহিনীর মধ্যে একটা মানুষই নেই। কোথাও নেই! অথচো এই মানুষটারই সবার আগে থাকার কথা ছিলো।

দীপাও চুপচাপ! এই যে সে আসছেনা। দিলশাদের খারাপ লাগছে। খুব খুব খারাপ লাগছে। আর আপু! সে তো দু- বছর ধরে মানুষটার আশে পাশে, তার কেমন লাগছে? দিলশাদ আর ভাবতে পারলো না। তখন তার উসমানের বলা সেই কথাটা মনে পড়লো, — তোমার নামে দিল থাকলেও তোমার ভিতরে নেই। যদি থাকতো তাহলে দেখতে ভাবিও এটাই চায়।

দিলশাদ মন খারাপ করে চুপচাপ বসলো ! তার এখন সত্যিই মনে হলো। তার ভিতরে সত্যিই দিল নেই। সে আগে কেন দেখেনি।

আজ আপুকে তারা তাদের বাসায় নিয়ে যাবে। এই কথা যখন আব্বু আম্মু সবার সামনে বললো। সবার’ই মন খারাপ হয়েছে । তবে কেও কোন টু শব্দ করেনি। যেন সবাই জানতো এমনটাই হবে। তবে রুবিনা আগের চেয়ে মুখ আরো কালো করে বসে আছে। রাগে ফাঁটছে তবে মুখ খুলছে না। এই যে কেও কিছু বলছে না , মুখ খুলছে না। দিলশাদ জানে এর পেছনে একজনই আছে। যে কখনও আপুকে দূরে যেতে দিতে চাইনি। আজ নিজ থেকেই যাওয়ার জন্য সব রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে।

গাড়িতে উঠার সময় সাবিহা ঝরঝরে কেঁদে ফেললো! তার সন্তান নেই। এই চারদিন এদের কোলে পিঠে নিয়ে মায়া পড়ে গেছে। খাদিজা তাকে সান্তনা দিয়ে বললো, — আপা আপনার যখন মন চায় আপনি চলে আসবেন। মনে কোন অস্বিস্তি রাখবেন না। কাঁদলো রুবিনাও! এমনি যাই থাক দায়িত্ব আর কর্তব্য পালনে সে কখনও পিছ পা হয় নি। আর এরা তো তার নিজের রক্ত। নিজের সন্তাদেরও তিনি এতো আগলে ধরেন নি। যতোটা ভাইয়ের ছেলেদের ধরেছেন। আর তাদের সন্তান যে তাদেরই অংশ।

উসমান সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে গাড়িতে তুলছে! তার মধ্যে অবশ্য কোন ভাবান্তর নেই। সে আছে নির্বিকার! দিলশাদের দেখে খুব রাগ হলো! এতোও গা ছাড়া মানুষ হয়। সে মনে মনে কয়েকটা ভয়ংকর গালি দিলো। গালি দিতেই উসমান তার দিকে তাকালো। সাথে সাথে দিলশাদের মুখ চুপসে গেলো। কি এক যন্ত্রনা! মনে মনে কথা বলেও দেখি শান্তি নেই। হুহ্!

উসমান সব ঠিক করে দিলশাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে বললো,—- খুশিতে তো নেচে নেচে উড়ে বেড়ানোর কথা! যা চেয়েছো তাই হচ্ছে। তবে মুখ কালো কেন?

দিলশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো —- আপনি আমাকে তুমি বলছেন কেন? আমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন?

উসমান মৃদু হাসলো! হেসে পকেটে দু- হাত পুরে সোজা দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো,— মাএ খেয়াল করলে নাকি? আমিতো কবে থেকেই তুমি বলছি।

দিলশাদ অবাক হয়ে বললো, — কবে থেকে বলছেন?

— ওই যে সেই দিন রাতে! তুমির সাথে আরো কতো কিছুই তো করলাম। অনুমতি আর কতো কিছুর জন্য নেবো বলোতো? তাই তুমিতো সামান্য বিষয়। তাছাড়া কিস টিসের পরে আপনি ঠিক জমেনা। উফস্! স্যরি! স্লিপ অফ টাং। মহামান্য বেয়াইন সাহেবার সামনে একটা অভদ্র শব্দ উচ্চারণের জন্য এই সামান্য বান্দা খুবই দুঃখিত।

দিলশাদ আগুন চোখে তাকালো! এই ঢং দেখে তার শরীর জ্বলে গেলো। তার ইচ্ছে করলো এই বদমাইশের চুল ছিঁড়ে ভাজি করে খেয়ে ফেলতে। বদমাইশের বদমাইশ! সাথে সাথে মনে করার চেষ্টা করলো। তুমি বলেছিলো নাকি?

সে অন্য দিকে তাকালো! সে ঠিক করলো! বাকি জীবনে আর এই লোকটার সাথে কথা বলবে না। কখনও না! মরে গেলেও না । অসভ্যের হাড্ডি!

উসমান দিলশাদের দিকে তাকালো! কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো। সে জানে মনে মনে তার গুষ্টি উদ্ধার করছে। তারপর শান্ত ভাবে বললো,—- জানি বলার দরকার নেই। তবুও! ভাবি, বাচ্চাদের খেয়াল রেখো। আমাদের তিন ভাইয়ের একেবারে নিজের বলতে তো ভাবি ছাড়া কেও নেই।

দিলশাদ মনের প্রতিজ্ঞা এক্ষুণি ভঙ্গ করে ফেললো! করে বললো,— আপনার ভাইয়া কই?

উসমান দিলশাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো! সেই ভাবেই বললো,—- আমার ভাইয়া তোমার কি হয় মিস দিলশাদ?

দিলশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আস্তে করে বললো,—- ভাইয়া!

উসমান হাসলো!
— তাহলে তুমি তোমার ভাইয়াকে কেন জিজ্ঞেস করছো না, সে কোথায়?

দিলশাদ কিছু বললো না! সে দীপার দিকে তাকালো! গাড়িতে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে।ইশ! তাঁর বোনটা! মেন্টাল থেকে বের করতে গিয়ে রোবট বানিয়ে ফেললো নাকি?

উসমান হয়তো বুঝলো! শান্ত ভাবে বললো, — টেনশন করো না! সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলছি না, আমার ভাই পুরুষ হিসেবে উত্তম। মানুষ হিসেবে উত্তম। জানি সে ভুল করেছে। তবে ভাবির প্রতি তাঁর ভালোবাসা। এর মধ্যে তিল পরিমাণও খাঁদ নেই। এটা যেমন আমরা জানি, সেটা ভাবিও জানে। জানে বলেই সে চুপ। ভালোবাসায় মান, অভিমান, দূরত্ব এগুলো থাকবেই। তাই বলে শেষ হয়ে যায় না। তুমিই না বলেছিলে, এবার ডিসিশন তোমার আপু নেবে। মনে করো আমরাও তাই চাইছি! এবার ডিসিশন ভাবিই নিক। তবে যাই নিক! আমরা সবাই তাঁর সাথেই আছি।

দিলশাদ উসমানের দিকে তাকালো। সে তাকিয়েই ছিলো। তাই দু- জনের চোখে চোখ পরে গেলো। দিলশাদ চোখ সরিয়ে নিলো। এই প্রথম তাঁর মনে হলো। এই পাহাড় – পর্বত এতোটাও খারাপ না।

দিলশাদ গাড়িতে বসার সাথে সাথে ইউসুফও উঠে বসলো। দিলশাদ অবাক হয়ে বললো,— তুমি গাড়িতে উঠেছো কেন?

— তুমিও যেই কারণে উঠেছো, আমিও সেই কারণে উঠেছি।

দিলশাদ অবাক হয়ে বললো,— তুমি সেখানে গিয়ে কি করবে?

ইউসুফ উঠেছে ড্রাইভারের পাশে। সে পেছনে ফিরে বিরক্তমাখা কন্ঠে বললো,— তুমি এতোদিন আমাদের বাসায় কি করেছো?

— আমার কথা ভিন্ন ইউসুফ! তোমার স্কুল, লেখা পড়াও তো আছে।
— থাক! আমার দুই – ভাই, দু- মা বিদ্যাসাগর হয়েছে। আমার না হলেও চলবে।

দিলশাদ হেসে ফেললো! তাঁর বিয়েরও ঠিকমতো বয়স হয়নি আর এদিকে রেডিমেড বাচ্চা তাঁর সাথে সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবা যায়?

হাসলো খাদিজাও! সেই দিনের কথা জানার পরে তাঁর রাগ হওয়ার কথা । তবে কেন জানি রাগতে পারছেন না । দীপার বাবারও একই অবস্থা! রাগ করার সুযোগই পাচ্ছেন না। আলি হোসেন তাকে বগলদাবা করে নিয়ে ঘুরছে। এখানে ওখানে নিয়ে বড় গলায় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, — এটা আমার বেয়াই। বুঝেছো! আমার বড় ছেলের শুশুর।

এতো এতো কিছু হয়ে গেলো । কোন বিকার এই কয়দিনে এই মানুষটার মধ্যে একবারও দেখেনি। তবে আজ যখন হসপিটাল থেকে বেরুবে তার সামনেই দীপার বাবার হাত ধরে বলেছে, — “সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই করতে হয়। আপনি বাবা, আপনি বুঝবেন। তবে সব কিছুতে সায় দেই কেন জানেন, এই ছেলেদের সাথে আমি বড় অন্যায় করে ফেলেছি। নিজের মা, বোন, ভাই সবার খেয়াল রেখেছি, দাঁড় করিয়েছি, সব বিপদে আপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছি। তবে এদের মা! এর খেয়াল আমি রাখিনি। যখন তার পাশে শক্ত করে দাঁড়ানোর কথা ছিলো। তখন তাকে একা ছেড়ে দিয়েছি। এই ছেলে গুলো জানে, বুঝে। তবে কখনও আঙুল তুলে কিছু বলেনি। তাই ভয়ে ভয়ে থাকি কখন না জানি, সেই আঙুল তুলে ফেলে।

আমার ছেলেদের কেও নেই। আমিও নেই। কখনও সেই ভাবে ছিলামও না। তাই কাওকে আপন মনে হলে, মাকে কে তো ধরে রাখতে পারেনি তাকে জাপটে ধরে। তাই ধরে রাখার জন্য যে অন্যায় সে আপনার মেয়ের সাথে করেছে। তার জন্য আমার ছেলের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। ”

এই মানুষগুলো যেমনি থাক! তবে কেন জানি এখন আর অপছন্দ করতে পারছেন না তারা। সে জানে না, ঠিক কি হয়েছিলো। কেন হয়েছিলো! তবে বুঝতে পারছে মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। কষ্ট পেয়েছে বলেই এমন চুপ হয়ে গেছে। সে একবার কথা বলতে চেয়েছিলো! কিন্তু কেন জানি মন সায় দেয় নি। আগে কি হয়েছে তা জেনে কি লাভ! এই যে এখন উমর আসছেনা বলে, মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে। আর কেও না বুঝুক! সে তো তো মা। সে জানে, বুঝে ! আর এটাই এখন সত্যি। বাকি সব মিথ্যা! অতীতের কথা ভেবে বর্তমানে কষ্টের কোন মানে হয় না। আর এখন তো শুধু দীপা, উমর না। এদের মাঝে আছে দু- টো নিষ্পাপ শিশু। এদের কথাও ভাবতে হবে। তাই এখন শুধু এইটুকুই চাওয়া! তাঁর মেয়ে, তার মেয়ের সন্তানের যেভাবে ভালো হয়, যেভাবে সুখি হয় সব সেভাবেই হোক।

চলবে……..