দর্পণ পর্ব-১৯+২০

0
123

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৯

দীপা দু- বছর পর নিজের রুমে পা রাখলো। সে এসে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো। এই রুম, এই রুমের আসবাবপএ, রুমের প্রতিটি কোণা আর ঐ যে ছোট্ট একটা বারান্দা সব তার পরিচিত। তার শৈশব, কৈশোর সব কেটেছে এই রুমে। এই রুম, এই বাসায় আসার জন্য গত দু-বছরে সে অনেক ছটফট করেছে। প্রতিমূহুর্ত মনে হয়েছে! ইশ! কবে যাবো নিজের বাসায়। কবে একটু শান্তিতে ঘুমাবো? কবে যাবো নিজের মানুষদের কাছে। কবে যাবো সেই চিরচেনা শেকড়ে।

মেয়েদের শেকড় কি বদলায়? এই যে তার চিরচেনা রুম, চিরচেনা প্রতিটি কোণা। তবুও তার শান্তি লাগছে না। তাঁর ফেলা আসা সেই ঘর, সেই রুম, তাঁর সেই আপন না হওয়া সংসার আর….?

দীপার ভিতর ছটফটিয়ে উঠলো! মানুষটা তাঁকে পাশে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। কতো রাত গেছে সে ড্রইং রুমেই বসে থেকেছে। এই মানুষটা চাইলেই রুমে আরামছে ঘুমিয়ে যেতে পারতো, নিজের মতো থাকতে পারতো । তবে সে কখনও তা করেনি।

সে নিজে চুপচাপ বসে থাকতো। আর সে কারণে অকারণে ড্রইং রুমের আশে পাশে এটা ওটা করতেই থাকতো। এমন ভাব দুনিয়ার কাজ এলোমেলো হয়ে আছে। এখন না করলে কালকে আর করাই যাবে না।

তো এই কয়দিন কিভাবে আছে? এখন কি তার ঘুম আসছে? এই যে তাঁদের সন্তান! তাঁদের আসার কথা শুনে কি যে খুশি ছিলো। যেই দিন তারা প্রথম জানতে পারলো। তার ভিতরে কোন অনুভূতি হয়নি। খাটে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো সে।

আর উমর নিচে বসে তার পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলো! সেই প্রথম উমরকে সে কাঁদতে দেখলো। সে কেঁদে শুধু বলেছিলো,” আমার উপরের ঘৃণা আমার সন্তানের উপরে নিয়ো না দীপা, তারা নিষ্পাপ, নির্দোষ।”

সেই সন্তান! সেই সন্তান থেকে দূরে! কেমন করে আছে? একবার বুঝি তাদের দেখতে ইচ্ছে করে না, বুকে নিতে ইচ্ছা করে না? এই যে তার দীপার দম বন্ধ করা কষ্ট হচ্ছে। তার কি হচ্ছে না?

দীপা চোখ বন্ধ করলো! মনে মনে বললো, — আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে উমর। আমার না বলা কথা, না বলা কষ্ট তুমি না সব বুঝো। তাহলে এখন বুঝতে পারছোনা কেন?

দিলশাদ রুমে আসলো! আপুর আসার কথা শুনে একে একে তাঁদের গুষ্টি সবাই এসে হাজির হচ্ছে। ছোট্ট বাসা! তাঁর মধ্যে এতো মানুষ! পুরো বাড়ি গমগম করছে। সে দরজার সামনে আসতেই দেখলো, দীপা থম মেরে বসে আছে! চোখ বন্ধ আর সেই বন্ধ চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। দিলশাদ আর ভেতরে গেলো না। ঘুরে আম্মু- আব্বুর রুমে চলে এলো।সেখানে ইউসুফ খাটে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। সে তাঁর পাশেই বসলো! তাঁর অস্থির লাগছে।

— আমার কলিজারা কোথায়?

দিলশাদ উদাস ভাবে উত্তর দিলো, —- ঘুমোচ্ছে।

— তোমার কি হয়েছে?

দিলশাদ ইউসুফের দিকে তাকালো! তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! তখনি রায়হান রুমে আসলো! রায়হান তাঁর খালাতো ভাই। তাঁরা সমবয়সী।

— কিরে! তোদের বাসায় আসলাম। খবরও তো নিলি না। রুমের মধ্যে এসে ঝিম মেরে বসে আছিস। ব্যাপার কি? বলেই চেয়ার টেনে দিলশাদের ঠিক সামনে বসলো।

দিলশাদ হালকা হাসলো ! হেসে বললো,— কখন আসলি? তিহাও এসেছে?

— হ্যাঁ! এসেই বাবুদের কাছে জাপটে পড়েছে। তোদের খবর শুনে একে কি আর বাড়িতে রাখা যায়।

— তোর খবর কি? পরীক্ষার প্রস্তুতি মনে হয় জোড়েসোড়েই নিচ্ছিস।

— তা নিচ্ছি! তবে তুই যে ভার্সিটিতে আমিও সেই ভার্সিটিতে। একা আমি কোথাও যাচ্ছি না।

দিলশাদ রায়হানের বাহুতে থাপ্পড় দিলো! দিয়ে বললো,— আমার পিছু কবে ছাড়বি? স্কুল, কলেজ এখন আবার ভার্সিটি। আমার জীবনতো যাবে তোঁর চেহেরা দেখতে দেখতে।

— তো! আমিতো সেটাই চাই! এই মুখ ছাড়া আর কাওকে না দেখ।

দিলশাদ হেসে ফেললো ! সে খেয়ালই করিনি। ইউসুফ উঠে বসেছে। আর হাঁ করে তাকিয়ে আছে। সে সাথেই উসমানকে ম্যাসেজ পাঠালো, —- তুমি বসে বসে আঙ্গুল চুষো। এদিকে তোমার পাখি আরেক জনের সাথে হা হা, হি হি করছে।

রাতে দিলশাদ উমরকে ফোন দিলো! সে আর তিহা শুয়েছে নিচে। মা, আপু আর বাবুরা আছে খাটে। আব্বু, আম্মুর রুমে আছে ইউসুফ আর আব্বু। দু- রুমের বাসা। একটু কষ্ট তো করতেই হবে।

সে ফোন দিতে দিতে আড়চোখে দীপার দিকে তাকালো। দীপা কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সে ভালো করেই জানে আপু ঘুমায়ইনি।

সে ফোনের দিকে মনোযোগ দিলো। রিং হচ্ছে! একবার থেকে দু- বার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো! আশ্চর্য! সে তো ভেবেছিলো তাঁর ফোন হয়তো দেখেই কেটে দেবে।

সে একটু জোড়েই বললো —— আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই।

উমর মলিন ভাবে হাসলো! সাথে অবাকও হলো! দিলশাদ এই প্রথম তাঁকে কোন সম্বোধন করছে।

— ওয়াআলাইকুমুস সালাম শালী সাহেবা।

— যাক আমাদের মনে আছে তাহলে। যে ভাবে রিং হচ্ছিলো। আমিতো ভেবেই নিয়েছিলাম ধরবেন না। তবুও ভাগ্য ভালো। শেষ সময়ে আমাদের প্রতি দয়া হলো।

উমর বুঝতে পারলো না। ফোন কি অনেক্ষণ বেজেছে? কি জানি! ফোন পকেটে থাকলেও ধ্যান তার কই থাকে। সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, — যারা মনের মধ্যেই থাকে তাদের আলাদা ভাবে মনে করার কিছু নেই।

— বাহ্! বাহ্! কবিতা, ছন্দ এতো সুখ।

দীপা উঠে বসলো! সে ভ্রু কুঁচকে দিলশাদের দিকে তাকালো। উমর কি তাদের ছাড়া খুব ভালো আছে?

উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! তাঁর এই দীর্ঘশ্বাসের শব্দ দিলশাদ ফোনের এ পাশ থেকেও শুনলো। তাঁর খারাপ লাগলো। ভিতরে খারাপ লাগলেও উপরে এক গাল হেসে বললো,—- কি ব্যাপার বলেন তো? এতো খিলখিল করে হাসছেন। এতোদিন আপনাদের বাসায় থাকলাম, একবারও তো এরকম হাসি দেখলাম না।

উমর এবার সত্যিই হাসলো! এবার সব বুঝলো। দীপা নিশ্চয়ই আশে পাশে আছে। তাই এই মেয়ে এমন নাটক করছে। ভাগ্য গুণে পেয়েছে এক শালী।

— কি হলো? কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন? নাকি আমাদের সাথে কথাও বলতে চান না?

— ভয়ে বলছি না! কোন আগুন কোন দিক দিয়ে লাগাচ্ছো কে জানে?

দিলশাদ মন খারাপের ঢং করে বললো,— এটা বলতে পারলেন আপনি? হ্যাঁ! বলবেনইতো! এখনতো আর দায়বদ্ধতা নেই। যার ছিলো সে তো চলেই এসেছে। এখনতো আপনার দিল খোলা আকাশের পক্ষী! করবে শুধু এদিক ওদিক উড়াউড়ি।

উমর মৃদু হাসলো! হেসে মাথা চুলকালো! এই মেয়ে কি বলছে আর তার কি উত্তর দেবে সে বুঝতে পারছে না।
— রাতে খেয়েছেন ?

উমর এই কথারও উত্তর দিলো না। আসলে কি দেবে। সে এখনো খায়ই নি। রাতে কেন দুপুরেও না। খিদেই পায় না। খাবে কি?

দিলশাদ নিজের মতোই বললো —- ওরে বাবা আজকে বাইরে ডিনার করেছেন। ভালোই! কই আমাদেরতো একদিন নিলেনও না বাইরে ডিনার করতে।

উমর এবার হা হয়ে গেলো! এই মেয়ে বলছে কি? এমনিতেই তার সংসারে আগুন লেগে আছে। বাকিটুকুও এই মেয়ে শেষ করে ফেলবে। সে তাড়াতাড়ি বললো,— আজকে তাহলে রাখি দিলশাদ। পরে কথা হবে।

—- হ্যাঁ, হ্যাঁ! রাখছি! এখনতো আমাদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগবেই না। কথা বলাইতো সময় নষ্ট। এখন কথা বলার কতো মানুষ। যাকে দিয়ে সম্পর্ক সে ই নেই, আর আমরা কোন ছাতার মাথা। হুহ্! বলেই দিলশাদ ফট করে ফোন রাখলো। রেখে বালিশে মুখ চেপে এমন ভাবে শুলো, যেন দুঃখে কষ্টে সে মরে যাচ্ছে।

ফোন রাখতেই উমর কিছুক্ষণ হতম্ভব হয়ে বসে রইলো। এই মেয়ে তার চিন্তার বাইরের সাবজেক্ট।

সে সিগারেট ধরালো! সে বসে আছে ছাদে। রুমে তাঁর যেতে ইচ্ছা করে না। কেমন শূণ্য শূণ্য মনে হয়। তবে সে জানে দীপা আসবে। অবশ্যই আসবে। দীপা নিজে না জানুক! সে জানে! দীপা তাকে ভালোবাসে। শুধু সেই ভালোবাসার সামনে ছোট্ট একটা দেয়াল । সেটা ভেঙেই সে আসবে।

সে চোখ বন্ধ করে পা ছড়িয়ে নিচেই বসে পড়লো। তাকে দেখেই যে কেওই বলে দিতে পারবে, তাঁর রাতগুলে যাচ্ছে নির্ঘুম । সে চুপচাপ ঝিম মেরে বসে রইলো। তাঁর হাতের সিগারেট হাতেই নিশ্চুপ নিভে গেলো। এক সময় সে প্রচুর সিগারেট খেতো। দীপাকে বিয়ে করার পর আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়েছে। না! দীপা কখনও বলে নি। সে নিজেই ছেড়েছে। এটা ভেবে দীপার যদি ভালো না লাগে।

সারা রাতও দীপা চোখ বন্ধ করতে পারলো না। কতোক্ষণ আস্তে আস্তে এপাশ ওপাশ করলো। বাবুদের নেড়েচেড়ে ঠিক ভাবে শোয়ালো। বাবুরা হয়েছে তাঁর বাপ চাচাদের কপি। দু- টোর চেহেরাই এক। সে বিরক্ত নিয়ে উঠে দিলশাদের দিকে বালিশ ছুঁড়ে মাড়লো।

দিলশাদ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো! তাঁর চোখ মাএই ঘুমে লেগে এসেছিলো। সে হতবিহ্বল হয়ে আশে পাশে তাকিয়ে বললো, —- কি হয়েছে? ভূমিকম্প নাকি! আল্লাহ।

দীপা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,—- তোর মাথার ভূমিকম্প। আমার ঘুম হারাম করে। সবাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ফোন দে তোর!

দিলশাদ ভোঁতা মুখে ফোন এগিয়ে দিলো! এগিয়ে দিয়ে বললো,—- জামাইয়ের ঝাল আমাকে দেখাচ্ছো কেন? সে তো বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিব্বি আরামে ঘুমাচ্ছে। আমার হয়েছে যতো জ্বালা। বলেই ঐ দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। শুয়েই মুচকি হাসলো । জামাই বউ একই ধাচের! দু- জন দু-জনকে ছাড়া চলে না । আবার ঢং! আর এদের ঢংয়ে তার জীবন তেজপাতা। যে ঢং, যে নাটক এই কয়দিনে করলো না। হলিউডে করলে দু- তিনটা অস্কার তার ঝুলিতে এমনিতেই এসে পড়তো। হুহ্!

ফোনের শব্দে উমর চমকে উঠলো! তাঁর ছাদে বসেই চোখ লেখে গিয়েছিলো। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে অবাক হলে! দিলশাদ এতো রাতে! সব ঠিক আছে তো?
সে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো! কিন্তু হ্যালো বলারও সুযোগ পেলো না । তাঁর আগেই দীপা চেঁচিয়ে বললো,— খুব সুখে আছো না! আরামে ঘুমাচ্ছো! ঘুমাবে না কেন? এখন তো জ্বালনোর কেও নেই। দু- দিনও তো হয়নি এসেছি। এর মধ্যেই এতো পরির্বতন? খিলখিল করে হাসা, বাইরে ডিনার করা। কার সাথে করেছো? হ্যাঁ ! কার সাথে করেছো? আমাকে আর ভালো লাগে না। না! লাগবে কেন? তোমার স্বভাব আমি জানি না। দু-বছর ভদ্র ভাবে ছিলে এই তো কতো। এবার কোন মেয়ের পিছনে পড়েছো?

দীপার চেঁচামেচিতে খাদিজা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো! বসে অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকালো! তারা স্বামী – স্ত্রী দুজনেই শান্ত, চুপচাপ। তাদের দুই মেয়ে এমন হলো কিভাবে? সে আফসোস করতে করতে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে বাথরুমের দিকে গেলো। অযথা টানা হেচরি! কালকে আবার ঐ বাড়ি যেতে হবে কিনা কে জানে । দীপার অবশ্য এই দিকে খেয়াল নেই। সে রাগে ফুঁসছে।

উমর কোন জবাব দিলো না! চোখ বন্ধ করে ছাদের কার্নিশে মাথা রাখলো। এই তো তাঁর দীপা। সেই পুরোনো দীপা। যেই দীপাকে সে ভালোবেসেছিলো।

দীপার চোখে পানি এসে গেলো! দেখো কথার উত্তরও দিচ্ছে না।

তাঁর নাক টানার শব্দে উমর মৃদু হাসলো! হেসে কোমল সুরে বললো,— চলে এসো দীপা! তোমার শূণ্যতায় আমি মরে যাবো। তোমাকে ভালোবেসেই তো মন ভরে না। আর কাকে ভালোবাসতে যাবো। আমি আমার ভালোবাসা আর দুই সন্তানকে বুকে নিতে চাই। নিয়ে শান্তিতে ঘুমোতে চাই। আসবে না দীপা?

দীপা নাক টেনেই বললো, — উঁহু!
— ভেবে বলো! এবার কিন্তু আমি জোর করবো না।
দীপা কিছু বলতে পারলো না। ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেললো!

_____

দিলশাদ ভ্রু নাচিয়ে উমরের দিকে তাকালো! তাকিয়ে বললো! ব্যাপার কি? মাএ কালকেই তো আসলাম। আর ঐ কয়দিন যে হসপিটালে রইলাম। কই কেও তো খবরও নেয়নি। কতো কষ্ট করলাম একা একা। আপনি জানেন?

উমর হাসলো!
— খুব হাসি আসছে না। তাছাড়া এক রাতে এমন কি হলো। যে আজ সকাল সকালই শুশুর বাড়ি। হুম ব্যাপার কি? ঝেড়ে টেড়ে তো ভালোই, পেটের ভেতরে যা আছে সব কেশে বের করেন।

সে হেসেই বললো —- নতুন করে বের করার কিছু নেই। শুশুর বাড়ি মধুর হাঁড়ি। সেই মধু খেতে এলাম। ভাবলাম আর কতো নিজেকে বঞ্চিত করবো।

— মধু এতোই সস্তা? আসবেন আর পেয়ে যাবেন।

— না! দিলশাদ যে বাসায় আছে। সেই বাসার মধু আর যাই হোক সস্তা হবে না।

দিলশাদ মিটিমিটি হাসলো! হেসে বললো — আপনার ডান হাতা কোথায়? আপনার সাথেই তো দেখলাম আসলো। এসেই আবার গায়েব। ব্যাপার কি?

উমর এবারো হালকা হাসলো! কিছু বললো না।

বললো দিলশাদ, —- ইশ! ভাইয়ে ভাইয়ে এক পেট! বলতে চান না বললেই হয়। এমন কথায় কথায় বএিশ পাটি বের করছেন কেন?

— আমার ডান হাতার প্রতি তোমার আগ্রহ দেখে আমার বত্রিশ পাটি বের হচ্ছে। ব্যাপার কি?

দিলশাদ করুণ মুখের ঢং করে বললো,—- ব্যাপার তো কতো কিছুই দুল্লাভাই। ডানে, বামে, সামনে, পেছনে শুধু ব্যাপার আর ব্যাপার। আপনার চোখ আপনার বউ থেকে সরবে তবেই না দেখবেন। যাই হোক! সে কথা বাদ। আমি আর ইউসুফ বাবুদের নিয়ে পাশের রুমে আছি। মা কিচেনে, বাবা বাজারে, প্রথম বার জামাই এসেছে বুঝতেই পারছেন?

বলেই আফসোসের সুরে বললো! কতো কতো হক ছিলো আমার, কতো স্বপ্ন ছিলো। হাহ্! সবই কপাল!

উমর হাসলো! হেসে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। মানিব্যাগ বের করে পুরোটাই দিলশাদের হাতে দিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো, —- থ্যাঙ্কিউ শালী শাহেবা।
দিলশাদও হাসলো! হেসে বললো,— মোস্ট ওয়েলকাম দুল্লাভাই।

চলবে……..

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২০

উমর রুমে এসে দেখলো দীপা ঘুমাচ্ছে! সে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো। তাঁর ঘুমন্ত রাজকন্যা। যে রাজকন্যার প্রেমে পাগল হয়ে সে পুরো বদলে গেছে, আর গেছে তার জীবন।

সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো। দীপা জানে না সে আসবে। জানার কথাও না। কালকে কথা হয়েছে প্রায় শেষ রাত পর্যন্ত। সেই আগের মতো। তখন সে বলে নি! ইচ্ছে করেই বলে নি। সে তো শুধু দীপার ইচ্ছার কথা জানতে চেয়েছিলো। আর এখন দীপা শুধু তাঁর। কোন ভয় নেই, কোন সংকোচ নেই, না আছে দ্বিধা । তাই দীপার মন যেখানে চায় সেখানে থাকুক, ভালো থাকুক। শুধু আমার হয়ে থাকুক।

উমর আস্তে করে দীপার পাশে শুয়ে পড়লো! সাইড থেকে জড়িয়ে গলায় মুখ ডোবালো।

দীপা কেঁপে উঠলো! সাথে সাথে তার ঘুম ছুটে গেলো! যখন বুঝতে পারলো, সে ঝট করে তাকালো।
উমর হাসলো! গলায় মুখ রেখেই বললো,— গুড মর্নিং আমার বাবুদের আম্মু।

দীপা হতম্বভ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! সে নিজেই উমরকে আজ নিতে আসতে বলেছিলো। কিন্তু সে কোমল সুরে বলেছে,— “এই অবস্থায় এতো দৌড়া দৌড়ির প্রয়োজন নেই। তুমি আমার পাশে, এই না আমার শরীরের পাশে থাকতে হবে। তুমি যেখানেই থাকো শুধু আমার হয়ে থেকো, আমার মনের পাশে থেকো। ”

আর এখন দেখো সকাল হতে না হতেই নিজেই এসে হাজির। ঘুমিয়েছে কখন আর রওনাই দিয়েছে কখন। সে ভালো করে উমরের মুখের দিকে তাকালো। কতোদিন পরে এভাবে তাকালো সে মনে করতে পারলো না।

সে এক হাত উমরের গালে রাখলো। মুখ ভর্তি দাঁড়ি, চোখের নিচে কালি, মুখ শুকিয়ে এই কয়দিনেই অন্য রকম লাগছে।

উমর চোখ বন্ধ করে ফেললো। সামান্য একটা হাত তবুও উমরের হাজার স্বপ্নে মধ্যে একটা। সে কতো চেয়েছে দীপা একটু ভালোবেসে তার দিকে তাকিয়ে থাকুক, একটু জড়িয়ে ধরুক, একটু ভালোবেসে আদরে মাখিয়ে রাখুক। এই হাহাকার ভরা বুকে দীপা নিজে থেকে একটু মাথা রাখুক। সেই স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে সে ভাবেনি।

সে আরো এগিয়ে দীপাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। দীপা হাসলো! আস্ত পাগল একটা! সে উমরের চুলে ধরে টান দিলো।

উমর সাথে সাথেই মাথা তুললো! তবে চোখে মুখে কোন বিরক্তি নেই বরং ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। সেই হাসি নিয়েই বললো,— তোমার জন্যই চুলগুলো ছোট করি না জানো। বউয়ের আমার আবার টানাটানির খুব শখ। সব সময় একেবারে মুডের দফারফা করে তবেই ছাড়ে।

দীপা হেসে ফেললো! হেসে কিছু বলবে আগেই উমর টুপ করে ঠোঁটে ডুবে গেলো।

দীপা ঠেলে সরালো! বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো,— ইয়াক! ছিঃ বাসি মুখ আমার।
— থাক! বলেই উমর আবার এগুলো।
— ছিঃ! বমি আসবে আমার।
— বমি আসবে কেন? আমার মুখতো আর বাসি না।
— সরবে?
উমর সরলো না। আরেকটু এগিয়ে বললো —- আচ্ছা আসুক! বমিইতো। আমার সমস্যা নেই।

দীপা আবারো হাসলো! কি পাগল নিয়ে যে পড়েছে সে ! হেসে দু- হাত দিয়ে ঠেলে উমরের মুখ চেপে ধরলো!

উমর হাসলো! কিছু বললো না! সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো, দীপার এই হাসি হাসি মুখের দিকে। তাদের বিয়ের বয়স দু-বছর হলেও এই খুঁনসুটি গুলো নতুন। সে দীপার কাছে এসেছে হাজার বার। তবে সেই হাজার বারে একবারও দীপা ছিলো না। ছিলো শুধু সে।

_______

দিলশাদ তিহা আর ইউসুফের দিকে তাকালো। তারা বাবুদের সাথে খেলছে। দিলশাদ হাসলো! সে বসা সোফায়! তাঁর হাতে বই। দুনিয়ার প্রস্তুতি বাকি। সে বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বললো,— ইউসুফ!

ইউসুফ না তাকিয়েই বললো,— হুম!

— আমার এই বোনটা কেমন বলোতো?

ইউসুফ ভ্রু কুঁচকে দিলশাদের দিকে তাকালো! বললো — কোন বোন?

দিলশাদ আশ্চর্য হওয়ার ভান করে বললো,— আল্লাহ! এতো সুন্দর, মিষ্টি দেখতে আমার বোনটা, তোমার চোখে পড়ে না?

— ঢং বন্ধ করো তো। কি বলছো সোজাভাবে বলো।

দিলশাদ ভ্রু নাচিয়ে দেখালো!

ইউসুফ তিহার দিকে তাকালো! তিহার অবশ্য এই দিকে খেয়াল নেই। বাবুরা শুধু ঘুমায়। এই কিছুক্ষণ হলো পিটপিট করে চাইছে। তাই তাঁর সব মনোযোগ এখন তাদের দিকে।

ইউসুফ মুখ বাঁকিয়ে বললো,— ভালো! খারাপের কি হলো।
— আলহামদুলিল্লাহ!
— কিসের আলহামদুলিল্লাহ?
তুমি যেহেতু আমাকে মা মনে করো! আমার একটা দায়িত্ব আছে না। এমনিতেই তোমাদের ভাইদের সব নজর আমাদের বাড়ির দিকে। তাই তুমি আর বাদ যাবে কেন? তাই আগেই সিরিয়াল দিয়ে রাখি। তাহলে আর অন্য দিকে মনটন যাবে না। আর রিজেক্টের চাঞ্চও থাকবে না।

ইউসুফ এতোক্ষণ বুঝেনি। এবার বুঝলো! বুঝে মুচকি হাসলো। হেসে বললো,—- তুমি আমার পার্মানেন্ট মা হয়ে যাও। তাহলে তোমার জন্য এরকম একটা কেন, তোমার গুষ্টিতে তোমার যতোগুলো বোন আছে সবটার পিছনে সিরিয়াল দেবো।
— ওরে ফাজিল! কয়টা লাগে তোর? বলেই দিলশাদ সোফার কোশন ছুঁড়ে মারলো।

ইউসুফও ক্যাচ করে ধরে ফেললো! হেসে বললো,— তোমার জন্য এই ইউসুফ বিলীন হয়ে যাবে। একবার শুধু হ্যাঁ বলে দাও মেরি মা।

তখনি খাদিজা আসলো, সাথে উসমান। উসমান এসেই কিছুক্ষণ বসে, কোন কাজে চলে গিয়েছিলো। এই মাএই আবার আসলো।
খাদিজা হেসে বললো,— তুমি এখানে বস! ড্রয়িং রুমে একা বসে কি করবে। ওর আব্বু এক্ষুণি চলে আসবে। ততোক্ষণ ভাতিজাদের সাথে থাকো।

উসমান হালকা হাসলো! কিছু বললো না।
বললো দিলশাদ —- কেন আমারা কি দোষ করলাম। আমাদের সাথে থাকলে কি গায়ে ফোসকা পড়বে?

খাদিজা হালকা চোখ গরম করে বললো — একদম ফাজলামি না দিলশাদ।
তারপরে উসমানের দিকে তাকিয়ে বললো,—- তুমি বসো! আমি একটু আসছি। এর কথায় একদম কান দিও না। ফাজিলের হাড্ডি। বলেই তিনি চলে গেলেন! দুনিয়ার রান্না বান্না রয়েছে। উমরদের দেখেই তিনি তাঁর বড় বোনকে ফোন দিয়েছেন। ভাগ্যিস সেও তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। প্রথম বার জামাই এসেছে।যেন তেন ভাবে কি আর সমাদার করা যায়।

উসমান বসলো! তবে ভাতিজাদের কাছে না। দিলশাদ যে সোফায় তাঁর অন্য পাশে।

দিলশাদ মনে মনে হাসলো! হেসে উসমানের দিকে ঘুরে গালে হাত রেখে ঢং করে বললো,—- তো উসমান ভাই..য়া! আমাদের গরীর খানায় আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো?

— ভাইয়া?
— তো? আপনার বড় ভাই আমার ভাইয়া হলে আপনিতো আর অন্য কিছু হবেন না। ভাইয়ের ভাই তার চেয়েও বড় ভাই। তো কি খবর বড় ভাই..য়া?

উসমান মুচকি হাসলো! হেসে সেও দিলশাদের দিকে হালকা ঘুরলো। তারপর ইউসুফদের দিকে একবার তাকিয়ে আস্তে করে বললো — তা ঠিক আছে। তবে সব সময় ভাইয়ের ভাই ভাইয়া না সাইয়াও হয়।

— আশা রাখা থাকা ভালো। আশাই তো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ালে ঝলসে যেতে হয়।

— হাত বাড়াবেই কে ? আমিতো সাগর হবো। সাগরের বুকে, চাঁদের ইচ্ছা থাক আর না থাক। এমনিতেই এসে পড়বে।

হাহ্! বলেই দিলশাদ উঠলো! উঠে বাবুদের দিকে যেতে যেতে কৌতুক মাখা কন্ঠে বললো,— সেটা শুধু মরিচিকা, ভাই..য়া, ধরতে গেলে ফুরুৎ।

উসমান হাসলো! তবে কিছু বললো না। বললো ইউসুফ! সে আগের কোন কথা শুনে নি। তবে এটা শুনলো। শুনে অবাক হয়ে বললো,—- তুমি আমার ভাই কে ভাইয়া বলছো নাকি?

দিলশাদ কিছুই হয় নি এমন ভাবে বললো —- তো! কি বলবো? বাবা, চাচা, মামা, কাকা নাকি তারো উপরে দাদা, নানা? তোমাদের ডিমান্ড দেখেতো আমি আর বাঁচি না।

ইউসুফ হা হয়ে বললো, —- কি আশ্চর্য! এগুলো বলবে কেন?

দিলশাদ হাসলো! তবে কিছু বললো না। হেসে বাবুদের মধ্যে একজন কে কোলে তুলে নিলো।

দিলশাদ কিছু না বললেও উসমান বললো, — বাংলা ডিকশনারিতে আরো অনেক শব্দ আছে মিস দিলশাদ।

— আচ্ছা! ইশ! কেন যে আমার একটা বাংলা ডিকশনারি নেই। তাহলে মিষ্টি কিছু বলে ডাকা যেত।

— সমস্যা নেই! আমি সময়মতো সব শিখিয়ে দেব।

বলেই ইউসুফের দিকে তাকালো! বললো, — বাচ্চা মানুষ! বুঝিসইতো! বাবা, চাচা উপরে এখনও শব্দ শেখেনি।

ইউসুফ হাসলো! হাসলো দিলশাদ! যাকে বলে ভদ্রতা সূচক হাসি। হেসে এক বাবুকে কোলে নিয়ে খাটের এক সাইডে বসলো। বসে মুখ ভার করে আরেক তার দিকে তাকালো।

উসমান তাকিয়েই ছিলো! মেয়েটা মূহুর্তে মূহুর্তে চেহেরার রং বদলায়। দেখতে ভালো লাগে। সে একপলকে তাকিয়েই বললো, — কি হয়েছে?

দিলশাদ মুখ ভার করেই বললো,— ডাউনলোড হয়েছে তো হয়েছে একসাথে দুটো। কোনটাকে রেখে কোনটাকে কোলে নেই বলুনতো। একটাকে নিলে মনে হয় আরেকটা মন খারাপ করে বসে আছে।

উসমান হাসলো! হেসে সে এগিয়ে এলো! আস্তে করে আরেকজনকে কোলে তুলে নিলো। ছোট বেলা থেকে ইউসুফকে নিয়ে অভ্যস্ত। তাই তেমন সমস্যা হলো না।
তারপর বললো,— খালা নিলে সাথে খালুও নেবে। আবার চাচী নিলে সাথে চাচা নেবে তাহলেই সমান সমান। কারোই আর মন খারাপ হবে না।

দিলশাদ ভ্রু কুঁচকে চাইলো! তবে এবারো কিছু বললো না। নিজেদের বাড়ি বলে বহুত জ্বালায় আছে। এখন সে না, এরা তাদের মেহমান। কিছু বলতে দশবার ভাবতে হচ্ছে। এই ভাবা ভাবির যে কি কষ্টের এদের কে বুঝাবে। তা না হলে খবর ছিলো রে পাহাড় – পর্বত। খালা – খালু, চাচা – চাচী কাকে বলে, কতো প্রকার এবং কি কি? সব শিখিয়ে দিতো। এসেছে আমার বাংলা ডিকশনারি ওয়ালা।

মনে মনে উসমানের শ্রদ্ধ করে সে তিহার দিকে তাকালো। তাকিয়ে বললো,
— এই তিহা যা তো! আমাদের দুল্লাভাইকে টেনে নিয়ে আয়। বউর আঁচলের নিচে অনেক থাকা হয়েছে। এবার শালীদের ওড়নার নিচে আসুক।

তিহা সাথে সাথে দৌড়ে গেলো! উসমান সেই দিকে তাকিয়ে বললো —- নট ফেয়ার দিলশাদ! এটা আমার ভাইয়ের হক।
— দুলাভাইকে জ্বালানো, এটাও শালীদের হক।
— তবুও।
— তবুও গেছে তেল নিতে, আপনিও যান খুব উপকার হবে।

— আমি মানুষ বুঝে উপকার করি মিস দিলশাদ।

দিলশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এর মুখ কোনদিন না সে নিজ হাতে সেলাই করে দেয়।

ইউসুফ দেখে হাসলো! হেসে খাটে হেলান দিতে দিতে বললো, –দিলশাদ আপুর কাছে কোন ফেয়ার টেয়ার নেই ভাই। সে যেটাই বলবে সেটাই রাইট, তাই না আপু?

দিলশাদ কিছু বললো না। মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটলো। মনে মনে বললো, তোদের ভাগ্য ভালোরে আজ। বল, যা খুশি বল।

উসমান হেসে ফেললো! হেসে একটু এগিয়ে বললো,— আরেক বার রিপীট্ করোতো মিস দিলশাদ।

দিলশাদ করলো! একবার না! এই সাইডে ওই সাইডে করে দু- তিন বার। করে বললো,— হয়েছে! নাকি আরো লাগবে?
উসমান উত্তর দিলো না। সে হাসলো! প্রাণ খোলা হাসি।

তখনি উমর আসলো! শুধু সে আসেনি। সে দীপাকেও ধরে আস্তে আস্তে নিয়ে এসেছে। সবাই এই ঘরে। সে একা ঐ ঘরে কি করবে?

দিলশাদ, উসমান সাইড হয়ে তাদের বসার জায়গা করে দিলো।

উমর বসেই বললো,— আমি কি আমার দুই- ছেলেকে কোলে নিতে পারি?
— অবশ্যই পারেন দুল্লাভাই, বলেই দিলশাদ তার কোলে দিলো। উসমানও এগিয়ে এসে দিলো।

উমর তাঁর দুই ছেলেকে দু- হাতে আঁকড়ে ধরে কপালে চুমু খেলো। দিলশাদ গোলগোল চোখ করে বললো,— যাক থালার মতো দু- হাত কাজে আসলো তাহলে। এজন্যই বলে এই দুনিয়ায় কারণ ছাড়া কিছুই হয় না। এই যে আপনাদের আল্লাহ হাতির মতো বানানো। কেন? এক সাথে টুইন বেবি হবেই বলে তো। না হলে বলুন কি করে এক সাথে দু- টোকে কোলে নিতেন?

উমর হাসলো! সাথে সবাই। এই আধা পাগল মেয়ের কথায় কেও আর কিছু মনেই করে না।

উমরতো আরো না। তাছাড়া সে এখন ব্যস্ত! তাঁর অংশ কে দেখতে ব্যস্ত। তার চোখ মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছে। বাবা হওয়ার মতো সুন্দর অনূভূতি কি পৃথিবীতে আর কোথাও আছে।

— এদের কি নামে ডাকবো ভাই?
উমর ইউসুফের দিকে তাকালো! তাকিয়ে বললো,— তোর কলিজা এরা! তুই বল।

ইউসুফ দীপার দিকে তাকালো! সে তাঁর পাশেই বসা।
দীপা হেসে ইউসুফের চুল এলোমেলো করে দিলো। দিয়ে বললো,— তোমার যা খুশি রাখো! তুমি যেটা রাখবে সেটাই হবে তাদের একমাএ নাম।

ইউসুফ খুশি হয়ে গেলো! তারপর একটু ভেবে বললো,—- আহান, আহাদ।
উমর, দীপা একসাথে বলে বললো — আলহামদুলিল্লাহ।

সন্ধ্যার পরে দিলশাদ বই নিয়ে বসলো! সে এখন আব্বুর রুমে। বাকি সবাই ঐ রুমে। সবাই বলতে ইউসুফ সহ তাদের বাড়ির সবাই। উমর, উসমান বিকেলেই চলে গেছে। আম্মু- আব্বু অবশ্য খুব চেষ্টা করেছে রাখার। তবে উমর ভাইয়া বাবার হাত ধরে বিনয়ী ভাবে বলেছে, —- আজ না! আজকে কোন প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি। ওখানে কাজও আছে। দীপা যেহেতু এখানে আসা হবেই। আজ থাক।

এর পরে আর বলার কিছু থাকে না। তাঁরা চলে গেলেন! ইউসুফকেও যেতে বললেন। এই ছেলে আমাদের কাছে কি পেয়েছে কে জানে? সে যাবেই না। পরে দীপা বই টই সব পাঠিয়ে দিতে বলেছে। এই ছেলে এবার নিউ টেনে। সামনে এসএসসি দেবে। এর কোন তাল আছে।

দিলশাদ পড়ায় মনোযোগ দিলো। তখনি আম্মু দৌড়ে এলো, —- এই দিলশাদ! রায়হান নাকি হসপিটালে! কে নাকি মেরে আধা মরা করে দিছে। বড় আপারতো ফোন দিয়ে কেঁদে কেঁটে অস্থির। কি করি বলতো?

দিলশাদ অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ালে! রায়হান খুবই সাদাসিধে ছেলে। তাঁর সাথেই তো বড় হলো, এক সাথে ছোট বেলা থেকে চলাফেরা, উঠাবসা । তাঁকে আবার কে মারলো?

চলবে………