দর্পণ পর্ব-২১+২২

0
129

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২১

দিলশাদ কে দেখে রায়হান মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তার চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি। দিলশাদ অবাক হলো! হচ্ছে কি? রায়হান তাঁর শুধু কাজিন না, বন্ধুও। বেশ ভালো বন্ধু। সেই ছোট বেলা থেকে তাঁরা একসাথে। একসাথে বড় হওয়া, এক সাথে স্কুলে যাওয়া, সব কিছু শেয়ার করা, সব।

আত্মীয় স্বজনরা সবাই আমাদের দেখলেই দুষ্টুমি করে বলতো, — এই যে এসেছে আমাদের লায়লী – মজনু। রশি দিয়ে টেনেও এদের জোড়া ছুটানো যাবে না।

আর আজ সে তাকে দেখে বিরক্ত হচ্ছে! ভাবা যায়? সে অবশ্য কখনও ওকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু মনে করে নি। তবে রায়হানের হাবভাবে সবসময় অন্য কিছু মনে হতো। রায়হান কখনও সেই ভাবে কিছু বলে নি। দিলশাদও তেমন ভাবে কিছু ভাবেনি। তবে যেখানে দিলশাদ সেখানে রায়হানের কাছে প্রধান প্রায়োরিটি দিলশাদ। আর সেখানে আজ এই ছেলে তাঁকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। আশ্চর্য হওয়াই বিষয়। ব্যাপারটা কি?

কেবিনের ভিতরে সবাই! আপুকে তো আর একা রাখা যাবে না। তাই বাবা আসে নি। আম্মু আর সে আসতে চেয়েছে। সেখানে ইউসুফ আবার জোঁকের মতো সেটে গেলো। আম্মুও খুশি খুশি নিয়ে এসেছে। আম্মুর আবার আজকাল এই ছেলের জন্য দুনিয়ার দরদ। তাদের বাড়িতে এসেছে পর থেকে পারলে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।

সে একটু মন খারাপ করেই এক কর্নারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। হজম হচ্ছেনা তার। এই পর্যন্ত রায়হান তাঁর দিকে একবারও তাকায়নি।

আম্মু আর খালামণি কথা বলতে বলতে বাইরে গেলো। ইউসুফ অবশ্য গেলে না! সে নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।

দিলশাদ এগিয়ে গেলো! তাঁর বেডের সামনে একটা চেয়ার। সেখানে গিয়ে বসলো! মুখ ফুলিয়ে বললো,—- কি করেছি আমি ?

রায়হান কথা বললো না! চোয়াল শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। দিলশাদ উঠে তাঁর চোয়াল ধরে তাঁর দিকে ঘোরালো। ঘুরিয়ে বললো,— এমন করছিস কেন?

রায়হান দিলশাদের হাত সরিয়ে দিলো! ধীর কন্ঠে বললো,—- তুই এখান থেকে চলে যা।

— কেন?

রায়হান ইউসুফের দিকে একবার তাকালো! তবে আর কিছু বললো না।

দিলশাদ বুঝলো! সে ইউসুফের দিকে তাকিয়ে বললো,— আম্মু কোথায় গেলো একটু দেখোতো ইউসুফ।
ইউসুফ বেড়িয়ে গেলো! তবে তার হাবভাবে মনে হলো খুব অনিচ্ছা নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। সে বেড়িয়ে যেতেই দিলশাদ বললো,—– তোর এই অবস্থা কি আমি করেছি? আমাকে মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন?

রায়হানের রাগ হলো! দাঁত চিবিয়ে বললো,— না করলেও, কারণ তুই! তোর সাথে আমার আর কোন ফ্রেন্ডশিপ নেই। কিচ্ছু নেই! যা ভাগ!

দিলশাদ অবাক হলো!
— আমি!
— হ্যাঁ ! তুই।
— কিভাবে?
— ইশ! এমন ভাব নিচ্ছিস যেন কিছুই জানিস না! অথচো তলে তলে দুনিয়ার কিছু করছিস।
— খবরদার আমার সাথে এভাবে কথা বলবি না রায়হান।
— বলতে চাইও না, চলে যা।

দিলশাদ কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো! তার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে হনহনিয়ে চলে যেতে নিলো। কিন্তু দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চাপলো। রায়হানের বাচ্চা তোর তো খবর আছে। বলেই আবার ফিরলো। এগিয়ে গিয়ে হাত চেপে ধরলো।

রায়হান ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো! হাতে তার ব্যান্ডেজ। কোঁকাতে কোঁকাতেই বললো,— ছাড়! ছাড় ডাইনী! ইচ্ছেমতো মার খাইয়ে তোর মন ভরে নি। এখন আবার এসেছিস? ছাড়।

দিলশাদ ছাড়লো না, আরো চেপে ধরলো। ধরে বললো,—- এখন বল কাহিনী কি?আর কোন সাহসে তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস? তোকে তো আমি খুন করছি না, এই তোর সাত জনমের ভাগ্য।

ব্যথার চোখমুখ কুঁচকে রায়হান বললো—- বলছি, ছাড়! আগে ছাড়।

দিলশাদ ছাড়লো! ছেড়ে চেয়ারে আরাম করে বসলো।

রায়হান বিরক্ত মুখে বা হাতে সাইড থেকে মোবাইল বের করলো। কিছু একটা করে দিলশাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

দিলশাদ ভ্রু কুঁচকে নিলো! মোবাইলে চোখ রাখতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। উসমান আর সে ! সেই দিনের রাতের ভিডিও। এটা কিভাবে সম্ভব? সে ভালো করে খেয়াল করলো। এটা সিসি টিভি ফুটেজ! নাইট ভিশন! জুম করা। তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো! বেটা পাহাড় – পর্বত তোকে আমি ভর্তা বানাবো রে।

— এখন তুই বল! এসব কি? তুই ভালো করেই জানিস আমার ফিলিংস। গত রাতে এই ভিডিও আমার মোবাইলে আসে। সাথে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ! কাজিন কাজিনের মতো থাকো।

আমি তোকে চিনি। তাই বিশ্বাস হয়নি। ভেবেছি কেও অ্যাপ ট্যাপের মাধ্যমে ফেস বসিয়েছে হয়তো। তাই খুব রাগ হলো! সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে উরাধুরা বকলাম। আর বললাম তুই শুধু আমার আর আমারি থাকবি। এইসব ভিডিও টিডিওতে আমার কিচ্ছু আসবে যাবে না। এরকম ভিডিও না পাঠিয়ে এক বাপের ব্যাটা হলে সামনে আয়। সেই বাপের নাম ভুলিয়ে দেব।

দিলশাদ হেসে ফেললো! আচ্ছা.. এই কারণেই বুঝি সকাল সকাল ভাইয়ের সাথে আসা। এসে আবার গায়েব।

— তুই হাসছিস?

— তো কি করবো? মশা হয়ে ডাইনোসর কে নিমন্ত্রণ দিয়েছিস।

— সেটা তো তুই জানিস! আমিতো না। এসে কোন কথা টথা নেই বুঝলি। ডাইরেক্ট একশন। কি খায় মায়রি! হাতের একটা থাপ্পড় যদি খেতি তাহলে বুঝতি। কান এখনো ঝিম ঝিম করছে। কাপড়ের মতো ধুয়ে নিজেই হসপিটালে ভর্তি করালো। আমার মোবাইল দিয়ে বাড়িতে ফোন করে জানালো। তারপর যাওয়ার আগে ভদ্র ভাবে বলে গেলো,—- ভাবির কাজিন, দিলশাদের বন্ধু তাই এতোটুকু করলাম! বন্ধু বন্ধুর মতো থাকো! এর বেশি না।

— তো! এক হুমকিতেই তোর ভালোবাসা শেষ?

— উস্কানি দিবি না দিলশাদ। মায়ের পেট থেকে বের হয়েই তোকে আমি চিনি।

— উস্কানির কি হলো। সত্যিই তো বলছি। এক কেলানিতেই এই অবস্থা। আবার আসিস ফিলিংস দেখাতে।

রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে শান্ত ভাবে বললো,— তুই তাকে ভালোবাসিস?

দিলশাদ সোজা ভাবে বললো —- না।
— তাহলে ভিডিও?

— ভিডিও ভালোভাবে দেখলেইতো বোঝার কথা। এটা কোন রোমান্টিক ফিল্ম না। যুদ্ধের ময়দান ছিলো।

— আমাকে বাসিস?

এবারো দিলশাদ সোজা ভাবে বললো — না।

রায়হান কিছুক্ষণ চুপ করে দিলশাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোট বেলা থেকে একে চেনে সে। কোন রাগ ঢাক নেই। যা বলবে সোজা। তবুও এই সহজ স্বীকারোক্তিতে তার মন একটু খারাপই হলো। তারপর সেও স্বভাবিক ভাবে বললো, —- না বেসেই ভালো করেছিস। এই লোক তোকে অন্য কারো হতে দেবে না।

— তুই দিবি?

— তুই যদি ভালোবাসতি তাহলে দিতাম না।

— আমিতো তাকেও ভালোবাসিনা।

— সবাই কি আর এক হয়?

দিলশাদ চুপ হয়ে গেলো! উসমানের বলা সেই দিনের কথা মনে পড়লো, ” আমি তোমাকে ভাবির মতো আটকে রাখবো না। জোরও করবো না। তবে ছেড়েও দেবো না। আমি দেবদাস হলে তুমিও হবে। আর আমার বিয়ে হলে একমাএ তোমার সাথেই হবে।

— এই ছেলেটা তাঁর ভাই তাইনা।

দিলশাদ অন্যমনস্ক ভাবেই উত্তর দিলো, — হুম!
— তোদের বাড়িতেই থাকছে।

— হ্যাঁ!

রায়হান মৃদু হাসলো! হেসে বললো,— তাঁর আমাকে চেনার কথা না। সেই দিন আমি তিহাকে দিতে তোদের বাসায় গিয়েছিলাম। এই ছেলে দেখেছে।

— তো?

— এই ছেলেই তাঁর ভাইয়ের কাছে তোর সব খবরা খবর পাচার করছে। এখানে এসেছিস! দেখ এটাও এতোক্ষণে চলে গেছে। সে এখানে রয়েছেই এই কারণে।

দিলশাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর হেসে ফেললো ! তাঁর সেই মিষ্টি মাখা টোল পড়া হাসি।

বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো। রাত হলেও দিলশাদ এসে কিছুক্ষণ এমনিতেই খুশিতে বাকবাকুম হলো। বোনের ছেলেদের নিয়ে নাচানাচি করলো। তারপর ইচ্ছে মতো গোসল করলো।

খাদিজা একচোট বকাবকি করলো। বকাটকা হজম করে, শেষ রাতে দিলশাদের উথাল পাথাল জ্বর হলো। সবাই ঘুমে। কে জানলো না! কেও বুঝলো না। সেই জ্বর নিয়েই দিলশাদ চুপচাপ বারান্দায় বসে রইলো। তার চোখে আগুন, সেই আগুন জ্বরের না, রাগের বোঝা গেলো না।

ইউসুফের ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোনে! সে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো। পাশে আঙ্কেল ঘুমাচ্ছে। সে ফোন রিসিভ করে বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বললো,— কি হয়েছে?

— দিলশাদ কই?

— মানে? পাগল হয়েছো তুমি? এতো রাতে কোথায় থাকবে।

উসমান কথা বললো না! সে একটা আজব স্বপ্ন দেখেছে। চারিদিকে বরফ আর বরফ। তাঁর মধ্যে দিলশাদ শুয়ে আছে। ঠান্ডায় চোখ, মুখ ফ্যাকাশে! মেয়েটা থরথর করে কাঁপছে।

— কি হলো? চুপ করে আছো কেন?

— দিলশাদের কাছে যা।

— এখন কিভাবে? সবাই ঘুমাচ্ছে ভাই। এভাবে মাঝ রাএে ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে?

উসমান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,—- যা বলছি তাই কর।

ইউসুফ বিরক্ত নিয়ে আস্তে আস্তে উঠলো। কি এক যন্ত্রনা!

সে এগিয়ে গিয়ে দরজায় কয়েকটা টোকা দিলো। দীপা, খাদিজা দুজনেই উঠে বসলো। সাথে অবাক হলো! এতো রাতে আবার কে? তাঁরা দরজা লক করে না। এমনিই চাপিয়ে রাখে। তবুও খাদিজা উঠে দাঁড়ালো। কিছু হলো নাতো।

সে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই দেখলো ইউসুফ দাঁড়িয়ে আছে। সে চিন্তিত ভাবে জিজ্ঞেস করলো,— কি হয়েছে ইউসুফ?

ইউসুফ কাচুমাচু করে বললো,— দিলশাদ আপু কই?

খাদিজা অবাক হলো! অবাক হয়েই পাশে তাকাতে তাকাতে বললো,— দিলশাদতো ঘুমি….. আধা কথা বলেই তিনি থেমে গেলেন। দিলশাদ নেই! তিহা রাতে আর তাদের সাথে আসেনি। তাঁর ভাই অসুস্থ! তাঁর জেদ, সে হসপিটালেই থাকবে। পরে আপা আর জোর করেনি। তাই দিলশাদ আজ একাই নিচে শুয়েছে। অথচো সেই জায়গা খালি।

দীপা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো! চিন্তিত হয়ে বললো,— আম্মু দিলশাদ কই?
খাদিজা বাতি জ্বালালো! বারান্দার দরজা খোলা। সে এগিয়ে গেলেন। গিয়েই থমকে গেলো।

দিলশাদ নিচে পড়ে আছে। চোখ, মুখ ফ্যাকাশে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জ্ঞান নেই। সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলো। যেতে যেতে ইউসুফকে চেঁচিয়ে বললো,— ইউসুফ তাড়াতাড়ি আঙ্কেল কে ডাকো!

উসমান সব ফোনের ওপাশ থেকে শুনলো! সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! কাল রাতে যখন ইউসুফ ঘন্টা লাগিয়ে গোসলের কথা বললো। তখনি তাঁর সন্দেহ হয়েছে। এই মেয়ে হচ্ছে এটম বোমা। কোথায়, কিভাবে ফাঁটতে হবে সে ভালো করেই জানে।
উসমান চোখ বন্ধ করে কপালে হাত রাখলো! তাঁর ঘুম শেষ। এতো সুন্দর করে শাস্তি দেওয়া তোমার চেয়ে আর কে পারে মিস দিলশাদ।

দিলশাদ মোটামুটি সুস্থ হলো তার পরের দিন বিকেলে। রাত থেকে সারাদিন, সে জ্বরের ঘোরেই হোক আর ক্লান্তির জন্যই হোক পরে পরে ঘুমালো। ঘুম ভাঙতেই দেখলো ইউসুফ তাঁর ঠিক সামনে বসা। তাঁর হাতে মোবাইল।

দিলশাদ হাসলো! গায়ের কাঁথা টেনে গলা পর্যন্ত নিতে নিতে বললো,— তোমার বই পএ সব এসেছে ইউসুফ?

ইউসুফ উপর নিচে মাথা ঝুলালো! কিছুক্ষণ আগেই ড্রাইভার এসে দিয়ে গিয়েছে। দিলশাদ আপু জানলো কিভাবে?

— যাও লক্ষী ছেলের মতো বই, পএ যা আছে সব আমার কাছে নিয়ে এসো।

ইউসুফ ঢোক গিললো! গিলে আড়চোখে মোবাইলের দিকে তাকালো। উসমান ভাই ভিডিও কলে। সে হাসছে!

সে তোতলিয়ে বললো,— কেন?

— আজ থেকে তোমার পড়ার সব দায়িত্ব আমার। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আখড়া। আর তুমিই তো বলো আমাকে তুমি মা মনে করো। তাহলে মায়ের একটা দায়িত্ব আছে না। নাকি আবার এখন মনে করো না?

ইউসুফ মাথা নাড়তে নাড়তে বললো,— না, না তেমন কিছু না।

— গুড! তাহলে যাও!

ইউসুফ মুখ ভোঁতা করে উঠে দাঁড়ালো! দুনিয়াতে তাঁর সব ভালো লাগে শুধু লেখাপড়া ছাড়া। এই লেখাপড়াই যে আপু এখন তাঁকে দিনরাত খাওয়াবে সে ঠিক বুঝলো।

— আর শোন!

ইউসুফ দাঁড়ালো!
দিলশাদ মোবাইলের দিকে তাকালো! খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো—– এই ভিডিও যদি অন্য কারো কাছে যায়। আমি খুন করে ফেলবো। একটা কথা মনে, মাথায় আরো যদি কোন জায়গা থাকে সেখানেও ভালোভাবে ঢুকিয়ে নিন। আমি দীপা না। যে বসে বসে সব হজম করবো। আমি দিলশাদ! আমার এই কথার একটু ঊনিশ বিশ হলে, বুকে ছুরি চালাতে আমার এতোটুকুও কষ্ট হবে না।

উসমান ফোনের ওপাস থেকেই হাসলো! আল্লাহ চেহেরার মিষ্টি, মায়া, সৌন্দর্য সব ঢেলে দিয়েছে। হ্নদয়ে ছিটেফোঁটাও দেয় নি। থাক উসমানের ভিতরে আবার সব অফুরন্ত। সেটাই যথেষ্ট আমাদের জন্য মিস দিলশাদ।

চলবে…….

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২২

উমর ঘুমাচ্ছিলো! হামিদা বানুর চেঁচামেচি শুনে উঠে বসলো। সে অবশ্য প্রতিদিনই চেঁচায়! তবে আজকে তাঁর বেশি মনে হলো। সে হাই তুলে বেড়িয়ে আসলো। আগে দীপা ঘুমাতো না বলে রাত করে ঘুমাতো। আর এখন রাত হয় ফোনে কথা বলতে বলতে ।

তাছাড়া তাঁর ছেলেরা হয়েছে তাদের বাপ চাচার মতোই ফাজিল। দীপাকে জ্বালিয়ে মারছে। দিনভরে কাত চিত হয়ে ঘুমায়, রাত হলেই শুরু হয় তাদের নাচানাচি। ঐ বেচারি আর কি করবে। আগে চোখে ঘুম ছিলো না, আর এখন ঘুম আছে। কিন্তু ঘুমোতে পারে না। উমরের অবশ্য ভালোই লাগে। ভিডিও কলে যখন সন্তান আর হাসিখুশি দীপাকে দেখে। তাঁর মন তখন এমনিতেই প্রশান্তিতে ভরে যায়।

সে বাইরে এসে দেখল সাবিহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তাঁকেই হামিদা বানু উরাধুরা বকছে। উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! দীপা ঐ বাসায় যাওয়ার পরে ইনি আর ঐ বাসায় যায়নি। বাবা অবশ্য কয়েকবার বলেছে। ইনি গা করেনি! এমন না এই বাসায় সুখে, শান্তিতে আছে। উমরের ধারণা গত একমাসে ওনার ওজন পাঁচ ছয় কেজি কমে গেছে। সেই সকাল থেকে শুরু, দিনভরে দাদী দৌড়ের উপরেই রাখছে। তবুও এখানে আছে কেন কে জানে?

তার প্রথম ভালো লাগে নি। তবে কেন জানি চলে যেতেও বলতে পারেনি। কিন্তু উসমান রেগে আছে। সে কি আর কারো ধার ধারে? বাবাকে সোজা বলেছে, নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাবাও অবশ্য চেষ্টা করছে। তবে ইনি নাছোড়বান্দা! কিছু বললেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ বাসার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে এখানে এতো কষ্টের মানে হয়?

আর আমাদের বিখ্যাত দাদী আর ফুপু। এদের আর কি? নতুন মুরগা পেয়েছে। ইচ্ছে মতো হালাল করছে। তাঁরা চাচ্ছে সে এই বাসায়ই থাকুক। থাকবে না কেন? বাড়ির বউ! আর রেখেই ইচ্ছা মতো চিপড়ে রস বের করছে।

উমর এগিয়ে গেলো! শান্ত ভাবে বললো,— কি হয়েছে?
হামিদা বানু রেগে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো,—- কি হয়েছে তোর জেনে লাভ কি? নিজের বউ ফালায় রাখছে বাপের বাড়ি। সে আসছে পরের বউর খবর নিতে।

উমর নির্বিকার ভাবে চেয়ার টেনে বসলো! বসে সাবিহা দিকে তাঁকিয়ে কোমল সুরে বললো,—- এতো কষ্ট করেও এখানে আছেন কেন বলুন তো? ওখানে আপনার নিজের একটা সংসার আছে। স্বামী নিয়ে নিজের মতো থাকতে পারেন।

হামিদা বানু তেঁতে উঠলো!
— ওই.. এই জায়গায় সমস্যা কি? কিসের কষ্ট? কোন জিনিসের কম আছে? বাড়ির বউ বাড়ির কাম করবো না তো কে করবো?

উমর দাদীর দিকে তাঁকালো! তাঁকিয়ে বললো, — একটু থামবে দাদী।

হামিদা বানুর রাগে ফুসলো! তবে চুপ হলেন। সে যতোই রাগ টাগ করুক। উমর তাঁর সবচেয়ে আদরের। বাড়ির প্রথম নাতি তাঁর। সে’ই তো হাতে তুলে মানুষ করছে। বাকি সব কয়টা বজ্জাত তবে উমর না।

সাবিহা মলিন ভাবে হাসলো! মুখে মলিন হাসি নিয়েই বললো,— বাবা ছোট বেলায় মারা যায়। ভাইয়ের সংসারে মানুষ। যেমন পেয়েছে ধরে বিয়ে দিয়েছে। বয়স টয়সও দেখেনি। কয়েক বছর ঘুরতেই বিধবা হলাম। আবার ভাইয়ের সংসারে। অশান্তির শেষ নেই। আবার যেমন পেলো তেমনি বিদায় করলো। এবার সবই পেলাম। তবে একটা সংসার পেলাম না। একা একা থাকিতো ভালো লাগে না। বলতে পারো এই সংসার, এই সংসারের মানুষদের একটু সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যই পরে আছি। চিন্তা করো না আমি চলে যাবো। আমার জন্য কোন ঝামেলা তৈরি হবে না।

উমর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো! প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা গল্প থাকে। দিলশাদ এই বাড়ির গল্পগুলো অন্য উদ্দেশ্য টেনে বের করলেও। সব কিছু কেন জানি ভালোর দিকেই গেছে। কিছু কিছু মানুষ জাদুর কাঠির মতো হয়। যেখানে ছুঁবে সেখানেই বাগান হবে। তাদের বাড়ির জাদুর কাঠি হয়তো দিলশাদ ছিলো।

উমর একটু হাসলো! হেসে বললো,— আপনার যতোদিন খুশি ততোদিন থাকুন। চাইলে সব সময়ও থাকতে পারেন। আমাদের আর সমস্যা নেই। তারপর হামিদা বানুর দিকে একবার তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,— অবশ্য টিকতে পারলে।

সাবিহাও হাসলো! তাঁর মুখে হাসি থাকলেও চোখ চিকচিক করছে। সে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলো।

হামিদা বানু খোঁচা বুঝলেন! চুল তো আর তাঁর বাতাসে পাকেনি। সে লাঠি তুলে উমরের বাহুতে বাড়ি মারলো।
উমর এবার হো হো করেই হাসলো! হেসে বললো,— সব আমার সাথেই পারো। এটা উসমান বা ইউসুফকে দিয়ো। লাঠি ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেবে। পরে হাঁইটো পুরো বাড়ি টুকটুক করে।

ইউসুফের কথা উঠতেই হামিদা বানু ঝাঁঝের সাথে বললো, —- ওই পোলা তর শুশুর বাড়ি পইরা আছে ক্যা। তাঁর ঘর বাড়ি নাই?

— ও ওখানেই ভালো আছে দাদী। এখানে দিনভরে টইটই। স্কুল, পড়া লেখার ধারের কাছেও নাই। এক মাসে তাঁর চেহেরা ঘুরে গেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা। স্কুল না হলেও লেখাপড়াটা হচ্ছে। তুমি টেনশন করো না। দীপা আসলে সেও এসে পরবে। আমার শুশুর তোমার নাতিকে রেখে দেবে না।

— ঠিক আছে নি! বড়ডারে তো নিয়াই গেছে। বাকি আছে দুই- জন।

— সে কাওকেই নেই নি দাদী। বরং আমরাই জোর করে গেছি। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। বাকি দু- জনের একজন কে তো তোমরা তাঁর প্রায় কোলে উঠিয়ে দিচ্ছিলে। ভুলে গেছো?

হামিদা বানু মুখ বাঁকালেন! বাঁকিয়ে বললেন, —- তখনতো বিপদ ছিলো! বিপদের সময় কি আর মাথা ঠিক থাকে। তা না হলে আমাগো বইয়াই গেছে। বিপদ গেছে আপদও গেছে। হুহ্! এখন তোর বউর খবর কি? কবে আইবো?

— কবে আইবো মানে কি? একবার গেছো আমার বউ ছেলেদের দেখতে?

— ওমা! তুই আমার শরীরের দিকে তাকাছ না! আমি কেমনে যামু দেখতে?

— আচ্ছা! চেঁচামেচির জন্যতো শক্তি তো ঠিকই পাও। শুধু আমার ছেলেদের বেলা নাই। বুঝি বুঝি! সবই বুঝি। নিজের ছেলের ঘরের হলে বুঝি বসে থাকতা। তাই দরকার নেই এখানে আসার। তাঁরা ওখানেই ভালো। অন্তত নিজের নানা, নানির কাছে আছে, আদরে আছে।

হামিদা বানু নিঃষ্পল হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। বলে কি? তার পতিরা বলে পরের বাড়ি পড়ে থাকবো। তাও আদরের জন্য। তারা কি আদর দিতে জানে না। এতো বড় কথা। সে সাথে সাথেই হুংকার ছাড়লো।

ওই আলি! কই মরছোস। গাড়ি রেডি কর। আমি এহনি যামু আমার পতিগো আনতে।

উমর হাসলো! হেসে বললো,— এখন না দাদী! দু- দিন পরে যেও।

— ক্যা! পরে যামু ক্যা?

— দিলশাদের ভর্তি পরীক্ষা । এই সময় অযথা ঝামেলা হবে।

— দু-দিন আগে না তোর শালী পাস করলো। এহন আবার কিসের পরীক্ষা।

— সেটা তুমি বুঝবে না।

— কি জানি বাপু! মাইয়াগো এতো লেখাপড়া কিসের। সেই তো হাঁড়ি পাতিল মাজা আর চুলা গুতাইতেই হবো। অযথা টাকা পয়সা নষ্ট।

উমর আবারো হাসলে! তবে আর কিছু বললো না। সে উঠে দাঁড়ালো। তাঁকে বেরুতে হবে। নতুন একটা জায়গা কেনা হয়েছে। সেটা নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে। দীপা আসার আগে সব ঝামেলা সে শেষ করতে চায়।

_____

দিলশাদ কোমর বাঁকিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। কালো শাড়ি, কালো চুড়ি, হালকা মেকাপ আর পিঠময় ছাড়া কালো সিলকি চুলে তাকে দেখতে মডেলদের মতো লাগছে। সে নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই ফ্লাইং কিস দিলো।

দীপা খাটে বসে বসে নির্বিকার ভাবে এই মেয়ের ঢং দেখছে। এই ঢং শুরু হয়েছে দুপুরের খাবারের পর থেকে। কখনও এই শাড়ি, কখনও ঐ শাড়ি। চুল একবার বাঁধছে একবার খুলছে। পুরো ঘর শাড়ি, মেকাপের জিনিসপএ দিয়ে এলোমেলো করে ফেলেছে।

এই মেয়ে পারেও? তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। এমনিতে যাই থাক, এই মেয়ে লেখাপড়া নিয়ে খুব সিরিয়াস। সে আবার এতো ছিলো না। মোটামুটি ধরনের ছিলো। এখন ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলাও শেষ। কে কোন ভার্সিটিতে চাঞ্চ পায় তাঁর ঠিক নেই। তাই তাঁর সব ফ্রেন্ডসরা ঠিক করেছে, আজকে সবাই একসাথে হবে। খাবে ঘুরবে মজা করবে।
মজা করবে ভালো কথা। শাড়ি টারি পরে এমন নায়িকাবানু হয়ে যেতে হবে কেন?

সে বিরক্ত হলো! বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো,— বন্ধুদের সাথেইতো ঘুরতে যাবি। এতো ঢংয়ের কি আছে। তারমধ্যে শাড়ি। তাও পরেছিস তো পরেছিস কালো। ঘুরতে গেলে কালো শাড়ি কে পরে? হালকা টালকা কিছু পর।

দিলশাদ নায়িকাদের মতো ঢং করে দীপার দিকে তাকালো। তাঁকিয়ে বললো, — দিলশাদ পরে আপু! দিলশাদ! যা কেও করবে না তাই করবে দিলশাদ। দু- একজনের মাথা যদি না’ই ঘুরে তো এমন রং পরে লাভই কি?

দীপা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! তারপর বললো, — দু- একজনের মাথা ঘুরাতে গিয়ে, নিজেই না আবার ধপাস করে পরিস। এখন যা দূর হয়! তোর জন্য আমার ছেলেরা ঘুমোতেও পারছে না। আর বেরুনের আগে শাড়ি অবশ্যই পেটের উপরে উঠাবি। মাথা ঠিক আছে তোর। এমনিতেই ফর্সা তার মধ্যে কালো শাড়ি। এতো নিচে কাপড় পরেছিস কোন আক্কলে?

দিলশাদ সে কথার ধারের কাছেও গেলো না। সে এগিয়ে এসে নিচু হয়ে আহান, আহাদের গালে, কপালে পটাপট কয়েকটা চুম খেলো।

দীপা ঠেলে সরালো! সরিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো, — কি করলি? পুরো মুখ লিপস্টিকে মাখামাখি। এগুলো এখন ঘঁষে তুলবে কে?

দিলশাদ ভেংচি কাটলো! কেটে আয়নার সামনে গিয়ে আরেক পোচ লিপস্টিক দিতে দিতে বললো,— দিয়েছি বেশ করেছি! আমার বাবাদের আমি দেবো তোমার কি? আর তুমি আছো কিসের জন্য হুম?

দীপা হেসে ফেললো! কি করবে সে এই মেয়ের। সব পাগলদের কারখানা তাঁর আশেপাশে।

দিলশাদ সেই দিকে তাকালোও না। হাত দিয়ে চুল পেছনে উড়িয়ে সে বেড়িয়ে এলো।

ড্রইং রুমে সোফায় হাত, পা ছড়িয়ে ইউসুফ বসে আছে। দিলশাদ কে দেখে কোন হেলদোল হলো না। দিলশাদ তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে বললো, — নাও সুন্দর করে কয়েকটা ছবি তুলো তো।

ইউসুফ মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো,– যাও তো! আমি পারবো না।

— ওমা! কেন? এমনিতে তো কাজের বুয়া হয়ে থাকি। তখন তো ঠিকিই তুলো।

ইউসুফ অবাক হলো! মনে মনে বললো,– ধুর, এই মেয়ের চোখে কিছুই না ফাকি দেওয়া যায় না । ঐ দিকে ভাই আর এই দিকে এই। তাঁর হয়েছে যতো জ্বালা। সে বিরক্তমাখা কন্ঠে বললো, — আধা রাত পর্যন্ত বসে বসে পড়াও। এখন তো একটু শান্তিতে থাকতে দাও।

দিলশাদ হাসলো! হেসে তাঁর পাশে বসে বললো,— আমার সাথে যাবে ইউসুফ?

ইউসুফ সোজা ভাবে বললো — না!

দিলশাদ অবাক হলো! এমনিতে তো তাঁর পেছনই ছাড়ে না। সে যেখানে এই ছেলেও সেখানে। এমনকি সে পরীক্ষা দিতে গেছে বাবার সাথে এই ছেলেও গেছে।আর আজ এমন আগুন সুন্দরী হয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। এর ছেলের কোন হুশ নেই। ব্যাপার কি? সে সন্দেহ ভরা কন্ঠে বললো,—- কেন?

ইউসুফ আগের মতোই স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো —- এমনিই।

দিলশাদের আরো সন্দেহ হলো! সে ভ্রু কুঁচকে বললো, —- কোন খিচুড়ি পাকিয়েছো ইউসুফ?

ইউসুফ দিলশাদের দিকে তাকালো! তাকিয়ে হাসলো। তবে কিছু বললো না।

দিলশাদ আঙ্গুল নাচিয়ে বললো —- এবার যদি আমার কোন ফ্রেন্ডদের দাঁত মুখ ভাঙে! তোমার কুটনামির আমি দফারফা করে ফেলবো, বলে দিলাম।

ইউসুফের মুখে হাসি! সে হাসি নিয়েই বললো,— আমার ভাইকে তোমার গুন্ডা মনে হয়। যে দেখে দেখে তোমার বন্ধুদের মুখ ভাঙবে।

— তো ভাঙেনি?

— সেটা তোমার বন্ধুরই দোষ। সে নিজেই পাগলা ষাঁড় কে লাল রুমাল দেখিয়েছে।

— ইশ! এসেছে আমার ভাইয়ের চামচা! আমার বন্ধু তোমার ভাইকে চিনতো। সে আগে খোঁচা মারেনি?

ইউসুফ বড় একটা শ্বাস ফেলে বললো,— যেখানে যাচ্ছো যাও না। অযথা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছো কেন? আর আমার ভাই ওতোও খারাপ না, বুঝেছো।

— আচ্ছা! খুব ভালো?

— হ্যাঁ! অবশ্যই।

— এতো ভালো তো আমার জান খাচ্ছে কেন? দুনিয়াতে আর মেয়ে নেই?

— দুনিয়াতে দুনিয়ার মেয়ে আছে, তবে সব মেয়েকে তো আর আমার, ভাইয়ের দু-জনেরই মনে ধরবে না। তাই আমার জন্য হলেও তো রাজি হতো পারো।

— আমি যদি রাজি হই নারে ছোট হাতি। আগে তোমাদের তিন ভাইয়ের জুটিকে মুচড়ে মুচড়ে ভাঙবো। তারপরে তোমাদের সংসার। শেষে গিয়ে তোমার অতি সভ্য, ভদ্র ভাইকে। তখন কাপাল চাপড়িয়েও লাভ হবে না। এটা মনে রেখো।

ইউসুফ আবারো হেসে ফেললো! হেসে বললো, — তাহলে তুমি রাজি?

— যা ভাগ! বলেই দিলশাদ উঠে দাঁড়ালো!

— রাজি হয়ে যাও না আপু! আমার ভাইয়ে মতো আর কাওকে পাবেনা। গ্যারান্টি!

দিলশাদ এবার হেসে ফেললো! হেসে ঢং করে বললো,— তোমার ভাই যেমনি হোক, দিল্লির লাড্ডুতো আর না।

ইউসুফ ভ্রু কুঁচকে বললো — দিল্লির লাড্ডু আবার কি?

— দিল্লির লাড্ডু যে খায় সেও পস্তায়, যে না খায় সেও পস্তায়। তাই তোমার ভাই দিল্লির লাড্ডু হলে অন্তত একবার ভাবতাম। খেয়ে পস্তাবো, নাকি না খেয়ে পস্তাবো। বুঝেছো! বলেই দিলশাদ তাঁর আঁচল উড়িয়ে হিলের গটগট শব্দ তুলে বেরিয়ে গেলে।

ইউসুফ সেই দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। বলে কি এই আধা পাগল মেয়ে। তারপর হেসে ফেললো ! যা খুশি বলুক তার কি? ভাই দিল্লির লাড্ডু হোক আর বাংলার হোক। আমার ভাবিতো এ’ই হবে। বলেই সে সোফায় হাত, পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। যাক! আজকে অন্তত পড়ায় থেকে ছুটি।

চলবে……