#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_১৩
পুরোনো অভ্যাস এতো সহজেই পালটানো যায়? রোজকার মতোই আজও নাফিস বকুল গাছের নিচে দাড়িয়ে ফুলের অপেক্ষা করতে লাগল। সে জানে, ফুল আসবে না। আসার কথাও না। ফুল কোথায় আছে সে জানেও না। শুধু প্রার্থনা করছে, ফুল যেখানেই থাকুক না কেন যেন সুস্থ থাকে। আজ নবীন বরন অনুষ্ঠান। নাফিস ফুলের জন্য ওড়না কিনে এনেছিল। ওড়না কেনার টাকাটা সে বিগত একমাস যাবত একটু একটু করে জমাচ্ছিল। কোনো উপলক্ষে নয়, এমনিতেই দিতে চেয়েছিল। কারণও আছে এখানে। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ফুল দুইদিন এসেছিল। দুইদিনই তার পরিধানে একই ওড়না ছিল। দুঃখের বিষয় হল, সেই ওড়নার একটা অংশ ছেঁড়া ছিল। ফুল সেই অংশ ঢাকার জন্য কতোই না চেষ্টা করেছিল। নাফিসদের অবস্থা যে খুবই ভাল সেটা বলা যাবে না। নাফিসরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির কিন্তু ফুলের বাবার মতো নেশাখোর তার বাবা না। দিনমজুরি কাজ করে খেটে সংসার চালায়।
কলেজে পৌঁছে আরিফার সামনে পড়লো নাফিস। মেয়েটা ইনিয়েবিনিয়ে মনের কথা ব্যক্ত করছে তাকে। আরিফা খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। নাফিসের মতো গম্ভীর ছেলের জন্য পারফেক্ট কিন্তু নাফিসের কেনো যেনো সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছে করে না। আরিফা নাফিসের জন্য ফুল নিয়ে এসেছে,” আমাদের গাছের প্রথম লাল গোলাপ তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।”
নাফিস ইতস্তত হয়ে ফুলটা হাতে নিল। আরিফা এতোই খুশি হল, যেনো বিশ্বজয় করে ফেলেছে। নাফিস মুচকি হাসলো। সেও পকেট থেকে বকুল ফুলের মালা বের করে আরিফাকে দিয়ে বলল,” বকুল ফুল, আমার খুবই প্রিয়। ফুল ছাড়া এই প্রথম তুমি, যাকে আমি বকুল ফুলের মালা দিয়েছি।”
আরিফা লজ্জায় মাখোমাখো হল। নাফিসের হাত থেকে ফুলের মালা নিয়ে দৌড়ে পালাল।
কলেজে পৌছানোর পর ফুল নিজের আশেপাশে শুভকে দেখতে পেল না। ফুল এটা নিয়ে মাথা ঘামালো না। কেননা ফুল জানে, কলেজে তারা শুধুমাত্র বন্ধুর পরিচয়ে থাকে। ফুল নাফিসকে খুঁজতে লাগল। আরিফা দূর থেকে ফুলকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসলো। একপ্রকার ফুলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,” দোস্ত, আজ আমি অনেক খুশি।”
ফুল নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,” কী কারণে এতো খুশি?”
আরিফা দুইহাত একসাথে সামনে এগিয়ে বলল,” নাফিস আমাকে ফুল দিয়েছে। তুই বুঝতে পারছিস? এই মালাটা আমার কাছে কতে দামী?”
ফুল খুশি হল। একটু হিংসাও জন্ম নিল। নাফিস ফুলের বেস্ট ফ্রেন্ড বলে! কিন্তু এখন সেও তো কারোর স্ত্রী। কারো ঘরের রাণী। কারো প্রিয়ফুল। ফুল নাফিসকে আশপাশে খুঁজলো কিন্তু পেলো না। আরিফা বলল,” একদম তাজা ফুল, দেখ না!”
ফুল হেসে বলল,” ভালোবেসে তোকে তোর পছন্দের মানুষটা সুতা দিলেও সেটা সুন্দর হবে রে, আরিফা! তুই তো তোর পছন্দের মানুষের মন পেয়ে গেছিস।”
আরিফা অবাক হয়ে বলল,” তুই শিওর হলি, কীভাবে? ”
ফুল মুচকি হেসে বলল,” নাফিস, বকুল ফুল শুধু আমার সাথে শেয়ার করে। আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু আজ তোকে বকুল ফুল দিয়েছে, তারমানে তুই তার অন্তরের কাছাকাছি।”
” যদি এমন হয়, নাফিস তোকে পছন্দ করে?”
ফুল এগিয়ে যাচ্ছিল। আরিফার প্রশ্ন শুনে থমকে দাড়াল। কিছুক্ষণ ভেবে আরিফার দিকে ফিরে বলে,” তা কখনোই সম্ভব না। কারণ আমি বিবাহিতা।”
আরিফা আকাশ থেকে টপকাল যেন। আকাশে তাকিয়ে হেসে বকুল ফুলে চুমু খেল। বাম হাতে মালাটা প্যাঁচিয়ে ফুলের পিছনে দৌড়ে আসলো। আরিফা এই প্রথম ফুলকে ভালভাবে দেখল, মেয়েটা আজ পরিপাটি হয়ে শাড়ি পরেছে। সুন্দর সেজেছেও। এতোদিনে দেখা রূগ্ন মেয়েটা এখন আর নেই। অন্যরকম উজ্জ্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে ফুলের চেহারা থেকে। আরিফা দৌড়ে ফুলের গা ঘেঁষে হাঁটতে লাগল। ইনিয়েবিনিয়ে বিয়ে নিয়ে অনেক প্রশ্ন করল। ফুল হেসে উত্তর দিল,” আমি তোকে এখন কিছুই বলতে পারব না, আরিফা! তবে কথা দিচ্ছি, সময় হলে তোকেই সবার আগে জানাবো।”
আরিফা খুশি হল। নাফিস কয়েকজন ছেলের সাথে দাঁড়িয়েছিল। ফুল দূর থেকে লক্ষ্য করে সামনে আর আগালো না। ভাবল, নাফিস একা হলে বিগত দিনগুলোর ঘটনা জানাবে।
প্রিন্সিপাল স্যারের বক্তৃতার মাধ্যমে নবীন বরন অনুষ্ঠান শুরু হল। ফুল ও আরিফা বসলো তিন নাম্বার সারিতে। ফুল আশেপাশে শুভকে দেখতে পেল না। ফুলের বেশ মন খারাপ হল। কলেজে আসার পর মানুষটার খোঁজই পেল না। ইতিমধ্যে, আদিল স্যার স্টেজে এসেছেন। ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশে ছোট বক্তব্য রাখছেন। ফুল খেয়াল করল, মেয়েরা আদিল স্যারকে নিয়ে উদ্ভট সব চিন্তা করছে। ফুলের খুব হাসি পেল। মেয়েরা যদি জানতো, আদিল ভাইয়া বিবাহিত তাহলে তাদের মন তৃখণ্ডে খণ্ডিত হতো। ফুল হেসে ফেলল। আরিফা জিজ্ঞেস করল,” কি রে! বরের কথা মনে পড়েছে বুঝি?”
ফুল না বোধক ইশারা করতেই মাইকের ঘোষণা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। আদিল স্যার তার বাবুবরকে স্টেজে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিছুক্ষণ পর, শুভ স্টেজে আসলো। নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে ফুলের দিকে এক পলক তাকাল। এরপর উপস্থিত জনতার সামনে নিজের বক্তব্য পেশ করল। নবীনদের হয়ে শুভ বক্তব্য পেশ করছে। ফুল হা করে শুনে গেল। বক্তব্য শেষ করে শুভ ফুলের দিকে তাকিয়ে স্টেজ ছাড়লো।
অনুষ্ঠান শেষের পথে। ফুল নাফিসকে খুঁজতে লাগল। আসার পর থেকে এক পলকও দেখেনি। একটা সময় শ্রেণীকক্ষের দিকে খুঁজতে গেলে শুভকে দেখতে পেল। শুভ সাদা পাঞ্জাবি পরে এসেছিল। বুকপকেটে কিছু হয়তো লেগেছে সেটাই রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করছিল। তার চোখেমুখে বিরক্তের ছাপ। ফুল মুখে হাত দিয়ে দরজা খুলে এগিয়ে আসলো। ফুলকে দেখে শুভ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,” ভালো হয়েছে তুমি এসেছো,ফুল! দেখো না, ভাইয়া বিয়ের সময় পাঞ্জাবিটা গিফট করেছিল। দারোয়ান চাচার সাথে ধাক্কা লেগে বুকপকেটে জুস পড়ে গেছে। কি করব বলো তো!”
ফুল বলল,” স্যার কী অনেক বকবে?”
শুভ সাথে সাথে মাথা হেলিয়ে না করল,” একদম না। কিন্তু আমি কষ্ট পাচ্ছি।”
ফুল এগিয়ে এসে শুভর হাত থেকে রুমাল নিয়ে নিল। শুভ চোখ বড়ো করে তাকালো। তার অবচেতন মনে প্রশ্ন আসলো, ফুল কী তাকে ছুঁয়ে দিতে আসছে?”
শুভ নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে। তার বুকের বা পাশের গভীরের যন্ত্রটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে লাফাচ্ছে। ফুল প্রথমে শুভর বুকের বা পাশটায় বাম হাত রাখল। শুভ সাথে সাথে ফুলের হাতের উপর নিজের ডান হাত রাখল, খুব শক্তভাবে। ফুল স্বাভাবিক সুরে বলল,” কাজ করতে দাও, তাড়াতাড়ি পরিষ্কার না করলে দাগ বসে যাবে।”
শুভ ঘামতে লাগল। নতুন কিছু অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো তার। ফুলেরও কী শুভর মতো অনুভূতি হচ্ছে? ফুলের চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না। শুভ কী ফুলকে একবার জিজ্ঞেস করবে? ফুল শুভর একদম কাছাকাছি, ফুলের নিঃশ্বাস শুভর বুকপকেটে বাড়ি খাচ্ছে। শুভ অনুভব করতে পারছে ফুলের হাতের কাঁপুনি। শুভর কী হল, জানে না। হাত উঠিয়ে ফুলের এলোমেলো চুল গুছিয়ে দিতে যাচ্ছিল তখনই কেউ শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করল। শুভ ও ফুল একইসাথে আগন্তুককে দেখার জন্য ফিরল। নাফিস এসেছে। তার চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। ফুল ভয় পেয়ে শুভকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বলতে শুরু করল,” আমার কথাটা শোন, নাফিস?”
নাফিস কথা শুনলো না। সে শুভকে মারবার জন্য এগিশে আসছিল। শুভ ঠোঁটের কোণে হাসি বিদ্যমান। যেনো ঘটনাটা উপভোগ করছে সে। তার মনে ভালো লাগার ব্যপারটাই দোলা খেল যে, ফুল তাকে ছুঁয়েছে। ব্যপারটা ভেবে মুচকি হাসছে শুভ। এদিকে ফুল পেছাতে পেছাতে শুভর বুকে গিয়ে পিঠ ঠেকালো। শুভ সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল। নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে। নাফিসকে বাঁধা দিয়ে বলতে লাগল,” মাথা গরম করিস না, নাফিস?”
নাফিস বলল,” সরে যা,ফুল। একে আজ আমি?”
শুভ মাঝে রসিকতার সুরে নাফিসকে বলল,” কুল ব্রো, কুল!”
নাফিস শুনল না। ডান হাত তুলল শুভর নাক বরাবর। ফুল বাঁধা দিল। নাফিসের হাত ধরে সরিয়ে নিল। এবার নাফিসের মাথা গরম হয়ে গেল। সে ফুলকে যা ইচ্ছে তাই বলতে শুরু করল,” ছি ফুল! তুই না বিবাহিত? নিজের স্বামীকে ছাড়া অন্য পুরুষের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছিস। লজ্জা করছে না?”
লজ্জায় ফুলের কান গরম হয়ে আসলো। সে নিজের বোকামোর কথা ভেবে আফসোস করলো। নাফিসকে যদি সে প্রথমেই সত্যি বলে দিত তাহলে খারাপ ধারণা মনে আনতো না। ফুল নাফিসের কাছে যেতে নিলে শুভ বাঁধা দিল। একহাতে ফুলকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নাফিসের উদ্দেশে বলল,” আমিই ফুলের অধম বর, যে বিবাহ করা স্ত্রীকে বিয়ের আসরে ফেলেই চলে এসেছিলাম। আমিই সেই অধম মানুষ, যে স্ত্রীকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারিনি। আমি সেই অধম স্বামী, স্ত্রীকে নিষেধ করেছি কলেজে যেন আমাদের সম্পর্কের কথা না জানায়। কেননা আমাদের দুজনেরই বয়স কম। আমাদের সম্পর্কের কথা জানলে, কলেজের সকলেই এটাসেটা প্রশ্ন করে ফুলের মন নষ্ট করে দিবে। আর ব্রো! ফুল আমার সাথেই আছে, কোনো পরপুরুষের সাথে নয়।”
নাফিস বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এতো বড়ো সত্যটা সে হজম করতে পারছে না। মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল। নাফিস ফুলের দিকে তাকাল। মেয়েটা ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদছে। এই মুহূর্তে বন্ধুর থেকে স্বামীর যত্নের প্রয়োজন ফুলের। কথাটা ভাবতেই বুকের মধ্যে জ্বালা শুরু করল তার। নাফিস শুভকে সরি বলে হনহনিয়ে চলে গেল।
ফুল যাবে কী যাবে না ভাবতে লাগল। শুভ ফুলের হাত থেকে রুমাল নিয়ে পরিষ্কার করতে করতে বলল, ” আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, ফুল! নাফিস তোমার খুব ভালো বন্ধু। তোমার উচিত এখন তার পিছু নেওয়া। ওর সাথে কথা বলে সবটা ক্লিয়ার করা। তুমি যাও, আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকব।”
ফুল কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে শ্রেণিকক্ষ ছাড়ল। এদিকে শুভ পাঞ্জাবী পরিস্কার করতে করতে বিড়বিড় করল, “হিংসুটে বন্ধু।”
বাহিরে বের হয়ে ফুল নাফিসকে পেল না। আরিফাকে দেখল গেইটের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে। ফুল এগিয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করল, ” নাফিসকে দেখেছো?”
আরিফা চিন্তিত মুখে উত্তর দিল, “রেগে আছে সম্ভবত। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিছু না বলে চলে গেল।”
ফুল মন খারাপ করে ফিরে আসলো। শুভকে পেল সামনেই। মন খারাপ করে বলল,” বাসায় চলো।”
————-
সারা রাস্তায় ফুল মনমরা হয়ে থাকলেও খোশমেজাজে ছিল শুভ। সারা রাস্তা মুচকি মুচকি হাসছিল সে। বাড়ি ফিরে শুভ ফুলের দিকেই তাকিয়ে থাকল। ফুল আড়চোখে শুভকে দেখে তোতলানো কণ্ঠে বলল,” মা, মা কী করছে দেখে আসি।”
ফুল দাঁড়ালো না। একদম পালিয়ে গেল। যেনো সে চুরি করেছে। অবশ্যই চুরি করেছে। শুভর মন! শুভ মাথা চুলকে নিজের ঘরে চলে গেল। পাঞ্জাবি না খুলেই বুকপকেটে হাত রেখে একটা চিঠি লিখল,
প্রিয় সুখ ফুল,
কি অবাক হচ্ছো? আজ প্রিয় বলে সম্বোধন করছি বলে! অবাক হয়ো না। আজকের অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমি তোমাকে প্রিয়তমার জায়গা দিলাম। আমি কখনো ভাবতে পরিনি তোমার প্রথম ছোঁয়ায় আমার সর্বনাশ ডেকে আনবে। আমি ভয়ংকর প্রেমে পড়ে যাব। আচ্ছা, বিয়ের পর প্রেম করলে কী পাপ হবে? অবশ্য আমাদের সম্পর্ক তো পবিত্র সম্পর্ক তাই না! আজকের পর আমি যদি তোমাকে ছুঁয়ে দেই তাহলে কী রাগ করবে?
আজ বুকের বাম পাশটায় ব্যথা অনুভব করছি। তোমারও কী বুকে ব্যথা করছে? আমি তো বাসায় এসে ঔষধও নিয়েছি কিন্তু কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
আজকে আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছি। তোমার মাথার চুল অনেক লম্বা। আমি ছোটবেলায় মায়ের মাথায় বিনুনি করে দিতাম। তোমার মাথায়ও বিনুনী করব, দরকার হলে পৃথিবীর সমস্ত হেয়ার স্টাইল শিখে নিব। অনুমতি দিবে? রাগ করলে? আচ্ছা যাও, তোমার প্রিয় শিউলি ফুলও গেথে দিব। এবার খুশি তো!
আমি না, আজ লেখতে পারছি না। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। একটু সাহায্য করবে, ফুল? উফ, আমি আজ পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আচ্ছা শোনো ফুল! আমি যদি বেশি পাগলামি করি, তবে আমাকে থামাবে হ্যাঁ! দরকাল হলে তোমার আঁচলের সাথে বেঁধে রাখবে। দুষ্ট কাজ করতেই দিবে না।
তুমি জানো, তুমি পবিত্র ফুল। আমি বলেছিলাম তোমাকে নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক নামে ডাকব। আজ ডাকলাম, চিঠির শুরুতে। পছন্দ হয়েছে? আমার ভীষণ পছন্দের নাম। কেনো জানো? আচ্ছা এটাও বলে দেই, কারণ তুমি আমার কাছে আছো, পাশে আছো, অনুভবে আছো, স্মৃতিতে আছে, চোখের সামনে আছো। শুভর সবটা জুড়ে তুমি আছো। আমার সুখফুল। আমার সুখীফুল। মবে আছে, তুমি প্রথমদিন আমাকে বলেছিলে, তুমি দুখীফুল। আজ বুকে হাত রেখে বলো তো! তুমি আমার কাছে এসে কী দুখী? আমি থাকতে কোনো দুঃখ তোমাকে ছুঁয়ে দিতে পারবে না, ফুল। কথা দিচ্ছি।
ইতি,
সুখফুলের শুভ
চিঠি লেখে শুভ টেবিলের উপরই রেখে দিল। কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। সে জানে, ফুল এই ঘরে আসবে। আজকের ঘটনার জন্য কথা বলতে চাইবে। শুভর দেখা পাবে না ঠিকই কিন্তু চিঠি পড়ে শুভকে মনের কোঠায় জায়গা দিবে।
চলবে…………..