দুখীফুল পর্ব-২৫+২৬

0
373

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২৫

পোশাক পরিবর্তন করে শুভ ফুলের ঘরের সামনে ঘুরঘুর করছে। ঘর থেকে দৃশ্যটা শুভর মা দেখছেন। এই পর্যন্ত গুনে গুনে সাতবার ঘরের মধ্যে উঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। অষ্টমবার উঁকি দিতেই ভদ্রমহিলা হাঁক ছুড়লেন,” এতো উঁকিঝুঁকি না দিয়ে ঘরে আসলেও তো পারিস।”

চু’রি করে ধরা পড়ে যাওয়ার মতো মুখখানা করে শুভ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। ফুলের দিকে তাকালো না। মায়ের পাশ ঘেঁষে বিছানায় শুয়ে পড়লো শুভ। শুভর মা ফুলের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন। ফুল বাঁকা চোখে শুভকে একবার দেখে মন খারাপ করে বসে রইলো। ফুলের মনে কি চলছে কেউ জানে না। একপাশ তেল দেওয়া শেষ হয়েছে। সাগরিকা বাহির থেকে হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে এসে শাশুড়ির উদ্দেশে বলল,” মা, দেখে যাও তো! কোন লোক এসেছে বলছে, বাগান পরিষ্কার করবে। তুমিই বলো, এই সন্ধ্যায় কী বাগান পরিষ্কার করার সময়?”

সুইটি খানম তেল শুভর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,” মেয়েটার মাথায় তো গোবর ঢুকিয়েছিস। এবার তেল দিয়ে ঠিক করে দে। খবরদার! পালাবি না। পুরো মাথায় তেল দিয়ে তবেই উঠবি।”

কথা শেষ করে সুইটি খানম হনহনিয়ে চলে গেলেন। সাগরিকা শাশুড়ির পিছু ছুটলো। যাওয়ার আগে ফুলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। ফুল এতে বুঝল, সাগরিকা ইচ্ছে করেই শাশুড়িকে নিয়ে চলে যাচ্ছে যেনো ফুল ও শুভ কথা বলার জন্য আলাদা সময় পেতে পারে।

শুভ তেল হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। সে কীভাবে কী করবে? তেল দিতে নিলে ফুলকে ছুঁতে হবে কিন্তু শুভ তো প্রতিজ্ঞা করেছে সে ফুলকে ছুঁবে না। শুভকে বসে থাকতে দেখে ফুল ঠোঁট নাড়ালো, ” আমি কী উঠে যাব?”

ফুলের কথায় শুভর ভাবনা ভঙ্গ হলো। সে হু বলে নড়েচড়ে বসে ফুলের যেই পাশ তেল দেয়া বাকী সেই পাশে তেল ঢেলে দিল। কানের পাশটায় ভেজা জবজবে অনুভব করায় ফুল হাত দিয়ে বুঝতে পারল, তার মাথায় আজ দেশ কেজি শ্যাম্পু ঢাললেও এই তেল যাবে কী না সন্দেহ। শুভ, ফুলের ভাবভঙ্গি দেখে চুপসে গেলো। বুঝতে পারল, এভাবে তেল ঢালা ঠিক হয়নি। এবার শুভ ফুলের চুলের গোড়ায় হাত চালালো। গোল গোল করে ঘষে কিছুটা হলেও ঠিক করতে চাইলো। ফুল কিছু বলছে না দেখে শুভর মনের খচখচানিটা আরো বেড়ে গেল।

অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ফুল শুভর দিকে ঘুরে বসলো। এতে করে শুভ খানিকটা পিছিয়ে গেলো। ফুল ভ্রু যুগল কুঁচকে শুভর পদক্ষেপ দেখল। ফুলকে দেখে মনে হচ্ছে, এক্ষুণি পানি ছাড়াই শুভকে গিলে ফেলবে। শুভ নজর বিচ্ছিন্ন করে বলল,” কি হয়েছে? আমি কখনো কোনো মেয়ের চুলে তেল দিয়ে দেইনি। প্রথমবার তো! একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছি, সরি।”

ফুল গভীরভাবে শুভকে দেখছে। মানুষটার কি যেনো হয়েছে। ফুলের কাছ থেকে কেমন পালাই পালাই করছে। শুভর হাত ধরতে গেলে শুভ সরে বসে। এতে করে ফুল আহত হয়। ফুল হাত গুটিয়ে নেয়। শুভর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ” আমাকে ছুঁয়ে দিলে কী তোমার জ্বর চলে আসবে?”

শুভ উত্তর দিল না। একপ্রকার পালিয়ে গেল ফুলের কাছ থেকে। বিছানা থেকে নেমে আবোলতাবোল বকে গেল,” আমার মাথা জ্বলছে। বাতাস খেয়ে আসি।”

আগের কথার সাথে পরের কথার কোন মিল পেল না, ফুল। সে ভাবতে লাগল, কী হয়েছে তার বাবু বরের? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখ গেল বালিশের নিচে অর্ধেক বের হেয় থাকা কাগজের উপর। ফুল কাগজখানা হাতে নিয়ে দরজার দিকে একবার তাকালো। হাতের কাগজটা অন্যদিনের তুলনায় বেশি মনে হলো। ফুল ঝটপট কাগজ খুলে দেখতে পেলো একসাথে তিনটা পৃষ্ঠা। এই পর্যন্ত শুভর লেখা চিঠিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো চিঠি হবে। ফুল চিঠি পড়া শুরু করল,

প্রিয় দুখীফুল,
আজকের সম্মোধনটার মূল অপরাধী একান্তই আমি। কোনোদিনও ভাবিনি আমি তোমাকে এই নামে ডাকব। সত্যিই গতকাল রাতের করা অপরাধের জন্য তোমাকে এই নামে ডাকা হচ্ছে। যেই নামটা আমি তোমার জীবন থেকে একটাসময় মুছে দিয়েছিলাম। আর আজ!

তোমার কাছে কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। কাগজের এই পাতাটুকুও যেন আমার অপরাধের ভার সইতে পারছে না। অথচ তুমিই তো সবকিছু সয়ে গেছো।আমার সকল ভুল, গতকাল রাতের আমার সেই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তোমার মনভাঙা কষ্ট। তোমার শারীরিক অবনতির কারণ।

আমাকে ভুল বুঝো না, ফুল! আমি দিনে দিনে তোমার আসক্ততার পিষ্টে যাচ্ছি। এখন তো আমার মনো ভয়ের বাসা বেঁধেছে, যদি তুমি দূরে চলে যাও! তোমার সম্মুখীন হওয়ার মনো শক্তি পাচ্ছি না। তুমি জানো না তো, ফুল। সকালে তোমাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় দেখে আমার ভেতর কালবৈশাখী ঝড় তান্ডব শুরু করেছিল। আমার মনের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। তোমার তপ্ত শরীরের সাথে মিশে মনে হচ্ছিল, আমার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমি এভাবে তোমার থেকে জ্ব’ল’বা’র আশা করিনি,ফুল! আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিল। সব এলোমেলো লাগছিল। মনের অন্তপটে একটা সুরই বাজছিল, তোমার খারাপ কিছু হয়নি তো!

আজকের এই চিঠিতে বলে রাখি, ফুল! আমার থেকে একদিনের জন্যও দূরে চলে গেলে জীবন দিয়ে দিব। আমি বুঝে গিয়েছি, তুমি আমার পাগলামো। আমার জীবন। আমার ভালোবাসা। আমাদের এখন দুটো সম্পর্ক প্রথমত পবিত্র সম্পর্ক দ্বিতীয়ত ভালোবাসার সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক। এই সম্পর্ক ছেড়ে আমার পক্ষে দূরে থাকা অসম্ভব। তোমাকে ছুঁয়ে না দিয়েও আমি সারাজীবন ভালোবাসতে পারব, ফুল!

তুমি কি জানো ফুল, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ? তোমার হাসি, তোমার ছোট ছোট অভ্যাস, এমনকি তোমার অভিমান—সবকিছুতেই আমি ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু বুঝতেই পারিনি, কতটা কষ্ট নিয়ে তুমি আমার জীবনে এসেছিলে। আমি যে ভুল করেছি, তার জন্য শুধু ক্ষমা চাইলে কি যথেষ্ট হবে? জানি না। তবে আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে এই একটি অনুরোধ করব, আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও। আমি তোমাকে আর কখনো ছুঁয়ে দেখব না। পাক্কা প্রমিজ।

আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ফুল, তোমার আস্থাকে আর কখনও আঘাত করব না। আমি জানি, এই ভালোবাসা কোনো কাগজ-কলমের লেখা নয়; এটি আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে জড়িত, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে থাকা স্বপ্ন। আমি তোমার সেই ছোট ছোট আবেগের যত্ন নিতে শিখব। তোমার চোখে আনন্দ ফিরিয়ে আনতে শিখব। আমি কথা দিচ্ছি, ফুল! আমি অনেক ভালো প্রেমিক হবো, অনেক ভালো স্বামী হবো আর অনেক ভালো পিতাও!

তুমি যদি আমাকে আবারও বিশ্বাস করো, আমি তোমার সেই ভালোবাসার যোগ্য হয়ে উঠব—যেভাবে তোমার পাশে থাকার কথা ছিল। তোমার কষ্টের জন্য ক্ষমা চাইছি, আর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই ভালোবাসাকে আজীবন সযত্নে রাখব।

একটি সত্য কথা শুনবে,ফুল! আমাদের এই বয়সটা আবেগের বয়স। এই বয়সে ভালো খারাপ ভেদাভেদ বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে। বলতে পারো, এই বয়সেই ধাক্কা খেলে আজীবন মনে থাকে। আমি আমার জীবনে এমন এক ধাক্কা খেয়েছি যা তোমাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তুমি বুঝতে পারছো তো! আমি অসহায়,ফুল। তোমাকে ভালোবেসে আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

ফুলবউ, ভালোবাসা নামক অসুখে আমি এতোটাই ডুবে গেছি। নিজের উপরই এখন বিরক্ত লাগছে। আমি যেই স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন হয়তো পূরণ করতে পারব না। আমার লক্ষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমি ভাবছি, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে পড়াশোনায় মনোযোগ দিব। শুধু আমি নয়, তুমিও পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। আমাদের অনেক বড়ো হতে হবে।

জানি ফুল, এই চিঠি পড়তে তোমার কেমন লাগছে। হয়তো চোখের সামনে গতকাল রাতের অনেকটা কষ্টের স্মৃতি ভেসে উঠছে। তোমার জন্য কষ্টের কারণ হয়েছি—এই সত্যি মেনে নেওয়া আমার জন্যও সহজ নয়। কিন্তু আজ বুঝতে পেরেছি, তোমার পাশে দাঁড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি আমি নিয়েছিলাম, তা আমি পূরণ করতে পারিনি। আর এজন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।

আমাদের দুজনের জীবনের গল্পটা অনেকটা সিনেমার মতোই শুরু হয়েছিল, তাই না? বিগত এক বছর বিবাহিত জীবনের বয়সের সেই দিনগুলোতে আমরা দুজনেই ছিলাম স্বপ্নে বুঁদ। নতুন পথচলার কল্পনায় মগ্ন ছিলাম, ভাবছিলাম জীবনটা ঠিক রূপকথার মতো হবে। কিন্তু সেই গল্পটা বাস্তব জীবনে কীভাবে চলতে হয়, তা বুঝতে পারিনি। হয়তো আমাদের এখন সেই সময়টুকুই আসেনি।

তুমি জানো ফুল, আজ সারা দিন নিজের মধ্যে বারবার প্রশ্ন করেছি—কীভাবে আমার ভুলে তোমার এতটা কষ্ট দিতে পারলাম? তোমার মতো ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া এ জীবনে ভাগ্যের ব্যাপার। তুমি আছো আমার সবটুকু, আর আমি সেই মণিকোঠা খুইয়ে বসে আছি, নিজের ভুলের বোঝায় ভারাক্রান্ত।

তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমায় আরেকটা সুযোগ দাও। তোমার আঘাতগুলো আমি সারাতে চাই। তোমার সেই বিশ্বাস আর ভালোবাসার যোগ্য হয়ে উঠতে চাই। এই এক জীবনে তোমার চোখের জল মুছিয়ে, আবার তোমার মুখে সেই হারানো হাসি ফিরিয়ে আনতে চাই।

তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করো, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—আমাদের জীবনের বাকিটা পথ তোমার পাশে থেকে, তোমার প্রতিটি আবেগের সম্মান করব। ভালোবাসার এই বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে তুলব। তুমি কি আমায় আরেকটা সুযোগ দেবে?

ইতি
তোমার অপরাধী বর

চিঠি পড়া শেষ করে ফুল কান্নায় ভেঙে পড়লো। মানুষটা ভাবছে, তার অতিরিক্ত ভালবাসার ফলে ফুলের জীবন বিপাকে অথচ সে জানে না, ফুল তার বরের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ছটফট করে। শুভর একেকটা কথা শোনার জন্য মন প্রাণ উতলা হয়ে থাকে। ফুল চিঠি রেখে শুভকে খুঁজতে বের হলো।

শুভ তখন বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে বাহিরে তাকিয়ে ছিল। ঐ তো, ফুলের সবচেয়ে প্রিয় শিউলি ফুলের গাছটায় কলির দেখা মিলেছে। দুই একদিনের মধ্যেই ফুল ছেয়ে যাবে গাছটাতে। ফুল তখন মনের আনন্দে মালা গাঁথবে। শুভ দূর থেকেই তার ফুলবউকে দেখবে, কখনোই ছুঁয়ে দিবে না।

শুভর ভাবনার মাঝেই ফুলের আগমন ঘটলো। মেয়েটা নাক টেনে কাঁদছে। শুভ পিছনে ফিরে তাকাতেই ফুলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল,” এক্ষুণি যদি আমাকে জড়িয়ে না ধরো তো আমিই ম’রে যাব। এমনিতেও আজ সারাদিন তোমাকে না পেয়ে ম’রে’ই যাচ্ছিলাম। এখন না হয়, সত্যি সত্যি!”

শুভ হাত বাড়িয়েও গুটিয়ে নিয়ে বলল,” দেখো,ফুল!”

” আমি কিছুই দেখতে চাই না, কিছুই শুনতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই।”

ফুল, শুভর অপেক্ষা করল না। নিজেই শুভর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। শুভর চোখেও পানি। সেও ভালো নেই। ফুলকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরলো। ফুলের মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। আদরে আবেশে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ফুল হেঁচকি তুলে কাঁদছে। শুভ ফুলকে নিজের ছাড়িয়ে আঁজলা ভরে মুখে হাত রাখলো। ফুলের সারামুখে অসংখ্য চুমু খেলে। ফুল কান্নার মধ্যেও হেসে বলল,” আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে?”

শুভ, ফুলের কপালের সাথে কপাল ঠেকাল। ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে শুভ। ফিসফিস কণ্ঠে বলল,” কখনোই না।”

ফুল পা উঁচু করে শুভর গালে চুমু খেলো। এই প্রথম ফুলের স্বইচ্ছায় তাকে আদুরে চুমু খেল। শুভ চোখ বন্ধ করে বলল,” গতকাল রাতের জন্য সরি,ফুল। তোমার জ্বরের জন্য আমিই দায়ী।”

” তোমার ভাবনা ভুল, শুভ। ভাবী বলেছে, এমনটা স্বাভাবিক।”

” আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিব না, ফুল।”

ফুল চোখভরে শুভকে দেখল। তার চিকচিক চোখজোড়া দেখে শুভ মুছে দিল। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে জড়িয়ে ধরল। এই মেয়েটাকে ছাড়া শুভর জীবন নিশ্চল।

——————–

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা যায় না। সময় তার মতোই চলতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতির রূপও পরিবর্তন হয়ে থাকে। শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ, হেমন্ত আসে আর যায়। সময়ের আবর্তনে মানুষের চালচলনেও পরিবর্তন আসে। মানুষের পেশা পাল্টায়, বাসস্থান গড়ে অন্য কোথাও।

সময়ের পাল্লা দিয়ে সবাই চললেও শুভ ও ফুলের জীবন সেভাবেই পড়ে আছে। আজও ফুলের অবর্তমানে শুভ চিঠি নিয়ে আসে। আজও গভীররাতে দুজনেরই শ্বাস প্রশ্বাসের আদান প্রদান ঘটে। আজও দুই ভাইয়ের মধ্যে খাবার টেবিলে খুনসুটি হয়ে থাকে। সময় কীভাবে পেরিয়ে গেল।

আগামী সপ্তাহ শুভ ও ফুলের এইচএসসি পরীক্ষার শুরু হবে। হ্যাঁ, সময় অনেকটাই অতিবাহিত হয়ে গেছে। শুভ ও ফুলও অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে। সময়ের পরিবর্তনে ফুল আর সেই লাজুকফুল নেই। বাগানের ফুটন্ত ফুল বনে গেছে। অনেকটা বড়ো হেয়ে গেছে শুভর ফুল। পরিপূর্ণ নারী হয়ে গেছে। শুভ নিজের কথা রেখেছে। শুভ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে কিন্তু আর কতো! মধু থাকলে ভ্রমর তো ছুঁয়ে দিতে চাইবেই। শুভ আজকাল ফুলকে দেখে ঠিক থাকতে পারে না। আদরে সোহাগে অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই তো, সেদিন মায়ের কাছে আবদার জুড়ে বসে যেনো, পরীক্ষার পর ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলকে শুভর ঘরে তুলে দেয়। শুভর মা ছেলের অস্থিরতা দেখে হাসেন। নির্লজ্জের মতো বায়না করার জন্য কান মলে দেন।

আজকে কলেজের শেষ দিন। একদিকে বন্ধু বান্ধবদের থেকে দূরে যাওয়ার কষ্ট তো অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের মায়া। শেষদিনে কলেজে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ শুভ তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে জানাবে। তারসাথে আদিলের চাকরি জীবনের সমাপ্তি ঘটাবে।
অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আদিল আমেরিকান একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়েছে। পাঁচ বছরের জন্য আমেরিকায় শিফট হবে সে। সাগরিকাকেও নিয়ে যাবে তবে কয়েকমাস পরে। সাগরিকা পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। এমতাবস্থায় যাওয়া অসম্ভব।

শুভ, নাফিসের খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেছে। কলেজে নাফিস ও শুভর বন্ধুত্ব দেখে প্রশংসা করে। আরিফা আগের মতোই আছে। একপাক্ষিক নাফিসকে পছন্দ করে। নাফিস মুখে কিছু না বললেও আরিফার ছোটখাটো বিষয়গুলো নজরে রাখে। আর ফুল! সে তো বাগানের ফুটন্ত ফুল। শুভর ফুল। যার পুরোটা পৃথিবী জুড়ে শুভর বসবাস। শ্রেণীকক্ষে যখন সকল শিক্ষার্থী বসে ছিল। আদিল মাহমুদ তখন চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা জানাল। সকলের মনে দুঃখ ছেয়ে গেলো। প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কিছু বক্তব্য পেশ করার পর অনুষ্ঠান শেষ হলো। শিক্ষকরা চলে যেতেই শুভ তাদের বিয়ের ব্যপারটা জানালো। সকলেই অভিনন্দন জানালো। শুভ তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে সকলকে দাওয়াত দিয়ে আসলো।

চার বন্ধু মিলে আজ শেষবারের মতো বাহিরে ঘুরতে বের হলো। আরিফা হাসিখুশি থাকলেও ভেতরে ভেতরে মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না।

চারজন মিলে কাছের একটি রেস্টুরেন্টে গেল। রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে কোণার টেবিল বেছে সেখানটায় বসলো। খাবার অর্ডার দিয়ে প্রথমে ফুল বাথরুমে যাওয়ার নাম করে উঠে গেলো। তার কিছুক্ষণ পর শুভও ফুলের মধু আহরণ করতে চলে গেল। টেবিলে নাফিস আর আরিফাই রয়ে গেলো। আরিফা বিষন্ন মন নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিল। নাফিস কখন এসে তার পাশে বসলো, টেরই পেল না।

আরিফার হাত কারো হাতের মুঠোয় প্রবেশ করাতেই ধ্যানভ্রষ্ট হলো। পাশে নাফিসকে হাসিমুখে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো। কেননা নাফিস তো তার সামনে বসেছিল। তারচেয়েও বেশি অবাক হলো নাফিসের হাসিমাখা মুখটা দেখে। আরিফা চোখ বড়ো করে নাফিসের হাতের মুঠোয় নিজের হাতটা দেখতে লাগল। যখন বুঝতে পারল, নাফিস তার কাছাকাছি আছে তখনই অভিমানে মুখ ফুলিয়ে রাখল, হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু নাফিসের কাছ থেকে হাত ছাড়াতে পারল না। আরিফা রাগে, দুঃখে অন্যদিকে ফিরে তাকালে। নাফিস মুচকি হাসলো। আরিফাকে আরেকটু চমকে দেওয়ার জন্য আরিফার হাতে চুমু খেলো। আরিফার উথালপাতাল মনে ঝড় বইতে শুরু করল। সে পাশফিরে তাকিয়ে অবাক সুরে বলল, “এটা কি করলে?”

নাফিস সাথে সাথে উত্তর দিল,” আমার বউ হবে,আরিফা?”

আরিফার চোখে পানি চলে আসলো। সে বেশিক্ষণ অভিমান মনে পুষে রাখতে পারল না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ফুল ও শুভ তখনই কেক হাতে নিয়ে উপস্থিত হলো। নাফিস আরিফাকে সোনার একটি চিকন আংটি পরিয়ে দিল। নাফিসকে আরিফা জড়িয়ে ধরলো। আজ তার চোখের পানি থামছেই না। সে চাইছে, আজকের দিনটা স্মরণীয় থাকুক। যেনো ভবিষ্যতে বুক ও মুখ ফুলিয়ে নাতি নাতনিদের আজকের দিনের বর্ণনা দিতে পারে। অথচ সে কেঁদেই যাচ্ছে।

ফুল আজ ভীষণ খুশি। তার প্রিয় দুই বন্ধুর মিলন দেখতে পেয়ে। কেক কা’টা’র পর্ব শেষ করে একে অপরকে খাইয়ে দিল চারজনে। নাফিস, শুভকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,” ধন্যবাদ, বন্ধু! তোমার এই উপকার আমি কখনোই ভুলবো না। সারাজীবন আমার ফুলকে এভাবে হাসিখুশি রেখো।”

শুভও হেসে নাফিসের পিঠে হাত রাখল। সে নিজের জন্য হলেও ফুলকে সুখে রাখবে। কেননা ফুল শুভর নিঃশ্বাস নেওয়ার একমাত্র কারণ।

চলবে………..

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২৬

আজকাল শুভর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ফুলের উপর অধিকার একটু বেশিই দেখায় ছেলেটা। মাঝে মাঝে তো ফুল কি পরবে, কি খাবে সেটাও শুভ নির্বাচন করে দেয়। ফুল বাধ্য মেয়ের মতো শুভর নির্বাচন কৃত জিনিসই গ্রহণ করে নেয়। যেনো সে বাধ্য বউ। সাগরিকা এই বিষয়টি নিয়ে বেশ মজা নেয়। ফুল তখন লজ্জায় আঁচলে মুখ ঢাকে।

আদিলের বর্তমান অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির মতো। বেচারা কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না, সইতেও পারছে না। আর একমাস পর আদিল চলে যাবে। এদিকে সাগরিকার পাঁচ মাসের গর্ভবতী। বুঝদার মেয়ে তবুও আদিলের মন মানছে না। এই সময়টায় তার পাশে থাকার কথা ছিল অথচ এমন সময় ভিসা এলো!
বাহির থেকে ফিরে আদিল সাগরিকার খোঁজ করল। মেয়েটা এই অবস্থায়ও ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ে বেড়ায়। আদিল সচারাচর শুভর ফ্ল্যাটে যায় না। আজ সাগরিকার খোঁজ করতে গিয়ে শুভর ফ্ল্যাটে গেলো। সাগরিকাকে পেলো ফুলের ঘরে। ফুলের বিছানায় মহারাণী শুইয়ে আছেন আর ফুল উনার মাথা চেপে দিচ্ছেন। আদিল ঘরে নিঃশব্দে প্রবেশ করল। তার ইচ্ছে ছিল, দুজনকেই জোরে ধমক দিবে। একজনকে, পরীক্ষার পড়া ফেলে সেবা করার জন্য আর অপরজনকে নিজের ঘর ছেড়ে অন্যের ঘরে আসার জন্যে। দেখা গেল, আদিল মুখ খোলার পূর্বে তাকে ফুল দেখে ফেলল। হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলল। আদিল সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফুল সাবধানে বিছানা থেকে নেমে আদিলকে ধরে বাহিরে নিয়ে এলো। কোমরে হাত রেখে বলল,” কোথায় গিয়েছিলে? ভাবী মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুৃম পারিয়ে দিয়েছি। তুমি কী ভাবীকে নিয়ে যাবে? নাকি এখানেই থাকবে।”

শুভ এরমধ্যে ঘর থেকে বের হলো। সামনে পরীক্ষা, শুভ খুব সিরিয়াস। নিজে পড়ছে ফুলকে ধরে বেঁধে পড়াচ্ছে। মেয়েটা একদম পড়াচোর। মূলত ফুলকে খুঁজতেই বের হয়েছে সে। ভাইয়ের সাথে কথা বলতে দেখায় ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো। আরো বেশি অবাক হলো, বড়ো ভাইকে এখানে দেখতে পেয়ে। আদিল শুভকে দেখে ফুলের উদ্দেশে বলল,” আমার বউকে যেখানে সেখানে নয়। আমার বুকের সাথে বেঁধে রাখবো। অন্যের মতো বউকে দিনরাত জ্বালিয়ে মারব না। বুঝলে?”

আদিল গটগট করে ফুলের ঘর থেকে সাগরিকাকে কোলে তুলে নিলো। শুভর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বত্রিশ দাঁত বের করে হেসে ফিসফিস করে বলল,” আমার বউকে কোলে তুলতে পারি। তুই পারবি?”

চোখের সামনে আদিল বউকে কোলে তুলে বের হয়ে গেল। ফুল, শুভর কাছে এসে জানতে চাইলো,” ভাইয়া, কি বলে গেলো?”

শুভ বুঝলো, আদিল তাকে দেখিয়ে বউয়ের খেয়াল করেছে বলে দেখিয়েছে। শুভ, মুখ ফুলিয়ে রাখলো। ফুলের হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,” আমারও সময় আসবে। অনেক পড়া বাকী আছে, ফুল! চলো।”

——————–

পরীক্ষার সময়কালটা আরিফা ও নাফিসের জন্য খুবই লম্বা সময় মনে হতে লাগলো। বিশেষ করে আরিফার কাছে এক একটা দিন একশো বছরের সমান মনে হতে লাগলো। নাফিসের বাবা ও মা পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুইদিন আগে আরিফার বাড়িতে এসেছিল। আরিফার বাবার কাছে মেয়ের হাত চাইলো। আরিফার বাবা মত দিচ্ছিলেন না কিন্তু যখন শুনতে পেল, ছেলে মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করে। তখন আর অমত করেননি। তিনি কথা দিয়ে রাখলেন, পরীক্ষার পর চারহাত এক করে দিবেন।

নাফিস, আরিফাকে একটি বাটন ফোন কিনে দিয়েছে। দূরে থাকলেও রোজ তাদের মুঠোফোন আলাপ হয়। নাফিস আরিফাকে পেয়ে সত্যিই খুশি হল। কে বলেছে, দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসা যায় না! অবশ্যই ভালেবাসা যায়। যদি জীবন সঙ্গী সঠিক থাকে তবে দ্বিতীয়জনই ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠে। আরিফাও ধীরে ধীরে নাফিসের ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছে।

পরীক্ষার সময়গুলোতেও ফুল সংসারের টুকটাক কাজ করে যাচ্ছে। তার কারণ, সাগরিকা। পাঁচ মাসের মধ্যে একটা দিনও বাদ যায়নি যে, মেয়েটা বমি করেনি। অরুচি তো মুখে লেগেই আছে। ফুলের শাশুড়ি তো মুখ ভরে বলে, ছেলে হওয়ার লক্ষ্মণ। অথচ বাড়ির প্রতিটি সদস্য মেয়ে চায়। ফুল একবার সাগরিকাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে কি চায়? তখন জবাব পেয়েছিল, আদিলের মতো একটা ছেলে চাই। যেনো বাবার অনুপস্থিতিতে ছেলের মুখ দেখে সময় কাটিয়ে দিতে পারে।

ফুল শুনে এতে খুশি হয়েছিল! সাগরিকাকে বরাবরই ফুলের পছন্দ। কী সুন্দর কথা বলে! ব্যবহারও অমায়িক। ফুলের অনেক কিছু শেখার বাকী আছে তার থেকে।
আগামীকাল ফুলদের শেষ পরীক্ষা তারপর প্র্যাকটিক্যাল বিষয়গুলোও পরীক্ষা হবে। শেষ পরীক্ষার আগেরদিন পড়াশোনায় মনোযোগ বসে না ফুলের। তার বাবু বরের মতো সারাক্ষণ বইয়ে ডুবে থাকতে ইচ্ছেও করে না। কি জানি, কীভাবে বাবু বরটা সারাদিন পড়ে? নিজেও পড়ে ফুলকেও জোর করে বসিয়ে রাখে। ফুলের এতে বিরক্ত লাগে! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে যে পড়ালেখা তৈরি করেছে তার জিহ্বাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু তা কী আর করা সম্ভব?

আজ ফুল ভেবেই নিয়েছে, সে শুভর ঘরে যাবেই না। নিজের ঘরে পড়তে বসার সুবিধা আছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্কাদোক্কাও খেলতে পারা যায়। শুভর কাছে থাকলে তো ঘাড় ঘুরানোরও সাহস হয় না। যেভাবে ফুলের দিকে তাকায়! মনে হয় কাঁচা মরিচ গুঁড়ো করে কেউ খাইয়ে দিয়েছে। ফুলের তো আত্মা বের হয়ে যায়। বিগত দুই বছর সে তার বাবুবরের ভালোবাসা দেখে এসেছে। এখন দেখছে শাসন। হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ফুলের জন্য।

শেষ পরীক্ষার আগেরদিন বন্ধ পেয়েছে পরীক্ষার্থীরা। ফুল কাজবাজ সেরে নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। যাই হয়ে যাক, আজ সে শুভর ঘরে যাবেই না। সবসময় ফুলকে চোখ রাঙানো হ্যাঁ! মেয়ে হয়েছে বলে কী কোনো দাম নাই? ঘরে প্রবেশ করার পর গুনে গুনে দশমিনিটের মাথায় শুভ ফুলের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লো,” ফুল, দরজা খুলো। ভেতরে কী করছো? পড়বে না?

ভেতর থেকে ফুল জবাব দিল,” পড়ছি তো! তুমিও পড়তে বসো।”

শুভ অবাক হলো। মাথা চুলকে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর আবার এলো। ফুলকে ডেকে বলে উঠলো,” আমার চার নাম্বার শিটটা পাচ্ছি না৷ কোথায় রেখেছো, খুঁজে দিয়ে যাও।”

ফুল এবার উত্তর দিল,” টেবিলের চার নাম্বার ড্রয়ারের তিন নাম্বার শিটটাই তোমার কাঙ্খিত শিট।”

শুভ এবারও চলে গেলো। পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না ছেলেটা। ফুল ঘরে না থেকেও মনে হচ্ছে মাথায় চেপে বসে আছে। তারচেয়ে ভলো না, চোখের সামনে বসে থাকুক! শুভ এবার পরনের শার্টের হাতা গুটিয়ে জোরে ফুলের ঘরের দরজায় কড়াঘাত করল,” এক্ষুণি দরজা ফুলবে,ফুল! অনেক হয়েছে। কোথায় কি রেখেছো,খুঁজে পাচ্ছি না।”
ফুল দরজা খুলল। কোমরে হাত রেখে দাড়িয়ে বলল,” তুমি কী জানো? দিনে দিনে তোমার অভ্যাস একদম বাজে হয়ে যাচ্ছে, শুভ।”

পরীক্ষার দিনগুলোতে একটিবারের জন্যও ফুলের কাছাকাছি আসেনি শুভ। ফুলের দিকে মায়াভরা চোখেও তাকায়নি। ফুলকে রেখেছে কড়া শাসনে। কিন্তু আর কতো! চোখের সামনে জীবন্ত প্রাণ ছোটাছুটি করে বেড়ায়। শরীরের ভাঁজে শুভর বিচরণ খুঁজে চলে। নিজেকে কতো কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে সেই জানে। এই যে ওড়না বিহীন শুভর সামনে স্বয়ং রূপের রাণী হাজির হয়েছে। শুভর কী ইচ্ছে করে না! জাপটে ধরে দুই তিনটে চুমু বসিয়ে দিতে! অবশ্যই ইচ্ছে করে। আপাতত ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখল না। ফুলের কাছাকাছি এসে কোমর চেপে ধরল সাথে সাথে। ফুল খানিকটা কেঁপে উঠল। শরীরে অদম্য উচ্ছাস ছেয়ে গেলো। ঠিক কতোদিন পর শুভর মাতাল চাহনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে গননা করা সম্ভব নয়। ফুল বিবশ হয়ে শুভর বুকে ঢলে পড়লো। আর শুভ! সে তো আবেশে তার ফুল বউকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।

চলবে……