দুখীফুল পর্ব-২৯ এবং প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্তি।

0
370

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২৯

ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে কেউ জানে না। কখনো কখনো চমৎকার কিছু ঘটে যায় জীবনের সাথে। ফুলের সাথেও চমৎকার কিছু ঘটে গেছে। ফুলকে নিয়ে যাওয়ার সময় সাজেদা বুবু গরু গোয়াল ঘরে তুলে ফুলদের বাড়ির দিকেই আসছিলো। দেরী হলেও তার অবচেতন মন কুসংস্কারের ব্যপারটা বুঝতে পারল। সকল বাঁধা অতিক্রম করে সে ফুলের জন্য বের হয়ে আসলো। ফুলকে রক্ষা করার দায়িত্ব যেহেতু সেই নিয়েছে, নিজের জান কুরবান করে হলেও ফুলকে যথাস্থানে রেখে আসবে।
মাটির মেঠোপথ ধরে সাজেদা আগাচ্ছিল তখনই ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনতে পেলো। সন্ধ্যা নামলেও তখনো জগদ্বাসী আলোকিত। স্পষ্ট দেখা গেল, দুজন লোক কাউকে টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সাজেদা হাঁক ছুড়লো,” ঐ কেডা রে?”

দুজন মানুষ ভয় পেয়ে গেল। কিছুসময় থেমে আবারো নিয়ে যেতে থাকলো। ফুলের কানে সজেদার কন্ঠস্বর পৌঁছাতেই হাত পা ছুঁড়তে লাগলো। একটা সময় তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে উলটোপথে দৌড় লাগালো। সাজেদাও সামনের দিকে আগাচ্ছে। চিৎকার করে আশেপাশের প্রতিবেশীদের নাম ধরে ডাকছে। ফুল সাজেদার কাছাকাছি আসতেই হোঁচট খেয়ে গায়ের উপর পড়ে গেল। সাজেদা আবছায়া আলোয় ফুলকে দেখতে পেয়ে আৎকে উঠলো। হাউমাউ করে কান্না করে বলতে লাগল,” ও ফুল, ফুল রে! এনে কেমনে আইছোস? দুইডা বেডা তোরে কই লইয়া যাইতাছিল। হায়রে হায়রে।”

সাজেদার চেঁচামেচি শুনে কয়েকজন বাহিরে বের হলো। সাজেদা বলল,” ঐ ধর, দুই জানোয়ারগুলোরে। আমগোর ফুলরে লইয়া যাইতে চাইছিল।”

কয়েকজন জঙ্গলের দিকে ছুটলো। সাজেদা ফুলের হাত মুখের বাঁধন খুলে দিল। ফুল কাঁদছে। সাজেদাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” আমাকে বাঁচাও, বুবু। আমাকে বাঁচাও।”

ফুল আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই জ্ঞান হারালো। সাজেদা আরেকজনের সাহায্যে ধরে ফুলকে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকলো।

এদিকে মৃত বাড়িতে দুই বাড়িতে থেকে খাবার পাঠানো হল। কয়েক বাড়ির মহিলারাও ফিরে এলো যাদের লিপি চলে যেতে বলেছিল। ফিরোজ নেশা করতো বলে, সাজেদা ছাড়া কেউ এবাড়ির ধারেকাছে আসতো না। আজ এসেছিল সহানুভূতি দেখাতে কিন্তু লিপির আচরণ দেখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। মূলত যারা খাবার নিয়ে এসেছে তারাই থেকে গেলো। এতটুকু সময়ের মধ্যে লিপি ফুলকেও সরিয়ে দিলো।

দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর আদিল ও শুভ বাড়ি ফিরতে সক্ষম হলো। শুভ ফুলকে বাড়িতে না পেয়ে রাগে গাড়ি নিয়ে নিজেই আসলো। আদিল ও বকশি কাকার অপেক্ষা করলো না। ফুলের বাবার বাড়ি পৌঁছাতে যেখানে বিশ মিনিট সময় লাগে সেখানে পনেরো মিনিটের মধ্যে চলে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে সজোরে দরজা আটকালো। লিপি বারান্দায় বসা ছিল শব্দ শুনে খানিকটা কেঁপে উঠল। মাথা তুলে শুভকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো। এই শুভকে দেখে লিপি আগের থেকেও বেশি ভয় পেলো। এখন যেই শুভ আসছে সে হ্যাংলাপাতলা হাঁটুর বয়সী কোনো ছেলে নয়। লিপির সামনে শক্তপোক্ত যুবক ছুটে আসছে। লিপি গলা ও কানের অলংকার ঢাকতে লাগলো। শুভ তখনই রেগে গর্জে উঠলো,” আমার ফুল কোথায়?”

লিপির মুখ থেকে তখন তোতলানো আওয়াজ বের হলো,” আমি জানি না। মনে হয় কোনো নাগরের লগে!

বাকী কথা বলতে পারল না। শুভ তার আগেই হুংকার ছুড়লো,” আমার ফুলের সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আপনাকে জানে মে’রে ফেলব।”

লিপি দুরুদুরু বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো। সে কোনোভাবেই মুখ খুলবে না। তার সামনে দাঁড়ানো পাগল ছেলেটা মে’রে ফেললেও না। শুভ পাগলপারা হয়ে ঘরের ভেতর গেল। তিনটি ঘরের একটি ঘরেও ফুলকে খুঁজে পেলো না। শুভ ঘর থেকে বের হয়ে পুনরায় লিপিকে জিজ্ঞেস করল,” সত্যি করে বলুন, ফুলের সাথে কী করেছেন?”

লিপি ঘামতে লাগল। গলায় হাত দিয়ে ঘাম মুছার সময় শুভর নজরে ফুলের চেইন পড়ল; যেটা লিপি নিজের গলায় পরে রেখেছে। শুভর মাথা আরো গরম হয়ে গেল। সামনে থাকা চেয়ারে লাথি দিয়ে বলতে লাগল,” আপনার গলায় আমার ফুলের চেইন কেনো? দেখি, কানেও আছে নাকি?”

একে একে ফুলের গহনা দেখে শুভ বুঝতে পারল, এবাড়িতে খারাপ কিছু হয়েছে। শুভর মাথা ফেটে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে যাকে তাকে ফুলের কথা জিজ্ঞেস করছে। কেউই ফুলের খোঁজ দিতে পারল না। ইতিমধ্যে আদিল ও বকশি কাকা চলে আসলো। ভাগ্য যখন সহায় না হয় তখন কোনোদিকই ঠিক থাকে না। বকশি কাকাও সেই সময় বাড়ি ছিল না। পরিস্থিতি তখন এমনই ছিল ফুলের শাশুড়ি সাজেদার সাথে ফুলকে পাঠাতে হলো। সাগরিকা বাড়িতে একা। সব মিলিয়ে ফুলের ভাগ্য সত্যিই খারাপ ছিল।

শুভকে এদিকসেদিক ছোটাছুটি করতে দেখে আদিল বিচলিত হয়ে এগিয়ে আসলো। শুভ তখন পাগলপ্রায়। ফুলকে না পেয়ে পাগলামো শুরু করে দিয়েছে। আদিলকে দেখামাত্রই চিৎকার করে বলতে শুরু করে,” ভাইয়া, পুলিশকে কল দাও। আমি নিশ্চিত এই মহিলাই আমার ফুলের সাথে কিছু একটা করেছে।”

লিপি জোর গলায় উত্তর দিল,” আমি কিছু করিনাই।”

শুভ দ্বিগুণ চিৎকার করতে লাগল,” তবে এই মহিলার গলায়, কানে ফুলের গহনা কেনো?”

লিপি সাথে সাথে গহনাপত্র ঢেকে ফেলার বৃথা চেষ্টা করে। বাড়িতে থাকা মহিলারাও তখন গহনা দেখতে পায়। লিপি অবস্থা খারাপ দেখে পুনরায় মিথ্যার আশ্রয় নেয়,” এগুলা ফুল নিজেই আমাকে দিয়া গেছে।”

শুভ সহ উপস্থিত সকলেই লিপির মিথ্যা ধরে ফেলল। ইতিমধ্যে সাজেদার আর্তচিৎকার সকলেরই কানে এলো। শুভ জানে না, চিৎকার কে এবং কার জন্য দিয়েছে। আওয়াজ অনুসরণ করে সেদিকেই দৌড় লাগালো। আদিল, শুভ পাগলামো দেখে অবাক হলো। আদিলের মনে ভয় জন্মালো এই ভেবে যে, আজ ফুলের কিছু হয়ে গেলে শুভ সব ধ্বংস করে দিবে। আদিল পুলিশকে খবর দেওয়ার জন্য দ্রুত মুঠোফোন বের করল।

—————

সাজেদা অন্য একজনের সহায়তা নিয়ে ফুলকে ধরে নিয়ে আসছিলো। অন্ধকারে কাউকে দৌড়ে আসতে দেখে হাঁক ছুড়ল,” ঐ কেডা, ফুলকে একটু ধরবা। মাইয়ারে হাসপাতালে নিতে হইবো।”

শুভ কাছে এসে ফুলকে দুজনের কাছ থেকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিল। আবছায়া আলোয় সাজেদা শুভকে দেখতে পেলো। ফুলকে কোলে নিয়ে শুভ সেখানেই বসে পড়লো। ফুলের গালে দুই তিনবার নরমভাবে থাপড় দিয়ে ডাকতে লাগল,” এই ফুল, কি হয়েছে তোমার। আমি এসেছি। এই ফুল।”

ফুলের নড়াচড়া দেখতে না পেয়ে শুভ উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো। পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দিলো। তাতেও জ্ঞান না ফিরলে সাজেদাকে বলল বালতি ভরে পানি নিয়ে আসতে। সাজেদা তাই করলো। দীর্ঘ সময় মাথায় পানি ঢালার পর ফুল নড়েচড়ে উঠলো। পরিপূর্ণ জ্ঞান ফিরতেই তখনকার ঘটনা মনে পড়ে গেলো। ভয়ে ফুল চিৎকার শুরু করল। নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করে কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো তাকে কেউ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পরমুহূর্তে চোখের সামনে শুভকে দেখতে পেয়ে শুভর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু শুভ শান্ত হয়ে বসে আছে। এতক্ষণ মনে যেই ভয় বাসা বেঁধেছিল সেটা দূর হয়ে গেছে। শুভ ফুলকে জড়িয়ে ধরলো না বরং সটান হয়ে বসে রইলো। দূর থেকে আদিল দেখতে পেয়ে বুঝল, শুভ কষ্ট পেয়েছে। এরমধ্যে লিপি পালাতে চাইলে বকশি কাকা সামনে দাঁড়ালো। গ্রামবাসীরা হৈ হুল্লোড় করে যারা ফুলকে ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাদের একজনকে ধরে নিয়ে আসলো। বকশি কাকা তাদের সাথে কথা বলতে লাগলো। শোকের বাড়ি এক মুহূর্তেই নরকের বাড়ি মনে হতে লাগলো।

শুভকে বসে থাকতে দেখে ফুল দূরে সরে বসলো। অপরাধীদের মতো মাথা নত করে। আলোর মধ্যে শুভ ভালোভাবে ফুলকে খেয়াল করলো। ঠোঁটের কোণে র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে। গালগুলোও সামান্য ফুলে আছে। হাতেও কিছু আঘাতের চিহ্ন। শুভ গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। গাড়ির দরজা জোরে আটকে আদিলের উদ্দেশে বলল,” ওর সাথে এই পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব বলতে বলো, ভাইয়া। নয়তো ওকে এখানেই রেখে যাবো। নরক থেকে তুলে যেভাবে মনের আসনে বসিয়েছিলাম ঠিক তেমনই ছুঁড়ে ফেলে যাবো।”

ফুল কেঁপে উঠল। হু হু করে কাঁদতে শুরু করল। সাজেদা অপরাধবোধে নিজেকে দোষারোপ করল,” ফুলের কোনো দোষ নাই, আব্বা। আমিই ফুলকে,,,!

” আমি আপনার মুখ থেকে কিছুই শুনতে চাই না। সে ছোট বাচ্চা না যে, আপনি কোলে তুলে নিয়ে এসেছেন। নিশ্চয়ই সে পায়ে হেঁটেই এসেছে।”

সাজেদা চুপ হয়ে গেলে ফুল গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বের হল। নাক টেনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনা বলল। শুভর দিক দিশা না পেয়ে ফুলকে নিয়ে যাওয়া ছেলের দিকে আগালো। পেটে পিঠে ঘুষি দিতে থাকলো। এদিকে আদিল শুভকে ফেরাতে চেষ্টা করতে থাকল। শুভ চিৎকার করে বলতে লাগল, ” কি করতে চেয়েছিলি আমার ফুলের সাথে। বল কি করতে চেয়েছিলি।”

ছেলেটা ছিল লিপির প্রেমিকের বন্ধু। মা’র খেয়ে শুয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। লোকটা নিজেকে বাঁচাতে সত্য বলে দিল,” জঙ্গলে নিয়ে মে’রে ফেলতাম।”

শুভ পাগল হয়ে গেছে। ছেলেটাকে জানে মে’রে ফেলবে বলে এগিয়ে যেতে চাইছে। আদিল আটকে রাখলো শুভকে। এলাকাবাসীরা থু থু ফেলতে থাকলো লিপির দিকে। শুভ ছেলেটাকে কিছু করতে পারল না ঠিকই কিন্তু তার সমস্ত রাগ ফুলের উপর বর্তালো। ফুলের দিকে অগ্নি দৃষ্টি ফেলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। গাড়ির কাছে গিয়ে ফুলের হাত শক্ত করে ধরে গাড়ির ভেতরে বসালো। ফুলের গাল শক্তকরে চেপে ধরে বলল, ” যে তোকে নিজের জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসলো তার কথা চিন্তা করলি না? একবারও ভাবলি না, কেনো তোকে এখানে আসতে নিষেধ করেছি? আমি তো তোর কেউ না তাই না? ঠিক আছে, আজ থেকে তুই মুক্ত। এই শুভর ছায়াও তোর আশেপাশে পড়বে না, বলে রাখলাম।”

গাড়ির দরজা জোরে আটকে নিজে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো। আদিল দৌড়ে আসলো গাড়ির কাছে। জানালা দিয়ে শুভকে একটা কথাই বলল,” আমার বোনের কোনো ক্ষতি করবি না, শুভ।”

শুভ রক্তাক্ত চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,” নিজের জীবনকে কেউ শেষ করে দিতে পারে, ভাইয়া? ও আমার জীবন ছিল। ও নিজেই আমার জীবন শেষ করে দিল। চিন্তা করো না, ওকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তোমরাও এসো।”

চোখের পলকে শুভর গাড়ি ফুলের বাড়ি থেকে অদূরে চলে গেল।

———————–

আগামীকাল গায়ে হলুদ। বাড়ির মেহমান ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছে। ফুলকে মায়ের হাতে তুলে দিয়ে শুভ চিৎকার করে সকলের উদ্দেশে বলেছে,” এবাড়িতে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না। আপনারা এসেছেন। আমি খুশি হয়েছি। এই সাজসজ্জা যাদের জন্য ছিলো তারা ম’রে গেছে। আপনারা চাইলে থেকে যেতে পারেন অথবা চলে যেতে পারেন। এই বাড়িতে কোনো বিয়ে হবে না।”

শুভ পুনরায় গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে। মেহমানদেরকে শুভর মা ফুলের বাবার মৃত্যুর কথা জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মেহমানরা কতোটুকু বুঝলো, জানা গেল না। অনেকেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলো। আর যারা কাছের তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। ফুলের শাশুড়ি ফুলকে ঘরোয়া চিকিৎসা দিয়েছেন। ফুলের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে আফসোস করলেন।

ফুল সাগরিকার জড়িয়ে ধরে নিজের ঘরে বসে অঝোরে কাঁদছে। সাগরিকার হাজারো বুঝ তার কানে ঢুকছে না। ফুলের মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে আর হলো শুভ। শুভর বলা শেষ কথাগুলো ফুলের মস্তিষ্কে গেঁথে রয়েছে। মনে ভয়ের বাসা বেঁধেছে এই ভেবে যে, শুভ কী তাকে ছেড়ে দিবে? এমনটা হলে তো ম’রে যাবে। শুভ ছাড়া এক মিনিটও থাকার কল্পনা করতে পারে না,ফুল।

এদিকে শুভ গাড়ি নিয়ে একটি মাঠের মধ্যে আসলো। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে সে ফাঁকা মাঠের মাঝে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, শুভর শরীর কেঁপে উঠছে। হ্যাঁ, শুভ কাঁদছে। তার চোখের একেক ফোঁটা ঝরার অপরাধী একমাত্র ফুল। দীর্ঘ সময় শুভ একাকী বসে রইলো। আগামীকাল তার আর ফুলের হলুদ সন্ধ্যা, অথচ আজ সে যেই অবস্থানে আছে; ফুলকে ক্ষমা করতে পারছে না। ভালোবাসার মানুষের আঘাত শরীরে নয়, অন্তরে গিয়ে লাগে। শরীরের ক্ষত মুছে গেলেও অন্তরে ক্ষত মুছতে অনেক সময় লাগে।

আদিল, শুভকে খুঁজতে খুঁজতে সেই মাঠে এসে পৌঁছালো। আদিলের সাথে বকশি কাকাও ছিল। ছোটবেলা থেকে পিঠে চড়িয়ে বড়ো করা শুভকে বিমর্ষ অবস্থায় দেখে আৎকে উঠলো দুজনই। শুভর কাছে গিয়ে বসলে আদিলের দিকে ছলছল চোখে তাকালো। ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,” আমাকে কেনো বড়ো হতে হলো, ভাইয়া? আমি এতো চাপ নিতে পারছি না। ফুলের আজ কিছু হয়ে গেলে কী হতো,ভাইয়া? ভাবতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ও আমার কথা শুনলো না, ভাইয়া। আমার কথা শুনলো না।”

শুভর কষ্ট বুঝতে পেরে আদিলের চোখেও পানি চলে এসেছে। এই প্রথম তার মনে হল, শুভকে পরিপূর্ণ বয়সের আগে বিয়ে দেওয়াটাই ভুল হয়েছে। আদিল শুভর পিঠ চাপড়ে বলল,” মেয়েটা বুঝতে পারেনি, শুভ। সম্পর্কের মারপ্যাঁচ বুঝতে অনেক সময় লাগবে। ওকে ক্ষমা করে দে,ভাই!”

শুভ আদিলকে ছেড়ে বলল,” আমি তাকে কখনোই ক্ষমা করব না, ভাইয়া। আজ থেকে ফুলের সাথে আমার মনের সম্পর্ক শেষ। ও মুক্ত,ভাই! ও মুক্ত।”

আদিল ভাইকে অনেক বুঝালো কিন্তু শুভ বুঝলো না। খোলা আকাশের নিজে শুইয়ে পড়লো। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ের উদ্দেশে বলল,” আমার একটা কথা রাখবে, ভাইয়া?
” কি?”

” তুমি চলে যাওয়ার আগে আমাকে শহরে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে দিবে? আমি অনার্স সেখানে পড়তে চাই।”

আদিল লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,” তুই যা বলবি তাই করব। তবে তোর কাছে অনুরোধ, ফুলকে নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখ। মেয়েটা তোর যত্নেই এখানে পড়ে আছে। হঠাৎ করে তোর দূরে সরে যাওয়াটা কী আদৌও মেনে নিতে পারবে?”

শুভ কিছু বলল না। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল,” দুখীফুলের জীবনটা দুঃখ দিয়ে শুরু হলেও সুখ এনে দিয়েছিলাম কিন্তু সে সেই সুখের মর্যাদা রাখতে পারেনি। আমি খুব করে চাইব, ফুল সুখে থাকুক। শুভহীনা ফুল বাঁচতে শিখুক। যেনো আর কোনো লিপি তাকে দুর্বল ভেবে আঘাত করতে না পারে।”

সমাপ্ত
প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্তি।