দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব-১৪+১৫

0
353

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৪

মাথার উপরে ঘটঘট শব্দ করে ফ‍্যান ঘুরছে। আবির হৈমন্তীর হাত ধরে বসে আছে। মেয়েটার চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। আসমা বেগম হৈমন্তীর মাথার কাছে বসে ভ্রু কুচকে আছেন। জীবনে প্রথমবার মনে হচ্ছে এই আজব চিড়িয়াখানাতে বাবা কেনো যে উনার বিয়ের দিয়েছিলেন এখন আফসোস হচ্ছে। টাকা পয়সা প্রভাব প্রতিপত্তি দিয়ে কি আর শান্তি পাওয়া যায়? অভিভাবকগুলো কেনো যে বুঝে না আল্লাহ্ ভালো জানে। ভালো মানুষের সঙ্গে থাকলে ওসব লাগে না। উনি স্বামীর পাশাপাপাশি ছেলের উপরেও রেগে আছেন। মেয়েটাকে আটকে না রেখে বাবার বাড়িতে কিছুদিন রেখে আসলে কি এমন ক্ষতি হবে কে জানে। উনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না ফিসফিস করে বললেন,

> মেয়েটাকে আরাফাতের সঙ্গে পাঠালে কি এমন ক্ষতি হতো? বোন তো নেই, বোনের মর্ম বুঝবে কেমন করে। যদি থাকতো বুঝতে কতটা আদরের হয়। মেয়েটা নিজের কথা চিন্তা না করে ভাইকে বাঁচাতে ছুটে গেছে। ভেবেছো কতটা ভালোবাসা থাকলে এমনটা করা যায়? বাপ চাচার মতো চামার হয়েছো। মায়া দয়া নেই।

মায়ের কথা শুনে আবির ভ্রু কুচকে ফেলল। এতগুলো অভিযোগ ওর বিরুদ্ধে করা হয়েছে মানতে কষ্ট হচ্ছে। আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল,

> আম্মা তুমি আমাকে কেনো দোষারোপ করছো? ওকে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আরাফাত ওকে একেবারে হাওয়া করে দিবে বুঝলে? সবাই রেগে আছে। দুই দলের ঝগড়া ঝামেলা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। আমি তো শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা করছিলাম। ঝামেলা কমলে ওকে নিয়ে যেতাম।জানতাম না আরাফাত হঠাৎ সব গন্ডগোল করে ফেলবে।

> এখন জেনেছো শান্তি হয়েছে? তোমার কি মনে হয় বোনকে ওরা ত‍্যাগ দিয়েছে? বোকাবোকা কথাবার্তা বন্ধ করে ওর জ্ঞান ফিরিয়ে আনো। কিসের ডাক্তার তুমি যে একটা মেয়ের জ্ঞান ফিরাতে পারছো না? এই তুমি ডাক্তারি করো?

আসমা বেগমের কথা শুনে আবির কপাল চাপড়ে বসলো। তবে উত্তর দিলো না। কথায় কথা বাড়বে ভেবে চুপচাপ বসে থাকলো। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই হৈমন্তীর জ্ঞান ফিরলো। মেয়েটা পিটপিট করে চোখ খুলতেই আসমা বেগমের মুখটা দেখতে পেলো। ও আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। আবির হৈমন্তী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

> সবাই ঠিকঠাক আছে একমাত্র তুমি ছাড়া। বরের পেসার বাড়িয়ে দিতে উস্তাদ তুমি। ওদিকে পুরো মফস্বলের লোকজন রওনা দিয়েছে।

আবিরের কথা শুনে হৈমন্তীর কোনো হেলদোল হলো না। ভাইয়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। ভরসা হচ্ছে না যদি কিছু হয়ে যায় তখন। হৈমন্তী ভাবতে পারলো না। শাশুড়ির হাতটা মুঠোয় নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> ভাইয়ার কাছে যাবো।

আসমা বেগম পরম মমতার সঙ্গে হৈমন্তীর মাথা নিজের কাধে রেখে বললেন কিছু হয়নি। আবির চুপচাপ বসে থেকে ফোন হাতে বেরিয়ে আসলো। মহিত রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। যতক্ষণ না গ্রাম থেকে মা, মামা আর নানিজান আসছে ততক্ষণ ও রুমের বাইরে বের হবে না। চমৎকার একটা পরিকল্পনা করেছে। সকালের ঘটনাকে দারুণভাবে সাজিয়েছে। সেখানে সব দোষ মির্জাদের উপরে গিয়ে পড়বে বাকীটা আবিরের উপরে। আবির শশুর বাড়ির উপরে দরদ দেখিয়ে ওদের কিছু বলছে না। এমন তো হতে পারে না। মহিতের সব জল্পনা কল্পণার অবসান খুব তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো। একটা ফোন এসেছে এখুনি বাইরে যাওয়া জরুরি তাই আর অপেক্ষা করলো না। চুপিচুপি বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে বের হলো।
_____________________
চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরাফাত আর অরিন। কিছুক্ষণ আগে ওরা বিয়ে করে সোজা আবিরের বাড়িতে এসে উঠেছে। আবিরের দাঁদিজান গোলনাহার বিবির চোখে আগুন জ্বলছে। পাশে উনার ছেলেমেয়েরা আছেন কারো মুখে কথা নেই। আরাফাত আড় চোখে দেখছে। সব গুলো হঠাৎ এমন বোবা হয়ে গেলো কেনো হজম হচ্ছে না।তবে ওর মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে। মনে মনে ভাবছে, “দেখ কেমন লাগে। পৃথিবীর সব থেকে কুখ্যাত জামাই হয়ে তোদের সবগুলোকে পাবনাই পাঠিয়ে তবে ছাড়বো। জামাই কি জিনিস এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবি।” অরিনকে নিয়ে আরাফাত সোজা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছে। বিয়ের সময় পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না তবে রাজীব আর মাসুদ সবটা জানে। বিয়ের পরে জানিয়েছে। রাজীব রাগ করেছে ভাইয়ের উপরে কিন্তু মাসুদ পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়েছে। ওরা ভোরবেলা ঢাকা পৌঁছেছে।আরাফাত ভেবেছিল দেখা করে আসবে কিন্তু আগে কাজীদের একটু ঝটকা খাওয়ানোর দরকার ছিল। গোলনাহার বিবির একমাত্র কন‍্যা জুলেখা কাজী বেশ অহংকারী মহিলা। অরিনের সঙ্গে উনি বড় ছেলের বিয়ের কথা ভেবেছিলেন।আর সেই মেয়েটা এখন শত্রু পক্ষের ছেলের সঙ্গে বিয়ে করে এসেছে দেখে উনি জ্বলছেন। ঝড়ের আগে পরিবেশ যেমন থমকে যায়। এখানেও তাই হয়েছে। হঠাৎ রাসেল ছুটে গিয়ে আরাফাতের কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> তোর সাহস হয় কিভাবে এই বাড়িতে মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করে নেওয়ার? এই বিয়ে আমি মানিনা। কুত্তা….

রাসেল বাকীটা আর বলতে পারলো না তার আগেই অরিন ফ‍্যাচ ফ‍্যাচ করে কেঁদে বলে উঠলো,

> ভাইজান মারবেন না উনার কোনো নেই। সব আমার দোষ। আমি উনারে খুব ভালোবাসি।

রাসেল আরাফাতের কলার ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ অরিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ওকে এই প্রথমবার অরিন ভাইজান ডেকেছে। এই বাড়ির কাজের মেয়েটা যেভাবে ডাকে ঠিক সেভাবে। রাসেলের ইচ্ছে হলো এই মেয়েটার মুখের উপরে স্বজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে কিন্তু পারছে না। হাত কাঁপছে। গোলনাহার বিবির ধৈর্যের বাধ শক্ত করছেন। জুলেখা ভাইয়ের কানে ফিসফিস করে বললেন

> ভাইজান কি করবেন ভেবেছেন কিছু?এই দুই ভাইবোনকে মেরে গুম করে দেন। তারপর অরিনের সঙ্গে রাসেলের বিয়ে দিয়ে দিব। আবিরের ও মুক্তি পাবে। কি বলেন?

আনোয়ার কাজী কিছু বলতে চাইলেন তার আগেই দেলোয়ার কাজী ভ্রু কুকচে বললেন,

> জেলে যাওয়ার খুব শখ হয়েছে তাইনা? আমাদের বংশে বিধবা বিবাহ নেই। আম্মাকে জিঞ্জাসা কর উত্তর দিয়ে দিবে। তাছাড়া আমার এইটুকু একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে আমি পারবো না। আমার মেয়ে ভূল করেছে আমি শাস্তি দিব তবে সারাজীবন কষ্ট পাবে সেভাবে না।

জুলেখা কাজী ভাইয়ের উত্তর শুনে ক্ষুব্ধ হলেন। যতসব বস্তপচা নিয়মকানুন। সারা বিশ্ব যেখানে বিধবা বিবাহকে স্বীকৃতি দিচ্ছে সেখানে একমাত্র কাজীরাই গৌ ধরে বসে আছে যতসব। উনি ঝাঝালো কণ্ঠে বললেন,

> আপনি মেয়ে জামাইকে মেনে নিচ্ছেন তাইতো? আমি জানতাম এটাই করবেন আপনি। আপন আর পর বলে একটা শব্দ আছে। আবিরের বেলায় ঠিকই আলাদা নিয়ম করছেন। বউ মারতে সমস্যা নাই যত সমস্যা জামাইয়ের বেলায়। ওদের বোনকে খুন করলে কি আপনার মেয়েকে ওরা ধান দুব্ব দিয়ে বরণ করবে?

জুলেখা কাজী রাগের মাথায় আরাফাতের হয়ে বেশ কিছু মারাত্মক পজেটিভ পয়েন্ট তুলে ধরলেন। দেলোয়ার কাজীর এক মেয়ে মারা গেছে উনি জানেন সন্তান হারানোর যন্ত্রণা। এই মেয়েকে হারালে উনার স্ত্রীকে বাঁচানো যাবে না। দু ভাইয়ের একটা মাত্র মেয়ে। অরিনের ছয়টা মামা। ওদের কারো মেয়ে নেই। তাইতো অরিনের জন্মের সময় যখন দেখলেন দুটো জমজ মেয়ে হয়েছে তখনই ওরা একটা নিয়ে নিয়েছিল। আরাফাত আসার সময় সেখানেও একটা খবর লাগিয়ে দিয়ে এসেছে। এদিকে জুলেখা কাজীর কথা শেষ হলো না হৈ হৈ করে সবগুলো এসে হাজির হলো। আরাফাত দাঁত বের করে হেসে অরিনের হাত ধরলো। অরিনের বর মামা সোজা অরিনের সামনে এসে বললেন,

> বাবা চাচা মানছে না সমস্যা নেই তুই আর জামাই আমাদের সঙ্গে যাবি। ওদের চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য এই পাগলা গারদে বোন বিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির মেয়ে তুই। যেখানে বড় হয়েছিস সেখানেই থাকবি।

অরিন মামার আদর পেয়ে খুশীতে কেঁদে ফেলল। গোলনাহার বানু এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না। ঝাঝালো কণ্ঠে বললেন,

> কাজীরা ফকির হয়ে যায়নি যে ঘরের মেয়েকে পরের বাড়িতে পাঠিয়ে হাত ধুয়ে বসে থাকবে।

ভদ্রমহিলার কথা শুনে অরিনের মা ভ্রু কুচকে বললেন,

>ক্ষমা করবেন আম্মা। আপনি কিন্তু আমার ভাইকে অপমান করছেন। তাছাড়া ছোট থেকে কিন্তু অরিন সেখানেই ছিল। আপনি আজ কেনো সেসব বলছেন? মায়ের কষ্ট আপনি বুঝবেন না। বোঝার মতো মন আপনার নেই।

উনি একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। কিন্তু ততক্ষণে শুরু হয়ে গেলো গৃহযুদ্ধ। যে যেভাবে পারছে চলতে থাকলো ঝগড়া। আসমা বেগম হৈমন্তীর পাশে বসে আছে। মেয়েটার সারারাত জ্বর ছিল। রুমের দরজা বন্ধ থাকাই বাইরের শব্দ ভেতরে আসছে না। হৈমন্তী ঘুমিয়ে আছে। আবির বাড়িতে নেই। আনোয়ার কাজী নিরুপায় হয়ে হতাশ হয়ে ঝগড়া দেখছেন। কিভাবে এই ঝামেলা মিটাবেন চিন্তাই ঘাম ছুটে যাচ্ছে। একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অরিন আর আরাফাত সেসব পর্যবেক্ষণ করছে। আরাফাত একটা কাজ করে ফেলেছে ভিডিও কল করেছে মাসুদের ফোনে। মাসুদ ওদিকে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। সব ঝগড়া ঝামেলা একবারে চুপ হয়ে গেলো একটা করুন দৃশ্য দেখে। মহিতকে নিয়ে হাজির হয়েছে আবির। মহিতের হাতে কপালে ব‍্যান্ডেজ। হয়তো হাত ভেঙে গেছে। ঠোঁটে রক্ত ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। জুলেখা কাজী দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে ধরলেন। সকলে মিলে ওকে সোফায় বসিয়ে দিল। আবির এখনো অরিন আর আরাফাতকে দেখেনি। মহিতের জন্য ওদের দিক থেকে নজর ঘুরে মহিতের দিকে সবাই ফোকাস করলো। মহিত ভেজা ভেজা কন্ঠে বলল,গতকাল রাতে একদল ছেলে রাস্তায় ফেলে ওকে উত্তম মাধ্যম পিটিয়েছে। তারপর সিটি হাসপাতালের বাইরে ফেলে রেখে চলে গেছে। আবিরের এক কলিগ ফোন দিয়ে ঘটনা বললে আবির গিয়ে নিয়ে এসে চিকিৎসা করেছে।। হাত ভেঙে গেছে। কপালে আটটা সেলাই লেগেছে।

জুলেখা কাজী জেরা করছেন কে করতে পারে এসব। বিনা দোষে ছেলেরা কেনো ওকে পিটাবে বুঝতে পারছেন না। নিশ্চয়ই কারণ আছে? উনি আরাফাতকে দোষ দিয়ে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গে অরিন বলে দিল,

> মিথ্যা কথা। উনি আমার সঙ্গে ছিলেন। এমন কিছু হলে নিশ্চয়ই জানতে পারতাম।

অরিনের কথা শুনে আবির ভ্রু কুচকে ফেলল। কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। কাজী অফিসের মানে ও বুঝতে পারলো না। ওর পাশে যে আরাফাত দাঁড়িয়ে আছে এটা লক্ষ্য করতেই ছুটে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> তুমি এখানে কি করছো? আবার কি খিচুরি পাকিয়েছো এই মাথা মোটা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে? আর অরিন তুই মালা গলাই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আবির প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। আরাফাত লাজুক হেসে ফিসফিস করে বলল,

> গতরাতে আমাদের বিয়ে হয়েছে। সালাম করতে আসছি।

কথাটা আবিরের হজম হলো না। ঢোক গিলে ফেলল। এই ছেলেটা যে এরকম একটা ভয়ংকর চাল দিবে ও বুঝতেই পারেনি। মাথা ঘুরছে ওর। এই জন‍্যই বাড়িতে এতো লোকজন। আবির কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। জুলেখা কাজী ঝঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন,

> ফাজলামির একটা লিমিট আছে। বোনকে কৌশলে আবিরের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে এখন নিজে জামাই সেজে চলে আসছো কি ভেবেছো কাজীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে জাতে উঠে যাবে? ফকিন্নির বংশ কখনও কি ভালো হয়।

আরাফাত কথাটা হজম করতে পারলো না হাতের মুঠো শক্ত করে উত্তর দিল,

> জাতে তো আমরা আপনাদের তুলে দিয়েছি। রাজীব এমপির ভাই বোনের বিয়ে কাজীদের বাড়িতে হয়েছে এটা কাজীদের সাত পুরুষের সৌভাগ্য। আর ফকিন্নি কে সেটা আপনার থেকে বড় উদাহরণ আর কে আছে। শশুর বাড়িতে তো থাকতে পারেন না। ছেলে মেয়েকে নিয়ে এই বুড়ো বয়স বাপের বাড়িতে বসে কুটনৈতি করেন।

আরাফাত রাগটা ঝেড়ে দিয়ে শান্ত হলো। কিন্তু জুলেখা কাজী জ্বলে উঠলো। গোলনাহার বিবি রেগে বোম। উনার সামনে উনার মেয়েকে অপমান করেছে উনি সহ‍্য করতে পারছেন না। এদিকে অরিনের মা আর মামারা আরাফাতের পক্ষ নিয়ে নিয়েছে। দুদল ভাগ হয়ে গেলো। পরিস্থিতি শান্ত করতে আবির সবাইকে ধমক দিয়ে শান্ত করে বলল এভাবে চিৎকার চেচামেচি করে লাভ হবে না। তার চাইতে শান্ত মাথায় ভাবা যাবে। আপাতত সবাই চুপচাপ থাকতে। অরিনের মা মেয়ে জামাইয়ের হাত ধরে সোজা রুমে নিয়ে চলে গেলেন। এদের জন্য উনি নিজের মেয়েকে হারাতে পারবেন না। বিয়ে করেছে বেশ করেছে। দরকার হয় আরও করবে। রফিক আরাফাতকে মানতে পারছে না। ও রাগে ফুলছে কিন্তু মায়ের উপরে কথা বলা ঠিক না ভেবে চুপচাপ আছে। আবির সবাইকে শান্ত করে রুমে গেলো। মনে হলো ঝড় আপাতত শান্ত হলো। আশেপাশের বাড়ি থেকে প্রতিবেশিরা উঁকিঝুকি কাঁটছে। ভাগ্য ভালো চারদিকে প্রাচিল আর গেটে পাহারাদার আছে।
__________________
প্রথমবার আমেনা বেগম ছোট ছেলের উপরে ভীষণ খুশী। উপযুক্ত একটা কাজ করেছে ছেলে সেই খুশীতে উনি বোনের সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প জুড়েছেন। চয়নিকা রান্না করছে। মাসুদ সবটা মা আর ভাবিকে দেখিয়েছে। আমেনা বেগম খুশী হলেও চয়নিকা খুশি হতে পারলো না। বিয়ের মতো এমন একটা বিষয় নিয়ে এভাবে মজা করা ঠিক হয়নি। সারা জীবনের প্রশ্ন। দুটো জীবন নষ্ট হতে পারে কেউ সেটা ভাবছে না। অন‍্যদিকে এই বাড়িতে আরও একজন আছে যে ঘরের কোনায় বসে চোখের পানি ফেলছে। সে হচ্ছে ছোঁয়া। আরাফাতের বিয়ের খবর শুনেই কাঁদতে বসেছে থামার নাম লক্ষণ নেই। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। মনেমনে অরিনকে অসংখ্য অভিশাপ দিয়েছে। তবুও সান্ত্বনা মিলছে না। রাজীব গেছে কোন মন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করতে। এখানে এসেও কাজের অভাব নেই ওর। সঙ্গে করে বেশ কিছু লোকজন নিয়ে এসেছে। আপাতত কিছুদিন এখানেই থাকবে। আমেনা বেগম চমৎকার একটা আইডিয়া করেছেন। ভেবেছেন এই সুযোগে মাসুদের বিয়েটাও করিয়ে দিবেন। সেই নিয়েই গল্প চলছে।
☆☆☆
যন্ত্রণায় চিৎকার করছে মহিত। একটু আগে বাথরুমে যেতে গিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে গিয়ে ভাঙা হাতের জোড়াতে আবারও আঘাত লেগেছে। কাজী বাড়িতে চলছে জায়গাতে জায়গাতে বৈঠক। রান্না চলছে বাড়ির বাগানে। রান্নাঘরে এতো লোকের রান্না হচ্ছে না। এতকিছুরের মধ্যে আসমা বেগম হৈমন্তীকে রুম থেকে বের হতে দিলেন না। ভাবলেন লোকজন কমলে এই দুই ভাইবোনকে দেখা করিয়ে দিবেন।

চলবে
#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৫

আরাফাত চুপচাপ মাথায় হাত রেখে বসে আছে।। মন মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। কাজীদের বাড়িতে থাকতে ওর রুচিতে বাঁধছে। কিন্তু কিছু করার নেই। অরিন বাথরুমে গেছে ফ্রেস হতে। রুমে আপাতত কেউ নেই। আরাফতের মাথায় যন্ত্রণা করছে। একটু চা হলে বড্ড ভালো হতো ভেবে বেরিয়ে আসলো। বাইরের বাগানে রান্না হচ্ছে ভেতরে লোকজন খুব কম। আরাফাত সোজা রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে চিনি আর চায়ের গুড়া খুঁজতে থাকলো। হঠাৎ কারণ আওয়াজ শুনে ও চমকে উঠে পেছন ফিরতেই জুলেখা কাজির মুখোমুখি পড়ে গেলো। ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে মুখটা কালো করে বললেন,

> কাজীদে বাড়িতে পুরুষ মানুষ রান্নাঘরে আসেনা। এটা সস্তা মির্জাদের রান্নাঘর না যে হ‍্যাঙলার মতো চলে আসছো। কতদিন পেটে দানা পানি পড়েনি কে জানে।

আরাফাত মনোযোগ দিয়ে চা তৈরী করতে করতে ভদ্রমহিলার বকবক গুলো শুনলো। ওর মনে হচ্ছে এই মহিলা একটু বেশি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে। বিষয়টা ভেবে ও চা নিয়ে আসার সময় এক কাপ চা ভদ্রমহিলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে আসলো,

> বেশি বেশি মিষ্টি খাবেন তাহলে কথাগুলো অন্তত মিষ্টি হবে। আর আপনারা হচ্ছেন কুখ্যাত রঘু ডাকাতের বংশধর। ভরসা পাচ্ছি না যদি চায়ের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেন তাই নিজের চা নিজেই করে নিলাম। ফুপি আম্মা যেখানে দজ্জাল মহিলা সেখানে তো জামাইকে এইটুকু কষ্ট করতেই হয়। তবে একটা কথা, আপনার চেহারার সঙ্গে কিন্তু আপনার আচরণের একটা দারুণ মিল পাওয়া যায় । এক্কেবারে ঘসেটি বেগম।

আরাফাত কথটা শেষ করে অপেক্ষা করলো না। টানপায়ে বেরিয়ে আসলো। জুলেখা কাজী রাগে হিশহিশ করছেন। এই ছেলেটা যে চরম বেয়াদব এটা উনার অজানা নেই। উনি শব্দ করে বললেন, ফাজিল।
আরাফাত চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে ফাজিল শব্দটা শুনে বলে গেল, সেম টু ইউ। এতে যেনো কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা পড়লো। উনি রেগে ধপধপ করে পা ফেলে মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ দিয়ে বললেন,

> আম্মা আপনি আমাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিন। আপনার ছেলের বাড়িতে আমি থাকতে চাইনা। আপনার ছেলের জামাই আমাকে অপমান করেছে। আমাদের যাচ্ছে তাই বলে কথা শুনিয়েছে।

গোলনাহার বানু বিরক্ত হলেন মেয়ের উপরে। এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা কি আর আগের মতো । ওরা শিক্ষিত আর আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ। ওদের পেছনে লাগতে গেল মিনিমাম জ্ঞানটুকু তো থাকতে হবে। উনি ধমক দিয়ে বললেন,

> জুলি এসব ঝগড়া ঝামেলা বাদ দিয়ে কাজের কথা বলো। তুমি ঝগড়া করতে গিয়েছো কেনো? বলেছিলাম না একটু চুপচাপ থাকো। প্লানমাফিক এগোতে হলে বুদ্ধি করে চলতে হবে। মায়ের উপরে ভরসা রাখো। গিয়ে দেখে আসো আবিরের বউয়ের জ্ঞান ফিরেছে কিনা।

গোলনাহার বিবি পানের বাটা থেকে পান নিয়ে মুখে নিতে নিতে আদেশ করলেন। মহিত ভাঙা হাত নিয়ে ঘরে শুয়ে আছে। বেচারার প্রচুর জ্বর। রাসেল ঘর বন্ধ করে বসে আছে। হৈমন্তী কিছুটা সুস্থ জ্বর নেই তবে মাথা ঘুরছে।আসমা বেগম মেয়েটার যত্নের ত্রুটি করছেন না। উনার মেয়ে নেই মেয়ের মর্ম উনি বুঝেন। খুব করে চেয়েছিলেন একটা মেয়ে হোক কিন্তু হলো না। হৈমন্তীকে উনি নিজের মেয়ের থেকে কম ভালো বাসেন না। আবির হৈমন্তীর পায়ের কাছে বসে আছে। হৈমন্তী বালিশে হেলান দিয়ে আর্ধশোয়া হয়ে বসে আছে। ও বুঝতে পারছে না আবির এমন অস্থির হচ্ছে কেনো। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল,

> আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?

আবির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,

> আর চিন্তা,তোমার ভাই আমাদের সবার ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। ছেলে একটা বাপবা।

হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,

> কি করেছে ভাইয়া বললেন? চলুন না দেখা করে আসি। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ভাইয়াকে। ঠিকঠাক আসে কিনা চোখে না দেখলে শান্তি পাচ্ছি না।

> তাকে দেখতে হলে আর বাইরে যেতে হবে না। অপেক্ষা করো কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবেন।

আবিরের কথা শেষ হলো না আরাফাত এসে হাজির হলো। হৈমন্তী নামতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আরাফাত দ্রুত বোনকে জড়িয়ে নিলো। হৈমন্তী কেঁদে ফেলল এতদিন পরে ভাইকে দেখে। আরাফাত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে ফিসফিস করে বলল,

> এমন কেনো করলি বোন? যদি কিছু হয়ে যেতো আমাদের কি হতো বল? জানিস আম্মা, ভাই,ভাবি সবাই তোর জন্য ঢাকায় চলে আসছে। কথা বলবি?

হৈমন্তী ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> একটা ফোন করোনা ভাইয়া। কতদিন কথা হয়নি।

আরাফাত একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> আপনি একটু বাইরে যাবেন? হ‍্যাঙলার মতো তাঁকিয়ে আছেন লজ্জা টজ্জা পাচ্ছি। সকাল থেকে দেখছি আপনি কিভাবে জানি আমাকে দেখছেন। পুরুষ মানুষ পছন্দ নাকি আপনার?

আরাফাত সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকাতেই আবির জ্বলে উঠলো। এই ছেলিটার কথাবার্তা হয়না। কখন কিভাবে কথা বলতে হয় কিচ্ছু শিখেনি। শাশুড়ি সব গুলো ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে পারলেও এটাকে উনি এলিয়ন তৈরী করেছেন তাঁতে সন্দেহ নেই। আবির ভ্রু কুচকে বলল,

> কথাবার্তা ঠিক করে বলবে। দুমদাম সবাইকে ঘোল খাওয়ানো বন্ধ করো।

কথাটা বলে আবির আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত বের হলো। বাইরে অরিন দাঁড়িয়ে আছে। পাহারা দিচ্ছে। ওকে বাইরে রেখেই আরাফাত ভেতরে এসেছে। বাড়ির বড়রা ছাদে গোল মিটিং করছে। ঝগড়া ঝামেলা যা বেধেঁছে তার সমাধান করছে। এতো বছরে যে ঐক্য ছিল কাজীদের মধ্যে সেটা ভাঙতে বসেছে। সেটা ঠিকঠাক করতেই চেষ্টা চলছে। আবির বাইরে বের হতেই অরিনের সামনে পড়লো। ভাইকে দেখে অরিন ঢোক গিলে জোর করে ঠোঁটে হাসি আনলো। মূলত ও ভয় পাচ্ছে। আবির ওকে ভয় পেতে দেখে বলল,

> বেকুব,কিছু করার আগে ভয় না পেয়ে এখন ভয় পাচ্ছিস ক‍্যান? দেশে কি ছেলের অভাব ছিল বোন? নরমাল কাউকে পছন্দ করতে পারতি।তানা করে ঘূর্ণিঝড়কে তোর পছন্দ হলো? একদিনে কাজীদের অবস্থা বেহাল। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এখন হিমশিম অবস্থা।

আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো। অরিন লাজুক হেসে ওড়নার প্রান্তে কামড় বসিয়ে উত্তর দিল,

> এই জন‍্যই ওকে এতো পছন্দ। দারুণ ছেলে তাই না ভাইয়া?

আবির হতাশ হয়ে বলল,

> খুবই।

অরিন ভাইয়ের কথা শুনে আরও কিছুটা লজ্জা পেলো। ওর খুশী যেনো উপচে পড়ছে। আবির বোনের খুশীতে খুশী হয়েছে তবে চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভেবে। পাগল মেয়েটা দুমকরে একটা কাজ করে বসেছে। আরাফাত কি ওকে ভালোবাসে নাকি প্রতিশোধ নিতে এসব করছে? যদি প্রতিশোধ নিতে এসব করে তবে বোনের কি হবে ভেবেই ওর এলোমেলো লাগছে। ও কথা বলবে আরাফাতের সঙ্গে। দরকার হয় অনুরোধ করবে। এসবের মধ্যে অরিনকে যেনো কষ্ট পেতে না হয়। একটা বোনকে হারিয়েছে আর হারাতে পারবে না। অরিন এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে। সকলের আদরের। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও বেরিয়ে আসলো।
☆☆☆☆☆
ভিডিও কল চলছে ওপাশে রাজীব চয়নিকা আর মাসুদ হৈমন্তীকে দেখতে ব‍্যস্ত। হৈমন্তী ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমেনা বেগম রুমে ছিলেন উনিও ছুটে এসে ফোন নিয়ে বসে পড়লেন। হৈমন্তীকে দেখে উনি কেঁদে ফেললেন। কতদিন পরে দেখা হচ্ছে। উনি চোখের পানি মুছে বললেন,
> একদম কাঁদবে না। এবার আসলে ওই বাড়িতে তোমাকে আর পাঠাবো না। খুব ভুল হয়েছে মা। আমি তো ভেবেছিলাম আমার মা ভালো থাকবে। ওরা যে এভাবে তোমাকে কষ্ট দিবে ভাবিনি।

হৈমন্তী মায়ের কথা শুনে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। সব সময় মাকে কেমন কঠোর ভাবে কথা বলতে শুনেছে হঠাৎ আজকে এমন করে বলতে শুনে ভালো লাগছে।তবে সত্যি কথা বলতে এখানে তো ওর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। বরং আসমা বেগম ওকে মায়ের মতোই দেখাশোনা করছেন। হৈমন্তী চুপচাপ থাকলো না উত্তর দিল,

> আম্মা তুমি একটুও চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি। তাছাড়া এরা এতটা খারাপ না। আমাকে কষ্ট দিচ্ছে না। আমার শাশুড়ি উনি খুব ভালো মানুষ। আমাকে আগলে রাখেন।

আমেনা বেগম মনে শান্তি পেলেন। মাসুদ রাজীব আর চয়নিকা পালাক্রমে কথা বলে নিলো হৈমন্তীর সঙ্গে। এর মধ্যেই আসমা বেগম চলে আসলেন ভেতরে। আরাফাত ভয় পেলো তবে উনি মিষ্টি হেসে ওর ভয় সরিয়ে দিলেন। মোটামুটি কথা শেষ করে ফোন রাখতেই হৈমন্তী ভাইকে প্রশ্ন করলো,

> আচ্ছা ভাইয়া তুমি এখানে এসেছো কেউ কিছু বলছে না?

আরাফাত উত্তর দিলো না। ওর কাশি হচ্ছে। আসমা বেগম হৈমন্তীর মাথা হাত রেখে বললেন,

> তোমার ভাইয়া তোমার জন্য এই বাড়িতে নতুন সম্পর্ক তৈরি করেছে। ভাইবোনের এমন ভালোবাসাতে যেনত কারো নজর না লাগে।

হৈমন্তী শাশুড়ির কথার মানে বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুচকে বলল,

> নতুন সম্পর্ক?

আসমা বেগম অরিনকে ডেকে নিয়ে আরাফাতের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললেন,

> অরিনকে এবার থেকে ভাবি ডাকো বুঝলে? সে এখন মির্জা বাড়ির ছোট বউ।

হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে ফেলল। আরাফাত মাথা নিচু করে বসে আছে। উত্তেজনার বসে কি করে ফেলেছে নিজেই জানেনা। তবে ও কখনও অরিনকে অবহেলা করতে পারবে না। ওকে অবহেলা করা মানে তাঁকে অবহেলা করা। যার জন্য ওর হৃদয়ে সীমাহীন ভালোবাসা পাহাড় রয়েছে। ওর দিকে থাকালে তাকে অনূভব হয়। সেম চেহারা সেম কন্ঠ কোনো আমিল নেই আছে শুধু ভেতরের সত্তার। তাঁতে কি? মেয়েটাকে নতুন করে ভালবাসার চাদরে আবৃত করে নিবে। আরাফাত প্রেমিক মানুষ। ভালোবাসতে জানে। যে ভালোবাসতে জানে সে পরকে আপন করতেও জানে। একটু সময় লাগবে তবে ও সব ঠিক করে ফেলবে। হৈমন্তী বেশ খুশি অরিনের জন্য।

☆☆
ছাদে মিটিং চলছে।কাজীদের বাড়িতে দেলোয়ার কাজী আর উনার স্ত্রী এতদিন হৈমন্তীকে অপছন্দ করলেও এখন ওকে সাপোর্ট করছেন। তাছাড়া অরিনের মামারা তো আছেই। আনোয়ার কাজী এতদিন ভাইয়ের ভোটে ভোট দিয়ে আসছিলেন কিন্তু হঠাৎ ওদের সুর বদলে যাওয়ায় হতাশ হচ্ছেন। অন‍্যদিকে গোলনাহার বানু আর উনার কন‍্যা আনোয়ার কাজী মানে আবিরের বাবাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে কিন্তু উনি তো ভাইয়ের কথার বাইরে কথায় বলেন না। মা বোনের উপরে উনার ভরসা নেই। দুম করে কেসে ফেসে গেলে তখন উনি একা হয়ে যাবেন তাই কিছুতেই রাজী হচ্ছেন না। ভাই যা বলবে উনিও তাই করবেন। এদিকে দেলোয়ার কাজীর হয়েছে জ্বালা। মেয়েটা শত্রুদের ঘরে বউ হয়ে যাবে ওদের মেয়ের যদি ক্ষতি হয় তখন নিজের মেয়ের উপরেও অশান্তি হবে। উনি ভেবেছেন রাজীবের কাছে ক্ষাম চাইবেন। সব ঝামেলা মিটিয়ে নতুন করে অরিনের বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন।

জুলেখা কাজী রান্নাঘরে সকলের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা তৈরী করতে সাহায্য করছেন। আসমা বেগম আর অরিনের মা মারিয়াম আরা উনাকে মানা করেছেন তবুও উনি শুনছেন না। তাই কেউ আর উনাকে জোরাজুরি করলেন না। হৈমন্তীর ওষুধের সময় হয়েছে দেখে আসমা বেগম পানি নিয়ে রুমে যেতে নিলে জুলেখা উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

> ভাবি আপনি এক কাজ করুন আমি সকলের জন্য শরবত তৈরি করেছি আপনি হৈমন্তীর জন্য এক গ্লাস নিয়ে যান। বেচারির শরীর এতো খারাপ শরবত খেলে ভালো লাগবে।

কথাটা বলে উনি শরবতের গ্লাস টা উনার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আসমা বেগম ভ্রু কুচকে ফেললেন। এই মহিলা সকালবেলায় কতকিছু বললেন হৈমন্তীকে মানতে কষ্ট হচ্ছে এর মধ্যেই ভালো হয়ে গেলো। কিভাবে বুঝতে পারছেন না তবুও কিছু আর না ভেবে পা চালালেন। বাইরে আসতেই অরিন ছুটে এসে উনার হাত থেকে শরবতটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বলল,

> সরি ছোট আম্মা,খুব পিপাসা পেয়েছিল তুমি আরেক গ্লাস নিয়ে আসো হৈমন্তীর জন্য। আমি রুমে যাচ্ছি।

অরিন কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে ঢুকলো। আসমা বেগম মলিন হেসে ভাবলেন এখন শরবত খেয়ে কাজ নেই। মেয়েটার আগে ওষুধ খাওয়ানো দরকার ভেবে উনি চলে গেলেন।
☆☆☆
অরিন দৌড়ে রুমে এসে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। আরাফাত ফোন ঘাটাঘাটি করছিল। হঠাৎ ওকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

> অরিন রাসেলকে তোমার কেমন লাগে?

অরিন হেসে বলল,

> খারাপ না মোটামুটি ভালো তবে একটু ক‍্যাবলা টাইপ।

> তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে থাকে দেখেছো?

অরিন কথা বলতে গেলো কিন্তু পারলো না। গলা কেনো জানি আটকে আসছে। ও কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করতে চাইলো কিন্তু হলো না। ক্রমশ মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আরাফাত ওর মুখের দিকে এতক্ষণ তাঁকিয়ে ছিল। হঠাৎ কি একটা দেখে দ্রুত উঠে এসে অরিনকে দাঁড় করিয়ে ওর মুখটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,

> তোমার মুখে রক্ত কেনো? কি খেয়েছো তুমি? অরিন তুমি ঠিক আছো?

আরাফাত অস্থির হয়ে পড়লো। অরিন ফিসফিস করে বলল,

> শরবত খেয়েছি। গলা আটকে আসছে।

অরিন বাকীটা বলতে পারলো না। অরিন বমি করে দিলো। আরাফাত আর সময় নষ্ট করলো না। ওকে তুলে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। বাইরে লোকজন আছে অরিনকে এভাবে দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো। আরাফাত কাউকে পাত্তা দিলো না। ওকে নিয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো।। আবির রুমে ছিল হঠাৎ বাইরে শোলগোল শুনে দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলো।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।