দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
928

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে:লাবণ‍্য ইয়াসমিন
অন্তিম পর্ব

মাঠ থেকে নতুন ধান এসেছে। চয়নিকা অরিনকে নিয়ে পিঠা তৈরী করছে। আরাফাত ঢাকা যাচ্ছে। চয়নিকা রুনির জন্য পিঠা পাঠাবে।মেয়েটা খুব পিঠা খেতে পছন্দ করে। তাছাড়া রাজীব কিছু লোকদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছে পিঠা খাওয়ানোর জন্য। যদিও আমেনা বেগম বাইরের লোকজন বাড়িতে আনাটা খুব একটা পছন্দ করেন না। কয়েক রকমের পিঠা হচ্ছে। কাজের মেয়ে দুটো ওদেরকে সাহায্য করছে। রফিক এসেছে বোনকে দেখতে। চয়নিকা বেশ কিছু পিঠা কাজীদের বাড়ির জন্য তুলে রেখেছে। রফিক রান্নাঘরে বোনদের সঙ্গে বসে বসে পিঠা খাচ্ছে। ওর আবার লজ্জা শরম অনেকটা কম কম। ওর কাজকর্ম গুলো আলাদা। প্রায় সময় যুবক ছেলেদের সঙ্গে মিলে মঞ্চ নাটক বা গানের আয়োজন করে। নিজেও বেতালে উড়াধুড়া নাচতে পারে। হাসিখুশি থাকতে পছন্দ। চয়নিকা মাটির চুলায় পিঠা তৈরী করছিল। ভাপা পিঠার খোলা থেকে পিঠা নামাতে নামাতে বলল,
> রফিক তুমি বিয়ে করবে না? মেয়ে দেখবো?
রফিক দাঁত বের করে হেসে বলল,
> আম্মা বলে আমি এখনো বাচ্চা। বিয়ের বয়স হয়নি। মহিতের কু পরামর্শে ভাবিকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম প্রতিশোধের নেশায়।সবাইকে কতকি বুঝিয়েছি। আল্লাহ্ মাফ করুক। ভাবলে লজ্জা লাগে। বিয়ে টিয়ের দরকার নেই। বিন্দাস আছি।
আগামীকাল আরেকটা অনুষ্ঠান আছে।

> ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। যাইহোক অনেক হয়েছে আর না। আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখতে নেমেছি। আমার শাশুড়ি মা কিন্তু অলরেডি শুরু করেছে। তার মতে তোমার তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়া দরকার। তুমি বকশীপুরে কোন মঞ্চে মেয়ে শিল্পীদের সঙ্গে উড়াধুড়া নেচেছো সেটা তিনি দেখেছেন। তারপর থেকে বাড়িতে দুটো ঘটকের ঘনঘন পা পড়ছে। এখুনি তোমার ডাক পড়বে। উনি কিন্তু সিরিয়াস।

চয়নিকা একদমে কথাগুলো বলে থামল। রফিক ঢোক গিলে ঠোঁট কামড়ে মাথা চুলকালো। ছটফট করে বলল,

> আপা সত্যি বলছি আমি খারাপ কিছু করিনি। বন্ধুরা সব বলছিল তাই না করতে পারিনি। কিন্তু ভিডিওটা কে দেখালো আপা? মান সম্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। আপা আমি জীবনে আর এসব করবো না।
আগুনের তাপে চয়নিকার মুখ ঘামছে। হাতে ছ‍্যাকা লাগছে। অরিন আর কাজের মেয়েটা চুপচাপ গুড়া দিয়ে বাটি পুরছে। রফিকের কথার উত্তর আসলো দরজা থেকে। আরাফাত লুঙ্গি পরেছে। বেচারা লুঙ্গি পরতে তেমন দক্ষ না। দুদিন গ্রামে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে ধান কেটেছে লুঙ্গি পরে। গ্রাম থেকে ফিরেও সেই ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গি নিয়ে ফিরেছে। অরিন পছন্দ করে না। ওকে বিরক্ত করার জন‍্যই ওর এই প্রচেষ্টা। আরাফাত এক গাল হেসে বলল,
> রফিক তোমার সেই নাচের ভিডিওটা আমি পৃথুকে দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। ভাবলাম রফিক এতো ভালো নাচতে জানে সবাই দেখলো আমার মা আর বাকী থাকে কেনো। অপেক্ষা করো এক মাসের মধ্যে তোমার বিয়ের ঢোল বেঁজে উঠলো বলে।
> আপনি কাজটা কিন্তু ঠিক করলেন না ভাই। আমার এখন লজ্জা লাগছে।
> আমার তো মনে হয় লজ্জাও তোমাকে দেখলে লজ্জা পাবে। আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য মা মেয়ে দেখার সুযোগ পাননি তোমাকে পেয়ে মা এলিয়েনের খোঁজ করছে বুঝলে?
রফিক লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল,
> আন্টির পছন্দ খারাপ না। উনি বেশ খিটখিটে টাইপ। উনার পছন্দের উপরে আমার ভরসা আছে।
আরাফাত এগিয়ে এসে পিঠা নিতে নিতে বলল,
> তাহলে আর কি ষোলো কলা পূর্ণ হলো। রেডি হয়ে যাও।
অরিন আড় চোখে আরাফাতকে দেখছে। আরাফাত উঁচু করে লুঙ্গি পরেছে। হাতের তালুতে করে পিঠা খাচ্ছে আর কথা বলছে। দৃশ্যটা অরিনের সহ‍্য হলো না। চয়নিকাকে বলল,
> আপা আপনার দেবরকে বলে দিন লুঙ্গি পরে যেনো আমার সামনে বেশি ঘুরাঘুরি না করে । দেখতে কেমন লাগছে। আগুন লাগিয়ে দিব কিন্তু।
> গ্রামে থাকতে ওরা তিন ভাই লুঙ্গি পরে মাঠে যেতো অরিন। দিনগুলো খুব মজার ছিল। তোমার ভাইয়ের নির্বাচন তারপর আবার ব‍্যাবসার সুবিধার জন্য এই জেলা শহরে বাড়ির করা হলো। গ্রামে যাওয়া হয়না বললেই চলে। আগামী শীতে আমরা যাচ্ছি বেশ মজা হবে।
অরিন কিছু বলল না। আরাফাত খাওয়া শেষ করে বলল,
> ভাবি আমি যাচ্ছি। দ্রুত সব গুছিয়ে গাড়িতে পাঠিয়ে দাও।
আরাফাত হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো। চয়নিকা অরিনকে রুমে পাঠিয়ে দিলো। ছেলেটা বাইরে যাচ্ছে হাতেহাতে সাহায্য করার জন্য।
☆☆☆☆☆☆☆
নতুন বাসার সব কিছু হৈমন্তী খুব যত্ন নিয়ে সাজিয়েছে। আবির ওকে সাহায্য করেছে। প্রথমদিন বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করা হলো। আবিরের বন্ধুরা ছিল ওদেরকে খাওয়ানো হলো। আবেদা মির্জা মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ফিরে গেছে। আবির ল‍্যাপটপে কাজ করছে। হৈমন্তীর রান্না নিয়ে ব‍্যস্ত এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। হৈমন্তীর চুপচাপ গিয়ে দরজা খুলে দিলো। একটা ছেলে বক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কুরিয়ারের ছেলেটা হৈমন্তীর হাতে বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। হৈমন্তী বড় ধরণের বক্সটা টেনে নিয়ে ভেতরে গিয়ে আবিরকে ডাক দিলো। আবির বাইরে এসে হাসি মুখে বক্সে খুললো। হৈমন্তীর চোখ কপালে। বক্সের মধ্যে কয়েক রকমের শাড়ি রাখা। আবির হাসি মুখে শাড়ি গুলো হৈমন্তীর হাতে তুলে দিয়ে বলল,
> মা পাঠিয়েছে তোমার জন্য। তুমি নাকি বারবার লাল শাড়ি পরে ভিডিও কল দাও এটা দেখে মায়ের মন খারাপ। ছেলে গরিব হয়ে গেছে বউয়ের দুটো শাড়ি কিনে দিতে পারেনা ভেবে শপিং করেছে।
হৈমন্তী খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। সত্যি ওর কাছে দুটো শাড়ি ছাড়া ছিল না। আবির দিয়েছে ভেবে আসার সময় লাল শাড়িটা নিয়ে এসেছিল আর বাকীটা পাশের বাসার ভাবির দেওেয়া। হৈমন্তী শাড়িগুলো গায়ের সঙ্গে ধরে বলল,
> দারুণ লাগছে তাইনা? আমি আজ নীল শাড়িটা পরবো ঠিক আছে? শাশুড়ি আম্মা ছাড়া কেউ আমাকে তেমন বুঝেনা। আপনিও না।
আবির হৈমন্তীকে এক টানে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
> শাশুড়ির ছেলেটা তোমাকে আরও ভালো বোঝে। কতটা ভালোবাসে বলো একটু?
> কচু।জানি কেমন ভালোবাসেন। জানেন লাল শাড়িটা কিন্তু আমি প্রথমে তেমন পছন্দ করতাম না। তারপর যখন আপনি দূরে চলে গেলেন। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আপনার দেওয়া সব কিছুর মধ্যে আমি আপনাকে খুজেঁছি। আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছি। খুব খুব মিস করতাম জানেন? যেদিন আপনাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলো। হৈমন্তী এইটুকু বলে শব্দ করে কেঁদে ফেলল। সময়টা কঠিন ছিল। সবটা চোখের সামনে ভাসছে। আবির দুহাতে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
> হৈমী আমরা পেছনের দিনগুলোকে ভূলে যাবো। খারাপ দিনের কথা ভেবে ভালো দিনগুলোকে নষ্ট করবো না। যতটা কষ্ট পেয়েছো প্রমিজ করছি তাঁর দ্বিগুণ সুখ আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিবো। শুধু সৃষ্টিকর্তা সহায় থাকলে হবে।
আবির হৈমন্তীর কপালে চুমু দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,
> তোমাকে যার জন্য পেলাম সেই ঐতিহাসিক কাহিনীটা শুনবে হৈমী? কান্নাকাটি করলে কিন্তু বলবো না।
হৈমন্তী কান্না থামিয়ে ঘনঘন চোখের পাতা নাচিয়ে বলল,
> না না কাঁদবো না আপনি বলুন। আমি শুনবো।
> রফিককে কিডন‍্যাপ করেছিল আমার মা আর আমার বন্ধুরা মিলে।
হৈমন্তী চোখ বড়বড় করে ফেলল। শাশুড়ি মা কিভাবে এরকম করতে পারে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। হৈমন্তী আবিরের সামনের চুল টেনে দিয়ে বলল,
> বিশ্বাস করিনা। আমার শাশুড়ি মায়ের নামে বদনাম করবেন না।
> আরে মারছো কেনো? আমি সত্যি বলছি। রফিক আর মহিতের গোপন পরামর্শ মা শুনে ফেলেছিল। তোমাকে বাঁচানোর একটা উপাই অবশিষ্ট ছিল। আমার কিছু বন্ধু আছে। মায়ের বিশাল ভক্ত। ওদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে মা শরবতের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রফিককে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর ভোররাতের আগে ওদের কাছে তুলে দিয়েছিল। আমার একটা বন্ধু আছে আশিক ও বেশ দুষ্ট। রফিক ঘুম থেকে জেগে ঝামেলা করছিল তাই ও দু চার ঘাঁ পিটিয়েছিল। আমি অবশ কিছুক্ষণের মধ্যে সব জেনে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম বিয়েটা ভেঙে যাবে। কিন্তু হলো কোথায়? আব্বাজান এই সেই বলে রাজি করালেন। তাছাড়া মা ভয় পাচ্ছিলেন সবাই বিষয়টা জানলে কি হবে ভেবে।মাকে বাঁচাতে আমি ফেঁসে গেলাম। বউয়ের পাল্লাতে পড়ে লাজ লজ্জা সব ভেস্তে গেলো।
হৈমন্তী হতবাক হয়ে শুনলো সবটা। ভাগ্য গুণে কতভালো একজন শাশুড়ি পেয়েছে। এমন শাশুড়ি বাংলার ঘরে ঘরে থাকা উচিৎ। তাহলে আর মেয়েদের কষ্ট থাকবে না। কিন্তু পরক্ষণে মুখটা মলিন করে বলল,
> বিয়ের রাতের কথা আপনার মনে আছে? আমি কতটা ভয়ে ছিলাম। আচ্ছা চিঠিতে কি লেখা ছিল? আমার খুব পড়তে ইচ্ছে করছে। কি লিখেছিলেন?

> তেমন কিছু না। লিখেছিলাম বউ, আমি হঠাৎ করে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। ভেবোনা তোমার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে পালিয়ে যাচ্ছি। তোমার পাসপোর্ট আর দরকারি কাগজপত্র ইমেইল করে নিচের ঠিকানাতে পাঠিয়ে দিবা। আমি দ্রুত তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে যাবো। ভুল বুঝো না। তুমি অনেক ছোট, মানুষের নানারকম কথাবার্তা বলবে সেসব পাত্তা দিবা না। খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে। ইতি আবির।
হৈমন্তীর কৌতূহলী হয়ে বলল,
> সত্যি?
> তো কি মনে হয় আবির বউয়ের কাছে মিথ্যা বলবে?ঘর ঠিক রেখে বাইরে যা ইচ্ছা করা যায়। তাঁতে আর যাইহোক শান্তিতে ঘুম হয়। তোমার তরকারির গন্ধ আসছে হৈমী। ওটা কি আর খাওয়া যাবে? আমি পরবো বউয়ের রান্না বলে কথা।
আবিরের বলা শেষ হলো না হৈমন্তী নিজকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে হাজির হলো। আর একটু হলে পুড়ে যেতো। হৈমন্তী চুলা বন্ধ করে দম নিলো। আবির শাড়িগুলো গুছিয়ে রেখে বাইরে বের হলো। সন্ধ্যা নেমেছে। বাইরে একটা কাজ ছিল। হৈমন্তী রান্না শেষ করে গোসল করে নীল রঙের শাড়িটা সুন্দর করে পরে নিলো। চুলগুলো বাঁধার পরে কিছু ভেবে আবার ছেড়ে দিলো। দুহাত ভর্তি কাচের চুড়ি আর কানে পরলো দুল।।এইটুকুতেই মনে হলো মোটামুটি ভালো হয়েছে। আবির রাতে ফিরলো হাতে একটা টিউলিপ ফুল গাছের টব। মেয়েটা ফুল পছন্দ করে। আবির ভেবেছে বারান্দাতে ফুল গাছ লাগাবে। রুমের চাবি ছিল ওর কাছে। ভেতরে এসে ফুলের টব দরজার পাশে রেখে হৈমন্তীকে ডাকলো। মেয়েটা এক ডাকে বেরিয়ে আসলো। আবির একটুও অবাক হলো না বরং মুগ্ধ হলো। মন্ত্রমুগ্ধের ন‍্যায় একপা দুপা করে হৈমন্তীর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওর মুখাট নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,
> বরের হার্ট এটাক করানোর ধান্দা করেছো হৈমী? কে বলছিল এভাবে সাজুগুজু করতে? কাজকর্ম ছেড়ে বউকে সামনে নিয়ে বসে থাকতে মন চাইবে তখন কি হবে বলো?
হৈমন্তী লাজুক হেসে বলল,
> তাহলে আগামীকাল থেকে আমাকে আপনার হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। আমি আপনার সঙ্গে সঙ্গে থাকবো। কাজ করবেন আর আমাকে দেখবেন।
> পাগল নাকি? লোকজন দেখবে আমার বউকে। তারপর হিংসা করবে। কার না আর গালি লেগে বউ আমার হাতছাড়া হবে। ওসব হচ্ছে না।
> মখটা ছাড়ুন,খাবেন না?
> খাবো তো।
আবির হৈমন্তীর কপালে চুমু দিয়ে ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। হৈমন্তীর ওষ্ঠে হাঁসি। লোকটাকে ঘায়েল করতেই এতো আয়োজন।
☆☆☆☆☆
পাঁচ বছর পর,
আবির হৈমন্তীকে নিয়ে বাংলাদেশের ফিরে এসেছে। অরিন আর আরাফাতের ঘর জুড়ে এসেছে ছোট্ট আহান। অরিনের ছেলে। চয়নিকার ছেলেটা বেশ বড় হয়েছে কিন্তু যার জন্য একদিন ওর শাশুড়ি রাজীবের বিয়ে ঠিক করেছিল চয়নিকার মাতৃত্বের স্বাদ আরও দ্বিগুণ করতে কোল জুড়ে এসেছে ছোট্ট নুর। চয়নিকার ভরা সংসার। তিন ভাই এখনো মিলেমিশে যৌথ পরিবারে বসবাস করছে। পাঁচ বছর আগে রফিকের বিয়ে হয়েছে। আমেনা বেগম নিজের পছন্দে ওর বিয়ে করিয়েছেন। ছেলেরা যেই স্বপ্ন পূরণ করেনি রফিক উনার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। মেয়েটা যেমন সুন্দর তেমনি তাঁর গুণ। রফিক মন দিয়ে সংসার করছে। আজেবাজে বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গ ত‍্যাগ করেছে। হৈমন্তী বাড়ির বাগানে দোলনাতে বসে আছে। আবির বাড়ির মধ্যে ওকে না পেয়ে বাগানে দৌড়ে আসলো। সকালবেলা হৈমন্তীর শরীর খারাপ ছিল।।ওর শরীর বেশ ক্লান্ত। দুবার মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল।আবির কিছু টেস্ট করিয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট তৈরী করে বাড়িতে হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসেছে। মেয়েটা ওর জীবনের সবটা জায়গা দখল করে আছে। মনে হয় বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে। এত মায়া কেনো কে জানে। আবির দৌড়ে এসে হৈমন্তীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। হৈমন্তী কোমল হাতে আবিরের মাথায় হাত রেখে বলল,
> এতো উতলা কেনো? কিছু হয়েছে?
> অনেক কিছু হয়েছে হৈমী। বাবা মা আসছে। আসার সময় ফোন দিয়েছিলাম। আরাফাত ভাইয়া আমার শশুর শাশুড়ি সবাইকে বলেছি আসতে। আগামী এক বছর সবাইকে ঢাকাতে থাকতে হবে।
> কেনো? ভাইয়ার না ওদিকে কাজ আছে? তাছাড়া এক বছর কি আছে?
> অনেক কিছু আছে হৈমী। এই বাড়িটার নামকরণ করেছিলাম কাকতলীয় ভাবে। দৃষ্টিনন্দন কত সুন্দর নামটা বলো? আজ স্বার্থক হতে চলেছে হৈমী। এই বাড়িতে আমার ছোট্ট বাবুটা হাটিহাটি পা পা করে হাটবে। আমি তন্ময় হয়ে দেখবো। হৈমী এতো সুখ কেনো পৃথিবীতে? তুমি এসেছিলে দৃষ্টিনন্দনে তাঁই বুঝি এতো সুখ। রিপোর্টটা দেখে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম বিশ্বাস করো। বাড়িতে বলেছি। আরাফাত সাহেব এতক্ষণে সারা মফস্বলে মিষ্টি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। মাসুদ ভাই ছুটি নিয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
আবির একদমে কথাগুলো বলে থামলো। হৈমীর চোখে পানি নেই আছে সীমাহীন অনুভূতি। মা হচ্ছে কতদিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ভেবেই প্রশান্তিতে সারা শরীর ছেয়ে যাচ্ছে। আবির দ্রুত উঠে বসে হৈমন্তীর মুখটা নিজের মুঠোয় নিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> ফাইনালি বাবা হতে যাচ্ছি। আমাদের সংসারটা এবার পরিপূর্ণ হবে। খুশীতো হৈমী?
> প্রচণ্ড খুশি। সবটা বলে বোঝাতে পারবো না।
আবির হৈমন্তীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। হুট করে বিয়ে নামক অদৃশ্য বন্ধনে দুজনে আবদ্ধ হয়েছিল। কখনও ভাবতেও পারেনি এতোটা সুখ ওদের জীবনে আসবে। তবুও এসেছে। সব জটিলতা থেকে বেরিয়ে এসে ওরা সুখে আছে। আল্লাহর রহমত ছিল আর ছিল ওদের প্রচেষ্টা। বাকী জিবনে হয়তো নানারকম সমস্যা আসবে আবির হৈমন্তী বা আরাফাত কেউ ভেঙে পড়বে না। সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে ভালো থাকবে। জীবন সুখের হয় যদি সেটা উপভোগ করা যায়।

সমাপ্ত

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।