দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-১১

0
381

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:11
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

রাতের খাবারের সময় যখন আমাকে ডাকা হলো আমি তখন কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি।লজ্জা তে না পারছি কিছু বলতে না পারছি করতে।এই দিকে আমার অসভ্য পুরুষ টা আমাকে ডেকেই যাচ্ছে।
কি সমস্যা ডাকছেন কেন?(ঐশানী রাগি সুরে)

খেতে চলো সোনাপাখি।তারপর ঔষধ ওতো খেতে হবে।(ইফরাজ ঐশানীর পাশে বসে)

ওর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
বাইরে বের হওয়ার মুখ রেখেছেন আপনি অসভ্য পুরুষ?দেখেনতো কি করছেন?একটা জায়গাতে বেরাতে আসছি আর উনি রোমান্স এর বন্যা বসায় দিছে।যাবোনা বাইরে আমি।আপনার খুদা লাগলে আপনি যান খাদক একটা।(ঐশানী ইফরাজ এর গেঞ্জি টেনে)

সরি বউ।(ইফরাজ)

তোর সরির গুষ্টি খিলাই।বারবার একি কাজ করে সরি বলতে বলছি তোরে।আজাইরা পাবলিক।রোমান্স করে সরি বলতে আসে বা*।(ঐশানী হালকা চিৎকার করে)

তুমি আমাকে তুই করে সম্বোধন করলা বউ?(ইফরাজ অবাক হয়ে)

এখন ওযে নাক ফাটাই নাই এটা তোর ভাগ্য বেটা অসভ্য ফাজিল কোথাকার?রোমান্স এর সময় দিক বেদিক খেয়াল রাখেনা।পরে সরি বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।আর আজকে তো একেবারেই আমার মান ইজ্জত প্লাস্টিক করার ধান্দায় আছে।এই যানতো যান আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না কখন কি করে বসি তার ঠিক নেই।(ঐশানী )

রাগ মনে রাখতে নেই।তোমার যেখানে যেখানে আমি দাগ করেছি তুমি ও করতে পারো।তাও প্লিজ রাগ করে থেকো না সোনাপাখি।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

আপনার মতো আমি অসভ্য না।যান খেতে আপু ডাকছে।(ঐশানী)

আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি তুমি বসো।
বলেই বাইরে এসে আপুর থেকে আমার আর ওর খাবার একি প্লেটে নিয়ে আসলাম।এসে গেট লক করে দিলাম।এমনেও সবাই ঘুমায়। আপু আমাদের জন্য জেগে আছে।খাবার এনে ওকে বললাম খেতে ও খাইয়ে দিতে।ওতো ভিশন রাগ দেখালো।
প্লিজ খাও।ঠিক আছে আমাকে খাওয়াতে হবেনা তুমি খাও।(ইফরাজ)

আপনি ভালো হবেন না এই জীবনে।(ঐশানী)

হবতো।(ইফরাজ)

কবে সেই সুদিন আসবে শুনি?(ঐশানী)

যেদিন এখানে আমার অস্তিত্ব থাকবে।আমি যেদিন শুনবো আমার আর আমার সোনাপাখির বেবি হবে সেদিন আমি একেবারে ভদ্র হয়ে যাবো কথা দিলাম।(ঐশানীর পেটে হাত দিয়ে ইফরাজ)

অসভ্য পুরুষ।
ইফরাজ যখন কথাটা বলল ওর চোখটা চিকচিক করছিল।বেচারার বউ বেবি সংসার নিয়ে অনেক আশা ছিলো আগের থেকেই। সেই সব কিছুতে পানি ডেলে দিয়েছি আমি।আমি খাবার প্লেট হাতে নিয়ে ওনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।খাবার এর সময় এই ছেলে সিরিয়াস হয়ে যায়।খুব পছন্দের তালিকার একটি জিনিস বলা চলে।তার হবি নাকি খাবার খাওয়া ভাবা যায়।তার সাথে আমিও খেয়ে নিলাম।এরপর আমাকে ঔষধ দিলো খেতে তা খেয়ে আমি উঠে ওয়াশরুম গেলাম ড্রেস চেঞ্জ করতে।গাউন পাল্টে একটা গেঞ্জি পরে আসলাম। গরমে জান যায় যায় অবস্থা।মেয়ে মানুষ বলে সব সহ্য করতে হয়।ঐ বেহায়া পুরুষদের মতো থ্রি কোয়াটার পরে থাকতে পারতাম জদি।ড্রেস চেঞ্জ করে রুমে এসে দেখি ইফরাজ ঘরে নেই।বারান্দার গেট থেকে হালকা সিগারেট এর গন্ধ আসছে।আমি ধীর পায়ে সেখানে চলে আসলাম। আমাকে দেখে সাথে সাথেই সিগারেট না নিভিয়ে হাত দিয়ে ধোয়া উড়ানোর প্রয়াস করলেন।আমি ধীরে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ইফরাজ।(ঐশানী)

হুম সোনাপাখি।(ইফরাজ)

আমাকে বিয়ে করে আফসোস হয়না আপনার?(ঐশানী)

একি প্রশ্ন তোমাকে করতে চাই আমি কি উত্তর দিবে তুমি?(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরে কাছে টেনে)

গন্ধ আসে ব্রাশ করে আসেন।(ঐশানী)

ব্রাশ করলেই কি না করলেই কি কিস তো করবানা।উত্তর দাও তারপর যাই।(ইফরাজ)

প্রশ্ন টা আগে আমি করেছি।উত্তর আগে আমি চাই।(ঐশানী)

ব্রাশ করে এসে বলি।(ইফরাজ)

আগে উত্তর দেন তারপর যান।(ঐশানী)

এখন তো আমি ব্রাশ করেই উত্তর দিবো।
বলেই ওকে ছেড়ে রুমে এসে ব্রাশ করে নিলাম।ভালো মতো হাত ও মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে এসে বারান্দার দিকে আসলাম। এসে দেখি বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে।আমি পেছনের থেকে ওর উপর দিয়ে গ্রিল এ হাত দিলাম।
বিবাহ একটা মধুর সম্পর্ক। ছোট বেলার থেকে আব্বু মামমাম এর ভালোবাসা দেখে এসেছি।কলেজ লাইফ থেকে ইচ্ছে জাগ্রত হলো বিয়ের পর প্রেম করব।দুইজন দুইজন এর বন্ধু হবো তারপর একে অপরে ভালোবাসা উপভোগ করব।কিন্ত নিজের কেরিয়ার গরতেই আটাস বছর এ পেরিয়ে গেল।যখন বিবাহের কথা বলল আব্বু আমি বললাম দেখতে থাকো।সারাজীবন এর ব্যাপার একদিনে ডিসিশন নিয়ে পচতাতে চাইনা।এরই মধ্যেই ফুফু খালামনি উঠে পরে লাগলেন তাদের মেয়ে জামাই করেই ঠান্ডা হবেন।ব্যাস আমার বিয়ের উপর থেকে মন উঠে গেলো।এক বছর আগে মামমাম এর ইচ্ছে হলো আমার বিয়ে দিবেন।আমার শখ হলো আমার ডিজাইন করা লেহেঙ্গা পরিয়ে বিয়ে করব।মামমাম এর থেকে সময় নিলাম আর বললাম বিয়ে ঠিক করে ফুফু খালামনিকে জানাবো।সেই ভেবেই ছয়মাস লাগিয়ে লেহেঙ্গা তৈরি করালাম।তুমি ঐদিন আমার শোরুম থেকে যখন ঐ লেহেঙ্গার বায়না করলে আমার কেন জানি মনে হলে আমার বউ এর জন্য পরে আবার বানিয়ে নিবো।কিন্ত একজন এর সপ্ন তো আমি ভাঙ্গতে পারিনা।বিয়ে নিয়ে একটা ছেলের থেকে বেশি সপ্ন মেয়েরাই বুনে।আমাদের তো বউ এর আশাতে নিজের মনোবাসনা পূর্ণ করতে বউ এর দরকার। তুমি রাগ করোনা এটা সত্য একজন পুরুষ বিয়ে করার আগে বাসর এর চিন্তা করে।যেইখানে তোমরা সব কিছু নিয়ে ভাবো।বিশেষ করে বিয়েতে নিজেকে স্পেশাল করার জন্য সবটা দিতে রাজি থাকো।সেই ভেবেই দিয়েছিলাম তোমাকে লেহেঙ্গাটা।আর তুমি পরে এসে যখন ইনভাইট করলে আমি খুশি হয়েছিলাম অনেক দিন পর একটা বিয়েতে খেতে পারব বলে।কিন্ত ভাগ্য আমার ঠিকি তোমার সাথে ঝুড়ে গেলো।যেই আমি বলেছিলাম বিয়ে একদিন এর ছেলেখেলা না সেই আমি আব্বু মামমাম কে তোমাদের এখানে এনে রাজি করিয়েছি যাতে তারা তোমাকে আমার বউ হিসাবে মেনে নেয়।কারণ তোমার মধ্যে আমি ফারাজ এর জন্য ভালোবাসা দেখেছিলাম।আর সাথে তোমার চোখে ঠকে যাওয়ার যন্ত্রণাও।একজন ভালোবাসার মানুষকে হাড়ানোর থেকে কষ্টের কিছুই নেই।তোমার ভাঙ্গা মনকে জোড়া লাগাতে আল্লাহ আমার ভাগ্যে তোমাকে লিখেছিলেন।সেখানে আফসোস আসার তো কোন কথাই নেই।বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর এই তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা ভালোবাসা জন্মেছে। সেইটা ধীরে ধীরে একদিন তোমার ক্ষেত্রেও রুপ নিবে আমি জানি।সময় দিতে হবে।কিন্ত একটা কথা কি জানো আমার দেওয়া এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসার কথা গুলো যখন যখন তুমি মনে করবে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা জন্ম নিবে।নিতে বাধ্য। আর সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধের থেকে বিয়ের আগের ভালোবাসার দাম একেবারে সামান্য। বলবোনা সেইটা একাবারে ভুলে যাবে বর্তমানে।কিন্ত ভবিষ্যতে তুমি ঐ ভালোবাসাকে মনে রাখতে চাইবেনা নিজেই।কারণ প্রতারকের ভালোবাসা কয়জন এইবা মনে রাখে।যদি এমন হতো ওকে ঠকিয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করেছ তখন তুমি ওকে মনে রাখতে সারাজীবন। (ইফরাজ)

আপনি এত্ত সুন্দর করেও কথা বলতে পারেন?(ঐশানী ঘুরে দাড়িয়ে)

এত্তক্ষন কি বোঝাইলাম এই মেয়ে বলে সুন্দর করে কথা কিভাবে বলি?আচ্ছা বাদ দাও চলো ঘুমাবে।রাত প্রায় একটা বাজে। বেশিক্ষণ জাগলে মাথা ব্যাথা করবে।(ইফরাজ)

আমাকে একটু হেল্প করবেন ইফরাজ।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)

কি সোনাপাখি?(ইফরাজ)

ফারাজ কে ভুলে আপনার সাথে সুন্দর সংসার করতে চাই।যেখানে আপনার ভালোবাসা থাকবে।আমার আপনার ছোট্ট পরি থাকবে।আব্বু মামমাম থাকবে।থাকবেনা শুধু ঐ ফারাজের সৃতি।প্লিজ এমন কিছু করুন যাতে আমি ঐ দশ বছর ভুলে আগামী পঞ্চাশ বছরের কথা চিন্তা করে বাঁচতে পারি।আপনার শুধু আপনার কথাই শুধু মন ও মস্তিষ্কে বিচরণ করবে এমন কিছু করুন।আমিও চাই আপনাকে ভালোবাসতে।কিন্ত পারছিনা। তাই হেল্প করুন। (ঐশানী)

আপাতত ঘুমাও ধীরে ধীরে সব হবে।
বলেই ঐশানীর হাত ধরেই রুমে এনে ওকে শুইয়ে আমার সাথে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম। এত্ত মানুষের ভিরে কিছু করা সম্ভব না।এমন কিছু করব যেখানে তোমার আমার ভালোবাসার স্বাক্ষী হবো আমরা দুজন।(ইফরাজ)

_________

চারদিন এখানে থেকে আমরা সাজেক এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম ।কালকে বিকালে স্থানীয় হসপিটাল থেকে বেনডেজ খুলে এসেছি।তাও ইফরাজ ওয়ান টাইম বেনডেজ লাগিয়ে দিয়েছে।যাতে ধুলোবালি না লাগে।এই চারদিন এই ছেলে পুরো পাল্টে গেছে মনে হলো।বললাম কাছে টেনে সব ভুলাতে।এই ছেলে দুরে সরে গেছে।রাতে শুধু জড়িয়ে ঘুমায়।আর এমনেও এই কয়েকদিন সিলেট ঘুরে ঘুরে দেখেছি।সাজেক যাওয়ার পর আমাদের জন্য বরাদ্দ কৃত হোটেল এ আমরা উঠলাম।রুমটা যেনো মেঘের উপর ভাসছে।এসে সোজা বারান্দার দিকে দৌড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।হঠাৎই ইফরাজ এর ঠান্ডা হাত আমার ঘাড়ে পড়তেই আমি লাফিয়ে উঠলাম ভয়ে।ও সাথে সাথেই টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল।(ঐশানী)

ভয় পাইছো সোনাপাখি?(ইফরাজ)

হুম। (ঐশানী)

কয়েকদিন আদর করিনাই আপুর শশুর বাড়িতে ছিলাম বলে।তোমার তো আবার ভিশন লজ্জা।তাই জলদি এখানে চলে আসলাম।আজকে কিন্তু কেউ কেউ দেখার নেই।চারদিন এর আদর পুষিয়ে নিবো বলে দিলাম। না করতে পারবানা।এখন চলো ফ্রেস হয়ে নেই।(ইফরাজ)

আপনিতো দেখছি মিচকে শয়তান একটা।বাড়িতে থাকতে বললেন নিজের জন্য আসছেন না।ভাইয়া এরেনজ করেছে বলেই আসছেন।আপনার মতো ভদ্র কেউ নেই।এখন আসতেই রোমান্স করতে চাইছেন এই আপনি ভদ্র?(ঐশানী মুখ উচু করে)

আমি আদর করবো বলছি।(ইফরাজ হেসে)

রোমান্স আর আদর আলাদা।(ঐশানী ব্রু কুচকেই)

হ্যা আলাদাইতো।(ইফরাজ)

কিভাবে?(ঐশানী)

আমি বলিনা প্রেক্টিকেলি দেখিয়ে বুঝাই।আগে চলো ফ্রেস হোও তারপর দেখাচ্ছে আদর আর রোমান্স এর পার্থক্য। (ইফরাজ)

অসভ্য পুরুষ। (ঐশানী)

________

দেখো জেবা জীবনে অনেক বড় পাপ এর ফল ভোগ করছি আজও।তাও মুখ বুঝে সহ্য করছি।কারণ ভুলটা আমার ছিলো।ভালোবাসার মানুষকে ঠকাতে কত্তটা কষ্ট তা তুমি কি বুঝবে সেলফিস মেয়ে মানুষ। (ফারাজ)

খবরদার আমাকে সেলফিস বলবেনা।ভুল তুমি করে সব সময়ই আমাকে দোষ দিতে পারোনা।(চিৎকার করে জেবা)

তোমার ছলছাতুরী আমি অনেক আগেই টের পেয়েছি আমাকে বুঝাতে এসোনা।কলেজ লাইফ থেকে আমাকে পছন্দ করো তুমি।আমার আর ঐশানীর সবটা জানতে তুমি।ওকে কত্তটা ভালোবাসি সব নিজে দেখেছো।তাও তুমি আমাকে তোমার ঝালে ফাসিয়েছ।(ফারাজ চিৎকার করে)

এই একি কথা এই বিয়ের দিন থেকেই শুনে আসছি।তুমি জদি সত্যি ঐশানীকে ভালোবাসাতে আমার ডাকে সাড়া দিতে পারতেনা।হ্যা আমি মানছি তোমার ড্রিংস করার সুযোগ আমি নিতে চেয়েছি।ভালোবাসি আমি তোমাকে তাই আমি ভুল করেছি। তুমি এত্ত সাধু হলে নিজেকে সংযত কেন করোনি?কারণ তোমার বিধ শক্ত ছিলোনা।আমি যতটা দোষি তুমিও ঠিক একই দোষের আসামি।ভুল করে তোমাকে ভালোবাসে এখন ভুগছি।বিয়ের পর থেকে একটাবার তোমাকে ছুতে পর্যন্ত দাওনি।তোমার কি মনে হয় ঐশানীর বিয়ে হয়েছে আর ওর স্বামী ওর অধিকার আদায় করেনি।ওরা ঠিকি স্বামী স্ত্রী সুখে আছে আমার কপাল এই খারাপ।(জেবা
কান্না করে)

যাও আমার সামনে থেকে তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।(ফারাজ চিৎকার করে)

এখন তো আর ভালো লাগবে না আমার কথা।কারণ ঐশানীকে নিয়ে বলছিনা।ঐ মেয়ে আমার জনম শত্রু। বিয়ের আগেও তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিলো আর বিয়ের পরেও তোমার থেকে দূরে রাখতে বাধ্য করেছে।(জেবা)

আর একটা কথা বললে আমি ভুলে যাবো তুমি যে একজন মেয়ে মানুষ।তখন আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।(ফারাজ চিৎকার করেই)

প্রতিদিন তোদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আমরা আর টিকতে পারছিনা।এক বেহায়া মেয়ে মানুষ ঝুটিয়ে এনেছিস।এত্ত অপমান করেও লাভ হয়না।এখানেই পড়ে থাকবে।এই মেয়ে লজ্জা নেই স্বামী শশুর বাড়ির কেউতো সহ্য করতে পারে না চলে কেন যাওনা।(ফরিদা ফারাজ এর বোন)

নিজে ওতো স্বামীর সাথে বনিবনা হয়নি বলে বাপের বাড়ি পরে আছো
আর বলতে পারিনাই ফারাজ আমার গালে দুইটা চর মেরে দিয়েছে।আমি কোন মতে চোখের পানি ধরে রেখে বারান্দার দিকে চলে আসলাম।কারণ বড় আপার মতো আমার যাওয়ার মতো বাপের বাড়িনেই।মাটি কামরে এখানে পড়ে থাকতে হবে।কারণ আমার যে যাওয়ার জায়গা নেই।দশ বছর বয়সে বাবা কে হাড়িয়ে আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মা।সৎ বাবার অত্যাচার এ ঘড় ছাড়া হয়ে মামার বাড়ি উঠি।মামা মামি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আমাকে তিনটা বছর অনেক আদর করে লালন পালন করেছেন।কিন্ত ভাগ্য আমার খুব খারাপ। মামার হঠাৎই মৃত্যুর কারণে মামি অসহায় হয়ে পরেন।তার তিন ছেলে মেয়ের সাথে আমার ভরন পোষণ যেনো অনেক কিছু।বড় ভাইয়ার সাথে কাজ করতে লাগলাম একটা মিলে।সাথে পড়ালেখাও চলেছে।বড় ভাইয়ার আর পড়া হয়নি।আমাদের ছোট্ট এক ভাই ও দুইবোন কে ওতো চালাতে হতো।আমি বেশি বেতন পেতাম না।বড় ভাইয়ার উপর এই নির্ভরশীল ছিলাম।ধীরে ধীরে ভাইয়ার কাধে দ্বায়িত্ব বাড়ল।আমি কলেজে ভর্তি হয়ে টিউশন পড়াতে লাগলাম।এত্ত কষ্টের মাঝেই ফারাজ এর মতো একটা বন্ধু হলো আমার।বড়লোক ঘরের ছেলে হলেও কোনদিন কোন অহংকার ছিলোনা।ওর আমার বন্ধুতো ছিলো কিন্ত আমি ওকে সেই থেকেই ভালোবাসি।কিন্ত হঠাৎই একদিন ওর থেকে ঐশানীর কথা জানতে পারি। সেদিন আমার কপালে আরেকবার কষ্ট নেমে আসে।কিন্ত মামির কথা ভেবে পড়ালেখার দিকে মনোযোগ দেই।দশ বছর আমি নিজেকে ঘড়ে তুলি।নিজের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এর কথা চিন্তা করে হঠাৎই নিজেকে আর দমন করতে পারিনি।এক হিংস্র খেলাতে নেমে যাই।বেচেলার পার্টির দিন আমাদের ফ্রেন্ডের সবাই কেই ইনভাইট করে ফারাজ। আমি শুধু ফারাজ কে ভালোবাসি বলেই এত্ত বড় ভুল করছি এমন না।আমার অতিত এর সবটাইতো অপ্রাপ্তি খাতায় লেখা।তাই সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে ঐ খাতার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়নি।ভুল করেছি মানছি।তার ফল ভোগ করতে তো হবেই।কিন্ত তাও প্রিয় মানুষটা প্রাপ্তির খাতাতে অন্তর্ভুক্ত বলে আমি অনেক খুশি।এতে যদিও আমার মামি দুই মামাতো ভাই ও এক বোনের চোখের বালি হয়ে গেছি।তবে আমার জমানো তিন বছরের সব টাকা আমি তাদের দিয়ে আসছি।বিয়ের পর থেকে এই বাড়ির সবার থেকে অপমান অবহেলা পেয়ে আসছি।আমার খাবার পর্যন্ত বাইরে থেকে কিনে খাই।কারণ তারা এইটুকুর খোঁজ টাও নেয়না আমি খেয়েছি কিনা।ঐশানীর উপর আমার রাগ নেই।কিন্ত ফারাজ এর থেকে কেন যেনো ওর কথা শুনলেই মন খারাপ হয়ে যায়।(জেবা মনে মনে আকাশ পানে তাকিয়েই)

________

রাতের আধার পেড়িয়ে সূর্য মামা ধীরে ধীরে উকি দিয়ে আরেকটা দিনের সূচনা করতে ব্যস্ত। এদিকে সারারাত ইফরাজ এর সাথে গল্প করতে করতে দুইজন এই বারান্দার সোফার উপর ঘুমিয়ে গেছি।ঘুম ভাঙ্গতেই প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এযেন কোন মেঘ রাজ্যে উড়ে বেড়াচ্ছি।ইফরাজ আমাকে পেছনের থেকেই জরিয়ে ঘুমাচ্ছে।আমি না উঠে সেখানে শুয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। (ঐশানী)

**************(চলবে)**************