#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:13
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
সোনাপাখি?(ইফরাজ)
নিশ্চুপ (ঐশানী)
রাগ করবো আমি অথচ রাগ দেখাচ্ছ তুমি।কালকে না বলে যে গেলা তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হয়না?(ইফরাজ)
32বছর না ঘুমিয়ে ছিলে ?(ঐশানী ইফরাজ এর দিকে তাকিয়েই)
তখন আর এখন পুরো আলাদা।আমার বউ কে আমি সারাদিন কাজের পর একটু কাছে নিয়ে ঘুমাই।সেইটা সে জানে। তাও সে না বলে বাপের বাড়ি চলে গেলো।তাই একটু রাগ নাহয় করেছি।এসে আদর করে রাগ ভাঙ্গানোর জায়গাতে আমাকে কামরে নিজে রাগ দেখালে কি বলব আমি?(ইফরাজ)
কচু বলবা।যাও নিজের কাজ করো।আমি বাসায় যাই।(ঐশানী সরে যাওয়ার চেষ্টা করে)
কোন বাসায়?(ইফরাজ)
আব্বুর বাসায়।(ঐশানী)
যাও।(ঐশানীকে ছেড়ে ইফরাজ)
খাবার খেয়েছো?(ঐশানী)
তা শুনে তোমার কী?যাও বাসায় সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। (ইফরাজ)
উত্তর দাও না কেন?খাবার খাইছো?(ইফরাজ এর হাত ধরেই ঐশানী)
বাসাও যাও।(ইফরাজ )
খবরদার রাগ দেখাবা না মেরে ফেলব একেবারে।খাইছো কিনা উত্তর দাও। (ঐশানী ইফরাজ এর গাল ধরে)
সাহস বেড়ে গেছে দেখছি কিছু বলিনা বলে ভেবোনা কোনদিন কিছু বলবনানা?(ইফরাজ দাঁতে দাঁত চেপে)
বলো পারলে।কি বলবা বলো?(ঐশানী ইফরাজ এর সামনে এসে)
বাসায় যাও ।(ইফরাজ )
ইফরাজ বারবার একি কথা ভালো লাগছেনা।চলো কিছু খাবে।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)
সারাদিন না খেয়ে থাকব তাও তোমার জন্য এত্ত টাও পাগল হয়ে যাইনি আমি।(ইফরাজ)
বেশি বলে ফেলছো।(ঐশানী)
বেশ করেছি আরো বলব।কি করবা তুমি?(ইফরাজ)
থাক তোর মতো আমি যাই।তোর মতো অসভ্য মানুষের খবর নিতে আশাই ভুল হয়েছে।(ঐশানী)
এই মেয়ে এই টুকু তেই রাগলে হবে?মজা করছিলাম কোথায় একটু আদর করে বলবে যেনো এমন না করি তানা তুমি আবার রাগ করছো?এমন কেন তুমি আমার মনের কথা কেন বুঝোনা?তুমি জানো তোমার ইফরাজ তোমার সাথে রাগ করেনা।তাও একটু অভিনয় করে আদর পেতে চাইলাম তাও কাজ হলোনা।আমার কি তোমার আদর পাওয়ার কপালে নেই নাকি?(ইফরাজ)
ছাড়।কথা বলবিনা শয়তান পাবলিক সারারাত যে আমি কল করে জেগে কাটালাম তার দাম নেই না।নিজে কল না ধরে সারারাত ঘুমালে তার কোন দোষ নেই না।(ঐশানী)
আচ্ছা সরি।সোনাপাখি আই লাভ ইউ বউটা।তুমি না বলে গেছো তো তাই মন খারাপ হয়েছিল।সারারাত আমি ও ঘুমাইনাই।তুমি কল করেছ তা আমি দেখেও কল ধরিনাই।ভাবছিলাম তুমি বাসায় ফিরে আসবে।কিন্ত আসলানা।তাই একটু আগে একটু অভিমান হয়েছিল সোনাপাখি।আচ্ছা আব্বুর বাসায় যখন যাবা তাহলে যাও।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।(ইফরাজ ঐশানীকে জড়িয়ে ধরেই)
তুমি কখন যাবা?(ঐশানী)
আমার যেতে দশটা বাজবে।(ইফরাজ)
তোমার সাথেই ফিরব।(ঐশানী)
আব্বুর বাসায় না যাবা?(ইফরাজ)
তোমার আব্বু কি হয় আমার?(ঐশানী)
সত্যি তুমি বাসায় ফিরবে?(ঐশানীর গালে হাত দিয়ে ইফরাজ)
হুম নাহলে আবার আমার অসভ্য পুরুষ টা অন্নশন করবে।(ঐশানী)
দুপুর এ খেয়েছিলাম সত্যি।(ইফরাজ)
ভালো করছো।আচ্ছা যাও কাজে আমি একটু শপিং করি।(ঐশানী)
আমি যাই চলো।
তারপর ঐশানীকে নিয়ে কিছু কেনা কাটা করে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম। মামমাম তো মহা খুশি ঐশানীকে দেখে।আমরা মামমাম এর সাথে দেখা করে উপরে চলে আসলাম।এসে আমি ফ্রেস হয়ে বসে আছি ঐশানী কফি বানাতে গেছে।ও কফি এনে আমার হাতে দিয়ে আম্মুকে কল করল আর বলল আমার সময় হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবে বেড়াতে।কফি খাওয়ার পর দুইজন টিভি দেখতে বসলাম।
সোনাপাখি?(ঐশানীর গালে গাল লাগিয়ে ইফরাজ)
হুম বলো।(ঐশানী)
সোনাপাখি এই সোনাপাখি।(ইফরাজ)
হুম বলো না।(ঐশানী)
এদিকে তাকাও টিভি পরে দেখো।(ঐশানীর মুখ ঘুড়িয়ে ইফরাজ)
হুম বলো।(ঐশানী বিরক্ত হয়ে)
কালকের থেকেতো আদর করিনা।একটু আদর করি?(ইফরাজ)
না।(ঐশানী)
প্লিজ। (ইফরাজ)
না পরে এখন মুভি দেখছি।(ঐশানী)
বউ। (ইফরাজ)
চুপচাপ বসোনা।বাচ্চাদের মতো করোনা তো।(ঐশানী)
আচ্ছা আদর করবনা কোলে বসো তাহলে।(ইফরাজ)
আমি বাচ্চা না যে কোলে বসব।(ঐশানী)
আচ্ছা আমি এই এখন কোলে ঘুমাবো।
বলেই ওর কোলে মাথা রেখে ওর পেটে মুখ গুজলাম।(ইফরাজ)
পাগল। (ঐশানী)
________
কালকে ফারাজ আমেরিকা চলে গেছে।জানা মতে একেবারের জন্য চলে গেছে।আল্লাহ হয়তো এভাবেই আমার শাস্তি লিখে রেখেছেন।দুইজন কে আলাদা করে তাদের ভালোবাসার অমর্যাদা করার ফল তো ভুগতেই হবে।আমি চারদিন আগেই নতুন ফ্লাটে সিফট করেছি।প্রেগনেন্ট হওয়ার খবর আমি আর আমার ডাক্তার ছাড়া কেউ জানেনা।এখন নাহয় কেউ বুঝবেনা।কিন্ত কয়েক মাস গেলে কি হবে ভেবেই আমার ভিষন টেনশন হচ্ছে।চাকরি করি বলে ভরণ পোষণ এর কোন সমস্যা হবে না হয়তো।কিন্ত বাচ্চাটার বাবার পরিচয় কি দেবো আমি।ফারাজ বলেছে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবে।যাকে ভালোবেসে সবাইকে দূরে ঠেলে দিলাম সেই আমার হয়ে থাকলনা।এই জন্য বলে পাপ বাপকেও ছাড়েনা।
তুমি ততোটাই ফিরে পাবে
যতোটা তুমি অন্য কে দিবে
সেটা ভালোবাসা হোক বা কষ্ট।
ঐশানীর প্রতি যে অন্যায় আমি করেছি তা হয়তো অভিশাপ হয়ে আমার কাছে ফিরে আসছে।কোন একদিন শুনেছিলাম মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা একই সমান।সেখানে আমি দুইজনের মন ভেঙ্গেছি।তাদের আলাদা করেছি।পাপ করেছি আমি পাপ।বাপরে তুই অন্তত তোর পাপি মাকে ছেড়ে যাসনা।তুই ছাড়া আমার আর কেউ নেইরে।আমিযে বড্ড ভালোবাসার পাগল।কিন্ত কেউতো আমাকে ভালোবাসেনা।(জেবা পেটের উপর হাত রেখেই কান্না করে)
________
আমি বেচেঁ থাকার জন্য
যে কারণ খুঁজে পাই
সেই কারণ তুমি।
ও প্রিয় তোমায় আমি বলতে চাই
তুমি ছাড়া আমার এই ভূবনে কেহ নাই
ভালোবাসি হ্যা ভালোবাসি শুধু তোমায়।
চাঁদ কে ভালোবাসি রাত পর্যন্ত
সূর্য কে ভালোবাসলি দিন পর্যন্ত
ফুলকে ভালোবাসি সুভাষ পর্যন্ত
কিন্তু তোমাকে ভালোবাসবো
শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত বউ। (ইফরাজ)
কবি হয়ে গেছো দেখছি?(ঐশানী)
কি যে বলো সব গুগল থেকে সাপলাই করলাম। এখন কথা হলো রোমান্টিক হতে হলে বউ কে মাঝেমধ্যেই কবিতা শুনাতে হয়।এতে বউ এর মনে প্রেম প্রেম পাবে।তারপর আমাকে আদর করবে।(ইফরাজ)
24-7তোমার মাথায় আদর আদর পায় তাইনা?(ঐশানী কোমরে হাত দিয়ে)
হোপ।(ইফরাজ)
ধমক দিলা কেন?(ঐশানী)
সারাদিন কত্ত কাজ করি রাতে একটু বউ কে পাই একটু আদর আদর পেতেই পারে।আসো আদর করি ।(ইফরাজ)
তোমার মতো আমি আজাইরানা।ডিনার বানাতে হেল্প করব মামমাম কে।তুমি উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।(ঐশানী)
মাত্র কাজ থেকে আসলাম একটু আদর করবা জিজ্ঞেস করবা সারাদিন কেমন কাটলো? তানা খালি দূরে দূরে রাখো।(ইফরাজ মন খারাপ করে)
এই ছেলে শোন ফ্রেস হয়ে আসো ডিনার করে আদর করব যাও।(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)
সত্যি?(ইফরাজ খুশি হয়ে)
হুম তিন সত্য। (ঐশানী)
_______
সময় চলমান সে তার আপন ঘতিতে চলতে থাকে।মানুষের জীবনের সাথে সাথে সময় গুলো ও চলে যায়।প্রতিটা মানুষের জীবনে ভালো ও মন্দ সময় থাকে।কেউ মন্দ সময় পেড়িয়ে ভালো সময় উপভোগ করে।আবার কেউ সেই মন্দ সময়ে আটকে যায়।যেমন জেবা আর ফারাজ আটকে আছে তাদের অতিত এর দূর্বিসহ সময়ে।একজন ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ডুবে আছে গভীর অন্ধকারে।নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে নিজের পরিবার আত্মীয় স্বজন এর থেকে ।আর অন্যজন সময় নিজের দোষে হাড়িয়েছে সকলকে।এমনকি একতরফা ভালোবাসার মানুষটাও তার হয়েও হলোনা সাথে হাড়ালো নিজের মানুষগুলো।
আট মাসে পড়েছে অথচ আমাকে সাপোর্ট দেওয়ারমতো ও কেউ নেই।তাই ভেবেছি ডেট এর কয়েকদিন আগেই ভর্তি হয়ে যাবো।নাহলে এখানে মরে থাকলেও কেউ জানতে পারবেনা।(জেবা)
_________
ইফরাজ কখন আসবা?(ঐশানী)
সোনাপাখি আর আধা ঘন্টা লাগবে।কিছু লাগবে বউ?(ইফরাজ)
হুম। (ঐশানী)
কি লাগবে?(ইফরাজ)
ফুসকা খাবো।(ঐশানী)
আচ্ছা আনব।কি করো সোনাপাখি?(ইফরাজ)
বসে আছি।(ঐশানী)
আচ্ছা রাখি।জলদি আসব।(ইফরাজ)
হুম। (ঐশানী)
আর কিছু বলবা?(ইফরাজ)
তুমি জানো না কেন ফোন কাটতেছি না?(ঐশানী)
আই লাভ ইউ সোনাপাখি।(ইফরাজ মুচকি হেসে)
গুড বয়।রাখি বায়।(ঐশানী )
আমার টা বলো।(ইফরাজ)
বাসায় আসো বলব।(ঐশানী বলেই কল কেটে দিলো)
কিপটা বউ।ভালোবাসি বলতে ও কিপটামি ভালোবাসা দিতেও কিপটামি।(ইফরাজ)
এক ঘন্টার পর
এই তোমার আধা ঘন্টা ইফরাজ?(ঐশানী)
সরি বউ। ফুসকা আনতে ভুলে গেছিলাম তাই নিচে এসে আবার গেছিলাম।অনেকটা দুরে পাইছি।এই নাও তোমার ফুচকা।(ইফরাজ)
আবার কেন গেলা?কালকে আনতে পারতা।(ঐশানী)
আমার সোনাপাখির আবদার না রেখে পারি বলো।আচ্ছা ফুসকা খাও আমি ফ্রেস হয়ে আসি।(ইফরাজ)
আচ্ছা।
ইফরাজ ওয়াশরুম এ যেতেই আমি ফুচকা টেবিল এ রেখে ওর জন্য কফি বানাতে গেলাম।ও এসে সোফার উপর বসে টিভি অন করল।আমি ওর হাতে কফি দিয়ে ছোট্ট একটা গিফট বক্স দিলাম।
এটা খুলো।(ঐশানী)
হঠাৎ গিফট কি মনে করে সোনাপাখি?(ইফরাজ)
মন চাইল।দেখো না। (ঐশানী)
দেখছিতো।(ইফরাজ)
কিছুক্ষণ পর
মামমাম উপরে আসো আব্বু কে নিয়ে।(ইফরাজ)
কি হলো?(মামমাম)
আসোনা প্লিজ।(কান্না করে ইফরাজ)
ইফু কান্না কেন করিস বাবা ?কি হয়েছে?(মামমাম)
তোমরা জলদি আসোনা মামমাম। (ইফরাজ)
কিছুক্ষণ এই মধ্যেই মামমাম আর আব্বু দৌড়ে উপরে এসে হাপাতে লাগল।
কি হয়েছে বাবা কান্না করিস কেন?(ইফরাজ এর সামনে বসে মামমাম)
আহ ছাড়ো মামমাম আব্বু আসছে।(ঐশানী ইফরাজ কে ছাড়ানোর ট্রাই করে)
মামমাম আমার সোনাপাখির।(হেচকি তুলে ইফরাজ ঐশানীকে আরেকটু জড়িয়ে)
কি হয়েছে মা তোর?(আব্বু ঐশানীর পাশে বসে)
তোমার ছেলেকে ছাড়তে বলো মামমাম। (ঐশানী মাথা নিচু করে)
আহ ইফরাজ বল কি হয়েছে?(মামমাম ইফরাজ এর হাত ধরে টেনে)
মামমাম আমার সোনাপাখির (বলেই মামমাম কে জড়িয়ে ইফরাজ কান্না শুরু করল)
***********(চলবে)***********