দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-১৫

0
380

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:15
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ

সময়ের সাথে সাথে আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা বেড়ে উঠছে আমার গর্ভে। ইফরাজের ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই চলেছে।পাগলামি গুলো কমার বদলে বেড়ে যাচ্ছে। অসভ্যটার নাকি আমাকে দেখলেই আদর আদর পায়।মামমাম আব্বু যেন তাদের নাতনির জন্য এখন থেকেই পাগল।তাদের এত্ত এত্ত প্লান বেবিকে নিয়ে।আব্বু আম্মু ও কয়েকদিন পর পর খাবার নিয়ে আসে আমার জন্য।এত্ত এত্ত খাবার এর কিছুই তেমন খেতে পারিনা বমির কারণে।তবে আমার জামাই তা সাভার করে দেয়।শোরুম তো তেমন যায় এইনা।গেলেও মামমাম এর কাছে রেখে যায় আমাকে।এত্ত আদর ভালোবাসাতে আমি যেন আপ্লুত।মাত্র পাচঁ যখন পড়ল ইফরাজের সারাদিন এর কাজ ছিল পেটে হাত দিয়ে বসে থাকা।বেবি নড়ে কিনা তা অনুভব করতে চাইতো।ছয়মাস পরবে এমন সময় যখন বেবি নড়ল তখন ইফরাজ আমার জন্য বাইরের থেকে খাবার আনতে গেছিল।ও যখন আসল আমি বলার পর সে কী আফসোস।তারপর এক সপ্তাহ সে আর বাইরে যায়নি।যখন যখন নড়েছে যদিও হালকা তখনি ও পেটে হাত দিয়ে কান্না করত।আর মাত্র এক সপ্তাহ তারপর এর ডেট দিয়েছেন ডাক্তার।নরমাল ডেলেভারির ইচ্ছে আছে।আমি একটু হাটাহাটি করছিলাম।ইফরাজ গেছে শাওয়ার নিতে।হঠাৎই water fall হতেই আমি চিৎকার করে ইফরাজ কে ডেকে বেডে বসে পড়লাম। (ঐশানী)

কি হয়েছে সোনাপাখি?(ইফরাজ টাওয়াল পেচিয়ে বাইরে এসে)

সময় এসে গেছে।(ঐশানী)

কিসের সোনাপাখি?(ইফরাজ )

বেবি হওয়ার।(ঐশানী)

এখন ওতো এক সপ্তাহ বাকি আছে।(ইফরাজ)

আরে গাধা এত্ত কথা পরে বলো আমাকে হসপিটাল নিয়ে চলো।(ঐশানী কান্না করে)

হ্যা চলো।(ইফরাজ ঐশানীকে কোলে নেওয়ার ট্রাই করে)

আগে জামা কাপর পরো জলদি।(ঐশানী)

দুইমিনিট সোনাপাখি।
বলেই আমি তাড়াতাড়ি টাওজার আর গেঞ্জি পরে ঐশানীকে কোলে নিয়ে হাটা দিলাম।ঐশানী এই ফাকে মামমাম কে কল করল।মুহূর্তেই মামমাম এসে প্রয়োজনিও জিনিস এর ব্যাগ নিয়ে আমাদের গেট লক করে আমাদের সাথে লিফটে উঠল।ঐশানী আমার গলা ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। লিফট নামতেই আমি ঐশানীকে মামমাম এর সাথে পেছনে বসিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলাম। মামমাম আব্বুকে কল করে অটির ব্যবস্থা করে রাখতে বলল।তারপর ঐশানীর আব্বু আম্মুকে কল করে হসপিটাল যেতে বলল।আমি যতো দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করে হসপিটাল পৌঁছে গেলাম।স্টেচার হসপিটাল এর সামনে রাখা সাথে দুজন স্টাফ এবং আব্বু ও ছিলো।ঐশানীকে জলদি করে অটিতে নেওয়া হলো।এরই মধ্যেই আব্বু-আম্মু,দাদা-দীদা ও হাজির।আমি ও মামমাম কে ধরে কেঁদেই দিয়েছি আমার সোনাপাখির কষ্ট দেখে।
মামমাম আমার সোনাপাখির কিছু হবেনাতো?(ইফরাজ)

না বাবা দোয়া কর আল্লাহর কাছে।তুই ভেঙ্গে পড়লে হবে।ঐশানী জদি জানে তুই ও কান্না করছিস ওতো ভয় পাবে।তুই নিজেকে শক্ত কর।(মামমাম)

আমার মেয়েটা যেনো নাতনিকে নিয়ে ঠিকঠাক ভাবে ফিরে আসে এই দোয়া করো বাবা।(ঐশানীর আব্বু ইফরাজ এর উদ্দেশ্য)

আমি নামাজ এ যাই ঐশানীর আব্বু।আমার মেয়ে আর ওর বেবী যেনো সুস্থ ভাবে ফিরে তার জন্য আল্লাহর দরবারে আমি প্রার্থনা করতে যাই।একমাত্র উনি এই তো আমাদের কষ্ট টা বুঝে।(আম্মু)

চলুন আপা আমরা একসাথে নামাজ পড়ি।(মামমাম)

চলুন।(আম্মু)

আমিও পড়ব।আমার সোনাপাখির যেনো কষ্ট না দেয় আল্লাহ।ওকে যেনো সুস্থ আমার কাছে ফিরিয়ে দেয় সেই দোয়া এই করব।(ইফরাজ)

সবাই ধীরে ধীরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন যেনো ঐশানী ও ওর বেবি সুস্থ ভাবে ফিরে আসে।সবচেয়ে বেশি ইফরাজ তার প্রিয়তমার জন্য কেদে কেটে এক হয়ে যাচ্ছে।কান্নার শব্দ যেনো ফুফানো এর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে।অনেক এই কান্নার উৎস খুঁজে এখানে এসে দেখে যাচ্ছে।বউ এর জন্য কেউ এভাবে কান্না করতে পারে দেখে অনেক এই অবাক হচ্ছেন।ইফরাজ এর কান্না দেখে মিসেস আহসান যেনো খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন।মেয়ের জন্য আল্লাহ এমন একজন কে পাঠানোর জন্য হাজার বার শুকরিয়া আদায় করছেন।নামাজ শেষে অটির সামনে ইফরাজ কে ধরে আনলেন ওর আব্বু।ঐশানীর আব্বু ও লুকিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন।একমাত্র মেয়ের জন্মের সময় এমন কেঁদে ছিলেন তিনি।আজকে মেয়েটা বড় হয়েছে তার ঘরে আরেক রাজকন্যার আগমন হতে চলেছে এ যেন বিশ্বাস যোগ্য নয়।আধা ঘন্টার পর অটির থেকে টাওয়ালে পেচানো ছোট্ট একটা পুতুল এনে যখন ইফরাজ এর কোলে দেওয়া হলো তখন সর্বপ্রথম প্রশ্ন ইফরাজের ছিলো।
আমার সোনাপাখি কেমন আছে নার্স?(ইফরাজ)

সোনাপাখি মানে?(নার্স অবাক হয়ে)

আমার বউ ঐশানী কেমন আছে?(ইফরাজ)

ও তাই বলুন।উনি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন।কিছুক্ষণ এর মধ্যেই বেডে দেওয়া হবে।আর চাইলে আজকে রিলিজ করে দিবে ডাক্তার।কারণ ওনার নরমাল ডেলেভারি হয়েছে।আমরা এমন পেসেন্টদের জলদি রিলিজ করে দেই।(নার্স বলেই ভেতরে চলে গেল)

ময়নাপাখি মামমাম কে এত্ত কষ্ট কেন দিলা?তুমি জানো তোমার জন্য আমার সোনাপাখির অনেক কষ্ট হয়েছে।ও অনেক কান্না করছে।(ইফরাজ বেবির উদ্দেশ্য)

বেবি কি বুঝল না বুঝল তবে বাবার মুখে এমন কথা শুনে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলো।এ কান্না যেনো থামবার নয়।

অসভ্য ছেলে দিলিতো আমার নাতনিকে কাদিয়ে।দে তোর রাখতে হবেনা আমাদের নাতনিকে আমাদের কাছে দে।(মামমাম)

আমার মেয়ের কানে আমি আজান দিয়ে নেই মামমাম।তারপর তোমাদের নাতনিকে তোমরা নিও।(ইফরাজ)

আচ্ছা দে।(মামমাম)

আমি চেয়ার এ বসে আমার ময়নাপাখিকে মুখের সামনে এনে ওর কপালে চুম্বন করলাম ধীরে।তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে আজান দিয়ে দিলাম।মাসাআল্লাহ পুরো আমার কার্বন কপি।শুধু সভাব মায়ের মতো হলেই হলো।আমার মতো অসভ্য হলে আমার বউটার জীবন তেনাতেনা তেজপাতা হয়ে যাবে।আজান দিতেই আমার ময়নাপাখির কান্না থেমে গেলো।মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপচাপ তাকানোর চেষ্টা করছে।বড় বড় চোখ গুলো পুরো মায়ের মতো শুধু।বাকি সব আমার মতো।একটু পর সবাই একে একে ময়নাপাখিকে নিতে লাগল।আধা ঘন্টার পর ঐশানীকে বেডে দেওয়া হলো।একে একে যেতে বলা হলো।আমি আগে আব্বু আর আম্মুকে পাঠালাম ঐশানীর কাছে।তাদের অধিকার সবার আগে।তাদের মেয়েটার সব সুখ দুঃখের ভাগিদার সবার আগে ওনারাই।একে একে সবাই দেখা করে আসল।আমি ময়নাপাখিকে নিয়ে কেভিন এ ঢুকে গেট লক করে একেবারেই ঝড়ের গতিতে ওর কাছে গেলাম।
সোনাপাখি।(ইফরাজ)

হুম বলো অসভ্য পুরুষ?(ঐশানী ধীর কন্ঠে)

আমার ময়নার মা।(ইফরাজ )

বলো।(ঐশানী ধীরে)

আই লাভ ইউ বউ।(ঐশানীর কপালে কিস করে ইফরাজ)

আই লাভ মাই প্রিন্সেস।দাও ওকে একটু দেখি।(ঐশানী মুচকি হেসে)

নাও।কষ্ট হয়েছে অনেক তাইনা?(ইফরাজ ঐশানীর পাশে বেবিকে দিয়ে)

হুম। তবে এখন আর কোন কষ্ট হচ্ছে না আমার প্রিন্সেস কে দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।(ঐশানী বেবির কপালে চুম্বন করে ধীরে ধীরে)

আই এম সরি সোনাপাখি।(ইফরাজ)

কেনো?(ঐশানী ইফরাজ এর দিকে তাকিয়েই)

আমার কারণে আজকে এত্ত কষ্ট সহ্য করতে হলো।(ইফরাজ ঐশানীর মাথায় হাত দিয়ে)

ধন্যবাদ অসভ্য পুরুষ।এত্ত সুন্দর কষ্ট টা দেওয়ার জন্য ।আর হ্যা শোন(ঐশানী)

কি সোনাপাখি?(ইফরাজ)

আই লাভ ইউ টু অসভ্য পুরুষ।(ঐশানী)

রাতেই ঐশানীর রিলিজ দেওয়া হলো।আমরা বেবি আর ঐশানীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম।(ইফরাজ)
_________

আটমাস পর

কোথায় তুমি?(ঐশানী রাগ করে)

কেনো শোরুম এ।বলেই তো আসলাম। (ইফরাজ)

এক্ষুনি বাসায় আসো।(ঐশানী হালকা চিৎকার করে)

কেনো কি হয়েছে সোনাপাখি?হুযাইফার কি কিছু হয়েছে?(ইফরাজ উদ্বিগ্ন কন্ঠে)

তোমার মেয়ের কিছু হয়নি।তবে তোমার হবে এক্ষুনি বাসায় আসো।তোমার আজকে হচ্ছে অসভ্য পুরুষ।
বলেই ফোন কেটে দিলাম।মেয়ের মাত্র আট মাস পরেছে।এরই মধ্যেই এই ইফরাজ অসভ্যটার জন্য আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আজকে বাসায় আসুক ওর খবর আছে।লজ্জা তে আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।সবাইকে মুখ দেখাব কেমনে।হঠাৎই মেয়ের আধু বুলি শুনে ওর কাছে গেলাম।
কি হয়েছে মামমাম টার?খুদা পাইছে?ওলে আমার সোনা।(ঐশানী)

ম ম বু বু।(হুযাইফা)

মামমাম আসো খাইয়ে দেই।(ঐশানী)

এক ঘন্টার পর

আমি হুযাইফাকে কোলে নিয়ে পাইচারি করছি।হঠাৎই কলিংবেল এর শব্দে গেট খুলে দিলাম।মামমাম দাঁড়ানো পেছনে ইফরাজ।কত্ত শয়তান ভয়ে মামমাম কে সাথে নিয়ে আসছে।(ঐশানী মনে)

আমার দিদামনি কি করে?(মামমাম)

মামমাম কখন থেকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছি।কিছুতেই ঘুমাচ্ছে না।আমি শাওয়ার নিবো তাও পারছিনা।(ঐশানী)

দাও আমার কাছে।আমি ওকে নিয়ে যাই।(মামমাম)

পরে যেও।এখানে আগে বসো।একটুপর নাহলে তোমার ছেলের কান্না কে সামলাবে।(ঐশানী)

ওমা কি করলো আবার অসভ্য ছেলেটা?এই জন্য এই আমাকে ডেকে নিয়ে আসল।কিরে ঐশানীর সাথে কি করেছিস?(ইফরাজ এর কান ধরেই মামমাম)

আমার জানামতে তো কিছু করিনাই।এখন হঠাৎই একটু আগে কল করে জরুরী তলব দিলো।তাই ভয় পেয়েছি।এই জন্য তোমাকে সাথে আনলাম।দিন দিন যেই ডেনজারেস হয়ে যাচ্ছে তোমাদের ঐশানী।(ইফরাজ হাসার ট্রাই করে)

কি বললা?আমি ডেনজারেস হয়ে যাচ্ছি?(হালকা রাগ করে ঐশানী)

না সোনাপাখি।আমি ডেনজারেস হয়ে গেছি তুমিনা।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

ছাড়ো তুমি আমাকে।খবরদার ধরবানা।মামমাম তোমার ছেলের নামে বিচার আছে।বিচার করে তারপর যাবে।(ঐশানী ইফরাজ এর থেকে সরে মামমাম এর পাশে বসে)

বল কি করেছে অসভ্য টা।একদম মেরে ওর আলুর দম বানিয়ে দিবো।দিনদিন অসভ্যতামির সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। (মামমাম ঐশানীর কোল থেকে হুযাইফাকে কোলে নিয়ে)

তোমার ছেলে।(ঐশানী কান্না করবে করবে ভাব)

হুম বল।(মামমাম)

কিভাবে বলব?আমার তো লজ্জা তে মাথা কাটা যাচ্ছে। সবাইকে মুখ দেখানোর কোন ঝো রাখেনি।(ঐশানী কান্না করে)

কি করেছে বল মা আগে।তারপর ওর ব্যবস্থা করছি।(ইফরাজ এর দিকে রাগি লুক দিয়ে মামমাম)

আমি আবার কি করলাম সোনাপাখি?(ঐশানীর হাত ধরেই ইফরাজ)

আমি প্রেগনেন্ট মামমাম।(ঐশানী মুখে হাত দিয়ে)

ওয়াও এই কি বললি তুই?(মামমাম অবাক হয়ে)

আমি প্রেগনেন্ট মামমাম। (ঐশানী)

এত্ত ভালো খবর টা আগে বলবা না মিস্টি নিয়ে আসতাম।আমার তো অনেক খুশি লাগছে।ওহো(খুশিতে চিৎকার করে ইফরাজ)

এই অসভ্য চুপ।মেয়েটার মাত্র আটমাস ইফু। এখনি আরেকজন কিভাবে কি করবি?তুই কি বোকা ইফু?(মামমাম রাগ করে)

দুইজন কে একসাথে বড় করে ফেলবে।এত্ত টেনশন করোনাতো।যাও আমার প্রিন্সেস কে নিয়ে একটু নিচে।আমার প্রিন্সেস এর আম্মুর সাথে দরকার আছে।(ইফরাজ)

অসভ্য,নির্লজ্জ ছেলে।(বলতে বলতেই নিচের উদ্দেশ্য রওনা হলাম মামমাম)

সোনাপাখি আই লাভ ইউ বউ। এত্ত সুন্দর সারপ্রাইজ এর জন্য। (ঐশানীকে জড়িয়ে ধরে ইফরাজ)

অসভ্য পুরুষ সরো।তোমার এই একটু পর পর আদর আদর পাওয়া বের করব।কি লজ্জা কি লজ্জা মেয়ের আট মাস না হতেই আমি আবার প্রেগনেন্ট।ওর দেড় বছরের মাথায় আরেক বেবি হয়ে যাবে।সবাই কি ভাববে?(ঐশানী অভিমান করে)

কি করব?তুমি এত্ত টেস্ট সরি কিউট কেন?তোমার আশেপাশে থাকলেই আমার ভিষন আদর আদর পায়।তোমার এই গাল দেখলে খেয়ে ফেলতে মন চায়।এই যে এই মুহূর্তে রাগে তোমার নাক লাল হয়ে গেছে মন চাচ্ছে একটু কামরে দেই।গাল গুলো ও ফুলে আছে মন চাচ্ছে খেয়ে ফেলি।এখন এটাকি আমার দোষ?(ঐশানীকে জড়িয়ে ইফরাজ)

তো কি আমার দোষ?(ঐশানী রাগ করে)

হুম অবশ্যই তোমার দোষ।তুমি দিনদিন কিউটের বোইরাম হয়ে যাচ্ছো আর তাই আমার আদর আদর পাওয়ার ইচ্ছে ও বেড়ে যাচ্ছে আমি কি করব?(ইফরাজ)

কচু গাছের সাথে ফা*সি খাও যাও অসভ্য পুরুষ।(রাগ করে ঐশানী)

ওমা এখন তোমার রাগ দেখে আমার আবার আদর আদর পাচ্ছে কি করব বলোতো?(ঐশানীর গালে কামর দিয়ে ইফরাজ)

ইফরাজ এর বাচ্চা সরো।(ঐশানী চিৎকার করে)

বাচ্চা তো সরে ওর দিদার কাছে গেছে।আরেকটা আপাতত আসছে।কয়েকদিন পর বের করে সরিয়ে ওর দাদার কাছে দিবো।এখন চলো শাওয়ার নিতে।বেশি লেট করলে বেবির ঠান্ডা লাগবে।
বলেই ওকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে আসলাম।ওকে দাড় করিয়ে ঝর্ণা ছাড়তেই ও আমার বুকে মুখ লুকালো।আমি ওকে জড়িয়ে শাওয়ার নিতে লাগলাম।(ইফরাজ মুচকি হেসে)

________

আব্বু তুমি আবার দাদা হতে চলেছ।(ইফরাজ খেতে খেতে)

হঠাৎই আব্বুর কাশি উঠে গেলো।আমি লজ্জার কারণে মাথা নিচু করে ফেললাম।ওর কথাতে খাবার আটকে গেছে আব্বুর গলাতে।হুযাইফা কে মামমাম দের রুমে ঘুম পাড়িয়ে খেতে বসেছি।ইফরাজ হঠাৎই আব্বুর উদ্দেশ্য এমন কথা বলে উঠলেন।এই ছেলের কবে বুদ্ধি হবে আল্লাহ ভালো যানে।(ঐশানী মনে)

প্রতি বছর এত্ত সুখবর পেলে ডাইবেটিকস হতে টাইম লাগবেনা বাপ।(আব্বু কিছুক্ষণ পর)

ওমা মাত্র তো শুরু।একজন হলো আরেকজন হবে এখন ওতো ক্রিকেট দলের অনেক সদস্য মিসিং।তাদের আনি তারপর নাহয় বলো একথা।(ইফরাজ)

মামমাম আমার খাওয়া শেষ আমি হুযাইফাকে নিয়ে গেলাম।(ঐশানী বলেই এক প্রকার দৌড়ে মামমাম দের রুমে আসলাম)

নির্লজ্জ বেসরম ছেলে বাপের সামনে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না?(আব্বু রাগ করে)

ওর জন্য মেয়েটার খাওয়া হলোনা।এই অসভ্য খেয়ে ওর খাবার নিয়ে উপরে যা।আমি ওর সাথে কিছু কথা বলে ওকে পাঠাচ্ছি। (মামমাম)

ওকে নিয়েই যাবো।তোমার কি কথা আছে ওকে বলে দাও।আর কাল থেকে ওর খাবার উপরে দিও।(ইফরাজ)

ঠিক আছে তোমরা খাও আমি আসছি।ইতির আব্বু তুমি কিছুক্ষণ পর আসো।ঐশানীর সাথে আমার কিছু পার্সোনাল কথা আছে।(মামমাম)

ঠিক আছে।(আব্বু)

কিছুক্ষণ পর

এত্ত জলদি ছাড়িয়ে দিলে ওর পুষ্টি কিভাবে পূরণ হবে মামমাম?(ঐশানী মন খারাপ করে)

আটমাস পরে গেছে মা।বাইরের খাবার দিয়ে পুষ্টি ঠিক রাখতে হবে।কি বলব বল আমার ছেলেটা এত্ত অসভ্য।এত্ত জলদি বেবি কেউ নেই।এখন আরেকজন এর জন্য ওর breastfeeding বাদ দিতে হবে।তুইতো মা শিক্ষিত M.A পাস করে তোর তো এই দিকটা দেখা উচিত ছিলো।(মামমাম)

আমার কি দোষ তোমার ছেলে।(থেমে ঐশানী)

বুঝেছি।যা হওয়ার হয়ে গেছে আল্লাহর ইচ্ছে হয়েছে দিয়েছেন।এখানে আমাদের বান্দাদের কোন কথা নেই।আমরা ও খুশি ভিষন। কিন্ত হুযাইফার জন্য একটু কষ্ট হচ্ছে।এইটুকু বয়সে আদর এর ভাগ হয়ে গেল।(মামমাম)

ও আমার প্রথম সন্তান ওর জন্য সব স্পেশাল।ওর আদর এ কোনদিন ভাগ হবে না মামমাম।(ইফরাজ)

যা ওদের নিয়ে উপরে যা।ঐশানীকে ডিম সিদ্ধ আর দুধ গরম করে দিস।এখন ওর পুষ্টির দরকার আছে।আর ঐশানী খেয়াল রাখিস মা রাতে ওকে ভুলেও খায়াবিনা।ওর জন্য ফিটার করে খাওয়াবি।(মামমাম)

আচ্ছা। (ঐশানী চোখ মুছে)
_______

সরি ময়নাপাখি মা।আমার ভুলে তুমি তোমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে।(ইফরাজ হুযাইফাকে কোলে তুলে কান্না করে)

কি হয়েছে ইফরাজ কান্না করছ কেন?(ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঐশানী)

আমি ভুল করেছি সোনাপাখি।আমার জন্য আমার মা টা তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো।(ইফরাজ)

কিসের অধিকার?(ঐশানী ইফরাজ এর থেকে হুযাইফাকে কোলে নিয়ে)

আমি মামমাম এর কথা শুনেছি।প্রেগনেন্ট থাকলে প্রথম বেবিকে breastfeeding করানো যায়না দ্বিতীয় বেবির জন্য।যেখানে ওর আরো কয়েক বছর এই পুষ্টি পাওয়ার অধিকার ছিলো।তা আমার জন্য হলোনা।(ইফরাজ ঐশানীর পাশে বসে)

হয়েছে এখন আর কান্না করতে হবেনা।বেশি আদর আদর পেলে এমন এই হয় অসভ্য পুরুষ।যাও ঘুমাও।আমি শুধু ভাবছি আব্বু আম্মুকে কিভাবে বলব এই কথা?(ঐশানী চিন্তিত কন্ঠে)

আমি বলে দিবো তোমার চিন্তার দরকার নেই তুমি ঘুমাও।(ইফরাজ)

ও ভুলেই তো গেছি আমার যে একটা অসভ্য জামাই আছে।যে তার শশুর-শাশুরী,আব্বু-মামমাম কাউকে লজ্জা পায়না।(ঐশানী হুযাইফাকে বেডে শুইয়ে ইফরাজ এর দিকে তাকিয়েই)

সোনাপাখি ।(ইফরাজ)

খবরদার জদি এখন তোমার আদর আদর পায় একেবারে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিবো।(ঐশানী)

না তাকি বলছি আমি।আমি বলছিলাম কি তোমাকে কোলে নিয়ে চন্দ্র বিলাস করতে মন চাচ্ছে।(ইফরাজ)

ঢং দুই বাচ্চার বাপ হয়ে ও রোমান্স শেষ হয়না।(ঐশানী)

ওমা একজন upload হয়েছে আরেকজন তো comeing soon।এখন এই বলে রোমান্স থেকে অবসর নিবো কিযে বলোনা।এখন ওতো ক্রিকেট দলের অনেক সদস্য comeing soon soon এ আছে।(ইফরাজ ঐশানীকে কোলে বসিয়ে)

এইজন এর পর আর একজন এর চিন্তা করবা মাথা ফাসায় তোমার death soon বানায় দিবো অসভ্য ইফরাজ। (ঐশানী)

দেখা যাবে।তো চলো একটু চন্দ্র বিলাস করে আসি।(ইফরাজ ঐশানীকে কোলে নিয়ে হাটা দিলো)

এই পুরুষটার ভালোবাসা মারাত্মক সুন্দর।উফফ একে কি বলব ভেবে পাইনা।দিনদিন এর ভালোবাসার জন্য উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি। এর যেমন আদর আদর পায়।আমার তেমন এর আদরে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে মন চায়।ভালোবাসার এই উত্তাল সমুদ্রে ভেসে পাগল পাগল হতে মন চায়।কি নেশাতে আবদ্ধ করলে অসভ্য পুরুষ।
এই নির্লজ্জ পুরুষ শোননা।(ঐশানী ইফরাজের দিকে তাকিয়েই)

হুম সোনাপাখি।(ইফরাজ চাঁদ থেকে মুখ সরিয়ে ঐশানীর দিকে তাকিয়েই)

আই লাভ ইউ অসভ্য পুরুষ। (ইফরাজ এর গলা ধরে ঐশানী)

এইযে এইযে এখন যদি বলি আমার আদর পাচ্ছে তাহলেই আমি অসভ্য হয়ে যাই।এখন নিজে যে আমাকে পাগল করে দিচ্ছ তার কোন দোষ নেই না?(ইফরাজ)

চুপ থাকতো।আজকে তোমার বুকে ঘুমাতে চাই।চুপচাপ থাকো নাহলে আমার আর বেবির ঘুম ভেঙ্গে যাবে।(ঐশানী চোখ বন্ধ করেই)

এটা ঠিকনা।আদর লাগিয়ে ঘুমানো একদম ঠিকনা।ঐ বউ। (ইফরাজ)

চুপ একদম।নাহলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।(ঐশানী)

চলো আমাদের প্রিন্সেস একা।ও জাগলে ভয় পাবে।আজকে আদর ছাড়াই ঘুমাও আমার বুকে।
বলেই ওকে কোলে এনে বেডের উপর বসিয়ে দিলাম। হুযাইফাকে দেওয়াল সাথে লাগিয়ে শুইয়ে দুই সাইটে কোল বালিশ দিয়ে দিলাম।তারপর আবার ওকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম।বেশ কিছুক্ষণ যেতেই আমার সোনাপাখি ঘুম।আমি ওকে ছাড়িয়ে উঠে বসলাম। তারপর বারান্দার গেট লক করে এসে ওয়াশরুম গেলাম। কিছুক্ষণ পর এসে ঐশানীর পাশে বসে ওর পেটে একটা চুম্বন করে উঠে বসলাম তারপর হুযাইফার কপালে ও গালে চুমু খেয়ে ঐশানীকে সাইটে দিয়ে আমি মাঝখানে ঘুমিয়ে পড়লাম।আজকের থেকে হুযাইফার রাতেও ফিটার খাওয়াতে হবে।ঐশানী ভুলে যদি breastfeeding করিয়ে ফেলে সেই জন্য আজকে ওকে সাইটে দিলাম।সারাদিন তেমন জ্বালাতন করেনা আমার ছোট্ট ময়নাপাখি।তবে রাতে অনেক সময় জ্বালাতন করে।বিশেষ করে খাওয়ার জন্য। পুরো আমার মতো একটু পরপর খেতে মন চায়।কিছুক্ষণ পর এই হুযাইফা কান্না করে উঠল।আমি ফিটার ওর মুখে দিয়ে ওকে আমার কোলে তুলে নিলাম।বেশ দুষ্টু হয়েছে।মা ছাড়া খেতে চায়না।মুখে নিচ্ছে ঠিকই তবে বু বু করে সবে ফেলে দিচ্ছে।
কি মা খাও।এমন করেনা।খাবার নষ্ট করলে আল্লাহ পাপ দিবে।(ইফরাজ)

ম ম বু বু।(হুযাইফা)

মামমাম ঘুমায়।বাবাই খাইয়ে দিচ্ছি খাও মা।(ইফরাজ)

বু বু।(হুযাইফা মোচরা মুচরি করে)

ইফরাজ দাও ওকে খাইয়ে দেই।(ঐশানী হাল্কা চোখ খুলে)

ফিটার খাওয়াতে হবে সোনাপাখি।(ইফরাজ অসহায় কন্ঠে)

ওর কথা শুনে ঘুম চলে গেলো একেবারেই।আমি উঠে বসে আমার প্রিন্সেস কে খাইয়ে দিচ্ছি।কিন্ত ও বু বু করে সব ফেলে দিচ্ছে।মেয়েটার কান্না ও সহ্য হচ্ছে না।এইটুকু মেয়েটা খাওয়ার জন্য কান্না করছে অথচ আমি নিরুপায়।
খাওয়াও।
বলেই আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করে ওয়াশরুম চলে আসলাম।আমার এইটুকু মেয়েটার কান্না আমার সহ্য হয়না।তার উপর খাবার এর জন্য ও কান্না করছে এটা আমার আরো সহ্য হচ্ছে না।ইফরাজ অসভ্য।(ঐশানী)

আমি হেটে হেটে হুযাইফাকে খাওনোর ট্রাই করছি।অনেক চেষ্টার পর ও খেয়ে ঘুম।ওকে বেডের উপর শুইয়ে আমি ঐশানিকে ডাকলাম।
সোনাপাখি ময়নাপাখি খেয়ে ঘুমিয়েছে।তুমি আসো।
হঠাৎই ও গেট খুলে আমার দিকে রাগি লুক দিয়ে যেয়ে শুয়ে পড়ল হুযাইফাকে ধরে।দুর ভালো লাগেনা।কি একটা কাজ করেছি এখন আমার ময়নাপাখির এই কষ্ট হচ্ছে। (ইফরাজ)

**********(চলবে)**********