দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-০৪

0
154

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ০৪

-‘কী খবর? শুনলাম বিয়ে করছো?
-‘হ্যাঁ বিয়ে করব। তাতে তোমার কী?
-‘আমার আবার কী? এমনিই বললাম। তা বউকে নিয়ে কতদিন সংসার করবা?
কৃষ্ণার গা জ্বালানো কথা শুনে, শৌভিকের মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে। প্রায় দেড় বছরের মতো লিভ ইন রিলেশনশিপে আবদ্ধ ছিল ওরা দুজন। তারপর কৃষ্ণাই শৌভিকের চরিত্রে দোষ দিয়ে, ছেড়ে গিয়ে অন্যথা বিয়ে করেছে। শৌভিকের এতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। “ভাত ছিটালে যেমন কাকের অভাব হয় না। টাকা ছিটালেও নারীর অভাব হয় না।”
শৌভিক যে ছাত্রজীবনে কৃষ্ণার সাথে দীর্ঘদিন লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিল। কথাটা শৌভিকের পরিবারের কেউ জানে না। শুধু মা জানে। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। বিয়ের বাজারে বেশ ডিমান্ড শৌভিকের। ছাত্র ভাল হওয়ায় ভাল কলেজ, ভাল ভার্সিটি, ভাল চাকরি পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। দীপ্তির মতো সুন্দরী, একটু বোকাসোকা বউ পেলে আর কী লাগে জীবনে? শৌভিকের খুব ইচ্ছে ছিল। বিয়ের আগেই একান্তে দীপ্তির সাথে কিছু স্পেশাল সময় কাটানোর। অন্তত টেস্ট করে দেখা উচিৎ ছিল! মেয়েটা আদৌও ভার্জিন কী না! মন বলে, দীপ্তি ভার্জিন। কিন্তু যেখানে নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করে না শৌভিক। দীপ্তিকে বিশ্বাস করবে কীভাবে? পুরুষ মানুষের যতই স্বভাব, চরিত্র খারাপ থাকুক। বিয়ের বাজারে সবাই ভার্জিন মেয়েই খুঁজে। তাই তো এদেশের অধিকাংশ পুরুষ উত্তাল প্রেম করার পরও নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করতে চায় না। ঠিকই মা-বাবার পছন্দে বিনাবাক্যব্যয়ে অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে নেয়।

-‘কী হলো? আমার কথা শুনতে পাচ্ছো শৌভিক?
শৌভিক দাঁত খিচিয়ে বলল,
-‘মাঝরাতে বালের প্যাঁচাল পারার জন্য ফোন দিয়েছো না কী?
কৃষ্ণা হাসল। কণ্ঠে খানিক তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে বলল,
-‘যদি তোমার হবুবউ কোনভাবে জানতে পারে! দীর্ঘদিন বিয়ে না করেও তোমার সাথে সংসার করেছে অন্য একটা মেয়ে। তাহলে তোমাদের বিয়েটা আদৌও হবে তো শৌভিক?
শৌভিক একটুও ভয় পেল না। উল্টো কৃষ্ণাকে শাসিয়ে বলল,
-‘খবরদার কৃষ্ণা। আমার হবুবউ তো বহুদূর। শ্বশুরবাড়ির কেউ যদি ভুলেও জানতে পারে! আমার চরিত্র খারাপ। আমি তোমাকে জাস্ট নিজের হাতে খুন করে ফেলব। তুমি যে আমাকে এতক্ষণ ধরে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছো। সব তো আমার ফোনে রেকর্ড হয়ে আছে। রেকর্ডটিং ক্লিপটা পাঠাবো না কী তোমার বরকে? স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করতেছো। সুখেই সংসার করো। আমাকে চটিয়ে দিয়ে, শুধু শুধু নিজের সংসারে অশান্তি ডেকে এনো না। আমি সুখী না হলে। কাউকে সুখী হতে দেব না! কাউকে না। মাইন্ড ইট।
কথাগুলো বলেই ফোনের লাইনটা কেটে দিল শৌভিক। খুব ইচ্ছে ছিল। আজ রাতে কিছু সময় দীপ্তির সাথে একান্তে কাটাতে। কিন্তু অসময়ে কৃষ্ণার ফোনকল পেয়ে সব ইচ্ছে মাটি হয়ে গেল। মনটা বিতৃষ্ণায় ছেয়ে গেল। কৃষ্ণা ভালোই প্যারা দেবে মনে হচ্ছে। না…এর একটা শক্তপোক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

খুব ভোরে সুপ্তির ঘুম ভাঙল। গতকাল রাতে ভেজা চুলে শুয়ে থাকার কারণে মাথাটা ভার ভার লাগছে। কেমন গুমোট বাঁধা ব্যথাও করছে। এখন এককাপ চা না খেলে চলবেই না। মাকেও ডাকতে ইচ্ছে করছে না। সুপ্তি একাই বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখল, একজন মহিলা রান্না করছে, আরেকজন কেটে-কুটে দিচ্ছে। সম্ভবত দুজনই কাজের লোক। এই বাড়ির মানুষেরা বোধহয় নিজের হাতে রান্না করে না। কী জানি বাবা! বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপার। সুপ্তির তো মায়ের হাতের কিংবা নিজের হাতের রান্না করা খাবার না খেলে মুখেই রুচে না। সুপ্তি এগিয়ে গিয়ে বলল,
-‘আমি একটু চা খাব?
মাঝবয়েসী মহিলা বলল,
-‘কী চা খাইবেন ম্যাডাম? আমি বানাইয়া দেই?
সুপ্তি ইতঃস্তত করে বলল,
-‘কিছু মনে না করলে আমি বানিয়ে খাই?
-‘আচ্ছা এইদিকে আসেন ম্যাডাম? আমি বইলা দিতাছি। কোথায় কী রাখা আছে।

সুপ্তি একটা পাত্রে চায়ের জন্য জল গরম করতে দিল। তাতে আদা কুচি, সামান্য লেবু কুচি, অল্প একটু কালোজিরে, এক চিমটি নুন, পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে জ্বালাতে লাগল। পাশে দাঁড়ানো মহিলা বেশ অবাক হলো। বলল,
-‘কিছু মনে না করলে এই চা ডা আরেকটু বেশি কইরা বানান ম্যাডাম? আসলে আবিরদাদা ও গিন্নীমাও এই চা খাইতে পছন্দ করে।
সুপ্তি মিষ্টি করে একটুখানি হাসল। মাথা নেড়ে বলল,
-‘আচ্ছা বানিয়ে দিচ্ছি।

তৃণারানী ডায়াবেটিসের রোগী। রোজ ভোরে ও বিকালে নিয়ম করে দুবেলা হাঁটতে যেতে হয়। কাছেই একটা পার্কে হাঁটতে যায়। আজ হেঁটে এসে ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসল। জুতার ফিতে খুলতে খুলতে বেখেয়ালে রান্নাঘরের দিকে তাকাল। খুব অবাক হয়ে তাকিয়েই রইল তৃণারানী।
একটি অল্পবয়সী মেয়ে, কোমরে ওড়না গুঁজে একমনে কাপে চা ঢালছে। কখনোবা কপালের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। দৃশ্যটা দেখতে এত ভাল লাগল তৃণারানীর। এই মিষ্টি মেয়েটা কে? গতকাল রাতে দেখেছে বলেও তো মনে পড়ে না। না কী ভাল করে দেখা হয়নি?
তৃণা রানী বলল,
-‘দোলা আমার চা টা দিয়ে যা?
দোলা চায়ের কাপ তৃণারানীর হাতে তুলে দিল। তৃণারানী চায়ে চুমুক দিয়ে আবেশে দুচোখ বুজে ফেলল। বহুদিন এত স্বাদের চা খাওয়া হয় না। দোলা চা বানায় একটুও ভাল হয় না। নুন বেশি দিলে, চিনি কম হয়। চিনি বেশি দিলে আদা কুঁচি কম হয়। মোটকথা খাওয়া চলে। আজকের চা টা একদম পারফেক্ট হয়েছে। গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ে ফুঁ দিয়ে চুমুক দিতে এত ভাল লাগছে। তৃণারানী বলল,
-‘চা টা কে বানিয়েছে দোলা?
দোলা হাত উঁচিয়ে সুপ্তিকে দেখাল। বলল,
-‘ওই দিদিমণি বানিয়েছে।
তৃণারানী বলল,
-‘আবির বোধহয় এতক্ষণে ঘুম থেকে ওঠে গেছে। আবিরের জন্য জলখাবার দিয়ে আয়? সাথে এই স্পেশাল চা টাও দিস।
-‘আচ্ছা গিন্নীমা।

সুপ্তি ধীর পায়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াল। একহাতে চায়ের কাপ অন্যহাত দিয়ে কোমরে গুঁজে রাখা ওড়নাটা ঠিকভাবে পরে নিল। তৃণারানী বিনয়ের সুরে বলল,
-‘তোমার নাম কী মামণি? বসো প্লিজ?
সুপ্তি মিষ্টি করে একটুখানি হাসলো। আন্টিটা অনেক ভাল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বড়লোক হলেও বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। সুপ্তি ধীর কণ্ঠে বলল,
-‘সুপ্তি মজুমদার।
-‘বাহ্..
-‘কোন ক্লাসে পড়ো?
-‘অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
-‘গল্প, উপন্যাস পড়ো মামণি?
সুপ্তি ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নেড়ে বলল,
-‘অবসরে পড়ি আন্টি।
-‘কোন লেখকের বই পড়তে বেশি পছন্দ করো?
-‘সমরেশ মজুমদার।
তৃণারানী হেসে দিল। বলল,
-‘আমার পছন্দের লেখক রবীঠাকুর।
সুপ্তি বেশ অবাক হলো। বলল,
-‘আপনিও গল্প পড়েন আন্টি?
-‘আগে প্রচুর পড়তাম। এখন তুলনামূলক কম।
-‘ওহ।
-‘শৌভিকের হবুবউয়ের সম্পর্কে কী হও তুমি?
সুপ্তি নিচু কণ্ঠে বলল,
-‘বড়বোন।
তৃণারানী বেশ অবাক হলো। সুমিত্রা ফোনে বলেছিল অবশ্য। বড়বোনকে দেখতে গিয়ে ছোটবোনের সাথে শৌভিকের বিয়ে ঠিক করে এসেছি। বড়বোনের গায়ের রঙ না কী কালো। দেখতেও সুন্দর না। এই মেয়ের গায়ের রঙ যদি কালো হয়। আর চেহারা যদি অসুন্দর হয়। তাহলে সুন্দর কাকে বলে? এত লক্ষ্মীমন্ত একটা মেয়েকে ওরা রিজেক্ট করে এসেছে। ভাবতেই তৃণা রানীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আবির মায়ের পাশে এসে বসল। বলল,
-‘চা’ টা কে বানিয়েছে গো মা? অন্যরকম টেস্ট পেলাম।
সুপ্তি আবিরকে দেখে নড়েচড়ে বসল। গতকাল রাতে বেহায়ার মতো আবিরের ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভাবতেই লজ্জায় গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। তৃণারানী সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘সুপ্তি মামণি বানিয়েছে।
আবির, সুপ্তির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,
-‘বাহ.. ওনি দারুণ চা বানায় তো।
সুপ্তি অন্যদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল। আবির আর সুপ্তিকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে, খুব সাবধানে অন্যরকম একটা ভাবনা তৃণারানীর মস্তিষ্কে ঢুকে গেল। দুজনকে বেশ মানিয়েছে। এই রকম একটা মিষ্টি মেয়েই তো তৃণারানী আবিরের বউ করার জন্য খুঁজছিল। তৃণারানী উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে বলল,
-‘তোরা গল্প কর। আমি ওইদিকে দেখে আসি রান্না কতদূর।
আবির, সুপ্তির দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিল। মেয়েটার মুখে মায়া মায়া ভাব আছে। পদ্ম পুকুরের মতো স্বচ্ছ টলমলে চোখদুটোতে বিষাদের ছায়া। মাথায় এলোমেলো একগাছি চুলে হাত খোঁপা করে রেখেছে৷ কিছু অবাধ্য চুল কপালে লুটোপুটি খাচ্ছে। এতে যেন মায়াবী চেহারার সৌন্দর্য শতগুণ বেড়ে গেছে। এই সৌন্দর্য চট করে চোখে পড়ে না। গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়। এই মায়াবী চেহারার শ্যামকণ্যাকে যদি জীবনানন্দ দাশ দেখতো। তাহলে এক বসাতেই নিশ্চিত কয়েকশো কবিতা লিখে ফেলতে পারতো। আবির, জীবনানন্দ দাশের একটা কবিতা মনে মনে আওড়াল।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবন্তীর কারুকার্য,
অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারিয়েছে দিশা,
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে
দারুচিনি-দ্বীপের ভেতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে
বলেছে সে,
“এতদিন কোথায় ছিলেন?”

শেষের লাইনটা আবির একটু জোরেই বলে ফেলল।
সুপ্তি ইতঃস্তত করে বলল,
-‘জ্বী? আমাকে কিছু বললেন?
আবির মাথা চুলকে হেসে দিল। বলল,
-‘না..না.. আপনাকে কিছু বলিনি। আমি একটা কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করছিলাম। এনিয়ে.. আপনি মেয়ে পক্ষের লোক। রাইট?
-‘হ্যাঁ।
-‘কনের কী হন আপনি?
-‘বড়বোন।
-‘গুড। পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে, আগেই বিয়ে করেননি তাই না?
সুপ্তি স্মিত হেসে বলল,
-‘না। আপনার ভাই রিজেক্ট করেছে।
আবিরের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এত মিষ্টি একটা মেয়েকে শৌভিক কেন রিজেক্ট করল? আর মেয়ের বাবা-মা বা কেমন? যে ছেলে বড়মেয়েকে রিজেক্ট করেছে। সেই ছেলের সাথেই কেন ছোটমেয়ের বিয়ে দিচ্ছে? অবশ্য এটা ওনাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার৷ এখানে আবিরের কিছু বলা ঠিক হবে না।

আজ শুক্রবার। আবিরদের শো-রুম বন্ধ।
সবাই সকালেই জলখাবার খেয়ে চলে যেতে চেয়েছিল। আবিরের মা দুপুরে না খাইয়ে কিছুতেই ছাড়বে না।
শৌভিক বেলা দশটার দিকে আবিরের ঘরে গিয়ে বলল,
-‘ব্রো চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি? এভাবে ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগছে না।
-‘কোথায় যাবি?
-‘লেকের পাড়ে চলো? একটা কথা ব্রো। আমি কিন্তু একা যাব না। দীপ্তিকে সাথে নিয়ে যাব। এখানে আসার পর থেকে আবার হবুবউটাকে কাছেই পাচ্ছি না।
আবির হেসে দিল। বলল,
-‘তাহলে তোরা দুজন গিয়ে ঘুরে আয়। তোদের মাঝে আমাকে টানছিস কেন?
-‘না। তোমাকেও সাথে নিয়ে যাব। দীপ্তি আমাকে একটুও বিশ্বাস করে না। জীবনেও একা আমার সাথে যাবে না। নিশ্চিত ওর গোয়েন্দা দিদিকেও সাথে নিয়ে যাবে।
আবির বিড়বিড় করে বলল,
-‘সুপ্তিও যাবে?
-‘কিছু বললে ব্রো?
-‘কিছু না। তুই যা আমি রেডি হয়ে আসছি।

আবির কালো কালারের শার্ট পরল। সাথে ম্যাচিং করে ডানহাতে ঘড়ি, চোখে রোদ চশমা পরে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিল। তারপর গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। ততক্ষণে ওরাও চলে এসেছে। সুপ্তিকে দেখেই মনে হচ্ছে ওর একটুও আসার ইচ্ছে ছিল না। ছোটবোনটা জোর করে সাথে নিয়ে এসেছে। কেমন ছোটবোন বড়বোনের হাত ধরে মোচড়ামুচড়ি করছে। যেন হাত ফস্কে পালিয়ে না যেতে পারে। আবির বেখেয়ালে হেসে দিল। সুপ্তির পরনে টপের সাথে লং স্কার্ট। গলায় ওড়না পেঁচানো। মুখে কোন প্রসাধনীর ছোঁয়া নেই। চুল গুলো উঁচু করে বাঁধা। কপালের মাঝখানে একটা কালো টিপ।
চুলগুলো ছেড়ে দিলে বোধহয় দেখতে আরও বেশি ভাল লাগতো।
আবির গাড়িতে ওঠে ড্রাইভিং সিটে বসল। শৌভিক, আবিরের পাশে বসল। পেছনের সিটে দুইবোন বসল। আবির একটু পর পরই লুকিং গ্লাসে সুপ্তিকে দেখছে। কখনো বা চোখে চোখ পড়ে গেলে, লাজুক হেসে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক তাকিয়ে ব্যর্থ হয়।আবারও অবাধ্য চোখ জোড়া সুপ্তির মায়াবী মুখপানে চলে যায়।
এই মেয়েটাকে ঠিক ভাবে চেনেও না আবির। তারপরও তাকিয়ে থাকতে এত কেন ভাল লাগছে? জানা নেই।
ধানমন্ডি লেকের পাড়ে এসে শৌভিক, দীপ্তির কাঁধ জড়িয়ে ধরে, গল্প করতে করতে অন্যপাশে চলে গেল। আবির ধীর পায়ে সুপ্তির পাশাপাশি হাঁটছে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।জলের ঢেউয়ে সাথে অজস্র ঝরে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেসে বেড়ানো দেখে, সুপ্তি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। আবির নিঃশ্বাস বন্ধ করে একপলক সুপ্তির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। আজ যেন বাতাসেও অন্যরকম মাদকতা বিরাজ করছে। বিড়বিড় করে বলল
“ওমন করে কী দেখছো মেয়ে? তুমি কী জানো? ওই অবহেলে ঝরে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া ফুলের চেয়েও শতগুন সুন্দর তুমি!”

দূর থেকে আবিরের সাথে সুপ্তিকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে শৌভিকের কেমন যেন লাগল। শৌভিক আর একটু গভীর ভাবে ওদের দিকে তাকালো এবং একই সাথে খেয়াল করল। সুপ্তির মুখখানি মায়া কাড়া। অসম্ভব সুন্দর চোখ, মুখ। এত নিখুঁত, মিষ্টি চেহারার মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। আশ্চর্য! সুপ্তির সুপ্ত সৌন্দর্য শৌভিক আগে কেন খেয়াল করেনি? শৌভিকের বুকের ভেতর খুব সাবধানে কী যেন উলোটপালোট হয়ে গেল। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আবিরের সাথে সুপ্তিকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে অসহ্য লাগছে। মনের ভেতর বিদঘুটে অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। এই মুহূর্তে কী যে ইচ্ছে করছে! শৌভিক নিজেও জানে না।

(চলবে)