দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-১৪

0
132

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৪

স্বর্ণছেঁড়ার গা বেয়ে রাত নেমে এলো। চারপাশ নিকেষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। নদীতে ঢেউ তোলা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে, নৌকায় বসে জেলেরা একমনে মাছ ধরতে ব্যস্ত। হাতে লাইট। দূর থেকে সেই লাইটের আলো রাতের জোনাকি পোকার মতো দেখা যাচ্ছে। থেকে থেকে শিয়ালের হুঁক্কা.. হুঁক্কা..ডাক শোনা যাচ্ছে। শৌভিকের আবদারে সবাই ছাদে উঠে এলো। সবাই বলতে ওরা চারজন। আর পাশের বাড়ির ক্লাসে নাইন, টেনে পড়ুয়া কিছু ছেলেমেয়ে।
ছাদের লাইট জ্বেলে দিয়ে, শীতলপাটি বিছিয়ে সবাই গোল হয়ে বসল। মা গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চা, মুড়ি মাখা, আর পেয়াজু ভাজা রেখে গেল।
সুপ্তির পরনে সুতি কামিজের সাথে প্লাজো পরা। গলায় জর্জেটের ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছে। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর। আর চোখে মোটা করে কাজল টানা। ব্যস! এতটুকু সাজেই কী স্নিগ্ধ লাগছে। সুপ্তি বসেছে আবিরের পাশে গা ঘেষে। আবির একহাত দিয়ে সুপ্তির কাঁধ জড়িয়ে ধরল। এই স্পর্শ টুকু শৌভিকের সহ্য হলো না। অন্যদিকে তাকাল। দীপ্তিকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে, কোমর জড়িয়ে ধরল। লজ্জায় দীপ্তির ফর্সা মুখখানি লাল টুকটুকে হয়ে গেল। নিচু কণ্ঠে বলল,
-‘কী করছেন ছাড়ুন? দাদা কী ভাববে?
শৌভিক উত্তর দিল না। ঘুরেফিরে বার বার সুপ্তির ঘাড়ে বেহায়া চোখদুটো চলে যাচ্ছে। আবিরের ওই দুষ্ট হাতটা যেন ধীরে ধীরে সুপ্তির ঘাড়ে চেপে বসেছে। শৌভিকের মাথায় আগুন ধরে গেল। ইচ্ছে করছে আবিরের হাতটা এক কোপে কেটে ফেলতে। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে, এভাবে চুপটি করে বসে থাকা যায় না। শৌভিক মুখের ঘামটুকু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিয়ে, ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
-‘ব্রো চলো লুডু খেলি?
-‘আবির একটু ভেবে বলল,
-‘উম..খেলা যায়। মন্দ না।
শৌভিক আবদার করে বলল,
-‘হাত বেটে খেলব কিন্তু?
-‘জোড়া জোড়া খেলতে চাচ্ছিস?
-‘ইয়েস।
আবির হেসে দিল।
আবির উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই আবিরের একহাত সুপ্তি ধরল, সুপ্তির একহাত চট করে শৌভিক ধরে ফেলল। প্রথম স্পর্শ। শৌভিক, সুপ্তির হাতটা আঁকড়ে ধরল। শৌভিকের স্পর্শ সুপ্তির সুবিধার লাগল না। এদিকে হাতটা ছাড়িয়ে নিতেও পারছে না। মাত্র কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই ধরে ছিল। তারপর হাত বাটা শেষ হতেই সুপ্তির হাতটা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ছেড়ে দিতে হলো। আবিরের জোড়া সুপ্তি, শৌভিকের জোড়া দীপ্তি। সবাই খুশিমনে হাততালি দিয়ে উঠল। কিন্তু বসার সময় বাঁধল বিপত্তি। আবির, সুপ্তি মুখোমুখি বসেছে, কিন্তু শৌভিক সুপ্তির গা ঘেষে বসেছে। সুপ্তি সরতে সরতে দীপ্তির সাথে ঠেকে গেল। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। ছাদটা বিশাল। তবে লাইট মাত্র একটা। আবছায়া অন্ধকার। লুডু খেলার ফাঁকে ফাঁকে শৌভিক মুখ বাড়িয়ে সুপ্তির গায়ের মাদকতা মেশামো মেয়েলি ঘ্রাণ শুঁকছিল। আর মনে মনে অস্থির হয়ে উঠছিল। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। নিজেকে কিছুতেই সংযত করে রাখতে পারল না শৌভিক। অন্ধকারে সুপ্তির কোমর জড়িয়ে ধরল। সুপ্তি ভয়ে এক চিৎকার দিতেই শৌভিক ওকে ছেড়ে দিয়ে, চট করে উঠে অন্যদিকে চলে গেল। আবির ফোনের লাইট জ্বেলে বলল,
-‘কী হয়েছে সুপ্তি?
সুপ্তির মুখটা ভয়ে পাংগুবর্ণ হয়ে গেছে। আশেপাশে শৌভিককেও দেখতে পেল না। কিন্তু তখন কে সুপ্তির কোমর জড়িয়ে ধরেছিল? শৌভিক? শৌভিকই যদি জড়িয়ে ধরে, তাহলে এত তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেল?
শৌভিকে ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে উঁচু কণ্ঠে বলল,
-‘কী হয়েছে ব্রো? কে চিৎকার দিল?
আবির চিন্তিত মুখে বলল,
-‘কী হয়েছে সুপ্তি?
যেহেতু কোন প্রমাণ নেই। সত্যিটা বলতে চেয়েও চেপে গেল সুপ্তি। শুধু বলল,
-‘কিছু না। গায়ের উপর মনে হয় পোকা পরেছিল।
আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সুপ্তি উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে বলল,
-‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি গেলাম।

সুপ্তি সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে গেল। সুপ্তিকে হন্তদন্ত পায়ে ঘরে ঢুকতে দেখে, সুর্বনারানীও মেয়ের পিছুপিছু গেল। সুপ্তির কাঁধে একহাত রেখে মলিণ হাসল। মায়ের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে৷ মোমবাতির নিভু নিভু আলোতে মায়ের মুখখানি ভাল করে দেখতে পেল না সুপ্তি। মা বলল,
-‘আমার উপর এখনো রেগে আছিস মা?
সুপ্তি বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,
-‘না।
মা বলল,
-‘জানি আমার উপর অনেক অভিমান তোর। তবুও আমাকে ক্ষমা করে দিস রে মা। কোনো মা কী তার ছেলে-মেয়ের খারাপ চায়? তুইই বল? আমার তখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। তখন থেকেই তোকে নিজের কাছে এনে রাখলাম আমি। তুইই আমাকে প্রথম আঁধো আঁধো বুলিয়ে মা বলে ডেকেছিলি৷ দীপ্তি তো এলো অনেক পরে।
সুপ্তি মায়ের হাতদুটো আলতো করে ধরল। বলল,
-‘তোমার প্রতি আমার কোন রাগ নেই মা। মন খারাপ করো না।
-‘আচ্ছা।
-‘ঘরে কী জল তোলা আছে?
-‘কেন?
-‘আমি এখন স্নান করব।
মা হেসে দিল। বলল,
-‘রাতে স্নান করার অভ্যেসটা তোর এখনো গেল না?
সুপ্তি উত্তর দিল না। শুকনো জামা-কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। স্নান সেরে এসে দেখল, আবির ঘরে এসেছে। খাটের উপরে আধশোয়া হয়ে শুয়ে শুয়ে ফোনে গেম খেলছে। কারেন্টের ঝকঝকে আলোতে আবিরকে দেখতে বেশ লাগছে। সুপ্তিকে দেখে হেসে দিল আবির। উঠে গিয়ে সুপ্তির মাথা ভাল করে মুছে দিতে দিতে বলল,
-‘এত রাতে স্নান করলে কেন?
সুপ্তি উত্তর দিল না। আবেশে দুচোখ বুঁজে রইল। আবির চট করে সুপ্তিকে কোলে তুলে নিল। হাত বাড়িয়ে ঘরের লাইটা বন্ধ করে দিয়ে, সুপ্তিকে নিয়ে শুয়ে পরল।

শৌভিক সারাঘরে পায়চারি করছে। শৌভিকের মতিগতি দীপ্তির একটুও ভাল লাগছে না। ভয়ে ভয়ে বলল,
-‘আপনি এমন করছেন কেন?
শৌভিক মাথা চেপে ধরে দীপ্তির পাশে গিয়ে বসল। হাত বাড়িয়ে দীপ্তিকে কাছে টেনে নিল। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে খুব করে চাইলো, দীপ্তিকে আদর করতে। কিন্তু ইচ্ছেই করল না। দীপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-‘ঘুমাও।
শৌভিক ঘরের দরজা খুলে ছাদে চলে গেল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে সুখটান দিল। পাশে সুপ্তি থাকলে, আজকের রাতটা অন্যরকম সুন্দর হতো। সুপ্তিকে অন্যকারো সাথে সুখী হতে দেখে, ভেতরে ভেতরে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে গেল শৌভিক। যে কোন মূল্যে তার সুপ্তিকে চাই। তার আগে ঠাণ্ডা মাথায় ছক কষতে হবে। তবে সুপ্তিকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে হলে, সময় লাগবে। অপেক্ষা করার মতো ধৈর্যই তো শৌভিকের নেই। সুপ্তি তো বিশ্ব সুন্দরী না। ওর মাঝে কী এমন বিশেষত্ব লুকিয়ে আছে? যা শৌভিককে এত ব্যাকুল হয়ে টানছে? সারারাত ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবলো শৌভিক। তারপর ভোরের দিকে ঘরে চলে গিয়ে, ঘুমিয়ে পরল।

আবির গতকাল বিকালের ফ্লাইটে ইন্ডিয়া চলে গেছে। মাত্র নয়টা দিন একসাথে ছিল দুজন। এই নয় দিনেই কেমন আপন হয়ে গেছে মানুষটা। সুপ্তির খালি ঘরে মন টিকে না। আবির থাকতে এই ঘরে, অন্ধকারকে সাক্ষী রেখে, দুজন ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় পাড়ি জমাতো। আবিরকে প্রচণ্ড মিস করে সুপ্তি। রাতে ভাল ঘুম হয় না। বেলকনিতে গিয়ে, দোলনায় বসে টিয়াপাখির সাথে একমনে গল্প করে সুপ্তি। মানুষটা ফ্রী হলেই ফোন দেয়। তবে অতটুকু কথা বলে সুপ্তির তৃষ্ণা মেটে না। সেদিন বাবার বাড়ি থেকে অষ্টমঙ্গলার সমস্ত নিয়ম-নীতি মেনে, দুটো দিন থেকে চলে এসেছিল ওরা। আবির বলেছিল, “আমি তো বাসায় গিয়েই ইন্ডিয়া চলে যাব। তুমি চাইলে এখানে কিছুদিন থাকতে পারো। সুপ্তি রাজি হয়নি। বলেছে,
-‘উহু..আমি আপনার সাথে যাব।
আবির হেসে ফেলেছিল। ফিসফিস করে বলেছে,
-‘আমার বউ ভাগ্য তাহলে এতটাও খারাপ না।
সুপ্তির খুব লজ্জা লাগছিল৷ তবে বাবার বাড়িতেও আবিরকে ছেড়ে থাকতে একদম ইচ্ছে করছিল না।
তারপর বাড়িতে এসে তিনদিনের মাথায় ইন্ডিয়া চলে গেল আবির। এত অল্প সময়ে সুপ্তিও যে মানুষটার মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবে বুঝতে পারেনি। বুঝল আবির চলে যাওয়ার পর। মনে মনে আবিরকে প্রচণ্ড মিস করছিল সুপ্তি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলা হয় না। আপনি কবে আসবেন? তাড়াতাড়ি চলে আসুন প্লিজ? একা ঘরে আমার মন টিকে না। আবির ফোন দিলেও আবির শুধু এটা সেটা প্রশ্ন করে আর সুপ্তি উত্তর দেয়। আবিরের কথা ভাবতে ভাবতে রাতে আবির ফোন দিল। সুপ্তির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। আবির বলল,
-‘কী করো?
-‘বসে আছি।
-‘কোথায়?
-‘বেলকনিতে।
-‘বিবিসি কেমন আছে?
সুপ্তি টিয়াপাখির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ভাল আছে।
-‘আমাকে মিস করো সুপ্তি?
সুপ্তি নিচু কণ্ঠে মিথ্যে করে বলল,
-‘একটু একটু।
-‘বাট..আমি তোমাকে প্রচণ্ড মিস করি সুপ্তি। বিশেষ করে রাতের বেলা বিছানায় শুলেই তোমার কথা প্রচণ্ড মনে পড়ে। ঘুমই হয় না।
লজ্জায় সুপ্তির সারা গা কাটা দিয়ে উঠল। মনে মনে বলল,
‘আমারও।’
-‘সুপ্তি?
-‘বলুন?
-‘কী জাদু করলে, বলো তো? আগে তো কোনদিন একা থাকতে এত খারাপ লাগেনি। সুপ্তি উত্তর দেয় না। ভাল লাগে আবিরের ব্যাকুলতা। আবিরের নিঃশ্বাসের শব্দ ভারী হয়। সুপ্তি কান পেতে শোনার চেষ্টা করে।
আবির বলল,
-‘এখন ঘুমাও।
সুপ্তি ব্যাকুল হলো। ধীর কণ্ঠে বলল,
-‘ঘুম আসছে না।
আবির নিঃশব্দ হাসল। ফিসফিস করে বলল,
-‘আমারও।

অন্য একটা কাজে আটকে গিয়েছিল আবির।
বাড়ি ফিরতে একমাসের মতো সময় লাগল। সুপ্তি আজ ভোরে উঠেছে। সারা দুপুর লাগিয়ে, আবিরের সব পছন্দের খাবার নিজের হাতে রান্না করল। শাশুড়ীমা বারণ করেছিল অবশ্য। সুপ্তি শুনেনি। এতদিন বাইরে বাইরে কী খেয়েছে…না খেয়েছে। সুপ্তি কোমরে কাপড়ের আঁচল গুঁজে একমনে রান্না করছে। মায়াবী মুখটা ঘেমে জবজব করছে। তৃণারানীর সেই অমায়িক দৃশ্য দেখতে, বড় ভাল লাগল। কী মনে করে ভিডিও করল। তারপর টুপ করে আবিরের মেসেঞ্জারে ভিডিও ক্লিপটা পাঠিয়ে দিল। সাথে ছোট্ট একটা মেসেজ টাইপ করে সেন্ট করে দিল।
-‘তোর পছন্দের সব খাবার নিজে হাতে রান্না করছে বৌমা।”
আবির বিমানবন্দর থেকে লাগেজসহ রাস্তায় আসতেই দেখল, আবিরের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে উঠে বসে ফোন চালু করতেই মায়ের মেসেজ চোখে পড়ল। ডাঁটা চালু করে ভিডিও ক্লিপটা দেখতেই আবিরের মনটা ভাল হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল।
সুপ্তি রান্না শেষ করে, মাথায় শ্যাম্পু করে, সময় নিয়ে স্নান করল। একটা পাটভাঙা বাসন্তী রঙা সুতি শাড়ি পরল। সুপ্তির গায়ের রঙটা একটু চাপা। এই রঙটা বেশ মানায়। মুখে ক্রিম মেখে, হালকা পাউডার ছিটিয়ে, ভাল করে তুলো দিয়ে মুছে নিল। তারপর চোখে খুব যত্ন করে কাজল টেনে, সিঁথি ভর্তি সিঁদুর পরল। ঠোঁটে লিভ বাম পরে, কপালের মাঝখানে একটা ছোট্ট লালটিপ পরল। চুলগুলো শুকিয়ে নিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর কী মনে করে বেলকনিতে গেল। আবিরের গাড়িটা বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখে, সুপ্তির বুকের ভেতর কাঁপন ধরে গেল। একটা মাস মানুষটাকে দেখে না, মানুষটার মাদকতা মেশানো স্পর্শ গায়ে মাখে না সুপ্তি। মানুষটা গাড়ি থেকে নেমেই সোজা বেলকনির দিকে তাকালো। সুপ্তির বুক ধড়ফড় করে উঠল। আস্তে করে সরে গেল। আবির হেসে দিল, মনে হয়। সুপ্তি চুপটি করে কিছুক্ষণ বেলকনিতেই গাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মানুষটা বোধহয় এতক্ষণে বাড়িতে ঢুকে পরেছে। কী আশ্চর্য! মানুষটার সামনে যেতে এত লজ্জা লাগছে কেন? তৃণারানীর কন্ঠ ভেসে আসছে। ইতিমধ্যে তিন-চার বার সুপ্তির নাম ধরে ডেকেছে। আবির না কী এসে গেছে। সুপ্তি অতিরিক্ত লজ্জায় নিচে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। পা দুটো মনে হয় কিসে যেন টেনে ধরে রেখেছে। সুপ্তি ঘরের এককোণে, কাপড়ে আঙুল পেঁচিয়ে জড়োসড়ো হয়ে, অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল। হুট করে ঘরের দরজা খুলে গেল। সুপ্তি আবিরকে একপলক দেখে, লজ্জায় অন্যদিকে তাকাল। আবির দৌঁড়ে এসে, আচমকা সুপ্তিকে জাপ্টে ধরে শূণ্যে তুলে ফেলল। সুপ্তি ভয় পেয়ে দুচোখ বুঁজে ফেলল। অস্ফুট স্বরে বলল,
-‘ পরে যাব তো?
আবির আর একটু শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
-‘পরবে না। আমি আছি তো।
একমাসে মানুষটার চুলগুলো কী বড় বড় হয়ে গেছে। কয়েকদিনের না কামানো দাড়িতে দেখতে, অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আবির সুপ্তিকে নামিয়ে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-‘তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে বউ।
আবিরের মাদকতা মেশানো কণ্ঠে ‘বউ’ ডাক শুনে, সুপ্তির সারা গা শিরশির করে উঠল। আবির গলায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বলল,
-‘আমি স্নান সেরে আসি। দুজন একসাথে ভরপেট খেয়ে, লম্বা একটা ঘুম দেব। উফ্.. কতগুলো দিন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই না বউ।
সুপ্তির পেটের ভেতর কী যেন কামড়ে ধরল। মানুষটা দূরে গেলেও বিপদ, কাছে থাকলেও বিপদ।

(চলবে)