#দ্যা_লায়ার
#পর্ব_এক
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী
“সিদ্ধান্ত”
-মৌ.. মৌ প্লিস এমন কোরো না। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে এসব কেউ মানে না..
-সারা ইউনিভার্সের কেউ মানে কিনা জানি না। তবে আমার ফ্যামিলি মানে..
-বেশ! মানুক..কিন্তু একবার বিয়ে হয়ে গেলে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। হয়ত প্রথম দিকে মানবে না। পরে ঠিক রাগ পড়বে। আফটার অল মেয়ের খুশিটা আসল। এই বেকারত্বের বাজারে আমি কিন্তু খারাপ ছেলে নই। সরকারি না হলেও ভালো মাইনের চাকরি করি।
-ব্যাস..তোমার বলা শেষ হয়েছে? আমি এবার বাড়ি যাব।
-এই মৌ..এটা কী ধরণের কথা। দাঁড়াও..আর একটু থাকো।
-আমি এখানে মিউচুয়াল ব্রেকআপ করতে এসেছি। আমি সম্পর্ক ভাঙার কারণ বলে কিংবা তোমাকে চোখে আঙুল দেখিয়ে এই সম্পর্ক থেকে অব্যাহতি চাইছি। এর পরে পিছু ডাকার কী কারণ থাকতে পারে??
দাঁতে দাঁতে চেপে ধীরে ধীরে কথাগুলো উচ্চারণ করল মেয়েটা।
এতক্ষণ ঠান্ডা মাথায় অনুনয় করলেও এবার মেজাজ হারাল ছেলেটা।
-তুমি ভেবে বললে কথা গুলো? এবার আমি কিন্তু অন্য রূপ দেখাব..
ছেলেটার অভিব্যক্তিতে ভয় পেল মৌ।
নিশব্দে ঢোক গিলে বলল,
-কী করবে তুমি?
-দেখবে আমি কী করতে পারি?
মৌয়ের কব্জি ধরল ছেলেটা। আতঙ্কে দুই চোখ স্থির হল মৌয়ের..
-কী করছ?
-নিচের গভীর জলরাশি দেখতে পাচ্ছো? চলো ওখানেই ঝাঁপ দিই।
-পাগল নাকি! যাও বাড়ি যাও..
-মৌ, বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব। মরলে একসঙ্গে মরব।
***
প্রায় আশি বছরের “নীরবের বাণীতে” তখন পশ্চিমে ঢলে যাওয়া সূর্যের শেষ আভা পড়েছে। আর কিছুক্ষণ পর ঝুপ করে সন্ধ্যা নামবে। পাড়ার ছেলেরা খেলা গুটিয়ে নিচ্ছে। কোনো মা বইয়ের ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে সন্তানকে সাথে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছে। পাড়ার কাকিমাদের জটলায় এবার উঠি উঠি রব। শুধু নীরবের বাণীর সদস্যদের উপস্থিতি নেই। এই সময় বাড়ির গিন্নীও জটলায় অংশগ্রহণ করে। আজ সদর দরজা বন্ধ। কাকিমারা বৈঠক ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। সকলের মধ্যে সন্ধ্যা আরতির তাড়া।
-মিমির মা আজ বের হয় নি কেন? শরীর টরীর খারাপ নাকি..
বক্তার গলায় উদ্রেগ।
-না না শরীর খারাপ হতে যাবে কেন? মিমির মায়ের ভাইপোর মেয়ে হয়েছে বলল না..ওর জন্য কিছু কেনাকাটা করতে গেছে। দুপুরে ভুলুকে ভাত দেবার সময় দেখা হল। তখন বলল..
বক্তাকে আশ্বস্ত করল একজন।
-ও হ্যাঁ ওর ভাইপোর অনেকদিন বিয়ে হয়েছে। দশ বছর পর বৌটার বাচ্চা এল না। কী সব রোগ ছিল কী জানি.. যাক একটা ছেলেপুলে তো হল..
-এদের সব কিছু দেরিতে..দেখছ না মেয়েটার বিয়ে দেওয়ার নাম অব্দি করছে না।
-সেই..
বাকিরা একসঙ্গে হেসে বাড়ির পথ ধরল।
রায় বাড়ির ছোট রাজকন্যা সবে চোখ খুলেছে। খুলে নিজের পরিচয় নিয়ে সন্দিহান ভাবছে আমি কে? কিছু ক্ষণের মধ্যে নিজের উত্তর পেল। আমি কোথায়? বুঝল সে বিছানায় শুয়ে আছে। শুয়ে শুয়ে লম্বা হাই তুলল। তারপর স্মরণে এল সে বেলা দুটো থেকে শয্যা নিয়েছে। আবার চোখ বন্ধ করে সুর ধরে ডাকল…
“ম্যাআআআ”
বাইরে থেকে কোনো সাড়া পেল না। পুনরায় সুর ধরল,
-মাআআ ওমাআআআ..
-ছাগী বাজারে গেছে। ছাগল ঘরে আছে..বলুন ছাগলছানা আমি আপনার কী কাজে লাগতে পারি?
ঘুম চটকে গেল মিমির।
-ও বাজারে গেছে..
-অনেকক্ষণ এসি চলছে। আমি বন্ধ করতে পারি?
-ওফফ..বাবা তুমি না বিরক্তকর..কটা বাজে কটা? ফোনটা চার্জ হয়েছে? দাও তো..
-বাজে! তোর কুঁড়েমি দেখে আমার সারা শরীর বাজছে..
-ধুর!
রিমোর্টে এসির সুইচ অফ করে বিছানা ছাড়ল মিমি।
প্ল্যাগ থেকে ফোনের সংযোগচ্যুত করে মায়ের নম্বর ডায়াল করল মিমি।
**
প্রায় দশটা জামাকে সরিয়ে রেখে হলুদ ও লাল রঙের দুটো কার্টুন আঁকা ফ্রক বাছালো মৌসুমী।
-দাদা আমি এই দুটো জামা নেব। কত দিতে হবে বলুন?
-জামা গুলোর কোয়ালিটি দেখেছেন! একদম মাখন..
-সব দেখলাম। সব বুঝলাম। এবার দামটা বলুন..
-দেখি কত লেখা আছে..
দোকানদার জামাদুটোর দাম দেখল। তারপর বলল,
-দেড়শো করে তিনশো হয়। আপনি দুশো আশি দিন।
-কী! আমি দেড়শ টাকার কমে এক টাকায় দেব না।
বিস্ফোরক দৃষ্টিতে তাকাল দোকানদার। দোকানের সহকারি ছোকরা টুলের উপর চেপে বাইরের হোল্ডারে বাল্ব লাগাচ্ছিল। সে ও কাজ থামিয়ে মৌসুমীর দিকে তাকাল।
-দেড়শ! বলেন কী!
-আমি এক টাকা বাড়াব না।
-কাকিমা কী বলেন! হাফ দাম যে..
-এই কাকিমা কাকে বলছ? আমার কম বয়েসে বিয়ে হয়েছে তাই মেয়ে বড় হয়েছে। নাহলে আমার কী এমন বয়েস!
সহকারি ছেলেটা এদিক ওদিক তাকায়ে মৌসুমীর মেয়েকে খুঁজল। পেল না।
-হ্যাঁ দিদি..বউনি সময় ঠিক করে দাম বলুন।
বউনি কথাটা শুনেই খুশি হল মৌসুমী।
-দেখো ভাই দিলে ওর মধ্যে দাও নাহলে আমি অন্য দোকানে যাচ্ছি।
টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মৌসুমী।
-কাকিমা..ধুর.. দিদি..আর কুড়ি টাকা দিয়ে নিয়ে যান নাহলে আমার লস হয়ে যাবে।
-আমার লস করে নিলে..
আবার টুলে বসল মৌসুমী। ব্যাগে দুশো টাকা থাকলেও গুনে গুনে খুচরো একশো সত্তর টাকা দিল। পাছে ফেরত না দেয়। টাকা মিটিয়ে জামগুলোকে বগলদাবা করে দোকানের বাইরে এল মৌসুমী। মুখাবয়বে তখন জিতে যাওয়ার আনন্দ। ফোনটা বেজে উঠল সেই সময়..
ব্যাগ থেকে বের করে ধরতে বেশ বেগ পেতে হল।
-বল..
-শোনো..একদম মন দিয়ে শোনো..আমি হোয়াটস অ্যাপে একটা টিশার্টের ছবি পাঠিয়েছি। ওটা বাজার ফ্যাশন থেকে নিয়ে আসবে। দুটো নেবে। একই যেন হয়।
-দুটো!
-হ্যাঁ একটা আমার আর একটা তানির..
-আবার ওর জন্য কেন?
-আমি পরব। আর ও তাকিয়ে দেখবে? ওর টিশার্টের টাকাটা আমি দিয়ে দেব। অত ভেবো না। এনো কিন্তু..
ফোন ছেড়ে দিল মিমি।
-আবার তানিষ্ঠার জন্যও নিতে হবে!
সাথে সাথেই মুখাবয়ব থমথমে হয়ে উঠল মৌসুমীর। আজকাল মেয়েটাকে মোটেও সহ্য হয় না।
চলবে: