দ্যা লায়ার পর্ব-০২

0
5

#দ্যা_লায়ার
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী
#পর্ব_দুই

কাঠগোলাপ

সূর্য অস্ত গেছে অনেকক্ষণ। আশে পাশের বাড়ি গুলো থেকে শঙ্খধ্বনি ভেসে আসছে। স্ট্রিট লাইট গুলো ডিউটি পালন করছে। আকাশ জুড়ে কালো পরত। তার মধ‍্যেই নক্ষত্রেরা অভ্রের মতন জ্বলজ্বল করছে। আচ্ছা আকাশে কত গুলো তারা আছে? জানলাতে মুখ বাড়িয়ে ছিল মিমি। শঙ্খধ্বনির শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল। মনে মনে উচ্চ শব্দমাত্রার তারিফ না করে পারল না। আবার বিছানাতে এসে বসল। তখনো হাই ওঠা বন্ধ হচ্ছে না। একটা বালিশে হেলান দিল। ডাইনিং রুমের পেল্লাই ঘড়িতে ঢং ঢং করে সাতটা ঘন্টা সঠিক সময় জানান দিচ্ছে।
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল বিজন। পায়ের উপর পা চাপিয়ে মুঠোফোনে রিলস দেখছে মিমি। ভর সন্ধ্যায় মেয়ের এমন কার্যকালাপে সে বিরক্ত।
-তুই এখনো বসে?
-কেন কী করব?
-কী করবি মানে? বসার ঘরে দুই জন পড়তে চলে এসেছে।
-ওও..চলে এসেছে? কটা বাজে?
উত্তর না দিয়ে বেজার মুখে তাকাল বিজন। মাঝে মাঝে আপন আত্মজাও বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। বাবার বিরক্তিতে কিঞ্চিৎ ভীত হল মিমি।
-চলো চলো গিয়ে দেখি..
মৌন থেকেই ঘর থেকে বেরল বিজন।
-মা কখন আসবে? খিদে পেয়েছে।
পঁচিশ বছরের মেয়ের এহেন কথায় বিরক্তি উবে দুই চোখ ফেটে জল আসতে চাইল ।দিনদিন মেয়েটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
-আগে যেমন চা করতিস এমনি কর না..দুই বাপ বেটিতে খাই।
-আমি ওসব ভুলে গেছি। আমার ভালো লাগে না বাবা।
গা ছাড়া ভাব মিমির।
-মিস মিস তোমার জন‍্য ফুল এনেছি।
-আমিও এনেছি..
ক্লাসে ফাইভের দুইজন খুদের হাতে ফুল ধরা। একজনের হাতে কাঠগোলাপ আর অন‍্যজনের হাতে রঙ্গন। কাঠ গোলাপটাকে নাকের সামনে এনে ঘ্রাণ নিল। স্বল্প হাসি ফুটল ওষ্ঠে।
-দেখলি আমার ফুলটা বেশি পছন্দ হয়েছে। আমি জানতাম..
বক্তার বাণীতে অন‍্য জনের মুখ তখন চুন।
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করল মিমি।
-এই না..আমার রঙ্গন ফুলও খুব ভালোলাগে। তোরা এখন যা..রিড কর। আমি যাচ্ছি।
-মিস আমাদের স্কুলের টিচার্স চুলে ফুল দেয়। তুমি দাও না কেন?
-আমার ভালো লাগে না..তোরা গিয়ে পড়। একটাও যদি ভুল হয় না..পিঠে লাঠি ভাঙব।
মিমির শেষ কথায় তেজ। ভয়ে দুজন পড়ার জায়গাতে গেল।
মুখ চোখে জল নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে বিস্কুটের কৌটা হাতড়াতে থাকল।
-কী লাগবে বল? দিয়ে দিচ্ছি।
-না আমি জানি..আমি জানি বিস্কুট কোথায় আছে।
জোর করে মুখে হাসি টেনে তিনটা বেকারির বিস্কুট হাতে নিয়ে চলে গেল মিমি।
সেই দিকে তাকিয়ে থাকল বিজন।
-বুঝি রে মা..আমাদের উপর প্রতিশোধ নিতেই তুই নিজেকে কষ্ট দিস। তোর মা যে কেন বুঝল না..

এক হাতে সবজি বাজার ও অন‍্য হাতে জামা কাপড়ের প‍্যাকেট নিয়ে টোটো থেকে নামল মৌসুমী। কাঠের দু পাল্লা দরজা খোলা দেখে মেজাজ হারাল। দরজায় পা যেতেই বুঝলো দুটো কুকুর উঠোনে ঘোরাঘুরি করছে।
-এই হ‍্যাট হ‍্যাট..সদর দরজা হাট করে খোলা কেন?
চিৎকার করল মৌসুমী।
ওর চিৎকারেও বাড়ির কেউ বেরিয়ে এল না। এমনকি বাইরে কেউ লাইট জ্বালিয়ে দিল না। হালকা আলোর উপর ভর করে প্রধান দরজার সম্মুখে দাঁড়াল। বাইরে দুই জোড়া ছোট সাইজের চটি দেখে বাড়ির ভিতরের উপস্থিত সদস‍্যদের চিনে নিল মৌসুমী। মেয়ের টিশার্ট খুঁজতে খুঁজতে নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়েছে। ঘরে এসে এমন দৃশ‍্য দেখে মেজাজ সপ্তমে উঠল।
দুই হাতে ব‍্যাগ নিয়ে সটান মৌসুমী পৌঁছালো পড়ানোর জায়গায়। মাকে দেখে আনন্দিত হয়ে কিছু বলার আগেই মৌসুমী শুরু করল।
-অ‍্যাই তোরা ঘরে ঢোকার সময় গেট বন্ধ করতে পারিস না। কুকুর হেগে দিলে কে পরিষ্কার করত?
-আমরা তো গেট ঠেসিয়ে এসেছি।
দুই খুদে এক যোগে বলল।
-এই মিথ‍্যা কথা বলিস না! দরজা খোলা ছিল।
মৌসুমীর চিৎকারে ভয় পেল দুজন।
-তুমি ওদের ওপর চোটপাট করছ কেন? ওরা তো বলল দরজা ঠেসিয়ে এসেছে। হয়ত গেট ঠেলে কুকুর ঢুকেছে। কাল থেকে বন্ধ করে আসবে।
-উঠোন অন্ধকার। কখন থেকে ডাকছি কারুর সারা শব্দ নেই। এদিকে সারা ঘরে আলো জ্বলছে। বাবার বিয়ে লেগেছে যেন..
গজগজ করতে করতে অন‍্য ঘরে গেল মৌসুমী। বাজারের থলি ও প‍্যাকেট গুলো ধপ করে নামিয়ে বাথরুমে যাচ্ছিল। আবার জ্বলে উঠল।
-একি ঠাকুরের শাঁখ এখানে কেন?
-ও তুমি এলে?
ভয় পেল বিজন।
-না এলে ভালো হত নাকি! এখানে শাঁখ কেন? জানেনা শাঁখ ঠাকুরের সিংহাসনে থাকে।
গলা তুলল মৌসুমী। যাতে পড়ার ঘর অব্দি সেই শব্দ যায়।
-মিমি না, আমি ওখানে রেখেছি।
-তুমি কেন? মিমি..
-আমি সন্ধ‍্যা দিয়েছি যে..আমি ভাবলাম মিমির হয়ত বাধা পড়েছে তাই..
-ঐ সকল কিচ্ছু না। সব কিছু কুড়েমি। বসে বসে বাপ-মায়ের অন্ন ধংস করবে…
মায়ের চিৎকার মিমির কানেও গিয়েছিল।মাথা ঘামাবে না বলেই দরজায় ছিটকানি দিয়ে দিল। নতুন টিশার্ট দেখার আনন্দ মরে গেছে।
আধ ঘন্টা পর:
-মিমিই..
সবে এক কাপ চা নিয়ে বসেছিল মৌসুমি। সুরেলা আওয়াজ কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। সহজেই মস্তিষ্ক বক্তাকে চিহ্নিত করে ফেলল।
-এই আবার এলেন..
উল্টো দিকে চা খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল বিজন।
-এই মিমি..
বক্তা ঘরের মধ‍্যে প্রবেশ করল।
পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে দরজা খুলে বাইরে এল মিমি।
-তুই আজকেই এসেছিস.. সারপ্রাইজ তো!
মিমির মুখে চওড়া হাসি।
-এসেছি সাথে নেপালী মোমো এনেছি। ও কাকিমা আমাদের চারটা করে আর তোমরা দুটো করে নিও।
মৌসুমী ততক্ষণে সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে।
-খাব, আগে এদের ছুটি দিয়ে নিই..
দশ মিনিটের মধ‍্যে ছুটি দিয়ে জামার প‍্যাকটেটা নিয়ে নিজের ঘরে গেল মিমি। সাথে প্রাণের সখী।
-দেখলে তোমার মেয়ের মুখে কত হাসি!
-হ‍্যাঁ তানিষ্ঠা এলে মিমি খুশিই হয়।
-একটু বেশি খুশি হয়। হাসি আর ধরে না..
প্লেটে মোমো সাজানো শেষ হল মৌসুমীর। দুটো প্লেট নিয়ে মিমির ঘরের অভিমুখে গেল।
দরজা ঠেসানো। কনুই দিয়ে ঠেলে ঢুকলো। ঘর জুড়ে আলো আঁধারি খেলা। বিছানায় দুজনকে দেখে চমকে উঠল।
-অ‍্যাই তোরা কী করছিস?
চলবে: