দ্যা লায়ার পর্ব-০৫

0
8

#দ্যা_লায়ার
#পর্ব_পাঁচ
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী

** স্বীকার **

বাইক চলছে। এই পথ মৌসুমীর চির পরিচিত। ক্ষেতের ধান গাছ গুলো হাওয়াতে দুলছে। সৌর কিরণে পাকা ধানের সিস গুলোকে অধিক উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। ওদের সৌন্দর্য মৌসুমী মনে দোলা দিচ্ছে না। মেয়ের বিয়ের দু শ্চি ন্তা সর্বক্ষণ মস্তিষ্কে জেঁকে বসে থাকে। আজকালকার দিনে পঁচিশ খুব বেশি বয়স নয়। মানুজন চল্লিশ পঞ্চাশেও বিয়ে করছে। দুশ্চিন্তা মেয়ের মতি গতি নিয়ে…বন্ধু সবার থাকে। কিন্তু তানিষ্ঠার সঙ্গে বন্ধুত্ব কেমন যেন মাখোমাখো। দেখলেই অ স্ব স্তি হয়। ফেসবুকে ওসব অনেক দেখা যায়। হঠাৎ করে ছেলেরা মেয়ে হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা ছেলে…
আমার মিমিও যদি…আর ভাবতে পারে না মৌসুমী। আ ত ঙ্কে দুই চোখ বন্ধ করে।
-কাকিমা এবার কোন দিকে?
ছেলেটার কথায় পুনরায় বাস্তবে ফেরে মৌসুমী। চোখ খুলে সামনের দিকে তাকায়। ততক্ষণে ছেলেটা গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে পিছনে তাকিয়েছে।
-কিছু হয়েছে কাকিমা? পিছনে বসে কোনো সাড়া শব্দ নেই। শরীর খারাপ?
-না না বাবা…আমি ঠিক আছি। বামদিকের রাস্তাটা ধরো। আর কয়েক বাড়ির পর আমাদের বাড়ি।
-ঠিক আছে…
মৌসুমীর নির্দেশ মতন নির্ধারিত বাড়িতে নামালো সৈনাক।
-আমার অনেক উপকার হল।
ব্যাগ নামিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল মৌসুমী।
-কাকিমা…
পিছু ডাকল সৈনাক।
-কিছু বলবে?
-কোনো কারণে আপনাকে টেনস্ দেখাচ্ছে। সাবধানে থাকবেন। কিছু ওষুধ থাকলে মিস করবেন না।
মুগ্ধতায় ঘাড় হেলাল মৌসুমী।
আসি বলে চলে গেল সৈনাক।
-আমার মাও এমনটা করে।
শেষে এই বাক‍্যটা উচ্চারণ করল।
-সাবধানে যেও..
পিছন থেকে চিৎকার করল মৌসুমী। যদিও সেই শব্দ সৈনাকের কান অব্দি পৌঁছাল না। সদর দরজা পেরিয়ে প্রধান দরজায় এসে ব‍্যাগ নামাল মৌসুমী।
দরজার বেল বাজাল। এক বার বাজিয়ে ক্ষান্ত হল না। পুনরায় বাজাল। দরজা খুলল মিমি। খুলেই ঘরে চলে গেল। আগে এমন অবস্থায় বাজারের ব‍্যাগ গুলো হাতে নিত মিমি। মাকে চেয়ারে বসিয়ে সামনে জল এগিয়ে দিত। এখন ওসব অতীত।
অন‍্য সময় হলে ঠেস মেরে কথা শোনাত মৌসুমী । আজকাল আর ভালো লাগে না। এক ঝলকে সৈনাক ছেলেটাকে বেশ লেগেছে। যদিও প্রথম দর্শনে মানুষকে চেনা যায় না।
-শেষমেশ ছেলেটাকে ঘোষ হতে হল!
আক্ষেপ নিয়ে বোতলের জলটা গলায় ঢালল মৌসুমী। তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকল। বাজার হাট করে এসে স্নান না করলে মৌসুমীর চলে না।
***
গায়ে জল ঢেলে বাইরে এল মৌসুমী। সামনেই মিমিকে সুসজ্জিত অবস্থায় দেখল। আজ মিমির প্লে স্কুল ছুটি। সকাল থেকে ঘরেই ছিল। এখন কোথায় যাবে?
প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করলেও মস্তিষ্ক বাধা দিল।
-জেরক্সের দোকানে যাচ্ছি। একটা কাজ আছে..
অন‍্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল মিমি।
-বারোটা চল্লিশ বাজে। দুপুরে কখন খাওয়া হবে?
ভাববাচ‍্যে জিজ্ঞেস করল মৌসুমী।
-তাড়াতাড়ি ফিরব..
দ্রুততার সাথে বাইরে বেরল মিমি। মনে অসংখ্য কৌতূহল চেপে রান্নাঘরে ঢুকল মৌসুমী । একবার ফুটিয়ে রাখার ভাতের হাঁড়ি আবার গ‍্যাসে বসাল।
***
দুপুরে ঘুমায়নি মিমি। বিকেল হতেই উশখুশ করতে থাকল। বাবার আসার অপেক্ষা করছে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরল বিজন। গাড়ির আওয়াজে ঘর থেকে উঠোনে পৌঁছাল মিমি।
-বাবা..
-কিছু বলবি?
-হ‍্যাঁ।
-কী বলবি বল..
বাবার সাথে পায়ে পায়ে ঘরে ঢুকল মিমি।
-তানি আজ ঘরে আসবে। আমার রিকোয়েস্ট ওকে যেন আর অপমানিত হতে না হয়।
-ও এ কথা বলার জন‍্য এত তাড়া! বাপটাকে ঘরে একটু জিরতে দে।
রা গ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারল না মৌসুমী।
-বাবা তুমি কী বলছ?
-দাঁড়া ঘরে বসি।
-বল্লাম না..এই মেয়ে আমাদের শান্তি দেবে না। আমরা ম র লে এবার বাঁচি..
-তুমি চুপ করো। শুনতে দাও ও কী বলছে। রোজ রোজ একই অ শা ন্তি ভালো লাগে না।
-হ‍্যাঁ আজ আমি সব পরিষ্কার ভাবে বলি।
দেখো বারবার বলতে বলতে আমি ক্লান্ত। আমি বিয়ে করব না। আমি কোনোদিনই কাউকে বিয়ে করব না।
-কেন জানতে পারি? তোর কি নতুন কারুর সাথে সম্পর্ক হয়েছে?
হাসল মিমি।
-তোমরা থাকলে সেটা কী ভাবে সম্ভব। না আমার জীবনে নতুন কেউ নেই..পুরনো মানুষ আছে। তানি..ও কাছে থাকলে আমার কোনো দুঃখ কষ্ট থাকে না। তোমরা আমাদের এই সম্পর্কটাকে মেনে নিতে পারবে না। তাই আমরা দুই জন ঠিক করেছি বিয়ে করব না। কিন্তু একে অন‍্যের সাথে থাকব..
-কী বলছিস তুই? একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক! সম কামী?
-হ‍্যাঁ সমাজ এই সম্পর্ককে গাল ভরা নাম দিয়েছে।
বাবার প্রশ্নে স্মিত হাসল মিমি।
-আমি এক সময় সু সা ই ড করতে যাচ্ছিলাম। তানি না থাকলে আমাকে জীবিত খুঁজে পেতে না। যাইহোক তোমারা এসব বুঝবে না। তোমাদের কাছে সমাজ আগে.. জাতের অহংকার আগে…
-আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
-সব তো পরিষ্কার করে বললাম বাবা। আমাকে বিয়ের ব‍্যপারে জোর কোরো না। নাহলে, হয় আমি নিজেকে শে ষ করব। নয় বাড়ি থেকে চলে যাব।
গটগট করে ঘরে ঢুকল মিমি।
মেয়ের কথায় চোখের জলে ভাসছে মৌসুমী। আজ সত‍্যিটা তাহলে বলেই দিল।
-ও কী বলে গেল মৌ?
-আজ বুঝতে পারছো কেন আমি তানি মেয়েটাকে সহ‍্য করতে পারি না।
ফোপাচ্ছে মৌসুমী। সান্ত্বনা দিতে স্ত্রীকে আলতো আলিঙ্গন করল বিজন।
-সেদিন যদি সবটা মেনে নিলে আজ এই দিন আসত না মৌ।
স্বামীর বুক থেকে মাথা তুলল মৌসুমী।

***
নাদুসনুদুস বাচ্চার মতন ধীর গতিতে বাস চলছে। কখনো মাঝ রাস্তায় গতি থামিয়ে দিচ্ছে। যাত্রীদের চিৎকারে আবার চলতে শুরু করছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল মৌসুমী। বাস একটু ফাঁকা হতেই জানলার ধারে জায়গা পেল। বাপের বাড়ি যাচ্ছে মৌসুমী। ভাইপোর মেয়েকে দেখতে যাওয়া হয়নি। মিমিও যেত। এখন পরিস্থিতি অন‍্য…এক বারের জন‍্য যেতেও বলেনি মৌসুমী। বিকেলের বাস ধরেছে মৌসুমী। ঠিকমত বাস এগোলে সন্ধ্যা সাতটার মধ‍্যে পৌঁছে যাবে। জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিল। চারিদিকে তখনো বেশ আলো। একটা মন্দির হুশ করে পেরিয়ে গেল। করজোড়ে প্রণাম করল মৌসুমী।
-হে ঈশ্বর পথ দেখাও। আমি আর এই টেনশন নিতে পারছি না।
-কাকিমা আপনি?
সিটের সামনে সৈনাককে দেখে অবাক হল মৌসুমী।
-তুমি এখানে?

চলবে: