দ্যা লায়ার পর্ব-০৭

0
22

#দ্যা_লায়ার
#পর্ব_সাত
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী

*ছবি ও ভবিষ্যত*

-এটা মানে?
উত্তর দেবে কী! তখনো ঘোর কাটছে না মৌসুমীর।
-হ‍্যাঁ আমি বাবা শুনছি। বলো এটা কে?
-এটা..
আকস্মিক প্রশ্নে খেই হারাচ্ছে মৌসুমী। মিমি কী ভাবে জানল সেটাই সবচাইতে বড় প্রশ্ন।
-আমতা আমতা করছো কেন? পরিচয় দাও এই ছেলেটার..
মিমির এই বারের প্রশ্নে টনটনে জ্ঞান ফিরল মৌসুমীর। মেয়ে তাহলে বাঁকা ইঙ্গিত করছে!
-এই তুই কী বলছিস? তোকে আমি কৈফিয়ত দেব?
মায়ের ঝাঁঝে একটু মিইয়ে গেল মিমি। মৌসুমী দেখল বিজন হাঁ করে ওদেরকে দেখছে। দৃষ্টিতে সন্দেহ নেই। ছাব্বিশ বছর ঘরকরা বৌ। এত দ্রুত মনে সন্দেহ আসবে না। তবে দৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন।
শুধুমাত্র স্বামীর প্রশ্নের উত্তর দিতে বলল,
-এই ছেলেটা আমাকে হাটের দিন দুটো ব‍্যাগ সমেত ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল। ফেরার সময় আজ আবার দেখা হল। খুব ভালো ছেলে।
এবার যেন কিছু কথা খুঁজে পেল না মিমি। তখন আবার তানিষ্ঠার কথা মাথায় এল। জেরা চালাতেই হবে। অন্তত প‍্যাঁচে ফেলতে হবে।
-একদিনের পরিচয়ে বসে চা খেতে হবে?
” ওরে শ য় তা নি নিজের জ্বালা মেটাতে মাকে অপদস্ত করছিস?”
ক্রোধ সংযত করল মৌসুমী। তুই কি আমার জন‍্য গোয়েন্দা লাগিয়েছিস? তাহলে বলব, একদম বেকার গোয়েন্দা। কোনো খবর ঠিক করে দিতে পারে না।
বল বিপক্ষের কোর্টে চলে যাচ্ছে বুঝে কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল মিমি।
-তুমি আবার সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে আছে কেন? চা খেয়েছ?
-কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঠোঁট উল্টালো বিজন। স্থির হয়ে তাকালো মৌসুমী।
পেটের শত্রুর মুখে নুড়ো জ্বেলে দিতে ইচ্ছে করছে।
খাওয়ার সময় মুচকি হাসি লেগেছিল মিমির মুখে। খাবার গলা দিয়ে নামল না মৌসুমীর।
“যতদিন এই মেয়ে থাকবে ততদিন আমার হাড় মাস জ্বালিয়ে খাবে। ওর বেয়াদবি মানলে আমি ভালো মা হয়ে যেতাম। সাময়িক ভালো মা হওয়ার চেয়ে ওর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে আমি বেশি আগ্রহী। সেই কারণে খারাপ মা তকমা পেতে হলেও আমি তোর ভালোই করব। তোর ভালোটা দেখব”
শুয়েও ঘুম এল না মৌসুমীর। নিজের জাত নিয়ে কত অহংকার। যেমন বাপের বাড়ি, তেমন শ্বশুরবাড়ি। দুই তরফেই উচ্চ বংশ। পাড়ার লোকেরা সমীহ করে চলে। পৈতৃক সূত্রে বিজনকেও পাড়ায় চক্কোতি বলে। পুজোর ভোগ রান্নাতে সবসময় ওদের হাঁক পড়ে। নিজের দর বাড়ায় মৌসুমী। অন‍্যেরা সাধাসাধি করে। মুখ টিপে হাসে মৌসুমী আর ওর খুড়তুতো জা। এযুগে দাঁড়িয়েও শুধুমাত্র পদবী ও উচ্চ বংশের কারণে অন‍েক অগ্রাধিকার পায়। তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগও করে মৌসুমী। আজ নয়, সেই ছোট বেলা থেকেই..সহজ নয়, মোটেও সহজ নয় সেই সকল বাড়তি পাওয়া গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া। পান থেকে চুন খসলেই যেখানে মুখে কালি পড়ে সেখানে অন‍্য জাতের ছেলেকে জামাই হিসাবে বরণ করলে লোকে গায়ে অদৃশ্য থুথু ছেটাবে। আড়ালে পাঁচ-সাত করবে। কিন্তু মেয়ে অন‍্য একটা মেয়ের সাথে সংসার পাতলে মানুষজন একঘরে করবে। এই সকল মেনে নেওয়ার মানসিকতা দেবানগঞ্জের মানুষজনের হয়নি। তাই প্রথম বিকল্পটা নির্বাচনটা করা বুদ্ধিমানের..
অকাতরে ঘুমাচ্ছে বিজন। সর্তক ভাবে বিছানা থেকে নামল মৌসুমী। জানলার বাইরের ক্ষীণ আলোর অভিমুখে তাকাল।
“দেরি করব না। আমি কালকেই সৈনাককে ফোন করব। ঐ ছেলেকে আমার মনে ধরেছে। যদি ঐ ছেলের প্রেমিকা থেকে থাকে তাহলে আমি অন‍্য ছেলের খোঁজ করব। ওকে সঙ্গে নিয়েই করব”
সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল মৌসুমী। সেই সাথে প্রায় পাঁচ কেজির বোল্ডার বুকে চাপিয়ে নিল।
সকাল হল..সূর্য তার উপস্থিতি জানান দিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সমগ্র পক্ষীকূল বিচরণে বেরিয়েছে।
অনেক আগে বিছানা ছেড়েছে মৌসুমী। সারারাত দুই চোখের পাতা এক করেনি। রাত থেকে ভোর, ভোর থেকে সকাল হওয়ার সাক্ষী থেকেছে মৌসুমী। চোখ জ্বলছে, তার থেকেও বেশি জ্বলছে মন। বারংবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আটটা বাজলেই ফোন করবে। কাল রাতেই মেসেজ করেছিল মৌসুমী। অদ্ভুত ভাবে রাতেই মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছে সেই ছেলে। আটটার পর ফোন করতে বলেছে..
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্ধারিত সময় এল। পেল্লাই ঘড়িতে ঢং ঢং করে আটটার ঘন্টা বাজল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সৈনাকের নম্বর ডায়াল করল।
অপর প্রান্ত ঘুম লেপ্টে থাকা কন্ঠে বলল,
-হ‍্যালো..
-সৈনাক আমি। তোমার কাকিমা।
-হ‍্যাঁ কাকিমা বলুন। গুড মর্নিং..
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল মৌসুমী।
-আমার জীবনের কোনো ক্ষণই গুড হচ্ছে না।
-কেন কাকিমা?
-সৈনাক আমি একটা দরকারেই ফোনটা করলাম। তুমিও ভাববে এই কাকিমার উপকার করেই তুমি ভুল করেছো।
-না না, তা কেন? বলুন..
-আমি যা জিজ্ঞাসা করব তার সরাসরি উত্তর দিও কেমন। কোনো লজ্জা পেও না।
মৌসুমীর কথায় ধন্দ্বে পড়ল সৈনাক।
-তোমার প্রেমিকা আছে?
কোনো উত্তর দিল না সৈনাক। মৌসুমীর দুই চোখে তখন অন্ধকার।
-তারমানে আছে। তাই তো?
কথাগুলো উচ্চারণ করতে বুক ফাটলো মৌসুমীর।
-না..মানে আগে ছিল। এখন কোনো সম্পর্ক নেই।
মৌসুমীর মনে তখন ক্ষীণ আশা।
-আমার মেয়েকে বিয়ে করবে সৈনাক। ও দেখতে ভালো। স্বভাবেও ভালো। কিন্তু এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে তুমি ওকে ভালো বুঝতে পারবে।
অপর প্রান্তে তখন নিস্তবতা। বুকে দ্বিগুণ ভার রেখে সৈনাককে সময় দিল মৌসুমী।
-কাকিমা এখন আমি আটাশ। কর্পোরেট সেক্টরে ভালো মাইনের চাকরি করি। ঘরে তেমন কোনো অভাব নেই। বয়েস বাড়ছে। বাড়িতে বিয়ের জন‍্য তাগাদা দিচ্ছে। মা দুই-একজনের ফটো দেখাচ্ছে। তাই এই বিষয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।
-বেশ তাই বলব। তার আগে মেয়ের ছবি পাঠায়।
-হ‍্যাঁ পাঠান। তারপর না হয় মায়ের নম্বর দেব।
মিমির একটা ছবি পাঠাল মৌসুমী ।
আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর মায়ের নম্বর দিল সৈনাক।
বিকেল অব্দি অপেক্ষা করল মৌসুমী। কাজের মধ‍্যে বহুবার বাসনকোসন পড়ল, রান্নাও পুড়ল। ঘরের দুজন প্রাণী সন্দেহের চোখে দেখল। সেই সব পাত্তা দিল। বিকেল হতেই অনেকটা দম নিতেই সৈনাকের মায়ের নম্বর ডায়াল করল।
-নমস্কার। আমি মৌসুমী চক্রবর্তী। আমার একজন বিবাহযোগ‍্য কন‍্যা আছে। শুনলাম আপনিও নাকি ছেলের জন‍্য পাত্রী খুঁজছেন?
চলবে: