#দ্যা_লায়ার
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী
#পর্ব_আট
** পাকা দেখা**
-পাত্রী? কই না তো..
-খোঁজেন নি? আপনার..
সৈনাকের নাম মুখে আনতে গিয়েও থামল মৌসুমী।
-আমি একজনের কাছে খবর পেলাম।
-কার কাছে বলুন তো? আমার নম্বর কার কাছে পেলেন?
কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না মৌসুমী। অনেকটা ভেবে বলল,
-একজন ঘটক দিল।
-ঘটক! ছেলের বিয়ে দেওয়ার কথা আমি এখনো ডিক্লেয়ার করিনি। নাম কী ঘটকের?
জেরা শেষ হচ্ছেনা অপর প্রান্তের। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ছে মৌসুমী। কথা বলার ইচ্ছেটা চলে গেছে। অথচ ফোন রাখতে পারছে না।
-আচ্ছা রাখছি..ঘটক বোধহয় ভুল ঠিকানা দিয়েছিল।
তড়িঘড়ি ফোন কাটল মৌসুমী। চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। সৈনাক নামের ছেলেটা এই ভাবে মজার পাত্রী করল?
পাঁচ মিনিটের মধ্যে সৈনাকের নম্বর স্ক্রিনে ভেসে উঠল। ফোন কেটে দিল মৌসুমী। পুনরায় ফোন বেজে উঠল। আবার ফোন কাটল মৌসুমী। তারপর একটা মেসেজ ঢুকল। উপর থেকে দেখল সেই মেসেজে ইংরেজি বর্ণের সরি লেখা। সৈনাকের প্রতি ভালো লাগা, স্নেহ মন থেকে মুছে সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় রিপুর সৃষ্টি হল। সেই ক্রো ধ মিমির বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি।
কী ভাবে নিজেকে সামাল দেবে বুঝতে না পেরে ছুটে ঘরের দরজা বন্ধ করল মৌসুমী। মায়ের থমথমে মুখাবয়ব মিমির অন্তরে দু শ্চি ন্তার সৃষ্টি করল। মুখে কিছু প্রশ্ন করতে পারল না। বিজনের অভিমুখে তাকাল। বিজনের দৃষ্টি বলে দিল সে কিছু জানে না।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মৌসুমী। বেশ অনেক গুলো খাঁজ পেয়ে প্রায় সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছেছিল। একটা অযাচিত পাথরের আঘাতে আবার ভূমিতে ছিটকে পড়ল।
-ভগবান আমি শুধু মেয়ের ভালো চেয়েছি। মেয়ের ভালো ভবিষ্যতের জন্য আমি মেয়েকে নিন্ম স্তরে পাঠাতেও পিছপা হইনি। সেখানেও তুমি আমাকে নিরাশ করলে? কী চাও তুমি? এবার যে আমি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি। বিছানায় শুয়ে শিশুর মতন ফোঁপাতে থাকল মৌসুমী।
আবার ফোন বেজে উঠল মৌসুমীর। সৈনাকের ফোন অনুমান করে অত্যাধিক বিরক্ত হল। রা গ চরমে পৌঁছাছিল। স্ক্রিনের ভেসে ওঠা নাম দেখে ভ্রু যুগল নিকটবর্তী হল। সৈনাকের মা!
আবার কী জেরা করতে ফোন করছে? এখনো জিজ্ঞাসা শেষ হয়নি?
ফোন বেজে বেজে কেটে গেল। আবার বাজতে শুরু করল..এরপরে আর অভদ্র হতে পারল না। বিরক্ত গোপন করে ফোনটা কানে নিল।
-হ্যালো..
-আপনারা চক্রবর্তী না?
-হ্যাঁ..কেন?
মনে ক্ষীণ আশা পেল মৌসুমী।
-আমার বান্ধবী ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছে। ওরা চ্যাটার্জী। বয়েস উনত্রিশ বছর। আপনি আপনার মেয়ের জন্য দেখতে পারেন..
স্তব্দ হল মৌসুমী।
আপনার ছেলেকে পছন্দ হয়েছিল। তাই নিজের বর্ণের বাইরে মেয়েকে সমর্পণ করতে চেয়েছিলাম। বেশ অনেকটা নিরুপায় হয়েই। নাহলে এই মৌসুমী স্বপ্নেও এমনটা ভাবত না। এখন আবার আপনি আমাকে বিকল্প উপায় দিচ্ছেন? এতটাও ফেলনা আমার মেয়ে নয়।
-নাহ..এখন আমিও আর আমার মেয়ে দেব না।
-একবার দেখতে পারতেন। ছেলের সরকারি স্কুল মাস্টার।
ভালো মেয়ে খুঁজছে। আপনার সাথে হঠাৎ কথা হওয়ার পর আমার বান্ধবীর কথা মনে পড়ল..সেই কারণে প্রস্তাবটা দেওয়া। আমি আপনাকে ছেলের ছবি পাঠাচ্ছি। দেখে আপনার মতামত জানাবেন।
তখনো মৌন থাকে মৌসুমী।
-এটা আপনার হোয়াটস অ্যাপ নম্বর তো?
-হু..
-আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ভাবনার থেকেও দ্রুত গতিতে মোবাইলের নোটিফিকেশন ঢুকল। কে পাঠিয়েছে বুঝতে পেরে ফোনটা সাইডে রাখল। মনের মধ্যে দোলাচল চলছে। খুলবে কী খুলবে না..ভেবেই পাচ্ছে না। দরজা খুলে মুখে চোখে জল নিল মৌসুমী। বাপ-বেটির মধ্যে চরম কৌতূহল।
-কী হল এমন ভাবে তাকানোর কী আছে?
-তুমি ঠিক আছো? মানে তোমার শরীর টরীর ঠিক আছে?
-হুম ঠিক আছি। মাথাটা একটু ধরে আছে। আদা চা করি..
তোমারা কেউ খাবে?
-করো।
-আমিও খাব।
সাথে সাথে বলে মিমি।
টেবিলে তিন কাপ চা নামাল মৌসুমী। এক হাতে নিজের ভাগের চায়ের কাপ ও অন্যহাতে ফোনের স্ক্রিন দেখতে দেখতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল মিমি।
-মেয়েটা সত্যিই অন্যরকম হয়ে গেল।
আক্ষেপ বিজনের কন্ঠে।
অনুচ্চারিত থেকে চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিল মৌসুমী।
মনে মনে গুটি সাজাচ্ছে। ফটোটা অবশ্যই দেখবে। তবে রাতের দিকে..এত হ্যাংলা পনা করবে না।
পরিকল্পনা মতন রাতে ফটোটা দেখল। দেখে ভালোই লাগল। সত্যিই যদি এই ছেলের সাথে সম্বন্ধ এগোনো যায় তাহলে মন্দ কী!
একটা বাইরের ছেলের উপর রাগ করে এমন পাত্র হাতছাড়া করতে পারিনা। দেখিনা কেমন হয়।
পরের দিন সকালেই ভদ্রমহিলাকে ফোন করল।
***
-শোনো পরের রবিবার ঘরেই থেকো। বাজার থেকে মিষ্টি ফল টল এনো।
-আবার কে আসছে?
-পাত্রপক্ষ..
-তুমি আবার শুরু করলে?
-তাহলে কী করব? আসতে বারণ করে দেব? তুমি মেয়ের উচ্ছেন্নে যাওয়া বসে বসে দেখবে?
একমাত্র ছেলে..স্কুল টিচার..
-মিমি যদি আবার ঝামেলা করে? তাছাড়া এমন করে বিয়ে দিলে কি মেয়েটা সুখী হবে?
-এবারে বিয়েতে রাজি করানোর শেষ অস্ত্র আমার কাছে আছে..
***
বিকেলে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল তানিষ্ঠা।
মিমির কাছে না গিয়ে সটান রান্নাঘরে..
-কাকিমা এটা কী হচ্ছে?
নারকেলের মিষ্টিতে পাক দিচ্ছিল মৌসুমী। জোরে জোরে খুন্তি নাড়তে থাকল।
-মেয়েটাকে কী একে বারেই মে রে ফেলবে? বিয়ে-বাচ্চা ছাড়া তোমাদের মাথায় কিছু ঢোকেনা বলো?
সাড়াশব্দ না দিলেও কড়াইতে খুন্তির নাড়ানোর শব্দ আরো বৃদ্ধি পেল। সেই শব্দ বলে দিচ্ছে মৌসুমীর অভিব্যক্তি।
মেজাজ চরমে পৌঁছাছে তানিষ্ঠার..পায়ে পায়ে উপস্থিত হয়েছে মিমিও।
-যেখানে আমি আর মিমি বলছি আমরা একটা সম্পর্কে আছি। আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি সেখানে তুমি ওর বিয়ে ঠিক করো কোন সাহসে?
মৌসুমীর হাত সহজাত ভাবে উঠে তানিষ্ঠার গাল স্পর্শ করল। শুধু স্পর্শ নয়। স্পর্শের প্রমাণ রেখে দিল। পাঁচটা আঙুলের ছাপ বলে দিচ্ছিল সেই স্পর্শের তীব্রতা।
-তুমি আমাকে মা র লে?
রা গে কাঁপছে তানিষ্ঠা। কিছুটা তফাতে মিমিও ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। মা ওভাবে চ ড় মা র তে পারে তা কখনো কল্পনায় আনেনি।
-তোকে সাহস দেখালাম। দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে..এই বাড়ি থেকে..আর যেন কখনো আমার বাড়িতে পা দিতে না দেখি।
-এবার আমরা থানায় যাব।
শব্দ সমেত হাসল মৌসুমী।
-এই তুই এবার বিয়েতে বাধা দিলে আমার ম রা মুখ দেখবি। তুই জানিস মা ফাঁকা আওয়াজ দেয় না। আমি ম র লে তুই সুখে সংসার করিস।
ভ য়ে শুকিয়ে কাঠ মিমি। অনেক দিন পর মায়ের এমন উগ্রমূর্তি রূপ দেখল।
-তুই এখনো কিছু বলবি না? এই ভাবে সহ্য করবি?
তানিষ্ঠার কথায় মাথা নিচু করল মিমি। আশাহত হয়ে ভষ্ম করার দৃষ্টিতে মিমির অভিমুখে তাকিয়ে ঘর ছাড়ল তানিষ্ঠা।
***
রবিবারে নীরবের বাণীতে জনাসমাগম। সেই ভদ্রমহিলা সমেত পাত্রের বাবা, মা, পাত্র ছাড়াও আরো দুই আত্মীয়া উপস্থিত হয়েছে।
চোখের জল ফেলতে ফেলতে মায়ের নির্দেশে চোখে কাজল নিল মিমি। একটা সাধারণ চুরিদার পরেই সকলের সামনে উপস্থিত হল।
চলবে: