দ্যা লায়ার পর্ব-০৯

0
17

#দ্যা_লায়ার
#পর্ব_নয়
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী

*একটা ফোন*

নীরবের বাণীতে ঘন্টা দুই কাটিয়ে পাত্র পক্ষ বাড়ি ফিরল। মৌসুমীর মন আজ ফুরফুরে..ততোধিক খুশি বিজন। করুণ মুখে বসে থাকলেও অসভ্যতা করেনি মিমি। তবে চোখের জল নজর এড়ায়নি বিজনের। ক ষ্ট হয়। মেয়ের ক ষ্ট দেখে বুক মুচড়ে ওঠে। মুখে হাসি ফোটানোর জন‍্য কিছুই করতে পারে না। অন‍্য কাস্টের ছেলেও বিজন মেনে নিত। এক্ষেত্রে পুরো নিরুপায়। স্বামীর পূর্ণ সমর্থন পেয়ে খুশি মৌসুমীও।
-বলো তাহলে কেমন পাত্র জোগাড় করেছি? তুমি তো সর্বদা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াও। মেয়ের বিয়ের জন‍্য কোনো চিন্তাই থাকে না।
খোঁচাটা গায়ে মাখল না বিজন। হেসে বলল,
-ভালো ছেলে। উচ্চ বংশ..তবু একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে।
-কীসের কিন্তু?
-মিমি সত‍্যি সুখী হবে তো?
কী যেন একটু ভাবল মৌসুমী। তারপর বলল,
-প্রথমে মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে। ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আশাবাদী মৌসুমী। আরো কী যেন ভেবে বলল,
-কাল একটু কাতলা মাছের মাথা এনো। মেয়েটা মুড়িঘন্ট খেতে বড় ভালো বাসে।
চোখ চিকচিক করে উঠল মৌসুমীর। আর যে মেয়ে কিছু মাসের অতিথি। পাত্রপক্ষ সেই ইঙ্গিত দিয়ে গেল।
-মেয়েটাকে জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসো। তাহলে এত দূরছাই করো কেন?
-সে তো ওর ভালোর জন‍্যই। কিছুতেই তোমার মেয়ে সেটা বোঝে না। যেন আমি ওর শ ত্রু।
থামল মৌসুমী। তারপর আবার বলল,
-আসলে আমাদের মিমির কোনো দোষ নেই। সেই সময় ঐ মেয়েটা ওকে অনেক দিন পাশে থেকেছে। বুঝিয়েছে..এই বন্ধুর সম্পর্কটাকে ও অন‍্যরকম ভাবছে। আর ঐ শ য় তা নিটা তো ছোট থেকেই বড্ড পাকা। ও আমার মেয়ের মাথায় ঢুকিয়েছে। আজকার এই ফেসবুক দেখে দেখে ছেলেমেয়ে গুলোর মাথা যাচ্ছে। ওগুলো যত ন ষ্টের গোড়া।
-ভালো হলেই ভালো।
-ওর ভালোই জন‍্যই সব কিছু। সে ও আমাকে যতই খা রা প মা ভাবুক। আমিও ওর বিয়ের জন‍্য এত তাড়াহুড়ো করতাম না। মাত্র পঁচিশ বছর বয়েস। কিন্তু কোনো উপায় যে তোমার মেয়ে রাখেনি।
-রাতে কী খাবার করবে?
-সেদ্ধ ভাত আর ডিম ভাজা করে দিই..
-তাই করো। করে একবার এসো। কথা বলি। টাকা-পয়সা গুলো ভাঙতে হবে।
-দাঁড়াও আগে ছেলের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।তারপর..
এই শোনো না। একবার মেয়ের কাছে ঘুরে এসো। দেখো না কী করছে..
-হু যাই।
ভাত নামিয়ে হাতা দিয়ে গরম আলু মাখছিল মৌসুমী।তারমধ‍্যে ফোন বেজে উঠল।
সৈনাকের মা কলিং লেখাটা ফুটে উঠছে স্ক্রিনে। নাহ এবার নামটা পরিবর্তন করে শর্মিলা লিখবে বলে মনোস্থির করল। সেই দিনের পর থেকে সৈনাকের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই। সৈনাকও সরি মেসেজ লেখার পর আর ফোন করেনি। মনে মনে ধন্যবাদ জানাল মৌসুমী। প্রত‍্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে ঐ ছেলেটা উপকারই করেছে। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরল মৌসুমী।
-হ‍্যালো মৌসুমী কী করছ?
ভদ্রমহিলার কথায় হকচকিয়ে গেল মৌসুমী। বেশ আমুদে মানুষ দেখেই মনে হয়েছিল। তবে একবারে তুমিতে নামবে ভাবেনি।
-হ‍্যাঁ বলুন..
-একি মৌসুমী আমি তুমি করে বলছি আর তুমি আমাকে দূরে করে দিচ্ছো।
-না না দিদি তা নয়..
-আবার দিদি!
-না না শর্মিলা বলো..
-রান্না হল?
-হ‍্যাঁ হল..তোমরা কখন পৌঁছালে?
পাছে কী রান্না করলে জিজ্ঞাসা করে..তড়িঘড়ি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল মৌসুমী।
-সাড়ে সাতটার দিকেই..তোমার মেয়ে একদম পুতুলের মতন দেখতে। খুব সুন্দর..
ছোট থেকে মেয়েকে নিয়ে এমন বহু প্রশংসা শুনে এসেছে। আজ সাধারণ চুরিদার পরিধানে মেয়েকে এমন দেখতে লাগে শুনে গর্ব অনুভব করল।
-আজ বলবে তুমি আমার নম্বর কী করে পেলে? ওটা আমার কাছে একটা রহস‍্য।
আবার ভিরমি খেল মৌসুমী। কী বলবে খুঁজে পেল না।
-আমার জানার ইচ্ছে ছিল।
-আমি মানে..
আমতা আমতা করছে মৌসুমী।
-তুমি একটু জাত-পাত মানো বলো? তা তো মানবেই চক্রবর্তী বলে কথা..
শর্মিলার এই প্রশ্নের কোনো যথাযথ কারণ খুঁজে পেল না মৌসুমী।
মৌনই থাকে মৌসুমী। ফোন করার প্রসঙ্গ এড়াতে চাইছে ও।
-একটা কথা বলব ভাই..রাগ করবে না তো?
গলার স্বর মধুর থেকে মধুরতম হল শর্মিলার।
-আগে যদি জানতাম তোমার মেয়ে এমন রূপের ডালি তাহলে আমিই আমার ছেলের জন‍্য সম্বন্ধ নিয়ে যেতাম। এমন লাল টুকটুকে বৌমা কেউ বা না চাই..
শব্দ করে হাসল শর্মিলা। হাসিটা খুব অস্বাভাবিক ও কৃত্রিম।
না আমি যখন আমার শ্রেণীর মধ‍্যে পাত্র পেয়েছি তখন আর শ্রেণী চ‍্যুত হবেনা।
-ইস! তুমি আগে বলতে পারতে..তাহলে আমি এদের ডাকতামই না। কিন্তু এদেরকে আমি কথা দিয়ে ফেলেছি। তাই কথার খেলাপ করতে পারব না।
হেসে হেসে উত্তর দিল মৌসুমী। তখনো ওর মনে ধন্দ্ব। শর্মিলার কথা নিছক মজা না অন‍্য অন্তর্নিহিত অর্থ আছে সেটাই খুঁজছে।
-তবে তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে ভাই..
-তোমাকেও..
-আচ্ছা তাহলে রাখি..পরের রবিবার তোমরা এসো। ওদের বাড়ি দেখে যাও।
-হ‍্যাঁ যাব। প্রথমে আমরা দুজন যাব।
-বেশ..আমি দুদিন পর ফোন করছি।
***
পরের রবিবার পাত্রের বাড়ি দেখে এল বিজন-মৌসুমী। মোটামুটি পাকা কথা বলে এল। পরে আবার কয়েকজন আত্মীয় সজ্জন নিয়ে বিবাহের দিন স্থির করে এল। ব‍্যক্তিগত কাজে অন‍্যের মতকে প্রাধান্য দেয় না মৌসুমী। তাই আত্মীয় বা পাড়ার লোকেদের এই ব‍্যপারে এড়িয়ে চলে। কিন্তু বিবাহের মতন এই বড় অনুষ্ঠান একাকি সম্ভব নয়। বিবাহ স্থির হওয়ার পর প্রত‍্যেক নিকট আত্মীয়দের খবর দিল মৌসুমী।
***
বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে..বাড়িতে সাজো সাজো রব। মিমি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে বিবাহটাকে নিজের ভবিতব‍্য বলে মেনে নিচ্ছে। তানিষ্ঠা আর নীরবের বাণী মুখো হয়নি। হয়ত যোগাযোগ নেই..অনুমান করে মৌসুমী। কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখে..মিমিও আর আগের মতন ফোঁস করে না।
দিন কাটতে থাকল..
অবশেষে চলেই এল বিবাহের শুভদিন। সারা বাড়ি আলোতে সেজে উঠেছে। উঠোন জুড়ে রঙিন সামিয়ানা।
আত্মীয়স্বজনের আগমন ঘটেছে নীরবের বাণী।
অগ্রহায়াণ মাসের চতুর্থ দিন। ঝলমলে নরম রোদ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। মিমির হলুদ শাড়ি সেই রোদের থেকেও অধিক উজ্জ্বল। আর কিছুক্ষণ পর ওর শরীর বরের হলুদের ছোঁয়া পাবে।
সশব্দে বেজে উঠল মৌসুমীর মোবাইল। শর্মিলার নম্বর দেখে ফোন কানে নিল।
-হ‍্যাঁ গো বলো তোমারা হলুদ নিয়ে কখন আসবে?
-মৌসুমী?
উদ্বিগ্ন শোনালো শর্মিলার কন্ঠস্বর।

চলবে।