#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#অন্তিমপাতা
#সারিকা_হোসাইন
ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে রাতের নিগূঢ়তা।পূর্বের ন্যয় থমথমে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গিয়েছে হেনরির বিশাল ভ্যাম্পায়ার ক্যাসল।আগত মেহমানরা বিদায় নিয়েছে বহু আগেই।এই প্রাসাদের ভ্যাম্পায়ার ব্যাতিত সকল মানব মানবী ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়েছে রাতের দ্বিপ্রহরে।আজকের শীতের প্রকোপ পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন।মৃদু তুষার ঝরছে ঝাপসা আকাশ থেকে।চাঁদটাও তার স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র সরে গিয়েছে।
লিও এর বিশাল কক্ষের দেয়ালের সাথে মিশে চোখ বন্ধ করে গাউন খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ম্যপল।তার সামনেই বিশালদেহী পুরুষটি বাঁকা হেঁসে নিজের দুই হাত দিয়ে দেয়ালে বেষ্টনী তৈরি করে রোধ করেছে পালাবার পথ।দুজনের মধ্যে চুল পরিমাণ দূরত্ব।বিশাল খোলা জানালা ডিঙিয়ে আসা শিরশিরে সমীরণ পুরো কক্ষে ছড়িয়েছে ভালোবাসাময় সুবাস।সদ্য হওয়া স্ত্রীর গায়ের মিষ্টি গন্ধ উন্মাদনার চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে লিওকে।ধীরে ধীরে তেজ হচ্ছে দুজনের ই ধারকান।একজনের ভয়ে ওপর জনের কামনার বাসনায়।হঠাতই অদূরের অরণ্যে ভয়ঙ্কর এক প্রাণী বিভৎস শব্দে ডেকে উঠলো।সেই শব্দে ভীত হয়ে লিও এর বুকের কাছের জামা খামচে ধরে মাঝখানের দূরত্বের অবসান করলো ম্যপল।।
সুযোগ পেতেই বাজ পাখির ন্যয় ছো মেরে ম্যপল কে বুকে জড়িয়ে পরম শান্তিতে চোখ বুঝলো লিও।ম্যপলের সফেদ গলার ভাজে দাঁড়িহীন মসৃন মুখ গুজে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো
“আমার থেকে পালাবার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে তোমার শেহজাদী।কোনো ভাবেই যে আর পরিত্রাণ মিলবে না।এবার কি হবে?
কম্পন রত হাতে লিও কে জড়িয়ে লম্বা চোরা শ্বাস নিলো ম্যপল এরপর মিহি ফিসফিসে কন্ঠে বলে উঠলো
“চূড়ান্ত লজ্জা এসে গ্রাস করেছে আমায় লিও।তোমার চোখে চোখ রাখার সাহস টাও যে আজ পাচ্ছি না।
আরো একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে ম্যপলের চুলের মুঠি চেপে ধরে কানের কাছে নিজের ঠোঁট স্লাইড করে লিও ধীর কন্ঠে বলে উঠলো।।
“সকল লজ্জা ভেঙে দেবো।তোমার আর আমার মধ্যে আজ কোনো বেষ্টনী থাকবে না সুইটহার্ট।
কথাটি বলেই বল গাউনের হুক খুলে ফেললো লিও।উন্মুক্ত কাঁধ আরেকটু খোলামেলা হতেই লিও কে শক্ত করে জড়িয়ে লিও এর চোখে চোখ রাখলো ম্যপল।সেই চোখে লিও এর থেকে নিজেকে বাঁচানোর আকুতি দেখতে পেলো লিও।বাঁকা হেসে নিজের টেইল কোট আর শার্ট খুলে দূরে ছুড়ে মারলো লিও।মুহূর্তেই ম্যপলের নজর আটকালো বলিষ্ঠ শক্ত নেশা জাগানো শরীরটায়।কিছু বুঝে উঠবার আগেই ম্যপলের মুখশ্রী নিজের হাতের আজলায় ভয়ে চুম্বনে উন্মত্ত হলো লিও।বাইরে তুষারের ঝরঝর ধারার বেগ বাড়লো সেই তুষারের সাথে মিলিয়ে উন্মাদ হলো লিও।
লিও এর সহায়তায় লজ্জার আগল ভাঙলো অষ্টাদশী শেহজাদীর।ভালোবাসার পুরুষটির পবিত্র ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরলো সে।
বাতিদানে থাকা মোমের অল্প হলদেটে আলোয় ম্যপল কে অসহনীয় মোহনী লাগলো লিও এর কাছে।দমকা বাতাসের ঝাপটায় হেলেদুলে নিভু নিভু করছে মোম গুলো।শীতের দমকে শিউরে উঠলো মানবীর শরীর সেই সাথে ফুলে উঠলো লোমকূপ।স্মিত হেসে আবেশে লিও শুধালো
“আমার শীতল শরীর তোমাকে উষ্ণতায় ভাসাতে পারছে না তাই না?কি করবো বলো সৃষ্টিই এমন।
কথাটি বলে ম্যপল কে ছেড়ে সরে এলো লিও এরপর ঘরের বৃহৎ ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বালিয়ে দুই হাত উজাড় করে বলে উঠলো
“এবার আর হিমবাহ তোমাকে ছুঁতে পারবে না।বুকে এসো।
লিও এর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলো না ম্যপল।বৃহৎ ঘের যুক্ত গাউন দুই হাতে খামচে উঁচু করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সাধনার পুরুষের কাছে।পুরুষটি তার স্বামী।বহু কষ্টের পর এই পুরুষ মিলেছে তার ভাগ্যে।হাজার বছরের জমানো ভালোবাসা আজ যদি পুরুষটির বক্ষে সমর্পণ না হয় তবে সমস্ত কষ্ট বৃথা।
নিবিড় কক্ষে শ্বাস ভারির আওয়াজ দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেলো।সেই শব্দে খেই হারিয়ে লিও বলে উঠলো
“তোমার সমস্ত কিছুর দখলদার আমি।আমাকে গ্রহণ করো।
ম্যপল নিজের ছোট হাতের আজলায় লিও এর সুদর্শন মুখশ্রী চেপে ধরে শুধালো
“তোমার শ্বাসের শব্দ কেনো পাইনা আমি লিও?
“কারন আমার শ্বাস নেবার প্রয়োজন পড়ে না।ওসব তো মানুষের জন্য।তুমি কি আমার সত্তা ভুলে যাচ্ছ হানি?
লাজুক হেসে ম্যপল বলে উঠলো
“আমি জানতে চাই আমাকে পাবার তৃষ্ণা তোমার কতোখানি!
নিজের তর্জনী আঙ্গুলি দিয়ে ম্যপলের গাল স্লাইড করতে করতে লিও মাতালের ন্যয় বলে উঠলো
“সহ্য করতে পারবে না।
“তবুও জানতে চাই আমি।
লিও এর স্পর্শে বেকাবু হলো ম্যপল।অজানা বাসনায় চোখ দুটো চিকচিকে হয়ে উঠলো।নাকের ডগা এবং গোলাপি গাল রক্তিম আভা ছড়ালো।
চিবুকে অল্প বাইট করে লিও বলে উঠলো
“তোমার এই গাউন আমাকে বড্ড জ্বালাতন করছে।
“তাহলে এটাকে শাস্তি দাও”
“আর ইউ সিউর?
“ইয়েস”
অনুমতি পেয়ে লিও যেনো আরেকটু বেসামাল হলো।অবাধ্য হাতের বিচরণে নিজের প্রেয়সীকে আরেকটু সুখের সাগরে ভাসালো।চুম্বনে চুম্বনে দূর করলো সকল শীতলতা।লিও এর চুল খামচে ধরে ম্যপল বলে উঠলো
“নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি লিও।সকল দায় তোমার।
বিবস্ত্র ম্যপলকে নেশাতুর দৃষ্টিতে পরখ করে প্রেমিক পুরুষ লিও বিগলিত হেসে বলে উঠলো
“আমি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি সকল দায়।
কক্ষের মোম গুলো ক্ষয় হয়ে নিভে গিয়েছে কিছুক্ষন আগেই।ফায়ার প্লেসের আগুন গুলো খচখচ শব্দে জ্বলে যাচ্ছে শুধু।
নিজের বাহুডোরে ম্যপল কে বেঁধে বক্ষ ভাজে মুখ ডুবালো লিও।কামুক আহ্বানে ম্যপল লিও কে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ডেকে উঠলো।
ধীরে ধীরে নিজের ভালোবাসার পরিমাপ জানাতে লাগলো লিও।কিন্তু অদম্য শক্তির কাছে সাধারণ মানবী টিকবে কি করে?
অসহনীয় যন্ত্রনায় লিও কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ম্যপল।নিজের হিংস্রতা মেনে নিয়ে অপরাধীর স্বরে লিও বলে উঠলো
“সরি,আই কুড নট কন্ট্রোল মাইসেলফ।আ উইল বি জেন্টল ডিজ টাইম।
কথাটি বলেই ম্যপল কে বুকে জড়ালো লিও।
*********
হেনরির সভাষদে প্রত্যেক ভ্যাম্পায়ার কে ডেকেছে হেনরি।সকলের উদ্দেশ্যে বিশেষ কিছু কথা বলতে চান তিনি।যারা হেনরির অত্যান্ত কাছের তারা ঠিকই আন্দাজ করেছে হেনরি কি কথা বলতে তাদের ডেকেছে।আবার যারা কিছুই আন্দাজ করতে পারেনি তাদের চোখে মুখে ভয় পরিলক্ষিত হলো।না জানি কোন ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে এই ভয় জেকে ধরেছে তাদের।ধীরে ধীরে গুনগুন ধ্বনি তে ভরে উঠলো সভাষদ।কিছু সময় গড়াতেই সেখানে উপস্থিত হলো নব দম্পতি তাদের সাথে রাজমাতা এমিলি।সকলেই আসন গ্রহণ করতেই দ্রাকো আর আলফ্রেড মিলে একটা ফুল সজ্জিত ডালায় হেনরির মুকুট নিয়ে এলো।হেনরির মুকুট ডালায় দেখে ভ্রু কুঁচকে চিন্তার জগতে ডুবলো কেউ কেউ।যারা আবার লিও কে খুব ভালোবাসে তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠলো।
নিজের সিংহাসনের হাতলে ম্যপল কে বসিয়ে কোমর চেপে ধরে সকলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো লিও।ছেলের এহেন পাগলামো দেখে ঠোঁট চেপে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসলেন এমিলি।
সভাষদ যখন কাঙ্খিত ভ্যাম্পায়ার এ পরিপূর্ণ তখন নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন হেনরি।এবং উৎফুল্ল চিত্তে বলতে শুরু করলেন
“তোমাদের কাছে পেয়ে বুক ভরে উঠেছে।আমাকে কখনো হতাশ করো নি তোমরা।তোমরা আমার উত্তম বন্ধু,ভাই।আজ তোমাদের কাছে কিছু মনের কথা ব্যক্ত করতে চাই।অনেক বছর তোমরা আমার অধীনে ছিলে।এক সাথে মিলেমিশে আমরা আমাদের সত্তা কঠোর ভাবে ধরে রেখেছি এই মানব শাসিত পৃথিবীতে।মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে আমাদের।সবকিছুতেই তোমরা ছিলে আমার বিশ্বস্ত সেনা।দায়িত্ব পালন করতে করতে আমি বড্ড ক্লান্ত।এবার নিজেকে নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকতে চাই।তাই তোমাদের দেখ ভালের দায়িত্ব আমি আমার একমাত্র পুত্র যুবরাজ জর্জ লিও এর উপর ন্যস্ত করতে চাই।তাকে কিং হিসেবে মানতে তোমাদের কোনো আপত্তি আছে?
হেনরির কথায় সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সকলেই সমস্বরে বলে উঠলো
“জর্জ লিও কে কিং হিসেবে পেয়ে আমরা ধন্য হবো।আমাদের রাজ্যের জন্য এমন শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান কিং খুবই প্রয়োজন।
হঠাৎ হেনারীর এমন ঘোষণায় কোনো প্রকার অবাক হলো না লিও।সে আগেই এ বিষয়ে অবগত ছিলো।কিন্তু পিতার হঠাৎ অবসরে মন ভার হলো তার।তাই নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে শুধালো
“সবকিছু একটু বেশিই দ্রুত হয়ে যাচ্ছে না বাবা?
লিও এর কাঁধ চাপড়ে হেনরি বলে উঠলো
“এটা তোমার প্রাপ্য।একদিন না একদিন বুঝিয়ে দিতেই হতো।
এদিকে ভ্যাম্পায়ার সত্তার উত্তরে প্রশস্ত হাসলেন হেনরি।এরপর সকলের সামনে পুত্রকে বুকে জড়িয়ে বলে উঠলেন
“আজ থেকে আমি মুক্ত আর তুমি দায়িত্ববদ্ধ।
হেনরির চোখের ইশারায় মুকুট নিয়ে এগিয়ে এলো এমিলি।সেই মুকুট পুত্রের মাথায় পরিয়ে ব্যথাতুর কাঁদলেন হেনরি।এই স্বপ্ন তার শত শত বছরের।অথচ পুত্রের জীবন কতই না দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছে।কি নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে করতে তার একমাত্র পুত্র এতদূর এসেছে।এখন যখন সকল দুঃখের সমাপ্তি হয়েছে তবে পুত্র তার সকল সুখ লুফে নিক না।ক্ষতি কোথায়!
লিও কে মুকুট পরিয়ে দিতেই সকলের করতালিতে মুখরিত হলো চারপাশ।সেই সাথে সকলে সমস্বরে বলতে লাগলো
“মহারাজ লিও এর জয় হোক।
পুত্রের প্রতি সকলের ভালোবাসা দেখে আমোদে কেঁদে ফেললেন এমিলি।অধিক সুখে উচ্ছসিত হয়ে নিজের মুকুট টাও মাথা থেকে খুলে ম্যপলের মাথায় পরিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন
“আজ থেকে তোমাদের রাজমাতা শেহজাদী ম্যপল জুন।তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে অবশ্যই কার্পণ্য করবে না।যে আমার কঠিন নির্দেশ।
সকল ভ্যাম্পায়ার তাদের নতুন রাজা রানী কে নির্দ্বিধায় মেনে নিয়ে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়লো।সকলের মধ্যে আরো খানিক আনন্দ বন্টন করতে লিও বলে উঠলো
“আজ রাতে তোমাদের পছন্দের শরাবের ব্যবস্থা করবো আমি।শুধু তাই নয় রাত ভর উপভোগ করবে লাস্যময়ী নারী সঙ্গ।
নতুন রাজার এহেন প্রলোভনে হৈহৈ করে উঠলো সকলে।ম্যপল কে হাতে ধরে সভাষদ ত্যাগ করে নিজের কক্ষে এনে খিড়কি আটকে লিও বলে উঠলো
“এবার তোমার সঙ্গ আমার খুব প্রয়োজন রানী সাহেবা।অন্তর জ্বলে যাচ্ছে।পিপাসা মেটাও আমার।
লিও এর গলা টিপে ধরে চোখে চোখ রেখে ম্যপল বলে উঠলো
“তোমাকে বধ করবো আমি হিংস্র বেহায়া পুরুষ।
নিজের বুক পেতে দিয়ে লিও শুধালো
“তবে দেরি কেনো?আমি এক্ষুনি প্রস্তুত।
ধীরে ধীরে বদ্ধ কক্ষের চাপা হাসির গুঞ্জন প্রশস্ত হলো সেই সাথে লিও এর দলিত মথিত ভালোবাসায় বিলীন হলো ম্যাপল।
*******সমাপ্ত*******