#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_২৬
#সারিকা হোসাইন
গ্র্যাভ শহরের সিগমুন্ড এর বিশাল প্রাসাদে হাটু মুড়ে বসে আছে হ্যাভেন।চারপাশে মানুষের বিভৎস লাশের স্তুপ।সেগুলো পচে ইতোমধ্যে বিশ্ৰী গন্ধ ছুটেছে।হ্যাভেন পুরো প্রাসাদ তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোথাও ম্যাপল এর দেখা পায়নি।না তো ঐ গড়নের কোনো মানবীর দেহাবশেষ।লুকাস নিজেও প্রাসাদের আসে পাশের অরণ্যে নজর বুলিয়েছে।সেখানেও ফলাফল শূন্য।
হ্যাভেন কে ভেঙে পড়তে দেখে লুকাস তার লালচে জিভ করে করে বলে উঠলো
“মনে হচ্ছে রাজকুমারী অক্ষত আছেন এবং নিরাপদে আছেন।
লুকাস এর কথায় বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে উপরে তাকালো হ্যাভেন।
“তুমি কীভাবে নিশ্চিন্তে বলতে পারো এই কথা লুকাস?
লুকাস চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো
“কারন যুবরাজ লিও এখনো এই প্রাসাদে পা রাখেনি।এতো রাত পেরোলো অথচ যুবরাজ লিও নির্বাক।এমনটা কখনোই হতে পারে না।তাছাড়া আকাশের পূর্ণিমার দিকে তাকাও।দেখো চাঁদটা কত উজ্জ্বল।শেহজাদীর কিছু হলে এই চাঁদ তার রুপ পরিবর্তন করতো।কেননা লাস্ট ব্লাড মুন শুধুমাত্র শেহজাদী ক্যারোলিন এর জন্যই সংঘটিত হয়েছে।আমাদের একবার প্রাসাদে গিয়ে নিজ চোখে দেখা উচিত কি হচ্ছে ওখানে।এমন ও তো হতে পারে লিও এর কাছে শেহজাদী পৌঁছে গিয়েছে?
লুকাস এর কথায় ভাবান্তর হলো হ্যাভেন এর মনে।আকাশের পরিপক্ক টকটকে চাঁদের পানে দুর্ঘ সময় নজর বুলিয়ে লুকাস এর পানে তাকিয়ে হ্যাভেন শুধালো
“ওই প্রাসাদে পৌঁছাতে অনেক সময়ের ব্যাপার।তাহলে এখন কি উপায়?
লুকাস বুক ফুলিয়ে বলে উঠলো
“এবার আমার পিঠে চেপে বসো তুমি মালিক।হাওয়ার গতিতে প্রাসাদে পৌঁছে যাবো আমরা।আর বড় রাস্তার পরিবর্তে গহীন অরণ্যের ছোট পথ বেছে নেবো আমি।কখনো পথভ্রষ্ট হলে জাত ভাই এর সহায়তা নেবো।
লুকাসের কথাকে ভরসা করে লুকাসের দিকে এগিয়ে এলো হ্যাভেন।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল লুকাসের আকৃতি।এক সময় বৃহৎ শরীরে পরিবর্তন হলো লুকাস।সেই বৃহৎ শরীরের বৃহৎ মাথা নিচু করে হ্যাভেন কে পিঠে চাপতে বললো লুকাস।হ্যাভেন নির্দেশ পাওয়া মাত্র লুকাসের উঁচু ফনা জড়িয়ে পিঠে উঠে বসলো ।হ্যাভেন কে হাওয়ায় ভাসিয়ে হিসহিস করে চলতে লাগলো লুকাস।লুকাসের শরীরের তেজে আর চোখের ভয়ে আজ যেনো গাছের এলোমেলো সারি পথ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
*******
নিজের সিংহাসনে ক্রোধিত চোখে দাঁত কামড়ে বসে আছে লিও।পাশেই বসা হেনরি এবং এমিলি।লিও এর সিংহাসনের হাতলে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে ম্যাপল।স্যান্ডি আর আলফ্রেড সভাষদের চেয়ারে বসে আছে।লিও এর সামনের ফাঁকা জায়গাটায় নির্ভীক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইজাবেল।তার শরীরের অর্ধেক অংশ যেনো ঝলসে গিয়েছে।নিজের হিলিং পাওয়ার ব্যবহার করেও সেই ক্ষত সারানো যাচ্ছে না।চারপাশে থমথমে নীরবতা বিরাজমান।
কিছু সময় ওভাবেই গড়াতে নীরবতা ভাঙলো লিও।গমগমে ভরাট তেজী কন্ঠে গর্জন করে বলে উঠলো
“আমার নিষেধ থাকা সত্তেও কোন সাহসে আমার কক্ষে তুই প্রবেশ করেছিস ইজাবেল?
লিও এর গর্জনে কিছুটা কেঁপে উঠলো ইজাবেল।কিন্তু ভীত হবার পরিবর্তে চোখে মুখে ক্রোধ ফুটিয়ে বলে উঠলো
“মানুষের কাছেই পিচাশ যাবে এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।এতে এতো রাগান্বিত হবার কি আছে?
ইজাবেল এর কথায় রাগে দপদপ করে লিও এর মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো।মুখে ক্রুরতা ফুটিয়ে পুনরায় শুধালো
“আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো ভেবেছিস তুই ওকে?তুই কি ভুলে গিয়েছিস সে কে হয় আমার?
ইজাবেল কন্ঠে তেজ ঢেলে বলে উঠলো
“সে যাই হোক তাকে আমি মানিনা।আর একজন দুর্বল মানবীর জন্য কিসের এতো হাহাকার লিও?আমিও তো তোমায় ভালোবাসি উন্মাদের ন্যয়।কই কোনোদিন তো আমার ভালোবাসা বুঝলে না তুমি?
এবার আর লিও বসে থাকতে পারলো না।ঝড়ের গতিতে উঠে গিয়ে ইজাবেল এর গলা চেপে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরলো।লিও আর ইজাবেল এর শক্তির কাছে পরাস্ত হলো অবলা দেয়াল।সময়ের ব্যাবধানে সেই দেয়ালের ইট সুরকি চুরচুর করে ভেঙে ধুলো উড়লো।ইজাবেল দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো
“তুমি চরম ভুল করছো লিও।তোমাকে এর জন্য পস্তাতে হবে”
ইজাবেল কে দূরে ছুড়ে ফেলে লিও হিসহিস করে বলে উঠলো
“হাজার টি বছর ধরে পস্তাচ্ছি।আর কত!
লিও এর চেহারার পরিবর্তন দেখে ভীত হলো এমিলি,আলফ্রেড স্বয়ং হেনরি।কিন্তু ইজাবেল যেনো আর অবস্থ্যানে অটুট।মেঝে থেকে লাফিয়ে উঠে ইজাবেল লিও এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পুনরায় বলে উঠলো
“আমি তোমাকে ভালোবাসি লিও।তুমি যতোই আঘাত করো আমাকে আমি আমার ভালোবাসার কথা বলেই যাবো।ওই মূর্খ শেহজাদী কে আমি সহ্য করতে পারছি না আর।দূর করো ওকে আমার সামনে থেকে।
লিও ইজাবেল এর চুলের মুঠি চেপে ধরে বলে উঠলো
“ওকে নিয়ে আর একটা কথা বলার আগে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি ইজাবেল।তোকে বরাবরই আমি ছোট বোনের স্নেহে দেখেছি।তোকে নিয়ে কখনো ওই ধরনের ভাবনাই ভাবিনি আমি।তুই কিভাবে ভাবতে পারলি এমন কিছু?
“ভালোবাসা কোনো পাপ নয় লিও।আর হৃদয়ের উপর নিজের দখলদারি চলে না।চাইলেও আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
আহত কন্ঠে কথাটি বলে ম্যাপল এর পানে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো ইজাবেল।এরপর আবারো কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি আমার ভালোবাসা ঠিক আদায় করে ছাড়বো আজ নয়তো কাল।এই মেয়ে কান খুলে শুনে রাখো আমার হাতে তোমার করুন মৃত্যু অনিবার্য।
এমিলি আর হেনরি এবার চিৎকার করে ধমকে উঠলেন ইজাবেল কে।
অনুতাপের স্বরে হেনরি বলে উঠলেন
‘তোমার বাবার কাছ থেকে তোমাকে এই প্রাসাদে এনে আমি বড় ভুল করেছি ইজাবেল।বুঝতে পারিনি আমার ছেলের প্রাণ হরণ করার জন্য এভাবে উঠে পরে লাগবে তুমি।
এমিলি ইজাবেল এর পানে ঘৃণা যুক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো
“ওই মেয়ে আমার ছেলের কাছে প্রাণ ভোমরা তুল্য।আর তাকেই তুমি নাশ করতে চাইছো?আদৌ তুমি লিও কে ভালোবাসো ?
লিও নিজেকে সর্বাধিক শান্ত রেখে বলে উঠলো
“আমার প্রতি তোর মোহ কাজ করছে ইজাবেল।তুই যেটা ভালোবাসা ভাবছিস সেটা নিছক ভালোলাগা।আমাকে ভালোবাসলে তুই কখনোই আমাকে প্রাণে মারতে চাইতি না।
ইজাবেল তার বড় বড় চোখ দুটো আরো বিস্ফারিত করে বেদনার্ত কন্ঠে শুধালো
“আমি যখন তোমায় মারতে চেয়েছি লিও?
সাবলীল কন্ঠে লিও বলে উঠলো
“ম্যাপল না বাচলে আমি আজীবন জীবন্মৃত হয়ে থাকবো আর তুই সেটারই পরিকল্পনা করতে চাইছিস।তোকে এর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে ইজাবেল।
কথাটি বলেই জেনারেল দ্রাকোর উদ্দেশ্যে হুংকার ছাড়লো লিও।পাশেই দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা অবলোকন করছিলো ড্রাকো।লিও এর ডাক শুনে মাথা নত করে সামনে এসে বলে উঠলো
“আদেশ করুন যুবরাজ।
ইজাবেল এর মুখের পানে সামান্য তাকিয়ে ভয়ানক ক্রোধ জড়িত কন্ঠে লিও বলে উঠলো
“ইজাবেল কে তার অন্যায়ের শাস্তি স্বরূপ কাবাককি অরণ্যে রেখে আসার আদেশ জারি করা হলো।
লিও এর এহেন কঠিন আদেশে অশ্রু সিক্ত চোখে ইজাবেল ডেকে উঠলো
“লিও!
ইজাবেল কে হাতের ইশারায় থামিয়ে লিও বলে উঠলো
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি ইজাবেল।
লিও এর আদেশ যেতেই কিছু ভ্যাম্পায়ার সেনা এসে ইজাবেল কে ঘিরে ধরলো।সেই সেনাদের উদ্দেশ্য করে লিও কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
“ওই অরণ্যে দশটি বছর তোকে কাটাতে হবে ইজাবেল ।গহীন ভয়াবহ ওই অরণ্যে বেঁচে থাকার জন্য তোকে চূড়ান্ত লড়াই করতে হবে ।কারন তোর চাইতেও ভয়াবহ ভ্যাম্পায়ার বাস করে ওই। অরণ্যে।যারা নিজেরাই নিজেদের শত্রু।শুধু তাই নয় তোকে পিপাসা মেটানোর জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হবে ভয়ানক সব প্রাণীর সাথে।এভাবেই যদি বেঁচে থাকিস তবে দশ বছর পর ফের দেখা হবে।
লিও কথায় ইজাবেল কষ্টে কেঁদে বুক ভাসালো।শেষ রক্ষার জন্য হেনরির পানে দৌড়ে আসতে চাইলো কিন্তু হেনরি হনহন করে নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলেন।এমিল ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে হেনরির পিছু পিছু ছুটলো।
দম্ভ আর ক্রোধ নিয়ে সিংহাসনে বসে ম্যাপল কে কোলে টেনে নিয়ে লিও সেনাদের উদ্দেশ্যে পুনরায় বলে উঠলো
“নিয়ে যাও এই কুচক্রী ইজাবেল কে।ওর চেহারা দেখে ঘেন্না হচ্ছে আমার।
লিও এর মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হলো ইজাবেল।সেই সাথে নিজেই বলে উঠলো
“আমাকে দ্রুত ওই অরণ্যে নিয়ে চলো ড্রাকো”
********
গহীন অরণ্য,ধুধু প্রান্তর বড় বড় পর্বত সব পেরিয়ে চলছে লুকাস আর হ্যাভেন।ভোরের আলো প্রায় ফুটলো বলে।হঠাৎ স্ভিনিক পর্বতের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো লুকাস।লুকাস এর গতি শ্লথ হওয়ায় ভীত হয়ে হ্যাভেন শুধালো
“থামলে কেনো লুকাস?
চারপাশে সন্তর্পণ নজর বুলিয়ে লুকাস বলে উঠলো
“মানুষের করুন কান্নার আওয়াজ আসছে গুহার ভেতর থেকে।এটা নেকড়ে সাম্রাজ্য।হয়তো কোনো মানুষ কে নেকড়ে রা বন্দি বানিয়ে রেখেছে।তাকে মুক্ত করতে হবে মালিক।
লুকাসের কথায় হ্যাভেন চারপাশে নজর বুলিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না।অবশেষে হ্যাভেন বলে উঠলো
“চলো তবে তাকে মুক্ত করা যাক।
হ্যাভেন এর নির্দেশ পাওয়া মাত্র গুহার দিকে অগ্রসর হলো লুকাস।নিজের চোখের জাদু বলে এক মুহূর্তে গুঁড়িয়ে ফেললো গুহা মুখের ভারী পাথর।এরপর আকৃতি ছোট করে হ্যাভেন কে নিয়ে পৌঁছে গেলো সেই মানুষটির নিকট।
“পানি,,,কেউ আছেন?আমাকে একটু পানি দিয়ে পিপাসা মিটাতে সহায়তা করুন।আমি আর পারছি না।
চারপাশের উটকো পচা গন্ধে পেট গুলিয়ে এলো হ্যাভেন এর।তবুও অন্ধকার হাতড়ে খুঁজে বের করলো সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি কে।মশালের ক্ষীন আলোয় তাকে বাঁধনমুক্ত করে লুকাসের পিঠে তুলে গুহার বাইরে নিয়ে এলো।এরপর নিজের জামার পকেট থেকে দ্রুত হাতে ভাগ্যদেবতার দেয়া একটি আপেল বের করে এগিয়ে দিলো শীর্ন দেহী পুরুষের দিকে।
“এটা খাও,পিপাসা ক্ষুধা দুই ই মিটে যাবে।
হ্যাভেনের হাত থেকে কম্পনরত হাতে আপেল নিয়ে নিভু নিভু চোখে এক কামড় বসাতেই পরিতৃপ্ত হলো যুবক।।মুহূর্তেই ফিরে পেলো নিজের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস।শরীরে ফিরে এলো অসম শক্তি।কন্ঠ হলো বজ্রধনী।
নিজের এহেন পরিবর্তন দেখে যুবক হতবাক হয়ে শুধালো
“কে তোমরা?এ কি ফল খাওয়ালে আমাকে?
হ্যাভেন স্মিত হেসে যুবকের পিঠ চাপড়ে বলে উঠলো
“এটা স্বর্গীয় ফল।এবার বলো কি তোমার পরিচয়?
যুবকে দুঃখী কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি স্লেজ শহরের যুবরাজ।আমার নাম ফেলিক্স।নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন আমাকে আটকে রেখেছে এক মাসের অধিক সময় ধরে।আমার রূপ ব্যবহার করে সে শেহজাদী ম্যাপল কে বিবাহ করতে চায়।
হঠাৎই একটি ম্যাকাও পাখি ডেকে উঠলো।পাখির দিকে তাকিয়ে লুকাস ও হিসহিস করলো।
হ্যাভেন ভ্রু কুঁচকে উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো
“পাখিটি কি বলতে চাচ্ছে লুকাস?
মনিবের দিকে চকচকে চোখে তাকিয়ে লুকাস বলে উঠলো
“নেকড়ে রাজ যুবরাজ লিও এর হাতে প্রাণ দিয়েছে।নেকড়ে সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে গিয়েছে।আর শেহজাদী ম্যাপল যুবরাজ লিও এর কাছে আছে।চলুন প্রাসাদে ফেরা যাক।
হ্যাভেন আর লুকাসের কথোপকথন এ বিস্মিত এবং ভীত হলো ফেলিক্স।।মিষ্টি হেসে হ্যাভেন বলে উঠলো
“চলো তোমাকে তোমার শহরে পৌঁছে দেই।আমার কাধে এখনো অনেক দায়িত্ব পরে রয়েছে।এগুলো সম্পন্ন হলে তবেই নিজের শহরে ফিরতে পারবো আমি।আমার জন্যও যে একজন পথ চেয়ে বসে রয়েছে।
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_২৭
#সারিকা_হোসাইন
******
ধরনীতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে।চারপাশের প্রকৃতি আগের মতোই নিস্তব্ধ ভয়ানক।কোথাও কোনো চাঞ্চল্যতা নেই।গত রাতের ভয়ানক ব্লাড মুন কে ঘিরে কতো কিছু ঘটে গিয়েছে কিন্তু সেসব সকলের অজানা।নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন পরাজিত হবার পর সকল নেকড়ে সেনা ভ্যাম্পায়ার দের কাছে মাথা নত করেছে।দূর হয়েছে লিও এর অভিশাপ ।রাতের মধ্যেই ইজাবেল কে পাঠানো হয়েছে কাবাককি এর ভয়ানক অরণ্যে।আর শেহজাদী ম্যাপল জুন অষ্টাদশী রমণী হিসেবে পদার্পণ করেছে দীর্ঘ বর্ষির সোপানে ।এতো এতো ঘটনার মধ্যে সবচাইতে হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে ক্যারোলিন এর হৃদপিন্ডে যেই ধারালো হাতিয়ার গেঁ*-থে দেয়া হয়েছিলো তা এখনো স্ব অবস্থানে বহাল রয়েছে।
ক্যারোলিন এর কফিন খুলে অক্ষত সেই র*-ক্তা-*ক্ত দেহটি স্বচক্ষে নজর বুলালো ম্যাপল আর লিও।এই কক্ষে কারোর আসার অনুমতি নেই।লিও দূর থেকেই সব কিছু দেখে দাঁত চেপে সহ্য করে গিয়েছে এতো গুলো বছর ।কিন্তু আজ থেকে লিও এই কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে।কিন্তু ছুঁয়ে দেখতে পারবে না কফিনে শায়িত ক্যারোলিন কে।
“খুব শীঘ্রই তোমার মুক্তি মিলতে যাচ্ছে ক্যারোলিন ডিসৌজা”
আহত সিক্ত কন্ঠে কথাটি বলে কফিনের ঢাকনা লাগিয়ে ম্যাপলের দুই হাত চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো লিও।এই প্রথম ম্যাপলের কাছে লিও কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দুঃখী আর দুর্বল বলে মনে হলো।যার কাছে এতো ক্ষমতা এতো আভিজাত্য !যার এক হুকুমে পুরো দুনিয়া মাথা নোয়াতে রাজি সেই মানুষ একটা সাধারণ মানবীর জন্য এভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে?লিও কে শান্তনা দেবার ভাষা ম্যাপল জানেনা।যেখানে কফিনে শায়িত দেহটি তার নিজেরই অথচ সে দিব্যি জীবন্ত দাঁড়িয়ে আছে তার প্রীয়তমর হাত জড়িয়ে।নিয়তির নির্মম লীলা খেলা বুঝা বড় দায়।লিও এর সাথে সাথে ম্যাপল এর বাদামি গভীর স্বচ্ছ চক্ষু জোড়াও সিক্ত হলো।মুহূর্তেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো হাজার বছর আগের বিভীষিকাময় সেই রাত টি।মাত্র দুদিন লিও কে দেখতে না পেয়ে ম্যাপল যেই দুঃখের সাগরে পতিত হয়েছে সেখানে লিও হাজারটা বছর কি করে কাটিয়েছে?
লিও এর কষ্টে কষ্টিত হয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো ম্যাপল।
“আমি না চাইতেও নিজের অজান্তেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি লিও।আমি জানিনা এতো গুলো বছর কিভাবে কাটিয়েছ তুমি।কিন্তু তোমার ওই নিদারুণ কষ্টে বুক ভে*-ঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে আমার।
ম্যাপল কে কাছে টেনে চোখে মুখে অজস্র চুমু খেয়ে লিও বলে উঠলো
“শুধু মাত্র তোমাকে ভেবেই এরকম হাজার হাজার বছর অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারব আমি জুন।তুমি যে আমার বেলাডোনা!
হঠাৎই গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠে লিও আর ম্যাপলের কথোপকথন এর ভাটা পড়লো।ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে লিও ম্যাপল কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
“চলো তোমাকে এক জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
ম্যাপল অবাক হয়ে জানতে চাইলো
“কার সাথে?কে সেই ব্যাক্তি?
“তোমার খুব কাছের লোক।এসো দেখবে।
কথাটি বলে ম্যাপল কে বুকে জড়িয়ে হাওয়ার বেগে লিও নেমে এলো গ্রাউন্ড ফ্লোরে।লুকাস আর হ্যাভেন কেবলই প্রাসাদে ফিরেছে।হতাশা আর ক্লান্তি তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট।প্রাসাদে সেরকম কারো উপস্থিতি পাওয়া গেলো না।কারন সকলেই ইতোমধ্যে জীবন্মৃত অবস্থায় চলে গিয়েছে।শুধুমাত্র ম্যাপল আর লিও ব্যাতিত প্রাসাদে কারোর শ্বাস চলছে না।ভোরের আলো ফুটতেই আলফ্রেড কে নিয়ে স্যান্ডি কোথাও একটা গিয়েছে।ম্যাপল এর সুরক্ষার কথা চিন্তা লিও তার কফিনে ফিরে যেতে পারেনি।ভ্যাম্পায়ার রা মূলত নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করার জন্য জীবন্মৃত অবস্থা গ্রহণ করে দিনের বেলায় কিন্তু লিও এতোটাও দুর্বল নয় যে,নিয়ম করে প্রতিদিন তাকে বিশ্রাম নিতে হবে।
“শেহজাদী ম্যাপল কি সত্যি এই প্রাসাদে আছে লুকাস?
ভীতি মিশ্রিত ধীর কন্ঠে কথাটি লুকাস কে শুধিয়ে উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলো হ্যাভেন।
“অবশ্যই রাজকুমারী এই প্রাসাদে অবস্থান করছে হ্যাভেন ।যেখানে প্রাসাদ,রাজা, রাজত্ব তিনই তার সেখানে সে না এসে কি থাকতে পারে?
সম্মোহিত সাবলীল রসাত্বক কথায় লুকাসের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো হ্যাভেন।সামনে দাঁড়ানো বিশালদেহী পিচাশ পুরুষের বক্ষে ঘাপটি মেরে রয়েছে ছোট একটা মকিংবার্ড।প্রথম দেখাতেই হৃদযন্ত্র বেশ করে ধক করে উঠলো হ্যাভেনের।সেই সাথে অনুভূত হলো অপরিসীম ভালোবাসা যুক্ত টান।ওপাশের মানবীর ক্ষেত্রেও একই অনুভূতির সঞ্চার হলো।বিস্ফারিত নেত্রে হ্যাভেনের পানে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো সেই সাথে তিরতির করে কেঁপে উঠলো ফিনফিনে পাতলা ঠোঁট জোড়া।কন্ঠ রোধ করে দিলো বোবা কান্না।বুকের ছাতিতে অসহনীয় যন্ত্রনা আন্দোলন করে উঠলো।গলা দিয়ে কোনো কথা বেরুতে চাইলো না।তবুও বহু কষ্টে লিও কে ছেড়ে সামনের দিকে ছোট ছোট পায়ে নিষ্পলক তাকিয়ে এগিয়ে এলো ম্যাপল।এরপর ফ্যাসফ্যাসে মোটা অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো
“ক্রিস্টিয়ান বন্ধু আমার!
হ্যাভেনের জন্য ডাকটি যেনো স্বর্গের আহ্বান।লুকাস কে ফেলে দ্রুত পা বাড়িয়ে ম্যাপলের পানে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো
“এজন্মেও তোমার দেয়া দায়িত্ত্ব পালনের আজ্ঞাবাহী দাশ হয়ে এসেছি আমি ক্যারোলিন।আমাদের অনেক দায়িত্ব।সময় ফুরাবার আগে সব যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে”
হ্যাভেনের হাত চেপে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো ম্যাপল।এরপর অবনত মুখে বলে উঠল
“তুমি কি ভাগ্য দেবতার সন্ধান পেয়েছিলে?আমাদের মিলন কি আদৌ সম্ভব ক্রিস্টিয়ান?
হ্যাভেন তার চোখে জমা জল মুছে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো
“আর মাত্র একটি দায়িত্ব রয়েছে তোমার কাঁধে।সেটা পালন করলেই সকল বিপদ মুক্ত তুমি।লিও থেকে আর কেউ তোমাকে আলাদা করতে পারবে না”
হ্যাভেনের কথায় আশার আলো দেখতে পেলো ম্যাপল।উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো।
“কি সেই দায়িত্ব?
“মায়ায় আটকে থাকা তোমার ওই কফিনের দেহটিকে মুক্তি দিতে হবে।সেজন্য অনেক খতরনাক অরণ্য পাড়ি দিতে হবে তোমায়।কিন্তু আফসোস যুবরাজ লিও কোনো প্রকার সহায়তা করতে পারবে না তোমাকে।তোমার আত্মা কে তোমার নিজেরই মুক্তি দিতে হবে।
আত্মার মুক্তির কথা শুনে বেশ ভীত হলো ম্যাপল।হ্যাভেনের বাহু খামচে ধরতেই স্মিত শুকনো হাসলো হ্যাভেন।এরপর বলে উঠলো
“ভয় নেই তোমার কিচ্ছুটি হবে না।ওই দেহ তান্ত্রিকের ভুল মন্ত্র যুক্ত হাতিয়ার এর জন্য এভাবে অক্ষত অবস্থায় পরে রয়েছে।এই দেহ কে শান্তি দিতে চাইলে তোমাকে আহরণ করতে হবে অদ্ভুত এক গোলাপ ফুল।
ফুলের কথা শুনে ম্যাপল ভ্রু কুঁচকে হতবাক হয়ে শুধালো
“ফুল?ফুল কি করে একটা দেহ একটা আত্মার শান্তি এনে দিতে পারে?
ম্যাপলের কথায় হ্যাভেন এর চোখ মুখ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করলো মুহূর্তেই।ভাগ্য দেবতা অ্যাপোলোর কথা গুলো মস্তিষ্কে স্মরণ হতেই ভয়ে শিউরে উঠলো হ্যাভেনের পুরো শরীর।ভীত মুখশ্রী তে ফাঁকা শুকনো ঢোক গিলে একে একে বলতে শুরু করলো ভাগ্য দেবতার বর্ণনা করা সকল কথা
এই প্রাসাদের পুব দিকে দুই রাত দুই দিনের দূরত্বে একটি ভয়ানক কালো পর্বত রয়েছে।পর্বতের নাম ব্ল্যাক ট্যাট্রি। সেই পর্বতের চূড়ায় রয়েছে রক্ত গোলাপ।সেই গোলাপের পাপড়ি থেকে অনবরত চুয়ে চুয়ে ঝরে যাচ্ছে তাজা র*-ক্ত।তোমার পবিত্র হাতে বিনা কাটার স্পর্শে তুলে আনতে হবে সেই গোলাপ।কিন্তু সেই ভয়ানক ব্ল্যাক পর্বতে তোমাকে একাই যেতে হবে ।তোমার সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসতে পারবে না।কারন ওই পর্বত মানুষের প্রবেশের জন্য নিষিদ্ধ।
কথাগুলো চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে কিছুটা দম নিলো হ্যাভেন।হ্যাভেনের কথার সাথে সাথে মুখের রঙ পরিবর্তন হলো ম্যাপলের।বেদনায় বেদনার্ত হলো লিও।সে কিছুতেই ওই ভয়ানক অরণ্যে নিজের প্রেয়সী কে একা পাঠাতে পারবে না।দরকার পড়লে সারাটা জনম সে এভাবেই ধুকে ধুকে কাটিয়ে দেবে।তাই বলে যেই অরণ্যের ভয়ে পিচাশ সত্তার কঠিন বুক পর্যন্ত কাঁপে সেই অরণ্যে ভালোবাসা সিদ্ধির জন্য নিজের প্রাণ ভোমরা কে জলাঞ্জলি দেবে?এতোটা পাশান তো লিও নয়।ম্যাপল বেঁচে থাকুক খুশি থাকুক এটাই তার শেষ চাওয়া।দরকার পড়লে সে নরক বাসী হয়ে পরের জন্ম কাটাবে।তবুও ম্যাপল কে সে ওই অরণ্যে পাঠাতে পারবে না।
ম্যাপল আর হ্যাভেন এর কথার মধ্যে ঘোর আপত্তি জানিয়ে লিও বলে উঠলো
“এ অসম্ভব!জুন ওই ভয়ানক কালো অরণ্যে একাকী যাত্রা করবে এ আমি কিছুতেই হতে দেবো না হ্যাভেন।তুমি নিজেও জানোনা ঠিক কি ধরনের ভয়ানক হিংস্র জীবজন্তুর বাস ওই অরণ্যে।আজ পর্যন্ত ওই অরণ্যের অদ্ভুত কালো বৃক্ষের ঘন পাতা ভেদ করে কোনো প্রকার সূর্যের আলো মাটিতে প্রবেশ করেনি। কোনো মানুষ তো দূর একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত ওই পর্বতের সীমানা ঘেঁষতে পারেনা।তার আগেই তাদের তুলতুলে দেহ শক্ত কংকালে পরিণত হয়েছে।ওই অরণ্যের রহস্য আজও সকলের অজানা।আমি কিছুতেই এতোটা নির্দয় হতে পারবো না। ভাগ্যকে আমি আর বিশ্বাস করি না।ভাগ্য আমাকে হাজার বছরে কি হাল করেছে নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছ।জুন যে ঐ অরণ্য থেকে ফিরে আসতে পারবে তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
কথা গুলো কঠিন কন্ঠে বলে হ্যাভেনের সামনে থেকে ছো মেরে ম্যাপল কে নিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে দু চোখ বন্ধ করে ফেললো লিও।কিন্তু লিও এর কথা মানতে নারাজ ম্যাপল।লিও কে দুই হাতে ঠেলে সরিয়ে শক্ত চোখে লিও এর বাদামি চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
“তোমাকে পরিপূর্ণ রূপে পাবার জন্য ওই অন্ধকার জঙ্গলে পা রাখতে আমি কখনোই ভীত হবো না লিও।সরে যাও আমার সামনে থেকে।আমার পথ আগলে কোনো লাভ করতে পারবে না তুমি।ভাগ্য কে খণ্ডাবার সুযোগ যখন পেয়েছি ই তবে সেই সুযোগ ছাড়ার পাত্রী আমি নই।আমিও দেখতে চাই ভাগ্য ঠিক কি ধরনের খেলা খেলতে চায় আমার সাথে।
কথাটি বলে হনহন করে লিও কে ছাড়িয়ে হ্যাভেনের সামনে এসে পুনরায় দাঁড়ালো ম্যাপল।এর বুক ভরে শ্বাস নিয়ে হ্যাভেনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“আমাকে কিভাবে কি করতে হবে সব বলে দাও ।আমি এখনই ট্যাট্রি পর্বতে যেতে চাই”
“এসব আপনি কি বলছেন শেহজাদী?
উদ্বিগ্ন ভয় মিশ্রিত কন্ঠে প্রশ্নটি শুধিয়ে প্রাসাদের বৃহৎ দরজা থেকে দৌড়ে এসে ম্যাপলের বাহু চেপে ধরলো স্যান্ডি সেই সাথে চোখে মুখে ভয় পরিলক্ষিত হলো আলফ্রেড এর।
আকস্মিক স্যান্ডির আগমনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো ম্যাপল।এরপর নিজেকে গুছিয়ে বলে উঠলো
“আমাকে যেতেই হবে স্যান্ডি।দায়িত্ব যখন এসেছে পালন তো করতেই হবে তাই না?
“ঠিক আছে তবে আমিও যাবো আপনার সাথে”
“ওই অরণ্যে আমি ছাড়া কেউ যেতে পারবে না স্যান্ডি।অযথা জেদ করো না”
স্যান্ডিকে চোখের ইশারায় সরে যাবার নির্দেশ দিয়ে লিও এসে ম্যাপলের কোমর চেপে ধরে শূন্যে ভাসিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।এরপর নিজের বিছানায় ম্যাপল কে ছুড়ে ফেলে গম্ভীর ভরাট কন্ঠে গর্জে উঠে বলে উঠলো
“তুমি কোথাও যাবে না।দরকার পড়লে তোমাকে বন্দি করতে বাধ্য হবো আমি।
কঠিন হৃদয়ের পুরুষ লিও এর পানে তাকিয়ে অশ্রুসজল হলো ম্যাপলের চোখ।বিছানা ছেড়ে উঠে লিও এর পা জড়িয়ে আহত কন্ঠে বলে উঠলো
“তোমাকে পুরোপুরি ভাবে পাবার সাধ আমার হাজার বছরের লিও।বুকের মধ্যখানে যেই হাহাকার বিরাজ করে তা তো তুমি দেখো না!এই দুঃসহ যন্ত্রনা মুখ ফুটে কাউকে বলাও যায়না।তোমাকে বুকে জড়ানোর আকাঙ্খা প্রচন্ড তীব্র।সারাদিন এভাবে হাত পেঁচিয়ে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আমি।এসবের পরিত্রাণ চাই আমার।আমার উপর এতটা নির্দয় হইও না।না হলে ধীরে ধীরে হৃদপিন্ডের পঁচন ধরে আত্মিক মৃ*-ত্যু হবে আমার।আর তার জন্য পুরোপুরি দায়ী থাকবে তুমি।
ম্যাপলের কথায় কিছুটা নরম হয়ে এলো লিও।কিন্তু ওই পর্বতের হিংস্রতা মাথায় চাড়া দিতেই মুষড়ে উঠলো কড়া পরা কঠিন ধাড়কান হীন হৃদয়।নিজেকে সামলে ম্যপল কে পা থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে অজস্র চুম্বন দিয়ে ভরিয়ে দিলো।সেই সাথে ব্যাথিত কন্ঠে বলে উঠলো
“কথা দাও ফিরে আসবে!না হলে আমার বেঁচে থাকার সমস্ত আশা নিঃশেষ হবে।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি আত্মহুতি দেবো।এই করুন মৃতের ন্যায় জীবন আমি আর চাইনা।হাজারটা বছর অনেক লম্বা সময় ম্যাপল।
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_২৮
#সারিকা_হোসাইন
🚫কপি করা নিষেধ🚫❌
অদ্ভুত ভয়ংকর সৌন্দর্য আর হিংস্র উচ্চতা নিয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্যাট্রি মাউন্টেইন।কালো রঙের গাছ আর মাটির কারনে আশেপাশের এলাকা জুড়েও কালো ছায়ার উপস্থিতি বিদ্যমান।পর্বতটির এক পাশ ঘেষে বয়ে চলেছে দগদগে লাভা নিয়ে জলন্ত এক আগ্নেয়গিরি।সেই অঙ্গার এর ছরছর শব্দে অজানা আতংকে শরীর শিউরে ওঠে।থেকে থেকে অদ্ভুত সব প্রাণীর বিশ্ৰী রকমের ডাক শোনা যাচ্ছে।এমন ভয়ানক শব্দ কেউ কখনো শুনেছে কি না কে জানে?অবশ্যই শুনেনি।কেউ শুনলে অবশ্যই লোকমুখে এই পর্বতের প্রচার থাকতো।গুটিকয়েক মানুষ বা পিচাশ ছাড়া কেউ হয়তো এই পর্বতের কাছে আসা তো দূর নাম ও বোধ হয় শুনেনি।আর যারা কোনো ভাবে এই ব্ল্যাক পর্বতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছিলো তাদের সাথে ঠিক কি ঘটেছে এটা তো বলা মুশকিল কিন্তু তাদের ছিন্নভিন্ন কঙ্কাল প্রমান করছে তাদের ভাগ্য বেজায় মন্দ ছিলো।
দুই দিনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছোট একটা হ্যারিকেনের টিমটিমে আলো নিয়ে ট্যাট্রি পর্বতের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে ম্যাপল।ম্যাপল যখন এই পর্বতের সীমানায় এসে পৌঁছায় তখন সূর্যের আলো প্রায় নিভে যাবার উপক্রম।আসার পথে অনেক গহীন অরণ্য পড়েছে কিন্তু সেগুলোতে সূর্যের আলো ক্ষীন রূপে আলো এবং রশ্নি দুই ই দিচ্ছিলো।কিন্তু এই মুহূর্তে গভীর অন্ধকার সব কিছু ছেয়ে নিয়েছে।কাঁচির ন্যয় বাঁকা ছোট চাঁদটা চেস্টনাট গাছের পাতার ফাক দিয়ে মৃদু আলো বিলাতে সক্ষম হচ্ছে।কিন্তু এই আলো কতক্ষন বিলাতে পারবে ম্যাপল তা জানেনা।ক্লান্ত এলোমেলো পা নিয়ে উপড়ে পরা একটা গাছের গুঁড়ির উপর বসলো ম্যাপল।ক্ষুধা এবং পিপাসা দুই ই কাবু করেছে তাকে।আয়েশ করে গাছের গুড়িতে বসে কাঁধে ঝোলানো ছোট ব্যাগ থেকে বের করে আনলো হ্যাভেনের দেয়া স্বর্গীয় আপেল ।দুর্বল কাঁপা হাতে সেই আপেলে কামড় বসাতেই মুহূর্তেই শরীর হলো ক্লান্তিহীন চনমনে।সমস্ত ক্ষুধা তৃষ্ণা দুই ই পূরণ হলো সহসাই।তৃপ্তির ঢেকুর তুলে গাছে হেলান দিয়ে চোখ বুজতেই লিও এর করুন মুখটা অক্ষি পটে ভেসে উঠলো।
“তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না জুন।প্রয়োজনে তোমাকে বুকে না জড়িয়ে শুধু দেখেই কাটিয়ে দেবো যুগের পর যুগ।তবুও ওই ভয়ানক পর্বতে যেও না দোহাই লাগে তোমার।আমাকে আর নিঃস্ব করোনা জুন”!
লিও এর করুন আর্তনাদ মনে পড়তেই দুচোখ সজল হলো ম্যাপলের।হাতের সহিত সেই জল মুছে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো এরপর প্ৰম্প গাউন টা উঁচু করে ধরে জোরে পা চালিয়ে পর্বতের চূড়ার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“আমাকে মাফ করো লিও।তোমার মন ভেঙেছি আমি।কিন্তু এছাড়া আর উপায় কি বলো?হাজার বছরের কষ্ট গুলো লাঘব তো করতেই হবে নাকি?তুমি একলা কেনো সমস্ত যন্ত্রনা ভোগ করবে?তোমাকে ভালোবেসে সেই যন্ত্রণার ভাগিদার আমিও হয়েছি।কালো রঙের বিষাক্ত যন্ত্রনা গুলো যদি হাজার বছর পরে এসেও দূর করতে না পারি তবে কিসের ভালোবাসার মানুষ আমি?
হঠাৎই উত্তপ্ত বিশ্ৰী গন্ধ যুক্ত দমকা বাতাস এসে নিভিয়ে দিলো ম্যাপলের হাতের হারিকেন টি।যেই আলোয় সামান্য অন্ধকার দূরীভূত হয়েছিলো সেই আলো নেভার পর কুচকুচে কালো রঙে ঢেকে গেলো চারপাশ।হাতের করপুটে দুই চোখ ঢেকে অন্ধকার সয়ে নেবার চেষ্টা করলো ম্যাপল।কিছুক্ষন ওভাবেই থেকে হাত সরিয়ে বিশাল আকাশের দিকে নজর দিলো।নাম না জানা অদ্ভুত গাছের পাতা ভেদ করে আকাশ বা চাঁদ কোনোটাই দৃষ্টি গত হলো না।তাচ্ছিল্য হেসে চোরা শ্বাস ছাড়লো ম্যাপল।এরপর ট্যাট্রি পর্বত কে উদ্দেশ্য করে মিহি কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো
“এইজে ব্ল্যাক পর্বত শুনো!
তোমার এই কালো ছায়ার হিংস্রতায় কতো মানুষের প্রাণ হানি হয়েছে তা আমি জানিনা।তাদের উদ্দেশ্য কি ছিলো সেটাও আমার অজানা।কিন্তু আমার উদ্দেশ্য কান খুলে শুনে রাখো।তোমার গহীন অরণ্যে বেড়ে উঠা হাজার বছরে এক বার ফোটা বিষাক্ত কাটা যুক্ত রক্ত গোলাপ হাসিলের উদ্দেশ্যে এসেছি আমি।জানিনা আমার পরিণাম কি হবে।কিন্তু একটা কথাই বলতে চাই আমাকে যদি ভক্ষণ করার ইচ্ছে হয় তবে করে নিও।কিন্তু সেই অপরাধে আজীবন কলঙ্কিত উপাধি বয়ে বেড়াতে হবে তোমাকে।কারন হাজার বছরের ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটানোর অবলম্বন আহরণ করার দায়ে তুমি আমায় প্রাণহানি করবে ।অবশ্য তোমার মতো কঠিন ভয়ানক প্রাণহীন পর্বতের কাছে এসব বলাও বৃথা।
কথা গুলো বলতে বলতে গলা ধরে এলো ম্যাপলের।ভালোবাসায় এতো এতো যন্ত্রনা কেনো?কাউকে ভালোবাসা তো দোষের কিছু নয়।যদি ভালোবাসা পাপ ই হয়ে থাকে তবে ঈশ্বর হৃদয় নামক বস্তুর অস্তিত্ব কেনো দিয়েছে বুকের মধ্যখানে?
“আলো নিভিয়েও আমার পথ রোধ করতে পারবে না তুমি হৃদয়হীন প্রকৃতি।আমি ঠিক পথ চিনে নেবো।কারন স্বয়ং ভাগ্য এবার আমার সহায় হয়েছে।
শক্ত কন্ঠে কথাটি বলে হাতে থাকা ছোট পুটলি বের করে তার গিট খুলে ফেললো ম্যাপল।পুটলির মুখ উন্মুক্ত হতেই বেরিয়ে এলো ঝকঝকে আলোর রশ্নি।সেই রশ্নি স্থির হয়ে কিছুক্ষণ ম্যাপলের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।
রশ্নির পানে তাকিয়ে তেজপুর্ণ কন্ঠে ম্যাপল বলে উঠলো
“আমাকে ওই রক্ত গোলাপের কাছে নিয়ে চলো ভাগ্য রশ্নি”
ম্যাপলের আদেশ পাওয়া মাত্রই ধীরে ধীরে পথ আলো করে চলতে লাগলো রশ্নি গুলো এবং সেই আলো ধরে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটা ধরলো ম্যাপল।যাবার আগে আরেকবার শক্ত চোখে পর্বতের চূড়ার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“ক্ষমতা থাকলে আমার পথ রোধ করে দেখাও।”
********
নিজের ক্যাসেলে সমানে পায়চারী করে চলেছে লিও।কোনো জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারছে না সে।ছেলের এহেন অস্থিরতায় এমিলি হেনরি দুজনেই উন্মাদ হয়ে উঠেছেন।আলফ্রেড এর জাদুও কাজ করছে না এই মুহূর্তে।ম্যাপলের হাল হাবিকত জানার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে লিও।ভ্যাম্পায়ার সেনা ড্রাকো উষ্ণ তাজা রক্তের বিনিময়েও কমাতে পারছে না যুবরাজের এহেন তৃষ্ণা।হ্যাভেন লিও কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে নানা ভাবে।কিন্তু লিও এসব মানতে নারাজ।বৃহৎ লুকাস নিজের ক্ষমতা খাটিয়ে পশুপাখির মাধ্যমে ট্যাট্রি পর্বতের খবর জানার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়ে ফনা তুলে বসে আছে অনেক সময় ধরে।বেচারি স্যান্ডি কেঁদে কেটে মেঝেতে বসেই দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে কখন টেরই পায়নি।
“মা এবার ও যদি ভাগ্য আমাকে নিয়ে নৃশংস খেলা খেলে তবে সব কিছু ধ্বংস করে দেবো আমি”
এমিলির পানে তাকিয়ে তেজ পূর্ণ কন্ঠে কথাটি বলে টেবিলে সাজানো রক্তের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গলায় চালান করে দিলো লিও।এরপর পুনরায় বলে উঠলো
“তার আগে কি আছে ওই অরণ্যে স্বচক্ষে দেখা চাই।কার হিংস্রতা কতো বেশি একবার তো যাচাই করেই নেয়া যায় তাই না?
পুত্রের মুখে এহেন ভয়ানক কথা শুনে থর থরিয়ে কেঁপে উঠলেন এমিলি।বসা থেকে উঠে ছেলেকে খামচে জাপ্টে ধরে ভীত কন্ঠে বলে উঠলেন
“ওই অরণ্যে কারো প্রবেশ যে নিষেধ লিও।তুমি আর অনিষ্ট করো না।ম্যাপল ঠিক ফিরে আসবে।এখন মাথা গরম করার সময় নয়।তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে।ভুলে যেও না ধৈর্যের ফল অত্যন্ত সুমিস্ট।
এমিলির কথায় তাচ্ছিল্য হেসে অবজ্ঞা জনক স্বরে লিও বলে উঠলো
“সেই সুমিস্ট ফল ভক্ষণ করবার জন্য আর কতো কাল আমায় অপেক্ষা করতে হবে তা কি তুমি বলতে পারো মা?
ছেলের প্রশ্নে চোখ থেকে জল খসে পরে এমিলির।মা হয়ে সন্তানের বুকের যন্ত্রনা কমাতে পারছে না কোনো ভাবেই তবে সে কিসের মা?এভাবে চোখের সামনে ছেলেকে জ্বলে পুড়ে মরবার জন্যই কি এতো কান্না কাটি করে দেবতার থেকে ভিক্ষে চেয়ে এনেছিলো এই পুত্রকে সে?
রাজা হেনরি পুত্রের কষ্টে ব্যথিত হয়ে ভারী গলায় বলে উঠলেন
“ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি ওই অরণ্যে।তবুও নিজের অস্থিরতা কমাও।পিতা মাতা হয়ে এসব দেখতে খুব কষ্ট হয় লিও।এতোগুলো বছর কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য।যেই ভুল আমি নিজে করেছি তার মাশুল তুমি কেনো দেবে?
হেনরির কথায় টনক নড়লো লিওয়ের।হেনরির কাছে দৌড়ে এসে হাত চেপে ধরে লিও বলে উঠলো।।
“তোমাকে হারাতে পারবো না আমি বাবা।তোমার হাতে এখনো অনেক দায়িত্ব।পুরো ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্য তাকিয়ে রয়েছে তোমার পানে।তোমার কিছু হয়ে গেলে কমিউনিটিতে বড় রকমের ঝামেলা হয়ে যাবে।ভ্যাম্পায়ার বন্ধন নষ্ট হবে।তোমার ভাই এখানে এসে বাড়াবাড়ি করতে চাইবে।তোমার বেঁচে থাকা আবশ্যক।কিন্তু আমার এই অভিশপ্ত জীবন শেষ হলেই বোধ হয় ভালো হয়।
ছেলেকে শক্ত হাতে বুকে টেনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হেনরি।বিশাল দেহি পুত্রের চওড়া পিঠে হাত বুলিয়ে চোখে মুখে চুমু একে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন
“সমস্ত কালো মেঘ কেটে গিয়ে সোনালী দিনের সূচনা হবে।কিছু সময় ধৈর্য ধরে স্থির হও লিও।ভাগ্য দেবতা যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তবে অবশ্যই মেঘ কাটতে শুরু করেছে।এতোটা ভীত হইও না।ভয় তোমাকে মানায় না।দুর্বলের স্থান এই পৃথিবীতে নয় তা জানোতো?
হেনরির কোমর জড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে লিও বলে উঠলো
“আর সহ্য করতে পারছি না বাবা।হৃদয় ফেটে যাচ্ছে।হতাশা এসে বার বার গ্রাস করছে আমায়।সবকিছু নিছক ধোকা মনে হচ্ছে।ক্যারোলিন কে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।এভাবে সকলের অগোচরে ওই ভয়ানক পর্বতে ও হারিয়ে গেলে আমি বাঁচবো না বাবা!তার চাইতে দুজনে মিলেমিশে একই স্থানে সমাধিস্থ হওয়া সমীচীন বলে আমি মনে করি।মিলন না হোক,একই সাথে মরতে তো পারবো।
*******
গা ছমছমে অকাল অন্ধকার ভেদ করে আলোক রশ্নি ধরে হেটে চলেছে ম্যাপল।তার হাতের অদ্ভুত রাজকীয় চিহ্নটি অগ্নীবর্ণ ধারণ করেছে বহু আগেই।বিশ্ৰী কালচে এই অরণ্যের চারপাশে নজর বুলালেই ভয়ে শরীর হিম হয়ে আসে।পাদদেশে ভেজা কর্দমাক্ত মাটিতে অনবরত ছপছপে শব্দ হৃদয় নাড়িয়ে দিচ্ছে।কোমর পর্যন্ত বেড়ে ওঠা নামহীন কুচকুচে কালো গাছ গুলো বার বার পেঁচিয়ে ধরতে চাইছে।বৃহৎ বৃক্ষের সাথে জড়িয়ে থাকা লতা গুলো কেমন যেনো হিসহিস শব্দ করে ছোবলের মতো করে ডগা বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু পবিত্র শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে আবার নিজেদের গুটিয়ে নেয়।হঠাৎই মনে হয় ঝোপের আড়ালে কি যেনো নড়েচড়ে উঠছে।বার বার কোনো অশরীরি যেনো তার থাবা যুক্ত হাত বাড়িয়ে চেপে ধরতে চায় তাকে ,পিছন থেকে ক্রমাগত একই অনুভূতি টের পায় ম্যাপল।থেকে থেকেই ভয়ানক সব আওয়াজে পায়ের গতি শ্লথ করে ম্যাপল।ছোট বক্ষ টা ক্রমাগত কেঁপে উঠে।কিন্তু পুনরায় নিজেকে নিজেই সাহস যুগায়।
“তুমি পৃথিবীর অধিশ্বর এর ভালোবাসা।তোমাকে ভয় মানায় না।ভয় পায় ভীতুরা।ভীতু মানুষের স্থান এই পৃথিবীতে নয়।লোকে যখন জানবে তাদের রানী ভীতু তখন তারা তোমায় করুনার চোখে দেখবে।সম্মান চাইলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে।
হঠাৎ থেমে গেল আলোকরশ্মি, গড়গড় গর্জনে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো ম্যাপল।সামনে চোখ মেলতেই দৃষ্টি হলো বিস্ফারিত।ভয়ে গলা এবং কলিজা দুই ই শুকিয়ে উঠলো।থরথর করে কাঁপতে লাগলো শীর্ন ছোট শরীর।
সামনে দাঁড়ানো অদ্ভুত ভয়ংকর বিশাল এক প্রাণী।রূপকথার বইয়েও এমন প্রাণীর বর্ণনা শুনেনি ম্যাপল।নীল বর্ণের বিশাল দেহী প্রানীটির সারা শরীর সজারুর কাটার মতো বড় বড় মোটা মোটা কাটা দিয়ে আবৃত।মাথায় বড় বড় চারটা শিং।লম্বা মোটা নাকটার উপর ও দুটো চোখা চোখা শিং।লাল টকটকে বড় বড় দুটো চোখ।কিন্তু সেগুলো মনিহীন।গা থেকে কেমন এক পিচ্ছিল পদার্থ চুঁইয়ে চুইয়ে পড়ছে আর সেগুলো থেকে বিশ্ৰী গন্ধ ছড়াচ্ছে।দুই হাতে নাক চেপে কিছুটা সরে দাঁড়ালো ম্যাপল।এরপর মনে সাহস সঞ্চয় করে কাঁধের খাবলি থেকে বের করে আনলো তলোয়ার।আক্রমনের ভঙ্গিতে সেই জন্তুর পানে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো
“পথ ছাড়ো আমার!আমার পথ রোধ করবার হিম্মত কে দিয়েছে তোমায়?
ম্যাপলের কথায় প্রাণীটি ধীরপায়ে এগিয়ে আসতে চাইলো।কিন্তু ম্যাপল তাকে তলোয়ার এর ডগা দিয়ে থামিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“থেমে যাও।না হলে এক কোপে ধর থেকে শরীর আলাদা করবো।
প্রাণীটি ম্যাপলের তলোয়ার এর পানে একবার তাকিয়ে বিশ্ৰী দাঁত বের করে হা করে লম্বা নখ যুক্ত হাত বাড়িয়ে দিলো ম্যাপলের শরীর বরাবর।হালকা ঝাকুনি দিয়ে কেঁপে উঠে পরে যেতে চাইলো তলোয়ার।কিন্তু মনোবল হারালো না ম্যাপল।প্রানী টির বিশ্ৰী চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো
“চলো প্রমান হয়ে যাক কে বেশি শক্তিশালী, তুমি নাকি আমি!
ম্যাপল তলোয়ার দিয়ে আঘাত হানার আগেই ঝড়ের গতিতে সেই তলোয়ার কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে মারলো বিশাল দেহের জন্তুটি।ম্যাপল কিছু বুঝে উঠবার আগেই প্রাণীটি এগিয়ে এসে চেপে ধরলো ম্যাপলের গলা।জন্তুর গায়ের পিচ্ছিল পদার্থ আর উটকো গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠলো ম্যাপলের।নিজেকে বাঁচানোর জন্য ধরার চেষ্টা করলো জন্তুর শক্তিশালী হাত দুটো।কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠলো না।ধীরে ধীরে নরম গলায় বাড়তে থাকলো চাপের প্রয়োগ।ঝাপসা হলো ম্যাপলের দৃষ্টি।চোখ বুজার আগেই ছিটকে কর্দমাক্ত মাটিতে পড়লো ম্যাপল।ঝড়ের গতিতে জন্তুটিকে ছো মেরে সরিয়ে নিয়ে গেলো কে যেনো।ভেজা মাটি খামচে ধরে খুকখুক করে কেশে উঠলো ম্যাপল।
কীয়তখন গড়াতেই ভয়ানক গর্জনে নড়ে উঠলো পুরো মাউন্টেইন।গাছের মগ ডালে বসা নাম হীন পাখিগুলো সেই শব্দে উড়ে পালালো বৃহৎ ডানা ঝাপটিয়ে।হিসহিস শব্দে বড় বড় সাপ গুলো নিজেদের গর্তে পালালো।ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হলো পরিবেশ সেই সাথে থেমে গেলো জন্তুটির সকল আওয়াজ।ঝোপের আড়াল থেকে খচখচ শব্দে হেটে আসছে কেউ।
ভীত ম্যাপল কাঁদায় হামাগুড়ি দিয়ে সরে আসতে চাইলো।কিন্তু শরীর সায় দিলো না।পেট গুলিয়ে মুখ উপচে বমি করে নেতিয়ে পরে রইলো ভেজা মাটিতে।স্থির আলোক রশ্নি গুলো জলন্ত হয়ে চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলো।পূর্বের থেকেও বেশি আলোকিত হলো চারপাশ।সেই ঝকমকে আলোয় স্পষ্ট হলো আগন্তুক এর চেহারা।
ধীরপায়ে এগিয়ে এসে আহত চোখে হাঁটু গেড়ে ম্যাপলের সামনে বসে সম্মোহিত স্বরে বলে উঠলো
‘খুব কি দেরি করে ফেলেছি প্রিয়তমা?
ক্লান্ত ম্যাপল চোখের জল ছেড়ে অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো
“লিও”
#চলবে