দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন পর্ব-৩১

0
222

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৩১
#সারিকা_হোসাইন

🚫কপি করা নিষেধ❌

ঘুটঘুটে নিশুতি রাতের ধূসর আবছা আকাশে মস্ত খালার ন্যায় ঝকঝকে চাঁদ উঠেছে।এই চাঁদ ক্ষয় হলেই অমাবস্যার সূচনা হবে।রুপালি চাঁদ কে ঘিরে কোটি কোটি তারকার মেলা।ফ্লাকি পাহাড়ের চূড়া যেনো আজ চাঁদের সাথে সন্ধি করেছে।বিশাল আকাশের ঝকঝকে চাঁদ তার পূর্ণ আলো বিলিয়ে দিয়েছে সেই চূড়ায়।মুন লাইটের ফকফকে আলোয় অনন্য সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ফ্লাকি পর্বত।

ম্যাপল কে বুকে জড়িয়ে হাওয়ার বেগে সুউচ্চ চূড়ায় আরোহণ করলো লিও।এতোক্ষন ভয়ে দু চোখ খিচে বন্ধ করে রাখলেও চূড়ার পাদদেশে পা রাখতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো ম্যাপল।চারপাশে হালকা নজর বুলাতেই মোলায়েম ঠোঁটে প্রশস্ত খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো।
পাহাড়ের চূড়ায় সাদা রেশমি কাপড়ের ছোট একটা তাঁবু ঘর।ওক কাঠের চার কোনা কাঠামোর সাথে চতুষ্কোণ করে বাধা চারটি কোনা।প্রতিটি কোনায় ঝুলছে ছোট ছোট টিমটিমে হারিকেন বাতি।যদিও ডেইজি ফুলের সময় নয় তবুও অল্প সংখ্যক ডেইজি মৃদু সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।
কুটির এর পাশেই শুকনো লাল চন্দন কাঠের আগুনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে প্রখর শীত নিবারনের জন্য।জলন্ত শিখার পাশে পাতা ছোট একটা কারুকাজ খচিত মেরুন রঙা মাদুর আর দুটো ঝুড়ি।একটিতে ফল আর শুকনো খাবার অন্যটিতে আঙুরের তৈরি লাল রঙের শ্যাম্পেন।
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চারপাশের প্রকৃতির দিকে নজর বুলালো ম্যাপল।আজ সে হেনরির প্রাসাদের চাইতেও সুউচ্চ শিখরে।এখান থেকে হেনরির প্রাসাদ ছোট কুঁড়েঘর এর ন্যায় ঠেকছে।শিরশিরে শীতল বাতাসে নিজের দুই হাত পাখির ডানার মতো মেলে ধরে মিহি স্বরে বলে উঠলো ম্যাপল

“আকাশ বাতাস আর এই ফ্লাকি পাহাড় তোমরা সবাই শুনো,আমি লিও কে ভালবাসি।লিও শুধু আমার বুঝেছো?তোমরা কেউ ওর দিকে নজর দেবে না।

নিজের প্রেয়সীর এহেন উন্মাদনা দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো লিও।পেছন থেকে ম্যাপল কে জড়িয়ে ম্যাপলের কাঁধে নিজের থুতনি রেখে আদুরে কন্ঠে লিও বলে উঠলো

“সবাই শুনে নিয়েছে তোমার হুঙ্কার এইবার চলো চন্দ্র বিলাস করা যাক।

লিও এর কথা মাণ্য করে লিও এর থাবার ন্যয় হাত জড়িয়ে পা চালিয়ে পাতানো মাদুর এর কাছে এসে দাড়ালো এরপর পাদোকা খুলে নগ্ন পা দুটো ভাঁজ করে বিছিয়ে রাখা মাদুর এ এসে বসলো ম্যাপল।সুযোগ পেতেই ম্যাপল এর কোলে শুয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি মেললো লিও।এরপর হতাশা মিশ্রিত আহত কন্ঠে বললো

“বিধাতা চাইলে এরকম হাজারটি আনন্দময় বর্ষ এবং রাত কাটাতে পারতাম আমরা।কিন্তু খুবই দুর্ভাগা ছিলাম আমরা।তাই না?

নিজের তুলতুলে আঙ্গুলি দিয়ে লিও এর ঠোঁট চেপে ধরে ম্যাপল বলে উঠলো

“পূর্বের কথা মনে করে হৃদয় ভার করোনা।বিধাতার প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে অবশ্যই মঙ্গল নিহিত থাকে।যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।ভুলে যাও পূর্বের বেদনা।নতুন দিনের সূচনার জন্য আমাদের পা বাড়ানো উচিত।

হঠাৎই ম্যাপল কে প্রচন্ড বুঝদার মনে হলো লিও এর কাছে।নিজের শীতল হাতে ম্যাপলের উষ্ণ হাত চেপে ধরে রক্তিম ঠোঁটের কাছে এনে চুমু খেয়ে বলে উঠলো

“ধীরে ধীরে তুমি আমাকে আগলে নিতে শিখে যাচ্ছ শেহজাদী।এবার নিশ্চয়ই আমি চিন্তা মুক্ত।নিজের পাশে তোমাকে পেয়ে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে ।বিধাতা বিদ্বেষী হওয়া সত্ত্বেও বিধাতা আমাকে উত্তম পুরস্কার দিয়েছে।যদি মানুষ হতাম তবে কতই না ভালো হতো।

“তুমি মানুষ হলে আমি কখনোই তোমাকে গ্রহণ করতাম না।

ফট করে কথাটি বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে ফেলল ম্যাপল।
অবাক লিও শোয়া থেকে উঠে বসে ম্যাপলের থুতনি চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখ চোখ রেখে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে আদেশ করলো

“কথাটা আবার বলো।

সামান্য ঝুকে লিও এর ঠোঁটে অল্প কামড়ে ধরে ম্যাপল বলে উঠলো

“যা বলেছি সেটাই সত্যি।এজন্য আমাকে কি এখন পিচাশ পুরুষ সাজা দিবে?

ম্যাপলের গালে নিজের নাক স্লাইড করে লিও বলে উঠলো

“তোমাকে দন্ডিত করার সাহস কোথায় আমার?আমার ধরে যে একটাই মাথা রানী সাহেবা।

ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো খুনসুটি আর রাতের প্রহর।ঝুড়ি থেকে ম্যাপলের পছন্দের টকটকে লাল চেরি হাত বাড়িয়ে নিয়ে ম্যাপলের মুখে গুঁজে দিলো লিও।ম্যাপল ও একটা স্ট্রবেরি লিও এর মুখের কাছে ছুঁইয়ে দিলো।ইচ্ছা না থাকা সত্তেও লিও সেটা খেলো।স্ট্রবেরি খাওয়া শেষ হতেই ম্যাপল চোখ বড় বড় করে অবাক মিশ্রিত কন্ঠে শুধালো

“ভ্যাম্পায়ার রা কি মানুষের মতো ফল আর খাবার খেতে পারে?

লিও অল্প হেসে বলে উঠলো

“খেতে পারে কিন্তু কোনো ফায়দা হয়না।আমাদের প্রধান খাদ্য তাজা র*-ক্ত।রক্ত থেকে আমরা পুষ্টি এবং তৃষ্ণা দুই মেটাই।সাধারণ মানুষের খাবার আমাদের কোনো কাজে আসে না।মাঝে মাঝে কোনো কোনো খাবার আমাদের জন্য বিষ তুল্য।এজন্য আমরা এসব খাবার এড়িয়ে চলি।

ম্যাপল লিও এর পানে শ্যাম্পেন এর বোতল এগিয়ে বলে উঠলো

“আমি দুঃখিত ,আনন্দের অতিশয্যে এই ভুল করে ফেলেছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও।

ম্যাপলের সাথে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে লিও বলে উঠলো

“দুঃখিত হবার কিছুই নেই এখানে।তোমার জন্য বিষক্রিয়ায় মরে গেলেও কোনো আফসোস নেই আমার শেহজাদী।

ধীরে ধীরে বাড়লো ভালোবাসার উষ্ণতা সেই সাথে ঘনিয়ে এলো ভোর।প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং ভালোবাসার উষ্ণতা উপভোগ করতে করতে ম্যাপল কখন লিও এর বাহুডোরে ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়লো তা টের ই পেলো না।

*******
সূচনা হয়েছে রৌদ্রাজল ঝকঝকে এক সোনালী ভোরের।হেনরির প্রাসাদ আজ লোক সমাগমে পরিপূর্ণ।নিজের আত্মীয় থেকে শুরু করে মানব বন্ধু দিয়ে ভরে গিয়েছে ফ্লাকি প্রাসাদ।পুত্রের বিয়েতে কিচ্ছুটির কমতি রাখেন নি হেনরি।বশীভূত করে আনা হয়েছে পোল্যান্ড এর নামজাদা বাবুর্চি দের।তারা সাধারণ মানুষের জন্য রান্না করছে বাহারি খাবার।সেই খাবারের গন্ধ প্রাসাদের চারিধার ম ম করছে।সেই সাথে করা হয়েছে উৎকৃষ্ট সুরা পানের ব্যাবস্থা।আজকের এই খুশির দিনে ভ্যাম্পায়ার দের জন্য ব্যাবস্থা করা হয়েছে পশুর তাজা রক্তের।হেনরির কঠিন নির্দেশ তার পুত্রের বিবাহ চলাকালে কেউ মানুষ বধ করতে পারবে না।বাধ্য সেনার ন্যয় হেনরির আদেশ মান্য করে তাজা ভেড়া ছাগল আর বন্য মহিষের জোগাড় করেছে ভ্যাম্পায়ার সেনারা।আজ চারপাশে শুধু আনন্দ আর আনন্দ।

কাজের এক ফাঁকে সুযোগ পেতেই আলফ্রেড স্যান্ডির হাত চেপে ধরে নির্জন একটি কক্ষে নিয়ে এলো।এরপর শক্ত করে নিজের বুকের সাথে স্যান্ডি কে চেপে ধরে লম্বা শ্বাস টেনে চোখ বন্ধ করে ফেললো।স্যান্ডি আলফ্রেড এর হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পেরে ছোট বাচ্চার ন্যয় আলফ্রেড এর প্রশস্ত বুকে গুটিয়ে রইলো।কীয়তখন গড়াতেই আলফ্রেড বলে উঠলো

“হৃদযন্ত্র টা খুব বেঁচেইন হয়ে ছিলো স্যান্ডি।আরেকটু ধারকান বন্ধ হয়ে যেতো।

আলফ্রেডের কাতর কথায় লজ্জায় মাথা নত করলো স্যান্ডি।ঠোঁট টিপে খানিক হেসে লাজুক চোখে বলে উঠলো

“আমাকে শেহজাদীর কক্ষে যেতে হবে আলফ্রেড।উনাকে সাজানোর দায়িত্ব আমার।

আর আটকালো না আলফ্রেড।সম্মানের সহিত রাস্তা ছেড়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকে নিচু কন্ঠে বলে উঠলো

“আমার কোনো ঘর বাড়ি কিছুই নেই।কিন্তু হৃদয় উজাড় করে তোমাকে ভালোবাসতে পারবো।আমাকে গ্রহণ করবে তুমি?

আলফ্রেড এর কথায় স্যান্ডির হৃদয় ধকধক করে উঠলো।সজল চোখে আলফ্রেড এর দিকে তাকিয়ে স্যান্ডি বলে উঠলো

“আমার কিচ্ছুটি লাগবে না আলফ্রেড।শুধু তুমি হলেই চলবে।

আলফ্রেড তার উত্তর পেয়ে গিয়েছে।সে ভেবে রেখেছে লিও এর বিয়ে হয়ে গেলে সুন্দর সময় সুযোগ দেখে হ্যাভেন কে দিয়ে সে ও নিজের বিয়েটা করে নেবে।অনেক একা একা থাকা হয়েছে।এবার একজন জীবনসঙ্গীর অত্যন্ত প্রয়োজন।

*******
বিশাল ঘের যুক্ত মেরুন আর সোনালী কারুকাজ খচিত অফ সোল্ডার বল গাউন গায়ে জড়িয়েছে ম্যাপল।হিরের তৈরি গহনা মাথা থেকে পা পর্যন্ত।কালচে বাদামি চুল গুলো কাঁধের দুই পাশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।দ্বিখন্ডিত সিঁথি বরাবর ঝুলছে হিরের তাজ আর টিকলি।ঠোঁটে প্রাকৃতিক রক্তিম রঞ্জন।মুখে হালকা প্রসাধনী।মোটা করে কালো রঙের কাজল টানা হয়েছে বড় বড় নেত্রের কোল ঘেঁষে।একমাত্র পুত্র বধূর রূপে মুগ্ধ হয়ে এমিলি তার হাতের হিরের ব্যাঙ্গল ব্রেসলেট খুলে সরু সুন্দর রজনী গন্ধার স্টিকের ন্যয় ম্যাপলের হাতে পরিয়ে বুকে জড়িয়ে কানে চুমু খেলেন।ছেলের জীবনের আগত সুখ মনে পড়তেই হুহু করে কেঁদে উঠলো মাতৃ হৃদয়।আর সময় অপচয় না করে ছুটলেন যেখানে বিয়ে পরানো হবে সেই স্টেজের দিকে।
ফাদারের পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছে হ্যাভেন।যখন সে পোল্যান্ড শহরে ছিলো তখন অনেক দিন চার্চের এক ফাদারের সংস্পর্শে থেকে ঈশ্বরের সমস্ত কাজ সম্পর্কে শিখে নিয়েছে সে।নিজের স্বামীর নির্মল মুখের পানে তাকিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয় ইভা।এই মানুষটির হাত ধরে হাজার হাজার মাইল কণ্টক জড়িত পথ হাসি মুখে পাড়ি দিতে পারবে সে।কতটুকু পুণ্য করলে এমন জীবনসঙ্গী মিলে ইভা তা জানে না।ইভা শুধু জানে হ্যাভেন তার।দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেলেও তার থেকে হ্যাভেন কে কেউ আলাদা করতে পারবে না।

দ্রাকো আর আলফ্রেড মিলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে লিও কে।শেহজাদীর থেকে কোনো অংশে তাকে অসুন্দর লাগা চলবে না।দরকার পড়লে শেহজাদীর থেকেও বেশি সুন্দর লাগতে হবে তাকে।না হলে প্রাসাদের মেয়ে গুলো মুখ ভেংচিয়ে মজা নেবে তাদের সাথে।
কালো রঙের টেইল কোট গায়ে জড়িয়ে গলায় মেরুন রঙের নেক টাই পরে নিলো লিও।ম্যাপলের পোশাকের সাথে মিলিয়ে মেরুন স্যাস আড়াআড়ি ভাবে কাঁধে জড়িয়ে সাজ সম্পূর্ণ করলো লিও।ভেতরের রেশমি সাদা রঙা শার্ট টা একটু বেশি ই মানিয়েছে তাকে।ছোট করে কাটা চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে আলফ্রেড কে শুধালো

‘বলো কেমন লাগছে?রানী সাহেবা কি এই রূপে মুগ্ধ হবেন?

আলফ্রেড এর আগে ড্রাকো লাফিয়ে বলে উঠলো

“আলবাত হবে যুবরাজ।এই রূপ দুনিয়া ঘুরলেও কি মিলবে সহসা?

অহংকারী হাসলো লিও।আয়নাহীন প্রাসাদে নিজের সৌন্দর্য নিজে উপভোগ করা যাচ্ছে না।এদিকে আলফ্রেড বা ড্রাকো কাউকে ভরসা করা যাচ্ছে না।উপায় কি তবে?

হঠাৎই ডাক পড়লো লিও এর।সময় গড়াচ্ছে।বিয়ের কাজ সমাধা করতে হবে।সন্ধে যে গড়িয়ে গেলো প্রায়।

সেনাপতি ড্রাকো আর আলফ্রেড কে নিয়ে ছুটলো লিও।পথিমধ্যে হেনরি তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।পুত্রের চোখে মুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলে উঠলেন

“সুখী হও।
কথাটি বলে নিজের হাতের রাজকীয় রয়াল ট্রেঞ্চেয়ন লিও এর হাতে দিয়ে বলে উঠলেন

“আজকের এই খুশির দিনে এর চাইতে বড় উপহার আমার কাছে তোমাকে দেবার মতো আর কিছুই নেই লিও।আমি সকলের সামনে তোমাকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করবো আজ।প্রস্তুত থেকো।

হেনরি চলে যেতেই হাতে থাকা ট্রেঞ্চেয়ন এর পানে একবার নজর বুলালো লিও এরপর ফুঁস করে শ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো হল রুমের দিকে।

*****
আজকের এই খুশির দিনে নিজের পিতাকে পাশে না পেয়ে কেঁদে বুক ভাসালো ম্যাপল।লিও এর হাতে কে তাকে সোপর্দ করবে?কার বাহু জড়িয়ে পরম নিশ্চিন্তে লিও এর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে সে?
ম্যাপল এর কান্নার হেতু দিনের মতো ঝকঝকে হয়ে গেলো স্যান্ডির কাছে।কাউকে কিচ্ছুটি বলার আগেই হাতে এক গুচ্ছ হুয়াইট ম্যাডোনা লিলি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলেন কিং হেনরি।এরপর আদুরে গলায় বলে উঠলেন

“বাবার সাথে চলো শেহজাদী।তোমার হবু জীবনসঙ্গী অপেক্ষা করছে।

হেনরির কন্ঠে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ম্যাপল।হাসি রত হেনরির পানে তাকিয়ে দ্রুত হাতে চোখের জল মুছে পা বাড়িয়ে উঠে এলো।হেনরি ফুল গুলো ম্যাপলের হাতে দিয়ে নিজের বাহু বাড়িয়ে দিতেই কাঁপা হাতে সেই পেশীবহুল বাহু খামচে ধরলো ম্যাপল।বিগলিত হেসে ওপর হাতে ম্যপলের হাত চেপে ধরে হল রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন হেনরি।

*****
নিজের হবু স্ত্রী কে এক পলক দেখার জন্য অসহনীয় যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে উঠলো লিও।কঠিন হৃদয় আজ হঠাৎই ভীত হলো।সেই সাথে রক্তিম মুখশ্রী হলো ফ্যাকাশে।বাইবেল হাতে কনের অপেক্ষায় সময় গুনতে লাগলো হ্যাভেন।আলফ্রেড আর ড্রাকো কাঁধ চাপড়ে লিও কে স্থির হবার অনুরোধ জানালো।হঠাৎই কেউ একজন চিৎকার করে উঠলো
“ব্রাইড ইজ কামিং”

মুহূর্তেই আনন্দের উল্লাস বয়ে গেলো সকলের মধ্যে।ধীরে ধীরে হেনরির বাহু জড়িয়ে প্রবেশ করলো ম্যাপল।ভীত লিও অবাক চোখে নিজের প্রিয়তমার দিকে গভীর নজর বুলালো।তার কাছে ম্যাপল কে কোন সাধারণ মানবী ঠেকলো না।মনে হচ্ছে স্বর্গের শেহজাদী।
ম্যাপল স্টেজে পা রাখতেই হ্যাভেন তার কাজে অগ্রসর হলো।
খ্রিস্ট ধর্ম অনুযায়ী কিছু আচার পালন করে লিও কে হ্যাভেন শুধালো

“সজ্ঞানে,তুমি কি শেহজাদী ম্যাপল কে গ্রহণ করতে রাজি আছো?
হ্যাভেন এর প্রশ্ন শেষ হবার আগেই লিও উত্তর দিলো

“ইয়েস”

একই প্রশ্ন ম্যাপল কে শুধতেই ম্যাপল লাজুক লতার ন্যয় ঢলে মাথা নিচু করে অস্ফুট স্বরে উত্তর জানালো।

সকলে হাত তালি দিতেই হ্যাভেন বলে উঠলো ম্যাপলের উদ্দেশ্যে

“সামর্থ্য অথবা অস্বমর্থ্য,যুবক অথবা বার্ধক্য, আরোগ্য অথবা ব্যাধি গ্রস্ত,সুখ শান্তি সকল বিষয় মেনে যুবরাজ জর্জ লিও কে স্বামী হিসেবে মেনে আজীবন তার পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করছি।

ম্যাপল হ্যাভেনের শেখানো কথা গুলো মৃদু ঠোঁট নাড়িয়ে নিভু নিভু কন্ঠে বলা শেষ করতেই হ্যাভেন একই প্রশ্ন পুনরায় লিও কে শুধালো।

লিও জোর গলায় কথা গুলো বলতেই হেনরি কে আদেশ দিলো হ্যাভেন লিও এর হাতে তুলে দিতে।হেনরি স্মিত হেসে ম্যাপলের মাথায় হাত বুলিয়ে লিও এর হাতে তুলে দিল ম্যাপল কে সেই সাথে কঠিন গলায় বলে উঠলো

“আমার কন্যাকে তোমার হাতে সোপর্দ করলাম যুবরাজ লিও।তাকে আগলে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আজ থেকে তোমার।আশা করি দায়িত্বের অবহেলা করবে না।

হেনরির কথা শেষ হতেই এমিলি দুটো কাপল রিং এনে মেলে ধরলো দুজনের সামনে।লিও একটি রিং তুলে ম্যাপলের হাতে পরিয়ে দিতেই ম্যাপল আরেকটি রিং তুলে লিও কে পরিয়ে দিলো।

আংটি পড়ানো শেষ হতেই হ্যাভেন বলে উঠলো

“তোমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছো।আজ থেকে তোমরা স্বামী স্ত্রী।দুজনে দুজনের খেয়াল রেখো।কেউ কারো বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।এখন তোমরা দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে ঠোঁটে চুম্বন করে নিজেদের ভালোবাসার সাক্ষী করো সকলকে।

হ্যাভেনের আদেশ পাওয়া মাত্র ম্যাপল কে কাছে টেনে দুই হাতের আজলায় ম্যাপলের ছোট মুখশ্রী ভরে ঠোঁটে দীর্ঘ চুমু আকলো লিও।লিও এর পবিত্র স্পর্শ পেতেই আবেশে দু চোখ বন্ধ করে ফেললো ম্যাপল।সাথে সাথে করতালিতে মুখরিত হলো চারপাশ।নতুন দম্পতি কে স্বাগত জানালো সকলে।
এবার হ্যাভেন আদেশ করলো ফুলের বুকেট ছুড়ে মারার।
দুস্টু হেসে পেছন মুড়ে স্যান্ডির পানে ছুড়ে মারলো সাদা লিলি গুচ্ছ।আলফ্রেড আর স্যান্ডি মিলে সেই বুকেট ধরে ফেলতেই হাসাহাসির রোল ছুটলো চারপাশে।

“পরের শিকার আলফ্রেড আর স্যান্ডি

#চলবে