দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন পর্ব-১১+১২+১৩

0
231

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১১
#সারিকা_হোসাইন

❌কপিরাইট এলার্ট🚫

শুনশান নিস্তব্ধ হেনরির ক্যাসেলে রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে লিও।সারা শরীর জুড়ে অশান্ত তেজের খেলা চলছে।মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে পুরো দুনিয়াকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।লিও এর ভাবমূর্তি অবলোকন করে প্রাসাদের সুউচ্চ ছাদের উল্টোপিঠে ঝুলে থাকা ছোট বড় বাদুর গুলো ভয়ানক চিৎকার করে উঠলো।সেগুলোর দিকে সামান্য তাকিয়ে দাঁত খেচিয়ে উঠলো লিও।হাতের বড় বড় কালো কুচকুচে নখ গুলো আয়ত্ত ছেড়ে পিচাশের রূপে বেরিয়ে এলো।চোখ স্বাভাবিক বর্ণ ছেড়ে ভয়ানক লালচে হলো সেই সাথে ধারালো দন্ত শলাকা বেরিয়ে লিওকে হিংস্র থেকে হিংস্রত্বক করে তুললো।
ক্রোধিত ভয়ানক গর্জে উঠা আওয়াজে হেনরির পানে তাকিয়ে লিও শুধালো

“আমাকে কি করতে হবে বাবা?

ছেলের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললেন হেনরি এরপর গম্ভীর আভিজাত্য নিয়ে বলে উঠলেন

“স্যাম কেলভিন কে সরাসরি আক্রমন এর উপায় বের করো।আমি মনে করি তার জীবনের লম্বা সময়কে এখানেই থামিয়ে দেয়া উচিত।

হেনরি কোন বিষয়কে উল্লেখ করেছে চতুর লিও তা নিমিষেই বুঝে ফেললো।আর সময় না ব্যয় করে বলে উঠলো

“তবে তাই হোক”
কথাটি বলেই পিছন ফিরে হাঁটা ধরলো লিও।

“তোমাকে শেষ করার হাতিয়ার কিন্তু স্যামের জানা আছে”

হেনরির আকস্মিক এহেন কথায় থমকে দাঁড়ালো লিও।এরপর হেনরির চোখে চোখ রেখে বাঁকা সম্মোহিত হেসে বলে উঠলো

“হাজার বছরে হাজার বারের উপরে আমাকে ক্ষয় করার চেষ্টা করেছে সে ।একবারো কি সফল হয়েছে পিতাজী?

ছেলের ভয়ানক দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিলাতে পারলেন না হেনরি।ধীরে ধীরে ছেলেটা খতরনাক হয়ে উঠেছে।ছেলেটার এমন উগ্র আচরণে কমিউনিটির অন্যান্য ভ্যাম্পায়ার রা একপ্রকার রুষ্ট।সুযোগ পেলে তারাও যে ছেলের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না তা ভুল।এদিকে নিজের ভাইয়ের একমাত্র কন্যা ইসাবেল সব কিছু জেনেও লিও কে পাবার স্বপ্ন দেখছে।ব্লাড মুনের সময় ও ঘনিয়ে এলো বুঝি।চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসা বিপদের কথা চিন্তা করে আর দাড়ালেন না হেনরি।

“তুমি এখন যেতে পারো লিও।

কথাটি বলেই প্রস্থান নিলেন উইলিয়াম হেনরি।পিতার যাবার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো লিও।এরপর ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“দীর্ঘদিন তোমার গন্ধ নেয়া হয়না ক্যারোলিন ডিসোজা”

নিজের হৃদয়ের ঘন কালচে ব্যাথা লুকিয়ে সহযোগী আলফ্রেড কে নিয়ে ক্যারোলিন এর কফিন কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো লিও।যদিও সেই কক্ষে তার প্রবেশ নিষেধ।তবুও দূর থেকে দেখেই হৃদয়ে প্রশান্তি মেলে।

“যুবরাজ আর কতদিন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবেন?হয় কোনো মন্ত্রবলে শেহজাদী ম্যাপল কে নিজের করে নিন না হয় ইসাবেল…….

আর কথা শেষ করতে পারলো না আলফ্রেড।গর্জে উঠা কন্ঠে ভয়ানক চিৎকার করে ধমকে উঠলো লিও

“খবরদার আলফ্রেড।আমার ভালোবাসার সাথে অন্যকিছু তুলনা করো না।আমি জেনে বুঝেই এই যন্ত্রণাদায়ক ভালোবাসা বেছে নিয়েছি।ইসাবেল এর প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই।তাকে বলে দিও এই লিও এর কঠিন হৃদয়ে শুধু এক জনেরই বসবাস।দ্বিতীয় কারো স্থান এই হৃদয়ে কেনো এই দৃষ্টির সীমানাতেও সহ্য করবো না।”

আলফ্রেড নিজের চাইতেও লিও কে বেশি ভালোবাসে।চোখের সামনে মালিকের এহেন যন্ত্রনা সইতে না পেরে ই সে অন্যায় কথাটি বলে ফেলেছে।কিন্তু মুহূর্তেই যে লিও এভাবে ক্রোধান্বিত হবে এযেনো স্বপ্নেও ভাবেনি সে।

ক্যারোলিন এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আহত কন্ঠে লিও বলে উঠলো

“আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে তোমার তাইনা?তোমাকে ভালোবেসে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।অথচ তুমি সেসবের কোনো খবরই রাখছো না নিষ্ঠুর মানবী।একটা বার তো এই শূন্য বুকটায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারো!এই হৃদয়ে ক্রমাগত যেই দহন হচ্ছে তা কি একটু শীতল করে দিতে পারো না প্রিয়তমা?

কথাগুলো বলতে বলতে লিও এর গলা ধরে এলো।আরো অনেক কিছুই বলতে চাইলো কিন্তু মুখে আর কিচ্ছুটি উচ্চারণ করতে পারলো না।শরীর দুর্বল লাগছে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে উঠলো।ক্লান্ত কন্ঠে আলফ্রেড কে আদেশ করলো লিও

“উষ্ণ র/ক্তে/র ব্যবস্থা করো আলফ্রেড।খুব তৃষ্ণা পেয়েছে!

*********
“জেনারেল এইডেন কান খুলে শুনে রাখুন,এই প্রাসাদের আশেপাশে কোনো অপরিচিত মানুষ তো দূর একটা পঙ্গপাল পর্যন্ত যেনো ঘেঁষতে না পারে”

কঠিন কন্ঠে কথাটি বলে গভীর নীল চোখে জেনারেল এইডেন এর দিকে উত্তরের প্রতীক্ষায় তাকিয়ে রইলো ফেলিক্স।

নিজের ধারালো তলোয়ার খানা দুই হাতে চেপে ধরে মাথা অবনত রেখে এইডেন প্রভু ভক্তির ন্যায় বলে উঠলো

“একটা পিপীলিকাও চলতে দেবো না রাজকুমার ফেলিক্স”

এইডেন এর কথায় বাঁকা ঠোঁটে হাসলো ফেলিক্স।এরপর ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“খুব শীঘ্রই শেহজাদীর আঠারো পূর্ণ হতে চলেছে”

ফেলিক্স এর কথায় এইডেন এর চক্ষুদ্বয় চকচক করে উঠলো।ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠলো

“খুব শীঘ্রই তবে মহা উৎসবের সূচনা হতে চলেছে”

এইডেন এর কথায় হো হো শব্দ তুলে কিছুক্ষন হাসলো ফেলিক্স এরপর গমগমে ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো

“আসছি তবে।খুব দ্রুত দেখা হবে আবার”

********
গ্র্যবো চার্চের ধর্ম যাজকের সামনে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছেন উইলিয়াম সিগমুন্ড।নিজের একমাত্র কন্যার চিন্তায় ঘুম ,নাওয়া খাওয়া সব ভুলতে বসেছেন তিনি।কখন কোন দিক থেকে বিপদ এসে ঘেরাও করে তা বলা বাহুল্য।

“আমার মতে আঠারো পেরুনোর সাথে সাথেই আপনার কন্যার বিবাহের আয়োজন করা উত্তম।হাজার বছরের অপেক্ষারত পিচাশ যদি একবার আপনার মেয়ের সন্ধান পেয়ে যায় তাহলে কিন্তু আর রক্ষে থাকবে না।

কথা গুলো ধীর স্বরে সিগমুন্ড এর উদ্দেশ্যে বলে কিছুক্ষন থামলেন ধর্মযাজক।এরপর লম্বা শ্বাস টেনে আবার বলতে লাগলেন

“আপনার কন্যার হাতের চিহ্ন টা আঠারো পেরুবার সাথে সাথেই জীবন্ত হয়ে উঠবে।সে যদি ইচ্ছে পোষন করে তবে ওই অভিশপ্ত পিচাশ কে জ্বালিয়ে দিতে পারবে ।কিন্তু…..

“কিন্তু কি ফাদার?

উদ্বিগ্ন হয়ে কথাটি জিজ্ঞেস করে আকুল হয়ে উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলেন সম্রাট সিগমুন্ড।
সিগমুন্ড এর প্রশ্নে ভ্রু কুঞ্চিত করে ভয়ার্ত স্বরে ফাদার বলে উঠলেন

“কিন্তু একবার যদি রাজকুমারীর হৃদয়ে ওই পিচ্যাশের জন্য প্রেম ভালোবাসা জাগ্রত হয় তবে কিন্তু সে তার শক্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে।তখন কিন্তু ওই পিচাশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

ফাদার ম্যাথিউস এর কাছে এমন লোমহর্ষক ঘটনা শুনে থরথর করে কেঁপে উঠলেন সিগমুন্ড।

“এর থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় কি ফাদার?

“শেহজাদী কে এই প্রাসাদ ছেড়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দিন।

কথাটি বলে আর দাড়ালেন না ম্যাথিউস।হাতের বাইবেল আর ক্রুশ চিহ্ন চোখে কপালে বুকে ছুঁইয়ে বিদায় নিতে নিতে বলে উঠলেন

“রাজকুমার ফেলিক্স এর হাতে তুলে দিন ম্যাপল কে।বিবাহ ওই প্রাসাদ থেকেই হোক।একবার যদি শেহজাদীর বিয়ের কথা ওই পিচ্যাশের কান পর্যন্ত যায় তবে কিন্তু আপনার রাজত্ব ধুলোয় মিশে যাবে।”

প্রয়োজনীয় কথা লম্বা সময় ধরে পাড়তে হয় না।একটু ইঙ্গিত দিলেই বোঝা যায়।জ্ঞানী ম্যাথিউস আর কোনো কথা খরচ করার প্রয়োজন মনে করলেন না।নিজের জিনিসপত্র নিয়ে প্রস্থান করলেন।
শুধু চিন্তিত ফেলে গেলেন সিগমুন্ড কে।
আড়ালে দাঁড়িয়ে পুরো কথা শুনে নিলো স্যান্ডি।রাজকুমারী ম্যাপলের জন্য হঠাৎই তার বেশ ভয় হতে লাগলো

“সামনে তো ঘোর বিপদ।কে জয়ী হবে তবে?”

আর দাঁড়ালো না স্যান্ডি।চারপাশে সতর্ক নজর বুলিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে।

“সন্ধ্যার পূর্বেই রাজকুমারীর হাতের দস্তানা বানানো চাই।”

*******
হাটতে হাটতে দিগন্তের সূর্য পুব আকাশ পেরিয়ে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লো।গহীন অরণ্যের বড় বড় গাছ আর ঝোপ ঝাড় মাড়িয়ে ঈশ্বর কে এক মনে ডেকে চলছে হ্যাভেন আর জো।ক্ষুধার্ত শরীরে এক বিন্দু নড়বার শক্তি নেই কিন্তু পা চালিয়ে খুব করে হাটতে হচ্ছে।দৃষ্টি সীমানায় যত দূর দেখা যাচ্ছে চারপাশে শুধু নিথুয়া পাথার।একটু আগেই সূর্যের যেই প্রখর আলো পথের সঙ্গী হয়েছিলো ধীরে ধীরে তা গাছের ঝোপে হারিয়ে গেলো।থেকে থেকে বড় বড় ঝোপ থেকে অদ্ভুত ভয়ানক প্রাণীর আওয়াজ আসছে।ধরণীর বিশুদ্ধ সমীরণ কখনো বোধ হয় এই বনে প্রবেশ করেনি।চারপাশ উত্তপ্ত গুমোট।এই সময়ে পোল্যান্ড এ বরফ ঝরার কথা।অথচ এখানে অসহনীয় গরমে টেকা দায় হচ্ছে।

“পানি পিপাসায় গলা ফেটে যাচ্ছে হ্যাভেন।গায়ে যে আর এক বিন্দু বল নেই”

কাতর কন্ঠে কথাটি বলে একটা গাছ জড়িয়ে ধরে চোখ বুঝলো জো।জো কে শান্তনা দেবার ভাষা হ্যাভেনের নেই।যেখানে নিজেই বিধ্বস্ত সেখানে অন্য কাউকে শান্তনা দেওয়া হাস্যকর।

“মায়ের কাছে যেতে চাওনা?

শক্ত কন্ঠে কথাটি বলে জু কে ফেলে হাঁটা ধরলো হ্যাভেন।হ্যাভেনের পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো জো।এরপর ক্লান্ত জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো

“তুমি বড়োই কঠিন হৃদয়ের মানুষ হ্যাভেন।নামের সাথে তোমার ব্যাক্তিত্ব একদম যায় না”

“ঠিক বলেছ জো।ড্যামিয়েন নাম সঠিক ছিলো আমার জন্য”

সময় কতো গড়িয়েছে কেও জানেনা।শুধু জানে বেঁচে ফিরতে হবে।কিন্তু এই অকুল পাথারে এসে মনে হচ্ছে সেই আশাও ক্ষীন।
ঝি ঝি পোকার কর্কশ ডাকে মন নিশ্চিত হলো

“এখন রাত গড়িয়েছে”

ঘন জঙ্গলের চারপাশে দিকবিদিক হয়ে নজর বুলাতেই দুই চোখ চকচক করে উঠলো দুজনের।পুব দিকের জঙ্গলে ছোট একটা কুঁড়েঘর থেকে মশালের তীক্ষ্ণ আলো দৃষ্টি কাড়ছে।জো কে এক প্রকার টেনে হিচড়ে হ্যাভেন সেই কুঁড়েঘর এর দিকে রওনা হলো

“ওই কুঁড়ে ঘরেই বেঁচে ফেরার রাস্তা আছে নয়তো দুনিয়া থেকে বিদেয় নেবার”

হ্যাভেন এর শক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে জো যেনো হাওয়ায় ভেসে চললো।মুহূর্তেই পৌঁছে গেলো বাড়িটির কাছে।কুঁড়ে ঘরের চারপাশে দৃষ্টি নন্দন ফুলে ঘেরা।অদ্ভুত সব নজরকাড়া ফুল যা এর আগে জো বা হ্যাভেন কোনো দিন দেখেও নি।
তকতকে পরিস্কার বাড়ির আঙিনা।জনমানবের কোনো সাড়াশব্দ নেই।বেশ কয়েকটি মশাল ঝকঝকে কমলা রঙা আলো বিলাচ্ছে।সাহায্যের জন্য গলা বাড়িয়ে হাঁক ডাকার আগেই প্রবীণ থুরথুরে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো

“ভেতরে এসো বাছা তোমার জন্যই তো এতো বছরের অপেক্ষা”

#চলবে

#দ্যা_লাস্ট_মুন
#পর্ব_১২
#সারিকা_হোসাইন

❌কপি করা নিষিদ্ধ🚫

********
থমথমে নির্জন গহীন অরণ্যে বৃদ্ধের কন্ঠটা হ্যাভেনের শরীর কাঁপিয়ে হিম করে তুললো।কিছুক্ষন আগেই যেই শরীর খানা উত্তপ্ততায় ছেয়ে দরদর করে ঘামছিলো নিমিষেই তা বরফ খণ্ডে পতিত হলো।পা দুটো অসাড় হয়ে ভে/ঙে আসতে চাইলো।জো আর হ্যাভেন দুজন দুজনকে শক্ত করে খামচে ধরে কুঁড়েঘর এর ভেতরে দৃষ্টি বুলালো।কিছু সময় গড়াতেই ঝকঝকে পরিস্কার সাদা রঙের কাপড় পরিহিত থুরথুরে এক বৃদ্ধ বেরিয়ে এলো।সঠিক বয়স কতো তা অনুমান করা গেলো না কিছুতেই।মুখের প্রশস্ত হাসিটা একদম জীবন্ত আর হৃদয় মোহিত।এই বয়সেও দাঁত গুলো মুক্তা দানার ন্যায় ঝকঝকে।বৃদ্ধের আগমনে মুহূর্তেই চতুর্পাশ মোহনীয় সুগন্ধে ভরে উঠলো।লাঠি হীন শক্ত পায়ে হেলেদুলে হ্যাভেনের সামনে এসে দাড়ালো বৃদ্ধ।

বৃদ্ধের আগমনে বেশ ভীত হলো হ্যাভেন আর জো।নিজেকে অপ্রস্তুত করে ভয়ার্ত কন্ঠে হ্যাভেন শুধালো

“ক ক কে আপনি?

হ্যাভেনের ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ খানিক রহস্যময় হাসলো এরপর হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো

“বইটা আমার হাতে সোপর্দ করো।

বইয়ের কথা শুনে হ্যাভেন চমকে বিস্ফারিত নেত্রে বৃদ্ধের মাধুর্য যুক্ত চেহারার পানে তাকিয়ে রইলো।চোখে তার হাজারো প্রশ্নের ছলকানি কিন্তু মুখ ফুঁড়ে কিছুই বলতে পারছে না।বৃদ্ধ তার লম্বা হাত খানা এখনো বাড়িয়েই রেখেছে।হ্যাভেনের চোখে চোখ রেখে বৃদ্ধ বলে উঠলো

“আমাকে দেখে অবাক হবার কিছুই নেই।ভয় পেয়ো না বাছা।তোমাদের অপেক্ষাতেই এতোগুলো যুগ আমি একা এই গহীন বনে কাটিয়ে চলেছি।দায়িত্ব যে বড়ই অদ্ভুত জিনিস।একবার প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হলে পালন না করে কি আর উপায় আছে?

বৃদ্ধের কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলো হ্যাভেন ।এরপর ফাঁকা ঢোক গিলে কাঁপা স্বরে শুধালো

“আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।

ভুবন ভুলানো হেসে বৃদ্ধ আভিজাত্য ভরা কন্ঠে বলে উঠলো

“আমি হচ্ছি সৌভাগ্য।আমাকে চেনা কি এতোই সহজ?এর আগে আমায় না কেউ দেখেছে না আমার কথা শুনেছে।

কথাগুলো বলে বৃদ্ধ তার লম্বা সাদা দাঁড়িতে হাত বুলালো।লোকটিকে বিশ্বাস করতে মোটেও সায় দিচ্ছে না হ্যাভেনের মন। তারা আজ এই গহীন অরণ্যে পথ হারিয়ে অন্ধ পথিক হয়েছে।সামান্য এই বইটা নিজের কৌতূহল দমাতে হাতে তুলেছিলো হ্যভেন।বইয়ের মলাট তার দৃষ্টি কেড়েছিল।এটা তো আর কোনো যাদুবিদ্যা নয় যে এই বই হ্যাভেন কে রাতারাতি রাজা বানিয়ে দেবে।নানান ভাবনা ভেবে জামার হুক খুলে বুকের ভেতর থেকে বের করে আনলো অর্ধেক ছিড়ে যাওয়া বই খানা।
বইটা দেখে বৃদ্ধ করুন চোখে তাকালো।দেখে মনে হচ্ছে এখনই কুঁচকানো বৃদ্ধ চোখ থেকে জল খসে পড়বে।
বইটির প্রতি বৃদ্ধের কোন লোভ লালসা চোখে পড়লোনা হ্যাভেনের কাছে।যা ধরা পড়লো তা হলো বেদনা, বিষাদ আর কাতরতা।

কাঁপা হাতে বইটি এগিয়ে দিতেই বৃদ্ধের চোখ থেকে খসে পড়লো দুই ফোটা জল।সেই জলের ফোটা মাটিতে পড়তেই দামি কোহিনুর হিরেয় পরিণত হলো।কিন্তু সেসবে হ্যাভেনের কোন লালসা কাজ করলো না।সে শুধু অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে।

“আপনি কিভাবে জানলেন আমাদের কাছে এই বইটি আছে?

“বিধাতা ভাগ্য যেভাবে সাজিয়েছে তার উপর কি কারো দখলদারি চলে?

বৃদ্ধের কথা গুলো বেশ এলোমেলো আর রহস্য যুক্ত।কথার আগা মাথা কিছুরই খেই ধরতে পারলো না জো আর হ্যাভেন।শুধু একজন আরেক জনের চোখের পানে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

বইটি পরম যত্নে হাতে তুলে আহত কন্ঠে বৃদ্ধ জো আর হ্যাভেনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

“ভেতরে এসো ভাগ্যবান পুরুষ”

আর দাঁড়ালো না বৃদ্ধ।বেদনা যুক্ত বদনে কুঁড়ে ঘরের কক্ষের ভেতর ঢুকে পড়লো।পিছন পিছন জো আর হ্যাভেন ধীরপদে কক্ষে প্রবেশ করলো।

________

মশালের আলোয় ছোট কুঁড়েঘর খানা চকচকে আলোয় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে।কক্ষটির এক পাশে কিছু পুস্তক আর অদ্ভুত ছোট একটি কারুকাজ খচিত বাক্স।আসবাবপত্রের বালাই ও নেই।তবুও ঘরটি দৃষ্টি নন্দন।
মেঝেতে দুটি দস্তর খানা বিছিয়ে বৃদ্ধ শীতল কন্ঠে বলে উঠলো

“অবশ্যই তোমরা ক্লান্ত ক্ষুধার্ত।তোমাদের কিছু খাওয়া প্রয়োজন”

বৃদ্ধের মুখে খাবারের কথা শুনে হ্যাভেন আর জো নিজেদের ভুলে যাওয়া ক্ষুধার কথা পুনরায় মনে করল সেই সাথে পেটের নাড়িভুঁড়ি পেঁচিয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে আস্ত হাতি গিলে ফেললেও এই ক্ষুধা নিবারণ হবে না।
বৃদ্ধ দুই হাতে দুটি আপেল এনে মেলে ধরলো তাদের সামনে।লজ্জা আর সংকোচ কাটিয়ে বাজ পাখির মতো ছো মেরে বৃদ্ধের হাত থেকে আপেল দুটো নিয়ে কা/ম/ড় বসালো দুজনে।

আপেল খানা মুখে দিতেই দুজনের চোখ আবেশে বন্ধ হয়ে এলো।এতো রসালো মিষ্টি সুস্বাদু আপেল এর আগে কখনো খায়নি তারা।আপেলের রংটাও অদ্ভুত।ধবধবে সাদা রঙের আপেল।মনে হচ্ছে এটা আপেল নয় স্বর্গের কোনো খাদ্য।প্রতিটা কা/ম/ড়ে পেট ভরে উঠছে।

ছোট দুটো আপেল অথচ অল্প খেতেই উদর পরিপূর্ণ হলো কানায় কানায়।বৃদ্ধ তাদের দিকে তাকিয়ে বিগলিত হেসে বলে উঠলো

“কেমন উপভোগ করলে স্বর্গীয় ফল?

হ্যাভেন আর জো বৃদ্ধের কথায় অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।সব কিছু তাদের কাছে স্বপ্নের ন্যায় ঠেকছে।মনে হচ্ছে ঘুম ভেঙে গেলেই নিজেদের মুক্তি মিলবে এই অদ্ভুত ভয়ানক জগৎ থেকে।কিন্তু এই সুদীর্ঘ নিদ্রা ভাঙবে কখন?

নিজেদের খাওয়া শেষ হতেই বুকে কিছু সাহস সঞ্চয় করে হ্যাভেন ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“যদি কিছু মনে না করেন তাহলে এই বই সম্পর্কে জানতে চাই।

হ্যাভেনের কথায় বৃদ্ধের মুখের হাসি উবে গিয়ে বেদনার মেঘ জমলো।হ্যাভেনের জিজ্ঞাদু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিষন্ন কন্ঠে বৃদ্ধ বলে উঠলো

“চলো তবে হাজার বছর আগের ঘটনা জানা যাক।

*******
“এই দস্তানা দিয়ে আপনি কি করবেন রাজকুমারী?
অবাকের স্বরে প্রশ্নটি করে ম্যাপলের মুখের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রয় স্যান্ডি।

নিজের সরু সুন্দর হাতে দস্তানা গুলো পরতে পরতে রাজকুমারী সামান্য হেসে বলে উঠলো।

“কখনো কাউকে শক্ত হাতে আলিঙ্গন করেছো স্যান্ডি?

স্যান্ডি কোনো উত্তর দেয় না।যার জীবনের পুরোটাই কাটবে প্রাসাদের কঠিন দেয়ালের ভেতরে অন্যের দাসত্ব করে তার আবার কিসের আলিঙ্গন?

স্যান্ডি কে চুপ থাকতে দেখে ম্যাপল পুনরায় শুধায়

“কি ভাবছো স্যান্ডি?

স্যান্ডি কিছুক্ষন কাচুমাচু করে চারপাশে সতর্ক নজর বুলিয়ে নিচু স্বরে বলে উঠে

“আপনাকে রাজকুমার ফেলিক্স এর প্রাসাদে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে রাজকুমারী।আমাদের আর কখনো সাক্ষাৎ হবে না।আজ রাত টুকুই সময় আছে আপনার হাতে।এরপর আপনি অন্য প্রাসাদে স্থানান্তর হবেন।শুধু তাই নয় আপনার বিবাহ পর্যন্ত এই প্রাসাদে হবে না”

কথা গুলো বলে সামান্য দম নিলো স্যান্ডি।এরপর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো

“কেউ আপনাকে হাজার বছর ধরে ভালোবাসে রাজকুমারী।আমি জানিনা সে মানুষ নাকি অন্যকিছু।কিন্তু তাকে শেষ করে দেবার পরিকল্পনা হচ্ছে প্রাসাদ জুড়ে।আপনার মনে তার জন্য প্রেম উদ্রেক হবার আগেই তার জীবনের শেষ পরিণতি ঘটবে”

স্যান্ডির কথায় ম্যাপল যেনো আকাশ থেকে পড়লো।এমন কঠিন সত্য দিনের পর দিন কিভাবে তার বাবা তার থেকে চেপে রেখেছে?

“তিনি কি নিজের কন্যার ভালো চাইতে গিয়ে কন্যাকে আরো বিপদে ঠেলে দিচ্ছে স্যান্ডি?

কান্না জড়িত কন্ঠে কথাটি বলে ঠোঁট টিপে দাঁড়িয়ে রইলো ম্যাপল।সব কিছু গোলকধাঁধার ন্যায় ঠেকছে।যেখানে রাজকুমার ফেলিক্স এর জন্য তার মনে কোনো অনুভূতি ই নেই সেখানে বিবাহ তো অনেক দূরের বিষয়।

নিজের কষ্ট লুকিয়ে কঠিন কণ্ঠে ম্যাপল বলে উঠলো

“তুমি এখন যাও স্যান্ডি।আর আমাকে নিয়ে ভেবোনা।আমি এই প্রাসাদ ছেড়ে কোত্থাও যাবো না।রাজকুমার ফেলিক্স কখনো আমার দখল পাবে না।আমি নিজে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।রাজ পরিবারের শেহজাদী হিসেবে নিজের বিবাহের বিষয়ে কথা বলার পূর্ণ অধিকার আমার আছে স্যান্ডি।”

রাজকুমারী ম্যাপলের আদেশ পাওয়া মাত্র নিজের লম্বা স্কার্ট দুই হাতে ধরে বিদায় নিতে উদ্দত হলো স্যান্ডি।কিন্তু যাবার আগে পিছন ফিরে পুনরায় বলে উঠলো

“শুনেছি সে রক্ত পিচাশ”

আর দাঁড়ালো না স্যান্ডি।এতো রাতের বেলা শেহজাদীর কক্ষে কেউ তাকে দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হবে।হাজারটা প্রশ্ন জুড়ে দিবে নিমিষেই।জেনারেল এইডেন কে আজকাল কেমন যেনো লাগে।দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালে মানুষ কম নেকড়ে বেশি লাগে।যদিও স্যান্ডি কখনো নেকড়ে দেখেনি।তবুও তার এমনটাই অনুভূতি হয় এইডেন এর পানে তাকালে।এর সঠিক কারণ অবশ্য স্যান্ডির জানা নেই।

“জেনারেল এইডেন কে একটু পরখ করে দেখা চাই”

*********
রাতের দ্বিতীয় প্রহর চলছে।নিজের প্রাসাদে সমানে পায়চারি করছে লিও।ম্যাপলকে দুই চোখ ভরে দেখার জন্য হৃদয় ছটফট করছে।কিন্তু তাকে এখন যেতে হবে স্যাম কেলভিন এর সামনে।মুখোমুখি একবার জানতে হবে তার সমস্যা কোথায়?

“শেহজাদীর হাতিয়ার নাকি লিও এর জীবন”

যেটাই চাক সে কোনোটাই পূরণ করা সম্ভব নয়।তাই স্যাম কে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াকেই লিও এর ভালো পন্থা মনে হচ্ছে।হঠাৎই লিও এর মনে হলো স্ভিনিকিয়া পর্বতে যেতে হলে আগে ক্রাকোয়া পরবে তার পর গ্রাবো এর পর স্যাম কেলভিন এর আস্তানা।
“যাবার পথে একনজর প্রিয়তমা কে দেখে গেলে ক্ষতি কোথায়?
যেই ভাবনা সেই কাজ।আর একমুহূর্ত বিলম্ব করলো না লিও।হাওয়ার বেগে ফ্লাকি পর্বতের প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে এলো।যাবার আগে নিজের ধারালো হাজার বছরের মন্রপুত তলোয়ার খানা নিতে ভুললো না।

“যদি স্যাম কেলভিন অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে তবে এই হাতিয়ার দিয়েই তার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে আনবো।”

রাত গভীর হবার সাথে সাথেই নিজেকে উত্তম রূপে সজ্জিত করে নিলো ম্যাপল ।গায়ে জড়ালো ওসিন ব্লু রঙের অফ সোল্ডার প্ৰম্প গাউন,কালচে বাদামি চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে গলার নীচে সামান্য সুগন্ধি মেখে নিলো।ঠোঁটে গাঢ় লাল রঞ্জন লাগিয়ে বাদামি মনি যুক্ত চোখে কাজল লেপ্টালো।কাঁধের দুই পাশে চুল মেলে দিয়ে কক্ষকে অন্ধকার করে শক্ত করে খিল এঁটে দিলো।হাতে ভারী দস্তানা জড়িয়ে নিজের বৃহৎ বারান্দায় এসে অপেক্ষা করতে লাগলো পছন্দের পুরুষের।
যেই নারী কখনো কোনো পুরুষের সান্নিধ্য পায়নি তার কাছে পিচাশ ই কি আর সাধারণ মানব ই কি?মন যখন কারো প্রতি বিশাল রকম বেকাবু হয় তখন সেই মনের লাগাম টেনে ধরা বেশ কঠিন।কখন কার জন্য কার মনে ভালোবাসা জাগ্রত হবে এটা কেউ বলতে পারবে না।মস্তিষ্কের কথা না শুনে মনের কথা মতো চলাই উত্তম।

“তোমাকে এই বুকে জায়গা দিতে মন যে বেশ অশান্ত হয়েছে সুদর্শন পুরুষ।এতো গুলো বছর কেটেছে কখনো কারো জন্য এধরনের অনুভূতি হয়নি।তবে তোমার জন্যই কেনো?

“কারন আমিই তোমার ভবিতব্য”

আভিজাত্য ভরা হাস্কি সম্মোহিত কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো রাজকুমারী ম্যাপলের।সামনে দাঁড়ানো কালো পোশাকে আবৃত বিশাল দেহি সুপুরুষ এর সৌন্দর্যে সামান্য ফাঁকা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললো।প্রচন্ড রকম লজ্জা লাগছে।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে পাতালে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।

“ইশ কি লজ্জা।সে আমার মনের কথা শুনে নিয়েছে”

“এখনো সব শুনতে পাচ্ছি”

কথাটি বলেই বাঁকা হাসলো লিও।নিজেকে বেশ অপ্রস্তুত লাগছে ম্যাপলের কাছে।হঠাৎ এতো সাজসজ্জার কারন যদি এই অসভ্য পুরুষ জিজ্ঞেস করে তখন কি উত্তর দেবে সে?

“তোমাকে খুব মোহনীয় লাগছে শেহজাদী।খুব করে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তোমাকে ছুঁয়ে দেবার অধিকার আমার নেই।আমি অভিশপ্ত পিচাশ।আমি ছুঁয়ে দিলে তোমার জীবন হুমকির মুখে পতিত হবে”

লিও এর অসহায় কন্ঠের কথায় থরথর করে কেঁপে উঠলো ম্যাপল।তিরতির করে কাঁপছে তার টকটকে ওষ্ঠদ্বয়।চোখ উপচে জল বেরুতে চাইছে।যার সামান্য উষ্ণ স্পর্শের জন্য এতো কিছু সে তাকে ছুতেই পারবে না?

নিজের কস্টকে দূরে ঠেলে কাঁপা স্বরে ম্যাপল বলে উঠলো

“আমি হাজার বার হুমকির মোকাবেলা করতে প্রস্তুত”

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না লিও।এই ছোট সাধারণ মানবী বলছে কি এসব?মেয়েটি কি আদৌ জানে তার সাথে ঠিক কি কি হতে পারে?

কষ্ট জর্জরিত হেসে ঘুরে দাঁড়ালো লিও।এরপর হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

“জীবন নাশ হতে পারে মেয়ে তোমার”

“তবুও আমি তোমাকেই গ্রহণ করবো।

নিজের বুকের অসহনীয় যন্ত্রনায় টিকতে পারছে না লিও।মনে হচ্ছে ছাতি ভেঙে হৃদ যন্ত্র এখনই বাইরে বেরিয়ে আসবে।চোখ ফেটে কঠিন কান্না আছড়ে পড়তে চাইছে।ব্লাড মুনের আগে কোনো ভাবেই শেহজাদীর কোনো বিপদ হতে দেয়া যাবে না।স্যাম কেলভিন এর খেলা শেষ করে তবেই নিজের ভালোবাসা জয় করবে সে।যেখানে হাজার বছর অপেক্ষা করতে পেরেছে সেখানে কয়েকটা দিন ঠিক জলের মতো চলে যাবে।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্থান করাকেই লিও অধিক বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলো।এখানে থাকলে যেকোনো দু/র্ঘ/ট/না ঘটে যাবে।

“আসছি,আবার দেখা হবে কোনো সময়”

লিও পিছন ফিরে বিদায় জানাতেই ঝড়ের বেগে লিও কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ম্যাপল।মুহূর্তেই লিও এর শরীরে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে গেলো।হাত থেকে পরে গেলো তলোয়ার খানা।হাজার বছরের জ্বলে উঠা আগ্নেয়গিরির লাভায় কে যেনো এক সমুদ্র জল ঢেলে দিলো।উত্তপ্ত ব্যাথিত মন নিমিষেই উপশমিত হলো।কড়া পড়া কালচে হৃদয়ের সকল ব্যাথা খুলে খুলে পড়লো।অজানা শান্তিতে চোখ বুজে এলো।শক্ত মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটো আপনা আপনি ম্যাপলের নগ্ন পিঠ স্পর্শ করলো।ধীরে ধীরে শক্ত হলো হাতের বলিষ্ঠ বেষ্টনী।

ম্যাপল এখনো ফুঁপিয়ে চলেছে।লিও এর বিশাল বুকে শীর্ন ম্যাপলের ছোট দেহখানা হ্যামস্টার এর ন্যায় ঠেকলো লিও এর কাছে।আবেশে দুই চোখ বুজে ম্যাপলের মাথায় চুমু আকলো লিও।
কান্না জড়িত মুখে লিও এর পানে তাকিয়ে ম্যাপল বলে উঠলো

“আমার ভালোবাসা এতোটাও ঠুনকো নয় কঠিন পুরুষ”

ম্যাপল কে আলিঙ্গন মুক্ত করে ম্যাপলের মুখ হাতের আজলায় ভয়ে চোখের পাতায় চুমু খেলো লিও।এরপর কাতর কন্ঠে বলে উঠলো

“হাজার বছরের জলন্ত অঙ্গার আজ শীতল হলো।

লিও এর টকটকে লাল ঠোঁট ম্যাপলের চোখে সম্মোহন জাগালো।নেশাক্ত ব্যাক্তির ন্যায় নিজের ওষ্ঠ দিয়ে আকড়ে ধরলো লিও এর ভয়ানক লালচে ঠোঁট জোড়া।
চোখ বুজে ফেললো লিও।এই প্রথম তার চোখ গড়িয়ে নোনতা জলের ফোটা ঝড়লো।
হ্যাচকা টানে ম্যাপল কে কোলে তুলে নিজের অদম্য শক্তিতে দখল নিতে লাগলো প্রিয়তমার ঠোঁটের মধু।
বহুদিনের তৃষিত মরুভূমির ন্যায় হৃদয় যেনো আজ পরিপূর্ণ তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হলো।নিজের বুকের সাথে ম্যাপলকে মিশিয়ে কপাল ঠেকিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে লিও বলে উঠলো

“লিও এর থেকে স্বয়ং মৃত্যুও তোমাকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না শেহজাদী”

#চলবে

#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

*********
বৃদ্ধের সামনে বাবু আসনে বসে আছে হ্যাভেন আর জো।কুঁড়েঘর এর চারপাশ থেকে নেশা ধরানো সুগন্ধি ভেসে আসছে।এই সুগন্ধি না কোনো ফুলের আর না কোনো কৃত্তিম বস্তুর।এই সুগন্ধি ভেসে আসছে মশালের উদ্দীপ্ত শিখা থেকে।গহীন বন অথচ এখানে কোনো নিশাচর প্রাণীর ডাক নেই এমনকি ভয়ানক কোনো প্রাণীর গর্জন পর্যন্ত কানে লাগছে না।চারপাশ নীরব নির্ভার।
বৃদ্ধ তার সামনে পাতা উঁচু বাদামির উপর বইটা সযত্নে রাখলেন।এরপর চোখ বন্ধ করে লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিলেন।খনে খনে বৃদ্ধের চেহারার রঙ পরিবর্তন হচ্ছে।হ্যাভেন আর জো বৃদ্ধের মুখের পানে তাকিয়ে নীরবে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে চলেছে।
হঠাৎই বৃদ্ধের ঠোঁটে প্রশান্তির প্রশস্ত হাসির রেখা খেলে গেলো।এই হাসির মানে হ্যাভেন আর জো জানেনা।কিন্তু তারা পুরো ঘটনা জানতে চায়।কাকে নিয়ে লিখা হয়েছে এই বই?ওই ভয়ানক প্রাসাদে কারা থাকতো বা এখনো কে থাকছে?ওই ফুলে সজ্জিত কফিনের রহস্য কি সব জানতে চায় তারা।কিন্তু বৃদ্ধ যেহেতু তাদের আশ্বাস দিয়েছে তাহলে সে ঠিকই হাজার বছর আগের ঘটনা তাদের বলবে।অযথা নিজের অস্থিরতা অন্যের সামনে প্রকাশ করে বোকামির পরিচয় দেবার কোনো মানে হয়না।

“অবশেষে দুটি হৃদয়ের মিলন হলো তবে”!

সম্মোহিত স্বরে কথাটি বলে চকচকে চোখ দুটো খুলে তাকালো বৃদ্ধ।তার চোখে মুখে তৃপ্তি জনিত খুশির ঝিলিক।ঠোঁটের সাথে সাথে যেনো চোখ দুটোও সমান তালে হেসে চলেছে।
বৃদ্ধের এমন রহস্যময় হাসি আর কথার মানে কি?

হ্যাভেনের মুখের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ তাদের মনের কৌতূহল বুঝলো।মুখে হাসির রেখা ধরে রেখেই বলে উঠলো

“জানো এই বই কাকে নিয়ে লিখা হয়েছে ?
নম্র কন্ঠে কথাটি শুধিয়ে হ্যাভেন আর জো এর প্রতিক্রিয়া বুঝার চেষ্টা করলো বৃদ্ধ।
তারা দুজনে মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো এই বই কিসের তা তারা জানেনা।
বৃদ্ধ বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বলে উঠলো

“শেহজাদী ক্যারোলিন ডিসৌজা আর রক্ত পিপাসু যুবরাজ জর্জ লিও কে নিয়ে”

নাম দুটো খুবই অপরিচিত ঠেকলো তাদের দুজনের কাছে।কোনো দিন এই নাম শুনেছে কি না মস্তিষ্ক হাতড়ে মনে করতে পারলো না।কোনো প্রাচীন সভ্যতার মানুষ হবে হয়তো তারা।।যাদের অস্তিত্বের খবর পর্যন্ত কেউ জানেনা।সেরকম বিখ্যাত কেউ হলে অবশ্যই তাদের নাম পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হতো।নয়তো সকলের মুখে মুখে এই নামের চর্চা থাকতো।

বৃদ্ধ স্মিত হেসে বলে উঠলো

“চলো এক নির্মম ভালোবাসার কাহিনী জানা যাক”

আগ্রহী হ্যাভেন আর জো এর পানে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন বৃদ্ধ।

“আজ থেকে বারো শত বছর পূর্বে পোল্যান্ড শহর আজকের শহরের মতো এতো জনবহুল ছিলো না।বিশেষ কিছু অংশ নিয়ে জনমানব বসবাস করতো আর বাকি সব জায়গা জুড়ে ছিলো সমতল ভূমি,সমুদ্র ,নদী আর বড় বড় পর্বত।ঠিক সেরকম একটি পর্বতের নাম ছিলো রাইসি।সেই রাইসি উপত্যকার বিশাল গুহায় বাস করতো র/ক্ত/পি/চাশ রা।র/ক্ত পিচাশ আর সাধারণ মানুষ ছিলো ঘোর শত্রু।পিচাশ দের উদ্দেশ্য ছিলো সকল মানুষকে দাশ বানিয়ে পৃথিবীতে রাজত্ব করা।কিন্তু পুরো এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে একজন সাধারন মানুষ আর পিচাশের পরিণয়ের কারনে।সেই পিচাশ হলো উইলিয়াম হেনরি।নিজেদের কমিউনিটির বিরুদ্ধে গিয়ে পিচাশ দেবতার আদেশ অমান্য করে দৈহিক মিলন ঘটিয়ে ফেলে সেই দুর্বল মানবীর সাথে।এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পিচাশ সাম্রাজ্য সেই সাথে দেবতা এম্ব্রজিও।কিন্তু
শক্তিশালী ক্ষমতাবান হেনরির তোপে টিকতে পারেনি বাকি পিচশরা।নিজের যোগ্যতা আর শক্তিতে হেনরি রাজা বনে গেলো।ওই সাধারণ মানবীও নিজের জাত ধর্ম ফেলে পিচাশ কে স্বামী রূপে গ্রহণ করলো।ঘটনা এখানেও শেষ হলে পারতো।কিন্তু না, ঘটনার সূত্রপাত হলো আরো পরে।হেনরি আর এমিলি নিজেদের ভালোবাসার পরিণতি ঘটাতে পেরেছিলো ঠিকই কিন্তু সন্তান জন্মদানে অক্ষম হলো দুজনেই।হেনরি যখন সন্তান উৎপাদন করতে ব্যার্থ হলো ঠিক সেই সময়ে কমিউনিটিতে হেঁনরিকে কটাক্ষ করে বাকি পিচাষ রা নানান বাজে কথা বলতে লাগলো।পারলে তারা যেনো হেনরিকে সিংহাসন চ্যুত করে এমনটি হলো সেই অতীত অবস্থা।এমিলির উপর ও শুরু হলো নানান অত্যাচার।শেষমেশ নিরুপায় হয়ে এমিলিকে পিচাশ হতে হয়েছিলো।নিজের ভুলের সংশোধন হিসেবে হেনরি পিচাশ দেবতা এম্ব্রজিও এর পায়ে মাথা ঠুকে নিজের ভুল মেনে নেয়।এবং কথা দেয় এমিলির গর্ভে যদি কখনো কোনো পুত্র সন্তান আসে তবে হেনরি তাকে এম্ব্রজিও এর পদতলে সোপর্দ করবে।হেনরির এই ত্যাগ মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট হয় এম্ব্রজিও।শেষপর্যন্ত এমিলিকে তিনি সন্তান লাভের বর দান করেন।
বিবাহের দুশো বছর পর এমিলি সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়।ভবিষ্যৎ বাণীতে বলা হয় এমিলির গর্ভের সন্তান এই বিশ্বজয় করবে।শুধু তাই নয় পুরো পৃথিবী হবে তার দাশ।সেই সন্তানের তর্জনী আঙ্গুলির ইশারায় মাথা নিচু করবে বিশাল পর্বত আর সমুদ্র।
হেনরির আর এমিলির ঘর আলো করে এসেছিলো পৃথিবীর সবচাইতে সুদর্শন পুত্র লিও।যার চোখের পলকেও গাছের পাতা নড়তো।হেনরি তার প্রতিশ্রুতি মতো দেবতা এম্ব্রজিও এর হাতে তুলে দেয় লিও কে।।
ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে লিও আর মানুষ সম্পর্কে তার মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয় বিষাক্ত শত্রুতা।মেয়ে মানুষের প্রতি তাকে করে তোলা হয় বিদ্বেষী।মানুষের উষ্ণ র/ক্তের পাশাপাশি কুমারী কিশোরীর র/ক্ত/পানে আগ্রহী করে তোলা হয় লিও কে।তাকে বোঝানো হয় কুমারী কিশোরীর র/ক্তে শক্তি বেশি।ধীরে ধীরে লিও এর প্রিয় ভোগ্য পণ্যে পরিণত হয় সুন্দরী নারী।সারা রাত কঠিন যৌন লালসার পর ভোর রাতে তাদের উষ্ণ র/ক্ত পান করে ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়তো লিও।

“কিন্তু ভাগ্য কি কখনো পরিবর্তন করা যায়?”
সৃষ্টিকর্তার উপর যে কারো হাত চলে না বাছা”
সৃষ্টিকর্তা কখন কার জন্য কি খেলা ভেবে রেখেছেন তা বোঝা বড়োই যে দায়।
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হবার সাথে সাথেই বাবার মতো ঠিক একই ভুল করে বসে যুবরাজ লিও।
ফ্লাকি সাম্রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যা ক্যারোলিন কে কবে কবে নিজের হৃদয় বিলিয়ে দিয়েছে তা টেরই পায়নি।সেই মানবীকে ব/ধ করতে গিয়ে নিজের কঠিন হৃদয় টাই বধ করে ফেলেছে যুবরাজ লিও।ধীরে ধীরে বেড়েছে হৃদয়ের লেনা দেনা।সুমধুর প্রেম আর গভীর ভালোবাসা।নিজের পিচাশ স্বত্তা বিসর্জন দিয়ে সেই মানবীতে মজে গেলো লিও।সেই একই মানবীর প্রেমে হৃদয় হারালো নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন।ধীরে ধীরে পুরো রাজ্য জুড়ে প্রচার হলো রাজকুমারী ক্যারোলিন একজন পিচাশের প্রেমে মজেছে।
রাজ্যের সাধারঙ মানুষের কটাক্ষে ক্যারোলিন এর পিতা কঠিন ভাবে মেয়েকে বন্দি করলেন।কিন্তু তাতেও কি কোনো ফায়দা হলো?
যে হবে পুরো দুনিয়ার অধিশ্বর তার কাছে ওই ঠুনকো বন্দি শালা কি ই বা আসে যায়?
ফ্লাকি সম্রাট এনটনী ডিসৌজা খুঁজে খুঁজে বের করে আনলেন মন্ত্রে পরিপূর্ণ এক তান্ত্রিক ।সেই তান্ত্রিকের কথা মতো শুরু হলো লিও কে শেষ করবার হট্টগোল।
এদিকে স্যাম কেলভিন মুহূর্তে মুহূর্তে রাজকন্যাকে নিজের করবার বাসনায় উন্মাদ হলো।প্রাসাদের গোপন চক্রান্তের খবর না জেনেই হামলা করে বসলো ফ্লাকি সম্রাজ্যে।স্যাম এর এহেন ঘৃণ্য কাজে প্রাণ হারালো শত শত সাধারণ প্রজা।সেই দোষ ও গিয়ে পড়লো লিও এর উপর।দেবতা এম্ব্রজিও নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে এক কঠিন অভিশাপ দিলেন হেনরি পুত্র লিও কে।

“তোমার জীবনে কোন মানবী ই আসবে না যুবরাজ লিও।তুমি হবে অভিশপ্ত ক্ষমতাহীন দুর্বল পিচাশ।যেই মানবী তোমার সংস্পর্ষে আসবে তার জীবন হবে বিপন্ন ।আর ওই রাজকুমারীর খুব নৃ/শং/স মৃ/ত্যু হোক।যতবার তার পুনর্জন্ম হবে আর সে মা/রা যাবে ঠিক ততোবার তুমি বেঁচে থেকেও মৃ/তে/র ন্যায় নরক যন্ত্রনা ভোগ করবে।যদি সকল নিয়ম ভঙ্গের পর তুমি তার অস্তিত্ব খুঁজেও পাও মনে রেখো ব্লাড মুন আসার আগে তার বিভৎস মৃ/ত্যু/ হবে আর এর জন্য দায়ী থাকবে সম্পূর্ণ রূপে তুমি।তুমি পিচাশ হয়েই আজীবন বেঁচে থাকবে তবে তোমার হৃদয়ে জ্বলতে থাকবে আগ্নেয় গিরির সুপ্ত ভয়ানক অঙ্গার”

নিজের প্রতি এহেন ভয়ানক ঘৃণিত অভিশাপে ক্রোধ সংবরন করতে না পেরে নিজের ধারালো জাদুর তলোয়ার দিয়ে এক কো/পে এম্ব্রজিও এর শিরোচ্ছেদ করে ফেলে লিও।এম্ব্রজিও বিনাশ হলেও তার অভিশাপ ঘুরতে থাকে লিও এর চতুর্পাশে।

যেই তান্ত্রিক কে সম্রাট এনটনী প্রাসাদে নিয়ে এসেছিলো লিও এর প্রাণ নাশের জন্য সেই তান্ত্রিক ছিলো লোভী স্বার্থান্বেষী।রাজকুমারী ক্যারোলিন কে দেখেই তার চোখ চকচক করে উঠে।তার লকলকে লোভী মন বলে উঠে

“বিশেষ তিথিতে জন্ম নেয়া সৌভাগ্যবতী এই অসাধারণ মানবীকে দিয়ে এই পৃথিবীর যে কোনো কিছু হাসিল করা সম্ভব।শুধু তাই নয় রক্তাক্ত পূর্ণিমার রাতে রাজকুমারীর হৃদপিন্ডের উষ্ণ রঞ্জন একবার কারো শরীরে মাখালে সেই শরীর হবে অমর।

ব্লাড মুনের আরো দুদিন বাকি।ধূর্ত তান্ত্রিক নিজের অমরত্ব লাভের আশায় মন্ত্রবলে বসে আনে সম্রাট এনটনী সহ প্রাসাদের সকল মানুষকে।শুধু তাই নয় ক্যারোলিন কে জীবন্মৃত করে রাখার সকল ব্যাবস্থা করে ফেলে গোপনে গোপনে।

এদিকে ক্যারোলিন কে দেখতে না পেয়ে লিও এর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
ক্রোধিত হিংস্র লিও ফ্লাকি প্রাসাদের সকল বাধা ভে/ঙে ক্যারোলিন এর খুঁজ চালাতে থাকে।এদিকে সুযোগ বুঝে গুপ্ত কক্ষে ঢুকে পরে তান্ত্রিক।
লিও কে বাধা দিতে বাধ্য দাসের ন্যায় এগিয়ে এলো শত শত সেনা।কিন্তু লিও সবাইকেই প্রতিহত করে ক্যারোলিন এর নাম ধরে চিৎকার করে উঠলো।

“শেহজাদী ক্যারোলিন তুমি আমার সামনে এসো।আজ যেকোনো মূল্যে এই নরক থেকে তোমাকে আমি পরিত্রাণ করবো।

কিন্তু হায় ক্যারোলিন এর কোনো শব্দ ভেসে আসে না।লিও এর হৃদয় যখন ক্যারোলিন কে না পেয়ে ছটফট করে উঠলো এমন সময় মুখে ভৎসর্নার হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলো সম্রাট এনটনী।
এনটনিকে দেখতে পেয়ে লিও ডাঙ্গায় তোলা মাছের ন্যায় ছটফট করতে করতে অশ্রু সিক্ত নয়নে শুধালো

“ক্যারোলিন কে আমার সামনে আনুন।ওকে আমি নিতে এসেছি।

#চলবে