#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৪
#সারিকা_হোসাইন
“একজন র/ক্ত পিপাসু হয়ে আমার পবিত্র কন্যাকে ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে অপবিত্র করতে চাস?জানিস এর জন্য তোর কতো ভয়াবহ শাস্তি হতে পারে?আর আট দশটা মানবীর মতো আমার কন্যাকে যদি সাধারণ ভেবে থাকিস তাহলে তুই ভুল করছিস পিচাশ পুত্র”!
সম্রাট এনটনীর এসব হেঁয়ালি কথাবার্তায় লিও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে থরথর করে কেঁপে উঠলো।মস্তিষ্ক বার বার বলছে
“এই মূর্খ সম্রাটের মাথা টা এক কো/পে কে/টে ফেল।
কিন্তু মন বলছে
“সে ক্যারোলিন এর জন্মদাতা পিতা।তাকে আঘাত করা মানে ক্যারোলিন কে কষ্ট দেয়া।
“তোকে আজ এই মুহূর্তে এই প্রাসাদে ব/ধ করবো আমি র/ক্ত পিচাশ”
মুখে হিংস্রতা ফুটিয়ে তলোয়ার উঁচিয়ে কথাটি বললেন সম্রাট এনটনী।সম্রাটের এহেন কথায় লিও বিগলিত হাসলো।সেই হাসির শব্দ প্রাসাদের পাথুরে দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ভয়ানক প্রতিধ্বনি তুললো।
“যেখানে আপনার প্রাসাদের জেনারেল পর্যন্ত বেকাবু হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে সেখানে আপনি একা কি ই বা করতে পারবেন সম্রাট?
সম্মোহিত গাম্ভীর্য পূর্ন রসিক কন্ঠে কথাটি বলে পুনরায় স্মিত হাসলো লিও।
লিও এর কথায় রাগে অগ্নিশর্মা হলেন সম্রাট এনটনী।নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তলোয়ার উঁচিয়ে বসিয়ে দিলেন এক কো/প।কিন্তু একি সেই পিচাশ কোথায়?
এনটনীর চাঁরপাশে হো হো শব্দ তুলে হাওয়ার বেগে ঘুরতে লাগলো লিও।দিকবিদিক হয়ে তলোয়ার চালালেন সম্রাট।কিন্তু কিছুই ফায়দা হলো না।শেষ পর্যন্ত সুযোগ বুঝে সম্রাট এর গলা টি/পে ধরলো লিও।মুহূর্তেই চোখাচোখি হলো মানব চক্ষু আর পিচাশ চক্ষুর।ভয়ানক লালচে সম্মোহিত নজরে দৃষ্টি আটকে গেলো সম্রাট এনটনীর।বশীভূত মন্ত্রের ন্যায় এনটনী বলে উঠলো
“আমি আপনার গোলাম, আমাকে আদেশ করুন মালিক”
এতো কিছুর মাঝে সুযোগ বুঝে প্রাসাদে ঢুকে গেলো নেকড়ে রাজ স্যাম ।যেকোনো মূল্যে রাজকুমারী ক্যারোলিন কে নিজের করে পাওয়াই যেনো মুখ্য উদ্দেশ্য।লিওকে ব/লি চড়িয়ে ধূর্ত স্যাম প্রাসাদময় খুঁজে চললো ক্যারোলিন কে।
নাকে নেকড়ের গন্ধ পেতেই এনটনী কে ধাক্কা দিয়ে ছুড়ে ফেলে ক্যারোলিন কে খুঁজতে লাগলো লিও।কিন্তু সে কি আর মাটির তলদেশের গুপ্ত কুঠুরি সম্পর্কে জানে?
প্রাসাদের প্রতিটি কোনায় কোনায় ক্যারোলিন কে খুজলো লিও।কিন্তু কোত্থাও পেলো না।আর যেনো ধৈর্য্য কুলালো না।চোখ দুটো দিয়ে আগুন ঝরতে চাইছে।না চাইতেও বারবার সুচালো দাঁত গুলো ঠোঁট গলিয়ে বেরিয়ে আসছে।গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।মুখের লালাও যেনো ঘন আঠালো।তৃষ্ণায় শরীর ভেঙে দুর্বল হয়ে উঠলো।শরীরের সমস্ত শক্তি বেশ করে অপচয় হয়েছে।শক্তির জন্য চাই র/ক্ত…
চোখের সামনে এনটনিকে পেয়ে নিজের সকল নীতিকথা ভুলে গেলো লিও।সম্মোহনে বেষ্টন করা এনটনীর কাছে এসে কম্পনরত কন্ঠে আদেশ করলো
“আমার তৃষ্ণা মেটাও”
লিও এর আদেশ পেতেই নিজেকে উৎস্বর্গ করলো এনটনী।চকচকে চোখে লিও নিজের দন্ত শলাকা বিধিয়ে দিলো এনটনীর ঘাড়ের নীলচে শিরা বরাবর।ধারালো দাঁতের আ/ঘা/তে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এলো টকটকে তরল।সেই তরল পরম আবেশে চুকচুক করে এক নিমিষেই শুষে নিলো লিও।ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হলো মাঝবয়সী এনটনী।এক পর্যায়ে র/ক্ত/হীন অধিক ফ্যাকাশে শরীর লিও এর হাত গলিয়ে মাটিতে ধপ করে পড়ে গেলো।সম্বিৎ ফিরে পেলো লিও।ঠোঁট গড়িয়ে পড়া র/ক্তে/র ধারা আঙুলের সাহায্যে লেহন করে খেয়ে বলে উঠলো
“সরি মাই ডিয়ার ক্যারোলিন”
********
চতুর স্যাম নিজের বুদ্ধি বলে ঠিক গুপ্ত কুঠুরির সন্ধান পেলো।লিও কি কম যায়?শরীরে শক্তি ফিরে পেতেই স্যামের গন্ধ অনুসরণ করে ছুটে চললো পাতাল কক্ষে।
এদিকে নিজের মন্ত্রপূত ধারালো ছুরি বেশ করে পরীক্ষা করে নিলো লোভী তান্ত্রিক।অবচেতন ক্যারোলিন সহসাই জাগ্রত হয়ে নিজেকে হাত পা বাধা অবস্থায় দেখে চিৎকার করতে চাইলো।কিন্তু মোটা কাপড় দিয়ে মুখটাও বাধা।ধীরে ধীরে ছটফটানি বাড়লো ছোট ক্যারোলিন এর।দুই চোখ ছাপিয়ে জলের উষ্ণ ধারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
ক্যারোলিন জত ছটফট করে তান্ত্রিক ততো হাসে।তান্ত্রিকের মনোভাব বুঝতে পারলো সপ্তদশী ক্যারোলিন।মনে মনে লিওকে স্মরণ করে বলে উঠলো
“শেষ বারের মতো তোমাকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে জাগছে প্রিয়তম।অন্তরটা চরম ভীত হচ্ছে বারবার।একবার তোমাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরতে চাই।”
হঠাৎই খুট করে খুলে গেলো দরজা।কক্ষে সামান্য আলোর উপস্থিতি পেতেই আশার আলো জাগলো ক্যারোলিনা এর ছোট হৃদয়ে।
“কিন্তু একি কে এই লোক?
নেকড়ে রাজ স্যামকে দেখে ক্রোধে নিজের মন্ত্র ভুল করে ফেললো তান্ত্রিক।চরম ভুলটা যেনো এখানেই হলো।স্যাম দৌড়ে ক্যারোলিন কে বাঁচাতে যেতেই তান্ত্রিক ভুল মন্ত্রে ক্যারোলিন এর বুকে বসিয়ে দিলো সেই ধারালো হাতিয়ার।ফিনকি দিয়ে র/ক্ত ছোটার পরিবর্তে সব কিছু স্থির হয়ে গেলো।আচানক ক্যারোলিন এর প্রতি তান্ত্রিক এর এহেন ক্রুরতায় রাগে ক্রোধে তান্ত্রিক কে আক্রমন করলো স্যাম ।হঠাৎই কক্ষটিতে শরীরে অসহনীয় যন্ত্রনা অনুভব করলো স্যাম।কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো তান্ত্রিক।
“তোদের মতো নেকড়ে আর পিচাশ ব/ধ করা আমার বা হাতের খেল।
তান্ত্রিকের এতো স্পর্ধা জনিত কথা ঠিক হজম হলো না স্যাম এর।মানুষ রূপ থেকে বিশাল কুচকুচে কালো নেকড়েতে রূপান্তরিত হয়ে নিজের ভয়ানক থাবায় চি/ড়ে ফেললো তান্ত্রিকের বুক।
কক্ষটি হঠাৎই নরকের অঙ্গার এর মতো উত্তপ্ত হলো।মনে হচ্ছে স্যাম ঝলসে যাচ্ছে।মৃ/ত/প্রায় তান্ত্রিক কে নিজের মুখে পুড়ে লাফিয়ে চললো নিজের আস্তানায় ।
এদিকে লিও সেই কক্ষে এসে ক্যারোলিন কে এমন শোচনীয় অবস্থায় দেখতে পেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো কিন্তু কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে আগুন ধরে গেলো।
চিৎকার করে পা ফিরিয়ে লিও ডেকে উঠলো
“ক্যারোলিন আমার প্রিয়তমা”
লিও এর কন্ঠ কানে প্রবেশ করতেই আহত সজল চোখে লিও এর পানে দৃষ্টি মেললো ক্যারোলিন এরপর বহু কষ্টে নিজেকে মেঝে থেকে ঘষে ঘষে কক্ষের দরজা পর্যন্ত টেনে আনলো।বিষাক্ত হাতিয়ারের আঘাতে হৃদয় খানা কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।কিন্তু লিও কে জড়িয়ে ধরার আকাঙ্খায় সেই ব্যথা সামান্য উপশমিত হলো।
দরজা পর্যন্ত আসতেই ক্যারোলিন কে ছো মেরে হাওয়ার বেগে উড়িয়ে প্রাসাদের ছাদে নিয়ে এলো লিও।
ঘুটঘুটে কালো আকাশ যেখানে অঙ্গারের ন্যায় টকটক করছে র/ক্তা/ক্ত পূর্ণিমার চাঁদ খানা।
অদূরেই ভয়ানক শব্দে ডেকে চলেছে বন্য নেকড়ে আর নিশাচর প্রাণী।এলোমেলো ভারী বাতাসে চোখ মেলে রাখাও যেনো দায়।
ক্যারোলিন কে মেঝেতে বসিয়ে ছাদের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে বসালো লিও এরপর মুহূর্তেই বাঁধনমুক্ত করলো তার প্রেয়সীকে।
বাধন খুলতেই দুর্বল হাতে লিও কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গুঙ্গিয়ে উঠলো ক্যারোলিন।ভাঙা ভাঙা অস্ফুট শব্দে লিও এর প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে ক্যারোলিন বলে উঠলো
“তোমাকে দেখার জন্য প্রাণ টা বেরিয়ে যাচ্ছিলো প্রিয়তম, ভেবেছিলাম আর হয়তো কোনো দিন আমার এই তৃষিত অক্ষিদ্বয় তোমার দর্শন পাবে না।কিন্ত মৃ/ত্যু পূর্বে তোমাকে আলিঙ্গন করে হৃদয়ে প্রশান্তি মিলছে”
ক্যারোলিন কে শক্ত করে জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে উঠলো লিও।সেই চিৎকারে ভীত হয়ে গাছের ডালে বসে থাকা হুতুম পেঁচা ডানা মেলে উড়ে পালালো।
“তুমি আমাকে ছেড়ে কোত্থাও যেতে পারো না ক্যারোলিন।তোমাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচতে পারবো না।আমার বিষাক্ত ভালোবাসায় তুমি দংশিত হলে।এই দায় আমি কিভাবে এড়াবো প্রিয়তমা?
হৃদপিন্ডে বিধিয়ে রাখা হাতিয়ার খুব যন্ত্রনা দিচ্ছে ক্যারোলিন এর বুকে।সেই যন্ত্রনা এড়াতে হাতিয়ার ধরে সামান্য টান দিলো ক্যারোলিন।মনে হচ্ছে একদম বুকের ছাতির সাথে আটকে আছে সেই হাতিয়ার।শক্ত হাতে টেনেও এক বিন্দু নাড়াতে সক্ষম হলো না সেই হাতিয়ার।হাতিয়ার এর আঘাতে টুপ টুপ করে রক্ত গড়িয়ে লিও কে ভিজিয়ে দিলো।রক্তাক্ত হাতে লিও এর মুখে হাত বুলিয়ে ক্যারোলিন আবদার করলো
“শেষ বারের মতো আমাকে গভীর ভাবে চুম্বন করবে লিও?
ক্যারোলিন এর আহত আবদারে উন্মাদের ন্যায় ক্যারোলিন কে সহস্র চুমু খেলো লিও।
“আমাকে একা ফেলে কোথাও যেতে পারো না তুমি।আমি সইতে পারবো না ক্যারোলিন।তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ শেহজাদী।”
লিও এর লালচে ঠোঁটে হাত বুলিয়ে ক্যারোলিন কান্না জড়িত বেদনার্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই আমাদের মিলন হবে।আমি তোমার কাছে আবারো ফিরে আসবো।অপূর্ণ ভালোবাসার পূর্ণতা ঘটাতে হবে যে”
কথাটি বলেই মাথা থেকে একটা চুলের কাটা খুলে লিও এর প্রশস্ত বুকে একটা অর্ধ রক্তাক্ত চাঁদের চিহ্ন একে দিলো।সেই চিহ্নে গভীর চুম্বন একে ক্যারোলিন মর্মাহত কন্ঠে বলে উঠলো
“পরের জন্মে আমাকে চিনে নিও প্রিয়তম আর আমি যদি তোমাকে চিনতে ব্যর্থ হই তবে এই চিহ্নটা আমাকে তোমার কথা স্মরণ করাবে।আমার হাতে হয়তো আর বেশিসময় নেই।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।এবার যে আমাকে যেতে হবে জর্জ লিও।
লিও আরো শক্ত আলিঙ্গনে বাধলো ক্যারোলিন কে।আজ যেনো কঠিন পিচাশ তার সকল কঠিনতা গাম্ভীর্যতা ছুড়ে ফেলেছে।দুই চোখ জলের ফোয়ারা ছুটিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে শ্বেত কপোল আর প্রশস্ত বুক।
হঠাৎই ক্যারোলিন এর মুখ উপচে কুচকুচে কালো র/ক্ত বেরিয়ে এলো সেই সাথে শুরু হলো কঠিন হেঁচকি।চোখ দুটো বিস্ফারিত হলো থেকে থেকে।
লিও এর শার্টের কলার শক্ত হাতে খামচে ধরে আর্তনাদ করে বলে উঠলো
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ছিলাম লিও।তোমার সাথে সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম।কিন্তু নিয়তি আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে।কিন্তু তোমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস টাতো ত্যাগ করতে পারছি !এর চাইতে বড় আর কি আছে বলো?
লিও ক্যারোলিন কে চুপ থাকার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছে বার বার।
“তুমি দয়া করে কথা বলো না।তোমার কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু ক্যারোলিন লিও এর নিষেধ মানতে নারাজ ।লিও কে বলার জন্য তার মনে হাজারো কথা জমে আছে।সেসব না বলতে পারলে লিও জানবে কিভাবে সে এই কঠিন পুরুষকে কতোটা ভালোবেসে ছিলো?
লিও এর গলা জড়িয়ে নিভু নিভু অস্ফুট স্বরে ক্যারোলিন পুনরায় বলে উঠলো
“আমাকে কখনো ভুলবে না কথা দাও।পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত আমাকে মনে রাখবে।তুমি আমাকে ভুলে গেলে এই বেদনা আমি কখনো সহ্য করতে পারবো না।
ক্যারোলিন এর র/ক্তা/ক্ত দেহ বুকে চেপে ধরে লিও চিৎকার করে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো
“কোনো দিন তোমাকে ভুলবো না ক্যারোলিন কোনো দিন ও না”
হঠাৎই শ্বাস ভারী হলো ক্যারোলিন এর।বরফের ন্যায় জমতে থাকলো শরীর।এক পর্যায়ে স্থির হলো ক্যারোলিন এর অশ্রুযুক্ত চোখের বাদামি মনি।ধীরে ধীরে থেমে গেলো শ্বাস টা।আলগা হয়ে এলো গলার বাধন।ঘুমন্ত শিশুর ন্যায় হাত পা ঝুলিয়ে চোখ বুঝে অকাল গর্ভের কাল নিদ্রায় ঘুমিয়ে গেলো ক্যারোলিন।
কিন্তু লিও তা মানতে নারাজ।ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে গর্জে গর্জে গাল চাপড়ে ডেকে উঠলো
“ক্যারোলিন আমার প্রাণেশ্বরী তুমি কথা বলছো না কেনো?তুমি তো শুধু তোমার কথাই বলে গেলে আমার কথা শুনবে না?
হায় ক্যারোলিন সে তো লিও এর ডাকে সাড়া দেয়না।
সব শেষে ব্যার্থ লিও গগন বিদারী চিৎকার করে বলে উঠে
“মৃত্যুর এপাড় ওপাড় দুই পাড়েই তুমি আমার ক্যারোলিন ডিসৌজা”
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৫
#সারিকা_হোসাইন
*******
ইহ জাগতিক সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে ক্যারোলিন এর পবিত্র আত্মা।লিও এর প্রশস্ত বাহুতে ছোট দুগ্ধ শিশুর ন্যায় গভীর সেই ঘুম।প্রেয়সীর এই অকাল নিদ্রা কিছুতেই মানতে পারছে না প্রেমিক পুরুষ লিও।
“আমাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারো না ক্যারোলিন।আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাবো।আমাকে এভাবে একা করে চলে যেও না।আমার উপর একটু দয়া করো।
কিন্তু ক্যারোলিন স্তব্ধ।লিওয়ের কান্না জড়িত চিৎকার যেনো আকাশ ভেদ করে স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইছে।সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ক্যারোলিন কে না যাবার অনুরোধ করছে সে।কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনা বোধ হয় ভিন্ন।
হঠাৎই লিও দেখতে পেলো তুলোর মতো বরফ ঝরছে সেই সাথে ভারী বাতাস।গ্রীষ্মের এমন তাপদাহে আচানক বরফ পরার মানে অনুধাবন করতে পারলো না লিও।তার মস্তিষ্ক এখন ক্যারোলিন এ আবদ্ধ।বরফ ঝরছে নাকি অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ঝরছে এসবে যেনো লিও এর কোনো অনুভূতি ই নেই।ধীরে ধীরে ক্যারোলিন এর দেহ জমে শক্ত হতে লাগলো।নিরুপায় লিও কি করবে না করবে কিছুই যেনো বুঝে উঠতে পারলো না।
যার চোখের ইশারায় কীটপতঙ্গ পর্যন্ত মাথা নিচু করে রয় সেই ক্ষমতাধর পুরুষ যেনো আজ নিরুপায় বুদ্ধি শূন্য।চোখের জল দ্রুত হাতে মুছে উন্মাদের ন্যায় লিও আওড়ালো
“আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না ক্যারোলিন।আমি এক্ষুনি তোমাকে উত্তপ্ত করার ব্যাবস্থা করছি।তোমার বিন্দু পরিমাণ কষ্ট যে আমি সইতে পারিনা প্রিয়তমা।
শক্ত হাতে ক্যারোলিন কে কোলে তুলে হাওয়ার বেগে নীচে নেমে এলো লিও।পুরো প্রাসাদ জন মানব হীন।শত শত লা/শে/র স্তুপ পুরো প্রাসাদ জুড়ে।কেউ কেউ আবার প্রানের ভয়ে নিজ নিজ অবস্থানে লুকিয়ে গিয়েছে।
সাহায্যের জন্য চিৎকার করলো লিও।
“কেউ আছেন?আমাকে দয়া করে একটু সাহায্য করুন।
আজ যেনো লিও এর গম্ভীর চিৎকার কারোর কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না।নিরুপায় লিও দুর্বল কন্ঠে পুনরায় ডেকে উঠলো কিন্তু কেউ নেই।ইতোমধ্যে ক্যারোলিন এর শরীর থেকে তীক্ষ্ণ গোলাপের সুবাস ভেসে আসছে।ক্যারোলিন এর মৃ/ত্যু/র পর এতো এতো অদ্ভুত ঘটনায় বেশ বিচলিত হলো লিও।
হঠাৎই ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দে সচকিত হলো লিও এর কান।প্রাসাদের দরজা অভিমুখে এসে থেমে গেলো সেই টগবগানো শব্দ।ঘোড়া থেকে নেমে প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলো সুঠাম দেহি এক যুবক।প্রাসাদের ভয়ানক বিধ্বস্ত অবস্থা আর শত শত লা/শে/র স্তুপ দেখে বেশ ভীত হলো সে।ধীর পায়ে কক্ষে প্রবেশ করে ক্যারোলিন কে দেখে চিৎকার করে ডেকে উঠলো
“ক্যারো?
সাধারণ মানুষের আগমনে লিও যেনো একটু আশার আলো খুঁজে পেলো।ক্যারোলিন কে মেঝেতে শুইয়ে সেই যুবকের পায়ের কাছে হাটু মুড়ে বসে আহত কন্ঠে আকুতি জানালো
“আমার হৃদ্যেশ্বরী প্রাণ ত্যাগ করেছে কিছুক্ষন আগে।ধর্ম বিষয়ক কোনো জ্ঞান নেই আমার।দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।আমি একজন র/ক্ত পিপাসু পিচাশ।
লিও এর কথা শুনে মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো যুবক।ক্যারোলিন কে স্পর্শ না করেই কান্না জড়িত আহত কন্ঠে বলে উঠলো
“তোমার বন্ধু হয়েও তোমাকে শেষ রক্ষা করতে পারলাম না ক্যারোলিন ডিসৌজা।বন্ধু হিসেবে আমি ব্যর্থ।আমাকে ক্ষমা করো।
হাটু মুড়ে ক্যারোলিন এর নিথর দেহের সামনে বসে বসে কান্নায় ভেঙে পড়লো ক্রিস্টিয়ান নামের পোক্ত যুবক টি।কাঁদতে কাঁদতে গায়ে জড়ানো জামার আস্তিন থেকে বের করে নিয়ে এলো সাদা রঙের একটি রেশমি কাপড়।সেই কাপড়ে কিছু লিখা।কিন্তু লিও এই লিখা গুলো কখনো দেখেনি এমনকি কি ধরনের ভাষা এটা তাও সে জানেনা।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো তুষার পাত সেই বর্ধিত তুষার পাত মুহূর্তেই তুষার ঝড়ে রূপ নিলো।সময় কতো গড়ালো তা লিও বা ক্রিস্টিয়ান কেউ জানেনা।
পুরো আকাশ জুড়ে বিশাল কালো মেঘের উপস্থিতি।অগ্নি বর্ণের পূর্ণিমার চাঁদ খানা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে সেই কালো মেঘ গুলো।
চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো ক্রিস্টিয়ান এরপর ব্যথিত স্বরে বলে উঠলো
“তুমি ক্যারোলিন কে আর স্পর্শ করতে পারবে না যুবরাজ”
ক্রিস্টিয়ানের মুখে এহেন নিষ্ঠুর কথা শুনে ঝরঝর করে চোখের জল ছেড়ে দিলো লিও।অস্ফুট ব্যথিত স্বরে শুধালো
“কেনো?
নিজের হাতের কাপড়ের টুকরো লিও এর হাতে দিয়ে বলে উঠলো
“তোমার আর ক্যারোলিন এর মিলন কখনো সম্ভব নয় এটা ভবিতব্য বাণীতে বলা ছিলো।ক্যারোলিন পূর্ব থেকেই অবগত ছিলো তার এই নিষ্ঠুর জীবন নাশের ব্যপারে।গোপনে আমাকে সব কিছু সে জানিয়েছিলো।আজ থেকে ছয় মাস আগে আমি এই প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়েছিলাম ক্যারোলিন এর অনুরোধে।সে কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলো গৌনিয়াক পর্বতে একজন বিশেষ ভাগ্য দেবতা বাস করেন। তিনি চাইলেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন।কিন্তু সেই দেবতার কাছে পৌঁছানো ওতোটাও সহজ বিষয় নয়।একমাত্র ওই ব্যক্তি ই সেই দেবতার কাছে পৌঁছাতে পারবে যার জীবনে না আছে লোভ লালসা আর না আছে কোনো অসততা।চরিত্র এবং নাম দুই ই হতে হবে সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের ন্যায়।কেনো জানি সেই বিশেষ পুরুষ হিসেবে ক্যারোলিন আমাকেই বাছাই করেছিলো।সেদিন তার কাকুতি ভরা আবদার কোনো ভাবেই ফেরাতে পারেনি আমি।ক্যারোলিন কে আশ্বস্ত করে শত শত ক্রোশ পথ অতিক্রম করে যখন আমি ঐ পর্বতে পৌছাই তখন জানতে পারি দেবতা তার আপন ধ্যানে মগ্ন।সেই ধ্যানের স্থানে শত শত প্রতিরোধ।যদি পবিত্র পুরুষ হই তবেই নির্বিঘ্নে সেই বাধা ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো আর যদি সামান্যতম পাপ আমার মধ্যে থেকে থাকে তবে প্রথম বাঁধাতেই আগুনে ঝলসে অঙ্গার হবো আমি।
প্রানের ভয় কার না আছে বলো?কিন্তু আমি আমার খাঁটি বন্ধুত্বের পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলাম ।মনে সাহস রেখে এগিয়ে গেলাম সেই জাদুর বলয়ের দিকে।আশ্চর্যের বিষয় কিছুই হলো না আমার।মনে প্রথমবার ভয় এলেও পরবর্তী বাধা গুলো নির্ভয়ে কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম।দেবতার সামনে উপস্থিত হতেই চোখ মেলে তাকালেন তিনি।
“হে শুদ্ধ পুরুষ তোমার আগমনের হেতু আমি জানি কিন্তু তুমি যে বড্ড দেরি করে ফেলেছো বাছা।যেই ভাগ্য শক্ত কালীতে লিখা হয়ে গিয়েছে তা কি করে খণ্ডাবে বলো?
ভাগ্য দেবতা বিমর্ষ মুখে আমাকে বলে উঠলেন
“সময় যে ফুরিয়ে গিয়েছে!আর তো কিছু অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা।আমার বন্ধু কিছুতেই এই পৃথিবী থেকে এভাবে বিদায় নিতে পারে না।
“প্রত্যেকটা মুশকিল এর অবশ্যই আছান রয়েছে।আমি তাকে প্রতিজ্ঞা করে তবেই এখানে এসেছি।রক্ত পূর্ণিমার আগে ঠিক তাকে আমি উদ্ধার করবো।
“তুমি রক্ত পূর্ণিমার আগে তার কাছে পৌঁছাতেই পারবে না ।যখন তুমি পৌঁছাবে তখন সে দুনিয়াতেই আর থাকবে না।
“আমি এমন নিষ্ঠুর ভবিষৎ মানিনা”
“তুমি মানো আর না মানো এটাই ভবিতব্য।তবে অবশ্যই পবিত্র আত্মার পুনরায় জন্ম হবে।তাকে তোমাদের চিনে নিতে হবে।সে তোমাদের চিনতে অপারগ হবে।তার খন্ডিত হৃদপিন্ড সহ দেহখানা অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখবে।ওই দেহের কখনো পচন ধরবে না।কিন্তু মনে রেখো কোনো অপবিত্র আত্মার ছোয়া যেনো তার সমাধিতে না লাগে”
কথা গুলো বলে হাতের মুঠ পাকিয়ে ক্রিস্টিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিলেন দেবতা।অনুগত ব্যথিত ক্রিস্টিয়ান দুই হাত বাড়িয়ে দিতেই ধবধবে শ্বেত বর্ণের একটা রেশম কাপড় এর টুকরো দিলেন ক্রিস্টিয়ান এর হাতে।
“এটা কিসের কাপড়?
স্মিত হাসলেন দেবতা এরপর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন
“কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে চিরদিন বেঁচে থাকা কখনোই সম্ভব নয়।প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য তোমার পুনরায় জন্ম হবে এই পৃথিবীতে।এই মন্ত্রপুত কাপড় ওই পিচাশের কাছে গচ্ছিত রাখবে।অব্রিক্স এর গহীন অরণ্যে হাজার বছর পরে একবার ফুটবে রক্ত গোলাপ।যার পাপড়ি গুচ্ছ দিয়ে ক্রমাগত ঝরতে থাকবে তরতাজা র/ক্তের ধারা।শেহজাদী ক্যারোলিন এর পুনর্জন্ম হয়ে যে মানবী জন্ম নিবে তাকে গিয়েই তুলে আনতে হবে সেই গোলাপ।পথে হাজারো ভয়ানক বিপদ আসবে।কিন্তু কেউ তাকে সহায়তা করতে পারবে না।সতী পবিত্র হলে অবশ্যই সব বাধা পেরুতে সক্ষম হবে।সেই র/ক্ত গোলাপের তাজা র/ক্ত ক্যারোলিন এর পুরো দেহে ছিটিয়ে দিলেই তবেই দেহের জমায়িত বরফ গলে পড়বে এবং খুলবে সেই ভুল ভরা মন্ত্রপূত হাতিয়ার।পবিত্র হৃদয় খন্ডন করা হাতিয়ার যার হবে সে হবে অমর।পৃথিবী হবে তার দাশ।মুক্তি মিলবে ক্যারোলিন এর আত্মার।কেটে যাবে সকল অভিশাপ।যখন দেখবে এই কাপড়ের লিখা গুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে তখন ই বুঝতে পারবে সকল বিপদের অবসান হয়েছে।যদি লেখা গুলো স্বঅবস্থানে বহাল থাকে তবে পিচাশ যেনো নিজেই আত্মহুতির পথ বেছে নেয়।শেষ বারের মতো আবারও বলছি ওই পিচাশ যেনো তার অপবিত্র শরীরে শেহজাদীর সমাধিস্থল প্রবেশ না করে।এমনকি শেহজাদীর জমে যাওয়া শরীর ও স্পর্শ না করে ।তোমাকে একাই করতে হবে তার সৎকারের কাজ।আর সেই কক্ষে যেনো কারো অপবিত্র পায়ের ধূলা না পরে।
এক দমে কথা গুলো বলে থামলেন দেবতা।কিছুক্ষন চোখ বন্ধ রেখে পুনরায় বলে উঠলেন
“যদি কখনো পুনরায় জন্ম নাও ভাগ্য অবশ্যই তোমাকে শেহজাদীর সমাধিস্থল পর্যন্ত আনবে আর দ্বিতীয় বারের মতো তুমিই হবে ওই শেহজাদীর বিশ্বাস ভাজন রক্ষাকারী।তার আগে অবশ্যই যুবরাজ লিও এর কাছে নিজের পরিচয় ব্যাক্ত করবে।আর ওই মানবীকে রক্ত পূর্ণিমা পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তোমার।
*******
এতো সময় ধরে ক্রিস্টিয়ান লিও এর কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলতেই কাতর অসহায় চোখে শেষ বারের মতো ক্যারোলিন এর নিথর দেহের পানে তাকালো লিও।এরপর বুকে পাথর চেপে শক্ত দুর্বল কন্ঠে আদেশ করলো
“শেহজাদীর শেষ কৃত্যের ব্যবস্থা করা হোক”
লিও এর আদেশ পেতেই নিজের পবিত্র হাতে ক্যারোলিন কে কোলে তুলে নিলো ক্রিস্টিয়ান।এরপর পূর্বে থেকেই বানানো রাজ কফিনে শায়িত করা হলো বরফে আচ্ছাদিত ক্যারোলিন কে।
কফিনের ঢাকনা লাগাতেই পুরো কক্ষ গোলাপের সুবাসে সুবাসিত হলো।সেই সাথে কক্ষ জুড়ে ছেয়ে গেলো বরফের আস্তরণ সেই আস্তরণ ভেদ করে ফুটে উঠলো অসংখ্য রক্ত রঙা তাজা গোলাপ।
লিও বাইরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাই অবলোকন করে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো।ওই কক্ষে তার ঢোকার অনুমতি নেই।আজ সত্যি সত্যি তার নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃণা এলো
“যদি মানুষ হতাম তবে বিনা বাধায় শ্রেয়সীর জীবনের দখল নিতে পারতাম।হায় আমি অভিশপ্ত পিচাশ।আমার জন্ম বৃথা,মূল্যহীন।আমার ভালোবাসার যন্ত্রনা দায়ক মৃ/ত্যু হলো অথচ আমি এখনো বেঁচে আছি।
হঠাৎই অসহনীয় যন্ত্রনায় ছেয়ে গেলো লিওয়ের পুরো শরীর।মুখ থুবড়ে সিঁড়ি গড়িয়ে পরে গেলো লিও।বৃদ্ধের ন্যয় ঠকঠক করে কাঁপছে শরীর খানা।মনে হচ্ছে কেউ গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।বিষাক্ত বিষে নীল হয়ে উঠলো শরীর খানা।গায়ের শিরা উপশিরা কালো হয়ে ভেসে উঠলো।দন্ত শলাকা বেরিয়ে এলো ঠোঁট গলিয়ে।
হাওয়ায় ভেসে প্রাসাদ ছেড়ে প্রস্থান নিতে চাইলো কিন্তু কোনো ক্ষমতাই কাজ করলো না।যন্ত্রনা সইতে না পেরে মেঝেতে গড়াগড়ি খেলো লিও।তবুও যন্ত্রনা কমলো না।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো বিভীষিকাময় যন্ত্রনা সেই সাথে শরীর ফেটে কালচে রক্ত বেরিয়ে এলো।হৃদপিন্ডে অস্বাভাবিক ব্যাথা।বুকের ছাতি ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে হৃদয় খানা।মনে হচ্ছে কেউ শক্ত হাতে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সেই হৃদয়।অসহনীয় যন্ত্রনায় চোখ ফেটে জল এলো।লিও এর এহেন অবস্থা সবটাই অবলোকন করে দৌড়ে এলো ক্রিস্টিয়ান।লিও এর এহেন ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো
“যুবরাজ আপনি ঠিক আছেন?
বহু কষ্টে লিও গুঙ্গিয়ে জবাব দিলো
“বেঁচে থেকেও নরক যন্ত্রনা পাচ্ছি।ভবিষ্যৎ বর্তমানে উপনীত হতে যাচ্ছে।আমাকে কফিনে শায়িত করবার ব্যবস্থা করো।আজ থেকে আমার জীবন্মৃত অধ্যায়ের সূচনা হলো।
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৬
#সারিকা_হোসাইন
নিজের বিশাল প্রাসাদের স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে র/ক্ত/ক্ত তান্ত্রিক কে আধ ম/রা অবস্থায় ফেলে রেখেছে স্যাম কেলভিন।ক্রোধে তার গলা দিয়ে গর গর আওয়াজ বের হচ্ছে সেই সাথে লকলকে জিভ থেকে সমানে লালা ঝরে যাচ্ছে।তান্ত্রিকের চোখে মুখে ভয় এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলো।শিকার এর উপর ঝাঁপিয়ে পরার আগ মুহূর্তে বার কয়েক চক্কর কাটলো স্যাম কেলভিন।চোখ দুটো সোনালী ঝলকে চকচক করছে।সামনে দাঁড়ানো মৃত্যুর দিকে ক্রুর দৃষ্টি তাক করে দুস্টু তান্ত্রিকের মাথায় খেলে গেলো এক নিকৃষ্ট বুদ্ধি।মস্তিষ্কের বুদ্ধি খানা মুখে প্রকাশ করতে চাইলো।কিন্তু স্যামের আঘাতে শরীর এতোটাই জর্জরিত হয়েছে যে যন্ত্রনায় শ্বাস টাও যেনো আটকে আসছে।কিন্তু বাঁচার আকুতি মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলে।তান্ত্রিক মুখে বেশ শক্তি সঞ্চয় করে গুঙ্গিয়ে বলে উঠলো
“আমাকে মে/রো না,আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে শেষমেশ তুমি ই লাভবান হবে”
তান্ত্রিকের এসব হেঁয়ালি কথা এই মুহূর্তে কানে তুলতে মোটেও প্রস্তুত নয় স্যাম।যেই ধৃষ্টতা এই তান্ত্রিক দেখিয়েছে এর পরেও তাকে বাঁচিয়ে রেখে অহেতুক বকবক শোনার কোনো ইচ্ছে তার নেই।স্যামের ভাবের কোনো পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে শুকনো হাসি হাসলো তান্ত্রিক।নিজের নখ যুক্ত থাবা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে নেকড়ে রাজ।নোংরা ভেজা মাটি ঘেষে ঘেষে একটু একটু করে সরে যাচ্ছে তান্ত্রিক।কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি?
নেকড়ের চোখে চোখ রেখে তান্ত্রিক ফট করে বলে উঠলো
“যেই হাতিয়ার রাজকুমারীর হৃদয় ছেদন করেছে তা যদি তাজা র/ক্ত সমেত তোমার হাতে মাখাতে পারো তবে তুমি হবে অমর।
তান্ত্রিক এর মুখে এমন লোভাতুর কথা শুনে থেমে গেলো স্যামের পা।কমে এলো গড়গড় আওয়াজ।চোখ দুটোও আর আগের মতো জ্বলছে না।
স্যামের গতিবিধি লক্ষ্য করে তান্ত্রিক মনে মনে বলে উঠলো
“পশুর আবার মনুষত্ব আছে নাকি?সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব বলেই এদের নাম পশু।
তান্ত্রিক গলায় সামান্য জোর এনে কাতরাতে কাতরাতে বলে উঠলো
“ওই শেহজাদীর পুনরায় জন্ম হবে।একবার ওই হাতিয়ার নিজের করতে পারলে রাজ্য আর রাজকন্যা দুই ই তোমার।
কথা খানা বলে শব্দ করে হাসতে চাইলো তান্ত্রিক।কিন্তু ব্যথিত শরীর সায় দিলো না।
স্যাম মনে মনে কি ভাবলো কে জানে?মুহূর্তেই নিজের গতিবিধির পরিবর্তন এনে শতগুন হিংস্রত্বক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো র/ক্তা/ক্ত তান্ত্রিকের উপর।এক থাবার ছিড়ে আনলো উষ্ণ কলিজা।চিৎকার পর্যন্ত করবার সময় পেলো না তান্ত্রিক।বিশাল ধারালো নখ দিয়ে তুলে আনলো চোখের মণি দুটো আর খুলি উল্টিয়ে বের করে আনলো মগজ।সেগুলো পরম উল্লাসে ভক্ষণ করে মানব রূপে ফিরে এলো।
তান্ত্রিকের অযত্নে পরে থাকা ছি/ন্ন/ভি/ন্ন হাড়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো স্যাম।এরপর মুখে লেগে থাকা র/ক্ত মাং/সে/র ছিটেফোঁটা হাতের উল্টো পিঠে মুছে বাঁকা হেসে বলে উঠলো
,”বাকি পশুদের সাথে আমাকে তুলনা করে বেঘোরে প্রাণ হারালি মূর্খ তান্ত্রিক।
তান্ত্রিক প্রাণ হারিয়েছে কিন্তু তান্ত্রিকের কথাগুলো এখনো স্যামের কানে বাজছে।লিও কে টেক্কা দেবার শেষ পর্যন্ত একটা রাস্তা পাওয়া গেলো।নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে স্যাম পুনরায় ছুটলো ফ্লাকি প্রাসাদ অভিমুখে।কিন্তু ততক্ষণে সকল পিচাশ রা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে মানব শূন্য এই প্রাসাদ।কারন পরম সম্মানীয় পবিত্র ক্যারোলিন এর সাথে সাথে জীবিত সমাধিস্থ হয়েছে ভ্যাম্পায়ার যুবরাজ হেনরি আর এমিলির একমাত্র পুত্র জর্জ লিও।
*********
রাতের ভয়াবহ আধার কেটে গিয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।শুক্ল পক্ষের অর্ধ বাঁকা চাঁদ টুকু মৃদু আলো ছড়াচ্ছে ওক গাছের ছাতার ন্যয় ডাল পালা ভেদ করে।ঝি ঝি পোকার ডাক ক্রমশ মিইয়ে আসছে।মশাল গুলোর আলোও প্রায় নিভুনিভু।
বৃদ্ধের কথা শুনতে শুনতে কখন যে পুরো রাত কেটে গিয়েছে টের ই পায়নি হ্যাভেন।জো মাটিতে শুয়েই গভীর ঘুমে তলিয়েছে।ঘুম নেই শুধু হ্যাভেন আর বৃদ্ধের চোখে।
বইয়ের শেষ পাতা পড়া শেষ করে তেল চিটচিটে ছেড়া মলাট খানা বন্ধ করে বিমর্ষ মুখে হ্যাভেনের পানে দৃষ্টি মেললো বৃদ্ধ।
হ্যাভের নীল মনির অক্ষিদ্বয় বেয়ে সমানে নোনতা জল গড়িয়ে পড়ছে।তার মনে হচ্ছে পুরো ঘটনার সাক্ষী সে।বুকের ভেতর অসহনীয় তোলপাড় হচ্ছে।বেদনার্ত কষ্টে বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে।
সকল নীরবতা ভঙ্গ করে বৃদ্ধ মোহনীয় স্বরে বলে উঠলো
“দ্বিতীয় পুনর্জন্মে তোমাকে স্বাগতম পবিত্র মানব”
হ্যাভেন নির্বাক।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে তার কান্না পাচ্ছে।ধীরে ধীরে চোখের সামনে পরিস্কার হয়ে উঠছে হাজার বছর আগেই সেই মর্মন্তুদ স্মৃতি গুলো।
ক্যারোলিন আর লিও এর মৃ/ত্যু/র পর তাদের কফিনের যত্ন নিজ হাতে নিয়ে ছিলো সে।ধীরে ধীরে তার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু লিও বা ক্যারোলিন কেউ জেগে উঠেনি।পুরো ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্যে জানানো হয়েছিলো ক্যারোলিন এর দেহ সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে।তবুও মানুষ হিসেবে মৃ/ত্যু অনিবার্য সেই ভয় থেকেই পুনরায় ক্রিস্টিয়ান ছুটে গিয়েছিলো সেই গৌনিয়াক পর্বতে।ভাগ্য দেবতার কাছে নিজের বার্ধক্য প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ করে লিও আর ক্যারোলিন এর জন্য বিশ্বসভাজন একজন রক্ষী প্রার্থনা করে ছিলো।
“আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে,চাইলেও আগের মতো শক্তি প্রয়োগ করে আর কিছুই করতে পারি না।একদিন এভাবেই স্বর্গে যেতে হবে আমাকে।আমি আমার বন্ধু আর যুবরাজ লিও এর দেখভাল করবার জন্য একজন বিশ্বস্ত পাহারাদার চাই।
ক্রিস্টিয়ান এর উদ্বিগ্নতা জনিত কান্নায় ভাগ্য দেবতার মন গললো।মন্ত্রবলে নিজের হাতের মুঠো থেকে বের করে আনলেন কুচকুচে কালো ছোট এক সর্প শিশু।
সেই সর্প শিশু দেখে বেশ ভীত হলো ক্রিস্টিয়ান।
ভাগ্য দেবতা অভয় দিয়ে বলে উঠলেন
“ভয় পেয়ো না।তোমার অবর্তমানে এই সর্প শিশু লুকাস ই করবে শেহজাদী আর যুবরাজের দেখভাল।লুকাস ই হবে যুবরাজ লিও এর প্রকৃত বন্ধু আর শত্রুর জন্য জম।তুমি এবার নিশ্চিন্ত।নির্ভয়ে প্রাসাদে ফিরে যাও।
লুকাস কে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এসেছিলো ঠিকই কিন্তু ছোট লুকাস এর বেড়ে উঠবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছিলো না।সকলেই লুকাস কে দেখে ভীত হতো কেউ কেউ আবার গোপনে হ/ত্যা করার প্রয়াস চালাতো।
বৃদ্ধ ক্রিস্টিয়ান লিও এর কফিনের পাশেই একটি পুরাতন রাজকীয় সার্কফ্যাগস কফিন দেখতে পেয়ে সেখানেই লুকিয়ে রাখে ছোট লুকাস কে।কারন যুবরাজ লিও এর সমাধি কক্ষ ছিলো এই প্রাসাদের সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা।ক্রিস্টিয়ান আর হেনরি ছাড়া এখানে কারো প্রবেশ নিষেধ।সুযোগ বুঝে কফিনেই খাবার দিয়ে যেতো ক্রিস্টিয়ান।
ধীরে ধীরে জলের স্রোতের ন্যায় সময় গড়ালো,ছোট লুকাস বড় দেহের অধিকারী হলো।কিন্তু তখনো যুবরাজ লিও জেগে উঠলো না।
বৃদ্ধ ক্রিস্টিয়ান একদিন বুঝতে পারলো তার জীবনের অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্তু যুবরাজ লিও এখনো জীবন্মৃত।তাই তার ডেইলি জার্নাল হিসেবে নিজের জানা অজানা সমস্ত কথা লোক সাক্ষীর জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিজ হাতে লিখে ইতিহাসের সাক্ষী করতে চাইলো।
নিজের বসবাস রত ঘরে খুব যত্ন করে তুলে রাখলো মোটা বইটা।কিন্তু আদৌ কি সেই বই কেউ পড়েছিলো?
বৃদ্ধ স্মিত হেসে হ্যাভেন এর চোখের জল মুছিয়ে বলে উঠলো
“কারো হাতে এই বই হস্তগত হলে তুমি তোমার অতীত জন্ম কিরূপে উদঘাটন করতে পবিত্র মানব?
দিনের আলো ধীরে ধীরে ফুটে উঠলো ধরনীতে।বৃদ্ধ মুখে প্রশস্ত তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“আমায় চিনতে পেরেছো ক্রিস্টিয়ান?
বৃদ্ধের দুই হাত খামচে ধরে হ্যাভেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো
“আপনাকে চিনতে আমার অনেক সময় পেরিয়ে গেলো ভাগ্য দেবতা অ্যাপলো।
হ্যাভেন এর কথায় আরো খানিক প্রশস্ত হাসলেন বৃদ্ধ।এরপর জামার আস্তিনের ভেতর থেকে একটি ছোট পোটলা আর দুটো স্বর্গীয় আপেল দিয়ে বলে উঠলো
“”যাও তবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করো।সময় যে বেশি নেই আর।পনেরো দিন বাদেই যে র/ক্তা/ক্ত পূর্ণিমা অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।
*********
লিও কে শক্ত হাতের বেষ্টনী তে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে লিও এর বুকে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ম্যাপল।পৃথিবীর আবর্তন সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই ।এক বিন্দুর জন্য গত রাত থেকে লিও কে ছাড়েনি সে।শ্রেয়সীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে স্যাম কেলভিন এর বিষয় টাও এড়িয়ে গিয়েছে লিও।
“বুকের ভেতরের জমানো অঙ্গার হাজার বছর পর নিভলো তবে”
লিও এর সম্মোহিত কন্ঠে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ম্যাপল।যেনো ছেড়ে দিলেই লিও পালিয়ে যাবে।
প্রেয়সীর এহেন কাণ্ডে অমায়িক হাসলো লিও।এরপর মাথায় চুমু খেয়ে বলে উঠলো
“আমাকে যে যেতে হবে শেহজাদী”
“না আমি যেতে দেবো না।ছেড়ে দিলেই তুমি হারিয়ে যাবে।
“তোমাকে রেখে কি আমি হারাতে পারি?
“এতো কিছু জানতে চাইনা আমি”
“ভোরের আলো ফুটলো বলে।
“ফুটুক ক্ষতি কোথায়?
“আমার কষ্ট হবে”
লিও এর কষ্ট হবে শুনেই ম্যাপলের বাদামি চোখ জোড়া অশ্রু সজল হলো।সহসাই হাতের বাধন আলগা করে ম্যাপল বলে উঠলো
“তোমার কষ্ট আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয় যুবরাজ।তুমি এখনই চলে যাও।
নিজের ভালোবাসার মানুষকে ফেলে রেখে চলে যাওয়া কতোটা কষ্টের এটা শুধু সেই প্রেমিক পুরুষ ই জানে।
নিজের শক্ত হাতে ম্যাপল কে কোলে তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে মোহিত আবেশী স্বরে লিও বলে উঠলো
“রাতে ফের দেখা হবে।
#চলবে