দ্যুলোকে নব ঊষা পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
1

#দ্যুলোকে_নব_ঊষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_১৬

সাঁঝ নেমেছে ধরায়। ঝাঁকে ঝাঁকে নীড়ে ফিরছে পাখির দল। চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্রধান ছাত্রাবাসের সামনে দিয়ে চলছে রিকশা। চারদিকে বেশ নিরিবিলি। পাহাড়ে ঘেরা। কিছুক্ষণ পর পর তাই দেখা মিলছে পাখিদের দল। অধরা আনমনে হেসে উঠলো। দল না হোক, সাঁঝ বেলায় ঘরে ফেরার একটা সঙ্গী তার জুটেছে বোধহয়। নাম তার তাওসিফ আবরার। অধরা আবারও হেসে উঠলো।

নবকুঞ্জের সন্ধ্যার নাস্তা পর্ব শেষ। ফয়জাল হাসান আজ ফিরেছেন। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছেন মেয়ের অপেক্ষায়। পাশে বসে আছে নবনী আনজুম। তিনি ছেলেকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। তুবা দাঁড়িয়ে আছে পাশে। মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে তাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। ফলে হারিয়ে যায় তার জৌলুস। নবনী আনজুমের হয়েছে তাই। হাঁটতে পারেন না সুস্থ মানুষের মতো। পুত্রবধূদের সাহায্য লাগে পদে পদে। তাইতো আগের মতো তাদের মুখের উপর বলতে পারে না অনেক কথা। নবনী আনজুম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বড়ো ক্লান্ত মনে হয় নিজেকে। এরই মাঝে তহুরা এসে বলে,

“আম্মা আসেন। আপনাকে রুমে দিয়ে আসি।”

গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে একটি ঝড় বয়ে গেছে। তার ফুলকে আবারো নেতিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসবের কিছুই জানেন না ফয়জাল হাসান। জানেন না বলেই তিনি খুব সাবলীল ভাবে বললেন,

“হ্যাঁ মা, ঘরে যাও। বেশিক্ষণ বসে থাকলে পায়ে ব্যথা বাড়বে।”

নবনী আনজুম কিছু বলতে পারলেন না। শুধু বললেন,

“আসফিন আসলে একটু আমার রুমে পাঠায় দিস তো আব্বা।”

ফয়জাল হাসান সায় জানালেন। নবনী আনজুম ঘরে চলে যাওয়ার কিছু সময় পরেরই বাড়িতে প্রবেশ করলো অধরা। হাতে তার তিনটে সাদা গোলাপ। তুবা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। অধরা সেসবে পাত্তা দিলো না মোটেও। নিজের মতো করে এগিয়ে যেতে লাগলো সিঁড়ির দিকে। বাবাকে এখনো দেখেনি সে। অধরা সিঁড়িতে পা দিতেই তুবা গমগমে স্বরে বলে উঠলো,

“গোলাপ কে দিয়েছে তোমাকে?”

অধরা সরু চোখে তাকালো তুবার দিকে। বাঁকা হাসি খেলে গেলো তার ঠোঁট জোড়ায়। উত্তর দেওয়া বিলাসিতা মনে হলো তার। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো আপন মনে। তুবা এবার চেঁচিয়ে উঠলো,

“বেয়াদব হয়েছো তুমি। প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছো না কেন? মা হই আমি তোমার।”

অধরা থেমে গেলো। ফিক করে হেসে ফেললো সে। ফয়জাল হাসান সহ বাড়ির প্রায় সবায় তুবার চেঁচানো শুনে চলে এসেছে। অধরা সচরাচর কথার উত্তর দেয় না। তবে আজ দিতে ইচ্ছে হলো। সে দু’টো সিঁড়ি নিচে নেমে এলো। মাথাটা সামনের দিকে এলিয়ে বলল,

“মা! আপনি আমার মা হন? সরি বাট নট সরি, আমি বোধহয় জানতাম না।”

ফয়জাল হাসান মেয়ের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকালেন। একই ভাবে তাকিয়ে আছে বাড়ির প্রায় সবায়। তুবা নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছে। অধরা সেসবে পাত্তা না দিয়ে আবারো উপরে উঠতে লাগলো। তুবা নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

“দেখলে তুমি? দেখলে! কি বলল তোমার মেয়ে? নিজের মা’কে কি অকপটে অস্বীকার করলো।”

ফয়জাল হাসান খুব সাবলীল ভাবে উত্তর দিলেন,

“দেখলাম।”

তুবা আরো ক্ষেপে গেলো। স্বামীর এমন হেঁয়ালি তার সহ্য হলো না। তেতে উঠে বলল,

“কিছু বলবে না তুমি তোমার মেয়েকে?”

“বলার প্রয়োজোন বোধ করছি না।”

ফয়জাল হাসানের সংক্ষিপ্ত উত্তর। অধরা আবারো বাঁকা হাসলো। তুবা ক্ষিপ্ত হলো কিন্তু অধরাকে নাজেহাল করার জন্য বলে উঠলো,

“তোমার মেয়ে কার সাথে টাঙ্কি মেরে এলো তা জিজ্ঞেস করো। হাতে ফুল কেন ওর? লাং দিয়েছে?”

ফয়জাল হাসান রক্তিম চোখে তাকালো তুবার দিকে। হিসহিসিয়ে বলল,

“খবরদার আমার মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না। পরিণাম ভালো হবেনা বলে দিলাম।”

অধরা পিছনে ফিরে বাবার দিকে তাকালো। হেসে বলল,

“তোমার বউ কে বলে দিও আব্বু তার পছন্দ করা ছেলে মানে আমার হবু বর আমাকে ফুল কিনে দিয়েছে।”

আর কোন কথা না বলে অধরা নিজের রুমে চলে গেলো। ফয়জাল হাসান মুচকি হেসে নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে মেয়ের রুমের দিলে এগিয়ে গেলোন। অপরদিকে তুবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। সে জানতো অধরা প্রতিবার কোন না কোনভাবে বিয়ে ভেঙে দেয়। তাহলে এবার কেন দিলো না? আশ্চর্য!
————————

মায়মুনা চিন্তিত হয়ে বসে আছে। ফারুক হাসান বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

“সমস্যা কি তোমার? এভাবে সং সেজে বসে আছো কেন? কি হয়েছে বলবে তো নাকি?”

“অধরার বিয়ের তারিখ তো ঠিক হয়েছে, কিন্তু কাজ তো এখনো হলো না। পাঁচটা বছর ধরে সাজাচ্ছি ছক! তবুও কোন ভাবে কাজ হচ্ছে না। টেনশন করবো না?”

“আরে রিলাক্স। বিয়ে হয়ে গেলেই তো ভালো। তখন কি আর এদিকে খেয়াল রাখবে? তানিশা রাখে? এতো চিন্তা করো না।”

“কিন্তু যদি খেয়াল করে। আচ্ছা কাগজপত্র গুলো কোথায়? ওর তো আাঠারো হয়ে গেছে!”

“আয়মান সাহেবের সাথে কথা হয়েছে আমার। কাগজপত্র ওনার কাছেয় আছে।”

এতক্ষণে হাসি ফুটে উঠলো মায়মুনার মুখে। হাসিমুখে বলল,

“তাহলে তো হয়েই গেলো।”

দুজনে হাসলো এবার একসাথে। বদ্ধ ঘরের সেই নোংরা কথোপকথন জানলো না কেউ!
———————

মেয়ের মুখে চামচ দিয়ে পায়েস তুলে দিচ্ছেন ফয়জাল হাসান। অধরা চুপচাপ খাচ্ছে। ফয়জাল হাসান আবার মুখে পায়েস দিয়ে বলে উঠললন,

“আমার মা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো? কথার পিঠে কথা বলতে শিখে গেছে নাকি?”

অধরা স্মিত হাসলো। বাবার চোখে চোখ রেখে বলল,

“পুরনো ক্ষত জেগে উঠেছে বাবা। তাই বলে ফেলেছি। আজ তাওসিফ আবরারকে আমার সম্পূর্ণ অতীত শুনিয়েছি তো।”

ফয়জাল হাসান কিছুটা বিমূঢ় হলেন। ছেলেটা তবে নিশ্চয়ই বিয়েতে না বলবে। তবুও আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“সব শুনে কি বলেছে তোকে?”

“বলেছে তার এসবে কোন সমস্যা নেই। কিছু যায় আসে না অতীত নিয়।”

ফয়জাল হাসানের চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। বিশ্বাস করতে পারলেন না। কম সমন্ধ তো ভাঙেনি এই এক অতীত নিয়ে। মেয়েকে এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দেওয়ার শখ তার কোনকালেই ছিলো না। কিন্তু তিনি জানেন তিনি না থাকা অবস্থায় কি নির্মম অত্যাচার করা হয় তার মেয়েটাকে। শারীরিক না হোক, মানসিক ভাবে সারাদিন অত্যাচারিত হয় অধরা। সেই সাথে একটা সঙ্গীর বড়ো অভাব মেয়েটার। তাইতো তিনি চান মেয়েটা এমন একজন সঙ্গী পাক, যে তাকে আগলে রাখবে সকল বিষাক্ত সাপদের থেকে। হ্যাঁ, এই বাড়ির কিছু মানুষকে বিষাক্ত সাপই মনে হয় তার। অধরা বাবাকে নীরব হয়ে যেতে দেখে বলে উঠলো,

“কি হলো বাবা? কথা বলছো না কেন?”

ফয়জাল হাসান মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। আবার কিছু বলতে যাবেন তার আগে লক্ষ্য করলেন মেয়ে হুডির পকেট থেকে হাত বের করছে না। ফয়জাল হাসান প্রশ্ন করলেন,

“হাতে কি হয়েছে? দেখাও।”

অধরা চমকে গেলো এহেন প্রশ্নে। আমতা আমতা করে বলল,

“কি হবে? কি…কিছু হয় নি আব্বু।”

ফয়জাল হাসান চোখমুখ শক্ত করে বললেন,

“হাত বের করতে বলেছি, বের করো।”

অধরা ধীর গতিতে হাত বের করে সামনে আনলো। কাঁচের আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো ফয়জাল হাসান। চোখে রক্ত জমাট বাঁধলো। পায়েসের বাটি মেয়ের সামনে রেখে হনহন করে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। অধরা আটকাতে পারলো না। মনে মনে বলল,

“আমি আপনার খারাপ চাই না মিসেস হাসান। কিন্তু আপনি আপনার খারাপটা ডেকে আনেন। আমি আপনাকে ভালো যেমন আর বাসতে পারিনা তেমনি ঘৃণা টাও ঠিক করতে পারিনা। হাজার হোক জন্ম দিয়েছেন তো!”

অধরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলো। তাওসিফের নাম্বারে ছোট্ট করে মেসেজ পাঠালো,

“আমি ঠিক ভাবে পৌঁছেছি।”

সাথে সাথে সিন হলো মেসেজ। অধরা অবাক হলো। রিপ্লাই এলো কয়েক সেকেন্ড বাদেই,

“অপেক্ষা করছিলাম তোমার মেসেজের।”

অধরার আজ বড়ো হেঁয়ালি করতে ইচ্ছে হলো। তাই পরবর্তী মেসেজ দিলো,

“যদি মেসেজ না দিতাম?”

“আমি জানতাম তুমি দিবে।”

“কিভাবে?”

তাওসিফ শুয়ে শুয়ে মেসেজ টাইপিং করছিলো। এবার উঠে বসলো। তার ঠোঁটে লেগে আছে নজরকাড়া হাসি। ফোন হাতে বারান্দায় গিয়ে বসলে এবার। গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে লিখলো,

“সেটা সিক্রেট। এখন বলবো না।”

অধরা অবাক হয়ে খেয়াল করলো সে তাওসিফের মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছিলো। অথচ এর আগপ কখনো সে বাবা আর আপা ছাড়া অন্য কারো মেসেজের জন্য এভাবে অপেক্ষা করেনি। অধরা তাওসিফের রিপ্লাই দেখে অবাক হলো। তবুও বলল,

“আচ্ছা।”

তাওসিফ ওপাশে একা একা হাসলো। সে জানতো অধরা জোর করবে না। অধরাকে দীর্ঘ দিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে সে জানে অধরা কারো কাছ থেকে জোর করে কিছু শুনতে চায় না। তার কৌতুহল খুবই কম। অথবা কৌতুহল হলেও সেটা চেপে যায়। তাওসিফ স্মিত হাসলো ফের।

#চলবে…?

#দ্যুলোকে_নব_ঊষা
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_১৭_১৮

নবকুঞ্জের পরিবেশ নীরব। কোথাও কোলাহল নেই। যে যার মতো পড়তে বসেছে বাচ্চারা। তাই হৈ হুল্লোড় খনিকের জন্য বন্ধ। নিচতলায় ফয়জাল হাসানের রুম। সেই রুমে বিছানার এক কোণে বসা তুবা। তার দুই গাল হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে ফয়জাল হাসান। তুবা কথা বলতে চেষ্টা করলো তবে পারলো না। ফয়জাল হাসান হিসহিসিয়ে বললেন,

“মানা করেছিলাম না? সাহস হয় কিভাবে ওর গায়ে হাত তোলার? আর কতবার নিষেধ করতে হবে? কথা কানে যায় না? নাকি ভালো মতো বলি বলে ভালো লাগে না। হ্যাঁ!”

তুবা ব্যথায় ছটফট করে উঠলো। কথা বলতে চাইলো। কিন্তু ফয়জাল হাসান নাছোড়বান্দা। আরো শক্ত করে ধরলেন তিনি। এবার তুবার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ফয়জাল হাসান ছেড়ে দিলেন তাকে। ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,

“আমার ভাবতেই ঘৃণা হয়, আমি তোমাকে ভালোবাসতাম!”

তুবা ছলছল চোখে ফয়জাল হাসানের দিকে তাকালেন। অধরার উপর রাগ তার আরো বাড়লো। ওই মেয়েটা, শুধু ওই মেয়েটার জন্য তার ভালোবাসার মানুষটা তার গায়ে হাত তুললো। কাঁদোকাঁদো স্বরে বলে উঠলো,

“ওই মেয়েটার জন্য তুমি আমাকে এই কথা বললে?”

ফয়জাল হাসান হুংকার দিয়ে উঠলেন,

“কি ওই মেয়ে হ্যাঁ? আমার মেয়ে ও। আমার!”

আর কোন কথা না বলে তিনি বারান্দায় চলে গেলেন।

এতক্ষণ ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো অরুমিতা। বাবার সাথে কথা বলতে এসিছিল। কিন্তু ঘরের কাছে এসে বুঝতে পারলো ভিতরে তান্ডব চলছে। বাইরে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ঝগড়ার কারণ বুঝলো। এবং বুঝেই বিরক্ত হলো। ইদানীং মা’কে সহ্য হয় না তার। মায়েরা কি এমন হয়? নিজেকে প্রশ্ন করে আরুমিতা। উত্তর আসে না। অরুমিতা আবার প্রশ্ন করে তবে তার মা এমন কেন? আপুই তো তার নিজের সন্তান তবুও কেন পছন্দ করবে না? মানুষ বোধহয় সৎ সন্তানের সাথেও এমন করে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরুমিতা। ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। বড় বোনের ঘরের সামনে গিয়ে থেমে যায়। উঁকি দেয়। অধরা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। অরুমিতা ধীর পায়ে ঘরে ঢোকে। অধরার মাথার নিচের বালিশ ঠিক করে দেয়। তারপর বসে বোনের পাশে। হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ব্যান্ডেজ নেই। উঠে যায় আবার। ফাস্টএইড বক্স এনে বসে পড়ে বড় বোনের পাশে। যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“আম্মু এমন কেন আপুই? আমার আর ভালো লাগে না। আম্মুকে সহ্য হয় না। আব্বু-আম্মুর প্রতিদিনের ঝগড়া আর ভালো লাগে না। তুমিও কথা বলো না। আমার কেমন নিজেকে শূন্য শূন্য লাগে আপুই। মিস ইয়্যু।”

অধরা ছোট বোনের প্রতিটা কথা শুনলো। তার বন্ধ চোখের পাতা তিরতির করে কেঁপে উঠলো। চোখ খুলে বলতে ইচ্ছে হলো, ধূর বোকা। এইতো আপুই তোর পাশে। কিন্তু বললো না। চুপচাপ শুয়ে থাকলো সে। অরুমিতা কিছুক্ষণ পর চলে গেলো নিজের ঘরে। অরুমিতা যেতেই অধরা ধড়ফড় করে উঠে বসলে। মন খারাপ হলো কিছুটা। মন খারাপ নিয়ে সে বারান্দায় গেলো৷ চাঁদ দেখতে।

সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে ধরণীর বুকে। পাখিরা দল বেঁধে উড়ে চলছে খাবারের খোঁজে। অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নতুন এক ভোরের সূর্যোদয় দেখলো। তাজা হাওয়ায় শ্বাস নিলো। ঘরে এসে কিছুক্ষণ ফোন ঘাটাঘাটি করতেই মনে পড়লো আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে। ঘড়িতে দেখলো সকাল ছয়টা বাজে। অধরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাগে রাখলো। তারপর ধীরে ধীরে তৈরি হতে লাগলো।

টেবিল থেকে কলম নিতে গিয়ে চোখে পড়লো নেতিয়ে যাওয়া সাদা গোলাপ গুলোর দিকে। অধরা মুচকি হেসে হাতে নিলো ফুল গুলো। কিছুক্ষণ ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখে টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিজের ডায়েরি বের করলো। ডায়েরির ভাজে রাখলো ফুল গুলো। তখনই তার ফোনে টুংটাং আওয়াজ হলো। মেসেজ এসেছে। অধরা ডায়েরি টিকে আবার আগের জায়গায় রেখে ফোন হাতে নিলো। তাওসিফের মেসেজ! এতো সকালে তার মেসেজ দেখে অবাকই হলো অধরা। মেসেজে লেখা,

“আজ ভার্সিটি যাবে?”

অধরা কিছুক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর সংক্ষেপে উত্তর দিলো,

“হ্যাঁ, যাব।”

গতকালের মতো আজও সাথে সাথে সিন হলো মেসেজ। অধরা চোখ দু’টো ছোট ছোট করে তাকালো ফোনের দিকে। তাওসিফ কি জানতো অধরা মেসেজের উত্তর দিবে! তাওসিফের মেসেজ এলো আবারও,

“দেখা করতে পারবে?”

অধরা মেসেজ দেখলো। কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না। চোখ বন্ধ করে ফেললো অধরা। নিজের মনকে প্রশ্ন করলো, দেখা করা উচিত? মন বলে উঠলো, হুম। অধরা চোখ খুললো। মস্তিষ্ককে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। আপাতত সে মনের কথা শুনতে চাইছে। সে দ্রুত টাইপ করলো,

“সিইউ ক্যাম্পাসে আসুন।”

“আসছি।”

এবারও সাথে সাথে উত্তর। অধরার অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো এতটুকুতেই। তাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে!
—————————

তরুলতায় ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসছে ঝগড়ার শব্দ। ঝগড়া করছে বাড়ির দুই মেয়ে তরু এবং লতা। পুরো বাড়ি তারা দু’জনেই মাতিয়ে রাখে। অবশ্য তাদের ভাই তাওসিফও কম যায় না। তরু-লতার ঝগড়ার মাঝেই তাওসিফ ডাইনিং রুমে আসলো। বোনদের ঝগড়া করতে দেখে হাসলো একটু। এগিয়ে গিয়ে দুই বোনের মাথায় মেরে নিজের চেয়ারে বসলো। তরু-লতা একসাথে চিৎকার করে উঠলো,

“ভাইয়া! মারলে কেন?”

তাওসিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,

“ঝগড়া থামানোর জন্য। খা তাড়াতাড়ি। দেরি হচ্ছে না তোদের?”

দুইজন মুখ ফুলিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তাইফা ছেলের নাস্তা নিয়ে এলেন। তাওসিফের সামনে খাবার দিয়ে বললেন,

“আজকে তো তোর অফিস নেই না?”

“হুম”

“কাজ আছে কোন?”

“একটু বের হবো মা। কিছু লাগবে? বলো।”

তাইফা ছেলের দিকে তাকালেন। আলতো স্বরে বললেন,

“গতকাল অধরার সাথে দেখা হয়েছিলো?”

“হ্যাঁ, হয়েছে।”

তরু-লতা এবার চিৎকার করে উঠলো,

“ভাবি কেমন আছে? কবে আসবে আমাদের বাড়ি? আর কতোদিন পর?”

তাওসিফ বোনদের দিকে তাকালো। বলল,

“কবে আসবে মানে কি?”

তরু মুখ গোমড়া করে বলে উঠলো,

“মানে ভাবিকে দেখবো! আর কতদিন ছবি দেখেই ভাবি ডাকবো? তিন বছর! কম লাগে ভাইয়া? তিন বছর ধরে তাকে না দেখে ভাবি ডাকি আমরা।”

তরুর কথা শেষ হতেই লতা চামচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ করে বলে উঠলো,

“সহমত। ভাবিকে দেখতে চাই।”

তাইফা হেসে ফেললো মেয়েদের পাগলামি দেখে। তাওসিফ নিজেও হাসলে। তাইফা আবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আজও দেখা করবি?”

তাওসিফ মাথা নাড়লো। মুখে কিছু বললো না। তরু-লতা আবার একসাথে বলে উঠলো,

“আমরাও যেতে চাই।”

এবার শব্দ করে হেসে ফেললো তাওসিফ এবং তাইফা। তরু-লতা কিছুক্ষণ ভাই ও মায়ের হাসির দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেরাও হেসে ফেললো।
—————————

অধরা কাগজ জমা দিয়ে বের হয়ে আসে ডিপার্টমেন্ট থেকে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল করে তাওসিফের নাম্বারে। কল রিসিভ হতেয় অধরা তার রিনরিনে কন্ঠস্বরে বলে উঠলো,

“আপনি কি এসেছেন?”

“কাটা পাহাড়ের গিরিপথে চলে আসুন।”

অধরার ঠোঁটের ভাজে ফুটে উঠে মৃদু হাসি। দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ একা একা চলাফেরা করা অধরার জন্য আজ কেউ অপেক্ষা করছে। অধরার সত্যি অন্যরকম অনুভূতি হলো। খুশিতে মন বাক বাকুম করতে লাগলো। খুশিমনে অধরা পা বাড়ালো গিরিপথের দিকে।

তাওসিফ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তাওসিফ মুচকি হাসলো। প্রতিত্তরে অধরাও হাসলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে অধরা বলল,

“বাইক নিয়ে আসেননি?”

“উহু, আজ আমরা শাটল ট্রেনে যাব।”

আচ্ছা বলে অধরা আর তাওসিফ পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। তাওসিফ বলল,

“ঝুপড়িতে বসে চা খেয়েছো?”

অধরা মাথা নিচু করে বলে উঠলো,

“সবায় বন্ধুদের সাথে যায়। একা একা গেলে কেমন যেন লাগে। প্রথমের দিকে একবার গিয়েছিলাম। আয় যাইনি।”

তাওসিফ হেসে বলল,

“আজ চলো। আমি কিন্তু এখন তোমার বন্ধু।”

তাওসিফ অধরার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো। অধরা তাওসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। তারপর মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। দু’জন মিলে চলে গেলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ ঝুপড়ির দিকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের প্রান কেন্দ্র হলো ঝুপড়ি। না ঝুপড়ি, ঝোপ-ঝাপের মত কিছু নয়। এটি ছোট ছোট টি স্টল ঘেরা ইউ আকৃতির একটি স্পট। ক্লাস শেষে একঘেয়েমি দুর করতে শিক্ষার্থীরা এখানে ভিড় জমায়। গানে-গানে কোলাহলে আনন্দ বিনোদনে সময় উপভোগ করেন ছাত্রছাত্রীরা। হৈ হুল্লোড়, হই চই লেগেই থাকে ঝুপড়িতে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে বন্ধুমহল। নিজেদের মতো করে মেতে আছে তারা চা, গান আর গল্পে। কপোত-কপোতীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এমন জায়গায় একা আসলে সত্যিই মন খারাপ হবে। নিজেকে ভীষণ একা মনে হবে। তবে আজ অধরার সব কিছু সুন্দর মনে হচ্ছে। তাওসিফ অধরাকে নিয়ে বসলো। চা অর্ডার দিলো। অধরা চারপাশে চোখ বুলিয়ে আনমনে বলে উঠলো,

“আজকে নিজেকে একা একা মনে হচ্ছে না।”

তাওসিফ ফিসফিস করে বলল,

“কারণ আমি আছি।”

অধরা কিছুটা চমকে উঠলো। তাকালো তাওসিফের দিকে। কিছুটা বোকা বনে গেছে সে। নিজ মনে ভাবছে মনে মনে বলা কথাটা তাওসিফ কিভাবে শুনলো। বোকার মতো দ্বিতীয় কাজটা করে বসলো সে। বলল,

“আপনি মনে মনে বলা কথা শুনলেন কি করে?”

তাওসিফ ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো। মাথা ঝুঁকিয়ে কিছুটা অধরার কাছে এলো। আগের মতো ফিসফিস করে বলল,

“আপনি কথাটা মনে মনে বলেননি। উচ্চারণ করেছেন।”

“কিহহহহ!”

এবার তাওসিফ ফিক করে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বলল,

“জি।”

অধরা কাঁচুমাচু করে বসে রইলো। চা চলে এলো। তাওসিফ অধরার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলে উঠলো,

“বন্ধুদের সাথে অনেক কথা বলতে হয়। যা মনে আসে তাই বলতে হয়। এভাবে লজ্জা পেয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হয় না।”

অধরা হেসে চায়ের কাপ হাতে নিতে যায়। তার কাটা জায়গাটায় ব্যথা লাগে। চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে সে। তবে মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের করে না। তাওসিফ চায়ের কাপ সরিয়ে নেয়। আলতো স্বরে বলে,

“বেশি ব্যথা পেয়েছো?”

অধরা ডানে-বায়ে মাথা নাড়ে। তাওসিফ কিছুটা সিরিয়াস হয়ে প্রশ্ন করে,

“আমাকে বন্ধু মানছো তুমি?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে অধরা কিছুটা অবাক হয়। তাকিয়ে থাকে তাওসিফের দিকে। বুঝতে চেষ্টা করে কেন হঠাৎ এ কথা বললো তাওসিফ। অধরার ভবনার মাঝে তাওসিফ ফের বলে উঠলো,

“কি হলো বলো। আমাকে মানো বন্ধু?”

“হ্যাঁ।”

“একটা প্রশ্ন করবো সত্যি উত্তর দিবে?”

অধরা মাথা নাড়লো। তাওসিফ গম্ভীর স্বরে বলল,

“গতকালই খেয়াল করেছি কিন্তু তুমি অপ্রস্তুত হবে বলে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। আজ করছি। হাতে কি হয়েছে। মিথ্যা বলবে না অধরা। স্বাভাবিক ভাবে এমন জঘন্য রকম ক্ষ*ত হওয়া সম্ভব নয়। পুরো হাতে অস্বাভাবিক রকম ক্ষ*ত তোমার। মিথ্যা বলবে না প্লিজ। বন্ধুত্বে মিথ্যা মানায় না।”

অধরা মাথা নিচু করে ফেলে। চুপ করে বসে রইলো সে। তাওসিফ সময় দিলো। অধরা কিয়ৎকাল পর মাথা তুলে তাকালো তাওসিফের দিকে। তাওসিফ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অধরা আলতো স্বরে বলল,

“কাঁচের টুরোর উপর পড়ে গিয়েছিলাম।”

“কিভাবে?”

তাওসিফের গম্ভীর কন্ঠস্বর। অধররা অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। মিনমিন করে সেদিনের পুরো ঘটনা খুলে বলল। অধরা খেয়াল করলো তাওসিফের দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করা। কপালের শিরা ফুলে উঠছে। মানে তাওসিফ রেগে গেছে। কিন্তু কার উপর? অধরা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো তাওসিফের দিকে। তাওসিফ বিরবির করে বলে উঠলো,

“কাউকে ছাড়বো না আমি। কাউকে নাহ!”
————————–

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পিছনে রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রাকৃতিক ঝর্ণা আছে। তাওসিফ অধরাকে নিয়ে গেলো সেখানে। অধরা আগেও এসেছে এদিকে। তবে আজ ভালো লাগাটা অন্যরকম। অধরার কাছে অপরিচিত খুব, এই নতুন অনুভূতি গুলো। তাওসিফ ঝর্ণার দিকপ তাকিয়ে বলে উঠলো,

“ঝর্ণা ছুটে চলে নিরন্তর। যেন তার খুব বেশি তাড়া। তার এই ছুটে চলা শেষ হয় না কখনো৷ তাদের ছুটে চলা কোথায় জানো?”

অধরা মনোযোগ দিয়ে তাওসিফের কথা শুনছিলে। তাওসিফের প্রশ্নে সে তাওসিফের দিকে চোখ তুলে তাকালে। বরাবরের মতো দেখতে পেলো তাওসিফ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অধরা দুই দিকে মাথা নড়িয়ে মুখে বলল,

“নাহ, জানি না।”

তাওসিফ আলতো হাসলে। অদরার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কিছু একটা ভেবে নাও। তারপর উত্তর দাও।”

অধরা চট করে তাকালো তাওসিফের দিকে। তারপর ঝর্ণার দিকে। ঝর্ণার পানির কলকল শব্দ শুনলো মনোযোগ দিয়ে। অনিমেষ চোখে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। তারপর চোখ বন্ধ করে ভাবলো। সে কিসের পিছনে ছুটছে? তার কি চাই! তার যা চাই ঝর্ণারও কি তা চাই? অধরা হুট করে চোখ খুলে সরাসরি তাওসিফের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো। বলল,

“সুখের খোঁজে ছুটছে।”

তাওসিফ মুচকি হেসে বলল,

“দারুণ উত্তর। মানুষ বরাবর সুখের খোঁজে ছোটে। তারা সুখ চায়। যে যদিকে সুখ আছে বলে মানুষ সেদিকেই ছুটতে থাকে। তবে সুখ পায় খুব কম সংখ্যক মানুষ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? যারা সুখের জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে না বরং স্থির থাকে তারাই সুখ পায়। বাকিদের ছোটাছুটি করতে করতে জীবনের শেষ ক্ষণ চলে আসে। সুখ আর আসে না।”

তাওসিফ থামে। অধরা অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাওসিফ ফের বলে,

“প্রকৃতি সুখ খোঁজে না। খোঁজার দরকারও হয় না। প্রকৃতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে জানে। প্রকৃতি তার রূপ- লাবণ্য দিয়ে মানুষের মন ভালো করে। বিনিময়ে কিছু চায় না তারা। এটাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। সেখানে বিনিময়ে চাওয়ার কিছু থাকে না। যারা নিঃস্বার্থে ভালোবাসতে জানে তারা এমনিই সুখী হয়, সুখ খুঁজতে হয় না তাদের।”

“আমি নিঃস্বার্থে ভালোবাসতে জানি না বলে সুখী নই? তাই সুখ খুঁজে বেরাই?”

তাওসিফ মুচকি হেসে বলল,

“সুখ খোঁজো?”

“খুঁজি তো!”

তাওসিফ এবার হাসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অধররা দিকে। তারপর ঝর্ণার দিকে ফিরে বলে,

“সুখ না অধরা তুমি ভালোবাসা খোঁজ।”

“দু’টো একই বিষয় নয়?”

“ভালোবাসায় সুখ পাওয়া যায়।”

“একই তো হলো তবে।”

“উহু একই নয়। ভালোবাসায় সুখ পাওয়া যায়। অথচ কিছু মানুষ ভালোবাসা পেয়েও তা অবহেলা করে অন্যত্র সুখের সন্ধান করে। তুমি ভালোবাসার সন্ধানে আছো অধরা সুখের নয়। যারা ভালেবাসার খোঁজে বের হয় তারা পেয়ে যায়।”

অধরা হাসলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

“ভীষণ কঠিন কথাবার্তা।”

তাওসিফের দিকে তাকিয়ে আবারো হাসলো। হেসে বলল,

“আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন তাওসিফ আবরার!”

“নাম ধরে ডাকছো! বাহ! খারাপ না।”

তাওসিফ ভ্রূ উঁচিয়ে বলল। অধরা হেসে বলল,

“প্রথমদিনও বলেছিলাম। আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।”

“বন্ধুকে নাম ধরেই ডাকতে হয়। আর তোমার মুখে তাওসিফ আবরার শুনতে কিন্তু বেশ ভালোয় লাগছে। মানে নতুনত্ব আরকি। ছোটবেলা থেকে সবায় তাওসিফ ডাকে। হাতে গোনা কয়েকজন আবরার ডাকে।কিন্তু তাওসিফ আবরার কেউ ডাকে না।”

তাওসিফের বলার ভঙ্গিমা দেখে অধরা শব্দ করে হেসে উঠলো। তাওসিফ কিছু সময় প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই হাসির দিকে। পরক্ষণে নিজেও হেসে ফেললো। এই মেয়েটা হাসলে তাওসিফের এতো ভালো লাগে কেন? পৃথিবী এতো সুন্দর মনে হয় কেন? নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো তাওসিফ। পুনরায় হেসে ফেললো সে।

#চলবে…?