#_ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
#_পর্বঃ২০
#_আরজু_আরমানী
‘ মিস্টার মাস্টার ডিগ্রি হোল্ডারধারী, এই এসএসসি পাস মেয়েকে কেনো বিয়ে করলেন?’
সাদ একবার আমাকে বলেছিলেন, তিনি মাস্টার ডিগ্রি করা একজন মানুষ আর আমি মাত্র এসএসসি পাস করেছি। তার কথার প্রতিশোধ তুলতেই পরতে বসে হঠাৎ তাকে এই কথাটা বললাম। তিনি এবার এদিক ওদিক মুখ ঘুরাচ্ছেন। তার মধ্যে এমন একটা ভাব যেনো তিনি কিছু শুনতে পাননি। কিন্তু আমি তো জানি এ মানুষ সব শুনেছে। এখন না শোনার ভান করছে। আপনাকে ছুটাচ্ছি আপনার ভাব। আবার তাকে কথাটা বললাম। এবার তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ আমাকে কি কিছু বলছো?’
‘ জি মাস্টার ডিগ্রি হোল্ডারধারী।’
তিনি এবার ফিসফিস করে ‘ এভাবে বলে অত্যাচর করার কি দরকার?’ বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ হ্যাঁ বলো।’
‘ বললাম তো।’
‘ ঘড়ির কাঁটা এবং ক্যালেন্ডারের তারিখ মনেহয় খুব স্লো চলে। তাই তো এখনো তুমি এইচএসসির কোঠায় পরে আছো। ভাবলাম, আমার সম্পত্তি আবার কে না কে দখল করে নেয়? তোমার যে একজন ফুফাতো ভাই আছে, ‘ তাহমিদ’ তিনি তো নামকরা পাবলিক। সারাক্ষণ তোমার পিছনে পরে থাকতো। তাই তাড়াতাড়ি তোমায় বিয়ে করে ফেললাম। ব্যাস, এবার আমি নিশ্চিন্ত।’
তুমি আমার আমি তোমারাই
সঙ্গী আমরা অমর সঙ্গী।
আমি দু, তিনবার চোখের পলক ফেলে বললাম,
‘ বাহ উন্নত মানের চিন্তা ভাবনা।’
_____________________
সময় এগিয়েছে। সাদের সাথে আমার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। নেহা এখন আমাকে ভাবী ডাকবে না আপু ডাকবে সেটা নিয়ে সে মাঝে মাঝে চিন্তিত থাকে। আমি নেহাকে বলে দিয়েছি, তার যা খুশি সে তা ডাকুক। তাসকিন প্রায়ই এ বাসায় চলে আসে। বাবা তাকে একটা ফোন কিনে দিয়েছে। সে আমাকে রোজ ফোন দিয়ে ও বাড়ির সমস্ত খবর আমাকে দেয়। ডাক্তার অরুপকে ফোন করে বাবার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে জেনে নেই। তিনি দিনদিন ডেভলপ করছেন। আমি চাইনা আমি মায়ের ভালোবাসা পাইনি বলে আমার ভাই বাবার ভালোবাসার থেকে বঞ্চিত হোক। কলেজে গিয়ে মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হয়। বন্ধুদের অনেকেই জানে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাপারটা ইশতিয়াক কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চায়না। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই ও আমাকে বলে,
‘ তুই ছোট্ট একটা মেয়ে, তোর বিয়ের বয়স হয়েছে কি?’
কিন্তু সেদিন সাদ আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবার সময় ইশতিয়াক দেখতে পায়। কয়েকটা ক্লাসের পর ও আমাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ রাত্রি তোর কি সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে?’
‘ এখনো বিশ্বাস হয়না? আজ যাকে দেখলি তার সাথেই বিয়ে হয়েছে।’
‘ ওহহ।’
এরপর ইশতিয়াক কয়েকদিন কলেজে আসেনি। আমি ওর ব্যাপারে মাথা না ঘামালেও ব্যাপারগুলো আমার চোখে পরেছে। এখন ক্লাসে আসলেও আমার সাথে দূরত্ব রেখে চলে। আমি ডাকলে সারা দেয়না। সেদিন ধরিত্রী বললো,
‘ রাত্রি তুই কি ইশতিয়াককে একটু বোঝাতে পারবি, ও ইদানীং কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। ও আজকাল টক্সিক গ্রুপের সাথে আড্ডা দেয়ায় ব্যাস্ত থাকে।’
এই টক্সিক গ্রুপটা হলো আমাদের কলেজের একটা বাজে গ্রুপ। দুনিয়ার যত মারামারি আছ, যত দুর্নাম আছে সব আছে সব ওই টক্সিক গ্রুপে। ইশতিয়াক নিজে আমাদের বারন করে এখন ও নিজে কিভাবে গেলো? আমি কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। ইশতিয়াক কলেজে ডুকছে। আমাকে দেখে একটু থমকে দাঁড়িয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলেই আমি ওকে ডাক দিলাম। কিন্তু ও থামলোনা। আমি যখন বললাম,
‘ তালের ব্যাপারি দাঁড়া।’
ইশতিয়াক দাঁড়িয়েছে। আমি জানতাম ও দাঁড়াবে। ছোটবেলায় ও ওর দাদার সাথে বাজারে তাল বিক্রি করতে গিয়েছিলো। তখন থেকেই ওর পরিচিত মানুষরা ওকে তালের ব্যাপারি বলে ডাকে। এটা কলেজে শুধু আমাকেই বলেছে। সেদিন কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলেছিলো,
‘ শোন এই নামটা আর কাউকে বলিনি। এটা একটা আদুরে নাম। তুই আর কাউকে বলবি না।’ ও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি ওর দিকে ভালোভাবে তাকালাম। ওর চোখ লাল। চুলগুলো উসকোখুসকো। চেহারায় মলিনতা।
‘ নিজের কি অবস্থা করেছিস?’
‘ কিছু বলার থাকলে বল।’
‘ সেটাই বলছি। ইশতিয়াক, জীবনের এই সুন্দর সময়টা আর আসবে না। এই সুন্দর জীবনটাকে কলঙ্কিত করিস না। প্রকৃতি শুন্যস্থান পছন্দ করেনা। শীতের পরে বসন্তে প্রকৃতি আবার নতুন রুপে সাজে। মানবজীবনও এমন। সাজাতে পারলেই হলো। আমার বিশ্বাস, তুইআমার কথা বুঝতে পেরেছিস।’
ইশতিয়াক কোনো কথা বলেনি। আমার কথার সম্মতিতে শুধু ঘাড় নাড়িয়েছে। উল্টোদিকে ফিরে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আমি জানি ইশতিয়াকের গোপন ভালোবাসার কথা। সে আমার প্রতি কতটা কেয়ারিং ছিলো। তাতে আমি কি করবো? আমার মন যাকে চায় আমি তো তাকেই গ্রহন করবো। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রমনায় এসে বসে রইলাম। সাদ এলেন আরও আধ ঘন্টা পর। আমার পাশে বসে বললেন,
‘ ইশতিয়াকের ব্যবহারে কি বুঝলে? ও ফিরে যাবে?’
‘বুঝিনি কিছুই।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেঁড়ে বললাম কথাটা। আমি চাইনা ইশতিয়াক আমার জন্য নিজের জীবনে ভুল কিছু করুক। এটা আমি মেনে নিতে পারবোনা।
______________________
দেড় বছর পর আজ নিজের বাড়ি এসেছি। আমার সেই সাজনো ছোট্ট ঘরটা এখনো সেই আগের মতোই সাজানো। কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এখনো ঝকঝকে তকতকে। প্রতিদিন হয়তো এটা ঝাড়ু দেয়া হয়।নিজের রুমে ঢুকতেই একটা প্রশান্তি খেলে গেলো মনে। আমার প্রিয় বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় মন প্রান জুড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা এখন আর আগের মতো নেই। সবাই নিজের জীবনের টানে বাড়ি ছেড়েছে। বয়োজ্যেষ্ঠরা এখন এখানে পরে আছে। তাসকিন স্কুলে গেছে। কয়েকদিন আগে খবর পেলাম, তাহিরা মা সিঁড়ি থেকে পরে ডান পা ভেঙে গেছে। তাকে এখন হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হয়। তিনি কাল রাতে নিজে আমাকে ফোন করে বললেন,
‘ রাত্রি, বহুদিন হলো তোমাকে দেখা হয়না। মনটা বড় আকুপাকু করছে তোমাকে দেখার জন্য। একবার এসো এ বাড়িতে। ‘
তার কন্ঠে মলিনতা ছিলো। তিনি কাতর কন্ঠেই আমাকে ডেকেছন। আমি বুঝতে পারছিলাম তিনি হয়তো এবার শুধরে যাবেন। আমি তার ডাক উপেক্ষা করতে পারিনি। আমাকে আসতেই হলো। সাদ এবং আন্টি দুজনেই আমাকে বারন করেছেন। যেখানে সম্মান থাকেন সেখানে যাওয়া উচিত নয়। তবে আমি বলবো, সেখানে গিয়ে একবার দেখা উচিত তারা কতটা সুখে আছে, নাকি আত্মগ্লানির নরক অনলে পুঁড়ছে? আমি এসেছি তবে ফিরেও যাবো। বড় ফুপি এসে আমাদের সাথে কথা বলে গেলেন। সবার আচরন অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আমি একটা বিষয় ভালো করেই বুঝলাম, ‘ আমার প্রস্থানে এরা সবাই অনেক ভালো ছিলো।’ সবার সাথে কথা বলার খানিকটা পরে তাহিরা মায়ের রুমে গেলাম। তিনি বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন। আমাকে দেখে হাসলেন। আমি গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বসতে বললেন।
‘ শরীরের কি অবস্থা এখন?’ প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করতেই তিনি পানির গ্লাসটা চাইলেন। পানি খেয়ে আমাকে বললেন,
‘ তুমি কেমন আছো?’ তার এই আচরন আমাকে নাড়া দিচ্ছিলো। তিনি এমন আচরন কখনোই করেননি। তিনি আমার হাতটা ধরে আমাকে বললেন,
‘ এই যে আমাকে দেখছো, এ সবই আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। তোমার কি মনে প্রশ্ন জাগেনি যে, তোমাকে আমি কেন পছন্দ করিনা বা ভালোবাসিনা? হয়তো জেগেছে কিন্তু জানতে পারোনি।’
‘ আপনি আমার মা নন এইজন্য।’
‘ না। আপন না হয়েও অনেক বেশি ভালোবাসা যায় সেটা জান?’
তিনি কি বলতে চাইছেন তা আমি বুঝতে পারছিনা। তবে তিনি নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্যই আমাকে ডেকেছেন। কি সেটা? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনি আমাকে কেনো ভালোসতেন না মা?’
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলা শুরু করলেন,
‘ ভালোবাসা।’ তিনি থামলেন। আবার বলতে শুরু করলেন, ‘ আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতাম কলেজে পড়ার সময়। ক্লাসে বসে পড়া রেখে তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতাম। তার হাসি, তার কথা বলার ধরন, তার চাহনি, মাতাল করা পারফিউমের ঘ্রান আমাকে বিমোহিত করতো। কলেজ লাইফ শেষে দুজন দু’জায়গায় চলে যাই। তবুও আমাদের নিয়ম করে সপ্তাহে দুবার দেখা হতো। ফোনে কথা হতো। জীবনে একসাথে থাকার জন্য আমাদের বিয়েটাই বাকি ছিলো। আমরা ভেবে রেখেছিলাম, অর্নাস লাইফ শেষ করে দুজনে বিয়ে করবো। সেই মতো হেঁটেছিলাম আমরা। অর্নাস ফাইনাল হলো। ওর ছোট্ট একটা জব হলো। দুজনে টানা এক সপ্তাহ ঘুরে মনের মতো ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিলাম। মাস্টার্সে ভর্তি হলাম। তখনো সব কিছু ঠিকঠাক। তখন ছুটি কাটাতে একসপ্তাহের জন্য বাসায় গেলাম। ফোনে ওর সাথে কথা হলো যেদিন শহরে ফিরবো সেদিন রাতেই আমরা বিয়ে করবো। সেই অনুযায়ী ও সমস্ত কাজ এগিয়ে রাখলো। তারপর এলো সেই দিন, যেদিন আমার পুরো জীবনের মোড় ঘুরে গেলো। আমি নিজের কাছেই নিজে হেরে গেলাম। দিনটা ছিলো শুক্রবার। সকালে আমি আদনানকে ফোন করে বললাম,’ দুপুরের বাসে উঠছি। সন্ধ্যায় পৌছে যাবো।’ ও অনেক খুশি ছিলো। খুশিতে ও আমার সাথে কথা বলতে পারছিলোনা। আমার হাত পা কাঁপছিলো। আজ রাতে আমার বিয়ে হবে তাও আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে। যাকে এতোটা দিন সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়েছি আজ ফাইনালি তাকে পেতে যাচ্ছি। সবসময় বাবা আমাকে বাসে তুলে দিতেন। তাই সেদিন বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। বাবা এলেন। এসে আমাকে বললেন, ‘ তাহিরা তোমার ফোনটা দাও।’ আমি ফোনটা তার হাতে দিলাম। তিনি ফোনটা তার পকেটে রেখে দিলেন। এরপর কয়েকজন লোক বাসায় ঢুকলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাজী, তোমার বাবা, তোমার দাদা এবং তোমার বড়ফুফা। বাবা আমাকে আমার রুমে এনে বললেন, ‘ তোকে এখন বিয়ে করতে হবে মা, নয়তো আমাকে জেলে যেতে হবে।’ আমার বাবা তোমাদের অফিসে ক্যাশিয়ার হিসেবে ছিলেন। তার হাতে একটা কাজ হয় দশ লক্ষ টাকার। কিন্তু বাবার ভুলের জন্য সেটা দশ লক্ষ না হয়ে এক কোটি হয়ে যায়। কোম্পানির ফান্ড থেকে নব্বই লক্ষ টাকা চলে যায়। তোমার দাদা তখন আমার বাবাকে জেলে দিতে চায়। কারন এতো টাকা দেয়ার ক্ষমতা আমার বাবার নেই। আমার বাবার কান্নাকাটির পর তারা এই সিদ্ধান্তে আসে যে, ‘ তার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে হবে।’ একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বাবা তাদের কথায় রাজী হয়। বাবার চোখে কখনো জল দেখিনি। সেদিন তিনি এগুলো আমাকে বলেছিলেন আর কাঁদছিলেন। আমার মন তখন বাবার ওই চোখের জল ছাপিয়ে যেতে পারেনি। সেদিন সেই ঘৃনিত দুপুরে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরতায় আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা সেদিনই আমাকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে আসে। তোমাদের বাড়ি পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধ্যার পর হয়ে যায়। আমি তখন বুঝতে পারছিলাম এই সময় আমি আদনানের সামনে থাকতাম। ওর ওই হাসি মুখ কল্পনা করে আমি হুস হারালাম। এ বাড়িতে সেই সন্ধ্যায় ঢুকেছিলাম। তারপর থেকে তোমাকে তোমার ফ্যামিলিকে দেখতে দেখতে নিজেকে এমনকি আদনানকে ভুলে গেলাম। এমনকি পড়াশোনাও ছেড়ে দিলাম। প্রায় দুই আড়াই বছর পর টিভিতে একটা খবর দেখলাম, আদনান নামের এক যুবক তার প্রমিকার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসস্যান্ডে এসে বসে থাকে। দিনে তার কোনো খবর পাওয়া যায় না। আজ সেই যুবকটি একটা বাস এক্সিডেন্টে মারা যায়।’ ওর সেই করুন চেহারা দেখে আমার মধ্যে আবার পুরনো অনুভূতি ফিরে এলো। সব যেনো নতুন করে। কিন্তু কি হবে ও তো মারা গেছে। আর কোনোদিন ওর সাথে আমার দেখা হয়নি। এই খবরটা আমার সামনে না এলেই বাকী জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারতাম। তবুও কি শান্তিতে ছিলাম? না। না। এরপর থেকে যত দিন যেতে লাগলো তত আমি তোমাকে, তোমার পরিবারকে ঘৃনা করতে শুরু করলাম। তখন থেকেই তোমাকে অত্যাচার করি। যেটা আমার ঠিক হয়নি।’
তিনি থামলেন। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তার কথা বলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তিনি আদনান নামের ওই ছেলেটিকে ভীষন ভালোবাসতেন। তাকে তিনি আজো ভুলতে পারছেন না। আমার পরিবারের মানুষ আমার দাদা এতোটা নিষ্ঠুর ছিলেন তা তো জানতাম না। তিনি আমার মায়ের সাথে যা করেছেন তা নাহয় ধরলাম না। কিন্তু তিনি তাহিরা মায়ের সাথে যেটা করেছেন সেটা তার জগণ্য একটা কাজ। তিনি যেমন তাহিরা মায়ের সাথে অন্যায় করেছেন তেমনি তিনি তার নিজের সন্তানের কাছে অপদস্ত হয়েছেন। তাহিরা মা আমার সাথে যা করেছেন তার তুলনায় তার জীবনে যা ঘটেছে সেটা বেশি যন্ত্রণাদায়ক। তিনি অনুতপ্ত। একজন মানুষ তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হলে তাকে আর নতুন করে কোনো সাজা দিতে হয়না। সে নিজেই বোঝে কাজটা ঠিক হয়নি। তখন তার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে তাকে মুক্তি দেয়া উচিত। তাতে সেও মানসিকভাবে ভালো থাকবে। তাহিরা মায়ের সাথে কথা বলে জানলাম,
তার ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে। ডাক্তার তাকে একবছর সময় দিয়েছে। সে কি তার পাপের প্রাপ্ত শাস্তি পায়নি? তিনি নিজেও বোঝেন। আমি নতুন করে তাকে আর কোনো চাপ দিতে পারিনা। মানুষ হিসেবে এতটুকু মনুষ্যত্ববোধ আমার থাকা উচিত। আমি চাই মায়ের শেষ জীবনটা তিনি আমার সাথেই থাকুন। কথার একপর্যায়ে তিনি আমাকে বললেন,
‘ আমার সময় বেশি নেই মা। আমার পরে তুমি তাসকিনকে দেখে রেখো। তোমার মতো সহ্যশক্তি ওর নেই। ও পারবে না।’
তার কথা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি তাকে আস্বস্ত করেছি, তাসকিনকে আমি ভালো রাখবো। তিনি আমার কথা শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আমার সাথে তার শেষ যে কথাটা ছিলো, তিনি আমাকে বললেন,
‘ আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
চলবে…….