#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ০১
আয়নার গায়ে লাল বেনারসি শাড়ি। লালের মধ্যে সোনালি জরির ঢেউ তোলা কারুকাজ। মাথায় পাতলা বিয়ের ঘোমটা। গোল গোল চোখে মোটা করে টানা কাজল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। কপালের মাঝ বরাবর লাল টিপের পাশ থেকে গাল পর্যন্ত সাদা, লাল কুমকুমের বিন্দু বিন্দু আলপনা। সেই আলপনার উপরে নিজ ছন্দে নৃত্য করছে টিকলি, টায়রা। তাদের সাথে ঠিক তাল মেলে দোল খাচ্ছে নাক থেকে কান পর্যন্ত টানা নাকের গোল নথ।
আয়নার গায়ের রং সাদা। সাদা মানে বেশ সাদা। গ্রামের ধূলোবালি, খটখটে রোদে তার সৌন্দর্য কখনো ম্লান হয়নি। বরং শৈশব থেকে কিশোরী হতে হতে গ্রামের বুনো সাদা ফুলের মতো খিলখিল করে হেসে উঠেছে। তার দাদি বলে, — সে পেটে থাকতে চকচকে পিতলের কলসি ঘরের দরজায় রাখতেন। তার মায়ের প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সবার আগে এই সোনার রঙের চকচকে পিতলের কলসিতেই চোখ পড়ত। আর পড়ত বলেই তার গায়ের রংও হয়েছে সোনার রঙের মতো চকচকে।
আর এই চকচকে সাদা গায়ে লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়িতে তাকে দেখতে লাগছে সদ্য ফোঁটা কুসুমকলির মতো।
কুসুমকলির মতো হোক আর যাই হোক। আয়না তাদের টিনের ঘরের আধভাঙা চকিতে বসে আছে জড়সড় হয়ে। ভয়ে তার চোখ, মুখ শুকনো। চোখের কোণও ভেজা। কাজল লেপটেছে দু’বার। দাদির কাছে ধমকও খেয়েছে দু’বার।
তাই এবার সে দম আটকে খিঁচে বসে আছে। খিঁচে বসে থাকলেই বুঝি চোখের পানিও খিঁচে বসে থাকে। থাকে না! তাই কাজল আবার লেপটে গেছে। এবার অবশ্য এখনো ধমক খায়নি। কেননা, তার দাদি আপতত এই ঘরে নেই। বিয়ে বাড়ি! দুনিয়ার কাজ। আছে হয়ত আশে পাশেই।
তাই সে সেই লেপটে যাওয়া কাজল নিয়েই জড়সড় হয়ে চুপচাপ বসে আছে। সে অবশ্য জানে না, সেই লেপটা যাওয়া কাজলেও তাকে দেখতে লাগছে রাজেন্দ্রাণীর মতো। দেখতে রাজেন্দ্রাণী হোক আর যাই হোক। সবার কপাল কি আর রাজেন্দ্রাণীর মতো হয়? হয় না! হয় না বলেই এই রুপ’ই তার কাল হয়েছে।
আয়নার বাবা, মা নেই। গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষের তালিকায় তারা আছে। এই তালিকার এই গ্রামের মানুষেরা নয় অন্যের জমি বর্গা নেয়, নয় স্টেশনে মালামাল বহনের কাজ করে, নয় এক গ্রাম পরে নদীর পাড়ে ইটের ভাটায় কাজ করে। তার বাবাও ইটের ভাটায় কাজ করতো। সেই কাজের মধ্যেই তার বাবা একদিন স্বাভাবিক ভাবে কাজে তো গেলো আর ফিরে আসেনি। কেন আসেনি তারা জানে না। অভাবের সংসার! বসে থাকলে তো আর পেট চলে না। তাই তার মাও গিয়ে কাজে যোগ দিলো। তবে তার মাও একদিন ঠিক বাবার মতো কাজে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। তার মা ছিলো তার মতোই দেখতে সুন্দর। অনেকে বলে অন্য লোকের সাথে পালিয়ে গেছে। অনেকে বলে সুন্দর বলে ধরে অন্য দেশে পাচার করে দিয়েছে। আবার অনেকে বলে, নষ্ট করে মেরে ইটের চুলায় জ্বালিয়ে দিয়েছে।
এই ইটের চুলায় জ্বালিয়ে দেওয়ার গালগল্প তাদের গ্রামে অনেক আছে। অবশ্য সবই চুপিচুপি। কেননা এই ইটের ভাটা সারেং বাড়ির। টাকা, পয়সা, জমির কোন কিছুর তো অভাব নেই। তাই তাদের উপরে কথা বললেই নাকি রাতের আঁধারে তুলে গলা কেটে চুপচাপ চুলার ভেতরে দিয়ে দেয়। কোন প্রমাণ নেই, চিহ্ন নেই, তাই কারো কিছু বলার সাধ্যও নেই।
সে বড় হয়েছে দাদির কাছে। চাচা, চাচির সংসারে। চাচা চাচির সংসারে থাকলেও আয়না এক হিসেবে বড় হয়েছে আদরেই। তার চাচির দুই ছেলে, মেয়ে নেই। সে দেখতে পুতুলের মতো। অভাব থাকলেও তারা অনাদর করেনি। বরং মেয়ের মতোই আগলে রেখেছে।
তার চাচা গ্রামের সাধারণ কৃষক। বাবা, মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পরে দাদি আর কাউকে ঐ দিকে কাজে যেতে দেয়নি। নিজেদের তো আর কোন জমিজমা নেই। বর্গা নিয়েই চাচা চাষাবাদ করেন। যা আসে তাই দিয়েই কোন রকম দিন চলে।
সেই চলার মাঝেই আয়নার দায়িত্ব চাষাবাদের সময় জমিতে চাচার জন্য দুপুরে ভাত নিয়ে যাওয়া। সব দিনের মতো সেই দিনও গিয়েছিল।
তাদের গ্রামে নাম করা ফকির বাবা হলো আলাউদ্দিন ফকির। তিন চার গ্রামে তার বেশ নামডাক। জ্বর হোক, পেটের বেদনা হোক, জ্বিন- ভূত যা’ই হোক বা যে কোন বিরাট সমস্যা’ই হোক। তার কাছে সব সমস্যার সমাধান আছে। বড়ই গুণ তার।
আর এই গুণ আছে বলেই তার খুব নাম ডাক। অবশ্য এই নাম ডাকের আরেকটা কারণও আছে। সেই কারণটা হলো তার সখি। জয়তুন আরা বেগম! সারেং বাড়ি আর এক হিসেবে মিঠাপুকুর গ্রামের মাথা।
ভয় হোক আর সম্মানে হোক তাদের সাথে কেউ লাগতে যায় না। তারা থাকে তাদের মতো। গ্রামের অধিকাংশ জমিই তাদের। তাদের জমি বর্গা নিয়ে গ্রামের মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে আছে। আর যাদের দয়ায় বেঁচে থাকে, তাদের সাথে লাগতে যাবে কে?
যাই হোক! সেই মাথা জয়তুন আরা বেগম তার হাতের মুঠোয়। তিনি যেই পরামর্শ দেন। জয়তুন আরা বেগম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তাই তিনি ফকির বাবা হলেও সারেং বাড়ির মানুষের মতো সবাই তাকেও খুব সমীহ করেন।
সারেং বাড়ি আর তাদের গ্রাম একই। তবে তারা থাকে গ্রামের একেবারে শেষে চকের সাইডে। এখানে জমির দর কম, তাছাড়া বাড়ির কাছ থেকে চাষাবাদ করাও সোজা। তাই তার চাচারা অনেক আগেই গ্রামের লোকালয় ছেড়ে এদিকে এসেছিলো। শুধু তারা না, তাদের মতো অনেকেই এসেছে। তাই আয়নার গ্রামের দিকে যাওয়া হয় না বললেই চলে। আর হয় না বলেই সারেং বাড়ি নিয়ে বর্তমানে তার কোন ধরণা নেই, তবে আতঙ্ক আছে। কেননা অনেক গালগল্পের মধ্যে আরেকটা গল্প হলো, — অনেকে বলে তার বাবাকে সারেং বাড়ির মানুষেরাই মেরেছে। কেন তার বাবার মতো সাধারণ এক লেবার কে মারবে আয়না জানে না, বুঝে না। তবুও এই লোক গুলোকে সে যেমন ভয় পায় তেমনি ঘৃণা করে।
সেই ঘৃণা বা ভয় অবশ্য কাউকে বলা বা দেখানোর মত সাহস তাদের নেই। তারা সাধারণ, সাধারণ ভাবেই খেয়ে পরে আছে। সেই পরার মাঝে সেইদিন ভাত নিতে গিয়েই পড়ল ঠিক আলাউদ্দিন ফকিরের সামনে। আয়না দেখেই সালাম দিলো।
ফকিরবাবা সদা মিষ্ট ভাষী। তিনি কখনো উঁচু গলায় কথা বলেন না। বলেন ধীর, সুন্দর, কোমল করে। অন্য রকম একটা অমায়িক হাসি তার ঠোঁটে সব সময় বিরাজ করে। সেই হাসি দেখলে’ই মনে হয়, তিনি খুবই আপন কেউ, একেবারে নিজেদের লোকের মতো, তাকে ভয়ের কিছু নেই। সব সমস্যা এমনিতেই বলা যায়।
সে সেই অমায়িক হাসি ঠোঁটে রেখেই কোমল সুরে সালাম নিলো। নিয়ে বললো, — তুমি বশিরের ভাইয়ের বেটি না?
আয়না হেসেই মাথা দুলালো।
— এতো বড় হইলা কবে? কিছুদিন আগেও দেখলাম ডোবা পুকুরে ডুবে ডুবে কানামাছি খেলছো।
আয়না খিলখিল করে হাসলো। কথা সত্য! পুকুরে সাতার কাটা তার পছন্দের কাজ। আগে তো পুকুর দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ত। দিনে দু’তিন বার গোসল এমনিই করে ফেলতো। এখন অবশ্য বড় মা রাগ করে। তাই এখন একবেলায়’ই ঘাটে যায়। দাদির সাথে নয় বড় মার সাথে।
আলাউদ্দিন ফকির তার খিলখিল হাসির দিকে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলেন। তারপর তার আগের মতোই কোমল সুরে বললেন, — কোথায় যাও?
— বড় বাবারে ভাত দিতে?
— ভালো, ভালো। তবে মাথায় কাপড় কই? এই ভর দুপুর কিন্তু একদম ভালা না। আল্লাহ রুপতো দিছে আগুনের গোলা। সেই গোলা নিয়া যাইবা তো একলা। ফিরবাতো ঘাড়ে আরেকজন নিয়া।
আয়না তাড়াতাড়ই মাথায় কাপড় টানলো। ভীতু মেয়ে সে। তার মধ্যে কিছুদিন আগে তাদের পাশের গ্রামের কাকলির উপর তেনাদের নজর পড়ল। আহারে কি শাস্তি! এই আলাউদ্দিন ফকির’ই তো শুকনা মরিচ পুড়ে, শলার ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে দূর করল। তখন এই অমায়িক হাসি ফকির বাবার ঠোঁটে থাকে না, থাকে না কোন কোমল সুর। চেহেরা হয়ে যায় অন্য রকম। তখন তাকে দেখলে আপন মনে হয় না, মনে হয় না নিজেদের কেউ। মনে হয়, তখন সে অন্য জগতের বাসিন্দা।
তাই আয়না খুবই সাবধানে থাকে। তার দাদি বলে রুপবতী মেয়ে দেখলেই তারা ঘাড়ে চাপে। চাপতে না পারলে দূর থেকে নজর করে। তাইতো সে দুপুর সন্ধ্যা খুব মেনে চলে।
সেই মেনে চলায় তার খুব একটা অবশ্য কাজ হলো না। কেননা সেইদিন দুপুরে যার নজর পড়ার তা তো পড়েই গেছে। কেননা তেনারা নজর করলে ফকিরবার রক্ষা করেন। স্বয়ং ফকিরবাবার’ই নজর তার উপরে পড়েছে। সে নজর থেকেই এক ভয়ংকর তেনাকে তার ঘাড়ে নিজ উদ্যোগে ভর করার আয়োজন করেছে।
আর সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে তার দিন দু’য়েক পরেই আয়না শুনলো, তার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। আর কোন বাড়ি থেকে না। এই অত্র এলাকার সবচেয়ে বড় বাড়ি সারেং বাড়ি থেকে। তাদের বড় নাতির জন্য।
আয়নার চাচা পড়ল মহা মুসিবতে। কেননা গাঁও গেরামের হিসেবে তার ভাস্তির বিয়ের বয়স হয়েছে, চারিদিক থেকে ভালো ভালো সম্বন্ধও আসে। তবে গরীর ঘরে রুপ থাক আর যাই থাক। খালি হাতে মেয়ে নেয় কে? সেই হিসেবে এই সম্বন্ধ ভালো। কোন চাওয়া পাওয়া নেই। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তারা’ই সাজিয়ে নেবে। তবে ছেলের বয়স একটু বেশি। বেশি মানে বলতে গেলে ত্রিশের উপরে তো হবেই। এ হওয়াও ছেলের নিজের দোষে। এমন না তার জন্য মেয়ে পাচ্ছে না। সে নিজে ঘোষনা দিয়েছিল, সে বিয়ে করবে না। অবশ্য এর যথাযোগ্য কারণও ছিল।
কেননা তার মুখের অর্ধেকের বেশি অংশ’ই আগুনে ঝলসানো। সাধারণ ঝলসানো না, হঠাৎ তাকালে যে কেউ’ই আঁতকে উঠবে।
তবুও সিয়ানা হওয়ার পরে সারেং বাড়ির মাথা জয়তুন আরা বেগম নাতির বিয়ে ঠিক করলেন। যাদের কাছে টেকা আছে তাদের মাইয়ার অভাব হয় নাকি? তাবে মেয়ে হয়ে গেলো চেহেরা দেখেই অজ্ঞান।
সারেং বাড়ির বড় নাতি নম্র, ভদ্র। অন্তত বাজে কোন কথা এলাকায় নাই। কাজ কাম ছাড়া অন্য কোন কিছুতেই সে নাই। তবে সেই অজ্ঞান তাকে আঘাত করলো। আর করলো বলেই তখনি সে ঘোষনা দিলো, সে বিয়ে করবে না “।
অবশ্য তার ঘোষনায় কিছু থেমে থাকে নি। জয়তুন আরা নিজের মতো মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। সে ছাড়া এই নাতি নাতনীদের আছেই বা কে? এমন না মেয়ে পায় না। সব জেনেও অনেকেই সেধে মেয়ে দিতে চায়। কেননা সবাই ভালো করেই জানে। যে বউ হবে সে হবে সোনায় সোহাগা। সারেং বাড়ির কর্ত্রী। তবে কোন কারণে জয়তুন আরার কারো’ই মনে ধরে না।
সেই ধরা ধরলো তার ভাস্তিরে। তিনি কি করবেন দিশে পান না। কোমল, নরম মেয়ে তাদের । বয়স কোন সমস্যা না। মেয়ের সঠিক বয়স আর ব্যাটা মানুষের আবার বয়স কি? তবে মুখটা?
আয়না শুনেই একুল, ওকুল হয়ে কাঁদলো। চাচার হাত ধরে বললো, — আমি এই বিয়া করুম না বড় বাবা। তাদের দেখলেই আমার ভয় করে।
— কিসের ভয়?
— সেটা যারই থাক। তবে এই বিয়া আমি করুম না বড় আব্বা।
বশির ভাস্তির মুখের দিকে তাকিয়ে সারেং বাড়ি দিকে রওনা দিলো। মা, বাপ মরা এতিম মাইয়া। থাক বড় ঘর লাগবোনা। তবুও ভালো থাক!
তবে ফিরলো মুখে পান, আর হাত ভর্তি মিষ্টি নিয়ে। খুশিতে তার চোখ মুখ জ্বিলজ্বিল করছে। সে মাটির হাড়ির মুখের কাগজ ছিঁড়ে সাদা রসগোল্লা বের করে ভাস্তির মুখে তুলে দিয়ে বললো, — মারে, এই হতভাগা বড় বাবার মুখের দিকে চাইয়া বিয়াডা কবুল করো। তিন ধানের ক্ষেত তোমার বড় বাবার হইবো। এতো কষ্ট কইরা তোমারে লালন পালন করলাম। তুমি কি তার এইটুকু প্রতিদান দিবা না।
আয়না বলতে গেলে তার চাচার পায়ে পড়ে গেলো। পা আঁকড়ে ধরে বললো, — বড় বাবা পারলে মেরে ভেলায় ভাসায়াই দাও। তাও ঐ জমের বাড়িতে পাঠাইও না। তারা খুনি, আমার বাবা মায়ের খুনি।
— আরে ধুর! কে কইসে তোরে?
— এলাকার সবাই কয়।
— পিঠ পিছের কথা কখনো সত্য হয় না মা।
— কে কইছে হয় না। হয় বড় বাবা, হয়। কিছুডা হইলেও হয়। তারা ভালো মানুষ না।
— ধুর পাগল! তোর বাপে তাগো ইটের ভাটায় কাজ করতো বইলা তারাই মারছে এমন কোন কথা আছে। তাছাড়া সব না জেনে মারার কথা আসবে কেন? নিরুদ্দেশও তো হইবার পারে। কতো মানুষ অভাবে তাড়নায় হয়। তোর বাপ ও যে ধোয়া তুলসী পাতা ছিল, সেই জামিন কে লইবে।
— আমার বাবা ওমন না।
— ছিলি তো করের আঙুলের সমান। কি জানিস তুই?
— আমার কিছু জানা লাগবো না। আমি তাদের বাড়ির বউ হমু না।
বশির বড় একটা শ্বাস ফেললো! ফেলে বললো, — আচ্ছা ঠিক আছে তোর বাপে ওমন না। তবে এক গ্রাম পরে ইটের ভাটা। রাস্তায়ও তো কত কিছু হতে পারে। তাছাড়া সামান্য মানুষ আমরা। আমাদের মেরে তাদের লাভ কি?
আয়না কথা খুঁজে পায় না, তবে মনও সায় দেয় না। বশির খুব করে ভাস্তিকে বোঝালো। নিজের মা, বউকেও বললো বোঝাতে। আয়না তাও বুঝে না। বুঝবে কি করে। শুধু যে ভয় ঘৃণা তা না। চাঁদে যেমন এক সাদা চুলের ধবধবে সাদা বুড়ি বসে বসে সুতা কাটে। তেমনি সারেং বাড়িতেও এক বুড়ি আছে। যার নাম জয়তুন আরা বেগম। যে কথায় কথায় খিক খিক করে হাসে। আর ঊনিশ থেকে বিশ হলে, তার পালা একদল লোক আছে। যাদের দিয়ে ধরে বেলমাথা করে, করে পুরো গ্রামে এক চক্কর কাটিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
সেই ঢেকুর, আয়নার ভয় কোন কিছু’ই কারো কানে গেলো না। গেলো না বলেই আয়না আজ এই বেনাসরি শাড়িতে। কুসুমকলির মতো ফুটে বসে আছে।
আর আছে বলেই আয়নার ভেতর ভেঙে চুড়ে এলো। তার লেটকে যাওয়া কাজল চোখের কোণা বেয়ে থুতনিতে গিয়ে ঠেকলো। যে বাড়ি’ই ভয়ের কারখানা, যাদের কথা চিন্তা করেই তার কলিজা খাবলে উঠছে। সেই বাড়িতে সে যাবে কি করে ? আল্লাহ! রক্ষা করো। এই যাত্রায় করো। যদি করো, মানত দশ রোজা আর এক কুরআন খতম ঠিক দিয়ে দেবো।
চলবে…