ধূপছায়া পর্ব-০৬

0
3

#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ০৬

টিউবওয়েলের ঠান্ডা শীতল পানি গায়ে পড়তেই সারা দিনের ক্লান্তি যেন পৃথিলার নিমেষেই গায়েব হয়ে গেলো। শরীরটাকে মনে হলো পাখির পালকের মতো হালকা, কোমল, ঝরঝরে। সেই ঝরঝরে শরীরে পিতলের বালতি থেকে পানি ঢালতে ঢালতে আকাশের দিকে তাকালো। কলপারের চারিদিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা,উপরে খোলা। সেই খোলা আকাশের চাঁদ যেন ঝিলমিল করে ফুলের পাপড়ির মতো জোসনা দু’হাত ছড়িয়ে গায়ে ফেলছে।

এই গায়ে ফেলা ঝিলমিল করা চাঁদের দিকে তাকিয়েই পৃথিলা বড় একটা শ্বাস ফেললো। সেই দিন ভোরে তার মায়ের এক একটা শব্দে পৃথিলা থমকে গিয়েছিল। সেই থমকে যাওয়ার মাঝেই তার মা আরো বলেছিল, — আমি সেই ধোকাবাজের নাম মুখে আনবো না, মরে গেলেও না। তবে আমি সব সময় চেয়েছি তার ছায়া যেন তোমার উপরে না পড়ে। এখনো চাই! তাই চেয়েছিলাম এই দেশ থেকে তুমি চলে যাও। এই বিয়েটা তোমার উপরে যতো কালো ছায়া আছে সেখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতো। তাই আবারো বলছি, ভাবো, ভালো করে ভাবো।

পৃথিলা কোন কিছুই ভাবে নি। এমন অবস্থায় কিছু ভাববে এমন মেয়ে হয়তো দুনিয়াতেও নেই। সেই স্নিগ্ধ কোমল ভোরে পৃথিলা নামক মেয়েটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছিল। কেউ কি বুঝেছে। বুঝে নি! সেইদিনের পরে পৃথিলা অনেক দিন ঘর থেকে বের হয়নি। হওয়ার মতো অবস্থা তার ছিলও না। তবে বাবা বিয়েটা পিছিয়ে দিয়েছিল। নিজের রক্ত না থাক, বাবা তো। হয়তো পৃথিলার অবস্থাটা অনুমান করতে পেরেছিল। তাই বন্ধুকে বলেছিলল” ছেলে এবার ঘুরে আসুক। তারপরে বিয়ে ধীরে সুস্থে দেওয়া যাবে। ”

তারপরে পৃথিলার দিনগুলো কেমন গেছে পৃথিলা নিজেও জানে না। একই ছাদ, একই ঘর, পাশাপাশি রুম। তবুও তার মনে হয়েছে সে একা, একদম একা। তার কষ্ট বোঝার মতো কেউ নেই। বিচ্ছিন্ন একটা দীপে একা বসবাস করছে। যেখানে তার কেউ নেই। এই যে তার আপন মানুষগুলো এরা তার কেউ না। কেউ যদি হতো তাহলে বুঝতো এক ঝড় থেকে বাঁচাতে এক অথৈই সাগরে তাকে ফেলে দিয়েছে। হাবুডুবু খেতে খেতে সে ক্লান্ত হবে। তবুও না কখনো একেবারে ডুবে যাবে, না কখনোও তীর খুঁজে পাবে।

সেই নিস্তব্ধ দম বন্ধ করা সময়ে একের পর এক তারেকের চিঠি এসে জমা হয়েছে। সে কোন টু শব্দ করেনি। জন্মই যার অভিশাপ, ভালোবাসা সেখানে বিলাসিতা।

সেই না করার মাঝেই একদিন তারেক এসে হাজির। জানতো এমন একদিন আসবে। ভালোবাসার মায়াজাল থেকে কি আর এতো সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

পৃথিলা না চাইতেও অনেক দিন পর ঘর থেকে বের হলো। তারেক আর সে পাশাপাশি বসে অনেকক্ষণ কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারেনি। সে বসে রইল নিজের মতো আর তারেক বসে তাকিয়ে রইল ঐ যে দূর রাস্তা সেখানে । সে দূর রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমার চাকরি হয়েছে পৃথিলা। এই ঢাকাতেই! তোমার বাবার মতো আরাম আয়াশে রাখবো, সেই অবস্থা আমার কখনোও হবে কি না জানি না। তবে এইটুকু বলতে চাই। আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো না। কখনোও না। আমার সাথে চলো পৃথিলা।

পৃথিলা তার মতোই বললো, — যাকে বাবা বলে জানো সে আমার আসল বাবা না । অবশ্য তিনি কখনো বুঝতে দেননি। তবুও সত্য তো সত্যই। আমার বাবা কে, কি হয়েছিল, আমি তার কিছুই জানি না। শুধু জানি আমি ভুলের একটা মাশুল।

তারেকের মধ্যে তেমন ভাবান্তর হলো না। সে আগের মতোই বললো, — এসব আমাকে বলছো কেন? আমি কি তোমার আগের বাবা, বা বর্তমান বাবা তাদের কাউকে মন দিয়েছি? না তাদের বলছি আমার সাথে যেতে। যেটা বলছি সেটার উত্তর দাও।

পৃথিলা হেসে ফেলেছিল। ভালোবাসা সত্যিই অন্ধ। সেটা তারেকের জন্য হোক আর তার। আর অন্ধ বলেই সেই দিন আর সে বাড়ি ফিরে যায়নি। সাদা মাটা ভাবে কাজি অফিসে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পরে তারেক তার হাত ধরে কেঁদে ফেলেছিল। পৃথিলার মনে হয়েছিল, এই জীবনে তার আর কিছু চাওয়ার নেই। তবে পৃথিলা তখন তো জানে না। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুপ বদলায়। তারেকও বদলে গিয়েছিল। চাকরি, টাকা, জোষ, সব পাওয়ার লোভে সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে উপরে উঠতে চায়, আরো, আরো। সেই উঠতে উঠতে পৃথিলা পেছনে রয়ে গেছে। এতোটাই পেছনে যে, এই যে পৃথিলা যখন তার প্রিয় মানুষটাকে অন্য একজনের সাথে দেখলো। কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি। বাসায় এসে সব সময়ের মতো রান্না করেছে, ঘর গুছিয়েছে, আগের মতোই সব কাজ টাজ গুছিয়ে প্রতিদিনের মতো তারেকের জন্য অপেক্ষা করেছে।

তারেকও সব সময়ের মতো ফিরে স্বাভাবিক ভাবে কিছুক্ষণ আরাম করেছে, গোসল করেছে, খাবার খেয়েছে। খেয়ে পৃথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বলেছে, –.দুপুরে খাবার নিয়ে অফিসে গিয়েছিলে?

— হুম।

— পৃথিলা আমি তোমার, সারা জীবন তোমার’ই থাকবো। সেটা যেমন আমি জানি, তুমিও ঠিক জানো। তবে আমার কাজের পার্ট আলাদা। সেটা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলো। সেটা শুধু’ই কাজের অংশ, অন্য কিছু না।

— আমার মাও এমন ভালোবেসে ঠকেছিল।

— আমি তোমার কোন কিছুতে কমতি রাখছি?

— না।

— তাহলে সমস্যা কোথায়?

— কোন সমস্যা নেই। তবে তোমার সাথে আমার থাকা আর সম্ভব না তারেক।

— নিজের মায়ের রাস্তায়’ই যেতে চাইছো?

— আমার মায়ের ব্যাপারে কোন শব্দ উচ্চারণ করো না তারেক।

— সত্য তো সত্য’ই।

— হ্যাঁ! সত্য সত্য’ই হয়। আমার মা দেখিয়েছে, আমি দেখতে চাইনি। আসলে বাবা, মায়েরা এটা’ই চায়, যেই কষ্টের ভেতর দিয়ে সে গেছে তার সন্তানেরা সেই কষ্টের ঠিকানাটা কখনো না জানুক।

— হয়তো! আবার হয়তো তোমার বাবা, মায়ের খোঁজা ঠিকানাটায়ও এমন কিছু হতো।

— তাই বুঝি?

— হ্যাঁ! কেননা কোন সংসার’ই পরিপূর্ণ হয় না। সংসার করতে হলে মানিয়ে নিতে হয়। যার নয়টা দিক ভালো, তার একটা দিক না দেখা করতে হয়। তবে তোমার মধ্যে মানিয়ে নেওয়া ব্যাপারটা নেই।

— মুখ বুজে, চোখে কাপড় বেঁধে থাকতে বলছো?

— আমি এমন কিছুই বলছি না পৃথিলা। তুমি ভালো করেই জানো।

— না আমি জানি না। যে তারেক কে আমি জানতাম, ভালো বেসেছিলাম সেটা তুমি নও।

তারেক নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। পৃথিলাও নিশ্চুপ। তবে তারেক জানে এই মেয়েটা বরফের মতো। কষ্টে ভেতরে চুয়ে চুয়ে ক্ষয় হয়ে যাবে তবে কাউকে বুঝতে দেবে না।

সে আগের মতোই বললো– — আরেকবার ভাবো পৃথিলা। তোমার মা তোমাকে জায়গা দেবে না।

— দেবে না বলেই বুঝি ধোকা দিতে একবারও বুক কাঁপেনি।

— আমি তোমার’ই পৃথিলা।

পৃথিলা উঠলো! উঠে নিজের হাতে সাজানো সংসারটা দেখলো। দেখে বড় একটা শ্বাস ফেলে বললো, — এই তারেক কে তো আমি চাই নি। না এই তারেকের জন্য সব সম্পর্ক ছিন্ন করে এসেছিলাম। তুমি আমাকে দু’হাত ভরে সব দিয়েছো তবে নিজের সাথে নিতে ভুলে গেছো। তুমি অবশ্যই আমার, তবে তোমার কাছে আর আমি নেই।

______

মাঝির কণ্ঠ শুনেই আয়না কিছুটা কেঁপে উঠলো। এক ধ্যানে ছিল কখন আবার রেল স্টেশনের ঘাটে এসেছে বুঝতে’ই পারেনি। সে উঠে বসলো। ভেজা কাপড় দু’হাতে আগলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো। বেরুতে অবশ্য তাকে খুব বেগ পেতে হলো। বেনাসরি শাড়ি, ভিজে ওজন হয়েছে দ্বিগুণ। তার ছোট খাটো শরীরে বহন করা খুবই কষ্টের। তার মধ্যে আছে কিছুটা আতঙ্কে। ফরহাদ ভাই চলে গেছে। আছে শুধু সারেং বাড়ির বড় নাতি আর সাথে একটা লোক। এই লোক কে, সে জানে না। মাঝপথে এক ঘাট থেকে তুলে নিয়েছে।

সে বের হলো খুব ধীরে ধীরে। বের হতেই চোখ পড়ল সারেং বাড়ির বড় নাতির উপরে। একে সে কখনোও সামনা সামনি দেখেনি। যখন গ্রামের এই সাইডে ছিল তখন খুব ছোট, ঐ বয়সে কে কেমন খবর রাখে কে? তারপরে চলে গেছে চকের সাইডে। আর এদিকে আসা হয়নি। তবে লোক মুখে অনেক কিছুই শুনেছে। তাছাড়া তাদের চর্চা পুরো গ্রামে যে কোন মজলিসে একবার হলেও উচ্চারিত হয়।

সে বের হয়েই নৌকার এক কোণে জড়সড়ো হয়ে চুপচাপ দাঁড়ালো। লোকটা নৌকার মাথার এক সাইডে বসা। গায়ে ঘিয়ে রঙের শার্ট, প্যান্ট। গড়ন ফরহাদ ভাইয়ের মতোই। একটু ঊনিশ, বিশ হতে পারে। তবে ফরহাদ ভাইয়ের চেয়ে বেশ শক্ত, সামর্থ্য। ফরহাদ ভাই শহরে থেকেছে, দেখতেও সুন্দর। তাই শহরের ছেলে পেলেদের মতো কোমল একটা ভাব আছে। অবশ্য শুধু দেখতেই। তবে এর মধ্যে সেইটুকুও নেই।

এরশাদের দৃষ্টি নদীর পানির দিকে। বাতাসের হালকা ঢেউয়ে চাঁদটা নদীর বুকে উঠানামা করছে। দেখতে ভালো লাগছে। সে সেই চাঁদের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো।, — আরেকবার ভাবো। এই রেলে উঠলে এই গ্রামে আর আসতে পারবে বলে মনে হয় না ।

আয়না ঢোক গিললো! গিলে অবুঝের মতো বললো, — কেন?

তখনি এরশাদ ফিরে তাকালো। আয়নার তখন নিশ্বাস বন্ধ হওয়া জোগাড়। আপনা আপনি শাড়ি আঁকড়ে ধরা হাতগুলো মুঠো হয়ে গেলো। লোক মুখে যা শোনার শুনেছে তবে সামনা সামনি দেখে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। চাঁদের জোসনা আর লন্ঠনের আলোতে মুখটা দেখে আয়নার শরীর দিয়ে চিকন ঘাম দিলো।

লোকটা কি তার ভয় আতঙ্ক বুঝলো। কি জানি? অবশ্য তেমন ভাবান্তর হলো না। তবে আয়নার মনে হলো একটু ঠোঁট টিপে হাসলো। হেসেই আগের মতোই বললো,

— জয়তুন আরাকে চেনো?

আয়না আস্তে করে উপর নিচে মাথা নাড়ালো।

— চিনলে তো জিজ্ঞেস করার কথা না।

আয়না কিছুক্ষণ চুপ রইল! তার ভেতর ভারী হয়ে এলো! আদ্র কণ্ঠে বললো, — কেন, কি করবে সে, মেরে আপনাদের ইটের ভাটার চুলায় দিয়ে দেবে?

— দিতেও পারে। তার সম্মানে আঁচ লাগিয়েছো।

— আমি কোথায় লাগালাম। সেটা তো আপনি করলেন।

— আমি শুধু সাহায্য করেছি।

— তাহলে আবার ভালো ভাবে ভেবে দেখার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?

— দেখলাম যাওয়ার জন্য এখনো মনোবল শক্ত আছে কি না?

— না থাকলে?

এরশাদ উত্তর দিলো না। চোখ ফিরিয়ে আবার পানির দিকে নিলো। আয়না কতোক্ষণ আগের মতোই তাকিয়ে রইল। তারপর দু’ হাতে শাড়ি ঝাপটে ধরে নৌকা থেকে নেমে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এলো। এসে বললো, — এই গয়না গাটি তো সব আপনাদের। এগুলো কি করবো?

— তোমার ইচ্ছে।

— নিয়ে যাবো?

— ইচ্ছে হলে যাও না গেলে পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দাও।

আয়না বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলে, — ফেলে দেবো?

— বলতাম তো যা ইচ্ছে করো।

আয়না একটু ভাবে! ভেবে বলে, — এতো দামের গয়না। অযথা ফেলবো কেন? বরং নিয়েই যাই। উপকারে আসতে পারে।

— যাও।

— আরেকটা কথা?

— কি?

— আমি যদি না যেতাম আপনি কি আমাকে বিয়ে করতেন?

— না।

— তাহলে সব দোষ আমার ঘাড়ে ফেলছেন কেন?

— কারণ কলঙ্ক মেয়েদের গায়েই লাগে।

আয়না আদ্র কণ্ঠ এবার কিছুটা কঠিন হলো। কঠিন করেই বললো, — একটু সময়ের জন্য হলেও আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ভালোই। তবে সত্য হলো সারেং বাড়ির প্রতিটা মানুষ খারাপ, জুলুমকারী। আপনিও তার বাইরে না। তবুও আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। আসি! আর ভালো কথা, — আপনাকে দেখে আর আমার ভয় করছে না। তাই ঠোঁট টিপে হাসা বন্ধ করেন।

এরশাদ আবার ফিরে তাকালো। মুখে বড় বড় কথা বললেও এরশাদের জ্বলজ্বল করা চোখ দেখে আয়না আবারো ভয় পেলো।

পেয়ে অবশ্য আর দাঁড়ালো না, কাপড় দু’হাতে ঝাপটে ধরে বলতে গেলে হনহন করেই নামলো। এমন আজব কিসিমের মানুষ সে জীবনে দেখেনি। মানুষ তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে। এতে সে মজা পাচ্ছে। মুখতো যেমন তেমন মাথায়ও গন্ডগোল। আল্লাহ বাঁচাইছে, খালার বাড়িতে গিয়েই আগে মানত রোজা রাখবে, কুরআন খতম দেবে।

আয়না রেলে উঠলো ভালো ভাবেই। রাত কতো সে জানে না। তবে একেবারে পুরো নিস্তব্ধ রেল স্টেশন। এই রেল স্টেশনেই সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো নৌকার ঐ অচেনা লোকটার সাথে। রাত বেশি তার মধ্যে তার খালা নিশ্চয়’ই আর স্টেশনে দাঁড়িয়ে নেই। তাই এই লোকটাকে তার সাথে দেওয়া হয়েছে। একেবারে খালার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

আর এটা জানতেই আয়না স্বস্থির একটা নিশ্বাস ফেলেছে। সাথে সারেং বাড়ির বড় নাতির প্রতি একটু কৃতজ্ঞ হয়েছে। কেননা জীবনে একা এই রেল স্টেশনে সে কখনোও আসেনি। আর এমন রাতের আঁধারে! এমন আঁধারে তো ভয়ে সে বাথরুমেও যায় না। আর আজ কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে সে।

তাও আবার এই রেলে। ছোট বেলা চাচার কাছে কতো বায়না করতো। রেল দেখবো বড় বাবা, রেল। ঝক ঝকা ঝক রেল। তারপর রেল লাইন থেকে পাথর কুড়াবো। গোল গোল সাদা কালো পাথর। সেই পাথর দিয়ে পাঁচ গুটি খেলবো। তার বাইনা শুনতে শুনতে পাগল হয়ে একবার বড় বাবা নিয়ে এসেছিল। তখন অবশ্য ছোট। কেননা নদীর এপার স্টেশন । আর এপারে অতি দরকার ছাড়া গ্রামের কোন মেয়ে এই দিকে পা মাড়ায় না। তাই তারও আর কখনো আসা হয়নি। আর আজ দীর্ঘ এক অজানা পথে সে এগিয়ে যাচ্ছে।

আয়না দীর্ঘশ্বাস ফেলেই সীটে গা এলিয়ে দিলো। নৌকার পাটাতনে বসে থাকতে থাকতে শরীরের ঘন্টা বেজে গেছে। গা এলিয়ে দিতেই সারাদিনের ক্লান্তি আর রেলের ঝক ঝকা ঝকে আয়নার চোখে ঘুম চলে এলো অনায়াসেই।

সেই অনায়াসের ঘুমে কতোক্ষণ ঘুমালো কে জানে? তার ঘুম ভাঙলো কারো গোঙানির আওয়াজে। আর ভাঙতেই ঝট করে চোখ খুললো। খুলতেই দেখলো তার সামনের সিটে সারেং বাড়ির ছোট নাতি বসা। বসা মানে আয়েশ করে বসা। দু’হাত ছড়িয়ে, পায়ের উপরে পা তুলে। সেই তুলে উঠা পা আবার ইচ্ছে মতো নাচিয়ে যাচ্ছে।

চলবে……