#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২১
আবদুল আজিজ সারেং বাড়িতে পা রাখলো অনেকটা বছর পরে। অনেক মানে প্রায় চৌদ্দ, পনেরো বছর তো হবেই। তখন অবশ্য সারেং বাড়ি এমন ছিল না। এখন বলতে গেলে অনেকটা বদলে গেছে। বদলে গেছে সম্পর্ক, বদলেছে মানুষ, বদলেছে চেনা মুখের আদলে অচেনা মুখোশ।
আজিজের কথা শুনেই জাফর দৌড়ে বেরুলো। বেরিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আজিজ হাসলো! প্রাণ খোলা মনের হাসি। এই হাসিতে কোন খাদ নেই, কোন ভেজাল নেই। কেননা মানুষের মুখের হাসির অনেক রুপ আছে, রং আছে। একটা মানুষের মুখের হাসিই বলে দেয়, সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তার জন্য কতোটা গুরুত্ব, কতোটা ভালোবাসার, কতোটা স্নেহের। তাই জাফরও বুঝে অনায়াসে’ই, এই যে মানুষটা, তার হৃদয়ে সে কতোটা জড়িয়ে আছে।
আজিজ হেসে নিজেও এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। তার জোছনা ফুপুর ছেলে। মায়ের পরে যদি আজিজের কারো জন্য মন পুড়ে সেটা ছিল জোছনা ফুপু। সেই ফুপুর ছেলে জাফর। তাকে দেখলেই তার মনে হয় জোছনা ফুপুকে দেখছে। অথচ ছেলেটা মায়ের ছিটেফোঁটাও পায়নি।
জয়তুন চুপচাপ’ই দুই ভাইয়ের গলাগলি দেখলো। নতুন কি? এদের লেপটা লেপটি চলতেই থাকে। চোখে গিয়ে না দেখুক, কানে সবই আসে। তাই তার তেমন ভাবান্তর হলো না। বরং সে হাক ছেঁড়ে আম্বিয়াকে ডেকে বললো, — ওই আম্বিয়া বাড়িতে কুটুম আইছে, নাস্তা পানির ব্যবস্থা কর। আর নয়া বউরে শরবত দিয়া পাঠা। এ তো আবার মহাজনের মহব্বতের মানুষ। দেখা না করাইলে আবার গ্রামে সালিশ বসিয়ে বলবে, ” আমরা নাত বউরে চৌদ্দ শিকের ভেতরে আটকে রেখেছি”।
আজিজ হাসলো! হেসে বললো, — আপনাদের নাত বউ। এখন চৌদ্দ শিকের ভেতরে রাখবেন, না মাথায় তুলবেন সেটা আপনাদের বিষয়। এখানে কি আর মহব্বতের মানুষদের নাক গলানো চলো?
জয়তুনও তার মতোই বললো, — সেটা সময় বলবে। তো দাঁড়ায় আছো ক্যা? বসো বাপু। ভাইয়ের গলা ধরেই বসো। হাজার হলেও মায়ের রক্ত। আমরা যতোই বুকে তুলে রাখি। মায়ের গন্ধতো মুছতে পারবো না।
জাফরও হাসলো! মহব্বতের ক্ষেত্রে জয়তুন আরার বড়’ই হিংসে। তার যেগুলো সেগুলো তার’ই। অবশ্য জাফরকে কখনোও কোন কিছু বলেনি। তবুও আজিজ ভাইয়ের সাথে এই ঘনিষ্ঠতা তার চোখের বালি’ই। তাই আজ সুযোগ পেয়েছে খোঁচা দিতে হাত ছাড়া করবে কেন? সে হেসেই আজিজকে ধরেই এগিয়ে বসালো। বসে নিজেও বসলো। অবশ্য এতো দিন পরে আজিজ ভাই কেন এখানে এসেছে সে জানে না।
আজিজ আরাম করেই জয়তুনের সামনে বসলো। সামনা সামনি দেখা হয় না অনেকটা দিন। এক গ্রামে থাকলেও আজিজ এদিকে আসেনা, জয়তুনও বাড়ি থেকে বেরোয় না। তাই সবার সাথে দেখা সাক্ষাত হলেও, জয়তুন আরার সামনে আসা হয় না। বয়স হয়েছে, শরীর পড়ে গেছে। তবে কণ্ঠে তেজ যেন সেই আগের মতোই। সে হেসে তার স্বভাব মতে কোমল সুরে বললো, — ভালো আছেন বড় ফুপু?
জয়তুন আবার হাসলো! না কোন খাদ, ভেজাল, হিংসের হাসি না। বরং মনের হাসি। তার আর জোছনার বয়সের ফারাক আছে। আছে মানে অনেকটাই আছে। বিয়ে হয়েছে, সংসার করেছে। দেখতে দেখতে বছর পেরিয়েছে তবে কোল ভরে নি। বলতে গেলে একেবারে শেষ সময়’ই বাবা, মার মুখের দিকে তাকিয়ে আলতাফ দ্বিতীয় বিয়ের সম্মতি দিয়েছিল।
জোছনার তখন সবে মাত্র চৌদ্দ নাকি পনেরো। বিয়ের সব করেছে তার শ্বশুর- শাশুড়ি। তারা রুপ খুঁজেনি। খুঁজেছে শুধু বংশের বাতি দিতে পারে এমন একজন। জোছনা সেই রকম’ই ছিল। শান্ত, কোমল। তাকে ডাকতো বড় বুবু বলে। আর এই যে আজিজ সে তো ফুপুর আঁচল ধরে ঘুরতো। নিজের বাড়ির খবরও থাকতো না। দিন রাত সারেং বাড়িতেই। কতো মানুষ দুষ্টুমি করে কতো কিছু বলতো। তবে সে নির্বিকার। সে তো তার ফুপুর সাথেই থাকবে। জোছনাও ছিলো তেমন। এই ভাইয়ের ছেলে’ই তার সখী। দিন সেই, রাত নেই গুটুরগু। আলতাফ তো সাদা দিলের মানুষ। তাই সেও সবাইকে বলে দিয়েছিল, — তার যখন খুশি আসুক, যাক। কেউ যেন তাকে কিছু না বলে।
কেউ বলতোও না। কার এমন ঠেকা। সে তার ফুপুর সাথে জোঁকের মতো লেগে থাকতো। এই বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতো। তাকে দেখলে ডাকতো, বড় ফুপু বলে। জোছনা তার প্রিয় ফুপু। প্রিয় ফুপুর বড় বুবু, তার বড় ফুপু। আর জয়তুন, সে তো ভালোবাসার কাঙ্গাল। কেউ তাকে ভালোবেসে ডাকবে, আর সে মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে এমন ঘটনা জয়তুন আরার এই দীর্ঘ জীবনে ঘটেনি।
সে হেসেই বললো, — বড় ফুপুরে চেনছো তাহলে। আমি তো ভাবলাম দিক ভুলে সারেং বাড়িত আইছ।
— আমি দুনিয়ার সব ভুলতে পারি বড় ফুপু। তবে এই বাড়ি না।
— তো এতোদিন এদিকে পা পড়লো না কেন?
— সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।
— আমরা বুঝি কিছু না। যার সময় হইছে গেছে। আমরা, আমাদের বাড়ি কি দোষ করলো?
আজিজ শান্ত চোখেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। একেবারে শান্ত, নিশ্চুপ। তারপর বললো, — কষ্ট হয় বড় ফুপু, তাই আসি না।
— বুঝি, বুঝি! সবই বুঝি। চুলতো আর বাতাসে পাকে নাই। তা কি মনে কইরা?
আজিজ হাসলো! হেসে দরজা দিকে তাকিয়ে ডাকলো, আক্কাস।
ডাকতে দেরি আক্কাসের ভেতরে আসতে দেরি হয়নি। সে একা আসে নি। সাথে এসেছে আরো তিন চার জন।সবার দু’ হাত ভরে মিষ্টি, ফল থেকে দুনিয়ার কিছু । জাফর, জয়তুন দু’জনেই অবাক হয়ে তাকালো। জয়তুন তো চোখ, মুখ কপালে তুলে বললো, — ওরে বাবা! এসব কি রে আজিজ?
আজিজ আগের মতোই হেসে বললো, — আমার ছেলের জন্য আপনার নাতনীকে চাইতে এসেছি বড় ফুপু। খালি হাতে আসি কেমনে?
তখনি ঠাস করে এক শব্দ হলো। তারা সবাই সাইডে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। বীণা চোখে, মুখে বিস্ময় নিয়ে, হা করে তাকিয়ে আছে। পায়ের কাছে শরবতের ট্রে। যেগুলো বর্তমানে ভেঙে চুরে মাখামাখি হয়ে আছে। তার পাশেই আয়না। তার মুখের অবস্থা আরো খারাপ। কারণ, সে কিছু করেনি’ই। আম্বিয়াবুবু তার হাতেই শরবতের ট্রে দিয়েছিল। তখনি কোথা থেকে এই মেয়ে দৌড়ে এলো। সারেং বাড়ির সবাই তার চোখের বিষ। তবুও এই মেয়েটা ভালো। এসেছে পর থেকে কি সুন্দর আপন করে নিয়েছে।
তাই দৌড়ে এসেই হাত থেকে ট্রে টেনে নিতে নিতে বললো, — সারা দিন তো জ্বরে বেঁহুশ ছিলে। কোন দরকার নেই নেওয়ার। আমার কাছে দাও। বলেই নিয়ে নিলো। নিয়ে হাসি মুখেই নেচে নেচে এগুলো। হঠাৎ করে কি হলো, কে জানে? থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, শুধু কি গেলো। ট্রেও ছেড়ে দিলো। এখন না সবাই আবার তার ঘাড়ে’ই দোষ ফেলে।
জয়তুন বিরক্ত মাখা সুরে বললো, — একটা কাজও যদি ঠিকমতো পারিস। সর, সর ওখান থেকে। ও নয়া বউ, দেখতো পায়ে লাগছে নি।
আয়না আস্তে করেই দু’পাশে মাথা নাড়ালো। পায়ে পড়েনি, তবে মাখামাখি হয়েছে। সেই মাখামাখি নিয়েই বীণা দৌড়ে রুমের দিকে গেলো। না লজ্জায় না, তার মাথা ঘুরছে। বিয়ে! তাও আবার ফরহাদ ভাইকে? এই কথা কি তার কানে গেছে? আল্লাহ!
আয়না কি করবে বুঝতে পারলো না। তার দিন গেছে জ্বরের ঘোরে। এইতো দুপুরের পরে একটু মাথাটা ঠিক লাগছে। ডাক্তার এসেছিল, মাথার ব্যান্ডের বদলেছে, নতুন করে কিছু ঔষুধ দিয়েছে। সেগুলো খেতেই একটু ভালো লাগছে।
জয়তুন আবার সোজা বসতে বসতে বললো, — সঙের মতো দাঁড়ায় আছো ক্যা। যাও, এগুলো পরিষ্কার করতে বলো, নতুন করে শরবত আনো। আর হ্যাঁ, কালামরে মুরগি ধরতে বলো, মান্নারে নদীরে ঘাটে পাঠাও। কতলা, বোয়াল কিছু মেলে কি না দেখুক। কুটুম রাতের খাবার আমাদের সাথে’ই খাইবো।
আজিজ ঠোঁট টিপে হাসলো, হেসে বললো, — এসবের দরকার নেই বড় ফুপু। কথা বার্তা ঠিক হোক, তার পরে না হয় সব হবে।
— কথা বার্তার জায়গায় কথা বার্তা। সেখানের সাথে খাবারের সম্পর্ক কি? আসছো সাঁঝ বিয়ানে। দু’হাত ভরে জিনিস নিয়ে। জয়তুন পিছিয়ে থাকবে কেন? আর তাছাড়া নাতনী চাইতে আইছো ভালো কথা। তবে ছেলে তো উড়ু উড়ু। না ফরহাদরে আমি খারাপ বলছি না। বরং ভালো ছেলে। দেখতে সুন্দর, নাম ভালো, কামও ভালো। খারাপ কোন কিছুর অভ্যাস তার নেই। তবে এর আগেও তো দু”বার বিয়ে ঠিক করলা। হইছে বিয়ে?
— এর আগে ঠিক করেছি বড় ফুপু, তবে এবার সোজা বিয়ে করাবো।
— তা তোমার ছেলে, করাতেই পারো। তবে আমার নাতনী ভাসাইয়া তো দিতে পারি না। মাইয়া দেখলেই তো ছ্যাত কইরা উঠে। আমার নাতনী ভাই আমার বড় প্রিয়।
— প্রিয় বলেই তো চাচ্ছি বড় ফুপু। বলেই আজিজ ঠোঁট ছড়িয়ে হাসলো।
জয়তুন ভ্রু কুঁচকে বললো, — কি কইবার চাও?
— আমি কিছুই বলতে চাই না বড় ফুপু। আমি আমার ছেলেকে চিনি। আমার মুখের কথার উর্ধ্বে সে যাবে না। শুধু চাই আমার জোছনা ফুপুর পরিবারের সাথে একটু জুড়ে থাকতে। তাছাড়া মেয়ে হইয়ে জন্মাইছে, আগে পরে বিয়ে তো দেবেন’ই। তবে সেটা ভাগ্য কোথায় নিয়ে ফালায় ঠিক আছে। ছেলে কেমন হইবো সেটারও তো ঠিক নাই। তবে একমাত্র নাতনী আপনার, চোখের সামনে থাকলো। যখন মন চাইলো আইলো, গেলো। আমার বাড়ি কি পরের বাড়ি? সে এই বাড়িতে যেমন , সেই বাড়িতেও তেমন। তবে অন্য কোথাও গেলে, এই রকম হইবো না আপনি ভালো করেই জানেন বড় ফুপু। যতো আদরের’ই হোক! বাড়ির বউ পরের মেয়ে’ই।
জয়তুন নিশ্চুপ বসলো! কথা ফালাইনা না। বসে জাফরের দিকে তাকালো। সে বসে আছে চোখ, মুখ অন্ধকার করে। সে এমন’ই! কিছু পছন্দ না হলে, এভাবেই বসে থাকে। আর এই বিয়ের প্রস্তাব তার পছন্দ হয়নি। জয়তুন ঠোঁট টিপে হেসে বললো, — ওমা জাফর, চোখ মুখ অন্ধকার কেন? প্রিয় ভাই তোমার। সেই ভাইয়ের প্রস্তাব পছন্দ হয়নি?
আজিজ হাসলো! হেসে জাফরের কাঁধে হাত রেখে বললো, — আমিতো বললাম’ই জাফর। সে এই বাড়িতে যেমন, আমার বাড়িতেও তেমন।
— সেটা আমি জানি আজিজ ভাই । তবে বীণা এবার মাধ্যমিক দেবে। তার মাথা ভালো। মেয়েটার লেখা পড়ারও খুব আগ্রহ।
জয়তুন মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো, — মাইয়াগো আবার কিসের এতো লেখা পড়া। সেটা তো ওর খুব ইচ্ছে বলে তাই আমি পড়াচ্ছি। সেই পড়া নিয়া কোন গিট্টু ধরবি না জাফর। তাছাড়া লেখা পড়া বেশি করাইলে, মেয়েগো চোখ ফুইটা যায়। সংসারে মন টেকে না। ও যে দেখস না, নয়া মাস্টারনি। বিদ্যার জাহাজ হয়ে বসে আছে। তবে সংসার করতে পারে নাই। এখন বনে বাদারে ঘুরো। আমি বাপু আমার নাতনী নিয়া এমন কারবার করতে পারবো না। চিঠি লিখবার পারে, বাংলা, ইংরেজি পড়তে পারে। আর কতো? তাই আজিজ, তুমি প্রস্তাব রাখছো। আমি সাদা মনেই নিলাম। তবে আমি বুইঝা নেই। তারপর জানাচ্ছি।
আজিজ হেসে মাথা নাড়লো! তবে পৃথিলার কথা আসায় জাফর হাসতে পারলো না। বরং আগে চোখ, মুখ অন্ধকার হলেও এখন কঠিন হয়ে আছে। যেমনটা জাফরকে কখনোও দেখা যায় না। আর সেটা জয়তুন যেমন খেয়াল করলো, তেমনি আজিজ ও। তবে কারণ কেউ’ই অনুমান করতে পারলো না।
তখনি আয়না আবার শরবত নিয়ে এলো। আজিজ হেসে কোমল সুরে বললো, — ভালো আছিস মা। মাথার খবর কি? যন্ত্রনা কমছে?
যন্ত্রনা কমছে শুনেই আয়নার মুখ শুকিয়ে গেলো। এই শব্দটাকেই তার এখন ভয় করে। তবুও ভালো এখনো বাড়ি ফিরে নি। তার মাথায় যন্ত্রনা নেই, বলতে গেলে ভালো আছে। এসে নিশ্চয়’ই এই ভালো দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে। সে শুকনো মুখেই আস্তে করে বললো, — ভালো মহাজান চাচা।
— দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বয়। মুখটা শুকনা করে রেখেছিস কেন? শোন, এই দুনিয়া যতো শক্ত হোক। মেয়েরা চাইলে সব গলাতে পারে। শক্তের সাথে শক্ত না, নরম হইতে হয় রে মা। বিয়েটাতো আর স্বাভাবিক না। এটা তোমার মানতে হইবো। মেনে বুঝে শুনে বুদ্ধি করে এগুতে হইবো।
আয়না ভ্রু কুঁচকে আজিজের দিকে তাকালো! আজিজ হাসলো। হেসে জয়তুনের দিকে তাকিয়ে বললো, — আমি ভুল বলেছি বড় ফুপু?
— না, ভুল বলবা কেন? গ্রামের মহাজন হলো গ্রামের মাথা। সে ভুল তো পুরো গ্রাম ভুল। ভালো কথা চেয়ারম্যান হঠাৎ নদীর পাড়ের ক্ষেত নিয়ে এতো ক্ষ্যাপলো ক্যা?
আজিজ ঠোঁট টিপে হালকা হেসে বললো, — আমি জানি না বড় ফুপু। সেটা আপনার চেয়ারম্যানকে’ই জিজ্ঞেস করতে হবে। তার ক্ষেত, আমার ক্ষেত, আপনার ক্ষেত। তার হাতে ক্ষমতা আছে। তবে গ্রামের দুই মাথা এক, তো তার ক্ষমতা কি? যাই হোক, ঢিলে পড়া সম্পর্ক নতুন করে ঝালাই হলে খারাপ হয় না বড় ফুপু।
জয়তুন তার স্বভাবমতো খিকখিক করে হাসলো। আজিজের ইশারা কোন দিকে তার বুঝতে অসুবিধে হলো না। সে হেসে’ই হাক ছেড়ে বললো, — আম্বিয়া কই গেছিস রে, পানের পাতা আন। কখন খেয়েছি, মুখটা আনচান করে।
সন্ধ্যার আযান কানে যেতেই পৃথিলা মাথায় ঘোমটা টানলো। টেনে হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো। তার কিছু টুকটাক কেনাকাটা ছিল। কিছু বই, খাতা। প্রথম ছাত্র- ছাত্রীদের পড়াচ্ছে। তার নিজেরও একটু প্রস্তুতি আছে।
গ্রামের বাজারে লাইব্রেরি নেই। ছেলে মেয়েরা খাতা – কলম সব মুদি দোকান থেকে কেনে। তাই যে কোন বইয়ের জন্য সদরে’ই যেতে হয়।
স্কুল থেকে সদর কাছে। তাই হেডস্যারের কাছ থেকে লাইব্রেরির ঠিকানা নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। গেলে কি হবে, সেই দোকানেও তেমন কিছু নেই। সেখান থেকে ঠিকানা নিয়ে গেলো আরেক দোকানে। আর এই সবের মধ্যে কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে পৃথিলা বুঝতে পারেনি।
সে ঘোমটা টেনেই ভালো করে বসলো। ভ্যানে বলতে গেলে এখন সে একাই। লোকাল ভ্যান, বলতে গেলে দু’তিনজন করে উঠায়। সন্ধ্যা তাই তেমন লোক নেই। তবে পৃথিলার একটু ভয় ভয়’ই করছে। সদর থেকে গ্রামের রাস্তা মোটামুটি ভালোই। আর এই ভালোয় বাসায় ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে যাবে। সেটা সমস্যা না। সাবিহাকে সকালে বলেই বেরিয়েছে। তবে এই ভ্যানওয়ালাকে তার সুবিধার লাগছে না। কেমন জানি! তার মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। ভ্যানও চালাচ্ছে কেমন ধীরে ধীরে। যেন ইচ্ছে করেই চাইছে অন্ধকার হোক।
তাই পৃথিলা একটু তাড়া দিয়ে বললো, — ভাই একটু তাড়াতাড়ি করা যাবে। আমার জরুরী একটা কাজ আছে।
— তাড়াতাড়িই তো যাইতেছি। আর কতো যামু। এটা ভ্যান, বড়লোকের চার চাকার গাড়ি তো না।
পৃথিলা বিরক্ত মুখেই বসলো। লোকটা সেধে এসেছিল। ভেবেছিল গ্রামের মানুষ হয়ত। এদিকে যাবে, তাই তাকে জিজ্ঞেস করছে। তবে পৃথিলা বুঝতে পারলো তার ভুল হয়েছে। সেই যে প্রথম দিন কুলি লোকটা বলেছিল। হাতে গোনা কয়েকটা ভ্যান। সন্ধ্যার পরে এখানে, ওখানে পড়ে থাকে। আর তার কাছে সেধে যাওয়া? একা মেয়ে দেখেছে, ব্যস সুযোগ নিয়েছে।
তখনি ভ্যান থেমে গেলো। পৃথিলা কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ভ্যানের লোকটা এক গাল হেসে বললো, — চেইন পড়ে গেছেগা আফা। আপনি চিন্তা কইরেন না। এই দু’ মিনিটের কাজ।
পৃথিলা শান্ত চোখেই এই ভয়ংকর হাসি দেখলো। সে ভালো করেই জানে, দু’মিনিটে এই চেইন কখনো ঠিক হবে না। এটা একটা ট্রিক্স! এই লোক একা না। আরো লোক আছে। তাদের জন্যই অপেক্ষা।
পৃথিলা চুপচাপ’ই বসে রইল। বসলেও তার গলা শুকিয়ে আসছে, ভেতরটা কাঁপচ্ছে। সে কিছু করতে গেলেই এই লোক তার আসল চেহেরা দেখাতে শুরু করবে। আল্লাহ! কেউ আসুক। মেয়েদের সবচেয়ে ভয়ংকর মৃত্যু হলো, তার নিশ্বাস শেষ হওয়ার আগে তার সম্মান শেষ হওয়া। এই ভয়ংকর মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করো।
তখনি ধান ক্ষেতের ভেতরে থেকে চর্চের আলো ভেসে এলো। বেশ কয়েকজন লোক এগিয়ে ক্ষেতের আইল ধরে এগিয়ে আসছে। পৃথিলা শরীর ভয়ংকর ভাবে কেঁপে উঠল। সে ভেবেছে এই ভ্যানওয়ালা যাদের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। কিন্তু পৃথিলাকে অবাক করে দিয়ে ভ্যানওয়ালা ভ্যান রেখেই দিলো ভো দৌড়।
পৃথিলা হা করে সেই দিকেই তাকিয়ে রইল। তার তাকানোর মাঝেই, সেই যে সুন্দর, মার্জিত, শান্ত কণ্ঠ ভেসে এলো। যার আজও চোখ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে। সেই জ্বলজ্বল করা চোখে তাকিয়ে বলছে, — আপনি! এখানে কি করছেন?
পৃথিলা কথার উত্তর দিতে পারলো না। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসলো। ভেতর এখনো কাঁপছে তার।
এরশাদ নিজেই এগিয়ে এলো। তাদের ইটের ভাটার শর্টকাট এটা। তারা প্রায়’ই এদিক দিয়ে’ই আসে। সে এগিয়ে চিন্তিত ভাবে বললো, — আপনি ঠিক আছেন?
পৃথিলা উপর নিচে হালকা মাথা নাড়ালো! নাড়িয়ে নিজেকে সামলে বললো, — ধন্যবাদ।
এরশাদ সচারচর অবাক হয় না। তবে আজ হলো। হয়ে বললো, — কেন?
— আল্লাহ তার বান্দাদের মাঝে মাঝে সাহায্যের জন্য মানুষের রুপ করে ফেরেশতা পাঠান। আজকে সেই কাজটা আপনি করেছেন, তাই।
এরশাদ হেসে ফেললো! ফেরেশতা আর সে। সে হেসে বললো, — সমস্যা কি?
পৃথিলা সব বললো! এরশাদ চুপচাপ’ই শুনলো। এটা আসল ভ্যানওয়ালা না। থাকলে পালাতো না। মিথ্যা বলে কাটানোর চেষ্টা করতো। তার মানে পূর্বপরিকল্পিত কিছু। এরশাদের কিছু বুঝতে বাকি রইল না।
আর রইল না বলেই, অন্ধকারে পৃথিলা খেয়াল করলো না, এরশাদের চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেছে। সেই শক্ত চোয়ালের কঠিন মুখ নিয়েই একজনকে ভ্যান চালাতে বলে, বাকি সবাইকে যেতে বললো, বলেই স্বাভাবিক ভাবে পৃথিলার পাশে পা ঝুলিয়ে উঠে বসলো। বসতে বসতে বললো, — ভয় পেয়েছেন?
পৃথিলা হেসে ফেললো! প্রাণ খোলা হাসি। ইশ! কতোদিন হাসে না। সে হেসেই বললো, — আমার সব সিস্টেম এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ভয়ও! তবে ফিরে আসায় ভালো লাগছে।
এরশাদ পৃথিলার দিকে তাকালো না। তবে হাসির শব্দে ঠিক মোহাচ্ছন্ন হলো। হয়ে বললো, — সেটাতো আসতেই হতো। আসবে, অবশ্যই আসবে, সব কিছু নতুন করে, নতুন ভাবে।
পৃথিলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো! এরশাদ এবার হাসলো! বুদ্ধিমতি মানুষের সাথে কথা বলে এই এক শান্তি। তারা অল্পতেই অনেক কিছু বুঝে। সে হেসে’ই তার সাথের লোককে তাড়া দিয়ে বললো, — দুপুরে খাসনিরে ব্যাটা। গায়ের জোর কই?
চলবে……
#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব_২২
এরশাদ ঢাকা থেকে ফিরেছে সকালে, তবে বাড়ি ফিরেনি। সোজা ইটভাটায় গিয়েছিল। দু’বোট ইটের চালান যাবে। তার’ই সব ব্যবস্থা করেছে। তার মধ্যে নতুন বায়না এসেছে। এগুলোর সব কাজ টাজ গুছিয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা।
শাহবাজের বাড়িতে থাকার ঠিক ঠিকানা না থাকলেও এরশাদ বলতে গেলে ঘরকুণো। কাজ ব্যতীত খুব একটা বেরোয় না। যদিও বেরোয় সেটা রাতে। তাই পুরো এক রাত, এক দিন এই প্রথম’ই বাইরে থাকা। তাই বাড়িতে পা রাখতেই কালাম দৌড়ে এলো। সব খবর’ই সুন্দর মতো পাচার করলো। না করার কারণ নেই। এই বাড়িতে যেমন জয়তুনের খাস লোক আছে, তেমনি তারও আছে। না বললেও তার কানে সব’ই আসবে। তাই আগে বলাই ভালো। কেননা, বাতাস একটু নড়চড় হলে’ই সবার আগে গাল কালামরে’ই ফাটবে।
তবে শাহবাজ এখনোও এই সব ঝামেলা থেকে বাইরে। তার দুনিয়া ছিল দাদি, চেলাপেলা আর সদর, বাজার, স্টেশনের তাদের যতো দোকান, পাট আছে সেগুলোর দেখাশোনা। এর মধ্যে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে বিয়ে জুটে গেছে। অবশ্য নিজের ঘাড়ত্যাড়ামির জন্য। তা না হলে, আয়নামতি আয়নামতির রাস্তায়, সে তার। এখন আবার কোন ভূত চেপেছে কে জানে? ইট ভাটার পুরোনো যতো লেবার আছে, টেনে সবার জনমকুন্ডলী বের করছে। কি করবে কে জানে? সব ঘুটে তেনাবেনা করছে।
জয়তুন বসার রুমেই বসা, পা ছড়িয়ে কাঠের পিঁড়িতে। আম্বিয়া তার পেছনে জলচৌকিতে। সাদা সোনালি চুলে বিলি কেটে আলতো করে তেল ঘষে ঘষে মালিশ করছে। এরশাদ দেখে উপরে গেলো না। দাদির গা ঘেঁষে পায়ের কাছে বসলো। এভাবে তাদের দু’ভাইয়ের’ই বসার অভ্যাস আছে। শাহবাজ তো এখনো মাঝে মাঝে এসে দাদির গা ঘেঁষে’ই শুয়ে পড়ে।
আম্বিয়া আড়চোখে একবার তাকালো। পোড়ার কারণে কখনো মুখে অভিব্যক্তি বোঝা যায় না। তবুও আম্বিয়ার মনে হলো, কোন কারণে মেজাজ বিগড়ে আছে। অবশ্য এরশাদ ভাই শাহবাজের মতো না। শাহবাজ চিন্তা ভাবনা ছাড়াই হুটহাট যা মান চায় করে ফেলে। তবে এরশাদ ভাই, সে সহজে কাউকে কিছু বলে না। কিন্তু একবার মাথা বিগড়ে গেলে কাউকে চেনে না। তাই চোখ ফিরিয়ে গলা ছেয়ে বললো, — এই কে আছিস, পানি আন।
জয়তুন হাত বাড়িয়ে এরশাদের গালে রাখলো। সবাই তাকালেই এই মুখ দেখে আঁতকে উঠে, ভয় পায়। তবে তার দেখলে মায়া লাগে, কলিজা ঠান্ডা হয়। দুনিয়ার কাছে আতঙ্ক, তার যে মনের শান্তি। বুকের ধন যে এরা। ব্যস! একটার ঘর বইছে, এই টার বইলেই শান্তি। তাই সারা মুখে, মাথায় মমতা মাখা কাঁপা কাঁপা হাত বুলিয়ে বললো, — শহরে গেছিলি ক্যা ?
— একটু দরকার ছিল।
জয়তুন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার আর তাদের নাতিদের মাঝে আলাদা দরকার বলে কিছু নেই। তো? আজকে আবার এই নতুন দরকার কোথা থেকে এলো। তাই ভ্রু কুঁচকেই বললো, — এমন কি দরকার যে দাদির কাছে বলা যায় না?
— যেমন তুমি বলোনি।
— কি বলিনাই?
— ছোট চাচা মেয়েটাকে অনুরোধ করে এনেছে দাদি। স্পষ্ট করে বলেছিল অসম্মান তো ভালোই, দূরে থাকতে।
— তো?
— কাজটা ঠিক করোনি।
জয়তুন এরশাদের গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো। এরশাদের অভিব্যক্তি বোঝা না গেলেও জয়তুনের আগুন চোখে মুখে স্পষ্ট। তাই হাত সরিয়ে নিতে নিতে বললো, — একগ্রাম মানুষের সামনে মুখে মুখে চাপা চালানো, চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন, প্রথম বার জয়তুনের কোন মুখের কথার হেরফের হওয়া। তোর কাছে কিছুই লাগে না?
— সে গ্রামে প্রথম এসেছে।
— তো, তাই বইলা আমি এমনি ছাইড়া দেবো? নিজের দুর্গতি নিজে টেনে ঘাড়ে নিয়েছে। আমি শাস্তি দিলে দোষ, না? দুনিয়া সাক্ষী জয়তুন কাউরে বিনা কারণে খোঁচাতে যায় না।
— শাস্তি আর ধ্বংস এর মধ্যে ফারাক বুঝো?
— এতো বোঝারতো কিছু নাই। সাপের লেজে নিজ ইচ্ছায় পা দিছে। সাপ ছেড়ে দেবে কেন?
এরশাদ এগিয়ে দাদির কোলো মাথা রাখলো। রেখে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। জয়তুন রাগে খেয়াল না করলেও আম্বিয়া যেন ঠিক বুঝল। দেখছে তো নতুন না। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এক ছাদের নিচে। সবার হাবভাব’ই বোঝা। তাই এখনোও অতি সহজেই বুঝলো, এটা শুধু নিশ্চুপ না, বিগড়ে যাওয়া মেজাজ সামলে নেওয়া। নিলোও তাই! নিয়ে সব সময়ের মতো সুন্দর মায়া কণ্ঠে বললো– যা হয়েছে ভুলে যাও দাদি ।
— জয়তুন কিছু ভুলে না, সেটা তুই ভালো করেই জানিস। তাছাড়া তোর এতো জ্বলছে ক্যা?
এরশাদ হাসলো! তবে উত্তর দিলো না। কথা ঘুরিয়ে বললো, — আজিজ চাচাকে কি বলেছো?
— যা শুনেছিস তাই বলেছি।
— এখন বিয়ের দরকার নেই, বেশি সময় তো নেই। পরীক্ষা টা শেষ হোক।
— কিসের পরীক্ষা ? আর শেষ করেই বা হইবো কি? মেয়েদের আসল পরীক্ষা সংসারে। সেখানে ফেল, জীবন ফেল।
— আমাদের একটা মাত্র বোন দাদি। তার খুব ইচ্ছা লেখাপড়া করার। করুক না।
— এখন এই বাড়ির সব সিদ্ধান্ত তুই নিবি?
— আমি নিচ্ছি না দাদি, জানাচ্ছি।
— জানিয়েছিস শুনেছি। তবে শেষ কথা জয়তুনের’ই হবে। অন্তত যতোদিন আমি বেঁচে আছি। আর যদি মানতে কষ্ট হয়। তবে বুড়ি মানুষ দম বেরুতে খুব একটা শক্তি ক্ষয় হবে না। শুধু মুখের উপরে বালিশ চেপে ধরবি, ব্যস কাহিনী খতম। তারপরে যা খুশি কর।
এরশাদ আবারো হেসে ফেললো। হেসে বললো, — অন্তত ওর মতটা তো জানতে চাও। ফরহাদকে ওর পছন্দ না ও হতে পারে।
— মেয়ে মাইনষের আবার পছন্দ কি? দু পৃষ্টা পড়ে লাজ লজ্জা সব বিসর্জন দিছে নাকি? বড়রা যা করবো তাদের জন্য সেটাই ঠিক।
এরশাদ হাল ছাড়লো! তখনি শাহবাজ এলো। চোখ কপালে তুলে বললো, — ওরে বাবা! আমার দাদির কোলে এ কেন? এ তো থাকবে তার প্রিয় চাচার কোলে।
এরশাদ জয়তুনের কোলে মাথা রেখেই নিচে হাত, পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। শুতে শুতে চোখ বন্ধ করে বললো, — আজকের জন্য ভাড়া নিয়েছি। যা তুইও ছোট চাচার কোলে গিয়ে উঠে পড়।
শাহবাজ মুখ বাঁকালো! জয়তুনের চোখের মুখের রাগ নিমিষেই গায়েব হলো। রাগের জায়গায় ঠোঁটের কোণে খিলে গেলো হাসি। সেই হাসি নিয়েই বললো, — সারাদিন বাড়িত আসোস নাই ক্যা?
শাহবাজ তার মতোই বললো, — আসি কবে?
— তাও কথা! তয় আগের কথা আর এহনের কথা কি এক হইলো? বিয়া করছোস না?
— তো? নাত বউ তোমার দরকার ছিল, আমার তো না। তাই গলা ধরে বসে থাকো। এখানে আমার কাজ কি?
— তোর কাজ নাই?
— না। বলেই সোজা উপরের দিকে গেলো। যেতে যেতে তার চোখ পড়ল বীণার রুমের দিকে। খাটের সাইডে কেউ পা ঝুলিয়ে বসা। মুখ দেখা না গেলেও বুঝতে এতোটুকুও সমস্যা হলো না কে। কেননা এই বাড়িতে এতো দুধে আলতা গায়ের রঙের বর্তমানে একজন’ই আছে। সারেং বাড়ির ছোট নাত বউ আয়নামতি।
শাহবাজ সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নিয়ে উপরে এলো, তবে নিজের রুমের দিকে গেলো না, এলো ছোট চাচার রুমে।
ছোট চাচা খাটে হেলান দিয়ে বসে বইয়ে ডুবে আছে। এতো ডুবে হবেটা কি রে ভাই। সেই মরলে মগজে কিলবিল করবে পোকায়। মাঝখান থেকে অযথা পেরেশানী। আর এই পেরেশানীর বই দেখলেই তো তার মেজাজ খারাপ হয়। তাই আজও বাদ গেলো না। এগিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে একেবারে সামনে বসলো। বসতেই টেনে বই নিয়ে খাটের আরেক কোণে ছুড়ে মারলো।
জাফর বড় একটা শ্বাস ফেললো! এক দল পাগলের মাঝে তার বসবাস। সে শ্বাস ফেলে চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে বললো, — বাপরে, সারেং বাড়ির শাহজাহান শাহবাজের পদধুলা আজ চাচার রুমে। কাহিনী কি?
— কাহিনীতো কত কিছুর’ই। সারেং বাড়িতে শান্তির অভাব হলেও কাহিনীর অভাব তো এই জন্মে দেখিনি।
জাফর হাসলো! বাড়ি যতোই বড় থাক, নিস্তব্দ রাতে বাড়িতে সুতো পড়লেও জাফরের কানে আসে। একা মানুষ, ঘুম নেই বললেই চলে। তাই রাত জেগে পড়ে। আর রাতে বাড়িতে এতো কিছু হবে আর সে বুঝবেনা এটা কি হয়? অবশ্য সে ইচ্ছে করেই বের হয়নি। পৃথিলার কথা ঠিক। তারা যতো ছাড়বো ততোই এরা একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরবে। হয়েছেও তাই! তাইতো সকালে ঠিক বাড়িতে ডাক্তার এসে হাজির হয়েছে। সে যদি বের হতো, ঘটনা অন্য দিকে যেত, আর এই ছেলে ফিরেও তাকাতো না।
জাফর হেসে চমশাটা পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, — সত্য! সারেং বাড়িতে আজ পর্যন্ত কাহিনী ছাড়া তো কিছু’ই ঘটেনি । এই যে দেখ, আজ পর্যন্ত একটা বিয়ে না হয়েছে স্বাভাবিক ভাবে, না করতে পেরেছে কেউ শান্তির সংসার।
— সেই গিট্টু তো তোমার বাপে পাঁকিয়ে গেছে। কোন দরকার ছিল আমার সোনার মতো দাদি থাকতে আরেকটা বিয়ে করার?
— তুই করেছিস কেন?
শাহবাজের চোয়াল সাথে সাথেই শক্ত হলো! জাফর দেখে হেসে বললো, — আমরা যতো অভিযোগ করি না কেন? জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ সব উপরওয়ালার হাতে। যতো কিছু’ই করো, কোন লাভ নেই। তিনি যেমন লিখেছেন তেমন’ই হবে।
— শুধু পারো বড় বড় কথা বলতে। আর কি পারো?
— কিছুই না। আমি খুব’ই সাধারণ মানুষ। তবে এই সাধারণ মানুষের কাছে শাহজাহান শাহবাজের আগমনের কারণ কি?
— বাবার মৃত্যুর পরে সব দায়িত্বে তুমি ছিলে। তার অনেকটা দিন পরে বাহার উদ্দিন লেবার গায়েব হয়। সেই ব্যাপারে কিছু জানো?
জাফর মনে করার চেষ্টা করলো। আসলে তখন সব কিছু এতো এলোমেলো।এতোগুলো মানুষের মৃত্যু, এরশাদের পাগলামি। সে সিদেসাধা মানুষ। কিভাবে যে সব সামলেছে, একমাত্র আল্লাজ’ই জানে। তাই কোন লেবার গায়েব হলো, ওতো মনেও নেই। তাই একটু চিন্তা করেই বললো, — তেমন কিছু মনে নেই রে। তাছাড়া এখনের মতো তো ছিল না। লেবারদের তখন সব কারবারের জন্য আলাদা এক লোক ছিল। সেই লেবার নিতো, ছাটাই করতো। কোন লেবারের কি হলো এতো কাহিনী কি আর মালিক পক্ষ পর্যন্ত আসে?
— সেই লোকের নাম কি?
— মনির! আমাদের পাশের গ্রামের’ই ছিল। বয়স হয়েছিল। তাছাড়া এরশাদ দায়িত্ব নিয়ে সব নিজে দেখে লোক নিয়েছে। তখন তাকে আর নেওয়া হয়নি।
— বাড়ির ঠিকানা দাও।
— কার?
— কার আবার মনিরের।
— তা না হয় দিলাম, তবে কাহিনী কি?
— সেটাই জানতে চাই, আসলে কাহিনী কি?
জাফর বুঝতে পারলো না, শাহবাজ উঠলো। উঠতেই জাফর তারা মায়া ভরা কণ্ঠে বললো, — শক্তি, মেজাজ, রাগ যেই পুরুষ জায়গামতো দেখাতে পারে সেই হয় আসল পুরুষ। আসল পুরুষরা কখনও মায়া, মহব্বতের জায়গায় শক্তি খাটায় না। খাটায় কাপুরুষেরা। আমাদের জীবন যা যাওয়ার গেছে, তোরা ভুল করিস না। সব ভুল কিন্তু সুধরানো যায় না।
শাহবাজ উত্তর দিলো না। বেরিয়ে এলো। এসে বারান্দায় দাঁড়ালো। আকাশে মেঘ নেই। চাঁদ ঝিলমিল করছে। সেই ঝিলমিল করা আলোতে তার মেজাজ ঠিক তো হবে ভালোই, দাঁড়াতেই আরো খারাপ হলো। ইমরানদের বারান্দায় পৃথিলা নামক মেয়েটা বসে আছে। হাতে বই! দিন দুনিয়া ভুলে বইয়ে ডুবে আছে। আরে জ্বালা রে, যেদিকে তাকাও শুধু জ্ঞানের জাহাজ আর জাহাজ।
আয়না চোখ মুখ অন্ধকার করে বীণার রুমে বসে আছে। অন্ধকারের দু’টো কারণ। প্রথম, শয়তান হাজির। এখন রাত তার কেমন যাবে আল্লাহ’ই জানে? আর দ্বিতীয় বীণা মেয়েটা সেই তখন বালিশে মুখ গুঁজেছে যে গুঁজেছেই। তার খারাপ লাগছে। অবশ্য পড়ে থাকা জায়েজ। ফরহাদ ভাইকে সেও কিছুটা চেনে। বাবা! চান্দিতে সব সময় আগুনের গোলা নিয়ে ঘুরে। তবে মানুষ ভালো। এই বাড়ির মতো তো খুনি না।
ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল। যেতেই ‘টুস’ করে অন্ধকারে তলিয়ে গেল পুরো সারেং বাড়ি। আয়নার জীবনে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে ছিল না। এই বাড়িতেই প্রথম, হঠাৎ হঠাৎ এমন অচেনা অন্ধকারের সঙ্গে পরিচয় নতুন। কিছুক্ষণ আগেও মাথার ওপরে ঘুরে চলা ফ্যানটার ঘটাং ঘটাং শব্দে তার বেশ ভালোই লাগছিল। শুধু কি ভালো, যখন ঘুরে আয়না অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। কি একটা জিনিস, কি সুন্দর গরম থেকে গা বাঁচিয়ে দিচ্ছে।
আম্বিয়া এলো হারিকেন নিয়ে। একটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, — রুমে আলো দিয়া আসো, ছোট চাচার ঘরে মোববাতি আছে। তবে শাবহবাজ সে কিছু করার ধরার কাছেও যাবে না। তাছাড়া এমন থোম্বা মেরে কোণা কাঞ্চিতে পড়ে থাকলে হবে? জামাই আইছে, সেদিকে যাও। নাকি আমি’ই এখনো দৌড়ে দৌড়ে সব করবো।
আয়না কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল আম্বিয়ার মুখের দিকে। যেন আম্বিয়া কি বলছে বুঝতেই পারেনি।
আম্বিয়া এক পলক তাকালো। তার হয়েছে যতো জ্বালা। তাই রুম থেকে বের হতে হতে বললো, — লাথি খাও আর গুতা। স্বামীর ঘর ছাড়া স্বামীর বাড়িত উপায় নাই। তাই যাও, এমন তাকাইয়া লাভ নাই।
আয়নার অন্ধকার মুখ আরেক ধাপ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। সেই অন্ধকার মুখ নিয়েই ধীরে ধীরে উঠল। পা টিপে, বুকের ভিতর একরাশ আতঙ্ক নিয়ে রওনা দিলেও, এসে রুমটা ফাঁকা দেখে খানিকটা স্বস্তি পেল। কোথায় গেছে কে জানে? তবে তড়িঘড়ি করে হারিকেনটা রেখে দ্রুত বেরিয়ে আসতে গিয়েই হলো বিপত্তি।
ঠিক তখনই দরজা দিয়ে ঢুকছিল শাহবাজ। আয়নার সাথে এমন ধাক্কা লাগল, শাহবাজ চুল পরিমাণও নড়েনি, তবে আয়না ছিল দৌড়ের উপর, তাই ধাক্কাও লাগলো বেশি। এমন বেশি প্রায় ছিটকে পড়ল একপাশে। সেই পড়া দৃশ্য একদৃষ্টিতে শাহবাজ চুপচাপ’ই তাকিয়ে দেখল। যেন কিছুই ঘটেনি। এমন পড়া সে আসতে যেতে দেখছে।
তাই আয়নার উপরে দৃষ্টি রেখে স্বাভাবিক ভাবেই ভেতরে এলো। দুমিনিটও হয় নি বাড়িতে পা রেখেছে, এর মধ্যে’ই আবার এই আপদ এসে হাজির। কেন রে, ভালো থাকলে ভূতে কিলায়?
শাহবাজ ঢুকে আয়নার সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। তার ইচ্ছে ছিল ঐ যে নরম, কোমল, ফর্সা হাত। মেঝেটা কোমল ভাবে ছুঁয়ে আছে। সেই হাতের উপরে পা টা রেখে একটু চটকে দিতে । তবে এই যে আহম্মক মার্কা মেয়ে, যে কিনা পড়ে হতম্ভব হয়ে হা করে বসে আছে। গায়ে নীল কাপড়। মাথায় ব্যান্ডেজের কারণে খোঁপাটা একটু ঢিলে করে ঘাড়ের কাছে করা। সেই খোঁপার সাইডেই কালো একটা তিল। ফর্সা ঘাড়ে ঠিক যেন নজর টিকা। সেই টিকা হোক বা অন্য কিছু, শাহবাজ সেটা করতে পারলো না। তবে ঠোঁটে সেই আগের হাসি ঠিক রইল।
আর রইল বলেই, বসতেই আয়না কেঁপে উঠল। কাঁপতে কাঁপতেই ঢোক গিললো। আল্লাগ গো! শয়তানটা আবার ঠিক সামনে। আর সবচেয়ে বড় কথা ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা হাসি। এই হাসিই বলছে, আয়নার বারোটা ঠিক বাজাবে।
তাই আয়না একবার শাহবাজ আরেকবার তার পেছনে খোলা দরজার দিকে তাকালো। তার তাকানো দেখেই শাহবাজ বললো, — ধাক্কা দেওয়ার কথা যদি মাথায় এসেছে। একদম জানে মেরে ফেলবো বলে দিলাম।
আয়না সাথে সাথে দু’পাশে মাথা নাড়লো। নেড়ে আস্তে করে বললো, — না, না। আমি এমন ভাবিনি।
— তো?
আয়না যতো সম্ভব পেছনে চেপে হাতের উপরে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করলো। আর ঠিক তখনি শাহবাজ হাত দিয়ে হাতের মধ্যে দিলো এক ধাক্কা। আয়না আবার ধপাস করে পড়ল। পড়তেই চোখ, মুখ কুঁচকে তাকালো।
শাহবাজ ভ্রু নাচিয়ে নির্বিকার চিত্তে’ই বললো, — কি?
আয়নার ভেতর ফুঁপিয়ে এলো। তাকে তো এই শয়তানটা মানুষ’ই মনে করে না। যখন যা মন চাচ্ছে করছে। তাই ফুঁপিয়েই বললো, — আপনারা সব খারাপ।
— জানি, আর কিছু?
— আমি আপনার, আপনার ভাই কেন? সারেং বাড়ির আশে পাশেও আসতে চাইনি। আমিতো চলে’ই যাচ্ছিলাম। সব গন্ডগল করেছেন আপনি। করে এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার যা খুশি তাই করছেন। কেন? গরির হয়েছি বলে মানুষ না?
— মিথ্যা বলেছিলে কেন?
আয়না থমকালো! তবে উত্তর দিলো না। তার চোখে টলমলো পানি। সে পানি নিয়েই শাহবাজের ঠিক বুক বরাবর ছোট বাচ্চাদের মতো অভিমানে ছোট্ট একটা ধাক্কা মারলো। আজকে অবশ্য শরীরের সব শক্তি দিয়ে না। এই একটু হালকা। শাহবাজ শুধু একটু নড়লো। উপরে শুধু একটু নড়লেও, শাহবাজের কাছে মনে হলো, ঐ যে শান্ত ঝরঝর করে ঝড়ে পড়া বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ বজ্রপাত হয়, ঠিক তেমনি তার বুকের উপরে কিছু একটা পড়ল। পড়ল বলেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। আর এলো বলেই পাথরের মূতির মতো বসে রইল। দৃষ্টি এই যে অভিমানে ভরা গোলগাল ছোট্ট একটা মুখ, এই মুখের উপরে। যেন না বলেই কত কথা বলছে। বলছে, সব আপনাদের জন্য, সব। আমি এসব কিচ্ছু চাইনি। আমি চেয়েছিলাম একটু মুক্তি। আপনি ধরে খাচায় বন্দি করেছেন।
আয়না কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের মতো দু’হাতে চোখ মুছলো। মুছতে মুছতে একবার আড়চোখে শাহবাজের দিকে তাকালো। শাহবাজ বুঝতেও পারলো না, কি সুন্দর মায়ার জাদুতে তাকে আটকে ফেলা হলো। হলো বলেই আয়না নিজের মতোই আঁচলে নাক ঝাড়লো, চোখ, মুখ মুছলো। মুছে কাঁধের আঁচল ঠিক করলো। করে নিজের মতোই সাইড দিয়ে চেপে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে নিজের মতোই বেরিয়ে এলো।
আসতেই সিঁড়ির কাছে এরশাদের সাথে দেখা হলো। সে উপরে আসছিল। আয়না ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। নিতে নিতে বললো, — একটা দেখতে দৈত্য আরেকটা স্বভাবে। দুইটাকে দেখলেই কলিজা কেঁপে উঠে।
এরশাদ শুনে সব সময়ের মতো ঠোঁট টিপে হাসলো। হেসে যেতে যেতে বললো, — ভাসুর হই আমি, মুখ সামলে।
আয়না মুখ বাঁকালো। অবশ্য এরশাদের আড়ালে। ভাসুর না অসুর। নিজেদের বেলা ঠিক ষোল আনা। আর পরের বেলা বাপের বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলতেও হাত কাঁপে না। সে মুখ বাঁকিয়ে সোজা নিচে নামতে গিয়েও আবার ফিরে এলো।
এরশাদ দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো, — কি হয়েছে?
আয়না আস্তে করে বললো — বীণা কাঁদছে।
— সে কাঁদছে তোমার কি?
— আমার খারাপ লাগছে। আপনি না বড় ভাই। ভাই হয়ে বোনের জন্য কিছু করবেন না?
এরশাদের শুনে ভালো লাগলো। মেয়েটা তাহলে মিথ্যে বলেনি। পরিস্থিতি যাই থাক, বিয়েটা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। করছে বলেই এই বাড়ির কারো কষ্টে একটু হলেও কষ্ট পাচ্ছে।
তাই নরম সুরেই বললো, — বিয়ে তো আগে হোক পরে, হবেই। তাই ভালো হলে আগে হওয়াই ভালো। তাছাড়া ফরহাদ ভালো ছেলে।
— বীণা যে পড়তে চায়।
— মানুষের সব ইচ্ছা পূরণ হবে এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া পড়েও তো কোন লাভ নেই। দাদি গ্রামের বাইরে তার নাতনীকে যেতে দেবে না। এই পরীক্ষা পর্যন্ত’ই। তাই যতো তাড়াতাড়ি মানিয়ে নেওয়া যায় ততোই ভালো।
আয়না আর কিছু বললো না। বলে অবশ্য লাভ হবে বলেও মনে হয় না। সে ভেবেছে তার বাবা – মা নেই এতিম, তাই কপালে এতো দুর্গতি। এখন দেখো যার সব আছে তার কপালেও দুর্গতি। আসলে মেয়ে জাতের কোথাও শান্তি নেই। যেখানেই থাকো, যেখানেই যাও। তোমার জীবনে তোমার কোন হক নেই, স্বপ্ন নেই। তুমি খাচার পোষা পায়রা। আদর দেবে, যত্ন দেবে, খাবার দেবে, আগলে রাখবে, এমনকি খোলা আকাশে উড়ার অনুমতিও দেবে। তবে ইশারা দিলে সাথে সাথে খাচায় ফিরতে হবে। ফিরলে ভালো, না ফিরলেই দুর্গতি।
চলবে…….