ধূপছায়া পর্ব-২৫+২৬

0
4

#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব_ ২৫

আয়না ছাদ থেকে নামলো বেশ কিছু সময় পরে। ধীরে ধীরে। মুখ জুড়ে বিষাদের আলপনা। শরীর নিস্তেজ। সেই নিস্তেজ হওয়া শরীরটা বলতে গেলে টেনে হিঁচড়ে’ই নামালো। তবে নিচে গেলো না। যাওয়ার ইচ্ছাও হলো না। তাই রুমের দিকে যাবে, তখনই আম্বিয়া পেছন থেকে ডেকে বললো, — আয়না, গামছা লুঙ্গি নিয়ে নদীর ঘাটে যাও তো। পানি তুলে রেখেছে , না মহাশয়ের এখন এই ভরসন্ধ্যায় নদীতে নামার ইচ্ছে হয়েছে।

কোন মহাশয়ের নদীতে নামার ইচ্ছে হয়েছে আয়না বুঝতে পারলো না। তাই শূন্য দৃষ্টিতে আম্বিয়ার দিকে তাকালো। আম্বিয়া বিরক্ত মুখে বললো,– এই বাড়িতে তারছেঁড়া একজনই আছে, যার গলা ধরে তুমি এ বাড়িতে হাজির হয়েছো। এখন যাও, তাড়াতাড়ি সেই তারছেঁড়ার ফরমাইশ পালন করো।

আয়না বুঝতে পারলো কে? বুঝে অবশ্য তেমন হাবভাবের পরিবর্তন হলো না। বরং আগের মতোই ধীরে ধীরে রুমের দিকে গেলো। তখন উঠান থেকে কোন কারণে একবার তাকিয়েছিল। তাকিয়ে নিজের মতো ভেতরে চলে গেছে। আয়নাও আর কিছু ভাবেনি, শয়তানটাও আর কোন শয়তানগিড়ি করেনি। তাই নিজের মতো ছিল। এখনোও নিজের মতোই রুমের দিকে এগুলো। এগুলেও শয়তানটার কাপড় টাপড় কোথায়, জানেও না। শুধু জানে ঐ যে বৃহৎ রুমের টানা লম্বা দেয়াল ঘেরা আলমারি, এর এক সাইড তার জন্য বরাদ্দ হইছে। যেখানে তার নামে জায়গা নিয়েছে অসংখ্য রং, বেরঙের কাপড়। আরো কতো কিছু। সব আম্বিয়াবুবু দুপুরে রাখলো। রাখতে রাখতে তাকে দেখালো।

আয়না রুমে এসে পা ঝুলিয়ে খাটে চিত হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে রইল। তার দৃষ্টি ঐ যে উপরে ফ্যান তার দিকে। এখন অবশ্য ঘুরছে না। ঐ যে দেওয়ালে লাগানো কালো বোতামগুলো, তার মধ্যে একটাকে ঠেলে উপরের দিকে দিলেই ঘুরে। সে দেয়নি, তাই ঘুরেনি।

আম্বিয়ার কণ্ঠ আবার শোনা গেলো। “ও আয়নামতি, কি হলো তোমার? পরে এসে বাড়ি শুদ্ধ মাথায় নেবে বলে দিলাম। ”

আয়না উত্তর দিলো না। তবে উঠল! কাপড় কোথায় থাকে না জানলেও রুমে আলনা আছে, সেখানেই থাকার কথা। তাই আয়না আলনার কাছে গেলো। হলোও তাই। আলনার মধ্যেই সব রাখা, গুছিয়ে। এগুলোও সব আম্বিয়াবুর কাজ। কী সুন্দর এক হাতে পুরো সংসার গুছিয়ে রাখে।

আয়না আলনা থেকে লুঙ্গি আর গামছা নিলো। নিয়ে বেরিয়ে এলো। নিচে আসতেই জয়তুন দেখে বললো,
— বাপের বাড়ির মানুষ দেখলে তো হুঁশ থাকে না। দৌড়ে চলো রেল গাড়ির মতো। আর আমার নাতির বেলা খবর থাকে না ক্যা? আসতে আসতে তো বিয়ানের সূর্য উঠে যাবে।

আয়না এবারো উত্তর দিলো না। সোজা বেরিয়ে এলো। ঘাটের বাতি নেভানো। অন্ধকারে শয়তানটা করছে টা কী? আয়না ধীরে ধীরে এগোলো। চাঁদ উঠেছে। চাঁদের জোছনায় পানি ঝিকিমিকি করছে। সেই ঝিকিমিকি পানির মধ্যে কোথাও কাউকে দেখা গেলো না। চারদিক নিস্তব্ধ,সুনসান। গোসলের কথা বলে কোথায় চলে গেছে কে জানে? আয়না ফিরে যেতে লাগলো।

তখনই একটা শিসের শব্দে থমকে দাঁড়ালো। দাঁড়াতেই শাহবাজ বললো, — এই যে সারেং বাড়ির সুন্দরী কালনাগিনী, এদিকে।

আয়না ফিরে তাকালো। এবারও কাউকে দেখলো না। বরং ভীতু চোখেই আশপাশে তাকালো। একতো বাতি নেভানো তার মধ্যে গাছগাছালির জন্য কেমন গা ছমছমে ভাব।

শাহবাজ বিরক্তের বড় একটা শ্বাস ফেললো! এতোক্ষণ একা একা এতো বড় ছাদে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলো। তখন ভয় করেনি। এখন চারপাশ ভরা মানুষ। এখন ভয়ে গলা শুকিয়ে ফেলছে। এই মেয়ের হাবভাব তো কিছু’ই মাথায় ঢোকে না। তাই শ্বাস ফেলে’ই বললো, — ফণাটা নিচের দিকে নামান কালনাগিনী, এইতো একটু নিচে।

আয়না ভীতু ভাবেই আরো দু’কদম এগুলো। এগিয়ে নিচে দিকে তাকালো। সিঁড়ির একেবারে শেষ ধাপে, হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। এক হাত পানিতে, আরেক হাত মাথার নিচে।

আয়না একটু বিরক্ত মুখেই দেখলো। শয়তান সাধে বলে। স্বয়ং ইবলিশ শয়তানও একে দেখলে মাথায় হাত দেবে। বলেই মুখ গোঁজ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। শাহবাজ যেখানে শুয়ে আছে তার দুই সিঁড়ির ওপর গামছা লুঙ্গি রাখলো। রেখে নিজের মতোই আবার চলে যেতে নিলো।

শাহবাজ তুড়ি বাজালো। আয়না শুনলো, ভালো ভাবেই শুনলো। তবে আজ না দাঁড়ালো, না ফিরে তাকালো। নিজের মতোই এগিয়ে গেলো। শাহবাজ হাসলো! হেসে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। বড় বড় পা ফেলে, দুটো সিঁড়ি ডিঙিয়ে আয়নাকে ধরতে লাগলো তার এই হাফ সেকেন্ড।

আয়না অবশ্য কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। শুধু বুঝলো শয়তানটা ঝাপটে কোলে তুলে নিয়েছে। নিয়ে দুটো সিঁড়ি ঝড়ের গতিতে নামলো। নেমেই কয়েক সেকেন্ডের মাঝে হাওয়ায় ভেসে ধপাস করে সে নদীর পানিতে পড়লো।

পড়তেই জয়তুনের সব লোক দৌড়ে এলো। শাহবাজ দেখে নির্বিকার চিত্তে বললো, — তোদেরও গোসল করার ইচ্ছে। তাহলে আয়! কোলে তুলে পানিতে ছুঁড়ে মারি।

সবাই যে ভাবে এসেছিল, সেই ভাবেই আবার উল্টো চলে গেলো। তারছেঁড়া এটা। পরে দেখা যাবে সত্যি সত্যি এই ভর সন্ধ্যায় নদীতে ছুঁড়ে মারবে। তার চেয়ে ভালো, রুমে গিয়ে আরামছে বসা যাক। আহারে! কি মিষ্টি বউ। এমন বউটারে কেউ এমন প্যারায় রাখে?

শাহবাজ আগের মতোই হাসলো। হেসে মাথার এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে পেছনে নিতে নিতে নিচের দিকে নামলো।

আয়না ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। পানির নিচে থাকা সিঁড়িতেই গলা ডুবিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ পড়ায় ভয় পেয়েছে, তবে ছোট থেকে বড় হয়েছে পানিতে পানিতে। এই আর কী! তবে কাপড়ের জন্য বেকায়দায় পড়েছে। পুরো খুলে উপরের দিকে উঠে আসছে। তাই আঁচল ঠিক করে কোমরে পেঁচালো। কুঁচি গুলো নিচের দিকে ঢেলে শক্ত করে দাঁড়ালো।

শাহবাজ কাছাকাছি গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো। ঠোঁটে সেই চিরচেনা বাঁকানো হাসি। তবে শাহবাজ নিজেও জানে না ঠোঁটে বাঁকানো হাসি থাকলেও, চোখ তার নিজের আয়ত্তে নেই। কেনানা সেই চোখের আনাচে কানাচে মুগ্ধতার ছড়াছড়ি।

সেই মুগ্ধটা নিয়েই চিকচিকে পানির দিকে তাকালো। সেই পানিতে গায়ের কাপড়ের সবুজ রঙটা ফুটে আছে অন্য জগৎতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে। সেই সৌন্দর্যের মাঝে ফর্সা গোলগাল মুখটা পানিতে ভেসে আছে পদ্ম ফুলের মতো। চুলগুলো ঢেউ খাচ্ছে। শাহবাজের কাছে মনে হলো, এটা কোনো মানবী না। ঐ যে গল্প-কিচ্ছায় থাকে, মৎস্যকন্যা নামের কি যেন? ঠিক সেই রকম। তবে সব সময়ের মতো আজ চোখে ভয় নেই, উৎকণ্ঠা নেই। পানিতে পড়েও আগের মতো ডাটে দাঁড়িয়ে আছে। তেজ! তাও আবার শাহবাজের সাথে! ভালো! বলেই শাহবাজ হাসলো। হেসে বললো,– ভালো লেগেছে বউ?

আয়না উত্তর দিলো না। এই শয়তানের মুখে বউ শুনলেই তার কলিজা কেঁপে উঠে। অবশ্য হাবভাবে কিছুই বুঝালো না। বরং কাপড় ঠিক থাকলে উঠে চলে যেতো । তবে যে ভাবে মুখের সামনে বসে আছে, উঠা সম্ভব না।

— সাহস বেশি দেখাচ্ছো না? ডাকলাম সাড়া নেই, আবার কথার উত্তরও নেই?

আয়না এবারো উত্তর দিলো না। আগের মতোই নির্ভয়ে সোজা তাকিয়ে রইল। তার এমন ভাব যা খুশি বলেন, আমার কিছু আসে যায় না।

শাহবাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, — যদি আমি পানিতে নামি। গুণে গুণে একশোবার পানিতে চুবাবো।

হুমকিতেও কোন পরির্বতন আয়নার মাঝে দেখা গেলো না। বরং সে নিজের মতোই নদীর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তারা সবসময় পুকুরে সাঁতার কেটেই গোসল করে। তবে সারেং বাড়ির মেয়েদের জন্য নিয়ম ভিন্ন। তাদের জন্য ভেতরে ব্যবস্থা আছে। উপরেও, নিচেও। কাজের লোক দুবেলা নিয়ম করে চৌবাচ্চা ভর্তি করে রাখে।

আয়না দু’হাত ছড়িয়ে একটা ডুব দিলো। তার ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে সাঁতরে নদীর ওপারে যেতে। যাওয়া তার জন্য কোন ব্যাপার না। বরং ইচ্ছে করলেই পারবে। তবে রাতের বেলা, ভয় করবে। তবে ছোট বেলা থেকে’ই পানি তাকে টানে। সেই টানের চক্করেই একবার ছাল চামড়া তুলে নিয়েছিল। মনে আছে এই শয়তানের। অবশ্য না থাকার’ই কথা। যাদের পিঠে পড়ে তার যতোটা মনে থাকে, যারা ফেলে তাদের ততোটা কি আর মনে থাকে?

শাহবাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সারেং বাড়ির ছেলেদের যতো বদনাম’ই থাক। মেয়ে বাজের বদনাম নেই। তবে ভাগ্যের জোরে পাওয়া বউ। সেই বউয়ের অপার সৌন্দর্যে ঘায়েল ঠিক হয়ে গেলো। আর হতেই মোহাচ্ছন্নের মতো পা ডুবিয়ে সিঁড়িতে বসলো। বসে বললো, — শাস্তি তো মনে হচ্ছে ফুলের মালা হয়ে গেছে।

আয়না ফিরে তাকালো না। তবে এবার উত্তর দিলো। পানি হাত দিয়ে হালকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বললো, — জোর যার, মল্লুক তার। তাই আপনাদের মল্লুকে যা খুশি করেন। আমার কাছে এখন ফুলের মালাও যা, লোহার শেকলও তা।

,– ওরে বাবা! জবান ফুটছে।

— না।

— তাহলে?

— বিষের ছোঁয়ায় নিঃশেষ প্রাণ, বশীকরণে হৃদয় হান।

— বাবা! আমার বউ আবার শব্দে শব্দে তাল মেলাতেও পারে। এদিকে আমি ভোলা ভালা ভেবে বসে আছি।

— দাদির মুখে শুনতাম। এতোদিন মানে বুঝিনাই, তয় আজ বুঝলাম।

— আচ্ছা?

— হুম?

— তা কি অর্থ?

— সময় এলে ঠিক বুঝিয়ে দেবো।

— শাহবাজের এতো খারাপ দিনও আসে নাই।

আয়না আর কিছু বললো না। নিজের মতোই রইল। শাহবাজও কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসলো। তারপর বললো, — এক্ষুনি, এই মুর্হুত্বে যদি সাঁতরে ওপারে যেতে পারো, যা চাইবে তাই দেবো। মুক্তি চাইলে মুক্তি। বাপের বাড়ি চাইলে বাপের বাড়ি।

আয়না অবাক হয়েই শাহবাজের দিকে তাকালো। শাহবাজের অবশ্য হেলদোল নেই। সে দু’হাত পেছনে দিয়ে আরো আয়েশ করে বসলো।

আয়না নিশ্চুপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর আর কোন টু শব্দ করলো না। ধীরে ধীরে শাহবাজের সামনে দিয়েই উঠে এলো। সবুজ কাপড় আয়নার বাঁকানো কোমর, শরীরে লেপটে আছে। সব সময়ের মতো শাহবাজের চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা, তবে আজ ফেরালো না। বরং পেছনের সাইডে না যাওয়া পর্যন্ত এক পলকেই তাকিয়ে রইল।

আয়না আজ লজ্জা পেলো না। কোনো আড়ষ্টতা দেখা গেলো না। বরং এগিয়ে গিয়ে দু’হাত নাড়িয়ে চাড়িয়ে ভেজা চুলে খোঁপা করলো। করে শাহবাজের গামছা নিয়ে গায়ে পেঁচালো। পেঁচিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে বাড়ির দিকে গেলো।

শাহবাজ পেছন থেকে বললো, — এই সুযোগ দ্বিতীয় বার আর আসবে না।

আয়না থামলো না, নিজের মতোই এগিয়ে গেলো। যেতে যেতে বললো, — আসবো, আরো হাজার বার আসবো। তবে আয়নামতি আর আপনাদের কাছে কিছু চায় না।

শাহবাজ আগের মতোই বসে রইল। তার সাথেই রইল, এই যে শান্ত নদী, চাঁদের জোছনা, আর এক থমকে যাওয়া সময়। যেই সময়ে শাহবাজ নদীতে ডুব না দিলেও, আয়নাতে ঠিক দিলো।

আয়না ভেজা কাপড় নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভেতরে এলো। আম্বিয়া দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। জয়তুন তো বলতে গেলে ঝটকা খেলো। ঝটকা খেয়ে চোখ-মুখ কপালে তুলে বললো, — লাজ শরম সব বেইচা খাইছো? বাড়ি ভরা জোয়ার মর্দ মানুষ! কোন আক্কেলে তুমি ভরসন্ধ্যায় নদীতে নামলা?

আয়না আগের মতোই উপরে গেলো। যেতে যেতে শুধু বললো, — আপনার নাতি ঝাপটে ধরে টেনে নামালো। না নামলে তো আবার বলতেন, বাপের বাড়ির দুঃখে দিশেহারা, নাতির আবদার রাখলাম না।

জয়তুন হুঙ্কার ছেড়েই শাহবাজকে ডাকলো। হারামজাদা! নিজের লাজ-লজ্জার মাথা খাইয়া থুইছে কেটা কালে! এখন বউয়ের টা খাইবার নামছে।

পৃথিলা বারান্দায় এসে বসলো। গায়ে মাখন রঙের কাপড়। সেই কাপড়ের আঁচলটা আট পাট করে গুছিয়ে নিজেকে ঢেকে সুন্দর করে বসলো। রাতের বেলা এখানে নিয়ম করে ক্যারেন্ট যায়। কখনো সন্ধ্যায়, কখনো শোয়ার আগে, আবার কখনোও মধ্য রাতে । সময় যেটাই থাক, একবার অন্তত যাবেই। এইতো কিছুক্ষণ আগেই টুপ করে চলে গেলো।

পৃথিলার শরীরটা ভালো নেই। না, দেখার মতো কোন অসুখ না। ব্যস! ভালো নেই। দুপুরে বাসায় ফিরে কিছু খেতেও পারেনি, না পেরেছে রাতে। সেই যে শুয়েছিল, এখন উঠল। দু’চোখের পাতায় ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। পৃথিলা বারান্দায় বসেই আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। কাঠফাটা রোদ যাচ্ছে। তাই ভীষণ গরম। একটা বৃষ্টি হলে মানুষেরা একটু স্বস্তি পেতো। তবে কোন কারণে এবার বৃষ্টির পরিমাণটা একটু কম। আর কম বলেই সন্ধ্যার পর পর’ই থালার মতো এক বিশাল চাঁদ আকাশে খিলখিল করে হাসে । তার সাথে মিটিমিটি করে হাসে অজস্র তারার রাশি। সেই অজস্র রাশির দিকেই পৃথিলা তাকিয়ে রইল।

পৃথিলা অবশ্য জানে না। তার ঠিক বরাবর অন্ধকারে এরশাদ দাঁড়িয়ে। তার বের হওয়ার কিছুটা আগে বাড়িতে ফিরেছে, ফিরে বাড়ির দিকে যায়নি। এখানে এসে দাঁড়িয়েছে! কেন দাঁড়িয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথিলা সময়, অসময় বারান্দায় বসে। কখনো বই হাতে, কখনো এমনিই, কখনোও জুঁইয়ের সাথে। তবে ভেবেছিল আজকে বের হবে না। তবে তাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক চলে এসেছে। এসে উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই উদাস কেন জানি এরশাদের সহ্য হলো না। ইচ্ছে হলো হনহনিয়ে এগিয়ে যেতে। গিয়ে এই উদাস মুখটা দু’হাতের আজলায় নিয়ে কঠিন একটা শাস্তি দিতে। এতো বুদ্ধি, এতো জ্ঞান, এতো বুঝ। তবুও কেন ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছে। তখন বুঝি সব সিন্দুকে তুলে রেখেছিল। এখন এরশাদের বেলা সব এসে হাজির।

হাজিরের গুষ্টির ষষ্ঠী, বলেই এরশাদ সিগারেট ঠোঁটে রাখলো। পৃথিলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই দেয়াশলাই জ্বালালো। জ্বালিয়ে সিগারেটে ছোঁয়ালো।

আর ছোঁয়াতে পৃথিলা চমকে উঠল। চমকে অন্ধকারের দিকে তাকালো। তাকাতেই জ্বলজ্বল করা আগুনের সাথে জ্বলজ্বল করা চোখটাও দেখলো। দেখে অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হলো না কে? কেননা এই গ্রামে এমন অদ্ভুত চোখ সে একজনের’ই দেখেছে। আর দেখেছে বলেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই সময় এখানে কি?

এরশাদ সেই কুঁচাকে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। হেসে তার স্বভাব মতো সিগারেটটা মুঠোয় নিলো। নিয়ে তার সেই চিরচেনা সুন্দর, মার্জিত, শান্ত স্বরে বললো, — ইমরানের কাছে এসেছিলাম। আসলে সেই দিন রাতে যে ঘটনা হলো। তাই এই বাড়িরও আশ পাশে দেয়াল টানা হবে। কাল থেকে লোক আসবে। সেই ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম।

পৃথিলা শান্ত চোখেই উঠে দাঁড়ালো। সে এতোটাও ধ্যানে ছিল না যে, কেউ এগিয়ে আসবে আর সে বুঝতে পারবে না। তাহলে? সে চোখে মুখে কিছুটা বিরক্ত নিয়েই বললো, — আপনি বসুন! আমি ডেকে দিচ্ছি। বলেই ভেতরে গেলো।

এরশাদ অবশ্য এগুলো না। আগের জায়গায়’ই দাঁড়িয়ে রইল। মুঠো করা সিগারেট ঠোঁটে রেখে লম্বা টান দিলো। দিয়ে আপন মনে বললো, — আমাকে বিরক্ত দেখিও না মেয়ে। এটা আমি সহ্য করতে পারি না। মাথা বিগড়ে গেলে তোমার’ই সমস্যা।

জাফর এসে দাঁড়ালো সারেং বাড়ির দোতালার বারান্দায়। অতি দরকার ছাড়া তার রুম থেকে বেরোনোর অভ্যাস নেই। তবে আজকাল এই বারান্দায় তার আসা যাওয়া সময় অসময়। কেননা এই বারান্দায় দাঁড়ালেই, মেয়েটার এক ঝলক দেখা যায়। এখন অবশ্য নেই। দুপুরে ফিরেছে দেখেছে। তারপর আর রুম থেকে বের হয়নি। কেন হয়নি সে জানে। রোজ করে তার জন্য পত্রিকা এই বাড়িতেও আসে। আর আসে বলেই মনটা বিক্ষপ্ত হয়ে আছে।

জাফর বারান্দায় কিছুক্ষণ পাইচারি করলো। সে অপেক্ষা করছে এরশাদের। কখন ফিরবে কে জানে?

অবশ্য তার অপেক্ষা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। তখনি উঠান পেরিয়ে এরশাদকে আসতে দেখা গেলো। সে জানে এরশাদ দাদির সাথে দেখা করে তার কাছেই আসবে। তাই বারান্দায় রাখা চেয়ারে চুপচাপ বসলো। বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পৃথিলার জানালার দিকে। মেয়েটার জানালা সব সময় খোলা থাকে। এমনকি রাতেও। নিচু ঘর, কেউ দুশমনি করে কিছু যদি ছুড়ে মারে? তাই এরশাদ যে দেয়াল টানার সিন্ধান্ত নিয়েছে, ভালোই করেছে। গেইট থাকলে সচারচর আর কেউ আসতে পারবে না।

তার চিন্তার মাঝেই এরশাদ এসে বসলো। বসে তার সুন্দর, শান্ত কণ্ঠে বললো — দুনিয়া সাইড করে কি এমন ভাবছো?

জাফর ফিরে তাকালো। তাকিয়ে নিশ্চুপ কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল। তাকিয়ে রইল এই যে ভয়ংকর দেখতে মুখটা, এই মুখের দিকে। এই মুখটা দেখতে যতো ভয়ংকর তার চেয়েও ভয়ংকর এই মুখের ভেতরের মানুষটা। আর কেউ না জানুক। সে জানে। ঐ যে সারেং বাড়ির এক ভয়ংকর রাত, সেই রাতে শুধু সারেং বাড়ির বড় ছেলে, বড় বউ, ছোট বউ মরেনি। মরেছে এরশাদ নামক ছেলেটার আবেগ, মন, ভালোবাসা, মানুষের প্রতি মায়া।

এরশাদ হেসে বললো, — কি দেখছো?

— তোকে?

— কেন?

— তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি এরশাদ। আর কারো রক্ত যেন তোর হাতে না লাগে।

— উঁহুম! তুমি ভুলে গেছো। আমি কথা দিয়েছিলাম আমার প্রতিশোধ শেষ হবে, তারপর। তারপর আর কোন রক্ত আমার হাতে লাগবে না।

— এখনো শেষ হয়নি?

— না! দু’জনের খোঁজ আমি এখনো পাইনি।

— সেই ঘটনার অনেকটা বছর হয়ে গেছে এরশাদ।

— হোক! আমার মৃত্যুর আগেও যদি তাদের পাই। আমি তাদের শেষ করবো।

— তারেক নিশ্চয়’ই সেই একজনদের মধ্যে পড়ে না।

— তুমি না বললে শাস্তি দিতে চাও।

— শাস্তি আর মৃত্যু এর ফারাক বোঝো?

এরশাদ হাসলো! হেসে বললো, — আমার কথা আমাকেই ফেরাচ্ছো?

— তোমরা জয়তুনের ঔরসজাত না। তবুও তোমাদের চিন্তা ধারণা সব এক। তার যেমন কোন নীতি নেই, তোমারও নেই।

এরশাদ আবারো হাসলো! জাফর বড় একটা শ্বাস ফেললো! ফেলে করুন সুরে বললো, — আমি তোমার কাছে এটা আশা করিনি এরশাদ।

এরশাদ উত্তর দিলো না। চোখ ফিরিয়ে অন্য পাশে তাকালো। তার নিজেরও মারার ইচ্ছে ছিল না। কুত্তা বিছানায় শোয় একজনের সাথে, বুকে রাখে আমার পৃথিলাকে। একচোট ছেচা মার খাওয়ার পরও হেসে বলে, — যেই পৃথিলাকে আমি চিনি, দুনিয়ার কেউ চিনে না। তাই তোমার মতো মানুষের সে কখনও হবে না। ঘৃণা থাক ভালোবাসা। তার হৃদয়ে একজন’ই থাকবে, তারেক।

ব্যস,মাথা বিগড়ে গেলো। ওমন নোংরা হৃদয়ে সে বুঝি পৃথিলাকে ছেড়ে আসবে। তাই তো ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জন্মের মতো পৃথিলাকে বের করলো।

জাফর বলতে গেলে একটু অবাক হয়েই এরশাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এরশাদ চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এমন কখনোও হয় নি। বরং হেসে হেসে সব বলে ফেলে। কেননা এরশাদ আর তার মাঝে কোন পর্দা নেই, লুকোচুরি নেই, নেই কোন আলাদা ছন্দ। তবে? জাফর তার সামনে বসা এরশাদকে, কেন জানি আজ চিনতে পারলো না। তার মনে হলো এরশাদ বদলে যাচ্ছে?

চলবে…….

#ধূপছায়া
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২৬

জয়তুন অতি দরকার ছাড়া খুব একটা রাত জাগেন না। বুড়ো শরীর যতোই ডাট-বাট দেখাক, চাইলেও আর শরীরে কুলোয় না। তাই রাত আটটার মধ্যেই খাওয়া দাওয়ার পাট গুছিয়ে বিছানায় গিয়ে বসেন। আম্বিয়া আছে, তাই নিশ্চিন্তে কিছু সময়ের মাঝে চোখ বন্ধ করেন।

আজ আটটার ঘর অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। তবুও জয়তুন এখনও খাবার ঘরের দরজায় জলচৌকিতে আরামছেই বসে আছেন। যদিও বিশেষ কোনো কারণ নেই। আজ বাড়ির দুই গুণধর বলতে গেলে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছে। আর জাফর তো ঘরের আসবাব। দুজনকে টেনে ঘরে ঢোকানো যায় না, আবার এটাকে টেনে বাইরে নেওয়া যায় না।

তাই সারেং বাড়ির তিন পুরুষ যখন খাবার ঘরে একসাথে মাদুরে বসলো, তিনিও ধীরে ধীরে এসে বসলেন। শাশুড়ির মৃত্যুর পর তিনি’ই সব সময় মধ্যে বসতেন। কি লাগবে, না লাগবে নিজ হাতে পাতে তুলে দিতেন। এখন শরীর নিজের ভর’ই কুলোতে পারে না। আবার পরের পাতের চিন্তা করবে কি? তাই চোখ, আর মনের শান্তির জন্যই বসে আছেন।

বীণা মান করে আছে। এক ওয়াক্তের খাবারও ঠিকমতো খাচ্ছে কি না সন্দেহ।আম্বিয়া’ই জোর করে রুমে গিয়ে খাইয়ে আসে। তবে জাফর বসার আগে তাকেও টেনে নিয়ে এলো। জয়তুনের দেখে ভালো লাগলো। সবাইকে আগলে রাখার ভালোবাসার গুণ জাফরের আছে। লোভ নেই, চাওয়া-পাওয়াও নেই। তা না হলে এত বড় সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হয়েও কে আর আজকাল এভাবে হাত, পা গুটিয়ে সাধারণ ভাবে বসে থাকে। তবে বলতে’ই হবে সারেং বাড়ির রক্তের ভাব’ই আলাদা। তারা তেজ দেখায় না, রাগ দেখায় না। তারা শান্ত চুপচাপ। তবে তাদেরকে ভাঙাও যায় না।

আলতাফও ছিল এমন। শান্ত চুপচাপ। নিজের মতো থাকতো। জয়তুনের সব রাগ জেদ শান্ত ভাবে মাথা পেতো নিতো। কখনও কোন দ্বিমত জয়তুনে উপরে করেনি। জোছনাকে বিয়ের পরে তো আরো না। বরং জয়তুন’ই আর ফিরে তাকিয়ে দেখেনি। জোছনার মৃত্যুর পরেও না। যেই রেখা আলতাফ টেনেছে, জয়তুন সেটা কখনও মুছে ফেলতে দেয় নি। জয়তুন কখনও’ই এতো ফেলনা ছিল না। সে নিজ ইচ্ছার মালিক।

জয়তুনের তখন ভরা সংসার। শক্ত খুঁটির মতো বড় ছেলে জসিম আছে। বুকে আদরের জাফর আছে। পুরো সংসারের কর্ত্রী সে। তার তো আর কিছুর প্রয়োজন ছিল না।

আলতাফ এই যে জাফর,এই জাফরের মতোই সারেং বাড়ির এক কোণে চুপচাপ নিজের মতো থাকতো। ধীরে ধীরে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছিল। সেই নেওয়ার মাঝেই নিঃশব্দে চলে গিয়েছিল। সেই নিঃশব্দতার মাঝেই কী নিখুঁতভাবে একটা চাল চেলে গেছে জয়তুন বুঝতেও পারেনি।

বুঝতে পেরেছে আলতাফের মৃত্যুর অনেকটা দিন পরে। কেননা সে যতোই বলুক, সারেং বাড়ির বড় পুত্র জসিম। কিন্তু আসল সত্য হলো বংশ আর দলিল সেখানে রক্ত ছাড়া অন্য কোনো রঙের বাহাদুরি চলে না। তাই তার মৃত্যুর পরে জসিম বা তার পরবর্তী সন্তানের কেউ যেন অনাদর না করতে পারে, তাই লিখিত ভাবে সব করতে চেয়েছিল।

আর করতে গিয়েই দেখে সারেং বাড়ির স্থাবর, অস্থাবর যত সম্পত্তি আছে, তার একমাত্র উত্তরাধিকার হবে সারেং বাড়ির রক্ত। সেটা জাফর হোক, তার সন্তান হোক, কি বা তার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ। সে হবে কেবলমাত্র সারেং বাড়ির রক্ত।

জয়তুন হাসে! যেই জসিমের সাথে সামান্য অন্যায়ের জন্য মহাপাপ করতেও হাত কাঁপেনি। সেই অন্যায় আলতাফ কি সুন্দর করে গেলো। তবে কপাল যাগো পুড়া। যেদিকে যাও পুড়াই। তাই যেই বংশের রক্তের জন্য কত কিছু করে গেলো। অথচ ভাগ্য দেখো? এখন সেই বংশের রক্ত’ই নাই। আহারে সারেং বাড়ি!

যাকে গোনায় ধরতে এতো কষ্ট। সেই সারেং বাড়ির পরের পিড়ি এগুবে সেই গোনায় না ধরা জয়তুনের পালক পুত্র জসিমের রক্ত দিয়ে। আর এই রক্ত’ই হবে সকল স্থাবর, অস্থাবের মালিক।

জয়তুন মনে মনে খিক খিক করে হাসে। ভাগ্যের উপরে হাসে, আলতাফের উপরে হাসে। হেসেই আরামে পা ছড়িয়ে বসে। বসে একবার ভ্রু কুঁচকে দুতলার সিঁড়ির দিকে তাকায়। সব এখানে। স্বামী, ভাসুর, চাচা শ্বশুর রাতের খাবার খেতে বসেছে। এই কালমুখীর খবর নাই। সন্ধ্যায় চাপায় চাপাতি চালিয়ে উপরে যে গেছে আর নামার খবর নাই। জামাই নিয়ে দোর দিয়ে বসলেও তো এক কথা। জামাই এদিকে আধা ভেজা প্যানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কালমুখি ঘরের দোর লাগিয়ে বসে। না এই মাইয়ারে তো চিপরে ধরতে হবে। জয়তুনের মুখের উপরে কথা, এহনি’ই! টোকা মারলে তো ছাই দিয়ে হাতড়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তাই তেজ নিয়েই কাজের লোককে বললো, — ঐ, যা নয় বউ রে খবর দে। বাড়ির বউ হইয়া চাপা চালানো শুরু হয়ে গেছে, তয় একবেলা তো কারো পাতে এখনো ভাত বাড়তে দেখলাম না।

একজন দৌড়ে গেল। যেতেই জয়তুন বললো, — আলাউদ্দিনরে খবর দিছি। কাল আসবে বলেছে একবার। ও যদি বলে সব ঠিক। তাহলে আজিজরে পাকা কথা দেবো।

বীণার হাত থেমে গেলো। দু’দিনেই তার চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। গায়ের শ্যামলা রং কালো। লম্বা চুলে অযত্নের জট ধরেছে। হয়েছে শুষ্ক। জাফর ভাতের থালায় আটকে যাওয়া হাতটা দেখলো। দেখে কিছু বলবে। জয়তুন হাত উঠিয়ে থামিয়ে বীণার দিকে তাকিয়ে মমতা মাখা কণ্ঠে বললো, — এদিকে আয়তো বুবু।

বীণা নড়লো না। আগের মতোই বসে রইল। এরশাদ শাহবাজ দু’জনেই চোখ তুলে তাকালো। বোনকে আহ্লাদ করার মতো সম্পর্ক তাদের মধ্যে নেই। এরশাদের যাও আছে শাহবাজের তাও নেই। সে কারো সাথেই ভালো ভাবে কথা বলতে পারে না। নেই বলে এই না, বোনকে তারা স্নেহ করে না।

জয়তুনের কণ্ঠে রাগ নেই। তবুও একটু শক্ত করেই বললো, — আমার কিন্তু বেয়াদবি একদম পছন্দ না বীণা।

বীণা উঠল। উঠতেই জয়তুন বললো, — ভাতের থালা পানির গ্লাস নিয়ে আয়।

বীনা থম মেরেই প্লেট গ্লাস হাতে নিলো। নিয়েই জয়তুনের কাছে এলো। জয়তুন হেসে আগে পানির গ্লাস টেনে নিলো। নিয়ে ঘরের মাঝেই হাত ধুলো। আম্বিয়া বিরক্ত চোখে তাকালো। পুরো গ্রামে সারেং বাড়ি মহল হলেও এই বুড়ির কাছে আজীবন ময়লার গাতা’ই রইল।

জয়তুন হাত ধুয়ে বীণাকে টেনে পাশে বসালো। ভাতের থালা হাতে নিয়ে বৃদ্ধ হাতে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে সামনে ধরলো। বীণা অবশ্য হা করলো না। আগের মতোই থম মেরে বসে রইল।

জয়তুন হাসে! হেসে বলে, — জয়তুন তো খারাপ। সারা জীবন’ই খারাপ। এইডা নতুন কিছু না। আমি খারাপ হইয়া’ই ভালা আছি। এখন ক এই যে এতো বড় হইলি, আমার কোন খারাপে তোগো কোন খারাপ হইছে নি?

বীণার কণ্ঠ দিয়ে শব্দ আসে না। তবে চোখের পানি এসে ঠিক জমা হয়।

জয়তুন দেখে! দেখে মাখানো ভাত আবার থালায় রাখতে রাখতে বলে, — বাঁচুম আর কয়দিন? এইডা তোর দাদির ঘন্টা বাজানোর সময়। এখন এই ঘন্টা বাজানোর আগে আমি চাই আমার সব নাতি নাতনীদের একটা গতি করে যেতে। তা না হলে তো মরেও শান্তি পামু নারে। তুই’ই ক? তোরা ছাড়া আমার কে আছে?

বীণার গাল গড়িয়ে পানি পড়ে। জয়তুন বা হাতে আদুরে ভাবে মুছতে মুছতে বলে, — মাইয়া হইয়া জন্মাইছোছ। পরের বাড়ি তো যাইতেই হইবো। এটাই দুনিয়ার নীতি। আর মান করে থাকিস না বু। তুই মান করলে আমাগো ভালো লাগে ক?

বীণা করুন চোখে চোখ তুলে তাকায়। জয়তুন সেই চোখে চোখ রাখে না। সে চোখ রাখে ভাতের থালায়। আবার ভাতের লোকমা মুঠোয় নিতে নিতে বলে, — ঘাউড়াডার তো গতি এমনি হয়ে গেছে। আল্লাহর ইচ্ছা! যাক ভালো। বাকি আছে বুইড়া ডা। তোর গতি হইলে, সেটার ব্যবস্থা নেবো। আরেকটা রাম বুইড়া ওইডারে আল্লাহ নামে ছাইড়া দিছি। যা, যা খুশি কর।

শাহবাজ ফিক করে হাসলো। জাফর বিরক্ত নিয়ে তাকালো। নাতি নাতনী নিয়ে খেলার বয়সে সন্তানদের সামনে কি শুনতে হয় তার। এরশাদের তেমন হাবভাব হলো না। তবে আম্বিয়া মুখে আঁচল চাপল। এই বুড়িও না।

বীণা অবশ্য হাসলো না। জয়তুন ভাতের লোকমা আবার মুখে সামনে ধরলো। বীণা না হাসলেও এবার খাবার মুখে নিলো। নিতেই জয়তুন বললো, — ফরহাইদা পছন্দ না। ঠিক আছে সমস্যা না। তবে বইন চিন্তা কইরা দেখো। আমি তো আমার নাতনীরে যেন তেন বাড়িত দিমু না। অবশ্যই সারেং বাড়ির সমান সমান হইতে হইবো। দেখতো বইন আমাদের গ্রামের সারেং বাড়ির সমান মহাজন বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়িত আছে কি না?

ফরহাদের নাম আসতেই বীণার চোখে মুখে বিরক্ত ছেয়ে গেলো। জয়তুন দেখলো। দেখে এবারো নিজের মতো ভাতের লোকমা মুঠোয় নিয়ে মুখে পুরতে পুরতে বললো, — নিজের গ্রামে থাকলে, চোক্ষের সামনে থাকবা। ভাইয়েরা আজ আপন, কাল চোক্ষের আড়াল হইলে কয়দিন গিয়া খোঁজ লইবো। তাছাড়া ঘরের মানুষ এরা। ঊনিশ বিশ হলে, ঠিক কান মুচড়ে ধরতে পারবো। অন্যের টা কি পারবো?

এখন তুমি বলো? তোমার বিবেচনায় কি বলে? মেয়ের আসল জীবন হলো সংসার। লেখা পড়ার শখ করছো পড়ছো। এখন দাদিরে নিশ্চিন্তে মরতে দাও। কি বুবু দিবা না? নাকি রক্তের দাদি না দেইখা কথার দাম নাই। রক্তের হইলে নিশ্চয়’ই দাম থাকতো।

বীণা বড় একটা শ্বাস ফেললো। ফেলে জয়তুনের সাইড থেকে পানির গ্লাস নিয়ে, গলায় জমাট বাঁধা খাবার নিচে নামালো। নামিয়ে উঠে যেতে যেতে বললো, — তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো। আমি রাজি।

জয়তুন হাসলো! দুই ভাই স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো। জাফর অবশ্য বীণার মতোই বড় একটা শ্বাস ফেললো। দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় ঋণ হলো, ভালোবাসার। এই ঋণ না কখনও শোধ করা যায়, না কখনও মাড়িয়ে সামনে এগুনো যায়।

তখনি আয়না নামলো। গায়ে রাঙা গোলাপি কাপড়। সেই রাঙা গোলাপি কাপড়ের আঁচল সুন্দর করে মাথায় ঘোমটা দেওয়া। নাকে নাকফুল, হাতে সোনার পাতলা কয়েক টা চুড়ি। পায়ে বীণার মতো পা ঝাপ না পড়লেও, চিকন নূপুর। তাতে হালকা নিক্কণ ভেসে আসছে।

জয়তুনের দেখে মন ভরলো। বাড়ির বউ যদি বউয়ের মতো’ই না লাগে, তো ঘর বাড়ি উজ্জল হয় নাকি? না, এই মেয়ের রুপ আছে বলতে’ই হবে। তাই সন্ধ্যার রাগ না ভুললেও, তেজ দেখালো না। শুধু বললো, — ঘুরলা ফিরলা তো কম না। এখন শ্বশুর বাড়ির মানুষদের একটু সেবা শ্রদ্ধা করো। যাও খাবার ঘরে যাও। রান্না ঘরে পা না রাখো, অন্তত পাতে ভাত টা যেন তোমাকেই বাড়তে দেখি।

আয়না কিছু বললো না। নিঃশব্দে এগিয়ে গেলো।
আয়না কে আসতে দেখে আম্বিয়া উঠে সাইডে গেলো। সে জানে এটাই সত্য। ধীরে ধীরে এভাবেই সব কিছু থেকে তাকে সাইড হতে হবে। তবুও কোথাও যেন লাগলো। আর লাগতেই আড়চোখে এরশাদের দিকে একবার তাকালো।

এই জীবনে সে কিছু’ই চায়নি। কিছু না মানে কিছুই না। তবে একবার দুঃসাহস করেছিল। অনেকটা আগে। রাতটা ছিল ঝড় বৃষ্টির এক কালবৈশাখির রাত। কারেন্ট নেই! সারেং বাড়ি পুরো নিস্তব্ধ, অন্ধকার। সেই অন্ধকারে সব সময়ের মতো এরশাদ বাড়ি ফিরে দরজার কড়া নেড়েছিল।

সেও স্বাভাবিক ভাবেই দরজা খুলেছিল। খুলতেই গায়ের ভেজা কাপড় নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই এরশাদ ভেতরে এলো। আর তখনি বজ্র পাতের আগুন রাঙা আলোয় বৃষ্টিতে ভেজা এরশাদকে দেখে কিছু একটা হলো। কি হলো আম্বিয়া নিজেও জানে না। আবেগের বয়স ছিল, ঝড় বৃষ্টির রাত ছিল আর মনে সুপ্ত প্রেমের আগুন ছিল। ব্যস, অঘটন টা ঘটালো।

এরশাদ ভাই প্রথমে থমকে গিয়েছিল। তারপর’ই এমন ভাবে ছুঁড়ে ফেলেছিল। যেন আম্বিয়া খুব’ই অচ্ছুত কিছু। শুধু ছুঁড়ে ফেলেনি। গালের মধ্যে এমন একটা দিয়েছিল। দিয়ে দাঁত চিবিয়ে বলেছিল, — তুই, বীণা, শাহবাজ এই তিনজনের হাত আমার হাতে বাবা দিয়েছিল। সেই দিনের পর থেকে আমি কখনও তোকে আলাদা চোখে দেখিনি। কাজের লোকের বেটি না, আজ প্রমাণ করলি। আর আজ থেকে তুই সেই কাজের বেটি’ই। তাই চোখ যেনো কখনও এরশাদের চোখে না পড়ে। পড়লেই গুটি ভর্তা করে ফেলবো।

আম্বিয়ার সেই দিন মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল। তবে জীবনের মায়া ছাড়া এতো সোজা না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবার ঘরের বাইরে গেলো।

সে যেতেই আয়না বসলো। বসে জাফরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে আস্তে করে বললো, — আপনার কিছু লাগবে ছোট চাচা?

জাফরও মিষ্টি করে হেসে স্নেহ ভরা কণ্ঠে বললো, — না মা লাগবে না। তুমিও বরং আমাদের সাথেই বসে পড়। এই অল্প কিছু মানুষ। এতো আলাদা আলাদা ভাবে খাওয়ার তো কিছু নেই।

আয়নাও হাসলো, হেসে মাথা নাড়িয়ে এরশাদের দিকে তাকিয়ে বললো, — আপনাকে আর কয়টা ভাত দেই ভাসুর ভাই? থালা তো একদম খালি।

এরশাদ তাকালো না। তার খাওয়া শেষ। তবে না তাকিয়েই একটু হাসলো। এই মেয়ে দেখতে ভোলা – ভালা হলেও ফাজিলের চূড়ান্ত। হেসেই দু’ পাশে শুধু মাথা নাড়লো।

তারপর আয়না শাহবাজের দিকে তাকালো। সে নিজের মতো খাচ্ছে। আয়না এসেছে তাতে কোন হেলদোল নেই। বরং আয়নাকে পুরো উপেক্ষা করে, নিজেই দু’ চামচ পটাপট ডাল নিলো। নিয়ে থালা উঠিয়ে চুমুক দেবে, তখনি আয়না বললো, — আরে আরে ওভাবে ডাল মুখে দিও না। মাথায় উঠবে।

এমনিই ডাল মাথায় উঠত কি না শাহবাজ জানে না। তবে আয়নার তুমিতে ঠিক উঠে গেলো। শুধু কি উঠল! এক কাশিতে আয়নাকেও পুরো মাখিয়ে ফেললো।

আয়নার অবশ্য তেমন ভাবান্তর হলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই আঁচল দিয়ে মুখ মুছলো। মুছে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বললো, — আগেই বললাম, তুমিতো শুনলেই না।

শাহবাজের লাজ লজ্জা নেই। বড়, ছোট কাওকে গোনায় ধরছে বলে মনেও পড়ে না। তবে ছোট চাচা, বড় ভাইয়ের সামনে এই মেয়ের ঢংয়ের কথায় কেন জানি, অস্বস্তি জেঁকে ধরলো। আর ধরলো বলেই পানি খাওয়া তো দূরের, এঁটো হাতেই হনহনিয়ে খাবার ঘর থেকে বেরুতে গেলো। সেখানেও হলো বিপত্তি।

জয়তুনের হাত ধোয়া পানিতে পা পিছলে পড়তে পড়তেও অনেক কষ্টে দরজা ধরে ফেরালো।

জয়তুন তো আল্লাহগো বলে এক চিৎকার দিলো। এরশাদ জাফর দু’জনেই হতবাক। আসলে হচ্ছে কি এখানে?

আয়না ঠোঁট টিপে হাসলো। শাহবাজ তখনি তাকালো। আয়নার টিপে হেসে রাখা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সোজা দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে হনহনিয়ে বাইরে চলে গেলো।

এতো রাতে বাইরে যাওয়ার জন্য জয়তুন চেঁচালো। শাহবাজ কানেও তুললো না। আর তুললো না বলেই, আয়না মনে মনে হাঁফ ছাড়লো। যাক বাবা! আজকে রাতটাও শান্তিতে ঘুমানো যাবে।

…..

অফিসার খলিল থানায় পা রাখতেই কনস্টেবল কাইয়ুম দৌড়ে এলো। হন্তদন্ত হয়ে বলল,– স্যার, মুগদা থানার অফিসার সাবেত মাহমুদ এসেছেন। সঙ্গে মিসেসও আছেন। আপনার খোঁজ করছেন।

খলিলের কপাল কুঁচকে উঠল। মুগদা থানার অফিসার তার খোঁজ করছেন! তাও এমন সকাল সকাল! কাহিনী কি? এমনিতে’ই তারেকের কেস নিয়েই মাথায় ঝামেলার পাহাড়, পত্রিকার লোক গুলো যা মন চায় ইচ্ছে মতো বানিয়ে ছাপাচ্ছে। এর মাঝে আবার এখন কোন হাঙ্গামা? ধুর!

বলেই এগিয়ে গেলো। সাবেতকে দেখে সৌজন্যমাখা ভঙ্গিতে হাত বাড়াল খলিল। বয়স, পদ দু’জায়গায় ‘ই উনি বড়। অবশ্য গেটাআপে আসেননি। এসেছে সাধারণ পোশাকে। তবুও হাত বাড়িয়ে নম্র কণ্ঠে বললো, — দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন স্যার। তারপর শায়লার দিকে তাকিয়ে বললো, ” ম্যাডাম আপনিও বসুন।” এই কে আছিস। এদিকে চা দে।

সাবেত শায়লাকে ধরে বসালো। পত্রিকায় খবর দেখার পর থেকে আর ঠিক নেই। হাজার রাগ থাক, নিজের সন্তান। আর সন্তানের বিপদে কোন বাবা, মায়ের পক্ষে মুখ ফিরিয়ে থাকা সম্ভব না। হাজার বার বললো। আমি দেখছি, না নিজেও আসবে। এখন দেখো দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। পারবে কি করে, খবর শোনার পর থেকে গলা দিয়ে পানিও নামিয়ে দেখেনি।

তারা বসতেই খলিলও নিজের জায়গায় বসলো। বসে বললো, — কোনো সমস্যা, স্যার?

সাবেত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফেলে বললো,
— তারেকের মার্ডার কেসটা নিয়ে কিছু জানতে এসেছি।

খলিল খানিক থমকে গেল। এই কেসের কোনো সুরাহা তো ভালোই, আগা মাথা’ই পাচ্ছে না। যার সঙ্গে পরকীয়া তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তার স্বামীও সন্দেহের তালিকায় ছিল। তবে তারা ওই রাতে একসঙ্গে বাসায়’ই ছিলেন। দুনিয়ার প্রমাণ আছে। অন্য কোনো ভাবে যদি কিছু করে থাকে, তারও খোঁজ চলছে। কিন্তু যার কোন তাল পাচ্ছে না, সেটা হলো তারেকের প্রাক্তন স্ত্রী। সে যেন হাওয়ায় মিশে গেছে।

খলিল সাবধানী গলায় জানতে চাইল,
— আপনি কি তাকে চেনেন, স্যার?

সাবেত শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,
— পৃথিলা আমাদের মেয়ে।

খলিল যেন এবার ঝটকা খেলো। তারেকের কেস ফাইল ঘেঁটে মেয়েটির নাম, পরিচয় সব কিছু পড়েছে। তবে ওই সাবেত যে, এমন কেউ সাবেত ধারণা ছিল না। কেননা তারেকের কোন আত্মীয় বাপের বাড়ির ঠিকানা দিতে পারেনি। কারণ এই বিয়ে নিয়েই নাকি তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল। আর তারেক নাকি সবাইকে সোজা বলেছিল। পৃথিলাকে তার বাবার বাড়ির সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করে যেন কখনও কষ্ট না দেওয়া হয়। থাকতো ঢাকায়! নিজেদের মতো ফ্ল্যাটে। দেশের মানুষ আর কি মাথা ঘামাবে। তাই কখনো অতো ঘামিয়েও দেখেনি।

খলিল নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
— পৃথিলা কি আপনাদের কাছে স্যার?

সাবেত হালকা হেসে বললো, — থাকলে নিশ্চয়’ই তোমার কাছে আসতাম না।

খলিলও হাসলো! হেসে বললো, — তা ঠিক। তবে দুঃখের সাথে জানাচ্ছি স্যার। আমরাও আপনার মেয়ের এখনো কোনো খোঁজ পাইনি।

শায়লার গাল গড়িয়ে পানি পড়লো। সাবেত চুপ। দৃষ্টি স্থির। তারপর ধীরে ধীরে বললেন — আমার মেয়ে এই খুনে জড়িত হতে পারে না। আমি জানি, বিশ্বাস করি। ও পারভার্টটা নিশ্চয়ই আমার মেয়ের সঙ্গে কিছু করেছে। তা না হলে পৃথিলা এমন গায়েব হয়ে যাওয়ার মেয়ে না।

খলিল সংযতভাবে বলল,– যতক্ষণ না তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না, স্যার।

সাবেত আর কথা বাড়ালেন না। তার যা জানার জেনেছে। যতো ক্ষমতাই থাক, চাইলেই আরেক থানার কেসে চট করে ঢোকা যায় না। তবে তিনি ঢুকবেন। সব ব্যবস্থা করেই ঢুকবেন। তাই শায়লার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললেন, — এসো।

শায়লার চোখে পানি টলমল করছে। কণ্ঠ ভেজা, গলা কাঁপছে। সেই ভাবেই আস্তে করে বললো, — আমার মেয়ে কোথায়, সাবেত? কী হয়েছে ওর সাথে?

সাবেত স্ত্রীর কাঁধে ভরসার হাত রাখলেন। গভীর মমতায় মাখা কণ্ঠে বললেন, — ভেবো না! আমি আছি। আমি থাকতে আমাদের মেয়ের কিছুই হবে না।

সাবেত শায়লাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। খলিল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সে ভালো করেই জানে এখন কি হবে। এই কেস সুন্দর মতো উপর মহলে যাবে। আর সব হ্যান্ডেল করবে, সাবেত মাহমুদ। একনিষ্ঠ চরিত্রবান অফিসার। যার দীর্ঘচাকরি জীবনে কোন খারাপ রেকোর্ড নেই।

চলবে…..