#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ৯
কোর্টের সামনে হঠাৎ করে জারাকে দেখে আলভি থমকে যায়। তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় যেন। থতমত খেয়ে সে বলে ফেলে
” তুমি….. তুমি বেঁচে আছো?”
জারার রাগ হলো এমন প্রশ্ন শুনে। আলভি কি তার মৃত্যুর জন্য এতোটা মরিয়া? জারা দুপা এগিয়ে যায়। আলভির খুব নিকটে গিয়ে সে বলে
” তোমাদের মতো কিট পতঙ্গ কে পরিবেশ থেকে ছাঁটাই করার জন্য হলেও তো আমাকে বেঁচে থাকতে হবে।”
মাহা মাঝখানে কথা বলে ওঠে।
” এই জারা, শোন, নিজের অবস্থানে থেকে কথা বলো। তোমার মতো আন স্মার্টের মরে যাওয়াই বেটার ছিলো।”
এতো দিনের জমিয়ে রাখা রাগ যেন জারা আর আটকে রাখতে পারলো না। সর্বনাশা নদীর মতো তা বাঁধ ভেঙে উপচে পড়লো। জারা করে বসল এক আশ্চর্য কাজ। ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মাহার গালে। মাহা হা হয়ে গেলো। কিছু লোক শব্দ শুনে ফিরে চাইলো তাদের ছোট সমাবেশের দিকে। জারা যেন সময় নেই কিছু পরোয়া করার। সে দ্বিতীয় একটা থাপ্পড় মাহার গালে দিতে না দিতেই দেয়াল হয়ে এলো মাঝখানে আলভি। বড় মুখ করে সে বলল
” জারা, ভদ্রতা বলতে কি কিছু নেই তোমার মাঝে?”
জারা বড্ড অবাক হয়। তার ঠোঁট উল্টে ওঠে। ভ্রু জেরা উঁচু হয় তাচ্ছিল্যের দমকায়। বলে সে
” চোরের বাপের বড় গলা? সরি সরি, চোরের প্রেমিকের বড় গলা।”
আলভি চোখ গরম করে তাকায়। সে কিছু শক্ত কথা বলবে এবার জারাকে। প্রস্তুতি নিতেই জারা দ্বিতীয় অবাক কাজটা করে ফেলে। সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আলভিকে। আলভি ছিটকে দু পা পিছিয়ে যায়। উপমার গালে হাত চলে যায়। মাহা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আলভি নড়চড় করতে পারে না। জারা তখন পরপর আরো দু’টো থাপ্পড় আলভিকে উপহার দেয়। এরই মাঝে এমন হট্টগোল চোখে পড়ে পুলিশের। ওনারা এগিয়ে আসতে চাইলে উপমা বাঁধা দেয়। বলে ওঠে দু হাত প্রসারিত করে মাথা নাড়িয়ে
” উঁহু উঁহু। নড়বেন না স্যার। শুধু দেখবেন আজ। এটা হাসবেন্ড ওয়াফ ইস্যু। পুলিশের নাক গলানো অপরাধ। ”
পুলিশদের মাঝে যিনি অফিসার উনি উপমার কথাটা বেদবাক্য ভেবে নিলেন। গালে হাত দিয়ে স্থির তাকিয়ে রইলেন। সঙ্গে উপমার ভাবনায় ফেলার বাণী তো ছিলোই
” স্যার এই যে ছেলেটা মার খাচ্ছে সে পরকীয়া করেছে। তাই বউয়ের হাতে মার খাচ্ছে। আপনার আমার এখানে কিছুই করার নেই স্যার। কিছুই না। আহা জীবন! আমি হলে তো গুলি করতাম স্যার গুলি।”
” আমার বউও গুলি করতো।”
পুলিশের ভাবুক দৃষ্টিতে গভীর সুর।
কোর্টের করিডরে দাড়িয়ে ইউভান সমস্তটা মস্তিষ্কে গেঁথে নিলো। জারাকে দেখে সে বিস্মিত। হঠাৎ তার মস্তিষ্ক তথ্য গুছিয়ে ফেলল। ইউভাত তৎক্ষনাৎ আমাদ এর মুখোমুখি হয়।
.
ইউভান দাঁতে দাঁত চেপে আমাদ এর দিকে তাকায়, চোখে তীব্র আগুন। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“আমি কেন জানি না এসব?”
আমাদ এর গলা শুকিয়ে আসে। মনের ভেতর ভয় ছড়িয়ে পড়ে, তবু সত্যিটা স্বীকার করে—
“আমি ভয় পেয়েছিলাম স্যার। আপনি সবসময় বলেন, যা আপনার হবে না, তা পৃথিবীতে রাখবেন না। আমি ভেবেছিলাম যদি আপনি জারার কোন ক্ষতি করে ফেলেন?
ইউভানের টেবিলের ওপর থাকা কাঁচের নিখুত সুন্দর ফুলদানি ছুড়ে ফেলে রাগে। এক হাত মাথায় রেখে নিজের চুল টেনে ধরে। অস্থির চিত্তে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ থেমে যায়৷ চোখ দু’টো বড় বড় করে আমাদ কে জানিয়ে দেয় আঙ্গুল উঁচিয়ে
” ইউভানের ভালোবাসা রঙ পাল্টায় না। যাই হয়ে যাক না কেন! যেমনই হোক না কেন! জারা আমার। আমি ওকে ভালোবেসেছি, ভালোবাসি আর ভালোবাসবো। ”
আমাদ তটস্থ ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকে নতমুখে। ইউভান কালো লং কোর্ট রাগ সমেত হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে। এখনই শুরু হবে বিচার কার্য। তার প্রতিটি কদম যেন কাঁপিয়ে তোলে আমাদ এর বুক। যেদিন উপমা তার সঙ্গে কথা বলেছে সেদিনই সব জেনে গেছে আমাদ। ইউভান কেইস সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে সে বলেছে আহামরি কিছু না এটা। সে সাক্ষী, প্রমাণ জোগাড় করে রাখবে। ইউভান শুধু বিচারকার্য শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগে বিস্তারিত শুনলেই হবে। অনায়াসে জিতবে সে এই লড়াইয়ে। আর বাকি থাকে হসপিটালে জারার অপারেশনের কথা। একথাটাও আমাদ লুকিয়েছে তখন জারার নিরাপত্তার কথা ভেবে। যদিও তখন আমাদ সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলো যে উপমা আসবে জারার কেইস নিয়ে ইউভানের কাছে। তবুও আমাদ লুকিয়ে ফেলেছে। ইউভানের চোখে জারার জন্য তীব্র ভালোবাসা দেখার পর সে বুঝে উঠতে পারেনি এই কথাটা সে ইউভানকে জানাবে না। টাকা থেকে সকল প্রকার তথ্য আমাদ এর নিকট প্রথমে এসে জমা হয়। অতঃপর ইউভানের নিকট। অপারেশনের বিষয়েও ডাক্তার কথা বলেছিল আমাদ এর সঙ্গে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা হারানোর পর ইউভান হয়ে গেছে অন্যরকম এক মানুষ। আচমকা কোনো ব্যাথা সে সামলাতে পারে না। প্রথমে তার মাথা ব্যাথা হয়। অতঃপর অজ্ঞান। একবার সে কোমায় চলে গিয়েছিল। এর আগে বহুবার সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। তখন থেকে ইউভানের বাবার কড়া আদেশ, আপ্রাণ চেষ্টা ছেলেকে অন্তত পৃথিবীর বুকে রাখার। আমাদ ইউভানকে ভাইয়ের চোখেই দেখে। ইউভানের বাবা ছেলের ভার নিশ্চিন্তে আমাদ এর নিকট ছেড়ে দিয়েছেন।
.
কোর্টরুম নিস্তব্ধ, শুধু ঘড়ির কাঁটার শব্দ শোনা যাচ্ছে। জারা আর উপমা পাশাপাশি বসে আছে, দুজনের মনেই চাপা দুশ্চিন্তা। সামনের দিকে মাহা তার উকিলের সঙ্গে কথা বলছে গম্ভীর মুখে।এক পাশে আলভি মাথা নিচু করে বসে, তার গাল লাল, চোখে অস্পষ্ট ভয়। জারা একবারও তাকায় না তার দিকে। যেন মনে হয় আলভি নামের কেউ কখনো জারার জীবনে ছিলই না।
সবাই অপেক্ষা করছে জজের জন্য। মিনিট কয়েক পর ভারী পা ফেলে জজ এসে বসলেন, অথচ জারার উকিল তখনও আসেনি! জারা বিরক্তির সাথে উপমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“তোর উকিল কোথায়?”
উপমার মুখে উদ্বেগ, ঠোঁট কাঁপছে সামান্য। ইউভান এখনো আসছে না কেন? ভাবনার সময় অতি দীর্ঘ হতে দিলো না ইউভান৷ কোর্টরুমের ভারী দরজা খুলে গেল। এক দৃঢ় পদক্ষেপে ভেতরে প্রবেশ করল ইউভান—কালো কোর্ট গায়ে জড়িয়ে, পেছনে আমাদ। ধবধবে ফর্সা মুখ, কিন্তু রাগে রক্ত চলাচল এতটাই তীব্র যে চামড়ার নিচে লালিমা ফুটে উঠেছে। চোখে ঝলসে ওঠা আগুন। সে এখনো মানতে নারাজ। সেই সঙ্গে সে ভীষণ নারাজ আলভির ওপর।
ইউভান মানতে পারছে না আলভি জারার প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সে নিসন্দেহে বড্ড বাজে কাজ করেছে। বড্ড! ইউভানের কলিজায় হাত দিয়ে সে ভুল করেছে। এর হিসাব ইউভান নেবেই। কেন যত্নে রাখতে পারলো না আলভি? যে দু’দিন সে জারাকে পেয়েছিল সে দু’দিন কেন তাকে রাণীর মতে রাখা হলো না? নিজের রাগ দমিয়ে ফেলে ইউভান বিনীত ভঙ্গিতে জজের কাছে ক্ষমা চায় দেরিতে আসার কারণে। অতঃপর যখন বিচারকার্য শুরু করার আদেশ দেওয়া হয় ইউভান জানায় সে অপর পক্ষকে আগে সুযোগ দিতে চায়। তার বক্তব্য সে পরে পেশ করবে।
অপর পক্ষ একে একে সব প্রমাণ হাজির করে। মাহা, আলভির বক্তব্য শোনা হয়। ইউভান কেবল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে সব। যেন মনে হয় সে দর্শক। মাহা আর আলভির হঠাৎ ঘটে যাওয়া একটা দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া বক্তব্য শুনে ইউভান যেন মুচকি হাসে। উকিলের বক্তব্য শেষ হলে ইউভান উঠে দাঁড়ায়। সেই বাশের মতো শক্ত লাঠিটা, যেটাতে ছিল মাহার আঙ্গুলের ছাপ; উপমার কাছে থাকা সেই ছবিটা। যাতে আলভি আপত্তিকর একটা অবস্থায় ছিল মাহার সঙ্গে। এ দু’টো প্রমাণ তুলে ধরে। এতে করে অপর পক্ষের প্রমাণ দূরৃবল হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু ইউভানকে জজ বলেন। এ দু’টো জিমিসের ভিত্তিতে এটা প্রমাণ হয় না যে জারাকে মাহা মা*রার চেষ্টা করেছে। ইউভান তখন জারাকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়। জারার মনের অবস্থা তখন মরুভূমির মতো। ইউভানের ঠোঁটে মুচকি হাসি৷ যে হাসির রহস্য কেবল জারাই ধরতে পারলো। যেন ইউভান বলতে চাইছে
” বলেছিলাম না? তুমি যতো দূরেই পালাও আমি ততই কাছে যাবো।”
জারা যখন নিজের মুখে সব সত্য স্বীকার করে তখন মাহা দৃঢ় কন্ঠে না বলে। এমন কাজ সে করেনি। হয়তোবা আলভির সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে বলেই জারা মাহাকে এভাবে ফাঁসাচ্ছে। শুধুমাত্র মাহার হাতের কনুইয়ের দ্বারা জারা ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিল। আর লাঠি? ওটা তো মাহা সাপ, কুকুর, শেয়াল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য হাতে নিয়েছিল।
পুরোটা শুনে সকলে আর যেন গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। এরই মাঝে আদালতের সময় শেষ হয়ে যায়। জজ বিরক্ত হন। দু পক্ষকেই দ্বিতীয় সুযোগ দেন ভালো করে তথ্য বের করার৷ যুক্তি সম্মত তথ্য হাজির করতে হবে। এরপর তিনদিনের সময় দিয়ে আদালত শেষ করা হয়।
ইউভান আমাদ এর সঙ্গে কাগজ পত্র গুছিয়ে নিচ্ছিল তখন এই সুযোগে জারা উপমার হাত ধরে দ্রুত পালায় কোর্টরুম থেকে। এক প্রকার দৌড়ে সে কোর্ট ছাড়ে। একেবারে রাস্তায় এসে উপমার হাত ছেড়ে প্রথমেই পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয়। উপমা অবাক হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে বলে
” মারলি কেন?”
” শহরে উকিলের অভাব পড়েছিল? এই বদমাশ লেকটাকে তোর ঠিক করতে হলো?”
” তোর জন্য কি পৃথিবীতে ছেলের অভাব ছিল? আলভিকে বিয়ে করেছিলি? নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে! এখন আবার আমি ভালো করতে এসেছি তারপরও দোষ। ”
কথাটা বলেই উপমা নাক টানে। গাল ফুলিয়ে ফিরে চায় অজানা দিকে। জারা বোনের রাগের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে। কখন যেন চোখ ভিজে যায় তার। নরম কন্ঠে বলে
” আমি বাসায় যেতে চাই উপমা। মা বাবা কি খুব রাগ করে আছে আমার ওপর? আমি আবারও তোদের কাছে যেতে চাই। আগের মতো থাকতে চাই।”
উপমা কান্না ধেয়ে আসে। বুক ভেঙে আসে তার। জারাকে ছেড়ে এক আঙ্গুলে অশ্রু মুছে বলে
” ইমোশনাল করে দিলি। এবার আইসক্রিম খাওয়া চল।”
জারা হাত ধরে উপমার। ছুটে অনেকদিন পর দুই বোন আইসক্রিমের উদ্দেশ্যে। সেই ছোট বেলার মতো। যেন ওদের দেখলেই মনে হবে
” আকাশে বাতাসে চল সাথী উড়ে যাই ডানা মেলে।”
আনন্দের মাঝে তারা ইউভানের কথাটাই ভুলে বসে থাকে। রেস্টুরেন্টে বসে ওরা গল্প করে। অহেতুক কতো কথা। জারার মনটা অনেক দিন পর খুবই হালকা হয়। সকালে আলভিকে তিনটা থাপ্পড় দেওয়ার পর মনটা এমনিতেই হালকা ছিল। এখন যেন পুরোপুরি হালকা। জারা উপমার পানে তাকিয়ে হারিয়ে যায় ভাবনায়। তার বোনটা বুদ্ধিমতী।
.
জারাকে রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে দিয়ে উপমা চলে যায় বাবার ওষুধ কেনার জন্য ফার্মেসিতে। জারা দাড়িয়ে থাকে ব্যস্ত রাস্তায়। উদ্দেশ্য উপমা ফিরে এলে তারা বাসায় ফিরবে।
সন্ধ্যার আবছা আলোয় শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যেন ধূলিকণার সমাহার। চারপাশের কোলাহল, গাড়ির হর্ন—সব মিলিয়ে অস্থির এক পরিবেশ। জারার মনে চাপা আনন্দ ছিল। মা বাবার ভাবনার জগতে ডুবে আছে।
ঠিক তখনই, ধীর গতিতে একটা গাড়ি এসে থামল তার সামনে। এক ঝলকে দেখে চিনতে পারল সে। ইউভান? কিন্তু এখানে কিভাবে? জারা ভেবে পায় না। তবে হয়তো জানে না ইউভান তার বুকে হাত রেখে চিনচিন ব্যাথা অনুসরণ করে জারার অস্তিত্ব বের করে ফেলে।
গাড়ির দরজা খুলে, একহাতে সিগারেটের ধোঁয়া মিলিয়ে দিয়ে নেমে এলো ইউভান। কালো শার্ট, হালকা রোলআপ করা হাতা, চোখে সেই চিরচেনা ধীর অথচ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। ঠোঁটের একপাশে রহস্যময় হাসি।
“গাড়িতে ওঠো, জারা।”
ইউভানের কণ্ঠ নরম, অথচ আদেশের মতো দৃঢ়।
“আমি যাবো না,”
জারা পিছিয়ে আসতে চাইল।
ইউভান তখন একপা এগিয়ে এল। রাস্তার লাইট তার চোখে এক অদ্ভুত ঝলক এনে দিল। একহাতে জারার কব্জি ধরল, আলতো কিন্তু শক্তিশালী।
“তুমি জানো, পালানোর চেষ্টা বৃথা। তুমি আমার সঙ্গে যেতে চাও না, কারণ ভয় পাচ্ছো। ভয় যে তুমি আমায় চাইতে শুরু করেছো,”
ইউভানের কণ্ঠ নিম্ন স্বরে গভীর হয়ে এলো। জারা বিরক্ত হলো। প্রচন্ড! সে কখন কবে ইউভানকে চাইলো? যাচ্ছেতাই মন গড়া কথা বলে ইউভান।
জারা রাগে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ইউভান তাকে আরও কাছে টেনে নিল।
“এই শহরে হাজারো গাড়ি চলে, হাজারো মানুষ হাঁটে। কিন্তু জানো, আমি কাকে দেখি? শুধু তোমাকে। কারণ তুমি আমার নেশা, জারা। তুমি আমার শেষ পাগলামি।”
জারার বুকের ভেতর ধক করে উঠল।
“আমার হাত ছেড়ে দিন ইউভান।”
“না,”
ইউভান হাসল। সেই হাসি, যা হাজারটা অন্ধকারকে সুন্দর করে তুলতে পারে।
“তোমার হাত ছাড়লে, আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো। আর আমি জানি, তুমি সেটা চাও না।”
তারপর একঝটকায় জারাকে টেনে নিজের গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দিল সে। জারা একটুখানি আশা নিয়ে বলল
” আমি ম্যারিড। আপনি কিন্তু আমার সম্পর্কে সবটাই জানেন।”
একথায় মনে হলো না ইউভানের আপন নিয়মে ঘাটতি পড়লো। সে বরং দরজা বন্ধ করার আগে নিচু স্বরে বলল,
“তুমি যা-ই বলো জান, তুমি আমারই। আর আমি? আমি তোমার জন্য পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে যেতে রাজি। তুমি সমাজের ভয় দেখাচ্ছো? জারা, আমি নিয়তি উল্টিয়ে তেমাকে আমার ভাগ্যে রাখবো আর এই সো কল্ড সমাজের ভয় তুমি আমাকে দেখাচ্ছো? ”
কথাগুলো বলেই ইউভান গাড়ির দরজা লাগল একঝটকায়। জারার বুকে ঢেউ উঠলো অজানা আশঙ্কার। ইউভান যেন পৃথিবীর নিয়মে চলে না। সে চলে নিজ গতিতে। আপন নিয়মে।
চলবে….