ধোঁয়াশার শেষে পর্ব-২১+২২+২৩

0
13

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২১

” আপনি এখানে? ”

জারার কম্পমান কন্ঠ। এলোমেলো ভঙ্গিতে জারা গায়ে জড়িয়ে নেয় ওড়না। ইউভান বিছানার কিনারা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বসে জারার পাশে। তার শক্ত হাতের নরম ছোঁয়া পায় জারার বা কাঁধ থেকে পরে যাওয়া ওড়নার আঁচল। তুলে দেয় সযত্নে। জারার মুখে হুটোপুটি খাওয়া ছোট ছোট এক গুচ্ছ চুল গুঁজে দেয় কানের পিঠে। জারা ইউভানের শীতল স্পর্শে কেঁপে ওঠে। একটা বলের মতোই সে কুঁকড়ে যায় স্বস্তির অভাবে। ইউভান তার কাজ শেষে জারার চোখের দিকে দৃষ্টি রাখে। তার কালো শান্ত চোখের মণিতে মিশে যায় জারার দুচোখের মণি।

” ভয় পাচ্ছো? ”

ইউভান ঠোঁটে হাসি রেখে ঝুঁকে যায় জারার দিকে। জারার বুকে ততক্ষণে সাইক্লোন এসে হাজির। জারা সরে যায় এক হাত। ইউভান এই দূরত্ব আবারও ঘুচিয়ে দিয়ে পা উঠিয়ে বসে বিছানায়।

” আপনি এখানে কিভাবে আসলেন? আম্মু আব্বু তো নিচেই আছে। ”

” বারান্দা দিয়ে।”

জারার মুখ হা হয়ে গেলো। সে ফিরে চাইলো থাই গ্লাসের দিকে। এজন্যই এটা খোলা ছিল? জারা আরো একটু দূরে সরে। একেবারে বিছানার কিনারায় পৌঁছে যায় সে। ইউভান তার কাছে আসে আবারও। একহাতে পেচিয়ে ধরে জারার কোমড়। জারা গা শিউরে ওঠে। সে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াতে গেলে ইউভান এক ঝটকায় তাকে বুকের মধ্যে রেখে দেয়। জারা নড়েচড়ে ওঠে। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ইউভানের থেকে ছাড়া পাওয়ার আশায়। কিন্তু হায়! এমন বলিষ্ঠ দেহ থেকে তার রেহাই পাওয়া বড্ড কঠিন। ইউভান হালকা হেসে বলে

” চুপচাপ থাকো আমার বিড়ালটি। ভালো তো বসোই না আবার ভালো বাসতেও দাও না। কি নিষ্ঠুর তুমি। ”

জারার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে আসে। তার বড্ড রাগ হয়। আকস্মাৎ সে কামড়ে দেয় ইউভানের হাতে। ইউভান যেন এমনটা কল্পনাও করেনি। সে সামান্য চিৎকার দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়। এই সুযোগে জারা লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। ইউভান ভ্রু কুটি করে চায়। কিন্তু রাগ করতে পারে না সে। জারা বাজখাঁই গলায় বলে

” আমি সবাইকে ডাকার আগেই বেরিয়ে যান বলছি। লিভ নাউ।”

ইউভানের হেলদোল হয় না। সে একবার হাতটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বিছানায় আরো ভালোভাবে বসে। একটা বালিশ কোলের ওপর নিয়ে বলে

” তাহলে তো বেশ ভালো। আমার আর ইমপ্রেস করতে হবে না তোমার মা-বাবাকে। তারা এমনি এমনিই জেনে যাবে সব ইভেন, বিয়ের ডেইটও আজই ফাইনাল করবে হয়তো।”

জারার রক্ত মুহূর্তে মাথা থেকে নেমে আবার হৃদপিণ্ডে জরো হয়। কথাটা কিন্তু সত্যি! জারার রাগ হয়। সে কোমরে একহাত রেখে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে ইউভানের দিকে। আর কিভাবে বোঝাবে সে? আর কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে বললে ইউভান বিশ্বাস করবে জারা তাকে ভালোবাসবে না কখনো।

জারার এই ভঙ্গি ইউভানের মন কাড়ে। সে তো বিছানার হেডবোর্ডে মাথা ঠেকিয়ে অপলক দেখে জারাকে। জারার ইচ্ছে হয় তার সামনে বসে থাকা এই যন্ত্রণার গলা চেপে ধরতে। সে রাগে চোখ বন্ধ করে নেয়। তখনই বাহির থেকে উপমার কন্ঠ ভেসে আসে

” এই আপু, ভাত খাবি না? আয় জলদি, মা ডাকছে। ”

উপমার কন্ঠে জারা চোখ খোলে। প্রথমেই সে দেখে নেয় দরজার ছিটকিনি দেওয়া কি না। বেশ শক্ত করে আঁটকানো বলে জারা হাফ ছাড়ে। ইউভানের উদ্দেশ্যে বলে

” আপনি কি যাবেন?”

ইউভান উঠে দাঁড়ায়। হাতে তার কামড়ের দাগ বেশ গভীর হয়ে আছে। হালকা রক্তও দেখা যাচ্ছে। সে জারার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

” শুধু নিয়ে যাবো? দিয়ে যাবো না? আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে একটু দেখেই চলে যাব। কিন্তু তুমি যদি কাজ বাড়িয়ে দাও তাহলে হোয়াট ক্যান আই ডু মাই কুইন?”

জারা ঘাবড়ে যায়। একটু আধটু বিশ্বাস ছিল তার ইউভানের ওপর। এখন যেন একথা শুনে বিশ্বাসের পাল্লা রিক্ত হয়ে শূন্যে ঝুলে গেলো। জারা পিছিয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ দুপা।ইউভান এগিয়ে গেলো। জারা আরো একবার পিছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই ইউভান তার শক্ত হাতে জারার কব্জি ধরে ফেলল। তৎপর জারার দিকে মুখ এগিয়ে দিতেই জারা আগ পিছ না ভেবে দিলো একটা চিৎকার। কিন্তু তখনই তার ঠোঁট পেলো ইউভানের শার্টের কলারের স্পর্শ আর তার মাথায় টুপ করে পরলো একটা চুমু। উপমা দৌড়ে আসে দরজার নিকট। ধাক্কা দিতে দিতে আওড়ায়

” কি হয়েছে আপু? ইদুর দেখেছিস নাকি টিকটিকি? আপু আমি লাঠি আনবো? দাঁড়া আমি আসছি। তুই দরজা খোল।”

ইউভান ততক্ষণে জারার কানে কানে বলে

” আজ দিলাম না। কিন্তু নোট করে রাখলাম। ফিরিয়ে দেবো। এখন বিদায় মাই এভরিথিং। ”

একথা বলেই সে ছাদ বারান্দা দিয়ে চলে গেলো মই বেয়ে। যাওয়া আগে আর একটাবার উঁকি দিলো। রুমের হালকা আলোয় তার ঠোঁটের উড়ন্ত চুমু হাওয়ায় মিলিয়ে দিলো সে। জারা চটজলদি গ্লাস বন্ধ করে। যেন সে চাইলো না ইউভানের ওই অদৃশ্য বস্তু ঘরে প্রবেশ করুক। উপমা ওপাশে দরজা থাপ্পড় দিয়ে দিয়ে হাপিয়ে উঠেছে। জারা থম মেরে দাড়িয়ে আছে।গ্লাসের পাশে। কি হচ্ছে এসব? মাথায় হাত রাখলো জারা। যেখানটিতে ইউভানের ঠোঁটের স্পর্শ পরেছে। জারার হাত কাঁপছে। সে এই কম্পমান হাত দিয়ে ইউভানের ঠোঁটের স্পর্শ যেন ঘষে ঘষে মাথা থেকে তুলে নিয়ে এক দৌড় দিলো ওয়াশরুমের দিকে। হাতটা ধুতে হবে ভালোভাবে। লাইফবয় সাবানের এড এর মতো করে তার মন ক্রমাগত বলছে

” ধুতে হবে, ধুতে হবে, ধুতে হবে। ”

.
খাবার টেবিলে বসে জারা উশখুশ করে গেলো। খাওয়া হলো না পেটপুরে। বাবা এই বাসায় আসার ইতিহাস শোনাচ্ছেন

” আমাদ ছেলেটা অনেক ভালো বুঝলে জাহানারা? বাসাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মন মতো হচ্ছিল না। তারপর সামনের রোডের কাছে দাড়িয়ে ছিলাম তখন দেখি একটা ছেলে এলো। সালাম দিয়ে বলল আমি বাসা খুঁজছি কিনা। ওই খোঁজ দিল এই বাসার। বাসাটা ভালো তাই না? অনেক নির্জন, শান্ত… ”

জারার টনক নড়ে। বিষয়টা একটু গভীর ভাবে ভাবতে গিয়েই সে সম্মুখীন হয় গুপ্ত খবরের বাক্সের সামনে। উপমার দিকে ফিরে চায় সে। উপমার দৃষ্টিতেও বিস্ময়। দু’জনেই অতঃপর বুঝতে পারে বদলি, বাসা আর ইউভান। তিনটি শব্দ একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কে লিপ্ত।

.

সকালের নরম আলো বিস্তার লাভ করে ছুঁয়ে গেছে পুরো শহরকে। ইউভান রেসিডেন্সের আশপাশ রাতের নির্জনতা কাটিয়ে নতুন রূপে চুপ কথার গল্প বলতে তৈরি। দিবসেও এই এরিয়া যেন নির্জনতায় ঢাকা। ঠিক তার মালিকের মতোই।

আমাদ দরজা খুলে বাইরে পা রাখল। হাত ঘড়িতে নজর দিতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো। ন’টা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি। আর একটু ভোরে বেরোলে যেন ভালো হতো। আমাদ তার চশমাটা ঠেলে চোখে নিখুত ভাবে বসিয়ে সামনে দৃষ্টি মেলে দিল। হাতের ফোনটা পকেটে রেখে রওনা হলো পার্কিং এরিয়ার দিকে। পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে লাল, নীল আর সাদা গাড়িটি পেরিয়ে অতঃপর তিন নম্বরের কালো গাড়ির নিকট গেলো। গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে এক পা দিতে না দিতেই হঠাৎ বাঁধা এলো পেছন থেকে।

” আমাদ ভাই..”

জারার কন্ঠ। আমাদ ফিরে চায়। শক্ত চোখ মুখ নিয়ে দাড়িয়ে থাকা জারার পাশে দেখা যায় উপমাকেও। সে ভাবলেশহীন। হাতে একটা ব্যাগ। ব্যাগের কোণায় ঝুলছে ভার্সিটির কার্ড। মনে হচ্ছে জারা তাকে ধরে বেঁধে আটকে রেখেছে।

” আপনি এসব বুদ্ধি দিয়েছেন ব্যারিস্টারকে তাই না?”

আমাদ থতমত খেয়ে যায়।

” আমি? কি বুদ্ধি? ”

জারা হালকা চিৎকার করে ওঠে। বলে

” কথা বাড়াবেন না আমাদ ভাই। আপনি আমার মায়ের বদলির পেছনের বড় কারণ। আপনি বাবাকে এই বাসায় এনেছেন।”

” আমি কেবল স্যারের অর্ডার পালন করেছি জাস্ট এটুকুই”

” আমাদ ভাই নির্দোষ আপু্। ছাড় বেচারাকে। ভাইয়া আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনি কষ্ট পাবেন না।”

জারা কটমট করে চায় উপমার দিকে। আমাদের হৃদয়ে ফাটল ধরেছে। ইশ! উপমা মেয়েটাও না? শুধু শুধু ক্যালরি খরচ করে। আমাদ পর্যন্তই ঠিক ছিল কষ্ট করে আবার ভাই, ভাইয়া ডাকার কি দরকার ছিল?

জারা আরো কিছু বলতে চাইছিল আমাদ কে। কিন্তু তার নজরে আসে তখনই ইউভান। সে তার এপার্টমেন্ট থাকে সিড়ি বেয়ে নামছে। কালো শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে। তার শুভ্র বরণ হাতের রিস্টওয়াচটা চকচক করছে সূর্যের আলোয়।

ইউভানের চোখ অর্ধেকটা কুঁচকে আছে যেনো সকালটা তার জন্য খুব একটা সুখকর নয়। সিড়ি বেয়ে নামতেই দু’জন দেহরক্ষী কিছু একটা বলল। ইউভান চলন্ত দশায় তার জবাব দিয়ে এগিয়ে আসছে জারা, উপমা আর আমাদ এর দিকেই। আজ চোখে কালো সানগ্লাস। চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে অপরিপাটি হয়ে। জারার দিকে দৃষ্টি পরতেই ইউভান আঙ্গুলের ফাঁকে চুল পরিপাটি করার বৃথা চেষ্টা করলো। ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলল মোহময় হাসি। যখনই সে হাত রাখলো চুলে তখনই দৃশ্যমান হলো তার হাতের ক্ষত। বিশ হাত দূর থেকেও তা নজরে এসে এঁটে বসছে যেন। জারার গত রাতের কথা মনে পরে গেলো। অতঃপর সে দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো নিজ ঘরের দিকে। নজর কাড়া রূপের হেঁটে আসা এই বিপদ পৌঁছানোর আগেই তার পালানো ভালো।

চলবে….

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২২

দুই দিন মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর আজ ইউভানের অফিসে এলেন আরমান শাহ। হঠাৎ বাবাকে অফিসে দেখে ইউভান কিছুটা অবাক হলো। সাধারণত তিনি অপ্রয়োজনে এখানে আসেন না।

ইউভান তখন ডেস্কে বসে একটা জরুরি ডকুমেন্ট দেখছিল। তার চোখ সামান্য কুঁচকে গেল। বাবা এখানে? নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ কারণ আছে।

আরমান শাহ সামনে রাখা চেয়ার টেনে নিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে পড়লেন। তারপর সোজা তাকালেন ইউভানের দিকে।

“মেয়ে দেখে এলাম।”

ইউভানের চোখের পাতা একবার কাঁপলো।

“মেয়ে?”

“মিনিস্টারের মেয়ে।”

ঠান্ডা কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন তিনি।

ইউভান এবার পেছনে হেলান দিয়ে বসলো। ভ্রু সামান্য উঁচু করলো।

“তারপর?”

“বিয়ের ডেট ফাইনাল করার আগে তোমাকে একবার দেখা করতে হবে মেয়ের সঙ্গে।”

আরমান শাহর কণ্ঠে কোনো আবেগ নেই। যেন সবকিছু আগেই ঠিক হয়ে গেছে।

ইউভান এবার ধীরগতিতে টেবিলের ওপর রাখা কলমটা হাতে নিলো। কিছুক্ষণ সেটা আঙুলে ঘুরিয়ে তারপর থমথমে কণ্ঠে বললো—

“আমি কি বলেছিলাম তোমাকে, বাবা?”

আরমান শাহ চোখ সরু করলেন।

“তুমি বলেছিলে এসব নিয়ে কথা বলতে না। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে তো হবে না, ইউভান! তোমাকে একটা স্ট্রং পরিবার থেকে বিয়ে করতে হবে। এটা শুধু তোমার জন্য নয়, আমাদের পরিবারের জন্যও দরকার। তুমি যখন দেশ বিদেশে কেইস লড়ার জন্য যাবে তখন তোমার দরকার হবে।
এটা তোমার নিরাপত্তার জন্যও দরকার। ”

ইউভান এবার আস্তে হেসে ফেললো। কিন্তু সেই হাসিতে বিদ্রুপ ছিল।

“আমাদের পরিবারের জন্য দরকার? আমার জন্য দরকার?

“অবশ্যই! তুমি বুঝতে পারছো না, ইউভান, মিনিস্টারের মেয়েকে বিয়ে করলে তোমার জন্য কত দরজা খুলে যাবে!”

এবার ইউভান কলমটা টেবিলে ছুঁড়ে দিলো।

” আমার জন্য কোন দরজা খোলার দরকার নেই ”

আরমান শাহ এবার বিরক্ত হয়ে উঠলেন।

“তুমি এত জেদী কেন? আমি তোমার বাবা, আমি তোমার ভালো চাই!”

“তুমি আমার ভালো চাও?”

ইউভানের চোখ এবার ধীরে ধীরে রক্তিম হয়ে উঠলো।

“তাহলে কেন আমি যা চাই, সেটা কখনো বোঝার চেষ্টা করো না?”

আরমান শাহ রাগ চেপে বললেন—

“একটা ডিভোর্সি মেয়ে তোমার জন্য সঠিক নয়, ইউভান! তুমি এটা বোঝো না?”

এইবার ইউভান উঠে দাঁড়ালো। হাত দিয়ে টেবিলের ওপর ভর দিলো। তার চোখে ভয়ানক কিছু জ্বলজ্বল করছে।

“ডিভোর্সি? সেই মেয়েটার কথা বলছো, যাকে আমি ভালোবাসি? যার জন্য আমি সব করতে পারি?”

আরমান শাহ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু ইউভানের কণ্ঠ তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।

“শুনে রাখো, বাবা। জারা শুধু একটা মেয়ে নয়। সে আমার জীবন।”

তার কণ্ঠ এবার আরও দৃঢ় হলো।

“She is my queen, my everything!”

আরমান শাহ এবার সত্যি স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা এখন আর কেবল তার উত্তরসূরি নয়, সে নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছে।

অফিসের শীতল বাতাসেও যেন উত্তপ্ত কিছু ছড়িয়ে পড়ছিল। আরমান শাহ একবার ইউভানের চোখের দিকে তাকালেন।
সেখানে শুধু একরোখা ভালোবাসা ছিল।

আরমান শাহ শক্ত চোয়ালে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। দরজার বাইরে তার দেখা হয় আমাদ এর সঙ্গে কিন্তু কথা হয় না। আমাদ সন্দেহের চোখে দ্রুত ইউভানের কক্ষে ফেরে। ইউভানের চোখ লাল। তার আঙ্গুলের ফাঁকে স্থান দেখা মিলছে একটা ভাঙা কলমের। যেন অপ্রকাশিত রাগটুকু সে কলমের ওপরই বর্তিয়েছে।
.

কঠিন রোদের ঝলক পেরিয়ে উপমা বাসায় ফেরে একটা বিড়াল সঙ্গে নিয়ে। সে নিতেই চায়নি। তার বান্ধবী বিক্রি করেছে। জারার জন্য নিয়েছে শুধু। জারা যেন একাকিত্বের সঙ্গী না হয় এজন্য। উপমা ফিরে চায় বিড়ালের দিকে। সাদা ধবধবে একটা প্রাণী। ভীষণ আদুরে দেখতে।

উপমা ঘরে ফিরেই জারাকে উপহার হিসেবে ধরিয়ে দেয়। জারা ভীষণ খুশি হয়। উপমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে ব্যস্থ হয়ে পরে বিড়াল নিয়ে।

” আপু ভার্সিটি যাবি কবে?”

সোফায় ব্যাগ রেখে জুতো খুলতে খুলতে উপমা জানতে চায়। জারা বিড়ালটির নরম দেহে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে উত্তর করে

” যাবো? মা বাবার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়নি। ”

” কাল বাবা এটা নিয়ে কথা বলল শুনলাম।”

” আমি পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করতে চাইছিলাম। এই ধর আমার রেস্টুরেন্টে জব করার ইচ্ছে হয়েছে। আমি চাচ্ছি না মা বাবার ওপর প্রেশার দিতে। ”

উপমা মাথা নাড়ে। বসা থেকে উঠে এসে জারার কাঁধে হাত রেখে বলে

” খারাপ না বোন, করতে পারিস। কোনো কাজই ছোট নয়। আমি সবসময় তোর সঙ্গে আছি।”

জারা হাসে। চোখ সিক্ত হওয়ার আগেই সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অন্য কাজে।

.
ইকরা ও আদৃতের শেষ সাক্ষাৎ এর পর সিদ্ধান্ত এটাই হয়েছে যে তাদের ডিভোর্স হবে। আগামী মাসে কোর্টে গিয়ে ডিভোর্স করতে হবে। আদৃত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে হাতের ফোনটার দিকে। ইকরা আর তার বন্ধু কোল এর একটা ঘনিষ্ঠ ছবি। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আছে। শুয়ে আছে তারা এক চাদরের নিচে। আদৃতের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মুহূর্তে সে ছুড়ে ফেলে দেয় ফোন।

.

ইউভানের বাড়িতে কেটে যায় দশদিন। জাহানারার যাতায়াতের বেশ সমস্যা হচ্ছে। এখান থেকে সরাসরি গাড়ি পাওয়া যায় না। হুটহাট গাড়ি কেনার মতো পয়সাও এখন নেই।

আজ সন্ধ্যায় জাবেদ সাহেবের সঙ্গে একথা আলোচনা করছিলেন তিনি। তৎক্ষনাৎ আমাদ আসে। বাড়ির বাইরে রাখা বেতের চেয়ারে বসে তারা আলোচনা করছিল। আমাদ অনিচ্ছুক ভাবে শুনে ফেলে সব কথা। এগিয়ে যায় সেদিকে। শেষ বিকেলে বসে এই দম্পত্তি চা পান করছিল। আর ওনাদের মেয়েরা ঘরে টিভি দেখছে।

” আরে বাবা, বসো, চা খাও।”

জাবেদ সাহেব আমাদকে চায়ের দাওয়াত দিলেন। আমাদ দু একবার না করে বসে যায় ওনাদের সঙ্গে। অনেকদিন পর মনে হয় তার একটা পরিবারের সঙ্গে বসে আছে। ঠিক অনেক দিন পর নয় তার এই জীবনে কোন পরিবারই ছিল না।

.
আমাদ আর জারার মা বাবার এই আড্ডার দিন দুই পর গেইটে দেখা মেলে সাদা রঙের এক নতুন প্রাইভেট কারের। এরপরই জরুরি তলবে ডেকে কথা বলতে যায় আমাদ জারার মা বাবার সঙ্গে। ওনাদের বলা হয়

” আমাদের বাসাটা যেহেতু লোকালয় থেকে একটু দূরে। আপনাদের যাতায়াতের সমস্যা সেজন্য এই গাড়িটা আপনাদের ফ্যামিলির। যখন যেখানে যাবেন এটা ব্যবহার করবেন। আপনাদের জন্য এটা একটা চার্জ ছাড়া সার্ভিস। ইউভানের পক্ষ থেকে। ”

জাহানারা ও জাবেদ সাহেব একে অপরের দিকে তাকালেন। সম্ভবত এমন সার্ভিসের কথা তারা কখনো শোনেননি।

” কিন্তু এটা, লাগবে না।”

জাহানারা জবাব দেন। ইউভান তার কক্ষের কাঁচ দেওয়ালের পাশে দাড়িয়ে দেখছিল সবটা। সে প্রায়ই এখানে দাড়িয়ে থাকে। জারার বাসার প্রতিটি কোণা যেন এখান থেকে স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ করা যায়।

আমাদ আর হবু শশুর শাশুড়ির তর্ক তার ভ্র কুঁচকে দেয়। এগোতে হয় তার নিজেকেও। ধীর পায়ে এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে সে উপস্থিত হয় সেখানে। কথার শোরগোলে জারা আর উপমাও এসে দাড়িয়েছিল। তারা নিশ্চুপে আমাদ এর যুক্তি আর মা-বাবার খন্ডন করে দেওয়া যুক্তি শ্রবণ করছিল। ইউভান এসে দাঁড়াতেই জারা উপমার পেছনে চলল যায়। ইউভান বিষয়টা সামলে নেয়। সে বলে

” আসলে আপনাদের সুবিধার জন্য এটা করা হয়েছিল। কিন্তু আপনারা চাইলে অবশ্যই চার্জ দেবেন এর জন্য। আমাদ এর সঙ্গে এটা আলোচনা করে নেবেন।”

বেশ ভদ্র আর হাসি মুখেই সে কথাগুলো বলার চেষ্টা করে। জাহানারার তবুও কেমন অদ্ভুত লাগে বিষয়টা। সঙ্গে ইউনকেও। সে দ্রুত মেয়েদের নিয়ে ঘরে ঢুকে পরেন। ইউভান এসময় লক্ষ করে জারার হাতের বিড়াল ছানাকে। মুহূর্তে চোখে মুখে বাসা বাঁধে অন্যরকম এক ভাব। তার বিড়ালের হাতে অন্য একটা বিড়াল? এতোটা কাছাকাছি? জারার কোলে উঠে বসে আছে?

চলবে….

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৩

জারার বিড়ালটাকে ইউভান প্রায়ই জারার কোলে দেখে। তার দৃষ্টিতে ফুটে থাকে অসন্তোষ। ওদিকে মাহার জেল হয়েছে ১০ বছরের। উপমা টাকা পরিষদ করার জন্য আমাদ এর সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু বাকি টাকা আমাদ নেয়নি। ইউভান ফিরিয়ে দিয়েছে। আর উপমা জানে ইউভানের সঙ্গে লড়াই করে সে জিতবে না। অগত্যা সে হাল ছেড়ে টাকা ফিরিয়ে আনে৷ স্থান পায় তা আলমারিতে।

.
একদিন গোধূলির আলোমাখা আকাশপটের নিচে জারা তার বিড়াল নিয়ে বসে ছিল চেয়ারে। তাদের বাসার মেইন দরজা থেকে একটু দূরে রাখা বেতের চেয়ারে। মা ঘরে রান্না করছিলেন। বাবা গেছেন বাহিরে। উপমা ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ জারাকে ডেকে ওঠে জাহানারা। জারা ঘরে ঢুকতেই তার অগোচরে তার শুভ্র আদুরে বিড়ালকে কেউ হাতের মুঠোয় বন্দী করে নেয়। অতঃপর একপ্রকার অপহরণ করে নিয়ে ফেরে নিজ এপার্টমেন্টে। ঠোঁটে তার মিশন বিজয়ের জয়ী হাসি। এই মিশন সফল ভাবে শেষ করা মানুষটা আর কেউ নয়। ব্যারিস্টার ইউভান।
.
ইউভান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে, হাতে ধরা ছোট্ট ফারবলের মতো বিড়ালটি শিউরে উঠে নরম মিউ মিউ করে কুঁকড়ে যায়, আর ইউভানের চোখদুটো জ্বলতে থাকে চাপা আগুনে।

“তুই বেশি বেশি জারার কোলে বসিস, তাই না?” তার কণ্ঠে অস্ফুট রাগ, ঠোঁটের কোণে তিক্ত হাসি।

বিড়ালটা নিশ্চুপ, থতমত খেয়ে ইউভানের শক্ত মুঠোয় নিজেকে গুটিয়ে রাখে। যেন বলতে চায় অনেক কিছু।

ইউভান ঠান্ডা গলায় ফিসফিস করে,

“তোর ভাগ্য ভালো যে তুই মানুষ না… নাহলে আমার সহ্যশক্তির পরীক্ষা দিতে হতো।”

তার আঙুলের চাপে বিড়ালটা অসহায় মিউ মিউ করে ওঠে, কিন্তু ইউভান নির্দয় ভঙ্গিতে বিড়ালটার চোখের দিকে তাকিয়ে শাসায়,

“আজ থেকে জারার কোলে বসবি না, বুঝলি? আমি আর তোকে ওর কোলে দেখতে চাই না!”

তারপর হুট করে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,

” তোকে এমন কোথাও রেখে আসবো যেখানে জারা পৌঁছাতে পারবে না।”

বিড়াল ছানা অসহায় চোখে তাকিয়ে মিউ মিউ করে। ইউভানের ঠোঁটে এবার অনিচ্ছায় হাসি ফোটে। মৃদু শব্দ করে হেঁসে সে বলে

” যাবি না? আবার কিকরে পাঠাই তোকে বল? জারা ছুঁয়েছে তোকে। তুই তো আমার কাছে এখন অনেক দামি হয়ে গেছিস।”

একথা বলতেই বিড়াল তার আঙ্গুলে জিহ্বা দেয়। ইউভান বিড়ালের নাম ঠিক করে ভাবনায়। অতঃপর তার মনে হয়। আর যা মনে হয় তাই উগড়ে দেয় ভীষণ দুঃখী কন্ঠে

” এমন একটা ক্ষুদ্র প্রাণী হয়েও তুই জারার কতটা মনোযোগ পাস। আর আমাকে দেখ? হাহ! ছাড় আমার কথা। আমি আসলে মিসফিট। আচ্ছা তোর নাম মিসফিট রাখলে কেমন হয়? নট ব্যাড।”

কথাটা বলেই ইউভান মিসফিটের নরম লোমে হাত বুলিয়ে দেয়। সোফাতে বসে তাকে কোলল রাখে। নিজের দিকে মুখ করিয়ে। আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে

” লিসেন মিসফিট, আজ থেকে তুমি আমার কথা শুনবে ওকে? জারাকে স্পর্শ করতে চাইলে আমার অনুমতি নিতে হবে আন্ডারস্ট্যান্ড? ”

বিড়াল যেন ভয়ে মিউ মিউ করে সাড়া দেয়।
.
সন্ধ্যা হারিয়ে রাত আসে। জারা হন্যে হয়ে খোঁজে তার বিড়ালকে। কিন্তু কোত্থাও নেই। তার বড্ড মন খারাপ হয়। উপমা নিজেও খোঁজে। কিন্তু পাওয়া যায় না। মাগরিব পেরিয়ে যায়। বাচ্চা বিড়াল ঘরে ফেরে না। উপমা বলেই দেয় হতাশ হয়ে

” বিড়ালটা মনে হয় হারিয়ে গেছে আপু। নতুন জায়গা দিক না পেয়ে অন্য দিকে গেছে হয়তো। ”

জারা বিশ্বাস করে নেয়। অতঃপর তার মায়া হয়, কষ্ট হয়, মন খারাপ জেঁকে ধরে।

.
পেরিয়ে গেলো প্রায় এভাবে একটা মাস। জারা একটা চাকরি জোগাড় করেছে। পার্টটাইম কাজ। গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতে চায় সে। বাবার সঙ্গে এ নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। কিছুতেই জাবেদ সাহেব এই কাজ করতে দেবেন না৷ কিন্তু জারা? সে ছাড়বে না। মা তেমন নিষেধ করেননি। মেয়ের বাড়ির বাইরে থাকা উচিত একটু। মানুষ দেখে মানুষ চিনুক সে। একটু চালাক হোক। কিন্তু জাবেদ সাহেব রেস্টুরেন্টে জব করার বিষয় পুরোপুরি নাকচ করে। মেয়ে চালাক নয় বিধায় তাই ভয়। সেখানে না আবার ঝামেলা হোক। দেশি বিদেশি অনেক কাস্টোমার আসবে। তাদের চরিত্র হবে সাত রাঙা। জারা নতুন বিপদে পরবে। এর চাইতে বরং জারা কোনো কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যেহেতু তার সাবজেক্ট ইংরেজি তাই এর বেশ চাহিদা আছে।

.
জারা ব্যাস্ত পায়ে হেটে কোচিং এর দিকে যাচ্ছিল।দুইদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছে আর আজ প্রথম সে কোচিং এ যাচ্ছে। বুকটা ধুকপুক করছে। আবার খা খা রোদ তাকে খুব জ্বালাচ্ছে। বাসার সবাই ইউভানের দেওয়া গাড়িটা ব্যবহার করছে নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে। অগত্যা জারারও করতে হয়। মা বাবার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো শব্দ তার ভান্ডারে নেই।

ছাত্র পড়ানো যে এতোটা কঠিন তা জারা আজ উপলব্ধি করলো। মাথা নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েদের থামিয়ে রাখা গেলেও ছেলেদের থামানো বড্ড মুশকিল। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ মন নিয়ে যোহরের ওয়াক্তের সময় যানজটের এই সরকে জারা দাড়িয়ে থাকে গাড়ির অপেক্ষায়। আজ না হয় মেইন সরক থেকে বাসায় হেঁটেই ফিরবে সে। ভাবনার মাঝে তার সামনে এসে দাড়ায় কালো রঙের গাড়ি। গ্লাস নেমে যেতেই দেখা মেলে চিরচেনা মুখ। যা দেখতে দেখতে জারার মুখস্থ হয়ে গেছে।

” উঠে এসো।”

ইউভানের আদেশের সুর। জারা মাথা নাড়িয়ে পিছিয়ে যায় দু’পা। ইউভনা দু সেকেন্ড চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। পেছনে গাড়ির হর্ণ বাজে। মুহূর্তে জ্যাম সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেপে উঠেছে সকলে। ইউভান জারাকে তাড়া দেয়। জারা চোখ বোলায় চারপাশ। সকলে তার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। কেউ কেউ সজোরে চিৎকার করে বলছে উঠে পরতে। ইউভান গাড়ি থেকে নামে। জারার চোখ ছানাবড়া হয়। তার মনে পড়ে যায় ইউভানের একটা শক্তপোক্ত কাঁধ আছে। সঙ্গে আছে একটা জেদি, বেপরোয়া মন। সে একপ্রকার দৌড়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইউভান হাসে। ড্রাইভিং সিটে বসে জারার সিটবেল বেঁধে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মুখে বলে

” বুদ্ধি হচ্ছে তবে। ”

জারা বিরক্ত মুখে জবাব দেয়

” আমি ব্রেইন ছাড়া জন্মাইনি।”

ইউভান হাসে। সেই হাসির শব্দে জারার গা জ্বলে ওঠে। বিশ মিনিটের পথ জারার কাছে বিশ ঘন্টা মনে হচ্ছে। উপরন্তু ইউভান শুরু করে তার আধ্যাতিক কথা।

ইউভান গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে একদৃষ্টিতে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তার কণ্ঠ যখন ভেসে আসে, জারার

“আমি আমার জীবন, আমার যৌবন, সবকিছু তোমার জন্য সুরক্ষিত রেখেছি, জারা। কবে তোমার হাতে তুলে দেবো, সেটা শুধু তুমি ঠিক করবে। কিন্তু মনে রেখো, আমি অপেক্ষা করতে পারি, তবে হার মানতে জানি না।”

জারা গলা শুকিয়ে আসে। সে উত্তর জানা প্রশ্নটা আবারও করে বসে

“আপনি কি পাগল?”

ইউভান এবার তার দিকে তাকায়। সেই চোখে এমন কিছু আছে, যা তাকে শ্বাস নিতে পর্যন্ত ভুলিয়ে দেয়।

“তোমার জন্য?”

সে মৃদু হাসে, আবারও বলে

“হ্যাঁ, আমি পাগল। আর পাগলদের সঙ্গে জেদ করার চেষ্টা করো না, জারা।”

” আপনি কি জানেন না, আই এম নট পিওর ইন দ্যট ওয়ে?”

ইউভান মুচকি হাসে। অতঃপর ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে

” একটা আফসোস বাট সমস্যা না। বাবা তো বানাতে পারবে তাই না?”

জারা দৃষ্টি ফিরিয়ে জানালা দিয়ে অদূরে চায়। ইউভানের সঙ্গে কথা বলার অর্থ নিজেই মারপ্যাচে পারে যাওয়া।

.
গাড়িটা গেট পেরিয়ে সোজা পার্কিংয়ে গিয়ে থামে। জারা নামতে চাইলেও পারে না, দরজা লক করা।

ইউভান নিঃশব্দে সিটবেল্ট খুলে নেমে যায়, ধীর পায়ে ঘুরে এসে জারার পাশে দাঁড়ায়। একটানে দরজা খুলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়, চোখে অদ্ভুত স্থিরতা।
জারা এক ঝলক ইউভানের হাতের দিকে তাকিয়েই তা উপেক্ষা করে। কোনো কথা না বলে আলগোছে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসার দিকে হাঁটা দেয়।

ইউভান হাতটা ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেয়, বুকে রাখে। ঠোঁটের কোণে একচিলতে রহস্যময় হাসি খেলে যায়, চোখে এক অদ্ভুত দৃষ্টি জমে ওঠে। নিজ বাসার দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে ডেকে ওঠে উপমা।

” ফেইল করলেন। আপনি ব্যর্থ প্রেমিক।”

ইউভান ঘার ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। উপমা হাতে থাকা পেয়ারায় কামড় বসিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার দিক পরিবর্তন করে। হাটতে থাকে ঘরের পানে। ইউভান যেন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে উপমার দিকে। উপমা তার মজা নিলো? এমন সময়ই আমাদ আসে। পাশে দাড়ায় ইউভানের। বলে দুঃখী কন্ঠে

” কেমন উকিল আপনি? যদি প্রেমের উকালতিই করতে না পারেন?”

ইউভান গরম চোখে তাকায় আমাদ এর দিকে। উপমা হয়তোবা ইউভানকে শত্রু ভাবে। কিন্তু আমাদও কি মিত্র ভাবা ছেড়ে দিয়েছে? এদের সাহস দেখে ইউভান অবাক না হয়ে পারে না যেন।

চলবে….