ধোঁয়াশার শেষে পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
25

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৪

জীবন যেন একটা দীর্ঘ উপন্যাস। যে উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায়ের আছে ভিন্ন ভিন্ন সাদ। জারার আজ নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। ডিভোর্সের পরের জীবন। এক মাস পর আজ তার ডিভোর্স পেপারে সাইন করার মুহূর্ত। এক সেকেন্ড না ভেবে জারা সই করে দিলো। ইউভানের অফিসে ছিল জারার বাবা, মা ও উপমা। তাদের মনটা খারাপ হলেও জারা ছিল একদম ঠিকঠাক। হাসি মুখে একটা সই দিয়ে সে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে এলো অফিস থেকে। ইউভান গাঢ় চোখে দেখলো। আর কেউ জারার ভেতরটা না পড়লেও ইউভান যেন ঠিকই পড়ে ফেলল এক ঝলকে। সে থুতনিতে হাত রেখে কনুইয়ের ভর ছেরেছিল ডেস্কে। জারা যতক্ষণ না তার অফিসের চৌকাঠ পেরোলো ততক্ষণ সে স্থির তাকিয়ে দেখলো। অতঃপর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস বুক থেকে মুক্ত করে চোখ জোরা বন্ধ করলো। চেয়ারে ঠেস দিয়ে মাথা এলিয়ে দিলো। আমাদ কে বলল

” আলভির থেকে সই নিয়ে আসো।”

.
কারাগারে শুকনো মুখে বসে থাকা আলভির সামনে আমাদ নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায়, মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। তারপর হাত বাড়িয়ে একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।

আলভি অবাক হয়ে পেপারটা নেয়। চোখ নামাতেই দেখলো চেনা কিছু শব্দ—”ডিভোর্স ডিক্রি”।
তার মাথার ভেতর শূন্যতা বাজে। হাতে ধরা কাগজটা হঠাৎ খুব ভারী মনে হয়।

“জারা আসেনি?” প্রশ্নটা বেরিয়ে আসে স্বাভাবিকভাবে, যদিও উত্তরটা সে জানে।

আমাদ এক মুহূর্ত চুপ থেকে জবাব দেয়, “না।”
আলভি একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়। এই কয়দিনে জারার মুখ, তার হাসি, তার রাগ, তার অভিমান—সবকিছু যেন ওকে তাড়া করে ফিরেছে। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, জারা ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। আলভি নতুন কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না। জারা যে তাকে কতটা ঘৃণা করতে শুরু করেছে তা যেন সে পরিমাপ করতে পারছে। তাকে ফিরে পাওয়া বাসনা থাকলেও তা বাস্তব হওয়া অসম্ভব। একথা আলভি জেলে বসে অনেক ভেবেছে। তাই সে আজ বিনাবাক্যে সই করে পেপারে। আমাদ চলে যায়। আলভি বসে পড়ে লোহার শির ধরে। চোখের জল চিকচিক করে। অতঃপর তা উপচে পরে গালে। গলা থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসতে চায়। পাগল পাগল মনে হয় নিজেকে। সে নিজের হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। এতোটা যন্ত্রণা! এতোটা কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল না। যদি না সে মোহ আর লোভে পরতো।

.

নতুন এক শূন্যতা।বাড়ির প্রতিটি কোণ আজ যেন নিঃশব্দ। কেউ কিছু বলে না, অথচ নীরবতাই বলে দিচ্ছে অনেক কিছু।

জারা জানে, মা-বাবা চিন্তিত। মা এখন বেশি যত্ন নিচ্ছে। ছোট ছোট কাজে পাশে দাঁড়াচ্ছে যেন কিছুটা হলেও শূন্যতা পূরণ করতে পারে। বাবা… তিনি কেবল চুপচাপ বসে থাকেন, একা একা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকেন।

এই দু’দিনে কেউই জারাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি, কোনো অনর্থক কথা বলেনি। কিন্তু সবার চোখে একই প্রশ্ন—তুমি কি ঠিক আছো?
জারা উত্তর দিতে পারে না। সে নিজেও জানে না, সে ঠিক আছে কি না।

.
নির্জন দুপুর।বাড়িটা নিস্তব্ধ, চারপাশে যেন একটা অলস স্থিরতা ছড়িয়ে আছে। মা অফিসে, উপমা ভার্সিটিতে, আর জারা একা বসে ছিল ড্রয়িং রুমে।

তখনই হঠাৎ বাবার ঘর থেকে একটা ভারী শব্দ এল যেন কিছু ধপ করে উঠলো। জারা প্রথমে বুঝতে পারেনি, কিন্তু পরের মুহূর্তেই বাবার গোঙানির শব্দ শুনতে পেল। বুক কেঁপে উঠলো।

“বাবা”

দৌড়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে, বাবা মেঝেতে পড়ে আছেন। মুখটা ফ্যাকাশে, নিঃশ্বাস দ্রুত চলছে।জারার শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো। ভয়, আতঙ্ক সবকিছু মিলিয়ে ওর হাত-পা কাঁপতে লাগলো।

“বাবা তুমি ঠিক আছো? কিছু বলো!”

কোনো উত্তর নেই।

ওর মাথা কাজ করছিল না, কি করবে বুঝতে পারছিল না। দ্রুত ফোন বের করে কল করলো মাকে, কিন্তু মায়ের ফোন বন্ধ। উপমার নাম্বারেও রিং হলেও কেউ ধরে না।
ওর চারপাশটা ঘুরতে লাগলো, চোখে পানি এসে গেল। অসহায় লাগছিল, প্রচণ্ড অসহায়।
তখনই দরজার কাছ থেকে একটা চেনা কণ্ঠস্বর শোনা গেল—

“জারা!”

কান্নার মধ্যে সেই গম্ভীর কণ্ঠটা যেন একটা বজ্রপাতের মতো ধ্বনিত হলো ওর কানে। ইউভান!
জারা তাকাতেই দেখে, ইউভান দরজার নিকট দাড়িয়ে আছে।জারার কাঁদতে কাঁদতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

ইউভানের বুক ধ্বক করে উঠলো। জীবনে অনেক কিছু দেখেছে, কিন্তু আজকের এই দৃশ্য… জারার চোখে আতঙ্ক, অসহায়তা… এটা সে সহ্য করতে পারছে না।
কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো ইউভান।

” কি হয়েছে?”

“আমি জানি না, সে… সে কিছু বলছে না!”

কথা না বাড়িয়ে ইউভান নিচু হয়ে বাবাকে ধরলো। শরীরটা ভারী, কিন্তু সে পরোয়া করলো না।

“হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে!”

জারা চোখ মুছে ছুটে মেইন দরজা পুরোটা খুলল। ইউভান শক্ত হাতে বাবাকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল, আর জারা তখনও ঘামতে থাকা হাতে ফোন চেপে ধরে মাকে ফোন করতে লাগলো। এই মুহূর্তে ভয়, উদ্বেগ, আতঙ্ক—সব মিলিয়ে চারপাশটা একদম থমথমে। কিন্তু জারার চোখ শুধু একবারের জন্য ইউভানের মুখের দিকে গেল। ইউভান ব্যাস্ত হয়ে গাড়িতে বসালো জাবেদ সাহেবকে। জারাকেও বসিয়ে দিয়ে সে ড্রাইভিং সিটে বসে দ্রুত গাড়ি টানলো। ভাগ্যস সে বাসায় ফেরার সময় জারার উচ্চ কন্ঠ শুনে ঘরে প্রবেশ করেছিল।

.
হসপিটালে পৌঁছানোর পর ডাক্তার জারার বাবাকে দেখে জানালেন

” অতিরিক্ত টেনশন থেকে এমন হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ওনার। কিছুদিন বিশ্রাম দিতে দিন। আশা করি পুরোপুরি ঠিক হবে। ”

জারার চোখ ছলছল করে ওঠে। এরই মাঝে উপস্থিত হয় জাহানারা ও উপমা। তিনজনে যখন দেখা করতে যায় জাবেদ সাহেবের সঙ্গে তখন ইউভান দেয়ালে ঠেস দিয়ে বুকে হাত রেখে দাড়িয়ে থাকে অসহায় ভঙ্গিতে। বুকটা ধুকপুক করছে। জারার অসহায়ত্ব তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে।

” মা বাবার ওপর বেশি কথা বললে এমনই হয়। যদি আলভির সঙ্গে পালিয়ে না যেতি তাহলে না ডিভোর্স হতো, আর না তোর বাবার হার্ট অ্যাটাক হতো।”

হঠাৎ জারার মা ক্ষুদ্ধ হন কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে এমন কথা বলেন। জারা যেন ভীষণ কষ্ট পায় মায়ের কথায়। অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। জাহানারার চোখে জল। উপমার শুকনো মুখ। যেন সে চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। জারা এক মুহূর্ত দেরি করে না। মায়ের চোখের সামনে থেকে সরে আসে। ইউভান চোখ মুছতে মুছতে হেঁটে আসা জারার দিকে দৃষ্টি দিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। জারা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটা দেয়। ইউভান পিছু নেয়। অনেকটা সময় জাবেদ সাহেব কে দেখার পর ডাক্তার মন্তব্য করেছিল। অতঃপর আরো কিছু সময় জারা, জাহানারা আর উপমা বসে ছিল জাবেদ সাহেবের কাছে। এখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। মাগরিবের আজান পরছে। জারা একটা ব্রিজের কাছে এসে দাড়িয়ে পরে। হঠাৎ দু-হাতে চোখ ঢেকে সে কেঁদে ওঠে শব্দ করে। তার কান্নার স্বর দ্রুত চলা গাড়ির ব্যস্ত সড়কে মিলিয়ে যায়। ইউভান থমকে দাড়ায়। জারার এমন রূপ তার অজানা। সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। জারার কাঁধে হাত রাখে। বিরবির করে বলে মোলায়েম কন্ঠে বলে

” সব ঠিক হয়ে যাবে জারা।”

জারা ইউভানের কন্ঠ ও স্পর্শে আরো ভেঙে যায়। কান্নার বেগ বেড়ে যায় তার। অজান্তেই বলে ওঠে

” কিছু ঠিক হবে না। আরো ভাঙছে সব। আমি এখন কি করবো? কোথায় যাবো। এতো কষ্ট কেন। আমি বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছি আজ। ”

এমন কথা শুনতেই ইউভানের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। সে চটজলদি বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে জারাকে। ধীর কন্ঠে বলে

” এমন কথা বোলো না। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি

প্রথম বারের মতো জারা আজ ইউভানের বুকে স্থির থাকল। দূরে ঠেলে দিল না। তবে তা যেন পাঁচ মিনিটের জন্য। এরপরই সে মাথা তুলে চোখমুখ মুছে হাঁটা দিল হসপিটালের দিকে। পরিবার ছাড়া যাওয়ার জায়গা কোথায়? শত অবহেলা আর অপমান মাথায় নিয়ে তবুও ফিরতে হবে সেই নীরে। সত্যি তো এটাই, খারাপ পরিস্থিতিতে কেউ পাশে থাকে না। আজ জারার মা-বাবা পাশে থেকেও যেন পাশে নেই। আচ্ছা জীবন যখন ধ্বংসের মুখে দাড়িয়ে থাকে তখন মানুষের ঠিক কি করা উচিত?

চলবে…

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৫

জারা হসপিটালে পৌঁছে ঠিকই কিন্তু মা আর বোন কে রেখে সে বাসায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। রান্না করে আনতে হবে।
.
ব্যস্ত শহরে আলো জ্বলছে রাস্তায়। তিমিরের মাঝে নিয়নের আলো আর দোকানপাট এর আলো। রাত বাড়লেও থামেনি কোলাহল।

জারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ির জন্য। কিন্তু ইউভান থাকতে সে কি অপেক্ষা করবে? ইউভান জারাকে নিজ গাড়িতে বসিয়ে নেয়। জারা খুব একটা মানা করতে পারে না। গাড়ি চলতে শুরু করে। জ্যামে আটকে যায় ওরা। জারা ফোনের স্ক্রিনে সময় পরখ করে। রাত আটটা বাজতে চলল। সময় গড়াচ্ছে কিন্তু গাড়ি যেন চলছে না। জারার চোখে অভ্যাস বসে রাজ্যের ঘুম নামে। কখন যে সে ঘুমিয়ে পরলো তা কেবল ইউভান ছাড়া আর কেউ বলতেই পারবে না। জারার মাথা ঠেস দেওয়া ছিল জানালার কাঁচে। ইউভান সাবধানে তা নিজ কাঁধে রাখে। অতঃপর বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত পৌঁছে দশটা। ইউভান আর জারাকে ডাকলো না। সে ভেতরে গাড়ি রেখে ব্যাস্ত পায়ে এপার্টমেন্টের দিকে হাঁটা দিল। গার্ডদের কড়া করে বলা হলো জারার ওপর নজর রাখতে। ইউভান ভেতরে ঢুকেই খাবার টেবিলের নিকট গেলো। তার রাতের খাবার সাজিয়ে রাখা ছিল। সেখান থেকে বক্সে খাবার ভর্তি করে সে। তিন বক্স খাবার নিয়ে আবার নেমে আসে গড়ির কাছে। মাঝখানে পাল্টে নেয় শার্ট। বেশ মলিন হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই একই শর্ট। আবারো কালো।

.
রাতটা পেরোলেই কাল কার্টো যেতে হবে ইকরাকে সাইন করতে। ইসাবেলাকে ইদানীং খুব বেশিই ঘুরঘুর করতে দেখা যায় আদৃতের পেছনে। সেদিন, যখন ইকরা আর আরমান শাহ দেখা করতে গিয়েছিল আদৃতের সঙ্গে তখনও ছিল ইসাবেলা। একেবারে সর্বক্ষণ আদৃতের পাশ ঘেঁষে। ইকরা মাথা চেপে বসে পরলো। তার জানতে হবে কেন আদৃত তাকে ডিভোর্স দিতে চায়। শুধুমাত্র মা বোনের সন্দেহ থেকে? একজন আইনজীবী হয়ে সে কিভাবে পারে অন্য কারো মুখের কথায় এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে? ইকরা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আচমকা সে তার আলমারি খুলে বের করে আনে কালো শার্ট, জ্যাকেট, আর জিন্স। পরিধান করে হাতে নেয় একটা চাবি। মাথার চুলগুলো পেছনে শক্ত করে বেঁধে নিয়ে বিছানার নিচ থেকে তুলে নেয় একটা চাবি। আর ড্রয়ার থেকে গান। কোমরে গুঁজতে গুঁজতে সে বেরিয়ে পরে। সিঁড়ি বেয়ে নামে যেন ক্ষোভ প্রকাশ করে। ভালোও বাসবে আবার যখন ইচ্ছে ডিভোর্স দেবে? কিভাবে কি আদৃত নিজেকে? ইকরা সোজা হেঁটে তাদের পার্কিং এরিয়াতে যায়। সেখান থেকে তার বাইকের নিকট। হেলমেট মাথায় দিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে সে শা করে বেরিয়ে পরে। ইউভান তখন হেঁটে যাচ্ছিল। তার পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া বাইকের দিকে সে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। ইকরা মাঝে মাঝে এমন রূপে বের হয়। তবে আজ কি উদ্দেশ্যে? কে জানে? ইউভান ভাবনা ছেড়ে নিজ পথে মনোযোগ দেয়। ওদিকে গাড়িতে বসে ঘুমিয়ে থাকা জারার ঘুম ভাঙে তখনই। সে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে নামতে গেলে ইউভান এসে দরজায় হাত লাগায়। অতঃপর ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে জারার হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলে

” এখানে খাবার আছে। তোমার রান্না করতে হবে না।”
” আম্মু বাইরের খাবার খায় না।”
” এগুলো বাইরের না। আমার বাসার খাবার। ”

অতঃপর জারা নিশ্চুপ হয়। আজ প্রথম একটু তার মন সায় দেয় ইউভান কে পরখ করার জন্য। সে ফিরে চায় আড়চোখে। এতোটা যত্ন!

আবারও গাড়ি চলতে শুরু করে। জারা ইউভানের উদ্দেশ্যে বলে

” আমি একা যেতে পারতাম। শুধু শুধু কষ্ট করছেন। ”

ইউভান জবাব দেয় না। শুধু ঠোঁটে ফুটে ওঠে তার শুকনো হাসি। হসপিটালের গেইটে।জারাকে নামিয়ে দিয়ে ইউভান তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ না জারা ভেতরে প্রবেশ করে। আজ নাকি ওরা হসপিটালে থাকবে। তাই ইউভান সিদ্ধান্ত নিলো চলে যাওয়ার। তার বুক আজ বড্ড ভারি লাগছে। বিষিয়ে উঠছে শুধু। এন অনুভূতির সঙ্গে ইউভান পরিচিত নয়। বুঝতে পারছে না কেন এমন লাগছে তার।

” থ্যাংক্স”

দু’পা দূরে গিয়ে জারা আবার পিছু ফিরে শব্দটা উচ্চারণ করে। ইউভান শুকনো মুখে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকে। যেন সে এই শব্দটা পছন্দ করতে পারলো না। জারা এরপর চলে যায়। আর ইউভান গাড়ি না ঘুরিয়ে অমার্জিত বেগে গাড়ি টানে। পাঁচ মিনিটের মাথায় সে পৌঁছে যায় একটা বারের সামনে। হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। সাজিয়ে রাখা হুইস্কির বোতলের মাঝ থেকে একটা বোতল নিয়ে সে বসে যায় সোফায়। মাথা পেছনে হেলিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে একদমে বোতলের অর্ধেকটা। অতঃপর অনুভব করতে চায়। কেন এমন হচ্ছে তার। ধীরে ধীরে সোফার দৈর্ঘ্য বরাবর শুয়ে পড়ে। শার্টের দু’টো বোতাম খোলে। মাথার চুল এলোমেলো করে। শূন্যতা তখন যেন আরও জেঁকে ধরে। এক পর্যায়ে তার মনে হয় ‘অবহেলা’ শব্দটা। এই শব্দের সঙ্গে সে সাত বছর বয়স থেকে পরিচিত। মাঝখানে ভুলে গেলেও জারা এলো বলে আবার ফিরলো অবহেলা। ইউভানের ঠোঁট জোরা অভিমানে উল্টে যায়। বড় বড় চোখ করে সে তাকিয়ে থাকে বারের ছাদে। হালকা হলুদ আলোর সঙ্গে বাজছে হালকা গান। সে ই গান অনুভব করার পূর্বেই সে বোতলের বাকি তরল শেষ করে। এরপর শূন্য বোতল মেঝেতে ফেলে রেখে ওয়েটার কে বলে আরেক বোতল দেওয়ার জন্য। ইতস্তত করে ওয়েটার দিয়ে যায়। সে বোতলের দুই ঢোক পান করতে না করতে
ইউভানের দুচোখ ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসে। তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে তার চোখ বন্ধ হয় ঘুমের তীব্রতায়। হাতে ধরা হুইস্কির বোতল তার বুকের ওপর লেপ্টে থাকে। পা জোরা সোফার বাইরে ঝুলে আছে। মাথা কাত হয়ে আছে সোফার অন্য পাশে।

বারে হালকা সুরে বাজতে থাকা গান যেন ইউভানের বুকে ব্যাথার ঢেউ তোলে। এতো যন্ত্রণার পরও তার শুনতে ভালে লাগে সেই গান৷ বন্ধ চোখে অনুভব করে

“I love you, but you don’t feel the same,
My heart is breaking, but you’re so far away.
I give you all, but you can’t even see,
This one-sided love, it’s killing me.”

গান অনুভব করার মাঝেই হুট করে ইউভান অনুভব করে এক অন্যরকম ছোঁয়া। তার গলা থেকে তা আধখোলা শার্টের আড়ালে প্রবেশ করতে না করতেই অত্যন্ত রেগে ইউভান ধরে ফেলে একটা নরম হাত। চোখ খোলে সে। হেলে থাকা তার মুখের ওপর একটা অচেনা মেয়ের মুখ অক্ষিপটে ভাসে।

” ওয়ান্ট? ”

ইউভানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে এক সেকেন্ড নষ্ট না হয় মেয়েটাকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দেয়। হাতে বেশ ব্যাথা পায় মেয়েটা। তার রূপ নিয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল তার এভারেস্টের চূড়ায়। কিন্তু ইউভানের ব্যবহার তাকে বাকরুদ্ধ করে দিল। ইউভান শুধু এটুকুতেই থেমে রইল না। রক্তচক্ষু নিয়ে মেয়েটার নিকট এগিয়ে গিয়ে বলল

” আমাকে ছোঁয়ার অধিকার একমাত্র একজনেরই আছে। আর সেটা তুমি নও। আন্ডারস্ট্যান্ড? ”

মেয়েটা কেঁপে ওঠে ইউভানের ধমকে। সঙ্গে পুরো বার থমকে যায়। উপস্থিত সবার দৃষ্টি এদিকে ঘুরে যায়। ইউভান পরোয়া না করে দ্বিতীয়বার বলে

” আমি শুধু একজনকেই চাই। আমি শুধু তাকেই চাই। অন্য কাউকে না”

একটা চিৎকার। যে ওয়েটার তাকে একটু আগে হুইস্কির বোতল দিয়ে গেছে সে এগিয়ে আসে। ইউভান তাদের পুরোনো কাস্টমার। সে এসে শান্ত করার চেষ্টা করে ইউভানকে। সোফায় বসিয়ে দেয়। ইউভান শান্ত হয় শুধুমাত্র নেশা লেগে যাওয়ার কারণে। সে হুঁশ হারিয়ে উল্টে পরে থাকে সেই সোফাটার ওপরে। বারের পরিবেশ আবারও স্বাভাবিক হয়। আর সেই মেয়েটা বন্ধুদের থেকে শান্তনা কুড়ায়। নিজে বলে বিরবির করে

” এই প্রথম কারো সঙ্গী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমন অহংকারী কেন? সুন্দর বলে কি অহংকার রাখার জায়গা পায় না? এমন সুন্দর কতো ঘুরঘুর করে আমার পেছনে।”

চলবে…..

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৬

হুঁশ হারানো মাতাল ইউভানকে আমাদ এর এসে নিয়ে যেতে হয় বাসায়। ভাগ্যিস ফোন করে ওয়েটার। পরিচিত ছিল বলে।

.
বাইক নিয়ে ইকরা উপস্থিত হয় আদৃতের বাসার সামনে। দারোয়ান কে দিয়ে ফোন করিয়ে আদৃতকে নিচে নামায়। অতঃপর মুখে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে অজ্ঞান করে। আগে থেকে ঠিক করে রাখা তার গাড়ি গেইটের নিকট আসতেই একপ্রকার কিডন্যাপ করে আদৃতকে।

.
চোখ খুলে আদৃত নিজেকে আবিষ্কার করে বদ্ধ রুমে। একটু ভাবতেই মনে হয় সে এই ঘরটা চেনে। হ্যা, এটা তার আর ইকরার কেনা বাংলো। যেখানে তারা জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে চেয়েছিল।

” জেগে উঠেছো? চলো এবার জীবনকে ঘুমানোর সুযোগ দেই।”

ইকরার কন্ঠস্বরে আদৃত অবাক হয়। সে বাকরুদ্ধ ভাব কাটিয়ে বলে

” তুমি? আমাকে…. কি এসব ইকরা?”

নড়চড় করতে গিয়ে আদৃত অনুভব করলো তার হাত পা বাঁধা। ইকরা এগিয়ে এলো। বন্দুকটা আদৃতের গাল থেকে ধীর গতিতে নামিয়ে এনে বুকে তাক করলো। বলল মোহনীয় সুরে

” তুমি কি ভেবেছিলে? ডিভোর্স দেবে আর আমি মেনে নেবো? কখনো ছাড়ব না তোমাকে। প্রয়োজনে দু’জন একসাথে মরবো যদি তোমার এই জীবন খুবই বোরিং লাগে। কিন্তু… কিন্তু আলাদা হবো না ”

আদৃতের গলা শুকিয়ে যায়। তবুও সে স্থির তাকিয়ে থাকে ইকরার পানে। ইউভান আর ইকরা এদের আচরণে কি কোন তফাৎ আছে?

.
জাবেদ সাহেব সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, পরিবেশও স্বাভাবিক। জারা আগের মতোই ভার্সিটি, কোচিং করছে, কিন্তু কোথাও যেন শূন্যতা। ইউভান আর পিছু ডাকে না, খেয়ালও রাখে না। অজানা এক অভাব কুরে কুরে খাচ্ছে জারাকে।

পাঁচ দিন হয়ে গেছে, ইউভানের কোনো খোঁজ নেই। অজান্তেই জারা ছাদ থেকে ওর এপার্টমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু শুধু দুলতে থাকা কালো পর্দা—তার বাইরে কিছুই নেই।

জারা কখন যেন একটু ভাবনায় পরে যায়। কি হয়েছে ইউভানের? কিন্তু জবাব মেলে না। ইদানীং গেইটের বাহিরে থাকা দু’টো গার্ডের একটা গার্ড কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জারার দিকে। জারা দ্রুত পেরিয়ে যায় সেই জায়গাটুকু।

.

নিশ্চুপ কালো রাত। বাতাস পর্যন্ত যেন থমকে আছে। ইউভান বসে আছে ঘরের এক কোণে—উষ্কখুষ্ক চুল, অবসন্ন চোখ, গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকা এক আগুন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড কাঁপছে থরথর করে, আতঙ্কে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ওর।

ইউভান ধীর লয়ে বন্দুকটা তোলে, ঠান্ডা কণ্ঠে ফিসফিস করে,

” আমি একটু অসুস্থ হতে না হতেই জারার দিকে নজর গেলো তোর? এতো সাহস? ”

গার্ড কেঁপে ওঠে, কিছু বলতে গিয়েও গলা শুকিয়ে যায়। কিন্তু ইউভান অপেক্ষা করে না।

ঠাস!

এক মুহূর্ত, তারপর নিস্তব্ধতা। রক্তে ভিজে যায় মেঝে। ইউভান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। সামনে দাড়িয়ে থাকা আমাদ কে হুকুম দেয় এই নোংরা দ্রুত পরিষ্কার করা হোক। আমাদ লোক ডেকে ব্যবস্থা করে। তারও বড্ড বোকা মনে হয় এই নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকা লোকটাকে। সে কি জানে না বাড়ির প্রতিটি কোণায় আছে সিসিটিভি। জারার পদক্ষেপ ইউভান ঘর থেকে পরখ করে। সে শুধু জারার জন্য নরম। আর কোথাও তার কোমল রূপ দেখা যায় না।

.
বাসা থেকে নতুন ভোরে বের হয়ে জারা নতুন গর্ড দেখে চমকায় কিছুটা। তবে স্বস্তি পায়। দু’পা এগিয়ে যেতেই তাকে পাশ কেটে চলে যায় ইউভান। জারা অবাক হয় খানিকটা। আজ ইউভানের ব্যবহারে এমন কিছু ছিল যেন মনে হলো জারা তার বড্ড অপরিচিত।

দিনটা ইউভান আর জারা দু’জনেরই কাটলো ব্যস্ততায়। তবে এই ব্যস্ততার মাঝে মনের কোথাও জারা ইউভানের অস্তিত্ব টের পেলো। তার কি হয়েছিল? পড়াতে গিয়ে কখন যে জারা ধ্যানে পরলো তা সে নিজেও জানলোও না। হুঁশ ফিরলো এক দুষ্টু ছেলের কথায়

” ও ম্যাডাম, এডমিশনের আর বিশ দিন আছে। আপনার পেয়ারের কথা বাসায় গিয়ে ভাবিয়েন। এখন পড়ান।”

জারা থতমত খেয়ে যায়। হালকা ধমক আর জ্ঞান দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়।

.
জারা বাসায় ফিরে সন্ধ্যার বর্ণিল আলোকসজ্জায় হাঁটা হাঁটি করছিল। তখনই আমাদ যাচ্ছিল সেদিক দিয়ে। হঠাৎ সে কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। ডেকে ওঠে জারাকে। জারা কাছে যেতেই সে গাঢ় দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে

” আপনি কি ইউভানের ভালোবাসা অনুভব করতে পারেন না? আর কি করলে আপনি তার ভালোবাসা বিশ্বাস করবেন?”

হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে জারা চমকে ওঠে। আমাদ দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। এই মুহূর্তে ইউভানকে সে হসপিটালে রেখে এসেছে। বার থেকে ফেরার পর প্রচন্ড জ্বর। আর তারপর আজ হঠাৎই বুকে ব্যাথা। গাত রাতগুলো পার করেছে জন্ম মৃত্যু নিয়ে ভেবে ভেবে। নারী চিৎকার করে কাঁদতে পারে। কিন্তু পুরুষ? পারে না। একটু দুঃখ মুখ ফুটে বলতে পারে বন্ধুদের নিকট। কিন্তু ইউভান যেন সেটাও পারে না। যা হয় তা তার বুকের ভেতরেই বন্দী থাকে। আমাদ এর ভীষণ রাগ হয় জারার ওপর। সে এমন করেই বলে

” আপনি কি জানেন সে আপনাকে কতদিন হলো ভালোবাসে? পাঁচ বছর ম্যাম। এই পাঁচ বছরে সে কত মেয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে আপনার ধারণা নেই।”

আমাদ আর কিছু বলতে পারে না। সে হঠাৎ জারাকে অনুরোধ করে তার সঙ্গে কোথাও যাওয়ার জন্য। জারা কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যায়। আমাদ তাকে উপস্থিত করে বেজমেন্টের ভারি লোহার দরজার সামনে। খুলে দিয়ে সে বাহিরে দাড়িয়ে থাকে। আলো জ্বালিয়ে দেয়। জারা ভেতরে প্রবেশ করে বাকরুদ্ধ হয়। প্রতিটি জিনিস তার চিনতে বেগ পেতে হয়। নতুন ঝকঝকে চকচকে করে রাখা হয়েছে। সংরক্ষণ করা আছে তার ছোট ছোট জিনিসও। কেউ এতোটা যত্ন করে জারাকে তা ভেবেই যেন তার বুক কেঁপে ওঠে। কিভাবে? কেউ কিভাবে পারে এতোটা যত্ন করে পুরোনো জিনিস আগলে রাখতে?

.
বেজমেন্টে ঢোকার আগে যে অনুভূতি সুপ্ত ছিল তা যেন বাহিরে আসার পর জাগ্রত হলো। বুকটা ধুকপুক করছে জারার। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। তার ভাবতেও কঠিন লাগছে যে সে ইউভানকে দেখতে চায়। তার জন্য মনে জমেছে ঝাঁক ঝাঁক দুশ্চিন্তা। আমাদ কে অনুরোধ করেই ফেলে জারা।

” ইউভানের সঙ্গে দেখা করা যাবে? ”

.

হাসপাতালের সাদা আলোতে ইউভানের ফ্যাকাসে মুখটা আরও মলিন দেখাচ্ছে। নিথর হয়ে শুয়ে আছে সে, চোখ বন্ধ, নিঃশ্বাসের ওঠানামা ধীর কিন্তু স্থির। ডাক্তার বলেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে তার শরীর ভেঙে পড়েছে।

জারা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই আমাদ এর সঙ্গে তার এখানে আসা। জারা দাড়িয়ে অপলক দেখে ইউভানকে। এগিয়ে যায় ধীর পায়ে। বেডের পাশে দাড়াতেই অসুস্থ ইউভান চোখ খোলে। জারা কিছুটা চমকে ওঠে। তবে পরমুহূর্তেই ইউভানের মুখের হাসিতে সে মনের ভাব লুকিয়ে রাখে। ইউভান ধীর কন্ঠে বলে

” তুমি? ”

জারা মাথা নাড়ে। ইউভাম আলতো করে জারার মুঠ করা হাত নিজের হাতে রাখে। অতঃপর বুকের ওপর। বলে মিনমিন করে

” এখানে এসেছো কেন?”
” একটা বোকা ব্যারিস্টারকে দেখতে এলাম।”

ইউভান হাসলো। পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেলেও সপ জারার হাত ছাড়ার নাম নিচ্ছে না। জারা চুপ রইলো। তবে একটু পরই সব জড়তা বিসর্জন দিয়ে শুধালো ইউভানকে

” পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আমিই কেন ব্যারিস্টার সাহেব? এই জারার জন্য কেন এতো অপেক্ষা? ”

“তোমাকে ছোঁয়ার আগেই যে স্পর্শ অনুভব করেছি, তা হৃদয়ে এত গভীর দাগ কেটেছে যে ভুলে যাওয়ার সাহসও নেই।”

জারার চোখ ছলছল করে। অজান্তেই টুপ করে গড়িয়ে পরে এক ফোঁটা অশ্রু। আলভি ঠিক তার বিপরীত ছিল। সে ছুঁয়েই কেবল অনুভব করেছে। কখনো যেন মন থেকে চায়নি জারাকে। রূপের মোহে আটকে জারাকে নিয়ে ঘর বেঁধেছিল।

” আপনাকে আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?”

” হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করবে। ”

জারা হাসে।

” যদি না করি? ”

” তাহলে তোমার বিশ্বাস করার জন্য যে হৃদয়টা আছে সেটাই থাকবে না। তুমি আর আমি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে। আল্লাহ হাফেজ। পরকালে সংসার করবো। কিন্তু তোমার সংসার আমার সঙ্গেই করতে হবে। ”

চলবে…