ধোঁয়াশার শেষে পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
23

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৭

আকাশটা একদম পরিষ্কার, নীলের মাঝে সাদা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। বাতাসে হালকা উষ্ণতা, কিন্তু গরম নয়—একদম আরামদায়ক। চারপাশে লোকজনের হাসির শব্দ, কেউ গল্প করছে, কেউ ছুটোছুটি করছে। গাছের পাতাগুলো রোদে চকচক করছে, পাখিরা নাচানাচি করছে ডালে ডালে। এমন একটা দিনে মন আপনাতেই ভালো হয়ে যায়, মনে হয় হাসিটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

ইউভান চোখে সানগ্লাস দিয়ে পকেটে এক হাত রেখে বেরচ্ছিল কোথাও। এখন সে সুস্থ। দুদিন হলো বাসায় ফিরবেছে। জারাদের বাসার সামনে যেতেই তার নাকে ভেসে আসে খাবারের ঘ্রাণ। আর বাড়ির মেইন দরজায় দেখা যায় জারাকে। পরনে তার লাল পাড়ের ঘিয়া রঙের শাড়ি। হাত ভর্তি ঝলমল করা পাথর বসানো চুড়ি। উন্মুক্ত চুলে দোলনার মতো করে রাখা হয়েছে একটা বেলি ফুলের গাজরা। ইউভান চোখ সরাতে পারে না যেন। হঠাৎ বাহিরটা ঝাড়ু দিয়ে জারা ফিরে চায় ইউভানের দিকে। দু-জনের দৃষ্টি একত্রিত হতেই জারার গাল লাল হয়ে আসে। ইউভান তখন হাতের ইশারায় ডাকে। জারা নাড়িয়ে মানা করে। ইউভান ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে নিজেই যখন যাওয়া জন্য উদ্দত হয় তখন জারা চটজলদি দরজা বন্ধ করে এগিয়ে যায় ইউভানের কাছে। ইউভান জারার দিকে ঝুঁকে পরে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়। বেলি ফুলের মিষ্টি সুবাসে তার মনটা ভরে ওঠে। অনামিকা আঙ্গুলে জারার থুতনি উঁচু করে। জারার চোখের মণি ছোটাছুটি করে।

” ইশ! পুরোই আমার বউ, আমার বউ লাগছে। ”

জারা নিজের অনামিকা আঙ্গুলে ইউভানের বুকে ধাক্কা দেয়। ইউভান হালকা পিছিয়ে যেতেই জারার বদন মুক্ত হয়।

” শখের ওপর বৃষ্টি পড়ুক। ”

ইউভান মুখটা গোমড়া করার ভান করে। অতঃপর হঠাৎই পকেট হাতড়িয়ে একটা চাবির রিং বের করে আনে। আচমকা জারার হাতটা ধরে আংটির মতো করে পরিয়ে দেয় রিং। বলে

” ছোট বোনের আগে বড় বোনের ইঙ্গেজমেন্ট হওয়া জরুরি।”

জারা থতমত খেয়ে যায়।

” কি করছেন এসব?”

” পাত্রী পছন্দ হয়েছে তাই আংটি পড়ালাম। ”

“এটা আংটি? এটা কিসের চাবি? কি করবো এটা দিয়ে আমি?”

” এটা আমার ঘরের চাবি। চাইলে তুমি লুটপাট কোরো। যেমন করে আমার মনের ঘরে লুটপাট করেছো!”

জারার অভিব্যাক্তি মিশ্র। সে অবাক এবং লাজুক ভাবে দাড়িয়ে রইলো। ইউভান যেন পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করলো খুব শীঘ্রই জারা এই চাবির ঘরের ঘরওয়ালী হতে যাচ্ছে। ইউভান হেঁটে চলে গেলো এরপর। জারা চাবির দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর হাসলো। ইউভানের পাগলামি আজ খারাপ লাগেনি। মন চাইছে অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে।

.
আদৃতের বাড়ির লিভিং রুমে চাপা উত্তেজনা। বড়সড় একটা কাঠের সেন্টার টেবিলের চারপাশে সবাই বসে আছে। আদৃতের বাবা-মা, বোন, কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়—সবাই একরকম থমথমে মুখে ইউভান আর ইকরার দিকে তাকিয়ে আছে।

ইকরা বেশ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেও তার ভেতরে একরকম অস্বস্তি কাজ করছে। ইউভান কিন্তু পুরোপুরি নির্লিপ্ত। যেন সে জানেই না এখানে কী হচ্ছে।

আদৃতের বাবা গম্ভীর গলায় বললেন,

” দু’দিন পরপর তোমার বোন কি শুরু করে? একবার বলে ডিভোর্স দেবে আবার বলে দেবে না।”

ইউভান গলা পরিষ্কার করে বলে

” একদম। এই নাটকে সমান তালে কাজ করছে আপনার ছেলেও।”

আদৃতের বাবা থতমত খেয়ে যায়। আদৃত রেগে বলে

” তুই কি সব ঠিক করতে এসেছিস নাকি ভাঙতে? ”

” আমি আসলে জানিনা কেন এসেছি। বাবা পাঠিয়েছে তাই আসা।”

” তোর বোন আমাকে কিডন্যাপ করে। সিরিয়াসলি ভাই? বর কে কেউ কিডন্যাপ করে? ”

” আমার বোন বলেই কিডন্যাপ করেছে। আমি ওর জায়গায় থাকলে শুধু কিডন্যাপ না গানশুট করে দিতাম।”

আদৃত বিরবির করে বলে

” তোমার বোন বাকি রাখেনি এটা।”

” আমি যা করিনি তার দোষ আমি আমার ঘাড়ে নেবো কেন? বাবা, আমার নামে যে মিথ্যা অপবাদ গুলো দেওয়া হয় তার সব আদৃত বিশ্বাস করে। অথচ আমি এসবের মধ্যে নেই। কেন আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করা হয়? আদৃত একবার বলুক ও নিজ থেকে চায় না আমার সঙ্গে থাকতে তাহলে আমি তাকে ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু জোর করে তাকে দিয়ে এটা করানো হচ্ছে। কেন?”

আদৃতের বাবার উদ্দেশ্যে একথা বলতেই সকলে অবাক হলো। শুধু আদৃত, তার মা আর বোন ছাড়া। ইউভানের চোখ সরু হলো। কেমন অপবাদ? সে জানে না। তবুও বলল

” না করেছিলাম এই সম্পর্কে আসার আসার জন্য। কিন্তু নাচতে নাচতে এই ইমোশনাল চিজ কে বিয়ে করলি। তোর জন্য এখন আমার সময় নষ্ট. ”

ইকরার কানে ছোট ছোট করে একথা বলতেই ইকরা পা দিয়ে ছোট খাটো একটা লাথি উপহার দিল ভাইকে। ইউভান গরম চোখে তাকিয়ে নিশ্চুপ বসে রইলো। অতঃপর ইকরা আর তার ননদের বাকবিতন্ডায় পুরো ঘটনা বুঝে নিয়ে কথা বলে উঠলো। উকিল হওয়ার সুবিধার্থে কথার মারম্যাচ ধরে ইকরার শাশুড়ীর মুখে চুনকালি মেখে উঠে দাঁড়ায় ইউভান।তখনই আদৃতের বোন রাগে টেবিলে থাকা ফুলদানি ইকরার দিকে ছুড়ে দিতে গেলে ইউভান একটা ধমকে সাবধান করে দেয়। আদৃত এতোক্ষণে অবাক হয়ে সব দেখছিল। তার মাথা কাজ করছে না। ইকরা যেদিন তাকে তুলে নিয়ে গেলো সেদিন ফোনের আপত্তিকর ছবির কথা আদৃত বলেছিল। ইকরা কোল এর নিকট ফোন করে তা প্রমাণ করে এটা ফেইক। অতঃপর ঘটনা বলে কোল। সে আসলে ইকরাকে ভীষণ পছন্দ করতো।

এসব বিষয় ছেড়ে এসে যদি এখন বলা হয় ইকরার উঠতে বসতে দোষ ধরে তা আদৃতের কাছে উপস্থাপন করার বিষয়গুলো ছিল ভুয়া। আদৃতের মায়ের আসলে পছন্দ নয় এমন মেয়ে। মেয়ের না আছে বাবার বাড়ি, না আছে সঙ্যতা, না আছে সালাম, কালাম। এমন বউ কে চাইবে? আদৃত কষ্ট পায়। সে ইকরাকে বুঝিয়ে অনেকটা পরিবর্তন করে ফেলেছিল। আর কেউ না বুঝলেও তার এটুকু বোঝা উচিত ছিল। তার ভাবা উচিত ছিল মা হারানো, ভাইয়ের আদর না পাওয়া আর বাবার শাসন না পাওয়া একটা মেয়ের জীবন আর কতটাই বা গোছানো হতে পারে? সে তো একা নিজের জীবন টেনেছে। বেঁচে আছে যত্নহীন এটুকুই যথেষ্ট।

বিচার, আচার এখানেই সমাপ্ত। সকলে চলে গেলো নিজ ঘরে। আদৃত ইরাকে ঘরে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো প্রায় তিন মিনিট নীরব তাকিয়ে দেখে। ইকরা অভিমানে দূরে সরার চেষ্টা করলো। আদৃত অস্ফুট সুরে বলল

” সরি।”

ইকরা নিশ্চুপ।

” গুন্ডি বউটা, সরি।”

ইকরার নাক লাল হয়ে আসে। আদৃতের বুক থেকে মাথা তুলে বলে

” আজ গুন্ডামী না করলে তুমি তো ডিভোর্সই দিয়ে দিতে।”

” তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। তখন কি হয়েছিল… বাদ দাও। ভুলে যাও।”

ইকরা দূরে সরায় আদৃত কে। ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে

” না না বাবা, থাকবো না। আমি বরং ইউভানের সঙ্গে চলেই যাই। ডিভোর্স পাঠিয়ে দেবো। তুমি বরং ইসাবেলার সঙ্গে…. ”

ইসাবেলার কথা মনে উঠতেই ইকরা আবার অগ্নি ঝড়া চোখে আদৃতের দিকে।

” ইসাবেলার সঙ্গে এতো ভাব কিসের? ”

আদৃতের মুখটা শুকিয়ে আসে৷

” ভাব কি? ও আমার বোন জাস্ট এটুকুই। ”

ইকরা আরো কিছু বলার আগেই দরজায় টোকা পরলো। ইউভান দাড়িয়ে আছে। আদৃত ভেতরে আসার আহ্বান জানায়। ইউভান প্রবেশ করে। ইকরার শশুর বাড়িতে এই নিয়ে ইউভান তিনবার এলো। বিয়ের আগে একবার বন্ধু হিসেবে আদৃতের বাসায় এসেছিল ইউভান। এটা পাঁচ ছয় বছর আগের কথা। এরপর বিয়ের দিন। আর আজ। সে ঘরটা তাকিয়ে দেখলো। ইকরার মুখ গোমড়া হল ভাইকে।

” আমি চলে যাচ্ছি। ওকে দেখে রাখিস। ”

কথাট বলতেই ইকরা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়।

” তুই এই কথা বললি?”

ইউভান ফিরে চায়। ঠোঁট উল্টে কাঁধ ঝাকিয়ে জবাব দেয়

” হুম। বাবা বলে যাওয়ার আগে তাই আমিও বললাম। ”

ইকরার কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করলো। ইউভনাকে আজ ভাই মনে হচ্ছে।

” যাহ, তাড়াতাড়ি দূর হ। তুই চোখের সামনে থাকলে আমার ভাল লাগে না। ”

” এজন্য তোর ধারেকাছেও আসি না আমি। তুই আম্মুর পেটে থাকতেও আমাকে শান্তি দিসনি। আবার বাইরে বের হয়েও শান্তি দিচ্ছিস না।”

মায়ের কথা বলতেই হঠাৎ দু’জনেই চুপ হয়। একটা অদৃশ্য দেয়াল আবারও দাড়িয়ে যায় তাদের মাঝখানে। ইউভান দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে যায়। আদৃত পেছনে ছোটে। দুপুরের খাবার না খেয়ে যাবে ইউভান? ইকরা ঠাঁই দাড়িয়ে থাকে। চোখের কোণে জমে এক ফোটা জল।

চলবে….

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৮

পাত্রপক্ষ উপমাকে দেখতে এসেছিল, কিন্তু উপমা সোজাসাপটা জানিয়ে দিল—সে এই বিয়েতে রাজি নয়। মা-বাবা প্রথমে রাগ করলেও শেষমেশ বুঝে নিল, এখন তো এসব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে।

তারা জানতে চাইল, তাহলে উপমার পছন্দ কে?

উপমা মাথা নিচু করে বলল—”কাব্য।”

তার এই প্রেমটা হয়েছিল একদম অদ্ভুতভাবে—আচারের বয়ামের কারণে। প্রথমবার নিতে গিয়ে দেখা, দ্বিতীয়বার দিতে গিয়ে। আর তখনই সেই বখাটে ছেলেটা হাসতে হাসতে বলেছিল,

“এই যে ঢাবি? ভাল্লাগছে। বউ হবা আমার? ভবিষ্যৎ বউ?”

উপমার মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে কেন রাজি হয়েছিল? সে নিজেও জানে না। হয়তো প্রেমে পড়তে কোনো কারণ লাগে না, ভালো লাগার জন্যও কোনো ব্যাখ্যা দরকার হয় না।

প্রেমে সুখের সমাপ্তি হলেও, কেউ না কেউ দুঃখী হয়েই থাকে—হুমায়ূন আহমেদের এই কথার মতোই আমাদের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

যখন খবরটা রটে গেল যে কাব্যের পরিবার উপমাকে দেখতে আসবে, আমাদ কিছু বলতে পারেনি। শুধু চুপচাপ শুনেছে, বুঝেছে, সহ্য করেছে। উপমাদের বাসায় দাওয়াত পড়েছে, এমনকি ইউভানও যাবে। ইকরা তো এখন শ্বশুরবাড়িতে সংসারী। উপমার মা-ই দাওয়াতটা দিয়েছেন। দু’টো ছেলে শুধু থাকবে এই রেডিডেন্সে। পরিবার নেই ওদের। ডাকাই যায় উপমার ছোট খাটো অনুষ্ঠানে।

আমাদ বসে আছে ঘরে। হাতে মায়ের আংটির নীল বাক্স। একটা স্বপ্ন সে বুনেছিল—একটা ছোট্ট আশ্রয়, যেখানে উপমা থাকবে, তার পাশে। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন চূড়মার হয়ে গেছে।

ধীরে ধীরে সে আংটিটা তুলে নেয়, আলমারির গুপ্ত ড্রয়ারে রেখে তালা লাগিয়ে দেয়। যেন আর কখনো সেটা চোখে না পড়ে। যেন আর কখনো সেই স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে না বেড়ায়।

.
এইতো দিন গেলো এভাবেই। উপমার আকদ হয়ে গেলো। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হলো। আমাদ কাজের অজুহাত দিয়ে থাকলো না। থাকলো কেবল ইউভান। সেদিন জারা সাদা রঙের এক পার্টের একটা গাউন পরলো। ইউভানের উপহার ছিল যা। কেন যেন পড়লো সে। কেন? সে উত্তর আজও খুজতে চায় না জারা। যদি খুজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অন্যরকম সত্য তবে তা অস্বস্তিকর হবে। তবে মানতেই হয় তাকে লেগেছিল চমৎকার। ইউভান সেদিন প্রথম বারের মতো কি? বোধহয় হ্যা। প্রথম বারের মতো মাগরিবের নামাজ পড়তে গেলো দল বেঁধে। পরনে ছিল তার কালো রঙের পাঞ্জাবি। কাব্য, জাবেদ সাহেব, কাব্যর বাবার সঙ্গে। মনে কেমন ঢিপঢিপ ভাব ছিল তার। মাথায় ছিল টুপি। সে কখনো বাবার হাত ধরে মসজিদে যায়নি। সেখানে গিয়ে সে এক ঝাঁক শান্তি কুড়িয়ে বাসায় ফেরে। তারপর… তারপর তার ব্যআহারে ছিল ক্ষণিকের পরিবর্তন। জারা তার ধারে কাছেই ছিল। ইউভানও কেন যেন হাত লাগিয়েছিল বিশ থেকে পঁচিশজন আসা ছেলে পক্ষের খাতির করতে। কিন্তু মূল বিষয় হলো ইউভান একবারের জন্যও তাকালো না জারার দিকে। ভ্রু কুঁচকে যায় জারার। অন্য সময়ে সে চোখের পলক ফেলার কথা ভুলে যায়। কিন্তু আজ?

” মাথায় টুপি দিয়ে গুনাহ করতে পারবো না কুইন। টেক অ্যা লিটল সরি বাট নট সরি।”

জারা যেন নিজের উত্তর পেয়ে যায়। কাব্যর মায়ের প্লেটে মিষ্টি দিতে হতবুদ্ধি জারার লেগে যায় পাঁচ মিনিট। ইউভান! কি তাজ্জব কথা তার।

.
আত্মিয়রা বিদায় হলে জারা নিজ কক্ষে ফেরে। টেবিলের ওপর নজর পরতেই দেখা মেলে একটা নোট। তাতে লেখা

” আমার সাদা পরী, তুমি জানো না সাদা রঙে তুমি কতটা সুন্দর! এতোটাই মিষ্টি তুমি যে দুবার তাকাতেই আমার শুগার বেড়ে গেছে। ”

জারা হাসলো। ধীরে ধীরে উচ্চ হাসিতে তা পরিণত হলো। মনের ঘরের দুয়ার যেন খুলে যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে। নারী যত্নের পাগল। শত্রুর যত্নই তাকে প্রেমে ফেলতে পারে আর সেখানে ইউভান জারার শুভাকাঙ্ক্ষী, হার না মানা প্রেমিক। জারা নোট রেখে বারান্দায় দাঁড়ায়। হালকা শীতল হাওয়া গা ছুয়ে যায়। তবে এই সুন্দর মুহূর্ত নিমিষেই কেটে মনে উঁকি দেয় কৌতুহল। ইউভানের বাসার বামে একটা কবর দেখা যায়। সেখানে শয়ন দশায় দেখা মেলে ইউভানেরও। সে মনে হলো বিরবির করে কিছু বলছে। মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আকাশ পানে। আবার কখনো পাশ ফিরে কবরের দিকে। জারার বুঝতে বাকি থাকে না এটা ইউভানের মায়ের কবর। তার মনেও এক টুকরো দুঃখ উঁকি দেয়। মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি ইউভান তার মা’কে মে*রে ফেলতে পারে? ভাবতে গিয়ে জারার শরীর শিউরে ওঠে। একটা খু*ন। তারপর আবার ইউভানের মা তুল্য কাজের মহিলা দিলরুবাও খু*ন? এটা সম্ভব? ইউভান এটা করতে পারে?

.
জারার সঙ্গে ইউভানের ভাবটা বেশ ভালো জমে উঠছিল। কিন্তু এটা ইউভান এখনো জানে না জারা তাকে ভালোবাসতে পারলো কিনা। ইউভানের ইদানীং একটাই টেনশন। সে কিভাবে রাজি করাবে জারার মা-বাবা কে। জাহানারাকে দেখলে একটু অন্যরকম লাগে। যেন উনি ইউভানকে পছন্দ করেন না। আচ্ছা মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে? উঁহু! এটাতে জারা কষ্ট পাবে। ইউভান চায় না জারা কষ্ট পাক। কিন্তু ইউভানের এই টেনশন তো মুক্ত করে দিতে হাজির হয় ইউভানের বাবা সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউভানের অফিসে সেদিন যাওয়ার পর ঘন্টা তিনেকের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমান। আজ আবার এলেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে। যা না করলে তার নাক কাটা যাবে। ইউভানের ভবিষ্যত নষ্ট হবে। আর সবচাইতে বড় কথা, বাবা হিসেবে তিনি এমন একটা কান্ড কখনোই মেনে নিতে পারবেন না। কি নেই তার ছেলের? দেশের শীর্ষ ধনীর তালিকায় খুজলে তাকে পাওয়া যাবে। সৌন্দর্যের বিচার করলে ইউভান সবার ওপরে থাকবে আর সে কিনা বিয়ে করবে সামান্য একটা জারা কে? তাও আবার কিনা এক বাচ্চার মা সঙ্গে ডিভোর্সী। হোক না বাচ্চাটা মৃত। তবুও তো।

” আমি যতদূর খোঁজ নিয়ে দেখলাম তোমার ফ্যামেলির টাকার অভাব খুব একটা নেই। বলতে গেলল আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলো তাই না?”

শুনশান এক রেস্টুরেন্টে পায়ের ওপর পা তুলে প্রথমে কথা বললেন আরমান শাহ। পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা। জারা আসার পর পরখ করে বুঝলো এটা হয়তোবা কিছু সময়ের জন্য বুক করা হয়েছে।

” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। ”
” তাহলে ইউভান কে হাত করতে চাইছে কেন?”
” আপনার কথাটা যদি শুদ্ধ করে দেই তাহলে বাক্যটা এমন হবে, ইউভান আমাকে চাইছে। ”
” আর তুমি চাইছো না?”

জারা এ প্রশ্নের উত্তর হুটহাট দিতে পারলো না। বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সে কি চায় ইউভানকে? এটা ধোঁয়াসা।

” শোন জারা, আমার একটাই ছেলে। আমার সবকিছুর উত্তরসূরী। তুমি ওকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা কোরো না। তোমার যদি পারিবারিক শিক্ষা বলতে কিছু থাকে তাহলে আশা করি ইউভানের সঙ্গে মিশবে না আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নেবে না। তোমার মতো মেয়েদের সমাজের জায়গাটা চিনে রাখা উচিত। বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িও না।”

জারার হাত পা কাঁপছে। ঘামছে সে ক্রমাগত। চোখ তুলে তাকাতে লজ্জা লাগছে না। এতোটা অপমানিত হয়তোবা সে জন্মের পর কখনো হয়নি।

” আপনি আমার ফ্যামেলি স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলতে পারেন না আঙ্কেল। আর আমি ইউভানকে কখনো হাত করতে চাইনি।”

আরমান শাহ উঠে দাঁড়ায়। জারার কথা যেন তার কান অব্দি পৌঁছায়নি এমন করে সে ঘড়িতে নজর দিয়ে বলে

” ওকে, আমার সময় শেষ। যা বললাম মনে রেখো। আমি এর বাইরে কোন স্টেপ নিতে চাচ্ছি না। না তোমার পরিবারের ওপর আর না তোমার ওপর।”

একটা হুমকি। জারা হতভম্ব হয়ে গেলো। আরমান শাহ হেঁটে বেরিয়ে গেলেন রেস্টুরেন্ট থেকে। জারা কিছু সময় ওভাবেই বসে থাকে। ধ্যাম ভাঙে তার একটা লোকের কন্ঠে। যে সম্ভবত আরমান শাহর এসিস্ট্যান্ট।

” ম্যাম আপনি কিছু খাবেন? এজন্য বসে আছেন? আপনি বলুন কি খাবেন। আমি অর্ডার আর বিল পে করে চলে যাবো। কাজ আছে। ”

জারার এবারের অপমান সহ্য হলো না। এ যেন একটু বেশিই ছিল। ইউভানের বাবা তার সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করে? জারা রাগ আর দুঃখ নিয়ে টেবিল থেকে নিজের ব্যাগ উঠিয়ে নিল। অতঃপর গটগট করে বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। দৃষ্টি পরে রইল সোজা দিকে। অপমানে তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে আপনাআপনি জল। সামনের দৃশ্য বারংবার ঘোলাটে হচ্ছে। এমন সময় বেজে ওঠে জারার ফোন। ইউভান করছে। জারা ধরলো না। আবার কাটলেও না। রিংটোন বন্ধ হতেই সোজা সুইচ অফ করে দিলো এই ঝামেলার জিনিসটা। হাটতে হাটতে সে যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল ইউভানের বাসায় যাবে নাকি নিজ বাসায় তখনই ঘটে আরেক অঘটন। আকস্মিক পাশ দিয়ে একটা কালো গাড়ি যাওয়ার সময় জারাকে উঠিয়ে নেয় দু’টো লোক। জারার বু্ক ধ্বক করে ওঠে। সে কিছু বলার আগেই বা চিৎকার করার কথা ভাবার আগেই মাস্ক পড়া মেটা মতন একটা লোক তারনাকে স্প্রে করে কিছু। অতঃপর চোখ দু’টো ঘোলা হয়ে আসে। সবই ফিকে হয়। মস্তিষ্ক অসার হয়ে যায়।

চলবে….

#ধোঁয়াশার_শেষে
#আলিশা_আঞ্জুম
পর্ব ২৯

অন্ধকার ঘরটা যেন একটা দমবন্ধ করা খাঁচা। চারপাশে ধাতব গন্ধ, আর্দ্র দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব আর একটা শীতল নীরবতা। জারার মাথাটা ঝিমঝিম করছে, হাত পা যেন অবশ হয়ে আছে।

তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, বুকের মধ্যে আতঙ্কের শীতল একটা স্রোত বয়ে যায়। কে করলো এটা? কেন? মাথার ভেতর হাজারো প্রশ্নের ঝড় ওঠে, কিন্তু কোনো উত্তর মেলে না।

দরজাটা শক্ত কাঠের, বাইরে থেকে বন্ধ। জানালাগুলোও নেই। শুধু এক কোণায় একটা টিমটিমে হলুদ আলো জ্বলছে, যা এই বন্দিত্বের অনুভূতিকে আরও গা ছমছমে করে তোলে।

.
ইউভান জারার ফোন বন্ধ পেয়ে পাগল প্রায় হলো। বাসায় নেই। কোচিং এ নেই। ভার্সিটিতে নেই। জারা যাবে কোথায়? দিন গড়িয়ে রাত হলে ইউভান আর অপেক্ষায় থাকতে পারলো না আমাদ কে লাগিয়ে দিল পুরো শহরে খোঁজ করার জন্য। মিসিং রিপোর্ট করা বাকি থাকলো না। পুলিশের গাড়ি বেরিয়ে পরলো। বেরিয়ে পরলো ইউভানও। হুট করে জারা কোথায় যাবে? আচ্ছা খারাপ কিছু হয়ে যায়নি তো? ইউভান অনেক জোরে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। বিরবির করে বলল

” না, এমন কিছু না৷ এমন কিছু হতে পারে না ”

.
জারা মা বাবার কপালে হাত। রাত যত গভীর হচ্ছে ততই তারা ভেঙে পরছে। কান্না করছেন জাহানারা। আত্মীয়দের বাসায় খবর নেওয়া শেষ। কোথাও নেই জারা। উপমা মাথায় হাত রেখে বসে আছে। তার হঠাৎ মনে হয় ইউভানের কথা। সে সোজা চলে যায় ইউভানের এপার্টমেন্টে। কিন্তু এপার্টমেন্ট ফাঁকা ছিল। ইউভান নেই। ইকরা এসেছে এবাড়িতে। তার সন্দেহ ইউভানের দিকে। সঙ্গে তার বাবার দিকেও। সে নিজ ঘরে বসে বাবাকে ফোন করলো

” তুমি জারার ক্ষতি করার কথা ভেবেছো বাবা?”

আরমান শাহ অবাক হন। তার মেয়ে তাকে এতোটা অবিশ্বাস করে? সে শুধু হুমকি দিয়েছে।

” কি বলছিস মা? আমি একজন ডাক্তার। মানুষের জীবন বাঁচাই। ”

ইকরা ফোন কাটে। এমন কাজ তার বাবা করার কথা নয়। কিন্তু ইউভান? সে তো ছোট বেলা থেকেই ওরই আপনজন দের ক্ষতি করে আসছে। জীবন নিয়ে আসছে। রাগের মাথায় সে কিছু করেনি তো? ইকরা আমাদ কে ফোন করে। আমাদ জানায় ইউভান এমন কিছু করেনি। ইকরা তবুও ইউভান কে ফোন করে। ফোন তুলতেই ইকরা বলে

“জারা কোথায়, ইউভান?”

ইউভানের কণ্ঠ গম্ভীর, চোখ উত্তেজনায় জ্বলছে।

“আমি কীভাবে জানব? আমিই তো তাকে খুঁজছি!”

“সত্যি?”
ইকরা অবিশ্বাসী স্বরে বলল।
“তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস, এটা তো আমরা জানি! তুই তাকে আঘাত করিসনি তো?”

“ইকরা!”

ইউভানের গলা ভয়ংকর শোনাল।

“আমি যদি জারার ক্ষতি করি, তাহলে আমার বেঁচে থাকার কোনো মানে থাকে না!”

ইকরা চুপ করে যায়। ইউভানের কণ্ঠে যন্ত্রণা ঝরে পড়ছে।

“শোন, আমি তাকে খুঁজে বের করব। আমি ওকে কোনোভাবেই হারাতে পারি না।”

ইকরা আর কিছু বলে না। ফোন কেটে যায়।

ইউভান গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। শহরের আনাচে-কানাচে খুঁজে চলেছে। কিন্তু কোথাও জারা নেই। ইউভানের চোখ মুখ লাল হয়ে আসে। বলে সে জারার উদ্দেশ্যে

” আল্লাহর কসম জারা, তুমি যদি নিজ থেকে পালিয়ে থাকো তাহলে আমি তোমাকে ছাড়বো না।”

.

অন্ধকার ঘুচিয়ে দিয়ে ঘরে এক ফালি আলোর সঙ্গে প্রবেশ করলো একটা পুরুষালী অবয়ব। হেঁটে এসে সে ধীরে ধীরে জারার পেছনে এসে দাড়িয়ে মাথায় বন্দুক তাক করল। জারা কেঁপে ওঠে। বন্দুক চলে যায় জারার পিঠে। আবার চলে আসে জারার কপালে। ছেলেটা একসময় বিরক্ত হয়ে বলল

” ইশ! বুঝতেই পারছি না কিভাবে মারবো।”

কন্ঠটা পরিচিত মনে হলো জারার। কিন্তু ঠিক ধরতে পারছকে না। ছেলেটা মলিন, আধ ভাঙা ঘরের নিস্তেজ আলো জ্বালিয়ে দিলো। আর তখনই দৃশ্যমান হলো তার অত্যধিক সুন্দর মুখ। চশমা ছাড়া তীক্ষ্ণ চেহারা। উঁচু নাক, সুগঠিত দেহ, আর ঠোঁটে মুচকি হাসি। যেন কোন রাজ্যর রাজকুমার। জারা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে ফিচেল কন্ঠে বলল

” আমাদ ভাই?”

আমাদ মাথা ঝাঁকাল। জারার সামনে থাকা চেয়ারে বসে তার শার্টের হাতায় হাত ছুয়ে বলল

” ইয়েস ভাবি। ওপস সরি, ছোট ভাইয়ের বউকে মেবি ভাবি ডাকতে হয় না তাই ন? নাম ধরে ডাকে। যাই হোক, তোমার জীবনের সল্প সময়ের এই মুহূর্তটুকুতে কিভাবে তোমাকে তোমাকে আপ্যায়ন করবো জারা বলো? বলতেই হবে। আফটার অল তুমি প্রথম বার তোমার ভাসুরের বাড়িতে এসেছো। তো বলো ভাইয়ের বুকের জিনিস তোমার শেষ ইচ্ছে বা তোমার কিছু খাওয়ার ইচ্ছে আছে? ”

জারা হতবুদ্ধি হয়ে যায় আমাদ এর কথা শুনে। সবই তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সে অনেকটা চিৎকার দিয়ে বলে

” কি আজেবাজে বলছেন আমাদ ভাই? আমাকে ছাড়ুন আমি বাসায় যাব।”

” আরে এতো উত্তেজিত হইও না। হার্ট অ্যাটাক হবে। তুমি হার্ট অ্যাটাকে মরলে আমার প্ল্যানই বৃথা। ”

জারা অবাক হয়ে জানতে চায়

” আপনি আমাকে মারতে চান?”

আমাদ উঠে দাঁড়ায়। তার ফোন বাজছে। জারার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে দিতে বলে

” অবশ্যই। ইউভানের সবকিছু কেড়ে নেওয়াই আমার জীবনের সবচাইতে বড় উদ্দেশ্য। এমনি এমনি ওর পেছনে চাকরের মত থাকি নাকি আমি? আমার জীবন থেকে যেভাবে ও আমার মা, বাবা, আমার হাসি কেড়ে নিয়েছে ঠিক সেভাবেই আমি ওর সব কিছু কেড়ে নেবো। ওর মা’কে মেরেছি, ওকে সবচাইতে বেশি আদর করা ওর দিলরুবা খালাকে মেরেছি এখন তোমাকে মারবো। এভাবে ইউভানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু কেড়ে নেবো।”

জারা অবাক হয়৷ এই আমাদকে সে চেনে না। সম্পূর্ণ আলাদা মনে হচ্ছে তার।

আমাদ ফোন রিসিভ করে। ওপাশে ইউভানের চিন্তিত সুর ভেসে আসে

” আমাদ, কিছু জানতে পারলে?”

” না স্যার। আর একটু লেইট হলে আমরা জারা ম্যামকে জীবিত পাবো কিনা বুঝতে পারছি না।”

” শাট আপ আমদ, বাজে কথা বন্ধ করে আমি যে কেইস গুলো লড়েছি তার প্রতিটি জায়গায় ভালো করে খোঁজো। হতে পারে অপজিটের কেউ অপহরণ করেছে। কুইক। ”

এরপরই ফোন কেটে দেয় ইউভান। আমাদ ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জারার পানে তাকিয়ে থাকে অনেক্ক্ষণ। অতঃপর চেয়ারে বসে বলে

” চলো জারা, তোমাকে একটু অতীত থেকে ঘুরিয়ে আনি। আসলে কি বলোতো আমার না গল্প করার মতো একটা মানুষও নেই। কারো সঙ্গে মনের কথা শেয়ার করতে পারি না। কিন্তু তোমার বোন উপমাকে অনেক ভালোবেসেছিলাম। ভেবেছিলাম গল্প করার একটা মানুষ হবে। আমারও একটা পরিবার হবে। কিন্তু সে-ও ফাঁকি দিল। আমার সাথেই শুধু অন্যায় হয় কেন জারা?

বলতে গিয়ে আমাদ এমন একটা ভাব করলো যেন ঘরের হলুদ আলোয় জারা দেখলো আমাদের চোখ চিকচিক করছে।

সেসময় আমাদ এর বয়স মাত্র চার বছর। আদুরে এক মিষ্টি বাচ্চা। মা মা ডাকে। বাবা বলেও ডাকে। কিন্তু কোল একটাই। মা আর মা। কোন পুরুষ দেখলেই সে থপথপ পা ফেলে এগিয়ে যায়। জড়িয়ে ধরে আলতো সুরে বলে

” বাপবাপবাবাবা”

আমাদ এর মা মাফ চেয়ে ছেলেকে দূরে সরিয়ে আনতেন। উনি ছিলেন ঠিক আমাদ এর মতোই সুন্দর। আর এই সৌন্দর্য ই কাল হয়। এই সৌন্দর্য সবার আগে চোখে পড়ে ইউভানের বাবার। পড়ুয়া দশায় বিয়ে করেন। আমাদের মা ছিলেন আরমান শাহর জুনিয়র। মাঝপথে বিয়ের পর লুকিয়ে সংসার। এরই মাঝে আমাদ এর জন্ম পরিবার কে জানালে আমাদ এর মা আরশিকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। উনি আরমান শাহর কথামত একটা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন। এরই মাঝে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন আরমান শাহ। সেখানে দু’বছর পর ইউভানের জন্ম হয়। তখন আমাদ এর বয়স চার। আরমান শাহ ধীরে ধীরে আরশির কাছে যাওয়া থামিয়ে দিলেন। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ইউভান আর ইকরাকে নিয়ে। ওরা ছিল জমজ।

চলবে…..