ধ্রুবতারা পর্ব-১৫+১৬

0
819

#ধ্রুবতারা
#পর্ব_১৫
#পুষ্পিতা_প্রিমা

নোহা ভার্সিটি থেকে ফিরতে না ফিরতেই রাহা যেন একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর। জড়িয়ে ধরে বলল
‘ নুহা আমার চকলেট দাও।
নোহা হতভম্ব। বলল
‘ ওহ রাহাপু আমি চকলেট কোথা থেকে দেব? রোয়েন ভাইয়া কি তোমাকে চকলেট দেয় না?
রাহা বলল
‘ ডাক্তার দেয়। তুমি ও দিবে।
নুহা বলল
‘ এখন চকলেট নেই।
রাহা বলল
‘ আমি ডাক্তারকে বলে দেব তোমার ও একটা বর আছে।
নোহা হতভম্ব। বিস্মিত। বলল
‘ রাহাপু তুমি কি পাগল? ও হ্যা তুমি তো পাগলই। আমার বর কোথা থেকে আসবে? রাহাপু এসব কথা আম্মার আব্বার সামনে বলবে না।
রাহা বলল
‘ বলব। তোমার বর তোমার পিছু পিছু আসছে। আমি দেখেছি।
নোহার কপালে ভাঁজ পড়লো।
‘ আমার বর? কেমন দেখতে সে? কোথায় দেখেছ?
রাহা বলল
‘ ওই তো এখন চলে গিয়েছে। তোমার গাড়ির পিছু পিছু এসেছে।
নোহা কপালে হাত দিল।
‘ ও মোর খোদা তুমি কারো দেখলা রাহাপু। ডিরেক্ট আমার বর বানায় দিলা? তুমি আসলেই পাগল।
রাহা বলল
‘ পাগল বলবে না। আমি পাগল নই।
নোহা যেতে যেতে বলল
‘ তুমি পাগল। পাগল পাগল।
রাহা গর্জন করল। বলল
‘ আমি পাগল নই।
নোহা গেইটের কাছে গিয়ে বলল
‘ তুমি পাগল। পাগল। পাগল।
রাহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘ ডাক্তারকে বলে দেব।
নোহা হেসে ফেলল। বলল’ রাহাপু ভালো হয়ো যাও তাড়াতাড়ি। ভালো লাগেনা। আগের রাহাপুকে মিস করি । ভালো হয়ে যাও আর পাগল ডাকব না।
রাহা বলল
‘ আমি পাগল নই।
নোহা বলল
‘ ধুরর কি বলি শুনেছ?
রাহা বলল
‘ আমি পাগল নই।
নোহা বিরক্ত হয়ে বলল
‘ তুমি পাগল।

সাথেসাথে ধমক মেশানো গলার স্বর ভেসে এল। সোজা হয়ে দাঁড়ালো নোহা। রোয়েন বলল
‘ কি হচ্ছে নোহা? কতবার বলেছি রাহাকে পাগল বলবে না।
নোহা মিনমিন করে বলল
‘ সরি ভাইয়া। মজা করছিলাম।
রাহা দৌড়ে গিয়ে রোয়েনের পেছনে দাঁড়ায়। রোয়েনের হাতের বাহু আঁকড়ে ধরে বলে
‘ ডাক্তার আমি পাগল নই।
রোয়েন নোহাকে বলল
‘ মজা করে ও বলবে না। ও এটা সহ্য করতে পারে না। এখন যাও। আরেকবার বলতে হলে মাইর পরবে।
নোহা আঁতকে উঠে বলল
‘ আর বলব না।
রোয়েন বলল
‘ যাও।
নোহা দৌড়ে চলে গেল। উফফ রাহাপু কিভাবে তাকে ফাঁসায় দিল!
রোয়েন রাহার হাত নামিয়ে দিল। বলল
‘ তুমি হুটহাট রাস্তায় কেন চলে আসো রাহা?
রাহা বলল
‘ ঘুরতে আসি। আমার ঘরে ভালোলাগেনা।
‘ কেন ভালো লাগেনা।
‘ ঘরে তো সারাক্ষণ বর থাকেনা তাই।
রোয়েন বলল
‘ আমার সাথে তোমার কি?
রাহা গালে আঙুল দিয়ে দুলতে দুলতে বলল
‘ বর না থাকলে ভালো লাগেনা।
রোয়েন মৃদু ব্যঙ্গ করে বলে
‘ ওহহ সারাক্ষণ আমার মাথা খেতে পারলে ভালো লাগে তোমার?
রাহা বলল
‘ হ্যা। কিন্তু মাথা খায় কিভাবে?
রোয়েন বলল
‘ জানিনা। যাও ঘরে। আর আসবে না এখানে। ঠিক আছে?
রাহা বলল
‘ আচ্ছা।
রোয়েন দাঁড়িয়ে থাকলো। রাহা যেতে যেতে আবার ও থেমে গেল। আবার দৌড়ে এসে রোয়েনকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ ডাক্তার আমার সাথে আসেন। আসেন।
রোয়েন জোরো ধমক দিল কর্কশ গলায়। রাহা দূরে ছিটকে দাঁড়ালো। রোয়েন ক্ষেপে গিয়ে বলল
‘ যাও, বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম রেখে চলে যাব দূরে কোথাও।
রাহার নাক কাঁপল থেকে থেকে। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নাক ঢললো। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল
‘ মরে যাব আমি। সবসময় শুধু শুধু বকে আমাকে।
বলেই দৌড় লাগালো রাহা। রোয়েন ডাকল
‘ রাহা দাঁড়াও। হাতের কাছে পেলে খবর আছে কিন্তু।
রাহা দৌড়ে চলে গেল। রোয়েন দ্রুত পায়ে হেঁটে রাহার পিছু পিছু গেল। রাহা দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে গেল। দরজা বন্ধ করলো। রোয়েন দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
‘ রাহা দরজা খোলো। ড্যাম ইট।
রাহা খুললো। রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে। চলে যাচ্ছি আমি। থাকো তুমি।
রোয়েন বলেই দাঁড়িয়ে থাকলো। রাহা তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দৌড় দিতেই রোয়েনের বুকের সাথে এসে ধাক্কা খেল। রোয়েন সোজা দাঁড়িয়ে থেকে চোখ নামিয়ে চাইলো। বলল
‘ কান্না বন্ধ করো। ঠাসস করে দেব একটা। রাহা জোরে কেঁদে দিল। সোরা এসে লুকিয়ে দেখলো।
রোয়েন বলল
‘ কি সমস্যা? কান্না বন্ধ করো রাহা।
রাহা বলল
‘ আপনি কানে ধরেন।
রোয়েন বলল
‘ কিহ? মাথা খারাপ?
রাহা বলল
‘ কানে ধরেন। নাহলে আর ও জোরো কাঁদব।
রোয়েন এদিকওদিক তাকিয়ে এক হাতে কান ধরলো। সোরা বহুকষ্টে হাসি সামলালো।

রাহা সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দিল। হাত বাড়িয়ে রোয়েনের গলা ধরে ঝুলিয়ে পড়ে বলল
‘ ডাক্তার?
সোরা তাড়াতাড়ি সরে পড়লো।
রোয়েন বলল
‘ এসব কি ধরণের অসভ্যতামি রাহা? ছাড়ো। কেউ চলে আসবে।
রাহা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
‘ ইননা। একটু জড়িয়ে ধরি?
রোয়েন নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ নাহহ।
রাহা জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

______________

বিকেলের দিকে এল রোয়েনের বন্ধুরা। তিনজন । নাহিল আর সালেহা বেগমের সাথে গল্পে মশগুল তারা। সোরা নাশতা দিল। সোয়েভকে বলল
‘ কি ব্যাপার ইন্জিনিয়ার সাহেব বিয়ে শাদী কি করবেন না?
সোয়েভ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কেশে উঠলো। রোয়েন এসে সোফায় বসতে বসতে বলল
‘ আরেহ আস্তে ভাই।
সোরা হেসে বলল
‘ বাকিদের কি খবর?
অনিক আর অনির্বান নড়েচড়ে বসে বলল
‘ আমাদের ঠিক আছে আন্টি। বরং রোয়েনের কথা বলুন। ডাক্তার বাবুর জন্য কি একটা দেখব?
সোয়েভ বলল
‘ আরেহ ভাই এটা বলার কি আছে? দেখ দেখ।
সোরা নাহিলের দিকে তাকালো। নাহিল সোরার দিকে। রোয়েন নড়েচড়ে বসে বলল
‘ এসব কথা থাক।
সোয়েভ বলল
‘ আহা থাকবে কেন ব্রো? তোরা কর তারপর ভেবেচিন্তে ডিসিশন নেব আমি। আব্বা যেভাবে রোজ বলে মাকে বিয়ে তার লাইফ ত্যানাত্যানা হয়ে গেল, আমার তো ভয় করে বাপ।
সবাই হাসলো একসাথে। রোয়েন নড়েচড়ে বলল
‘ তুই ঠিক হলিনা ভাই। এবার একটু সিরিয়াস হ। সারাক্ষণ মজার তালে থাকিস। আমার মনে হয় তুই বিয়ে করে নিলেই চেন্জ হবি।
সোয়েভ বলল
‘ বুকে আয় ভাই। একদম মনের কথা বললি। কিন্তু বিয়ে ভয় লাগে।
সবাই আবার ও হাসলো। নাহিল বলল
‘ সোয়েভ চিন্তা নেই। করে ফেলো। রোয়েন অনিক অনির্বাণ ওরা আছে তো।
সোয়েভ বলল
‘ ধুরর আমার চিন্তা বাদ দেন। রোয়েনকে করায় দেন একটা বিয়ে। নাহিল কিছু বলতে গেল তার আগেই রোয়েন বলে উঠলো
‘ আচ্ছা বেরোই আমরা। একটা জায়গায় যেতে হবে।
অনির্বাণ বলল
‘ হ্যা। দেরী হয়ে যাচ্ছে। উঠি?
রোয়েন মাথা নাড়ালো। নাহিল বলল
‘ রাতে খেয়ে যেও সবাই। তোমাদের আন্টি রান্না করবে।
রোয়েন বলল
‘ না বাবাই আমাদের আজকে অন্য কোথাও ডিনারের কথা।
নাহিল মাথা নাড়ালো। সবাই বেরোতে যাবে ঠিক তখুনি রাহা দৌড়ে নিচে নেমে এল। হাতে একটি খাতা। রোয়েনের কাছে দৌড়ে গিয়ে ডাকলো
‘ এই বর, আমি লিখেছি।
রোয়েন বলল
‘ রুমে যাও। লিখতে বলেছি। এখানে কেন?
রাহা বলল
‘ ডাক্তার উফফ! আমি লিখেছি দেখেন হয়েছে কিনা?
রোয়েনের বন্ধুরা রাহার হাতে খাতাটার দিকে তাকালো। তাতে লেখা রাহা বউ, ডাক্তার বর।
সবাই রোয়েনের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। রোয়েন বিষয়টা এড়ানোর চেষ্টা করে বলল
‘ নাথিং ইয়ার। ওর মাথা ঠিক নেই। তাই ওসব উল্টাপাল্টা,
নাহিল কিছু বলতে গেল সোরা এসে আটকালো। মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলতে বললো।
রোয়েন রাহার হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে গেল। রুমে ঢুকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল
‘ আর কত ভাবে হেনস্তা করবে বলে ভেবে রেখেছ রাহা?
রাহা চুপ করে তাকিয়ে থাকলো। রোয়েন বলল
‘ ওদের সামনে কেন গেলে? গেলে ভালো কথা বর ডাকার কি দরকার ছিল? পাগল তুমি? ও হ্যা তুমি পাগলই।
রাহার টলমলে চোখ দিয়ে বর্ষণ হলো। গাল ভিজে উঠলো মুহূর্তে। রোয়েন রুমের বাইরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। চলে গেল। রাহা শুধু দরজায় হাত দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। খাতার কাগজটি ভিজে উঠলো নোনা জলের ফোঁটায়। রোয়েন বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে গেল। তারা বলল
‘ তোকে কেন বর ডাকে রে?
রোয়েন বলল
‘ রাহার মাথা ঠিক নেই। তাই ওসব উল্টাপাল্টা বলে। ও বর শব্দটার মিনিং বুঝে নাকি ?
সোয়েভ বলল
‘ আমি তো জানি রাহা তোকে,
রোয়েন বলল
‘ ওসব কিচ্ছু নেই। ফালতু কথা বলবি না সোয়েভ।
অনির্বাণ বলল
‘ তুই বকেছিস তাই রাহার মন খারাপ হয়ে গেছে মুহূর্তেই । ভালো ভাবে বলতে পারতি। কত হাসিখুশিভাবে তোকে বলতে এল।
রোয়েন বলল
‘ ওকে প্রশয় দিলে আবার ও করবে। এসব কথা এখানেই থামুক। আমি বাড়াতে চাই না। ভালো লাগছেনা।

রাতে করে বাড়ি ফিরলো রোয়েন। রুমে ঢুকে দেখলো রাহা নেই। গায়ের শার্ট পাল্টে মুখ হাত ধুঁয়ে নিল। তারপর শুয়ে থাকলো। তাননাকে ফোন দিল তখুনি। তাননা ফোন তুলে বলল
‘ বল।
রোয়েন বলল
‘ কবে আসছিস? গেলে আর আসার নাম তো নিস না। ভাইটাই তো নেই তোর।
তাননা কপট রাগ দেখিয়ে বলল
‘ তোর বোন আছে? একবার আসতে ইচ্ছে করেনা তোর? শুধু আমিই যাব!
রোয়েন বলল
‘ ফোন রাখ এমনিতেই মাথা খারাপ।
তাননা বলল
‘ রাখ। তোর সাথে কে কথা বলছে? একদম গোঁয়ার একটা। আম্মা আব্বা থাকলে পিটিয়ে সোজা করতো।
রোয়েন ফোন কেটে দিল রাগে । পুরো ঘরে চোখ বুলালো। জিনিয়ার সাহিলের ছবিটি নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ালো। বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। সোরা এসে দেখলো রোয়েন বুকে ছবি জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সোরা হাতের প্লেটটি বেডসাইড টেবিলে রাখলো। রোয়েনের কপালে হাত দিয়ে ডাকলো
‘ মুননা? উঠো আব্বা খেয়ে নাও।
রোয়েন ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ খেয়ে এসেছি নাহ?
সোরা বলল
‘ খেয়ে এসেছ? ওহ আমি তো ভুলে গেছি। আচ্ছা।
সোরার গলায় চাপা অভিমান। রোয়েন বলল
‘ রাহা কোথায়?
সোরা যেতে গিয়ে থেমে গেল। চাপা গলায় বলল
‘ জানিনা আমি।
রোয়েন বলল
‘ তুমি ও?
সোরা বলল
‘ আমি কি বলেছি? রাহার খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। ঘুমাও। আমি লাইট অফ করে দিচ্ছি।
রোয়েন কপালে এক হাত রেখে চোখ বন্ধ করলো। সোরা রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে ফ্রুটস দিল। বলল
‘ এগুলো খেয়ে নাও। কফি আনছি।
রোয়েন খেল না। সোরা কফি আনলো। রোয়েন কফি খাওয়ার জন্য উঠে বসলো
সোরা চলে যেতেই রোয়েন বলল
‘ রাহাকে আমি ডাকছি বলো।
সোরা বলল
‘ ও ঘুমিয়ে পড়েছে। থাকুক। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
রোয়েন ধীরপায়ে পুরো ঘরে হাঁটতে হাঁটতে কফির মগে চুমুক বসালো। তারপর বের হয়ে গেল রুম থেকে।

রাহা তার আগের রুমে শুইয়েছে। সোরা রুমটা ভালোভাবে পরিষ্কার পরিপাটি করে রেখেছে। রাহা আজ থেকে এখানে থাকবে। এখন সে অনেকটা সুস্থ। যা বুঝায় তা ভালোভাবে বুঝে। রোয়েন তাননার রুমে গেল দেখলো রাহা নেই। সালেহা বেগমের রুমে গেল। সেখানেও নেই। রিহানের রুমে গেল। সেখানে ও নেই। শেষমেশ রাহার রুমে লাইট জ্বলতে দেখে দরজা ঠেলল। রাহাকে দেখে স্বস্তি মিললো। রোয়েন রুমে ডুকে দরজা ঠেলে দিল। রাহা ঘুম। চোখের জল এখনো লেপ্টে আছে গালে। রোয়েন চুপিসারে ডাকলো
‘ রাহা?
পরপর কয়েকবার ডাকায় রাহা উঠলো না। রোয়েন তার ঠান্ডা হাত রাহার গালে ছুঁয়ে দিয়ে ডাকতেই রাহা পিটপিট করে চোখ খুললো। রোয়েনকে দেখে ভাবান্তর ঘটলো না তার। রোয়েন কম্বল সরিয়ে দিল। কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে বলল
‘ রাহা অল্পতেই কান্না করতে বারণ করেছি।
রাহা চুপটি করে চেয়ে থাকলো। রোয়েন বলল
‘ ভাত খেয়েছ?
রাহা জবাব দিল না। রোয়েন বলল
‘ ফ্রুটস খেয়েছ?
রাহা কথা বলল না।
রোয়েন রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল রাহাকে। কম্বল টেনে দিল। বলল
‘ ওয়েট ফ্রুটস দিচ্ছি। ঘুমিয়ে পড়ো না।

রাহা বিছানা থেকে নেমে গেল। দৌড়ে রুম থেকে বের হলো। আবার নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে পড়লো।
আম্মা তাকে বলেছে ডাক্তারের কাছ থেকে যত দূরে থাকবে ডাক্তার তাকে তত ভালোবাসবে। বকবে না আর। রাহা চায় ডাক্তার তাকে ভালোবাসুক দূর থেকে। না বকুক।

রাহার অবচেতন মন বুঝে না,
কাছে গেলে কি বিরক্তিকর কারণ হয়? দূরে থাকলে কি ভালোবাসা হয়?

রোয়েন রাহার পিছুপিছু রাহার রুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। দরজায় কড়া নাড়লো না। রাহা যদি একা থাকতে পারে তাহলে তা বেশ ভালো। রোয়েনের কি তবে এবার মুক্তি? রাহা মুক্তি দিল তাকে অবশেষে?

চলবে।

#ধ্রুবতারা
#পর্ব_১৬
#পুষ্পিতা_প্রিমা

পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে তেজ দীপ্ত সূর্য। নরম মিঠে আলোয় আবছা আবছা কুয়াশা। এমন গোধূলী লগ্নে গায়ে শাল মাথায় টুপি জড়িয়ে গ্রামের বড় সড়ক ধরে হাঁটুরে এগোচ্ছে হাঁটের উদ্দেশ্যে। কারো পড়নে শার্ট লুঙ্গি। কারো কারো পড়নে পাঞ্জাবী। নাহিলের এক হাতের মুঠোয় রাহার হাত। অন্য হাতে ছোটখাটো একটা ব্যাগ । নাহিল কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটি রিকশা ডাকলো। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে আজকাল। রিকশাচালক জিজ্ঞেস করলেন
‘ কই যাবেন সাহেব?
নাহিল বলল
‘ আহম্মেদ মঞ্জিলে। চেনেন?
রিকশাচালক বললেন
‘ চিনি। আপনে আহম্মদে বাড়ির পোলা?
নাহিল বলল
‘ জ্বি।
রিকশাচালক রাহাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন
‘ আর এইডা আপনার মাইয়্যা?
নাহিল বলল
‘ জ্বি।
রিকশাচালক বললেন
‘ ভারী মিষ্টি মাইয়্যা। আমার ও এমন একডা ছেড়ি আছে। উঠেন। ভাড়া একজন বিশ কইরা লয়।
নাহিল রাহাকে নিয়ে উঠে পড়লো। রাহা নাহিলের কাঁধে মাথা রেখে বলল
‘ আব্বা তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?
নাহিল বলল
‘ ওখানে তোমার নানু আছে, নানাভাই আছে। মামা মামি আছে। সামিরা আর সিহাব আছে। ওদের সাথে থাকবে। ওরা তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাছাড়া কিছুদিন পর তোমার আম্মা আসবে। আমি নিয়ে আসবো।
রাহা বলল
‘ আচ্ছা।
নাহিল বলল
‘ মামির কথা শুনবে। আমাদের কথা মনে পড়লে ফোন দেবে। একা থাকা শিখতে হয় মা৷
রাহা বলল
‘ একা থাকা কেন শিখতে হয়? সবাইকে কি একা একা থাকতে হয়? তুমি একা থাকো?
নাহিল জবাব দিতে পারলো না। তাই চুপ থাকলো।

রাহাকে দেখে খুশি হলো সবাই। সামাদ মিয়া বাজারে গেল বড় ইলিশ আনতে নাতনির জন্য। সালমা বেগম খুশিতে আত্মহারা। সামিরা সিহাব খুশি হলো রাহাকে পেয়ে। রাহা ও মুহূর্তেই মিশে গেল তাদের সাথে। নাহিল স্বস্তি পেল। যাক মেয়েটা ভালো থাকলেই হলো। কারো কাছে অন্তত অবহেলিত হবে না।
নাহিলকে একটা রাত থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল সবাই। রাহা ও কান্না করায় যেতে পারলো না নাহিল। থেকে যেতে হলো। সামাদ মিয়া জামাই আপ্যায়নে ত্রুটি রাখলো না।
তবে সকাল সকাল নাহিল চলে যাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো।
যাওয়ার আগে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু আঁকল। বলল
‘ ভালো থেকো আম্মা । কোনো সমস্যা হলে ফোন দিও আব্বাকে। কেমন?
রাহা মাথা নাড়লো শুধু। নাহিলের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

________

রাত বারোটা তখন। নাহিল মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সোরার গায়ে জ্বর এসেছে সামান্য। রাহার কথা বলতে বলতে সে ও ঘুমিয়ে পড়েছে। ফোন বেজে উঠায় চিন্তিত দেখালো নাহিলকে। এত রাতে আবার কার ফোন?
ফোন তুলতেই ফোনের স্ক্রীনে দেখতে পেল রোয়েনের নাম। নাহিল উঠে গেল। এত শীতের মাঝে এত রাত করে বাড়ি ফেরার কি দরকার বুঝে পায় না নাহিল।
নিচে নেমে দরজা খুলে দিল নাহিল। রোয়েনের হাতে ফোন। মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে ফোন টিপছে। অন্য হাতে ব্যাডমিন্টন ব্যাট।
নাহিল দরজা খুলে দেওয়ায় রোয়েন পা টিপে বাড়িতে ঢুকলো। বলল
‘ ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম?
নাহিল বলল
‘ দিনদিন কি ছোট হচ্ছ? এত রাতে কেউ ব্যাডমিন্টন খেলে? তুমি এখনো অতটা ও বড় হওনি যে শাসন করতে পারবো না। চুপ করে আছি বলে যা ইচ্ছে তাই করছ।
গর্জে বলল নাহিল। ধীরেধীরে সোরা নিচে নেমে এল।
রোয়েন বলল
‘ মাত্র বারোটা। অত রাত কোথায় হলো?
সোরা ইশারা করলো নাহিলকে। নাহিল কিছু বললো না। সোরা বলল
‘ মুননা খেতে এসো তাড়াতাড়ি।
রোয়েন ফোনের দিকে ঝুঁকে আছে এখনো। নাহিল বলল
‘ কি বলেছে শুনতে পাওনি?
রোয়েন মাথা তুলে তাকালো। শান্ত গলায় বলল
‘ পেয়েছি। যাচ্ছি।
রোয়েন পা বাড়ালো। পায়ের আওয়াজে ও ক্ষোভের আভাস। নাহিল সোরাকে বলল
‘ একটু বেশি আদর দিয়ে ফেলেছি বোধহয়। তাই এমন ঘাড়ত্যাড়া হয়েছে। ভালোবাসা না পেলে মানুষগুলো এমন হয়, আর একে তো আদর, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা সব দিয়ে বড় করেছি। তারপরও এমন হলো কেন?

সোরা বলল
‘ আমি চুপ করতে বলেছি আপনাকে।
নাহিল বলল
‘ অনেক চুপ থেকেছি। আর থাকবো না।
ডিভোর্স পেপার রেডি করব আমি। রাখব না রাহাকে এই ছেলের কাছে। যার কাছে কোনো মূল্যই নেই আমার মেয়ের।
সোরা বলল
‘ মুখে সবসময় খারাপ কথা রেডি রাখেন নাহ? ডিভোর্স মানে কি জানেন?
নাহিল বলল
‘ জানি। আমাকে জানাতে এসো না। আমার মেয়ে কি ফেলনা? যে তাকে যেমন ইচ্ছে তেমন করবে?

রোয়েন নিচে নেমে এল। মুখের আশপাশ ভেজা। হয়ত মুখ ধুঁয়েছে। গায়ে সাদা লেদার জ্যাকেট। সোরা নাহিল চুপ হয়ে গেল তাকে আসতে দেখে। রোয়েন চেয়ার টেনে টেবিলে বসে বলল
‘ কবে রেডি করছো ডিভোর্স পেপার? তাড়াতাড়ি করো। আমি থাকছি না এখানে।
নাহিল কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে থাকলো। সোরা টলমলে চোখে তাকালো। পরক্ষণেই প্লেটে ভাত তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নাহিল বলল
‘ ফিরে যাবে তুমি? তাহলে ফিরেছ কেন?
রোয়েন কিছু বলল না। সোরা বলল
‘ রাহা এখনো সুস্থ হয়নি।
রোয়েন কিছু বললো না। নাহিল বলল
‘ সুস্থ না হোক সোরা। কার কি যায় আসে? আরেহ রাহাকে পাগল ডাকতে পারলে অনেকে খুশি হয় বুঝোনা?
সোরা বলল
‘ আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
নাহিল গটগট পায়ে হাঁটা ধরলো। রোয়েন দাঁড়িয়ে পড়ে বলল
‘ খাব না আমি। খিদে নেই।
সোরা বলল
‘ মুননা?
নাহিল দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রোয়েন ফোন টিপতে টিপতে চলে যাচ্ছে। নাহিল ডাক দিল
‘ মুননা খেয়ে নাও বলছি।
রোয়েন জবাব দিল না। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। পুরো রুম ঘুরেঘুরে রাহার সব জামাকাপড় খুঁজে নিল। চিরুনি, তেলের বোতল, রাহার ওড়না সব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাহার রুমের কাছে থেমে গেল। দরজা বন্ধ কেন? রোয়েন কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে পিছু ফিরলো। নাহিল বলল
‘ রাহা নেই।
রোয়েন বিস্ময় কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
‘ কোথায়?
‘ তুমি জেনে কি করবে? কেন এসেছ?
রোয়েন হাতের জিনিসগুলো ফেলে দিল। বলল
‘ রাহা কখন গিয়েছে?
‘ কাল সন্ধ্যায়। যাও খেয়ে নাও। না খেয়ে ঘুমালে খবর আছে।

রোয়েন বলল
‘ খাব না বলেছি আমি।
নাহিল চেঁচালো।
‘ গায়ে হাত তুলেছি দেরী হয়েছে। তুলতে বাধ্য করো না। যাও। আর বলতে না হয় মতো।
রোয়েন গটগট পায়ে হাঁটা ধরলো। নিচে নেমে ধপ করে বসলো চেয়ারে। সোরা খাবার দিল। বলল
‘ রাতে না খেয়ে থাকতে নেই সেকথা তুমি বলো সবসময়।
রোয়েন চুপচাপ খেল। বাকিগুলোতে পানি ঢেলে চলে গেল। নাহিল দূরে দাঁড়িয়ে দেখলো। সোরা তাকাতেই ঘরে চলে গেল নাহিল। হাসিমুখে তাকিয়ে থাকা সাহিলের ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল

‘ আমাকে কতবড় দায়িত্ব দিয়ে গেলে ভাই? তোমার ছোট ভাই এত বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবে কিনা সেটা ও একবার ভাবলে না। আদর দিয়ে দিয়ে বড় করেছি তোমার ছেলেমেয়ে দুটোকে। আদরের সময় আদর করেছি। শাসনের সময় শাসন করেছি। কোনোকিছু অপূর্ণ রাখিনি। চাওয়ার আগেই সব এনে হাজির করেছি তাদের সামনে। নিজের দস্যিপনা ছেড়ে দিয়ে এত বড় ব্যবসাটা নিজ হাতে সামলাচ্ছি। বাড়িটাকে, বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভালো পাত্রে বিয়ে দিয়েছি তোমার মেয়েকে। আর ছেলেটা?
সেই ছোট্ট মুননু কখনো তার বাবাইকে কষ্ট দিতো না। তাহলে এখন কেন দিচ্ছে? ওর দেওয়া আঘাত আমি সহ্য করতে পারছিনা ভাই। আমি এটা আশা করিনা তার কাছ থেকে। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে যে রাহাই তোমার ছেলেবউ হোক কিন্তু তোমার ছেলে কেন চায় না? আমার চোখের সামনে রাহার প্রতি মুননার অবহেলা সহ্য হয় না আমার। আমি সইতে পারিনা ভাই। কি করব আমি? তুমি কেন নেই? আজ তুমি থাকলে, জিনিয়া থাকলে আমার নিজেকে এতটা দুর্বল মনে হতো না। আমাকে এতটা একা করে চলে গিয়ে ভালো আছ তুমি? শান্তিতে আছ? হয়ত তোমাদের অনাদর অবহেলায় ছেলেটা এমন হয়েছে। আমি বোধহয় তোমার মতো অতটা ভালোবাসতে পারিনি ওকে। তোমার মতো আগলে রাখতে পারিনি। ওর মন নেই ভাই। হৃদয় নেই। পাষাণ তোমার ছেলে। পাষাণ হৃদয়হীন। তুমি তো জিনিয়াকে চোখে হারাতে, তাহলে তোমার ছেলে কেন তোমার মতো হয়নি? তুমি তো পাষাণ ছিলে, তারপরে ও সেই পাষাণ হৃদয় গলে ভালোবাসা বোরোতো জিনিয়ার জন্য। জিনিয়াকে ভালোবেসে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের সবটা দিয়ে দিলে। কিন্তু হয়ত সে থাকতে চায়নি তোমাকে ছাড়া। তাই চলে যেতে হলো।
কিন্তু তোমার ছেলে কি কারণে পাষাণ? এতটা হৃদয়হীন ও হয়? তোমার আর জিনিয়ার ছেলেকে এতটা পাষাণ হওয়া কি আদৌ মানায়? তুমি থাকলে আজ এত অন্যায় হতে দিতে আমার মেয়ের সাথে? এত প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাব আমি? আমায় ছেড়ে কেন চলে গেলে ভাই? কতগুলো বছর আমি তোমায় দেখিনা? তোমার সাথে টেবিলে বসে একসাথে খাইনা।
তোমায় দেখতে খুব ইচ্ছে করছে ভাই। খুব।

ছোট্ট অবুঝ শিশুর মতো দুহাত দিয়ে ভেজা গাল মুছলো নাহিল।
নাহিল ফিরতেই দরজার পাশ থেকে সরে পড়লো রোয়েন। সোরা এসে পড়ায় রোয়েন দাঁড়িয়ে পড়লো। থেকে থেকে কেঁপে উঠা নাক চোখ একসাথে হাতের কব্জি দিয়ে ঘষলো রোয়েন। সোরাকে ডিঙিয়ে চলে গেল রুমে। সালেহা বেগম ঘুমঘুম গলায় রোয়েনের পিছু যেতে যেতে বলল
‘ ভাই কি হয়েছে তোর? চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? এই নাহিল তুই কি বকেছিস আমার ভাইকে?
নাহিল সালেহা বেগমের পিছু এসে দাঁড়ায়। সালেহা নাহিলের চোখমুখ দেখে বলে
‘ কি হয়েছে তোদের?
নাহিল বলল
‘ কিছু হয়নি। আমি ভাইকে নালিশ দিয়েছি তার ছেলের নামে।
সালেহা বেগম রোয়েনের রুমে চলে যায়। রোয়েন বেডের উপর বসে দুহাতে ভর দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। সালেহা বেগম গিয়ে বসে রোয়েনের পাশে। কাঁধে হাত দিয়ে ডাকে
‘ ভাই মাথা তোল।
রোয়েন হাত নামিয়ে দেয়। সালেহা বেগম রোয়েনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন
‘ তোর বাবাই বকেছে তোকে? ভাই শোন আমার কথা। এমন করিসনা ভাই। আমার দিকে তাকা।
রোয়েন চোখ ফিরিয়ে রাখে। সালেহা বেগম বলেন
‘ ভালো আমার ভাই।
রোয়েন চোখ উপরে তুলে রাখে। সালেহা বেগম রোয়েনের মুখ ছুঁয়ে তার দিকে ফিরায়। বলে
‘ ভাই তাকা আমার দিকে। এইতো দেখ, যার চোখে জল নামে যার মন কাঁদে মা বাবার জন্য। যার চোখ ভিজে উঠে চাচার শাসনে। সে কখনো পাষাণ নয়। তাকা আমার দিকে। রোয়েন মুখ ফিরিয়ে নিল। সালেহার হাত আবার ও নামিয়ে দিল। হাত তুলে বাহু দিয়ে চোখ মুছলো।
সালেহা বেগম আবার ফিরালেন রোয়েনকে। বললেন
‘ ভাই কেন করছিস এমন? তুই কি ভালো আছিস এসব করে?
রোয়েন আবার নাকমুখ ঢললো। সালেহা বেগম বলল
‘ তুই নিজের সরূপ আর কতক্ষণ লুকাবি ভাই ? কাঁদছিস তুই? নিজের আরেক বাপকে কাঁদিয়ে নিজে কাঁদছিস? তাহলে কষ্ট দিস কেন? আমার দিকে তাকা। তুই চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে এখন।
রোয়েন নিজের হাতের বাহুতে আবার ও গাল মুছলো। ভার গলায় বলল
‘ কিচ্ছু ঠিক হবে না। অভিযোগের পাহাড় আমার নামে লেখা। পারব না আমি।
সালেহা বেগম বলল
‘ রাহামণিকে নিয়ে আয়। তোর বাবাই খুশি হবে। কষ্ট পাবে না আর। তোর উপর রাগ থাকবে না আর। অভিযোগ কমে যাবে। তোকে ভালোবাসে তো তাই তোর দেওয়া কষ্ট সইতে পারে না। তার ভাই তো তাকে কাঁদায়নি কখনো তাহলে তার ছেলে কেন কাঁদায়? কেন আঘাত দেয়?
রাহা তোর বউ। তাকে কেন কষ্ট দিস? এতদিন রাত জেগে তার সেবাশুশ্রূষা করে তাকে সুস্থ করে তুলেছিস? তাহলে এখন এমন কেন? পাগল ডাকলি কেন? বউ বলে অস্বীকার করলি কেন?
রোয়েন মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল
‘ জানিনা। যাও।
সালেহা বেগম গেল না। বলল
‘ তোর বউকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
রোয়েন সরাসরি জবাব দিল।
‘ আমি যেতে বলিনি। তাই ফিরিয়ে ও আনব না। তাছাড়া আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। ঔষধের পাতা ছিঁড়ে ঔষধ খেতে এখন রোয়েনকে প্রয়োজন পড়ে না। রাহা নিজেই খেতে জানে। ওর আব্বা ও ভালো সিদ্ধান্তঃ নিয়েছে, মেয়ের ভালো চান উনি। উনার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভালো হবে। আমি ও একমত।

চলবে।