নব্বই পাতার ডায়েরী পর্ব-০১

0
2468

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#সূচনা_পর্ব
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

– “বিয়ের সাত বছর পরে এসে আপনি আপনার স্বামীর থেকে ডিভোর্স কেন চাইছেন মিসেস খান?”

টেবিলের অপরপ্রান্তে গম্ভীর মুখে বসে থাকা নারীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লেন অ্যাডভোকেট শাফায়াত আহসান। বিপরীতে নারীটি আড়চোখে পাশে তাকিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে জানায়,
– “সাতবছর যাবৎ তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত আমি। আমাদের মাঝে মতের কোনো মিল ই নেই! এমন একটা সম্পর্ক শুধুশুধু ঝুলিয়ে রাখার কোনো মানেই হয়না। তাই আমি এবার মুক্তি চাই।”

শাফায়াত এবার চোখ সরিয়ে পাশে চাইলো। বুকে হাত গুঁজে বসে থাকা পুরুষটিকে নির্দেশ করে বললো,
– “মিস্টার এনজাম খান, তাই তো?”

– “ইয়েস।”

– “একই প্রশ্ন আপনাকেও করছি। এক দুদিন নয়, আপনাদের বিয়ের সাত বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে এসে মতের অমিল হবার কারণটা কী?”

এনজাম কটমট দৃষ্টিতে প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে শুধায়,
– “কারো সংসার করার ইচ্ছেটাই যদি না থাকে,তাহলে তো মতের অমিল হবেই। উঠতে বসতে আমাকে সন্দেহ করেন তিনি। বিশ্বাস ছাড়া কখনো সম্পর্ক ঠিক থাকে?”

প্রজ্ঞা দাঁত কিড়মিড় করে টেবিলে হাত ঝাঁপটে রাখতেই হকচকিয়ে উঠলো শাফায়াত। প্রজ্ঞার দিকে তাকাতেই সে রাগে ফোঁসফোঁস করে বললো,
– “সন্দেহ করবো না তো কী করবো? প্রতি দুদিন অন্তর ফোনের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে সে। আমাকে বলে, পাসওয়ার্ড হলো ‘I love avocado’; কিন্তু আসলে পাসওয়ার্ড দেয় ‘I love dragon’! ও যদি এতই সাধু হয় তাহলে ভুল পাসওয়ার্ড বলবে কেন আমাকে?”

শাফায়াত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকানোর পূর্বেই এনজাম একইভাবে তেঁতে উঠে বলে,
– “আমি জীবনে অ্যাভোকাডো খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করুন তো ওকে। সবথেকে অপছন্দের ফল আমার। তাহলে আই লাভ অ্যাভোকাডো কেন দেবো? এইটুকু যদি না বুঝতে পারে তাহলে কেমন বউ সে, নিজেই বুঝে নিন স্যার!”

প্রজ্ঞা এতেও রেগে গেল। ভ্রুদ্বয়ে গভীর ভাঁজ ফেলে বললো,
– “আমার তো পছন্দ! তুমি কেন আমার পছন্দের জিনিস পাসওয়ার্ডে রাখবে না? জানো ড্রাগন আমি খাইনা, তাইজন্যই ওটা দিয়েছো। স্যার, বুঝতে পারছেন তো এবার?

শাফায়াত কেশে উঠলো দু তিনবার। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– “ফোনে এখনো এই পাসওয়ার্ড ই দেওয়া?”

এনজাম গা-ছাড়া ভাব দেখিয়ে বলে,
– “নাহ,চেঞ্জ করেছি।”

– “কিহ! আবার চেঞ্জ করেছো! স্যার দেখুন আপনি! এই লোকের সঙ্গে আর যাই হোক সংসার কথা যায়না। বউয়ের কোনো ভ্যালিউ ই নেই তার কাছে!”

এনজাম তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললো,
– “অতিরিক্ত ভ্যালিউ দেখিয়েছি বলেই না এই সাত বছর সহ্য করেছি।”
শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে বললো সে,
– “আর সে নিজে আমাকে কতটা মূল্য দেয়? সাংসারিক হবার কোনো ইচ্ছেই নেই ওর মধ্যে। আপনি জানেন স্যার! একদিন গরমের মধ্যে অফিস থেকে ফিরে ওর কাছে একগ্লাস ঠান্ডা পানি চেয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করুন,ও আমাকে কী দিলো।”

– “কী দিলো?”

প্রজ্ঞা থতমত খেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এনজাম সেদিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
– “ভিনেগার! গ্লাস ভর্তি করে সিরকা দিলো সে আমাকে।”

শাফায়াত অবাক চোখে তাকাতেই প্রজ্ঞা নিচু স্বরে এনজামের উদ্দেশ্যে বলে,
– “পানির বোতলে ভিনেগার কী আমি রেখেছি? ওটাও তো রেখেছে তোমারই ছাওপোনা।”

এনজাম আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি শাফায়াত থামিয়ে দেয় তাদের। শান্ত গলায় বলে,
– “আপনারা তো এখানে ঝগড়া করতে আসেননি তাইনা? ঝগড়া মেটাতে এসেছেন। তাই…”

কথা শেষ হলোনা তার। প্রজ্ঞা বিস্ময় কণ্ঠে বললো,
– “কে এসেছে ঝগড়া মেটাতে? ওর সঙ্গে আমার মিটমাট হবার আর কিছুই নেই। আমি এসেছি সই করতে। ডিভোর্স এর পেপার দিন,সই করবো আমি।”

শাফায়াত নিজ চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে শুধায়,
– “এভাবে তো আর ডিভোর্স হয়না। আগে বলুন, আপনারা সেপারেশন এ আছেন কতদিন যাবৎ?”

প্রশ্নের বিপরীতে একে অপরের দিকে আড়চোখে তাকায় দুজন। মুখভঙ্গি গম্ভীর রেখে এনজাম অন্যদিকে চেয়ে উত্তর দেয়,
– “দু ঘণ্টা।”

– “হু?”
ভ্রু কুঁচকে আসে শাফায়াতের। এনজাম বুকে হাত গুঁজে বসে। সরু চোখে তাকিয়ে শুধায়,
– “অবাক হচ্ছেন কেন? ডিভোর্সের জন্য কী আগে থেকে সেপারেশন এ যেতে হয়?”

শাফায়াত বিচক্ষণ মানুষ। দু তিনবার পরখ করে দেখলো এনজাম এবং প্রজ্ঞাকে। আবারো প্রশ্ন করলো,
– “অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ আপনাদের? নাকি লাভ ম্যারেজ?”

এনজাম উত্তর দেওয়ার পূর্বেই প্রজ্ঞা উত্তেজিত হয়ে বললো,
– “ফকিন্নির বাচ্চায় মশার মতো পিছনে ঘুরেছে আমার! নাহলে কী খাসির কাচ্চি ছেড়ে শুঁটকি ভর্তায় হাত দিতাম?”

অকস্মাৎ এহেন উত্তরে খালি মুখে বিষম খেলো শাফায়াত। এনজাম একহাতে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো পুরোটা। ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত হয়ে বললো,
– “তার মানে লাভ ম্যারেজ?”

কটমট চোখে এনজামের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করেই চোখ সরিয়ে নিলো প্রজ্ঞা। বুকে হাত গুঁজে তাকিয়ে রইলো দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা পেইন্টিং টির দিকে। শাফায়াত এবার তাকালো এনজামের দিকে। হাতদুটো কাচের টেবিলের উপর রেখে বললো,
– “মিস্টার এন্ড মিসেস খান, কিছু প্রশ্ন করবো। ঠিকঠাক উত্তর দেবেন। আপনারা লাস্ট কবে একে অপরের কাছাকাছি এসেছিলেন?”

এনজাম এবং প্রজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে তাকায় উঁকিলের পানে। এনজাম বিরক্তি নিয়ে উত্তরে জানায়,
– “আমরা কী এখন দুই দেশে আছি? দেখতে পারছেন না পাশাপাশি বসে আছি?”

উঁকিল কপাল চুলকে বলেন,
-“সেটা বলিনি। আই মিন, লাস্ট কবে ফিজিক্যালি ইনভলভড হয়েছিলেন?”

প্রজ্ঞা বড়বড় চোখে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ায়। ফুঁসে উঠে বলে,
– “নাটক লাগিয়েছেন এখানে? কিসব প্রশ্ন করছেন?”

শাফায়াত মুচকি হাসে। টেবলের উপর থাকা পেপারমেট টা ঘুরিয়ে বলে,
– “একটা কথা আছে ম্যাডাম, ডাক্তার এবং উঁকিলের প্রশ্নে সর্বদা সঠিক উত্তর দিতে হয়। প্রয়োজন ব্যতীত প্রশ্ন করিনি আমি।”

প্রজ্ঞা চোখ-নাক কুঁচকে বসলো চেয়ারে। এনজাম কিছুটা আমতাআমতা করে বললো,
– “হবে চার পাঁচদিন আগে। দিন গুণে রেখেছি নাকি?”

উঁকিল সাহেব চোখদুটো কুঁচকে থুঁতনিতে হাত ঘষলেন বারকয়েক। বিপরীতে প্রশ্ন ছুড়লেন,
– “দু ঘণ্টা আগে অবধি আপনারা একসঙ্গে থেকেছেন। পাঁচদিন আগেও আপনারা ফিজিক্যালি ইনভলভড ছিলেন। আর এই পাঁচদিনের মধ্যে ডিভোর্সের ডিসিশন নিয়ে নিলেন?”

– “এতসব বলতে পারছিনা। কীসব ফর্মালিটিস আছে সেগুলো তৈরি করুন। আমার ছেলের স্কুল ছুটি হয়ে যাবে আবার। ওকে আনতে যেতে হবে।”

প্রজ্ঞার কথায় একটু চমকায় শাফায়াত। জিজ্ঞেস করে,
– “বাচ্চা?”

– “আমার বাচ্চা।”

এনজাম টেবিলে হাত ঠেকিয়ে হেসে উঠে বললো,
– “ওনার একার বাচ্চা,স্যার। আল্লাহ আকাশ থেকে টুপ করে ফেলেছেন,ওর কোলে এসে পড়েছে।”

শাফায়াত না চাইতেও হেসে ফেললো। দু আঙুলে কপাল ঘষে বললো,
– “আপনাদের একটা বাচ্চাও আছে। তবুও এত নির্দিধায় ডিভোর্স করতে চাইছেন? বাচ্চার কথা ভেবে অন্তত আপনাদের অ্যাডজাস্ট করা উচিৎ।”

– “বাচ্চার জন্যই তো গত একবছর যাবৎ এতকিছু সহ্য করে ওর সঙ্গে থাকছি স্যার! নইলে এক ঘণ্টাও থাকতাম না।”
প্রজ্ঞার কথা শুনে এনজাম আবারো হেসে বলে,
– “সবকিছু তুমিই সহ্য করেছো। আর আমি মজা করে ভিনেগার খেয়েছি!”

– “এক কথা তুমি এতবার কেন টানছো? আজব!”

শাফায়াত পুনরায় থামালো তাদের। গালে হাত রেখে বললো,
– “ঠিক আছে। অন্য কিছু বলুন। যেসব কারণে আপনারা ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।”

সঙ্গেসঙ্গে প্রজ্ঞা বলে উঠলো,
– “বাচ্চার হোমওয়ার্ক একদিন করাতে বলেছিলাম। ও ইংরেজি বইয়ের মধ্যে গণিত বই ঢুকিয়ে দিয়েছিল।”

এনজাম প্রতিরোধ করে বলে,
– “তুমি নিজেই বাচ্চাকে যা খুশি শিখিয়ে দাও। ও এখন আমাকে ‘বাবা’ না বলে ‘স্যার’ বলে ডাকে।”

শাফায়াত মৃদু হেসে মজা করে বলল,
– “মনে হচ্ছে, আপনারা বাচ্চার হোমওয়ার্কের আগে নিজেদের হোমওয়ার্ক টাই করতে ভুলে গেছেন।”

এনজাম,প্রজ্ঞা দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। শাফায়াত বলে,
– “এটাতো আর ডিভোর্স এর কারণ হলোনা ম্যাডাম।
যাই হোক,শেষ কবে একে অপরকে ফোন করেছিলেন?”

প্রজ্ঞা নাক শিটকে বলে,
– “ওর সঙ্গে কথা বলার থেকে রোবোটিক কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে কথা বলা ভালো। অন্তত সময়মতো কাজ হয়!”

এনজাম তৎক্ষণাৎ বলে,
– “আর ও আমার মিস কল গুনে হিসাব রাখে। তাকে আমার রুটিনমাফেক ফোন করতে হবে। যেন আমি কাস্টমার কেয়ার এর লোক!”

শাফায়াত হেসে ফেললো। ঘাড় চুলকে বললো,
– “আপনারা একে অপরকে কাস্টমার সার্ভিসই ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে!”
এরপর আবারো প্রশ্ন করে,
– “আপনারা কখনো পিকনিক করতে গিয়েছেন?”

প্রজ্ঞা উত্তরে জানায়,
– “হ্যাঁ! একবার বললো ও নাকি পুরো আয়োজন করবে। শেষে যা হলো,খাবার হিসেবে শুধু চিপস আর কোল্ড ড্রিংস ছিল।”

এনজাম যুক্তি দিয়ে বলে,
– “তুমিই তো বলেছিলে পিকনিক মানে সহজ আর মজার কিছু। আমি সেটা-ই করেছি!”

শাফায়াত অসহায় দৃষ্টিতে দুজনকে দেখে বলে,
– “পিকনিক নয়, আপনারা বোধ হয় ভুল বোঝাবুঝি করার আউটডোর সংস্করণে গিয়েছিলেন।
তা, কোথাও ঘুড়তে বা রেস্টুরেন্ট এ যাওয়া হয়?”

এবারেও প্রজ্ঞা উত্তর দেয়,
– “ও প্রতিবারই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বলে, ‘তোমার মোবাইলে পে করে দাও। পরে আমি দিয়ে দেব।’ কিন্তু সেই ‘পরে’ আর আসে না!”

এনজাম তখন সাফাই দেয়,
– “আরে! তুমি এমন খাও যে পুরো মাসের বাজেট শেষ হয়ে যায়। স্যার আপনি জানেন, একবার ওর বিলাসী খাওয়ার ধরণের জন্য ওয়েটার পর্যন্ত অবাক হয়েছিল!”

শাফায়াত হাসি চেপে জানতে চায়,
– “ঠিক আছে। যদি ডিভোর্স প্রসঙ্গে আসি, আপনাদের ডিভোর্সের খরচটা কে দেবে?”

এনজাম আর প্রজ্ঞা তড়িৎবেগে একে অপরের পানে চাইলো। একসঙ্গে বলে উঠলো,
– “তুমি দাও না!”

পুনরায় বিব্রত হয়ে শাফায়াতের দিকে তাকালো তারা। সে মুখভঙ্গি গম্ভীর রেখে জানায়,
– “সরি টু সে মিস্টার এন্ড মিসেস, ডিভোর্সের একটাও উপযুক্ত কারণ আপনাদের থেকে পেলাম না আমি।”

মুখটা চুপসে যায় প্রজ্ঞার, সঙ্গে এনজামের ও। শাফায়াত তাদের উদ্দেশ্যে বলে,
– “একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা খুব কঠিন হলেও ভেঙে ফেলাটা দু মিনিটের ব্যাপার। সাত বছর সংসার করেছেন, একটা বাচ্চাও আছে আপনাদের। একসঙ্গে বসে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করুন।
তিনমাসের সময় দিচ্ছি আপনাদের। নব্বই দিন; অনেকটা সময়। একসঙ্গে থাকুন। রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বারবার ভাবুন। তারপরও যদি মানিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে আর কী করার!”

এনজাম তার কথা শুনে হতাশ স্বরে বলে,
– “সময়টা কমানো যায়না স্যার? আরো তিন মাস এই পাগলের সাথে থাকতেই হবে?”

প্রজ্ঞা ঠোঁট উল্টে একইভাবে বলে,
– “তিন মাসটাকে তিন সপ্তাহ করে দিন অ্যাটলিস্ট! এখনো এতগুলো দিন ওর সঙ্গে থাকলে নিশ্চিত ডিভোর্সের আগেই আমার জন্য পাবনায় সিট বুক করতে হবে!”

শাফায়াত ভোঁতা মুখে তাকিয়ে মনেমনে বলে,
– “আপনার নয়, মনে তো হচ্ছে তিনমাস এর মধ্যে আমার ই পাগল হয়ে পাবনায় ছুটতে হবে।”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টেবিলে হাত রাখে শাফায়াত। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে তাদের,
– “না ম্যাম,সময় কমানো যাচ্ছেনা। বরং আমি বলবো, এই তিনটে মাস একে অন্যকে সময় দিন। বাচ্চাকে নিয়ে,আবার একারাও ঘুড়তে যান। কথা বলুন। নিজেদের সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন।”

প্রজ্ঞা এবার এনজামের দিকে চেয়ে অভিযোগ জানায়,
– “ও সারাদিন ফোনে মুখ গুঁজে থাকে। আমি পাশে বসে কথা বললেও ও বলে, ‘হুম, ভালো বলেছো’। অথচ শুনেই না!”
এনজাম রেগে বলল,
– “তুমিও কম যাও না। ইনস্টাগ্রামে একটা ছবি দিতে ২০টা ক্যাপশন লিখে আমার মাথা খাও!”

শাফায়াত মনে মনে মাথা চাপড়ে হাসিমুখে বলে,
– “মনে হচ্ছে, আপনাদের এই নব্বইটা দিন ‘এয়ারপ্লেন মোড’-এ কাটানো দরকার।”

এনজামের কপালে গাঢ় ভাঁজ বিদ্যমান। অসন্তুষ্টিতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– “ওসব টাইম ফাইম জানিনা আমি। নেক্সট টাইম ওর মাথায় ভূত চাপলে সেই ভূতসহ ওকেই বের করবো বাসা থেকে।”

প্রজ্ঞাও দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে তাকে,
– “বের করেই দেখো না একবার! জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো আমি তোমাকে।”

এনজাম ক্ষুব্ধ নজরে তাকিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় চেম্বার থেকে। প্রজ্ঞা ভেংচি কেটে শাফায়াতের দিকে তাকায় একবার। টেবিলে হাত রেখে একটু ঝুঁকে চোখ-নাক কুঁচকে বলে,
– “বান্দার নামের মধ্যেই সমস্যা,বুঝছেন? ওর বাপ মা নিশ্চিত জন্মের সময়ই বুঝতে পেরেছিলো, এই ছেলে বড় হয়ে রোজরোজ বউয়ের সাথে গ্যাঞ্জাম করবে। তাইতো নাম রেখেছে, এনজাম।”

শাফায়াত প্রকাশ্যে হেসে ফেলে এবার। প্রজ্ঞা হুট করে পিছু ঘুরতেই দেখে এনজাম বাইরে গিয়ে গাড়িতেও উঠে বসেছে। টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়েই সে তড়িঘড়ি করে ছুটে যায় সেদিকে, সঙ্গে চেঁচিয়ে ডেকে ওঠে,
– “আরে এই গ্যাঞ্জাম না এনজাম, দাড়াও! আমাকে নিয়ে যাও!”

#চলবে?