নব্বই পাতার ডায়েরী পর্ব-২২+২৩+২৪

0
117

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_২২
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

দরজার খটখট শব্দে কাজে ব্যাঘাত ঘটলো শাফায়াতের। চোখে চশমা এঁটেছিল খানিকক্ষন এর জন্য। প্রচণ্ড মাথা ব্যাথায় ঔষধ খেয়েও কিছু তথ্য পর্যবেক্ষণ এ ব্যস্ত সে। বাসায় গিয়ে কাজ করা তার খুব একটা পছন্দের নয়। যতটা সম্ভব চেম্বার থেকেই এগিয়ে রেখে তারপর যায়। তবুও মাঝেমধ্যে গভীর রাত অবধি কাজ করতে হয় তাকে।
ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। চশমাটা খুলে পাশে রেখে বললো,
– “কে? আসুন।”

অ্যানি ধীর পায়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। শাফায়াত খুব বেশি অবাক হলোনা। কারণ সে নিজের স্টুডেন্ট পড়াতে যাওয়ার সময় বলেই গিয়েছিলো ‘একটু বসবেন। কথা আছে আপনার সঙ্গে।”

অ্যানি বিপরীত চেয়ারে বসে জানতে চায়,
– “বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেললাম?”

শাফায়াত স্মিত হেসে বললো,
– “মিথ্যে বলবো না, আপনার কথা একেবারে ভুলেই বসেছিলাম। কাজের প্রেশারে মাথা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।”

– “আপনি কী অসুস্থ?”
আচমকা শাফায়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো অ্যানি। সে বেশ অবাক হয়ে শুধায়,
– “কেন?”

– “নাহ। এমনিই মনে হলো।”

শাফায়াত দু আঙুলে চোখদুটো কচলে বললো,
– “ও কিছুনা। আপনি বলুন, ভাই-ভাবীর কী অবস্থা?”

অ্যানি যেন এই প্রশ্নের ই অপেক্ষায় ছিলো। শাফায়াত জিজ্ঞেস করা মাত্র চিন্তিত স্বরে বললো,
– “আর জিজ্ঞেস করবেন না… এদের অবস্থা আমার মাথায় ঢুকছেনা। একেতো ভাবী প্রায় দশদিন হতে চললো বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছে, ভাইয়ার কোনো তাড়াই নেই তাকে নিয়ে আসার! সে দিব্যি খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমোচ্ছে। আর ওদিকে ভাবীও ছেলে-মা-বোন নিয়ে ঘুরছে ফিরছে আনন্দ করছে। মেনেই নিলাম তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব আসা দরকার ছিলো, তাহলে অ্যাটলিস্ট নিজেদের গুরুত্ব টা বুঝবে। কিন্তু হচ্ছে তো উল্টোটা। তারা বরং সিঙ্গেল লাইফ ইনজয় করছে। এগুলো তো ভালো লক্ষণ নয়!”

শাফায়াত এর মাঝে চিন্তার কানাকড়িও দৃশ্যমান হলোনা। সে নিশ্চিন্তে বসে প্রশ্ন করলো,
– “সবে তো দশদিন। এটাকে এত বড় করে দেখছেন কেন?”

অ্যানি বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
– “দশদিন! বড় করে দেখবোনা? আপনিতো এমনভাবে বলছেন যেন এটা দিন নয় ঘন্টা।”

শাফায়াত ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
– “আপনাদের তো এই এক সমস্যা, জীবনটাকে নাটকীয় রূপে নিয়ে যেতে চান।
আপনার মতে কী হওয়া উচিৎ ছিলো? মিসেস প্রজ্ঞা বাপের বাড়ি চলে যাবেন, এনজাম সাহেব বাড়ি ফিরে এসেই তার অনুপস্থিতিতে হতভম্ব হয়ে যাবেন? একাকীত্ব অনুভব করা শুরু করবেন, আর তিনদিন যেতে না যেতেই পুরাদস্তুর পাগল হয়ে যাবেন বউয়ের জন্য? তার সব চিন্তাধারা বদলে যাবে, বুঝে যাবেন, নাহ, এই মেয়েকে ছাড়া থাকা সম্ভব না। ম্যাডাম এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। তারপর স্যার উদভ্রান্তের মতো ছুটে যাবেন। একটা সিনেম্যাটিক দৃশ্য তৈরি হবে। কী, এটাই চান?”

অ্যানি চোখ নামিয়ে নিলো। প্রকৃতপক্ষে সে তো এটাই চায়। কিন্তু তা কী আর মুখে বলা যায়?

শাফায়াত এবার শান্তস্বরে বলে,
– “বাস্তবে এমনটা হয়না। হয়…নয়া প্রেমের ক্ষেত্রে। আর একশোতে দু চারজনের ক্ষেত্রে হলেও হতে পারে, সেটা খুবই রেয়ার।
হিউম্যান সাইকোলজি কী বলে আমি জানিনা। তবে আজ অবধি অনেক ধরণের মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে,কথা হয়েছে। তাই আপনার দৃষ্টিতে দ…শ দিন আমার কাছে সামান্যই মনে হচ্ছে।

এখানে আরেকটা কথা আছে, আপনি কী মনোবিজ্ঞানী? প্রীতি বললো আপনি নাকি কার্ডিওলজিস্ট হতে চান? তাহলে উপর উপর দেখেই কী করে বলছেন, তারা খুব ইনজয় করছে সিঙ্গেল লাইফ?”

– “আপনারাও না! সব বিষয়ে যুক্তি দাঁড় করাতেই হবে। অতো কিছু কী ভেবেছি নাকি আমি?”

শাফায়াত তার মিনমিনে কণ্ঠ শুনে হেসে ফেললো। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
– “এ অবধি যে কটা ডিভোর্স করিয়েছি, তার মধ্যে সেভেন্টি পার্সেন্ট দম্পতীর কিন্তু লাভ ম্যারেজ ছিলো।
বলতে পারেন, প্রেমের বিয়েতে বিচ্ছেদের হার বেশি হয় কেন?”

– “সময়ের সাথে ভালোবাসা কমে যায় বলে?”

মাথা নাড়লো শাফায়াত। তার দিকে চেয়ে বললো,
– “উঁহু, তারা নতুন সম্পর্কের ভারটা সামলে উঠতে পারেনা বলে।

প্রেমের সময়টা কিন্তু অনেক দীর্ঘ ও হতে পারে। এই ধরুন দু বছর,তিন বছর,পাঁচ বছর এমনকি দশ বছর ও হয়ে থাকে। এই পুরো সময়টা তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করেছে। অগাধ স্বপ্ন নিয়ে ধৈর্য ধরেছে। বিয়ের পর যখন সম্পর্কের নামটা বদলে যায়, এত বছরের স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নেয়না, তখনি সম্পর্কের মাঝে বিতৃষ্ণা জন্ম নেয়।
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে কিন্তু সেই অপেক্ষা, স্বপ্নগুলো থাকেনা। তারা চায় একজন যোগ্য স্বামী অথবা স্ত্রী। নিজেদের সেভাবেই গড়ে তোলে। তাদের সম্পর্কটা একই ধাঁচে এগিয়ে যায় বলে সবকিছুর সঙ্গে তারা শুরু থেকেই অভ্যস্ত হয়ে যায়।

তবুও, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে। আমার মনোভাবটা বললাম শুধু।”

– “উকিলেরা কী খুব দারুণভাবে চিন্তা করেন?”

শাফায়াত তাকালো তার পানে। কপাল টিপে বললো,
– “হয়তো।”

অ্যানি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানতে চায়,
– “কিন্তু তাদের সম্পর্কের পরিনতি কী? দুজনেই তো হাত গুটিয়ে বসে আছে।”

– “প্রথম কথা, আমি তাদের নব্বই দিন অর্থাৎ প্রায় তিনমাসের সময় দিয়েছি। সময় কিন্তু খুব দ্রুত এগিয়ে যায়। ইচ্ছে থাকলে তিনটে মাস চোখের পলকেই পার করা যেত। কিন্তু তারা এই সময়টাতে নিজেরাই নিজেদের পর্যবেক্ষণ করছে। এখনো কিন্তু পঞ্চাশ দিনের বেশি সময় আছে। সময়টা তাদের উপরেই ছেড়ে দিন। দেখা যাক কী হয়।”

অ্যানি আর কথা খুঁজে পেলোনা। বুঝলো, তার হাতে অপেক্ষা ব্যতীত কিছুই করার নেই। শাফায়াত মিনিটখানেক বাদে হুট করেই বলে উঠলো,
– “আমার বাবা-মায়ের ও কিন্তু লাভ ম্যারেজ। শুনেছি, চার বছরের প্রেম ছিলো। অনেক কষ্টে পরিবারকে রাজি করিয়েছিলেন।”

অ্যানির ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,
– “আল্লাহ! তাই?”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় শাফায়াত। একই সঙ্গে বলে,
– “বাট দে আর নট টুগেদার নাও।”

হাসি মিলিয়ে যায় অ্যানির। শাফায়াত মৃদু হেসে বলে,
– “আপনি যা ভাবছেন তা নয়। আলহামদুলিল্লাহ, দে আর স্টিল অ্যালাইভ।”

– “তাহলে?”

– “দে গট ডিভোর্সড। বাইশ-তেইশ বছর তো হবেই।”

অবাক চোখে তাকালো অ্যানি। শাফায়াত সময় দেখে বলে,
– “রাত হয়েছে ভালোই। আপনার বাড়ি যাওয়া উচিৎ ম্যাম। চলুন, বাস অবধি কম্পানি দেই।”

— — —
প্রজ্ঞার চলে আসার এগারোতম দিনে গিয়ে তাদের বাড়িতে পা পড়লো এনজামের। ছেলেকে দেখার জন্য মনটা আনচান করছিলো। বোধ হয় বউকে দেখার জন্যও।
বিয়ের পর বউয়ের অভাব বোঝা যায় প্রয়োজনীয় জিনিস খোঁজার বেলায়। এই একটা কাজ মেয়েমানুষের চেয়ে ভালো কেউ করতে পারেনা। কোথায় কী রেখেছে তাদের মনে থাকবেই! এনজাম শত চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারেনা। আগে তো রাখতো। বউ আসায় মেধাশক্তির হার কমে গেছে নিশ্চিত।

এইতো কাল রাতের কথা, আলমারি তন্নতন্ন করে খুঁজেও গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল পাচ্ছিলো না সে। একসময় তো উচ্চস্বরে ডেকেই বসলো প্রজ্ঞাকে। পরক্ষনে মনে পরলো, সে তো বাড়িতে নেই। খানিকক্ষণ থম মেরে বসে রইলো সে। বাসাটা এত্ত শান্ত হয়ে আছে! প্রণয়ের খিলখিলিয়ে হাসার আওয়াজ নেই, প্রজ্ঞার হুমকি ধমকি নেই। একেক জায়গায় প্রণয়ের রংপেনসিল এর নতুন নতুন দাগ নেই। এইতো কদিন আগের কথা। প্রজ্ঞা রান্নার মাঝেই বসার ঘরে এসে চেঁচিয়ে বললো,
– “অ্যাই! সোফার ওপর সবুজ রং কেন?”
এনজাম প্রণয়কে কোলে নিয়ে দোষ এড়াতে বললো,
– “এটাই তো ট্রেন্ড। ভেবে দেখো, আমাদের সোফা এখন পরিবেশবান্ধব।”
প্রজ্ঞা খুন্তি হাতে কপাল চাপড়ে বললো তখন,
– “তুমি আর ও মিলে আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে!”

বুকে একটু চিনচিনে ব্যাথা হলো বুঝি? খুবই সামান্য হোক! জ্বলনটা প্রচন্ড বেড়ে গেলে এনজাম খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত বোধ হয়।
প্রেম এমন এক মহামূল্যবান অনুভূতি, যা মানুষকে সর্বক্ষন পোড়ায়। একবার এই অগ্নিকুণ্ডে যে ব্যক্তি ঝাঁপ দেবে, সে সারাজীবন স্বেচ্ছায় পুড়তে চাইবে। হৃদয়ে জ্বলন থাকলেই যে প্রেমের প্রাপ্তি, শীতলতা অনুভব করা যায়! কেননা আগুন ই যদি না থাকে, তবে তো জলের ও কোনো মূল্য থাকবে না।

এনজাম হয়তো আসতো, আরো দুদিন পর। আজই আসা হলো শাশুড়ি মায়ের দৃঢ় কণ্ঠের আমন্ত্রণে। তার নাকি জামাই আদরের বিরাট শখ জেগেছে। মহিলা তাকে ঠিক কেমন চোখে দেখে,বুঝতে পারেনা এনজাম। তাকে বোঝাই যায়না!
শুক্রবার ছিলো বিধায় পাঞ্জাবী পড়েই এলো এনজাম। সঙ্গে রয়েছে টুশি,অ্যানি। এরাও আমন্ত্রিত। অ্যানি তো ভেবেই রেখেছে,প্রজ্ঞা তাদের সঙ্গে আজ ফিরে যাবেই। শাফায়াতের সমস্ত কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে সে পুনরায় বাস্তবতাকে সিনেমা ভাবছে। এই যেমন, দুজন দুজনকে কতগুলো দিন পর দেখবে! প্রজ্ঞা অশ্রুসজল চোখে তাকাবে, এনজাম ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে। চোখের জলটা মুছিয়ে দিয়ে বলবে, ‘অনেক হয়েছে,এবার বাড়ি চলো।’

কিন্তু তার ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে প্রজ্ঞা সামনে এলো হাসিমুখে। গোসল সেরে বেরিয়েছে সবে। মাথায় তোয়ালে প্যাঁচানো। দরজা খুলে টুশিকে দেখামাত্রই এনজামের কোল থেকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো তাকে। চোখে মুখে অজস্র চুমু খেতে খেতে উঁচু স্বরে ডাকলো প্রণয়কে,
– “প্রণয়, টিভি বন্ধ করে নিচে এসো। দেখো কে এসেছে।”

অ্যানিকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে এলো সে। এনজামের দিকে তকালোই না! যেন সে এক ফুডপান্ডার ডেলিভারি বয়। দুটো খাবার ডেলিভারি দিতে এসেছে।
এনজামের ধ্যান কাটলো ছেলের ডাকে। বাবা বলে ডেকেই সিঁড়ি থেকে নেমে এসে সোজা তার কোলে চড়লো প্রণয়। দু’গালে চুমু খেয়ে কাঁধে মুখ লুকিয়ে বললো,
– “আই মিসড ইউ বাবা!”

এনজাম ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি রেখে তাকে নিয়েই ভিতরে এলো। সোফায় বসে তাকে আদর করে বললো,
– “মিস ইউ টু বাবা। ওয়েট,তোমার জন্য গিফট আছে।”

বলেই পকেট থেকে দুটো ললিপপ বের করে তার হাতে দিলো। প্রণয় খুশি হয়ে আরো দুটো হামি দিলো তার গালে। উৎসাহ নিয়ে বললো,
– “বাবা জানো আমি কী বানিয়েছি? তুমি দেখবে? দাঁড়াও আমি নিয়ে আসি।”

কোল থেকে নেমে দাঁড়াতেই টুশিও প্রজ্ঞার কোল থেকে সুড়সুড়িয়ে নেমে গেল। দৌড়ে এসে বললো,
– “আমিও দাবো, আমিও দাবো!”

প্রণয় তার হাতটা ধরে সিঁড়ির দিকে এগোলো। মৃদুস্বরে বুঝিয়ে গেলো,
– “শুনো, তুমি কিছু ধরবানা বুঝছো? আমি দেখাবো, সুন্দর করে দেখবা। ঠিক আছে?”

– “ঠিক আচে।”

এনজাম এবার ফিরে চাইলো প্রজ্ঞার দিকে। স্বামীর বিরহে তার শুকিয়ে যাওয়ার কথা,চোখের নিচে কালি পরে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একি! মায়ের আদর যত্নে তার মুখে থাকা দুয়েকটা ব্রোন এর দাগও কী দূর হয়ে গেল? নাকি সে কয়েকদিন বাদে দেখছে বলে এমন মনে হচ্ছে?

অ্যানি প্রজ্ঞার সঙ্গে কথার মাঝে জানতে চাইলো,
– “প্রীতি আপু কোথায় গো? দেখছিনা তো।”

– “গোসলে গিয়েছিলো তো। ঘরেই আছে। চলো তুমি, উপরে চলো।”

অ্যানিকে সঙ্গে নিয়ে সিঁড়ির কাছাকাছি যেতেই এনজাম কেশে উঠলো একবার। অ্যানি একনজর তাকিয়ে দ্রুতপায়ে উপরে উঠে যায়। প্রজ্ঞা নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকাতেই এনজাম এসে দাঁড়ায় তার সামনে। ঘাড় চুলকে বলে,
– “খবর দেওয়ার ছিলো একটা।”

প্রজ্ঞা তাকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে বলে,
– “ব্যস্ত আছি। পরে বোলো।”

এনজাম বিস্মিত নজরে চেয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। কীসের কাজ,কীসের ব্যস্ততা! মেয়েটা আসলেই অতিরিক্ত ভাব দেখাচ্ছে।

– “অবশেষে এলে তাহলে?”
শাশুড়ি মায়ের কণ্ঠ শুনে পিছু ঘুরলো এনজাম। সালাম দিয়ে বললো,
– “ভালো আছেন?”

– “হুম…আছি বেশ।”
ওড়নায় হাত মুছে নিলেন তিনি। বোধ হয় রান্নাঘর থেকে এসেছেন। এনজাম ঘড়িতে একবার সময় দেখে বলে,
– “নামাজের সময় তো হয়েই এলো। নামাজ পড়ে আসছি।”

পাপিয়া আক্তার সরু চোখে তাকালেন। গম্ভীর গলায় বললেন,
– “দাঁড়াও… তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে।”

#চলবে?

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_২৩
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

– “তোমার স্ত্রী ভালো আছেতো তোমার কাছে?”
এনজামের দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বললেন পাপিয়া আক্তার। এনজাম অবাক চোখে তাকায়। প্রজ্ঞা কিছু বলেছে তাকে? হতেই পারেনা।
এনজাম দাঁড়িয়ে ছিলো। পাপিয়া হাতের ইশারায় বসতে বললেন। সে মাথা নিচু করে বসতেই বললেন,
– “ঘাবড়াচ্ছো কেন? শুধু তো জিজ্ঞেস করেছি। মা হিসেবে জিজ্ঞেস তো করতেই পারি। পারিনা?”

– “সম্মোধনটা ‘তোমার স্ত্রী’ না হয়ে ‘আমার মেয়ে’ হলে ভালো লাগতো।”

পাপিয়া মৃদু হেসে বললেন,
– “সে তোমার স্ত্রী, তোমারই দায়িত্ব। তোমার দায়িত্বাধীনে সে কেমন আছে, সেটাই জানতে চাই।”

– “প্রশ্নটা তাকেই করতে পারতেন। সে-ই ভালো উত্তর দিতে পারতো।”

– “উঁহু। জবাবদিহিতার দায়িত্ব তোমার। শুরু থেকে কথাটা আমার তোমার সঙ্গেই হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে।”

এনজাম চোখ নামিয়ে নেয়। পাপিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললেন,
– “তোমার মুখে বড়বড় কথা খুব মানায়। মুখের উপর তো ঠাসঠাস করে শ’খানেক কথা বলে দিতে পারো। এখন চুপ করে আছো কেন?”

এনজাম তবুও কথা বলেনা। কত বড় মুখ করে তো বলেছিলো, ‘আপনার মেয়েকে আপনার চেয়ে ভালো আমি বুঝতে পারি’। সেখানে প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারাটা লজ্জার বটেই।
পাপিয়া আক্তার চোখ সরিয়ে বললেন,
– “আমি আমার মেয়েদের সঙ্গে কখনো উঁচু গলায় কথা বলিনি। যত যাই হোক, তাদের কেবলই বুঝিয়েছি। এমনকি অতি নিচু মানের কাণ্ড ঘটানোর পরও। বলতে দ্বিধা নেই, তারা অনেক আদরে বড় হয়েছে। সঙ্গে নিয়মকানুনের মাঝেও।
তাদের জীবনসঙ্গী হিসেব আমি এমন কাউকেই নির্বাচন করতে চেয়েছি যারা ওদের যত্নে রাখবে, ভালো রাখবে। যেখানে তারা কোনোকিছুর অভাব বোধ করবেনা।”

– “আশা করছি আপনার মেয়েকে কোনোকিছুর অভাব বোধ করতে দেইনি আমি। যদিও তার শখ আহ্লাদ কম, তবুও… সবটাই পূরণ করেছি।”
জোর গলায় বললো এনজাম। পাপিয়া তার দিকে চেয়ে নরম স্বরে বললেন,
– “মন বলছিলো, তুমি ওকে ভালো রাখবে। সেজন্যই সময় দিয়েছি। নইলে কোনোভাবে আমায় মানাতে পারতেনা কিন্তু। মেয়েকে নিজের আয়ত্তে আনা আমার জন্য খুব একটা কঠিন কাজ নয়।”

একটুক্ষণ থেমে বললেন তিনি,
– “আমার মেয়ের চোখের একফোঁটা জলের দায়ও আমি তোমাকেই দিতে পারি। কান্নাকাটি করার জন্য তাকে তোমার কাছে পাঠাইনি।
যেহেতু তোমরা স্বামী-স্ত্রী, নিজেদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে ঝামেলা হতেই পারে। সে নিয়ে কথা বলছিনা। তবে সেই ঝামেলার কারণে আমার মেয়ের চোখে জল এলে, আমি অবশ্যই প্রশ্ন তুলবো। মনে রেখো,অন্য যেকোনো স্বামীর চেয়ে নিজের বউয়ের প্রতি তোমার দায়িত্ব বেশি। তাই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেনা। কোনো বিষয়ে ওয়াদা করলে তা ভুলে গেলে চলেনা।”

বিব্রতবোধ এর তুলনায় অধিক বিস্মিত হলো এনজাম। প্রজ্ঞার ভাবভঙ্গি দেখে তার একবারের জন্যও মনে হলোনা সে কান্নাকাটি করেছে বলে। যদি কষ্টই পেয়ে থাকে তাহলে সরাসরি বললেই তো হতো। এনজাম কী ফিরিয়ে নিয়ে যেতোনা তাকে?

– “তোমার স্ত্রী-কে বলবে, বাপের বাড়িতে এসে যেন কান্নাকাটি না করে। তাকে তো আমি আর আটকে রাখিনি,আসতেই বলিনা। যদি যেতে চায় তো সঙ্গে করে নিয়ে যেও। আমার কাছে দুদিন থাকলেও তা হাসিমুখে থাকে যেন। আর যাই হোক,তার খারাপ চাইনি কখনো। বিশেষ করে তোমায় ডাকলাম এই কথা বলতে, বউ-বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হও। প্রেমিক সবাই হতে পারলেও স্বামী সবাই হতে পারেনা। প্রেম সবাই করলেও সংসার সবার দ্বারা হয়না।
ভালোভাবে বলছি। এরপর আমার মেয়ের চোখে জল দেখলে আর বুঝিয়ে বলবোনা।”

এনজামের থেকে কোনো উত্তর শোনার অপেক্ষায় রইলেন না পাপিয়া। উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলেন। পুনরায় সোফায় বসে বললেন,
– “আর হ্যা, বিবাহযোগ্য এক শালী আছে তোমার। যথাযোগ্য পাত্রের সন্ধান পেলে জানিও। আফটার অল, বাড়ির বড় জামাই তুমি।”

এনজাম স্মিত হেসে জানতে চাইলো,
– “আপনি মানেন?”

– “আমার মানা না মানার অপেক্ষা যেহেতু করোনি, তাই এই প্রশ্ন না করাই ভালো। তবুও জানতে চাইলে, না মানার কোনো কারণ নেই।
প্রীতির বাবা দেশে নেই। সেই হিসেবে আমার পরে ওর একজন গার্জিয়ান তুমি।”

এনজাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জানতে চাইলো,
– “ও কী বিয়ে করতে চায়? জিজ্ঞেস করেছেন?”

– “বিয়ের বয়স তার অনেক আগেই হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েদের ইস্টাবলিশ হয়ে বিয়ে করাটা আমার পছন্দের। এখন না বলার কোনো কারণ নেই। তার নিজের পছন্দ থাকলে আমাকে জানাতো। আর আমি মেয়ের অনুমতি ব্যতীত ধরেবেধে বিয়ে দেবোনা। নজরে ভালো পাত্র থাকলে জানাতে বলেছি।”

গম্ভীর গলায় বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন তিনি। সে যাওয়ামাত্রই উঠে দাঁড়ালো এনজাম। দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। প্রজ্ঞার সঙ্গে কথা বলা উচিৎ।
কিন্তু আবারো থেমে যায় সে। বলবে টা কী? জিজ্ঞেস করবে, তুমি কাঁদছিলে কেন? মুখ থেকে বেরোবে সেই কথা?

মেয়েরা নাকি প্রিয় মানুষ প্রসঙ্গে ভীষন দূর্বল হয়। ছেলেরা তাদের ন্যায় আবেগী হয়তো কখনো হতেও পারবেনা। সৃষ্টিকর্তা কী মেয়েদের বানিয়েছেন ই এমন বৈশিষ্ট্য দিয়ে? রাগ,অভিমান এর মাঝেও তারা কাঁদবে, যার জন্য কাঁদছে তাকে বলবেনা। কই,এনজাম তো এমন নয়। ইচ্ছে করলে, কষ্ট হলে ঠিকই সঙ্গেসঙ্গে কল দিতো।

ভাবনার মাঝে সেই প্রজ্ঞার সঙ্গেই দেখা হলো তার। হুট করেই সামনে চলে এলো মেয়েটা। দুহাত ভর্তি চকলেট। এনজামের সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগার ফলে কয়েকটা চকলেট পড়ে গেল নিচে। এনজাম ঝুঁকে সেগুলো তুলে তার হাতে দিলো। প্রজ্ঞা তাকাতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে বারবার। চুলের তোয়ালেটা খোলেনি এখনো। পাশ থেকে বেরিয়ে একগোছা চিকন চুল তার চোখের উপর এসে পড়েছে। এনজাম একটা উপকার করলো। তর্জনী দ্বারা সেই চলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো। একদৃষ্টে চেয়ে থাকায় চোখাচোখি হলো তাদের। দুজনের মুখভঙ্গি নির্বিকার। বোধ হয় জানতে চাইছে, বিপরীত ব্যক্তি কেমন আছে। তার মাঝে আদেও কোনো সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে কী?

ঠিকঠাক উত্তর না পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো দুজনেই। কদিনের দূরত্ব আসলেই তাদের মাঝে একটা দেওয়াল সৃষ্টি করেছে। এইযে কেউ মুখফুটে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছেনা। খানিকটা ব্যাকুল হলেও তা প্রকাশ করতে ব্যার্থ হচ্ছে। এগুলো কি দূরত্বের ফল নয়?

– “কী বলার ছিলো? বলো।”
চকলেটগুলো ঠিকঠাকভাবে ধরে বললো প্রজ্ঞা। এনজাম জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
– “সিঙ্গাপুর যাচ্ছি নেক্সট উইক। সপ্তাহখানেক থাকা পড়বে।”

– “ওহ,আচ্ছা। প্রণয়কে বলে যেও।”

– “তোমার লাগবে কিছু?”

প্রজ্ঞা মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। চলে যেতে নিলেই এনজাম পিছু ডেকে বললো,
– “পরশু ভার্সিটির রি-ইউনিয়ন। জানো?”

– “হুম,শুনলাম।”

এনজাম সামনে এলো। জিজ্ঞেস করলো,
– “যাবে?”

প্রজ্ঞা চোখ তুলে বললো,
– “ভেবে দেখি। ইচ্ছে হলে যাবো।”

প্রজ্ঞা আবারো পাশ কাটিয়ে পা বাড়ালো। এনজাম না ঘুরেই নিচু স্বরে বললো,
– “যেও…অপেক্ষায় থাকবো।”

প্রজ্ঞা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো একবার। গত রি ইউনিয়ন এও তারা দুজন হাতে হাত রেখে হাসিমুখে পা রেখেছিলো সেই চিরচেনা জায়গায়। তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত যেখান থেকে। যেখানে পাশাপাশি বসে নিজেদের অপেক্ষার পাঠ চোকানোর প্রহর গুনেছে, সেই একই স্থানে অপর ব্যক্তির অপেক্ষায় বসে থাকাটা কী খুব সুখকর?

– – –
প্রণয়,টুশি খেলনা নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। কতদিন পর সঙ্গী পেয়েছে তারা! দশদিনের খেলা এখন একসঙ্গে খেলতে হবে। প্রীতি গোসল সেরে বের হয়নি এখনো। সবে আধঘণ্টা হলো। আরো অন্তত দশমিনিট লাগবে তার বেরোতে।

অ্যানি বিছানায় বসেবসে বাচ্চাদের দেখতে দেখতেই হুট করে মাথায় এক বুদ্ধি এলো তার। কী দারুণ বুদ্ধি! উৎফুল্ল চিত্তে উঠে এসে প্রণয়ের সামনে বসলো। খেলনাগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,
– “পরে খেলবি। আগে আমার কথা শোন মনোযোগ দিয়ে।”

– “কী শুনবো?”

অ্যানি প্রশস্ত হেসে বললো,
– “একটা কাজ করতে হবে সোনা। আমি শিখিয়ে দেবো,ঠিক আছে?”

প্রণয় জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে রইলো। অ্যানি নিচু হয়ে বললো,
– “শোন, তুই এখন মাম্মা বাবার কাছে যাবি। তারপর বলবি, ‘আমার একটা বোন চাই’। নরমালি বললে চলবেনা, একদম খুব জোর দিয়ে বলতে হবে। লাগলে কান্নাকাটি শুরু করে দিবি। মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করবি। ঠিক আছে?”

প্রণয় কিছু না বুঝেই মাথা নাড়লো। অ্যানি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “বল, গিয়ে কী বলবি?”

– “বলবো, তোমার একটা বোন চাই।”

চোখ কপালে উঠে গেল অ্যানির। দ্রুত মাথা নেড়ে বললো,
– “আসতাগফিরুল্লাহ…না না, আমার চাইনা। তোর চাই। একটা ছোট্ট বোন আসলে ভালো হবেনা বল?”

প্রণয় অমনি ভ্রু কুঁচকে নিলো। বুকে হাত গুঁজে গাল ফুলিয়ে বললো,
– “নাহ,আমার বোন চাইনা।”

অ্যানি হতবাক স্বরে বলে,
– “ওমা! কেন চাইনা?”

– “নাহ চাইনা। বোন আনলে মাম্মা আমাকে আদর করবেনা তো!”

– “ওলে বাবালে! নাহ সোনা,মাম্মা খুব আদর করবে। আরো তখন তুই একটা ছোট্ট বাবু পাবি বাসায়। ছোট ছোট হাত-পা, তুই কোলেও নিতে পারবি! খেলতে পারবি। কত মজা হবে তখন!”

প্রণয় ভাবলো একটু। আসলেই কী মজা হবে? কিন্তু তার ভাবনার মাঝেই চেঁচিয়ে উঠলো টুশি। রাগী কণ্ঠে বললো,
– “পন্নয়ের বুন চাই কেন? ওল বুন আতবে কেন? আমারো বুন চাই।”

অ্যানি তার গাল টেনে দিয়ে বলে,
– “তুই আর বোন দিয়ে কী করবি? তুই চাইলে ভাই চাইবি,বুঝলি?”

টুশি মানলোনা। গাল ফুলিয়ে বললো,
– “না না না… আমার বুন ই চাই। বুন এনে দাও, এখনি দাও!”

– “আমি কই দিয়া আনতাম? আসতাগফিরুল্লাহ, আমার তো বিয়েই হয়নি। আগে তো জামাই চাই, তারপর দেবো ভাই-বোন।”

টুশি হঠাৎই চোখ পিটপিট করে বললো,
– “তোমাল জামা চাই? তোমাল কী জামা নেই?”

প্রণয়ও একই সুরে বললো,
– “হ্যা, তোমার কী জামা নেই পিপি?”

অ্যানি দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “আরে জামা না, জামাই! জামাই চাই জামাই!”

– “নাহ! বুন চাই। পন্নয়ের বুন চাই, তাহলে টুচির ও বুন চাই। বুন এনে দাও!”

বলেই ঠোঁট উল্টে কাঁদতে শুরু করলো টুশি। প্রণয় ভাবনা চিন্তা শেষে বললো,
– “আমার বোন চাইনা। বোন লাগবে না।”

টুশি এবার আরো জোরে কাঁদা শুরু করলো। অ্যানি কানটা চেপে ধরে বললো,
– “আরে পাগলি, ভাই-বোন তোদের চাই। আর জামাই তো আমার চাই।”
টুশি কান্না থামিয়ে দিলো। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে অ্যানির গালে হাত বুলিয়ে বললো,
– “আচ্চা, আমি আম্মুকে বলবো, তোমাকে জামা কিনে দিবে। ঠিক আচে?”

প্রণয় ও তার অপরগালে হাত বুলিয়ে দিলো। আশ্বাস দিয়ে বললো,
– “আমিও বাবাকে বলবো। তোমাকে সুন্দর জামা কিনে দিবে।”

অ্যানি কাঁদোকাঁদো চোখে তাকালো দুজনের দিকে। কান ধরে অনুরোধের সহিত বললো,
– “মাফ কর বাপ! আমার জামাই চাইনা!”

#চলবে?

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_২৪
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

– “আপনার মা-বাবা এখন কোথায় থাকেন? আপনি তাদের সঙ্গে থাকেন না?”

নিচু স্বরে জানতে চাইলো অ্যানি। শাফায়াত শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,
– “আব্বু থাকেন যশোরে, আমাদের বাড়িতেই। চাচারাও থাকে। আর মা তার সংসারে। আমি কলেজে ওঠার পরই ঢাকাতে চলে আসি,একাই থাকি।”

– “আপনার বাবা বিয়ে করেননি?”
প্রশ্ন করে নিজেই খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো অ্যানি। তবে শাফায়ান পূর্বের ন্যায় বললো,
– “উঁহু, করেননি। সবাই জোর করেছিলো অনেক, নিজেই ইচ্ছে প্রকাশ করেননি। মা-ও পাঁচ ছয় বছর একাই ছিলেন, বাপের বাড়িতে। পরবর্তীতে আর সম্ভব হয়নি। নাহলে হয়তো তিনিও একাই থাকতেন।
ডিভোর্সের পর ছেলেরা নিজ ইচ্ছেতে একা থাকতে পারলেও একটা মেয়ের জন্য বিষয়টা এত সহজ হয়না। সমাজ তাদের ভালো থাকতে দেয়না। কাছের মানুষগুলোও ধীরেধীরে পর হয়ে যায়। এখন সে নারী যদি স্বাবলম্বী হয়,তাহলে হয়তো সম্ভব। আমার মা ছিলেন গৃহিনী, শিক্ষাগত যোগ্যতাও খুব একটা ছিলোনা। দ্যাটস হোয়াই…”

– “আঙ্কেল যদি জীবনটা একাই পার করবেন, তাহলে ডিভোর্সটা কেন হয়েছিলো? যেখানে আন্টিও হয়তো ক’টা বছর ভালো ছিলেন না।”

শাফায়াত মুচকি হেসে শুধায়,
– “এটাই তো বোঝালাম আপনাকে। অনেকক্ষেত্রে মানুষ মনে করে,তার সঙ্গে আমার আর থাকা সম্ভব নয়। ভালোবাসাটা আগের মতো নেই, ফুঁড়িয়েই গেছে! দুজনের মধ্যকার এই চিন্তা থেকেই তারা আলাদা হবার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ যারা ভালোবাসা পেয়ে অভ্যস্ত, তাদের কাছে ভালোবাসা বিহীন সংসার একটা অক্সিজেন বিহীন ঘরের মতো।”

– “এটা তাদের ভুল ধারণা ছিলো?”

– “শতভাগ নিশ্চয়তা তো দিতে পারছিনা। এটা কেবল তারাই জানেন। আমি খুব ছোট ছিলাম তখন, অতকিছু মনেও নেই।
তবে… যদি তারা ডিভোর্সের কথা না ভেবে অন্য সমাধান খুঁজতেন, নিজেদের সময় দিতেন, তাহলে হয়তো সম্পর্কের পরিনতি এমন হতো না।
যেমন দেখুন, আব্বুকে আমি এখনো মাঝেমধ্যে একা,চুপচাপ বসে থাকতে দেখি। মাঝেসাঝে ফ্যামিলি ফটোটা বের করে দেখেন। হয়তো মা-ও দেখেন। কিন্তু… সময় ফুড়িয়ে গেলে আর দেখে কী লাভ?”

শাফায়াতের সাবলীল কণ্ঠ শুনে অ্যানি বিস্ময়ভরা কণ্ঠে জানতে চায়,
– “আপনার কষ্ট হচ্ছেনা কথাগুলো বলতে?”

শাফায়াত নিরবে হেসে মাথা চুলকে নেয়। ঘন চাপদাড়িতে হাত বুলিয়ে হুট করেই অ্যানির দিকে চেয়ে বললো,
– “এ ধরণের কষ্ট কমানোর কোনো মেডিসিন হয় নাকি ডাক্তার সাহেবা? হলে বলুন। আর নাহলে কষ্ট পেলেই কী আর না পেলেই বা কী?”

অ্যানি চোখ নামিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে,
– “সরি।”

শাফায়াত প্রসঙ্গ বদলে জানতে চাইলো,
– “ইদানিং রোজ ই পড়াতে আসেন নাকি?”

– “স্টুডেন্ট এর পরীক্ষা সামনে। তাই প্রায় রোজ ই আসা হয়।”

– “তাই বলি… রোজ আপনার দেখা কী করে পেয়ে যাই!”

অ্যানি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। রোজ কথা বলতে আসাটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছেনা। তার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে এতে। ভ্যানিটিব্যাগ টা কাঁধে ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। স্মিত হেসে বলে,
– “আজ আসি।”

– “আব..দাঁড়ান।”
থেমে যায় অ্যানি। শাফায়াত চোখ নামিয়ে টেবিলের এক কোণায় রেখে দেওয়া হলুদ গোলাপটার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। তা অনুসরণ করে অ্যানিও তাকালো ফুলটার দিকে। অ্যানির পরণেও হলুদ রঙের সালোয়ার কামিজ। কিছুটা সময় চুপ থেকে শাফায়াত তাকালো তার পানে। স্মিত হেসে বললো,
– “রাস্তায় একটা মেয়ে খুব অনুরোধ করে বললো ফুল নেওয়ার জন্য, বারণ করতে পারলাম না।
কিন্তু মনে হচ্ছে, ওটা আপনার কানের পাশে মানাবে খুব। আপত্তি না থাকলে নিয়ে যান।”

– “আমি?”
অবাক চোখে চেয়ে বললো অ্যানি। শাফায়াত চোখ নামিয়ে বলে,
– “এখন এটা দেওয়ার মতো কেউ আছে বলে মনে পড়ছেনা। এখানেই পড়ে থাকবে,শুকিয়ে যাবে। তাই… আপনার আপত্তি থাকলে সমস্যা নেই।”

শাফায়াত আর বললোনা কিছু। খানিকটা সময় বাদে লক্ষ্য করলো একটা মেয়েলী হাত ফুলটাকে তুলে নিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি ফুটলো তার।
অ্যানি ফুলের ডাঁট অর্ধেকটা ভেঙে সন্তর্পণে কানের পাশে গুঁজে নিলো। শাফায়াত তাকাতেই জানতে চাইলো,
– “ঠিক আছে?”

মুচকি হেসে বললো সে,
– “হুম…পারফেক্ট।”

দরজার দিকে চোখ পড়তেই উঠে দাঁড়ালো শাফায়াত। ঘাড় বাঁকিয়ে বলে উঠলো,
– “প্রীতি? ওখানে কী করছো?”

খানিকটা চমকে উঠলো প্রীতি। হাতে থাকা টিফিনবক্সটা শক্ত করে চেপে ধরে হেসে উঠলো মুহূর্তেই। ভিতরে এসে বললো,
– “মাত্রই এলাম। অ্যানিও আছো দেখছি, পড়াতে এসেছিলে বুঝি?”

মাথা নাড়লো অ্যানি। প্রীতি টিফিন বক্সটা টেবিলের উপর রেখে বললো,
– “এইযে মিস্টার স্যার, আমি কিন্তু ওয়াদা ভুলিনা। বলেছিলাম পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো। একদম নিজের হাতে বানিয়েছি,কারো হেল্প নেইনি। এই মেয়ের ভাতিজা কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে গেছে, সেই অবস্থায় বানিয়েছি। চিনির বদলে লবন দিয়েছি কিনা জানিনা ভাই। খেয়ে দেখুন। অ্যানি, তুমিও নাও।”

শাফায়াত বেশ খুশি হলো। একপ্রকার ছিনিয়েই নিলো পিঠার বাটিটা। একটা পিঠা বের করে কামড় দিয়েই বড়বড় চোখে চেয়ে বললো,
– “তোমাকে দেখে তো মনে হয়না এত ভালো রান্না জানো। এক্সিলেন্ট! লিটারেরি মায়ের কথা মনে পড়ছে আমার। আমি গেলেই এত ভালো পিঠা বানায়! অ্যানি,টেস্ট করে দেখুন।”

অ্যানিও মুচকি হেসে নিলো একপিস। প্রজ্ঞা,প্রীতি দুজনের হাতের রান্নার স্বাদ সম্পূর্ন এক। তবে প্রীতি একটু বেশি রান্না জানে, এই এক পার্থক্য।
শাফায়াত পুরো পিঠেটা শেষ করে বললো,
– “আসলে লোকে ঠিকই বলে, যে রাধে সে চুলও বাধে। শুধু আমার একটা ভাই থাকলেই চলতো!”

প্রীতি হেসে উঠলো তার কথায়। মাথা নুইয়ে নিলেও চোখ পড়লো অ্যানির বাম কানের পাশে গুঁজে রাখা হলুদ গোলাপটার দিকে। তৎক্ষণাৎ চোখ নামিয়ে নেয় সে। অন্যের জিনিসের দিকে নজর দেওয়া একদম ভালো কাজ নয়…একদমই না।

— — —
বেসিনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারকয়েক মুখে পানির ঝাপটা দিলো প্রীতি। ভেজা চুলগুলো হাতের সাহায্যে উল্টে আয়নায় চেয়ে নিজের লালচে চোখদুটো দেখে বড্ড বিরক্ত হলো। রীতিমতো বকে উঠলো নিজেকে,
– “হোয়াটস রং উইথ ইউ? কী হয়েছে? কিচ্ছু হয়নি…কিছুই না। ইউ আর টোটালি ফাইন,ওকে?”

কিছুই কাজ হলোনা। অস্থির লাগলো খুব। টাইলসের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজলো সে। বড় বড় নিঃশ্বাস টেনে চোখ খুললো। শান্ত গলায় বললো,
– “এসব তো হয়েই থাকে! আর তুই কী বাচ্চা? না, ইউ আর ফুললি ম্যাচিউরড। হি ইজ জাস্ট আ সিনিয়র, নাথিং এলস। বুঝতে পেরেছিস? কোনো বাচ্চামো নয়, একদম না।”

নিজেকে আরো শ’খানেক কথা বোঝানোর মাঝেই দরজা ধাক্কালো প্রজ্ঞা। চেঁচিয়ে বললো,
– “ঘুমাইছিস নাকি তুই? এক ঘণ্টা হয়েছে বাথরুমেই বসে আছিস। ঐ প্রীতি, দরজা খোল। আসলেই ঘুমায় গেলি নাকি?”

প্রীতি আরো একবার চোখেমুখে পানি দিয়ে দরজা খুললো। প্রজ্ঞা তার দিকে তাকানোর পূর্বেই চেয়ারের উপর থেকে তোয়ালেটা নিয়ে মুখ মুছতে লাগলো। হাই টেনে বললো,
– “ঐ একটু চোখ লেগে গেছিলো আরকি।”

– “চোখে কী হয়েছে?”
ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো প্রজ্ঞা। প্রীতি বিছানায় বসে বললো,
– “কী আর হবে? সারাদিন মাথার মধ্যে এই সেই ভাবনা রাখতে রাখতে এখন চোখ জ্বলছে আমার। জীবনের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আর তোরাই বা কী! নিজে তো ছাওপোনা নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস। বোন যে বড় হয়েছে সেদিকে নজর নেই? কোথায় একটু বিয়েশাদির কথা ভাববি তা না, কারো কোনো ভাবনাই নেই।”

প্রজ্ঞা হেসে উঠে তার পাশে বসলো। হাতে দুটো খোঁচা দিয়ে বললো,
– “আম্মু কিন্তু আসলেই ছেলে দেখছে। আমি এখনো বলছি, পছন্দের কেউ থাকলে জানিয়ে দে। আমি ম্যানেজ করে নেবো।”

– “হয়…নিজের টাই ম্যানেজ করতে পারোনা আবার আসছো স্বান্ত্বনা দিতে। যাহ ভাগ…”

প্রজ্ঞা হতাশ কণ্ঠে শুধায়,
– “কী ভাগ্য রে ভাই! এতদিনেও কারো প্রেমে পড়লিনা। আর আমি এক গর্দভ। কোন আদিকালে এক ছোলা মুরগির প্রেমে পড়ে বসেছিলাম। মানে কীভাবে! কেমন দেখাতো তখন,ইশ!”

প্রীতি হেসে উঠলো তার কথায়। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো,
– “একেকটা বয়সের প্রেমের ধরণ আলাদা হয় বুঝলি? তুই যেই বয়সে প্রেমে পড়েছিলি, সেই বয়সে অধিকাংশ মেয়েরা ছেলেদের ফ্লার্টিং,মিষ্টি কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়। শতশত আশা,প্রশংসা এগুলো ওই বয়সে খুব মনে ধরে। রূপটাও ফ্যাক্ট, তবে খুব বেশি না। মোদ্দা কথা, তখন তুই কেবল এক ছেলেকেই ভালোবেসে ফেলবি। পুরুষের গাম্ভীর্যতা খুব একটা টানবে না।
কিন্তু একটা বয়সে গিয়ে ঐ মুগ্ধটা টা সত্যিকারের পুরুষের প্রতিই আসে। সৌন্দর্য এখানেও ভ্যারি করে না। একটা ম্যাচিউর এইজ এ এসে মেয়েরা ইস্টাবলিশড, চরিত্রবান, গাম্ভীর্যতাপূর্ণ, বুদ্ধিমান একজন পুরুষ খোঁজে। ঠোঁটকাটা,সাইকো ছেলেদেরকে যতই আকর্ষণীয় মনে হোকনা কেন, বাস্তবিক অর্থে মেয়েরা আটকায় সেই ব্যাক্তিত্ববান পুরুষের মাঝেই। অবশ্যই, সব ধরণের ছেলেদের জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট জীবনসঙ্গী ঠিক করে রেখেছেন, তারাই হয়তো ঐসব ছেলেদের বুঝবে।
তবে ব্যাক্তিত্ববান কোনো পুরুষের সান্নিধ্য নারীর জন্য খুব একটা ভালো নাও হতে পারে। যার চরিত্র সুন্দর, কথাবার্তার ধরণ সুন্দর, ব্যবহার ভালো, সামান্য হাস্যরসিক… এমন পুরুষের সঙ্গে অধিকাংশ মেয়ে খুব বেশিদিন বন্ধুত্বের সম্পর্কে থাকতে পারেনা। বাধ্য হয় তার প্রতি মুগ্ধ হতে, অজান্তেই তাকে চেয়ে বসতে।

আল্টিমেটলি ব্যাপার টা কী দাঁড়ালো? এসব মানুষ নিজের অজান্তেই অনেকের মন ভাঙবে। যেখানে তার দোষই নেই!”

অর্ধেক কথাই মাথার উপর দিয়ে গেলো প্রজ্ঞার। এমন গুছিয়ে সে এ জনমে কথা বলতে পারেনি বোধ হয়। উকিল মানুষের সমস্যা এই একটা, ছোট্ট একটা কথার প্রেক্ষিতে কত বড় ব্যাখা দিয়ে দিলো!
কথা ঘুরিয়ে সে জানতে চাইলো,
– “রি-ইউনিয়নে যাবি কাল?”

– “আবার জিগায়! যাবোনা কেন? একশোবার যাবো। বাট সকালে একটু কাজ আছে। তুই এগারোটার মধ্যে রেডি থাকবি। আমি জাস্ট বাসায় এসে রেডি হয়েই বের হবো।
কিন্তু ওয়েট, তুই আমার সাথে যাবি?”

– “হ্যা তো?”

প্রীতি বাঁকা হেসে বলে,
– “না মানে তোমার জামাই অ্যালাও করবে তো? এমনিতেই কদিন ধরে তোমার পাশে তার জায়গাটা আমি দখল করে বসে আছি। কবে না সে এসে দুইটা আছাড় মা’রে আ…”

পিঠের উপর দুম করে এক কিল বসালো প্রজ্ঞা। বালিশ হাতে মা’রতে গেলেই প্রীতি চটজলদি উঠে গিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
– “মারামারি জামাইয়ের সাথে করো সোনা। বেডায় কতগুলা রাত একা…”

প্রজ্ঞা তেড়েমেড়ে এলো তার দিকে।
– “প্রীতির বাচ্চা!”

– “সরি সরি সরি…আর বলতাম না গ্যাঞ্জামের বউ। তোমার জামাই এর নাম ই আমি মুখে আনবো না।”
বলেই সে দিলো এক দৌড়। এই ঘর এই মুহূর্তে তার জন্য মোটেই নিরাপদ নয়।

— — —
“প্রজ্ঞারাণী,

রাজকুমারীর ন্যায় চলন তোমার। অথচ আমার তোমায় রাণী মনে হয়। কারো মনের রাজপ্রাসাদে তুমি যে কী সুন্দর নিজের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছো, তা জানো? আঁড়েআঁড়ে চেয়ে যখন লাজুক হাসি দাও, মনে হয় সেই রাজপ্রাসাদে ফুলের বৃষ্টি নামছে। সেই ফুলের সুবাস কী তুমি অনুভব করতে পারো? আমি কিন্তু বেশ অনুভব করছি, কী মিষ্টি সেই সুবাস! চারিপাশের সবকিছু ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় একমুঠো ফুল এনে তোমার মাথার উপর ছড়িয়ে দেই। তোমারও ই ইচ্ছে হয়, সেই ফুল গ্রহণ করতে?
এমনটা আগে হয়নি। সত্যি বলছি, বিশ্বাস করো! কক্ষনো হয়নি।
গুছিয়ে লিখতে পারিনা কিছু। যে বিশ্রি হাতের লেখা, তুমি কতটা বুঝলে কে জানে! তোমার হাতের লেখা কিন্তু খুব সুন্দর। সেই সুন্দর লেখা পড়ার সুযোগ দাও, একটা কিছু উত্তর দাও। আর চুপ করে থেকোনা প্লিজ!
আমি কোনো রাজা না হলেও, মনের সেই ছোট্ট রাজপ্রাসাদে তোমায় রাণী বানিয়েই রাখবো। কথা দিচ্ছি।

ইতি
যাকে কদিন যাবৎ পাত্তা দিচ্ছোনা”

কী পরিমাণ বাচ্চামো মিশে আছে এই একটা চিঠিতে! অথচ এটা পড়েই প্রজ্ঞা সম্মতি জানিয়েছিলো। বিপরীতে ছোট্ট এক চিঠি লিখেছিলো গোটাগোটা শব্দে।
ঠিক এই জায়গাটাতে, পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে তার হাতে চিঠিটা গুঁজে ছুটে পালিয়েছিলো এনজাম। পরদিন প্রজ্ঞাও একই কাজ করেছিলো। যার ফলশ্রুতিতে আজ তাদের সম্পর্ক এতদূর এগিয়েছে।

চিঠিটা প্রজ্ঞার কাছে,সে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো। এনজামকে দেখার সুযোগ ও দেয়নি। অথচ এর প্রতিটা শব্দ তার মুখস্ত। দু ঘণ্টা বসে এই এলোমেলো শব্দগুলো লিখেছিলো সে এক সপ্তাদশী কিশোরীর জন্য। মনে থাকা স্বাভাবিক।

আরো একবার পিছু ঘুরে দেখলো এনজাম। প্রজ্ঞা আসছেনা কেন? তার আসা উচিৎ। আগেপিছের সবকিছু ভুলে এই একটা স্থান তাদের স্মৃতিচারণের সাক্ষী হতেই পারে।

#চলবে?