#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_২
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন
পুরোটা রাস্তাজুড়ে তারা স্বামী-স্ত্রী নিজেদের নির্বাক রূপ ধরে রাখলেও বিপত্তি বাধলো ফ্ল্যাটে প্রবেশের সঙ্গেসঙ্গে। অফিসে আর যাওয়া হয়নি এনজামের। দরজার লক খুলে ভিতরে ঢুকে জুতো খুলতে খুলতে ব্যাগটা রাখে শু র্যাকের উপর। ব্যাস, এটুকুই যথেষ্ট ছিলো প্রজ্ঞার তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার জন্য। এনজামের সামনে এসে ব্যাগের দিকে নির্দেশ করে বলে সে,
– “এটা কী করলে? ব্যাগটা ওখানে রাখলে কেন? ওটা কী ব্যাগ রাখার জায়গা? তোমার মতো অলস মানুষ আমি এ জীবনে দুটো দেখিনি। সরাও ওটা। এক্ষুনি সরিয়ে ঠিক জায়গায় রাখবে।”
এনজাম দু হাত কোমড়ে রেখে শু র্যাকের উপরে থাকা ফুলদানির দিকে তাকায়। তারই কথার বিপরীতে যুক্তি দিয়ে বলে,
– “এটা শু র্যাক। জুতো রাখার জায়গা, ফুলদানি রাখার নয়।”
প্রজ্ঞা এবার দু’হাতে নিজের মাথা দেখিয়ে শুধায়,
– “হ্যা তো আমার মাথাটাও চুল এবং উকুন রাখার জায়গা, ছাগল পালার মাঠ নয়। তারপরও তো পালছি, আস্ত একটা আটষট্টি কেজির ভোটকা ছাগল! আর সে ঘাস ভেবে আরাম করে মাথার ঘিলুগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে কচকচ করে খাচ্ছে।”
ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেংচি কেটে চলে যেতে নিলেই এনজাম হাত চেপে ধরে আটকে দেয় তাকে। ক্ষুব্ধ নজরে চেয়ে বলে,
– “সাতষট্টি কেজি চারশো আটান্ন গ্রাম কে তুমি আটষট্টি কেজি বলতে পারোনা। সামান্য ওয়েটটুকু অবধি জানোনা তুমি! ছিহ!”
প্রজ্ঞা বাঁকা হেসে বলে,
– “সাতষট্টি না ছাই! যে হারে গিলছো কদিন যাবৎ তাতে এই মুহূর্তে মাপলেই দেখবে সত্তর ছাড়িয়েছে।”
বলেই হুট করে এনজামের পেটে গুঁতো দেয় সে। এনজাম কড়া চোখে তাকাতেই বলে,
– “যেভাবে ভুঁড়ি বাড়ছে তাতে কদিন বাদে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো পেট ধরে ধরে হাটা লাগবে। দাড়ি টারি কেটে বোরখা,হিজাব,নিকাব পরে বেরোলেই প্রশ্ন করবে মানুষ, ‘ভাবি কয় মাস?’ হুহ…”
এনজাম দমে যায়না। বরং বিপরীতে টিপ্পনি কেটে বলে,
– “কে যেন আগের জামাকাপড় পরতে না পেরে হতাশায় ভুগছিলো কদিন আগে?”
থতমত খেয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় প্রজ্ঞা। তীক্ষ্ণ নজরে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই শব্দ করে পা ফেলে চলে যায় ঘরের দিকে। এনজাম নিজেও যায় তার পিছুপিছু। আধাঘণ্টা বাদে আবার প্রণয় অর্থাৎ তার একটিমাত্র ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে।
প্রজ্ঞা ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকতেই এনজাম বাহির থেকে দরজা আটকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষন চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়, শার্টের উপর থেকেই পেটটা কয়েকবার নেড়েচেড়ে মনেমনে বলে,
– “আসলেই কী ভুঁড়ি বেড়ে যাচ্ছে?”
।
প্রণয়ের স্কুল খুব একটা দূরে নয়। পাঁচ মিনিট সময় লাগে হেটে যেতে। তার স্কুল চলে সকাল দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত। এনজামের আজ যেতে একটু দেরিই হলো। গোলগাল চেহারার ছয় বছরের চশমা পরিহিত ছেলেটা দাঁড়িয়ে ছিলো স্কুল গেইটের সামনে। ডাক্তার তাকে চশমা দিয়েছে এইতো ছয়মাস হলো। তার চোখের সমস্যা নিয়েও সেবার প্রজ্ঞা-এনজামের মাঝে কী এক তুমুল ঝগড়া বাধলো! ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরোনোর পরই প্রজ্ঞা রেগেমেগে বললো,
– “এই সব তোমার দোষ! ছয় বছরের বাচ্চার চোখে চশমা? অফিস থেকে ফিরে নিজেও পায়ের উপর পা তুলে লেজ নাড়িয়ে টিভি দেখো,ওকেও পড়তে না বসিয়ে টিভির সামনে বসিয়ে দাও। সব তোমার আলসেমির ফল”
এনজাম ঠান্ডা গলায় বলে,
– “আর তুমি যে ফোন হাতে ধরিয়ে দাও, যেন সিরিয়াল দেখার সময় বিরক্ত না করে,তার বেলায়? আমি সারাদিন অফিস করে এসে কত দেখবো?”
– “তো আমি কি সারাদিন বাড়িতে বসেবসে ঘোড়ার ঘাস কাটি? অফিসে আমিও যাই,ওকে?”
প্রণয় তখন মাথায় হাত রেখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “বাবা,মাম্মা! চশমাটা ডাক্তার দিয়েছে। তোমরা ঝগড়া কেন করছো?”
এনজাম আর প্রজ্ঞা থতমত খেয়ে মুখ চেপে রয়েছিলো তখন। তবে তর্ক এখানেই থেমে রয়নি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে চশমার দোকানে যাওয়ামাত্রই প্রজ্ঞা বলে ওঠে,
– “ওর জন্য রঙিন একটা চশমা দরকার। হলুদ বা লাল। ছোট বাচ্চা,দেখতে ভালো লাগবে।”
এনজাম তখন ভ্রু কুঁচকে বলে,
– “হলুদ? লাল? তুমি ওকে কী বানাতে চাইছো? বিজ্ঞাপনের মডেল? কালো দাও, ক্লাসি দেখাবে।”
– “কালো চশমা পরলে ওকে বলদ রাজনীতিবিদ মনে হবে।”
– “আর লাল চশমা পরলে ওকে সার্কাস থেকে পালিয়ে আসা জোকার মনে হবে। নাম হবে, ‘দ্যা লিটল রেড গ্লাস কিড’।
প্রণয় তখন আগ্রহ নিয়ে শুধায়,
– “আমার সুপার পাওয়ার ওয়ালা চশমা চাই। যেটাতে রঙ বদলাবে। সকালে কালো, রাতে লাল।”
দোকানি তখন হাসতে হাসতে বলে,
– “আপনাদের জন্য ট্রান্সপারেন্ট ফ্রেম দিচ্ছি। রং নিয়ে আর ঝগড়া হবে না।”
বর্তমানে তার চোখে নীল রঙের চশমা। বহু কষ্টে মা-বাবা এই রঙটি পছন্দ করেছেন তার জন্য।
এনজাম এসেই কোলে তুললো ছেলেকে। দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে খেতে খেতে বাপ ব্যাটা পৌঁছালো বাসায়। এনজামের কাছে চাবি ছিলো। লক খুলে ছেলেকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকতেই দেখলো প্রজ্ঞা একটা বড় বাটিতে পপকর্ন নিয়ে টিভিতে কোনো এক ড্রামা দেখতে বসেছে। প্রণয় কে দেখেই হাত বাড়িয়ে ডাকলো,
– “ওহ মাই বেবি! কাম হেয়ার।”
প্রণয় দৌড়ে আসে মায়ের কাছে। গাল ভেঙে হেসে বলে,
– “মাম্মা জানো, বাবা আইসক্রিম কিনে দিয়েছে আমাকে। অনেক ইয়াম্মি ইয়াম্মি!”
প্রজ্ঞা তার কথা শোনামাত্রই আড়চোখে এনজামের দিকে তাকিয়ে বলে,
– “কিপটার ঘরের কিপটা! আমার জন্য একটা আনলে কী হতো?”
এনজাম বালিশের পাশ থেকে রিমোটটা নিয়ে ড্রামা বদলে দিলো। পাশে বসে বললো,
– “পরশুদিন যে আমার চোখের সামনে বসে একাএকা আইসক্রিম খাচ্ছিলে তার বেলায়? এখন এনে খাও নিজে।”
প্রজ্ঞা তাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে প্রণয়কে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তার স্কুল ড্রেস খুলে দিতেই এনজাম পাশ থেকে জিজ্ঞেস করে,
– “এত তারাতারি রান্না শেষ তোমার?”
– “নাহ। রান্না করার মুড নেই।”
এনজাম ভ্রু কুঁচকে বলে,
– “রান্না করতে মুড লাগে?”
– “অবশ্যই লাগে! ব্যাডা মানুষ তো,এসব বুঝবানা।”
এনজাম এবার উঠে এসে দাঁড়ায় তার সামনে। বুকে হাত গুঁজে জানতে চায়,
– “তো এখন খাবো টা কী?”
প্রজ্ঞা ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে শুধায়,
– “বিরিয়ানি ছিলো ওর জন্য, সেটাই খাইয়ে দিবো। আর ফ্রিজে আগের দিনের ফুলকপির তরকারি আছে। ভাত বসিয়ে দেবো এখন। ব্যাস!”
এনজাম রেগে গিয়ে হাতে থাকা রিমোটটা ছুড়ে মারলো বিছানায়। ফোঁসফোঁস করে বললো,
– “আমি ব্যাচেলর থাকতেও এত বাসি খাবার খাইনি যতটা তোমার সাথে থেকে খেতে হচ্ছে।”
প্রজ্ঞা কিছু বলতেই যাচ্ছিলো, এমন সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে এসে হাজির হলো এনজামের বড় বোন আনজুম। দুজনের ফ্ল্যাট আলাদা হলেও মাঝের একটা দরজা দ্বারা আসা যাওয়া করা যায়।
আনজুম এসেই ভাইয়ের বাহু চেপে ধরে তেঁতে উঠে বললো,
– “কে খাবে বাসি খাবার? ঐ জমিদারনী আবার তোরে বাসি খাবার খাওয়াচ্ছে ভাই? এই মেয়ে! কী সমস্যা তোমার? এই আড়াইজন মানুষের খাবার ও রাঁধতে পারোনা?”
প্রজ্ঞা চোখমুখ শক্ত করে মুখ ফিরিয়ে বলে,
– “এত দরদ থাকলে আপনিই রেঁধে খাওয়ান ভাইকে। আমার ইচ্ছে না করলে আমি রান্না করবোনা,ব্যাস।”
আনজুম দুদিকে মাথা নাড়িয়ে আহাজারি শুরু করলো এবার,
– “হায়হায় রে! কী কপাল তোর ভাই! আল্লাহ কোন কুক্ষণে এই অকর্মণ্যের মুখ দেখিয়েছিলেন তোকে?”
প্রজ্ঞা তার কথায় ফুঁসে উঠে বললো,
– “আপনার ভাই এত কাজের হলে সেই একদিন রান্না করুক না! রোজ কেন আমার ভরসায় থাকতে হবে তাকে?”
– “কোন ঘরে পুরুষ মানুষকে রান্না করতে দেখছো তুমি হ্যা? ঐসব তোমাদের বাড়িতেই হয়। আমাদের মধ্যে হয়না,বুঝছো? আর আমি এখনো বেঁচে আছি। আমার ভাইকে বাসি খাবার খাওয়াতে হবেনা।
ভাই, ইলিশ মাছ রান্না করছি। প্রণয়কে নিয়ে এসে খেয়ে যাবি। মহারানী একাএকাই খাক তার বাসি খাবার।”
বোনের সামনে এনজাম সর্বদাই নিরব। বউয়ের পক্ষেও নেই,বোনের পক্ষেও না। এই সময়ে তাকে দেখলে লোকে বলবে, এ তো পৃথিবীর সবচেয়ে আলাভোলা ছেলেটা!
আনজুম কড়া চোখে আরো একবার প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে চলে যায় নিজের ফ্ল্যাটে। প্রজ্ঞা তাকে এককথায় কুটনি ননাশ হিসেবে আখ্যায়িত করে। শশুর-শাশুড়ি যেখানে তাকে মাথায় তুলে রাখে, সেখানে এই এক মহিলা প্রতিপদে তার দোষ খুঁজে বেরায়। অবশ্য নিজের সমবয়সী এক মিষ্টি ননদিনী ও রয়েছে প্রজ্ঞার, নাম তার অ্যানি।
প্রজ্ঞা প্রণয়কে গোসল করিয়ে শার্ট পড়িয়ে দিতেই সে ছুটলো ফুফির বাসার দিকে। এনজাম বিছানায় বসে ফোনে কথা বলছিলো। প্রণয়ের ভেজা জামাকাপড় বারান্দাত মেলে দিতে যাওয়ার সময় তার কিছু কথা এলো প্রজ্ঞার কানে,
– “কী? আধাঘণ্টা লাগবে? আচ্ছা আচ্ছা,এখনি দিয়ে যান। হ্যা,এসে ফোন দিলেই হবে।”
কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়েছে এনজাম, বারান্দার পাশেই অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিলো। প্রজ্ঞা তাকিয়ে ভাবে, নিশ্চই তার জন্য খাবার অর্ডার দিয়েছে সে!
খুশিতে চোখে জল না এলে জোর করে জল আনার চেষ্টা করলো প্রজ্ঞা। নাহ, ছেলে ভালো আছে। কেবল মাথায় ঘিলুর সঙ্গে অন্য কিছু যুক্ত হয়েছে। এই যা!
প্রজ্ঞার হাতদুটো নিশপিশ করলো। চোখ বন্ধ করে পিছন থেকে এনজামকে জড়িয়ে ধরতেই যাচ্ছিলো, এমন সময় সে ফোন কেটে অন্যদিকে সরে যায়। ফলস্বরুপ,প্রজ্ঞার আর তাকে জড়িয়ে ধরা হলোনা। বরং দুম করে পরে গেল টাইলস বসানো মেঝেতে। শব্দ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে প্রজ্ঞাকে দেখতেই এনজাম দু সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বিছানায় বসে বললো,
– “খুব ভালো হয়েছে। বরকে যে সম্মান দাওনা,তার ফল এগুলো।”
প্রজ্ঞা রাগী চোখে তাকায়। হাটুতে লেগেছে তার,ব্যাথাও করছে। অন্যকিছু না বলে সে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– “শ’য়’তা’ন তুই আগে উঠা আমাকে।”
এনজাম এগোলো না। বরং ভ্রু নাচিয়ে বললো,
– “তুই তোকারি করিস কেন? যাও,উঠাবোনা। উঠো একাএকা ই।”
বলে সে চলে যেতে নিলেই প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করলো,
– “দাঁড়াও। তুমি কথা বলছিলে কার সাথে?”
– “ডেলিভারি ম্যান। পারফিউম অর্ডার দিয়েছিলাম একটা।”
– “পারফিউম!”
– “হ্যা, আর কী?”
ঠোঁট ভেঙে কান্না পেলো প্রজ্ঞার। উঠতে গিয়ে হাটুতে ব্যাথা অনুভব করতেই চেঁচিয়ে ডাকলো,
– “এনজাইমের বাচ্চা! আমাকে তুলে দিয়ে যাহ।”
।
রাতের বেলা প্রণয় ঘুমোতে যায় তার ছোট ফুফির কাছে। অ্যানি পড়াশোনার সুবাদে বোনের বাসাতেই থাকে তিনবছর যাবৎ। ভাতিজা থাকলে সেও একজন সঙ্গী পায়।
দুপুরের সব ঘটনা বাদ দিয়ে রাতে এনজামের সঙ্গে আলোচনায় বসলো প্রজ্ঞা। পাশে বসে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,
– “শুনো,আর তো তিনমাসের ই ব্যাপার। আমার মনে হয় কী, এ কদিন ঝগড়াঝাঁটি কমিয়ে করা উচিৎ।”
– “হুম হুম। তারপর?”
ফোনের দিকে নজর রেখে বলে এনজাম। প্রজ্ঞা সেদিকে তাকিয়ে শুধায়,
– “ঝগড়া কখন কম হবে বলতো?”
– “কখন?”
– “যখন আমরা দূরে দূরে থাকবো তখন।”
এনজাম আড়চোখে তাকাতেই বলে প্রজ্ঞা,
– “একটা মিনিমাম ডিসটেন্স মেইনটেইন করতে হবে। সবসময় একহাত দূরে থাকবে তুমি আমার চেয়ে। যেহেতু এখানে সিনেমার শুটিং চলছেনা,তাই ঘুমাবো এক বিছানাতেই। কিন্তু মাঝে কোলবালিস দেওয়া থাকবে। দুজনের আলাদা কম্বল থাকবে। বুঝেছো?”
– “হুম। আর?”
প্রজ্ঞা এবার বাঁকা হেসে বলে,
– “আর সবচেয়ে বড় বিষয়। এই তিন মাসে, নো হাগ,নো কিস। আল্টিমেটলি নো টাচ। মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”
এনজাম তার কথায় হুট করেই হেসে ফেললো। চুলে একবার হাত বুলিয়ে বললো,
– “এসব আমাকে বলতেছো কেন? বিয়ের পর বউ রেখে মাসকে মাস ব্যাচেলর থাকার অভ্যাস আমার আছে। তার চেয়ে ভালো কথাটা নিজের মাথায় ঢোকাও,কাজে দেবে।”
– “নিজের মাথায় ঢোকাবো মানে? এই তোমার কী আমাকে ছ্যাচড়া মনে হয়?”
– “অবশ্যই!”
প্রজ্ঞা লম্বা শ্বাস টেনে শান্ত রাখলো নিজেকে। এনজামের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– “তাহলে তুমি শর্তে রাজি?”
এনজাম সঙ্গেসঙ্গে হাত মিলিয়ে বলে,
– “হুম,রাজি।”
প্রজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে তাকায় তখন। এনজাম তার এহেন দৃষ্টির কারণ না ধরতে পেরে বলে,
– “কী?”
প্রজ্ঞা দু সেকেন্ডে বারকয়েক হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে এক ঝটকায় নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে,
– “তুই আবার ছুঁলি কেন আমাকে?”
#চলবে?
#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_৩
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন
– “এইযে স্যার! আপনার টাকাটা নিয়ে যান।”
চিকন এক মেয়েলী স্বরে বলা কথার প্রেক্ষিতে বাইক স্টার্ট দেওয়ার পূর্বেই থেমে যায় শাফায়াত। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই মেয়েটি ছুটে এসে দাঁড়ায় তার বাইকের পাশে। শাফায়াত আপাদমস্তক মেয়েটিকে পরখ করে নেয় একবার। কালো রঙের গোল জামা পরিহিত মেয়েটিকে তার নেহাৎই বাচ্চা মনে হলো। নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমাকে বললেন?”
মেয়েটি হাসিমুখে জবাব দেয়,
– “হ্যা,আপনাকেই তো বললাম। বিশ টাকা ধার নিয়েছিলাম একদিন। মনে নেই?”
শাফায়াত একটু চেষ্টা করতেই মনে পড়লো প্রায় বিশদিন আগের কথা। মেয়েটি সেদিন মাস্ক পরা ছিলো বোধ হয়। তাকে অতিরিক্ত ভাবার অবকাশ না দিয়ে মেয়েটি নিজে থেকেই বলে,
– “খুচরো ছিলোনা আমার কাছে। রিক্সাওয়ালা মামা চ্যাঁচামেচি করছিলো। আপনি তখন এসে খুচরো বিশ টাকা দিয়েছিলেন আমাকে। মনে পড়েছে?”
শাফায়াত সেদিনের ঘটনা মনে করতে পেরে মৃদু হেসে বলে,
– “হুম, পড়লো মনে।”
– “এই বিল্ডিং এর চারতলায় একজন স্টুডেন্ট পড়াই আমি। ঐযে নিহার,ক্লাস টেনে পড়ে,ওকে। ঢাকায় গিয়েছিলো ওর বাবা ডাক্তার দেখাতে। সঙ্গে ওকেও যেতে হয়েছিলো। তাই এতদিন পড়াতে আসা হয়নি। আপনার টাকাটাও দেওয়া হয়নি।”
শাফায়াত একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “আপনি পড়ান ওকে?”
প্রশ্ন শুনে ফিঁক করে হেসে ফেললো মেয়েটি। আঁকাবাঁকা দাঁতে তার হাসিটা সুন্দর দেখালো, সঙ্গে ভেসে আসা রিনরিনে শব্দ কানে বেশ শ্রুতিমধুর ঠেকলো। মেয়েটি হাসি থামিয়ে বললো তাকে,
– “আপনি কী ভেবেছেন,আমি স্কুলে পড়ি? অবশ্য সবাই তাই ভাবে। কিন্তু আমি অতো ছোট নই। এম বি বি এস সেকেন্ড ইয়ারে আছি।”
শাফায়াত বিস্ময়ভরা চোখে চেয়ে দেখে। এইটুকু মেয়ে কিনা মেডিকেলে পড়ে! মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে বিশ টাকার একটা নোট বের করলো। শাফায়াতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
– “কারো ধার রাখতে নেই। এইযে আপনার বিশ টাকা। আর সেদিনের উপকারের জন্য আবারো ধন্যবাদ।”
শাফায়াত তার হাতে থাকা চকচকে নোটটার দিকে তাকিয়ে রয়। মেয়েটি আবারো তাগাদা দিয়ে বলে,
– “কী হলো? নিন! প্লিজ,নেবোনা বলবেন না। আমার ভালো লাগবেনা।”
শাফায়াত চোখ তুলে স্মিত হেসে জানায়,
– “এক কাজ করুন, টাকাটা আপনার কাছেই রেখে দিন। আমার চেম্বার এই নিচতলায়। যেহেতু একই বিল্ডিং এ পড়াতে আসেন, একদিন ডেকে চা খাইয়ে দেবেন। দু-কাপ চা বিশ টাকা। এককাপ আমার,এককাপ আপনার। ঠিক আছে?”
মেয়েটি কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলে,
– “আমি আবার পরশু আসবো পড়াতে। আপনি আটটার দিকে থাকেন?”
– “হুম। থাকি তো।”
– “বেশ। থাকবেন কিন্তু! আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে তো আবার। আসি তাহলে?”
– “হুম।”
মেয়েটি উল্টোদিকে পা বাড়ানো মাত্রই শাফায়াত কী ভেবে ডাকলো তাকে,
– “ম্যাম, আপনার নামটা?”
মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে মিষ্টি হেসে জানায়,
– “আনাহিতা। আনাহিতা খান। ডাকনাম অ্যানি।”
…
নব্বই দিনের মাঝে তখন দুদিন কেটেছে। শত ঝগড়াঝাঁটি,কথা কাটাকাটির মাঝেও তাদের দিনগুলো খুব দ্রুতই পেরিয়ে যায়।
পেশাগত দিক থেকে এনজাম একজন আর্কিটেক্ট। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অফিস টাইম থাকলেও কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে এই সময় তিন থেকে চার ঘণ্টা বেড়ে যায় অনেক সময়। আনুমানিকভাবে তার বাসায় আসতে সাড়ে ছয়টা বাজে।
অন্যদিকে প্রজ্ঞার অফিস টাইম বেলা একটা থেকে রাত নয়টা অবধি। একটু আগে বেরোলেও তার ফিরতে ফিরতে নয়টা কী সাড়ে নয়টা বেজেই যায়। বাকি যেটুকু সময় তারা একসঙ্গে থাকে, তার মাঝেও অর্ধেক সময় ঝগড়া করেই কেটে যায়। বাচ্চা ছেলেটাও মা বাবাকে একসঙ্গে পায় অল্প কিছু সময়ের জন্য। স্কুল থেকে ফেরার পর মা তাকে গোসল করিয়ে খাইয়ে দিয়ে অফিসে যায়। বাবা আসার আগ অবধি সে থাকে ফুফির বাসাতেই। এভাবেই চলে যায় তাদের প্রতিটা দিন। এক নিয়মমাফিক রুটিনের ভিত্তিতে।
প্রজ্ঞা আজ অফিস থেকে একটু জলদি ফিরে এসেছিলো। হাতমুখ ধুয়ে আসতেই দেখলো দুই বাপ ব্যাটা পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। এনজাম পড়তে বসিয়েছিলো ছেলেকে, তারই ফল এটা। ছেলে তো ঘুমোচ্ছেই,সঙ্গে সে নিজেও যুক্ত হয়েছে।
প্রজ্ঞা তাদের কাণ্ড দেখে হেসেই ফেললো। বই খাতা সরিয়ে রেখে প্রণয়কে কোলে তুলে তার ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিলো। পরপরই নিজের ঘরে এসে এনজামের হাতের পাশ থেকে তার ফোনটা তুললো। নতুন পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো, ‘I love Mango’। সেই পাসওয়ার্ড এ ফোন না খুলতেই প্রজ্ঞা চেঁচিয়ে উঠলো,
– “একি!”
আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বললো এনজাম,
– “কে.. কে? কী হয়েছে?”
– “তুমি আবার ফোনের পাসওয়ার্ড বদলেছো কেন?”
একহাতে ফোন,অন্যহাতটা কোমড়ে রেখে চড়াও গলায় জিজ্ঞেস করলো প্রজ্ঞা। এনজাম আড়মোড়া ভেঙে তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গা-ছাড়া ভঙ্গিতে বলে,
– “আমার ফোন। যা খুশি তাই করবো। তোমার কী?”
– “মানে কী! এক্ষুনি লক খোলো বলছি! কোন গুপ্তধন আছে ভিতরে দেখবো আমি।”
এনজাম নাক কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– “ঐ ফোনে ফুড ডেলিভারির অ্যাপ ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু তুমি আমার ফোন চেক করবে কেন? খুলবো না লক। যা খুশি করো গিয়ে।”
রাগে ফুঁসে উঠলো প্রজ্ঞা। আঙুল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
– “একদম গলাবাজি করবিনা এনজাইমের বাচ্চা!”
– “তুই তোকারি করবানা বলতেছি! ফোন দাও।”
প্রজ্ঞার মুখে এক বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠলো। নিজের মুখের সামনে ধরতেই ফেইস লকের দ্বারা খুলে গেলো ফোনটা। এনজাম অবাক চোখে তাকাতেই সে ঘর কাঁপিয়ে হেসে বলে উঠলো,
– “আমার সাথে চালাকি করো হুম? হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ ও দেওয়া আছে। তুমি ডালে ডালে চললে আমিও চলি পাতায় পাতায়।”
এনজাম কড়া চোখে তাকিয়ে থেকে হনহনিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়। প্রজ্ঞা মুখ বাঁকিয়ে বিছানায় বসে ফোনটা রেখেই দিচ্ছিলো, এমন সময় ব্যাংকের কোনো এক মেসেজ ঢুকলো ফোনে। বোধ হয় স্যালারির মেসেজ। সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকতেই অন্য এক কথা মনে পড়লো প্রজ্ঞার। ফোনটা বিছানায় রেখে তড়িঘড়ি করে বাথরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বারকয়েক ধাক্কা দিয়ে বললো,
– “এই ছেলে! তুমি আমার দেনমোহর এর টাকা দাওনি কেন এখনো?”
আরো কয়েকবার দরজা ধাক্কানোর এক পর্যায়ে দরজা খুললো এনজাম। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতেই নিচ্ছিলো প্রজ্ঞা, এনজাম হাত ধরে সামলে নিলো তাকে। প্রজ্ঞা তৎক্ষণাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– “ডোন্ট টাচ মি, হুহ..”
দেনমোহরে কথা ভুলে বসে বড়বড় পা ফেলে রান্নাঘরে চলে আয় প্রজ্ঞা। এনজাম তার যাওয়ার পানে চেয়ে মুখটা প্যাঁচার মতো করে মনেমনে বলে,
– “এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম মাবুদ!”
.
সেই মুহূর্তে ভুলে গেলেও রাতে আবারো দেনমোহরের কথা মাথায় এলো প্রজ্ঞার। বেশ চিন্তায় পড়ে শেষ অবধি এগারোটার সময় শাফায়াতের নম্বরে কল করলো সে।
শাফায়াত সবে খেতে বসেছিলো তখন। আননোন নম্বর এর কল দেখে রিসিভ করে সালাম দেওয়ামাত্রই প্রজ্ঞা চিন্তিত স্বরে বলে,
– “একটা বড় ঝামেলায় পড়লাম স্যার।”
– “কে বলছেন?”
– “আমি প্রজ্ঞা। ঐযে গ্যাঞ্জাম থুক্কু এনজাম খান, তার বউ।”
শাফায়াত খাওয়া ছেড়ে হাত ধুতে ধুতে বলে,
– “ওহ হ্যা,মনে পড়েছে। কী ঝামেলা ম্যাডাম?”
এনজাম পাশেই বসে ছিলো। প্রজ্ঞা তাকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলে,
– “ঐ কিপটার তালতো ভাই এখন অবধি আমার দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেনি। আমার সন্দেহ হচ্ছে এখন। ও আমাকে ঠকাবে না তো?”
শাফায়াত তার কথায় হেসে বলে,
– “চিন্তা নেই ম্যাডাম। যদি আপনাকে সে ডিভোর্স দেয়,তবে সব টাকা পরিশোধ করে তবেই দিতে হবে।”
– “খেয়াল রাখবেন স্যার। বান্দায় কিন্তু দুনিয়ার কিপটা! আপনি জানেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে তে গতবার রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটা গোলাপ এনে দিয়েছিলো আমাকে!”
তার কথা শুনে ক্ষেপে ওঠে এনজাম। চট করে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলে,
– “আর সে আমাকে জন্মদিনে কী উপহার দিয়েছিলো শুনবেন স্যার?”
– “কী দিয়েছিলো?”
– “ডায়েট চার্ট! একটা পারফিউম অবধি কিনে দিতে পারেনি।”
প্রজ্ঞাও তার কান থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
– “সে কিছু দিলে তবেই না আমি দেবো স্যার। সে কিপটামি করলে আমিও অবশ্যই কিপটামি করবো। তবুও তো একটা ভালো জিনিস দিয়েছি। স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়।”
শাফায়াত বুঝলো, আর কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করলে তারা অভিযোগের ঝুলি খুলে বসবে। তাই শান্ত গলায় তাদের থামিয়ে দিয়ে বলে,
– “স্যার,ম্যাডাম.. আপনারা বরং সময় করে আরেকদিন আসুন। সেদিন সব অভিযোগ শুনে দেখবো কোনো বিহিত করা যায় কিনা। রাত হয়েছে। আল্লাহর নাম নিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিন। দেখবেন মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
শাফায়াতের কথা শুনলো তারা। কল কেটে শুয়ে পড়লো ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। মাঝে একটা মোটা কোলবালিশ,দুজনের আলাদা কম্বল।
বেশ শান্তিতেই ঘুমোচ্ছিলো তারা। হুট করে রাত দুটোর সময় ঘুম ভেঙে যায় প্রজ্ঞার। উঠে বসে থাকে কতক্ষন। এখন তার পাস্তা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিজের হাতে বানিয়ে নয়। রাতের বেলা খিদে পাওয়াটা তার পুরনো অভ্যাস। একবার ঘুম ভেঙে গেলে কিছু না খাওয়া অবধি পুনরায় ঘুম আসবেনা। এনজামের সঙ্গে এই এক বিষয়েই সে ভীষণ ভালো আচরণ করে। জাদু,সোনা-মনা থেকে শুরু করে কত কিছু বলে যে মানায় তাকে!
সব শর্ত টর্ত ভুলে সে আজও ডাকলো এনজামকেই। বাহুতে দুবার গুঁতো দিলো প্রথমে। উঠলোনা এনজাম। পরবর্তীতে কোলবালিসটা সরিয়ে তাকে জোরেজোরে ডাকলো কয়েকবার। এনজাম পিটপিট করে চোখ খুলতেই ঠোঁটে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো,
– “হ্যালো!”
এনজাম বিরক্তির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠে বসলো। আঙুলের সাহায্যে তাকে দূরে সরে যাবার নির্দেশ দিয়ে বললো,
– “এক হাত ডিসটেন্স…”
– “আরে রাখো তোমার ডিসটেন্স ফিসটেন্স। আগে যাও, আমাকে একটু পাস্তা বানিয়ে এনে দাও। প্লিজ!”
এনজাম মুখ ফিরিয়ে জানায়,
– “পারবোনা। নিজের কাজ নিজে করো গিয়ে।”
প্রজ্ঞা কিছুই বলেনা। চোখ তুলে কাঁদোকাঁদো দৃষ্টিতে তাকায়। যেন এখনি কেঁদে ফেলবে সে! এনজাম তার হাবভাব দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
– “একটু ঘুমোতে দে না রে বাপ! খেতে ইচ্ছে করছে তো নিজে বানিয়ে খাও।”
প্রজ্ঞা অসহায় কণ্ঠে বলে এবার,
– “প্লিজ!”
এনজাম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পাস্তা বানিয়ে এই মেয়েকে না খাওয়ানো অবধি তার মুক্তি নেই। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল রান্নাঘরে। দক্ষ হাতে চিজ পাস্তা বানিয়ে হাজির করলো প্রজ্ঞার সামনে। তার সামনে বাটিটা একপ্রকার ছুড়ে ফেললো। অত:পর গিয়ে শুয়ে পরলো নিজ জায়গায়। প্রজ্ঞা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গালের দিকে হাত বাড়াতেই তাকে থামিয়ে দিয়ে মনে করিয়ে দিলো,
– “নো হাগ,নো কিস,নো টাচ। চুপচাপ খেয়ে ঘুমান।”
প্রজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
– “আরে রাখোতো তোমার শর্ত ফর্ত!”
বলতে দেরি, দুহাতে এনজামের গাল টেনে দিতে দেরি নেই প্রজ্ঞার। ঝুঁকে এসে দাড়িভর্তি গালে ঠোঁট চেপে গভীর এক চুমু খেয়ে মুখ তুললো সে। আদুরে গলায় বললো,
– “থ্যাঙ্কিউ জান!”
এনজাম শিথিল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– “হয়েছে শান্তি?”
– “নাহ হয়নি।”
মিটিমিটি হেসে আরো একটু ঝুঁকে আসামাত্রই এনজাম চোখ বড়বড় করে এক আঙুলে ঠোঁট চেপে থামিয়ে দিলো তাকে। প্রজ্ঞা তৎক্ষণাৎ আঙুলটা সরিয়ে দিয়ে হাত রাখলো তার গালে। পুরুষালী ঔষ্ঠ্যদ্বয়ের মাঝে দৃষ্টি স্থাপন করে ঠোঁট উল্টে ঠিক বাচ্চাদের ন্যায় আবদারের স্বরে বলে,
– “আর একটু!”
#চলবে?