নব্বই পাতার ডায়েরী পর্ব-৬+৭+৮

0
194

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_৬
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

– “আমি জানতাম বিয়ের পর জামাই-বউ এর ভিন্ন মত ও ধীরেধীরে এক হয়ে যায়। কিন্তু চোখের সামনে দেখলাম উল্টো ঘটনা। সোজা পথ থেকে তারা সরে গেলো দুদিকে। একজন ডানে গেলে অন্যজন বামে যাবেই!”

একটু একটু করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে অ্যানির কথা শুনছিলো শাফায়াত। ক্লায়েন্টদের নিজস্ব কথা শুনতে শুনতে সে বেশ মনোযোগী শ্রোতা হয়ে উঠেছে।
অ্যানি চায়ের কাপটা পাশে রেখে আরো বলে,
– “আপনি যেই জুটির কথাটা বললেন না একটু আগে? সেইম টু সেইম দুজন টম অ্যান্ড জেরি আছে আমার বাসায়। উঠতে বসতে একজন আরেকজনের পিছে লেগে থাকে!”

– “তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং তো!”
মৃদু হেসে বলে শাফায়াত। অ্যানি হাত নাড়িয়ে শুধায়,
– “আপনি তাদের কাণ্ডকারখানার কথা শুনলে হাসবেন নিশ্চিত। দুটোকেই আমার পাবনা ফেরত পাগল মনে হয়।”

– “পাগলদের দেখতে দেখতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাদের অহেতুক ঝামেলাগুলো ইনজয় করি এখন। হাসি খুব একটা পায়না।”

– “আপনি শুনুন ই না! জুটিটা হলো আমার ভাই আর ভাবী। ফ্রিজে খাবার রাখা থেকে শুরু করে ঘুমোনোর বালিস,টিভির রিমোট সবকিছু নিয়েই তাদের ঝগড়া লেগে থাকে।
একটা ভাতিজা আছে আমার। কদিন আগে ডাক্তার ওর চোখ পরিক্ষা করে চশমা দিলো। বাড়িতে এসেই তারা লাগিয়েছে ঝগড়া। এ বলছে ওর দোষ তো ও বলছে এর দোষ!
ভাবী শুরুতেই রেগেমেগে বলে, ‘বাচ্চাকে খেলার জন্য মাঠে নিতে বলেছিলাম। তুমিই তো সবসময় বলো, ‘সময় নেই, পরে নেব’। এখন চশমা লাগল!’

ভাইয়াও নিজের সাফাই গায়, ‘হ্যাঁ, আর তুমি বাচ্চাকে বাইরে না নিয়ে সারা দিন যে ঘরে বসিয়ে রাখো,তার বেলায়? খেলাধুলার বদলে পেইন্টিং করতে বলো। চোখ খারাপ তো হবেই!’

‘পেইন্টিং মনোযোগ বাড়ায়। আর মাঠে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তুমি ওকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনো। খেলাধুলার জায়গায় ওজন বেড়ে যাচ্ছে!’

ভাইয়াও রেগে যায় তখন। বলে যে, ‘কী বলো! পেইন্টিং না করে যদি ফুটবল খেলতো, ও হয়তো পেলের মতো হতো। তুমি রঙ তুলি দিয়ে ওকে পিকাসো বানানোর চেষ্টা করছো।’

বাচ্চাটা মা বাবার ঝগড়ায় অতিষ্ট হয়ে শেষে গিয়ে বলে, ‘মা, বাবা, আমি কি ফুটবল মাঠে গিয়ে রং দিয়ে গোলপোস্ট আঁকতে পারি?’
আপনিই বলুন, এগুলো কোনো কথা?”

শাফায়াত একটুখানি হেসে বলে,
– “আপনার কাছে এসব অবাক করা বিষয়। আমার কাছে নয়। হরহামেশা দেখছি এসব। তা আপনার ভাই ভাবীর সম্পর্ক কী শুরু থেকেই এমন টম এন্ড জেরির মতো?”

অ্যানি চায়ের কাপে দুবার চুমুক দিয়ে শুধায়,
– “অপরিচিত মানুষও তাদের বন্ধন দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতো, মাশআল্লাহ বলতে বাধ্য! এমন জুটি তারা। তাহলে বুঝুন আগে কেমন ছিলো।
এদের জুটি সৃষ্টির শুরু থেকেই পাগল। প্রতিক্ষেত্রে পাগলামি আছেই। কেবল ধরণটা বদলেছে।”

– “যেমন?”

– “আমার ওয়ান এন্ড অনলি ভাবী, বরের অসুস্থতার কথা শুনে রাত একটা বাজে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর চলে এসেছে! তাও আবার চার বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে। ঐ রাতের বেলায়! পাগলামি কত প্রকার ও কী কী জানতে চাইলে তাদের সম্পর্কের ডায়েরী শুরু থেকে খুলতে হয়।
আরে আপনার চা ঠান্ডা হচ্ছে তো!”

শাফায়াত এতক্ষনে দৃষ্টিপাত করলো চায়ের কাপের দিকে। অর্ধেকটা খাওয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেকটা পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেছে। অ্যানিকে বুঝতে না দিয়েই বললো,
– “উঁহু, গরম ই আছে। আমি চা ঠাণ্ডা করেই খাই।”

– “আচ্ছা।”

শাফায়াত ঠান্ডা চা খেতে খেতেই নিখুঁতভাবে দেখলো মেয়েটিকে। বাচাল নয়, তবে গুছিয়ে কথা বলে। আজ মাথায় ওড়না প্যাঁচানো বলে অতটা বাচ্চা বাচ্চা লাগছেনা। সে তাকিয়ে থাকার মাঝেই অ্যানি আবারো চোখ তুলে বলে,
– “আপনি তো উকিল মানুষ। কিছু আইডিয়া দিন তো। এই ধরণের টম এন্ড জেরিকে একটু সুস্থ করা যায় কী করে?”

শাফায়াত চা টুকু শেষ করে উত্তর দেয়,
– “আগে ফিস দিন, তারপর বলছি। ফ্রি তে উপকার করবো কেন?”

অ্যাঞ্জ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে গলা ছেড়ে হাসতে লাগলো। খালি চায়ের কাপটা পাশে রেখে বললো,
– “যৌক্তিক কথা। যাক, আজ তো চা আপনিই খাওয়ালেন। পরে একদিন আমি খাওয়াবো। ফিস স্বরূপ ওটাই রাখবেন। আর বিপরীতে কিছু টোটকা শিখিয়ে দেবেন। রাজি?”

– “চা আমি খুব একটা পছন্দ করিনা। কফি খাওয়ালে… ভেবে দেখতে পারি।”

– “আচ্ছা,তাই খাওয়াবো। যদি সময় সুযোগ পাই আরকি।”

– “বেশ… অপেক্ষায় থাকি।”

অ্যানি সেদিন তাকে আরো পাঁচমিনিট সময় দিলো। কথার উৎস হিসেবে রইলো তার ভাই-ভাবী। শাফায়াত খুবই উৎসাহী চোখে চেয়ে ছিলো পুরোটা সময়। হয়তো গল্প শোনার জন্য, কিংবা তার চঞ্চলতা পরখ করার জন্য…

_____
দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দশটা বাজে। ফোন হাতে নিয়ে আরো দু তিনবার ঘরজুড়ে পায়চারী করলো প্রজ্ঞা। প্রণয়কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। আজ সে মা বাবার সাথেই ঘুমোবে। কিন্তু তার বাবা কোথায়?
বিশটার অধিক কল করলেও একটারও উত্তর আসেনি। কোথায় আছে,কী করছে একটাবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনা ছেলেটা।

পুনরায় কল করার পূর্বেই কলিং বেল বাজলো। পরপর তিনবার। এগুলো এনজামের কাজ। একাধারে বাজিয়েই যায়। একটা স্বস্তির হাফ ছেড়ে দ্রুতপায়ে হেটে এসে দরজা খুললো প্রজ্ঞা। এনজাম মেঝের দিকে নজর রেখেই নিজের গলার টাইটা ঢিলে করতে করতে ভিতরে এলো। রোজকার ন্যায় ব্যাগটা রাখলো শু র‍্যাকের উপর। ডাইনিং টেবিলের পাশ থেকে চেয়ার টেনে গা ছেড়ে বসলো সেখানে। প্রজ্ঞা দরজা লক করে তার সামনে এসে বলে,
– “এত দেরি হলো কেন? কোথায় ছিলে?”

এনজাম গ্লাসে পানি ঢেলে বিরক্তির স্বরে উত্তর দেয়,
– “অফিস ছাড়া আর কোথায় থাকবো?”

– “থাকতেই পারো অফিসে,দ্যাটস নট আ বিগ ডিল। কিন্তু তোমার ঘরে আরো কেউ থাকে। একটা ফোন করে জানিয়ে দেওয়া যেত। খামোখা চিন্তা করতে হতোনা।”

শেষের কথাটা নিচু স্বরে বললেও শুনতে পেলো এনজাম। মুচকি হেসে তাচ্ছিল্য করে বললো,
– “চিন্তা করতে বলেছে কে? আমি বলেছি? খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। আমার সাথে তোমার আর কীসের লেনাদেনা?”

প্রজ্ঞা ভ্রু কুঁচকে রাগী গলায় বলে,
– “অবশ্যই আছে লেনাদেনা। এখনো দেনমোহরের টাকা দাওনি। ওটা দিলে তারপর মিটবে লেনাদেনা।”

রোজকার ন্যায় এনজাম আজ যুক্তি দাড় করালো না। বরং একটু ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– “কত যেন? তিন লাখ না? কবে চাই বলো,দিয়ে দেবো। এক বাণী বারবার ছাড়তে হবেনা।”

প্রজ্ঞা একটু বিস্মিত কণ্ঠে শুধায়,
– “রাগ দেখাচ্ছো কার উপর তুমি? একেতো নিজে দেরি করে ফিরেছো,একটা মেসেজ অবধি করোনি। যেখানে আমার রেগে থাকার কথা সেখানে তুমিই..”

– “তোমার রাগের ই বা কী আছে? এমন ভান ধরছো যেন না খেয়ে বসে ছিলে আমার জন্য!”

প্রজ্ঞা এবার সত্যিই রেগে যায়। এগিয়ে এসে তার কলার চেপে ধরে বলে,
– “তোমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবো কেন আমি? ঠ্যাকা পড়েছে আমার?”

এনজাম দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– “সিনক্রিয়েট না করে সরে যাও। রাতের বেলা ঝামেলা চাচ্ছিনা কোনো।”

– “ঝামেলার আর বাকি রেখেছিস কিছু? গ্যাঞ্জাম ছাড়া কী ই বা পারিস ত…”

কথা থেমে যায় প্রজ্ঞার। নাকে এক অন্যরকম সুগন্ধি ভেসে আসতেই এনজামের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় একবার। কাছে এগিয়ে আরো কয়েকবার শ্বাস টেনে চোখ তুলেই বলে,
– “এটাতো তোমার পারফিউমের স্মেল নয়। এই স্মেল কোথা থেকে এলো? নতুন পারফিউম কিনেছো?”

এনজামের বুঝি বিশাল ব্যক্তিত্বে লাগলো কথাখানা। উত্তর তো দিলোই না,বরং প্রজ্ঞার হাতটা সরিয়ে দিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরলো। আজব! রোজরোজ শুনে আসা কথাগুলো সে আজ এত গভীরভাবে কেন নিচ্ছে? তাদের মধ্যকার সত্যকারের রাগ,অভিমানতো দূরদেশে পাড়ি জমিয়েছে বছর দুয়েক আগেই।

এনজামের গাম্ভীর্যতাকে অগ্রাহ্য করে প্রজ্ঞা আবারো গেলো তার কাছে। পকেট থেকে ফোন বের করে টেবিলে রাখতেই তা হাতে তুলে বললো,
– “আবার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ! লক খুলে দাও।”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে তার হাত থেকে ফোনটা নিলো এনজাম। ফিঙ্গার প্রিণ্ট দ্বারা লক খুলে পুনরায় প্রজ্ঞার হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটু ধমকের স্বরেই বললো,
– “পাসওয়ার্ড আগের টাই ছিলো,তুমি ভুলে গেছো সেটা বলো। নাও,দেখো এবার। কী আছে না আছে! কোথায় ছিলাম!”

প্রজ্ঞা ফোনটার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে,
– “ওভাররিয়্যাক্ট করছো কেন? সমস্যা কী তোমার?”

এনজাম ক্ষুব্ধ চিত্তে শার্টটা খুলে বিছানায় ছুড়ে বললো,
– “ওভাররিয়্যাক্ট আমি না,তুমিই করো সবসময়।
ভাই তুমি যাওতো সামনে থেকে।”

প্রজ্ঞা কটমট চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানায়। এনজাম সেদিকে তাকাতেই দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
– “সামনে থেকে না শুধু, তোর জীবন থেকেই সরে যাবো আমি। আর এই রিয়্যাক্ট নিয়ে বললিনা? লিখে রাখ, ফারদার এই আমি যদি তোর কোনো বিষয়ে কথা বলেছি তো আমার নামও প্রজ্ঞা না।”

এনজাম মুখ বাঁকিয়ে হাসে। এই কথা সে একশো বার বলেছে। কেবল কথাগুলো মুখেই থেকে যায়, কাজে আর প্রকাশ পায়না।
এনজামকে হাসতে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো প্রজ্ঞা। এগিয়ে এসে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
– “এক ঘণ্টায় বিশটার বেশি কল করেছি। মনে হচ্ছিলো কল ঢোকেনি ফোনে। কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখতে নিয়েছিলাম। তল্লাশি করতে নয়।”

প্রজ্ঞা বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। তার কথার বিন্দুমাত্র প্রভাব দেখা গেলোনা এনজামের মাঝে। সে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে এসে খেতে বসলো। ভাত,তরকারি দেখে যা বুঝলো, অন্যসময় খেয়ে নিলেও আজ তার অর্ধাঙ্গিনী মুখে খাবার তোলেননি। প্রজ্ঞাকে তবুও ডাকলোনা সে। একাই অল্প কিছুটা খেয়ে নিলো।

হাত ধুয়ে ঘরে এসে দেখলো বিছানার মাঝ বরাবর প্রণয় ঘুমিয়ে আছে। পাশে প্রজ্ঞা নেই। এ ঘরে তার উপস্থিতি ই নেই। এখানে নেই মানে সে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়েছে। নিজের বালিশটা মনে করে নিয়ে গেছে।
এনজামও আর মাথা না ঘামিয়ে বিছানায় বসেছিলো সবে, তখনি লক্ষ্য করলো তার ফোনে চার্জ নেই। চার্জার পাশের ঘরে। আবার উঠে পাশের ঘরে এলো সে। বাতি নেভানো। বিছানায় একপাশে সোজা হয়ে শুয়ে আছে প্রজ্ঞা। তার মাথার পাশের বেডসাইড টেবিলেই চার্জারটা পড়ে ছিল। এনজাম নিঃশব্দে গিয়ে চার্জারটা হাতে নিলো। না চাইতেও তার চোখ গেল প্রজ্ঞার দিকে। সে ঘুমিয়ে গেছে। সত্যিই ঘুমিয়েছে। এত বছরে তার আসল এবং নকল ঘুমের মধ্যকার পার্থক্য পুরোপুরি জেনে গেছে এনজাম। তাই নাটক ধরতে সময় লাগেনা।

সে এত জলদি ঘুমিয়ে পড়লো,ব্যাপারটা একটু ভাবালো এনজামকে। প্রায় আড়াই বছর আগের কথা। সারাদিনে একবারও ফোন না করায় অভিমান হয়েছিলো প্রজ্ঞার। দিনশেষে একটুখানি অবসর পেতেই সে কল করলো প্রজ্ঞাকে। কিন্তু একি! রিং বাজছে,সে ফোন তুলছেনা। মেসেঞ্জারে গেলো এনজাম। আবারো কল করলো। একবার,দুবার,বারবার… প্রজ্ঞা কল তুললো সাতবারের সময়। চিন্তিত এনজাম রেগে কিছু বলার পূর্বেই সে ঠান্ডা গলায় জানায়,
– “সারাদিন যার সঙ্গে ছিলেন তার সঙ্গেই থাকুন। রাত বারোটার সময় এসে আমার কথা মনে না করলেও চলবে। ধন্যবাদ।”

এনজামকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে ফোন তো কাটলোই সে! তার সঙ্গে ব্লক করলো সরাসরি ফেইসবুক থেকে। এনজাম বিরক্ত হলো। এইটুকু বিষয়ে অভিমান করার কী আছে?
রাগ এনজামের ও হলো। দুদিক থেকে দুজন গাল ফুলিয়ে বসে রইলো প্রায় এক ঘণ্টা। রাত একটার বেশি বাজে। অথচ ঘুমোয় নি কেউ। এনজাম অনেকটা সময় চোখ বুজে শুয়ে থেকেও ঘুমোতে পারলোনা। বুঝলো, তার এক বদঅভ্যাস তৈরি হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি নারীর কণ্ঠে, ‘এখন ঘুমাও,আল্লাহ হাফেজ’ বাক্যটি না শোনা অবধি তার চোখে ঘুম নামেনা। অভ্যাসের দায়ে হার মানলো এনজাম। ঠিক দেড়টার সময় ঢুকলো প্রজ্ঞার হোয়াটস অ্যাপ ইনবক্সে। কিছু না লিখে সরাসরি একটা কল করলো। একটা রিং হবারও আগে তা রিসিভ করলো প্রজ্ঞা। যেন ফোনটা হাতে নিয়েই বসে ছিলো! দুজনে কথা বললোনা কোনো। প্রায় একমিনিট কেটে যেতেই এনজাম নিরবতা ভাঙে। সুরেলা কণ্ঠে না হলেও যতটা সম্ভব সুন্দর করে গায়,
– “রাগ কমলে ফোন করিস,
তোকে গান গেয়ে গেয়ে ঘুম পাড়াবো
কাল সন্ধ্যে দেখা করিস,
তোর প্রিয় ফুল হাতে নিয়ে দাড়াবো!”

থামলো সে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই হাসির ক্ষীণ রিনরিনে আওয়াজ এসে বাজলো কানে। ঠোঁটে মুচকি হাসি ফোটামাত্র বিপরীত প্রান্ত থেকে মেয়েলী কণ্ঠে উত্তরের সুরে ভেসে এলো,
– “এত ভয় পেয়ে ভুল করিস,
তোকে একলা ফেলে কী আমি পালাবো?
তুই কেন যে এমন করিস!
রাগ কমে গেলে ঠিক তোকে জানাবো।

তুই এত সহজেই শুধরে যাবি না জানি,
তাই হতেই হয় আমাকে অভিমানী…”

এনজাম বালিশে শুয়ে চোখটা বুজে গায় আবারো,
– “তোর ফোন না এলে
ঘুম নামেনা দু চোখে।
তাই তখন থেকেই বলেই চলেছি তোকে,
রাগ কমলে ফোন করিস!”

.

বালিশে মাথা রেখে আজও চোখ বুজলো এনজাম। গান গাইলো না, কারো রাগ ভাঙানোর আগ্রহই এলোনা মনে! একে অপরের অপেক্ষায় না ঘুমিয়ে বসে থাকা দুজন ই তো দিব্যি ঘুমিয়ে গেল। প্রজ্ঞা অন্য ঘরে। আর এনজাম ছেলেকে বুকে জড়িয়ে। কারো ফোনের অপেক্ষা নেই, চিন্তা নেই। ঘুমপাখি এখন তাদের এমনি এমনিই দেখা দেয়। কী অদ্ভুত!

#চলবে?

#নব্বই_পাতার_ডায়েরী
#পর্ব_৭+৮
#মৌরিন_জিনাত_জাহিন

– “ধনেপাতা চেয়েছিলেন না আপু? এইযে, ফ্রিজে ছিলো।”
বেশ শান্ত গলায় বলে চুলোর পাশে থাকা বাটিতে ধনেপাতাগুলো রাখলো প্রজ্ঞা। আনজুম রান্নায় হাত দিয়েছে সবে। প্রজ্ঞার দিকে না তাকিয়েই বলে,
– “না দিলেও হতো। একটু বেরোতে হবে এমনিতেই। নিয়ে আসতাম তখন।”

প্রজ্ঞা মৃদু হেসে শুধায়,
– “ছিলো বলেই দিলাম। না থাকলে তো দিতাম না।”

আনজুম আড়চোখে একবার পরখ করলো তাকে। শুকনো মুখখানা দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– “সবসময় তো থাকো ফিটফাট হয়ে। চেহারার এই হাল কেন? অসুস্থ তুমি?”

প্রজ্ঞা মাথা নেড়ে উত্তর দেয়,
– “উঁহু,তেমন কিছু না। রাতে ঘুম হয়নি বোধ হয়, তাই।”

আনজুম গম্ভীর মুখে চেয়েই বলে,
– “তো গিয়ে ঘুমাও কিছুক্ষন। প্রণয় আছে এখানে।”

প্রজ্ঞা মাথা নেড়ে চলে যায়। এই এক শান্তি তার। ছেলেকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। জন্মের পর থেকে তো খালা,নানির কোলেই বড় হয়ে গেল। আর এখানে আসার পর দুই ফুফু কাছেই থাকে। মা হিসেবে তাকে খুব বেশি খাটতে হয়নি।
বসার ঘরে আসতেই দেখা যায় প্রণয়,টুশি কে। আনজুমের অনেক সাধনার মেয়ে টুশি। বিয়ের প্রায় নয় বছর পর তার কোলজুরে এসেছে এই মিষ্টি মেয়েটা। বয়স চার ছুঁইছুঁই। মাথার উপর দুটো ঝুটি বেধে সোফায় বসে প্রণয়ের চুল টানছে। প্রণয় মেঝেতে বসে রংপেনসিল দ্বারা কাগজে কিছু আঁকতে ব্যস্ত। বিরক্ত হয়ে বারবার চুল থেকে হাত সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু টুশি থামেই না! সে ভীষন অনুরোধের স্বরে বলে,
– “এই পন্নয়, তোমাল চম্পা দাও না!”

প্রণয় চোখ তুলে পিছু ঘুরে বলে,
– “নাহ। তুই ভেঙে ফেলবে।”

প্রজ্ঞা মুখ চেপে হাসে। ছেলেটা তুই,তুমি বারবার গুলিয়ে ফেলে।
টুশি তার চুল ধরে জোরে টান দিলো এবার। প্রণয় একটু চেঁচিয়ে উঠতেই প্রজ্ঞা দ্রুত গিয়ে হাত সরালো টুশির। কোলে তুলে বললো,
– “উঁহু,সোনা। ভাইকে এভাবে মারতে হয়না।”

– “আমাল চম্পা চাই!”
করুণ স্বর টুশির। প্রজ্ঞা ঠোঁট উল্টে তার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,
– “আচ্ছা। তোমাকে আমি চশমা এনে দেবো। ভাইয়ের টা নেয়না,হ্যা? ও তো ছেলে মানুষ। ছেলেদের চশমা মেয়েরা পড়েনা। বুঝেছো?”

– “ছত্যি দেবে?”
উৎসাহিত কণ্ঠে বলে টুশি। প্রজ্ঞা হেসে মাথা নাড়তেই চোখদুটো বড়বড় করে বলে,
– “আলো চুন্দল চুন্দল?”

– “আররো সুন্দর সুন্দর! প্রণয়ের চেয়েও।”

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো টুশি। হাততালি দিয়ে তার কোল থেকে পিছলে নেমে যায়। প্রণয়ের সামনের এসে জিভ বের করে ভেংচি কেটে বলে,
– “তোমাল চেয়ে চুন্দল চম্পা দেবে আমাকে। তখন তুমি কান্না কলবে। ইয়েএএ…”

প্রণয়ের মন খারাপ হয়ে যায় তার কথায়। মায়ের দিকে অভিমানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– “ও আমাকে মারে। তুমি ওকে চশমা কিনে দেবেনা মাম্মা।”

প্রজ্ঞা মিছে রাগ দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। গম্ভীর গলায় বললো,
– “সকালে যে ললিপপ চেয়েছিলাম একটু, দিয়েছিলে? আমিতো খুব কষ্ট পেয়েছি। এখন থেকে টুশিকেই ভালোবাসবো বেশি বেশি।”

চোখ ভরে উঠলো প্রণয়ের। একটুতে কেঁদে ফেলার রোগ আছে তার। প্রজ্ঞা আরো একবার টুশিকে আদর করে চলে যেতেই মাথা নিচু করে খাতা পেনসিল গুছিয়ে রাখে প্রণয়। চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে। টুশি তার সামনে বসে মাথা নিচু করে মুখের দিকে তাকায়। চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে তার গালদুটো টেনে ধরে স্বান্ত্বনাস্বরূপ বলে,
– “কান্না কলেনা পন্নয়। তুমি চক্কেত খাবে?”

– “আহ, ব্যাথা লাগে টুচি। ছাড়ো! তুমি একটা পঁচা।”
রাগ করেই বলে প্রণয়। গাল থেকে তার হাতটা ছাড়িয়ে খাতা পেনসিল নিয়ে চলে যায় নিজের বাসায়। নিত্যদিনের খেলার সঙ্গী এই মেয়েটির প্রতি মাঝেসাঝেই হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি হয়। মনে হয়, বাবা-মা, পিপি ওকে কম ভালোবাসে। টুশিকে বেশি ভালোবাসে!

প্রণয় নিঃশব্দে পা ফেলে ঘরে আসতেই দেখে মা কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে আছে। তার ক্ষুদ্র মনটা ভেবেই নেয়, মাম্মা খুব কষ্ট পেয়েছে। সঙ্গেসঙ্গে তার মাথায় দারুণ একটা বুদ্ধি আসে। খুব সাবধানে প্রজ্ঞার মাথার পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে চলে যায় অন্য ঘরে। খুঁজে খুঁজে বাবার নম্বরে কল করে।

শাফায়াতের চেম্বারের পাশে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এনজাম। গতকাল অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় আজ তার হাফ ডে। সেই সুযোগে শাফায়াতের সঙ্গে একবার কথা বলার মনোভাব নিয়েই দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়েছে।
ঘড়িতে সময় দেখার মাঝেই ফোনটা ভাইব্রেট হলো তার। পকেট থেকে ফোন বের করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ইংরেজিতে লেখা দুটি শব্দ, “Better half”
এই সময়ে প্রজ্ঞার তাকে কল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিছু কী হয়েছে?
চিন্তিত চিত্তে দ্রুত কলটা রিসিভ করতেই প্রণয় নিচু আওয়াজে বলে,
– “হ্যালো বাবা?”

ছেলের গলা শুনে মুচকি হাসে এনজাম। হাফ ছেড়ে উত্তর দেয়,
– “জি বাবা, বলো। তুমি স্কুলে যাওনি?”

– “আজ তো স্কুল বন্ধ। তুমি তো কিছুই জানোনা!”

দু আঙুলে কপাল ঘষে বলে এনজাম,
– “ওহহো! ভুলেই গিয়েছিলাম। যাক,হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়লো?”

প্রণয় চুপ করে থাকে। এনজাম তা বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
– “কী হয়েছে? কিছু বলবে? খেলনা চাই?”

– “না না। চকলেট চাই।”

এনজাম হেসে বলে,
– “বাসায় আছে তো। মাম্মার কাছে চাও। আর তুমি খুব বেশি চকলেট খাচ্ছো আজকাল। দাঁতে পোকা ধরলে কিন্তু মাম্মা খুব বকবে।”

– “আমি খাবোনা তো। মাম্মার জন্য আনতে বলেছি।”

– “মাম্মার জন্য?”

– “হ্যাঁ। মাম্মার খুব মন খারাপ।”

এনজাম অবাক হয়ে জানতে চায়,
– “মন খারাপ… কেন?”

প্রণয় খানিকটা অপরাধীর স্বরে জানায়,
– “সকালে যখন আমি ললিপপ খাচ্ছিলাম, মাম্মা বলেছিলো আমাকে একটু দাও। আমিতো দেইনি। তাই জন্য মাম্মা কষ্ট পেয়েছে। তুমি নতুন চকলেট এনে দেবে। আমি ওটা মাম্মাকে দেবো।”

ছেলের কথা শুনে প্রগাঢ় হাসে এনজাম। মত বুদ্ধিমান ছেলে তার! পরমুহূর্তে থেমেথেমে জিজ্ঞেস করে,
– “মাম্মা কোথায় তোমার?”

– “মাম্মা? মাম্মা তো ঘুমোচ্ছে।”

– “ঘুমোচ্ছে?”
অবাক হয় এনজাম। সকালের সময়টা প্রজ্ঞার কাটে ঝড়ের বেগে। দশটার বেশি বাজে। এই সময়ে সে ঘুমোচ্ছে? ভাবনার মাঝে প্রণয় তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়,
– “অরেঞ্জ ফ্লেভার ললিপপ আনবে কিন্তু! মাম্মা স্ট্রবেরি ফ্লেভার পছন্দ করেনা।”

প্রণয়ের কথায় ভাবনা ছেড়ে আবারো হেসে ফেলে এনজাম। মাঝে একবার বাসায় স্ট্রবেরি আইসক্রিম নিয়ে যাওয়ায় প্রজ্ঞার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া বেধেছিল তার। তার এক কথা, “আমি যা পছন্দ করিনা তুমি বাড়িতে তাই আনবে। জানো স্ট্রবেরির স্মেল ও সহ্য হয়না আমার। ওটাই আনতে হবে? আমার সাথে তোমার শত্রুতাটা কোথায়? ইচ্ছে করেই এনেছো তাইনা?”

এনজাম বিপরীতে হাই টেনে বলে, “ভালো জিনিস তো তোমার পছন্দ হবেই না! এই যেমন আমিও তো স্ট্রবেরির মতোই মিষ্টি, তাই সহ্য হয়না তোমার।
আর ওটা তুমি খাওনা বলেই এনেছি। এখন থেকে খাবে। খেলে অভ্যাস হবে।”
“তুমিও তো শুঁটকি খাওনা। আজ থেকে শুঁটকিই খাওয়াবো, খেলে অভ্যাস হবে।”

শাফায়াতকে বাইক নিয়ে আসতে দেখে এনজাম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে প্রণয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
– “আচ্ছা,তাই আনবো। আর… মাম্মাকে বিরক্ত করোনা। খেলো গিয়ে। আল্লাহ হাফেজ।”

– “ওকে। আল্লাহ হাফেজ বাবা।”

শাফায়াতও ততক্ষনে তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। এনজাম পিছুপিছু গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলে,
– “আসতে পারি স্যার?”

শাফায়াত ঘুরে তাকায়। নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
– “আগেই তো এসে গেছেন। বাঁচালেন আমায়! আসুন আসুন,বসুন। জানেন,আজ কেবল আপনার জন্য চেম্বারে এসেছি। একটু পরে কোর্টে যেতে হবে। হাতে এই…ধরুন আধাঘণ্টা সময় আছে।”

এনজাম ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বসলো চেয়ারে। মৃদু হেসে বললো,
– “বিরক্ত করলাম নাকি? হাফ ডে ছিলো তো আজ, তাই…”

– “কী বলছেন! শুনুন, আপনাদের কথা শোনা আমার একটা দায়িত্ব। আর হাতে কিছুটা সময় তো রয়েছে। আপনি বলুন, কী বলতে চান। নব্বই দিনের মাঝে প্রথম আটদিন কেমন কাটালেন? ডিসিশন এ কোনো পরিবর্তন এলো কী?”

শাফায়াতের মুখে বরাবরের ন্যায় মুচকি হাসি। এনজাম তার দিকে তাকিয়ে বলে,
– “উঁহু। বরং এই দিনসংখ্যা কমিয়ে আনার অনুরোধ নিয়ে এসেছি।”

শাফায়াত একটু অবাক হয় এনজামের কণ্ঠ শুনে। বোঝা যায়,সে আজ যথেষ্ট গম্ভীর মনোভাব নিয়েই এসেছে। এনজাম তার বিস্ময়তা ধরতে পেরে মাথা নুইয়ে বলে,
– “বুঝতে পারছি স্যার, আমাদের ব্যাপারটাকে আপনি তেমন সিরিয়াসভাবে নেননি। ছোটখাটো কারণ, ইম্যাচিউর মানুষজন, ভাবতেই পারেন এসব। কিন্তু বিষয়টা আসলে এতটা সহজ নয়।”

– “কঠিন বলছেন?

– “হুম।”

শাফায়াত টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুহাত এক করে বসলো। তাতে থুঁতনি রেখে বলল,
– “ঠিক কেমন? বলুন। দেখি বুঝতে পারি কিনা।”

এনজাম হাতের তালুতে দৃষ্টি রেখে বলে,
– “ধরুন খুব শখের কোনো বস্তু,অনেক সাধনার… সেটার উপর থেকে আপনার ধীরেধীরে আকর্ষণ সরে যাচ্ছে। কথাটা শুনতে যতটা খারাপ, ভাবাটাও খারাপ। তাইনা স্যার?”

শাফায়াত মনোযোগী দৃষ্টিতে চেয়ে রয়। এনজাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেটে শুধায়,
– “ঠিক কী কারণ,আমার জানা নেই। বাট আই ফিল দ্যাট, আই ডোন্ট ওয়ান্ট হার লাইক বিফোর। আমাদের সম্পর্কটা দিনদিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। শুধু আমার দিক থেকে নয়। আমি সিওর, সে নিজেও একই কথা ভাবে।
আসলে কী জানেন তো স্যার, সবকিছুর পিছনে আমাদের দুজনের অনেক.. অনেক স্বপ্ন লুকিয়ে ছিলো। অনেক স্যাক্রিফাইস করেছি আমরা। জাস্ট ফর আ ফ্যামিলি। আর সেই সম্পর্কে একটু একটু করে বদল দেখা… এটা আমাদের জন্য খুব একটা সুখের নয়।”

– “তো, কী ভাবলেন?”

– “এটাই। একটা সম্পর্ক ধীরেধীরে ভাঙার চেয়ে একেবারে ভেঙে দেওয়া ভালো। এতে অন্তত নিজেদের মধ্যে এতএত প্রশ্ন আসবেনা। আমি মেনে নিয়েছি, সব সম্পর্ক টিকে থাকেনা। যেভাবে আমরা ভাবি,ভবিষ্যৎ টা তেমন নাও হতে পারে।
আপনি আশা রেখে ভুল করবেন। গত এক বছরে আমি বেশ ভালোকরে লক্ষ্য করেছি, সব ঠিক থেকেও মনে হচ্ছে কিছুই ঠিক নেই। আর সেই ধারণা দিনদিন বাড়ছে বই কমছেনা। তাই আমাদের ডিভোর্সটা দ্রুত হয়ে যাওয়াই ভালো।”

– “ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে পারবেন তো মিস্টার?”
শাফায়াতের প্রশ্ন শুনে চকিতে চাইলো এনজাম। প্রশ্নের বিপরীতে তার দৃষ্টিতেও প্রশ্নরা দেখা দিলো। শাফায়াত হাতদুটো নামিয়ে নেয়। সোজা হয়ে বসে বলে,
– “ছোট্ট একটা ঘটনা বলি,কেমন?”
খুব ছোটবেলায় দোকানে গিয়ে একটা কাচের ব্যাংক পছন্দ হয়েছিলো। মা’কে বললে মা তখনই কিনে দিতো। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিলো, ওটা নিজে টাকা জমিয়ে কিনবো। দোকানে বলে রাখলাম,আমার জন্য একপিস রেখে দেবেন।
প্রায় ছয়মাস ধরে টাকা জমিয়ে আমি কিনেছিলাম ব্যাংকটা। ওটা আমার এতই পছন্দের ছিলো যে ডেইলি কয়েকবার করে ছুঁয়ে দেখতাম। তারপর শোকেস এর মধ্যে সাজিয়ে রাখলাম। প্রতিদিন কম করে হলেও পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে দেখতাম ওটাকে।

ধীরেধীরে সময়টা কমে এলো। তবুও হাঁটতে চলতে চোখ পড়তো। শোকেস এর একটা নির্দিষ্ট জায়গা ওটার দখলে। রোজ দেখতে দেখতে একটা অভ্যাস হয়ে গেল আমার। তখন আর তাকাতাম না। আগের মতো বিশেষ মনে হতোনা।
একদিন বাড়িতে কোনো এক আত্মীয় এলো। বের করে দেখলো ওটাকে। ভুলবশত তার হাত থেকে পড়ে ব্যাংটা ভেঙে যায়। একদম টুকরোটুকরো হয়ে যায়। মা জানতো ওটা আমার খুব পছন্দের,কিন্তু সেভাবে তাকিয়ে থাকিনা। তাই সে আমাকে খবরটা জানালোই না। অথচ সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই আমি টের পেয়ে গেলাম শোকেস এ ব্যাংকটা নেই। ইচ্ছে করে তাকাই নি কিন্তু। চোখ অটোমেটিকালি শূন্যস্থানটা খুঁজে নিয়েছে।

আমার এখনো মনে আছে, কেঁদেকেটে দুদিনে জ্বর বাধিয়ে বসেছিলাম। সেই ব্যাংকটার জন্য, যেটার দিকে গত এক সপ্তাহে আমি একবারো চোখ তুলে তাকাই নি।”

এনজাম বোধ হয় বুঝলো,সে কী বোঝাতে চাচ্ছে। তবুও শাফায়াত সহজ ভাষায় বললো,
– “কারো প্রতি আগ্রহ একটুখানি কমে আসার মানে কিন্তু এই নয়, তাকে ছাড়া আমি দিব্যি থাকতে পারবো। এটা কিছু মানুষের ভুল ধারণা।
কোনো বিষয়ে জানতে জানতে যখন সেটা পুরোপুরি জানা হয়ে যায়, জানার আগ্রহটা তখন কমে আসে। এর মানে এই নয়,বিষয়টা আমার অপ্রিয়।”

এনজাম একটু অস্থির কণ্ঠে বলে এবার,
– “যাকে দেখার জন্য একটা সময় রিতীমতো পাগলামি করেছি, তাকে দেখার আগ্রহ আমার মনে কেন আসবেনা? কাজের সময় বারবার তার কথা কেন মনে পড়বেনা? ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেটা কেন কমে যাবে? তার কণ্ঠ শুনে আমার মাঝে বিন্দুমাত্র বিরক্তি কেন আসবে? তার রাগ নিয়ে না ভেবে আমি নিশ্চিন্তে চোখ বুজতে পারবো কেন?
বিষয়গুলো খুব ছোট হলেও মেনে নেওয়াটা সহজ নয় স্যার। আব…আই কান্ট এক্সপ্লেইন ইট।”

শাফায়াত ঠোঁট কামড়ে হেসে পানির বোতল এগিয়ে দেয়। চোখের ইশারায় বলে তা গ্রহণ করতে। এনজাম কিছু না বলে খানিকটা পানি পান করার পর সে শান্ত কণ্ঠে জানতে চায়,
– “এই ‘কেন’ শব্দটা আপনার মাথায় আসছে কেন স্যার?”

এনজাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। শাফায়াত কিছুক্ষন থেমে আরো বলে,
– “কারো প্রতি আগ্রহ কমে গেলে, তাকে নিয়ে ভেবে অস্থির হবার তো কথা নয়। এই প্রশ্নগুলো তো সেক্ষেত্রে মাথায় আসতোই না। আপনি কেন ভাবছেন?”

এনজাম চুপ করে যায়। শাফায়াত তার নিরবতা দেখে শব্দ করেই হেসে ফেলে এবার। টেবিলে হাত রেখে বলে,
– “আপনার এতএত যুক্তি,প্রশ্ন শুনে আমার খুব মজা লাগছে জানেন তো? আপনি বললেন বিষয় টা কঠিন। অথচ আমি যতটা ভেবেছিলাম, বিষয়টা তো তার চেয়েও সহজ মনে হচ্ছে। একদম পানির মতো সহজ।”

– “কী করে?”

শাফায়াত একটু গম্ভীর হয়ে বললো,
– “আপনারই ভাষ্যমতে, তার প্রতি আপনার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অথচ অদ্ভুতভাবে, ‘কেন কমে যাচ্ছে?’ এটা ভেবেই আপনি অস্থির হচ্ছেন। সহজ ভাষায় বললে, তার প্রতি থাকা আপনার ভালোবাসা এক বিন্দু কমে যাক, এটাই তো আপনি মানতে পারেন না। এর অর্থ কী দাঁড়ায়?”

চোখ নামিয়ে নেয় এনজাম। শাফায়াত নিজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
– “কারো প্রতি আগ্রহ কমে গেলে তাকে নিয়ে কিন্তু মস্তিষ্কে ভাবনা আসাও কমে যায়। কিন্তু আপনিতো সেই ঘুরেফিরে তাকে নিয়েই ভাবছেন। এগুলো কী মজার বিষয় না?”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে এনজাম। শাফায়াত প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে,
– “প্রথমে বললেন,ম্যাডাম আপনার খুব সাধনার। কেন জানতে পারি?”

এনজাম স্মিত হেসে উত্তর দেয়,
– “আমি খুব অলস প্রকৃতির। সবসময় চেয়েছি জীবনটাকে উপভোগ করতে। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি এসবের প্রতি কখনো একটুও আকর্ষণ ছিলোনা।
আর প্রজ্ঞা সেই ব্যক্তি, যার জন্য আমি অলসতাকে একপ্রকার বিসর্জন দিয়েছি। ওকে পাওয়ার জন্য শখ,ইচ্ছে সবকিছু বদলে ফেলেছি। কষ্ট পেয়ে নয় কিন্তু, খুশিখুশি!
বন্ধুমহলে গেলে মানুষ এখনো আমাকে পাগল বলে। কারণ জীবনে সব বিষয় নিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায়, বিচক্ষণতার সাথে চিন্তা করলেও ওকে নিয়ে ভাবার সময় পুরোপুরি ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গেছি! যা যা পাগলামি করেছি তা আমার সঙ্গে যায়না। মানুষ তা শুনলে বিশ্বাসই করবেনা!”

শাফায়াত দাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে শুধায়,
– “আপনারা দুজনেই একটু পাগল টাইপ। আমার বিষয়টা দারুণ লেগেছে। সচরাচর ক্লায়েন্টদের কথা শুনে ভালোলাগা কাজ করেনা। আপনাদের ক্ষেত্রে সেটা হয়।”

– “কিন্তু আমার তো বলতে ভালো লাগছেনা স্যার। কী করে যে বোঝাই আপনাকে!”
হাসিমুখে থেকেও বেশ হতাশ কণ্ঠে বললো এনজাম। শাফায়াত প্রতিত্তরে জানায়,
– “এই প্রফেশনে সময়টা খুব বেশি না হলেও ডিভোর্স কেস অনেক পেয়েছি। কারো কারো ক্ষেত্রে কথা শুনে নিজেই ভেবেছি,এদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিৎ। কিছু ক্ষেত্রে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি একটা সংসার টেকানোর। সফল হয়েছি, আবার হইনি।
আপনাদের ডিভোর্সটা করাতে চাইলে আমার এই ছোট্ট ক্যারিয়ার এ নতুন একটা অভিজ্ঞতা হবে।”

– “কেমন অভিজ্ঞতা?”

– “ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে ডিসিশন বদলে ফেলতে দেখার অভিজ্ঞতা। কারণ আপনারা সাইন করবেন ই না।”

এনজাম ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে বলে,
– “আপনার মিসেস এর সাথে তো সেভাবে কথা হয়নি। তার দিকটা তাই বলতে পারছিনা। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে আমি লিখে দিতে পারি, সাইন আপনি করতে পারবেন না।”

– “আপনার ভাবনাতো ভুলও হতে পারে স্যার।”

– “হতে পারে। তবে মনে হচ্ছেনা হবে।”

একটু কেশে সে জিজ্ঞেস করে,
– “সরি বলতে কী খারাপ লাগে?”

এনজাম হেসে উত্তর দেয়,
– “হাজারবার বলেছি এখন অবধি। আরো লক্ষাধিক বার বলতে পারবো। ওটা কোনো ব্যাপার না।”

– “তাহলে তো হলোই! বাসায় যান। বেগমকে গিয়ে সুন্দরভাবে একটা সরি বলুন। তারও ভালো লাগবে,আপনারও ভালো লাগনে। যদিও আমি অবিবাহিত,মেয়ে মানুষের ব্যাপারে যা ধারণা তা কেবল কর্মক্ষেত্রেই। তারা কিন্তু একটুতেই গলে যায়।”

এনজাম হাসে তার কথা শুনে। শাফায়াত ঘড়িতে একবার সময় দেখে বলে,
– “আপনাদের তিনটে মাস তো মান অভিমানের মাঝে কাটাতে বলিনি। আলোচনা করতে বলেছি। যেই ইস্যুগুলো সিরিয়াস মনে হয়, সেগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। আমি বাণী ঝাড়লে তো কোনো উপকার পাবেন না। নিজেদের সমস্যা নিজেরা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার উপলব্ধি দারুণ। তবে ডিসিশন টা ভুল।
একটা বাণী দেই তবুও, সামটাইমস ডিভোর্স ইজ নট দ্যা সলিউশন। আজকাল মানুষ এত কঠিন শব্দটাকে সহজভাবে নিয়ে নিচ্ছে। এমনটা করবেন না। নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজুন। প্রয়োজনে ওয়াইফের সাহায্য নিন।

আর যদি মনে করেন তো অন্য উকিলের কাছে যেতে পারেন। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

এনজাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
– “আপনার ধারণা সত্যি হলে মেইবি আমি অখুশি হতাম না।”

শাফায়াত উঠে দাঁড়ায় এবার। একটু তাড়া নিয়ে বলে,
– “বেস্ট অফ লাক। আজ আর সময় দিতে পারছিনা। প্রয়োজন পড়লে আবার আসবেন। মিসেস কে নিয়েই আসবেন।”

মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় এনজাম। শাফায়াত স্বল্প সময়েও আরেকটা প্রশ্ন করে,
– “আপনারা খুব কম বয়সে বিয়ে করেছিলেন নাকি? না মানে দেখলে বোঝা যায়না আপনাদের ছয় বছরের একটা ছেলেও আছে!”

এনজাম বিস্তর হেসে উত্তর দেয়,
– “আই ওয়াজ টুয়েন্টি টু এন্ড সি ওয়াজ এইটটিন অ্যাট দ্যাট টাইম। নাও আ’ম টুয়েন্টি নাইন, সি ইজ টুয়েন্টি ফাইভ। উমম… কম বয়সেই বলা চলে।”

শাফায়াতের সঙ্গে সেও বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে। একটু আগেই পৌঁছে যায় অফিসে। বসেবসে ভাবে অনেককিছু। তারপর ভাবনা ছেড়ে কাজে মনোযোগ দেয়।
দুপুর তিনটের দিকে আনজুমের কল আসে তার ফোনে। এনজাম ফোনটা কানে তুলে বলে,
– “হুম আপু,বল।”

– “কোথায় তুই?”

– “অফিসে। কেন?”

আনজুম একটুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
– “ফোন করে তোর বউকে জিজ্ঞেস কর খেয়েছে কিনা।”

এনজাম ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
– “কেন? ওর আবার কী হয়েছে? অফিসে যায়নি?”

– “নাহ। সকাল থেকে দেখলাম শুয়েই আছে বিছানায়। দুবার গিয়ে জানতেও চাইলাম শরীর ঠিক আছে কিনা। বললো কিছু হয়নি। তিনি আমার কথায় পাত্তা দিয়েছেন কখনো?
টুশির বড় চাচা অসুস্থ, জানিস ই তো। তাকেই দেখতে এসেছি। প্রণয়কেও সাথে নিয়ে এসেছি। তোর বউকে প্লেটে খাবার তুলে দিয়েও বলেছি খেয়ে নিও। মহারানী তো জীবনে শুনবেন না আবার কথা!”

এনজাম কিছু বলার পূর্বে সে চিন্তিত স্বরে বলে,
– “গায়ে হাত দিয়ে দেখেছিলাম হালকা জ্বর। ও তো সহজে অফিস কামাই দেওয়ার মেয়ে না। তোকে বলেছে কিছু? ঐ মেয়ের ভাবসাব বুঝিনা আমি।”

শেষ কথাটা রেগে বলে সে পুনরায় নরম গলায় বলে,
– “একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস বুঝলি? একাএকা থাকবে, অ্যানিও তো নেই।”

এনজাম। ছোট করে উত্তর দেয়,
– “হুম, যাবো তাড়াতাড়িই।”

কল কেটে দিয়ে প্রজ্ঞার নম্বর একটা কল করতে চাইলো সে। আবার থেমে যায়। ও নিজে থেকে জানায় নি কেন? এমনিতে তো সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেও হাজারবার বলে।
.
– “শয়তান, তুই যদি আর জীবনে বাসায় চুলকানির ঔষধ ঢুকিয়েছিস তাহলে তোর একদিন কী আমার একদিন!”

সব অ্যালার্জির ঔষধগুলো এনজামের দিকে ছুড়ে মারতে মারতে বললো প্রজ্ঞা। নাকের ডগা তার টকটকে লাল হয়ে আছে। এনজাম কোনোভাবে ঔষধগুলো সরিয়ে রেখে বলে,
– “এগুলো কেমন ভাষা? সুন্দর করে বলো, অ্যালার্জির ট্যাবলেট। আর এগুলো তোমার ই লাগে আমার চেয়ে বেশি।”

প্রজ্ঞা আরো দুবার হাঁচি দিয়ে নাক ঘষে বলে,
– “হ্যা তো অ্যালার্জি ছাড়া কী দুনিয়ায় আর কোনো রোগ নেই? একটা ঠান্ডার ঔষধ ও খুঁজে পাচ্ছিনা আমি! এক্ষুনি নিচে গিয়ে ঔষধ এনে দেবে। হাঁচি দিতে দিতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। এটাও তো তোমার জন্যই।”

– “আমার জন্য? ওমা! আমি কী করলাম?”
অবাক হয়ে জানতে চায় এনজাম। প্রজ্ঞা তার দিকে আরো দুটো ঔষধের পাতা ছুড়ে বলে,
– “তোমার জন্য ভোর পাঁচটায় আমার গোসল করতে হয়েছে। ঠান্ডা তো সেইজন্যই লেগেছে। এই কনকনে শীত এ ঐ ভোরবেলায় কেউ গোসল করতে পারে? আবার বলো আমি কী করলাম? কচি খোকা তো তুমি!”

এনজাম এবার থতমত খেয়ে বলে,
– “আরে,গোসল তো আমিও করেছি। ঠাণ্ডা তো লাগেনি। আসল সমস্যা তোমার নাকের। আমি নির্দোষ।”

– “তাইনা? তোমার কোনো দোষ নেই? বেশ,ঠিক আছে। আজকে থেকে যতদিন না শীত পুরোপুরি চলে যাচ্ছে, আমি অন্য ঘরে ঘুমোবো। যদি একবারো ডেকেছো তো গরম খুন্তির ছ্যাকা দেবো তোমার পিঠে। এই আমি বলে রাখলাম।”

বলেই বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে অন্যঘরে চলে যায় প্রজ্ঞা। এনজাম হা করে তাকিয়ে থেকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যায় তাকে আটকাতে। যেতে যেতে বলে,
– “এ আবার কেমন কথা? আরে আমি ঔষধ এনে দিচ্ছি এখনি! তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমোতে পারি বলো জান?”

এনজাম কাছে এসে হাতটা ধরার পূর্বেই প্রজ্ঞা আঙুল উঁচিয়ে রাগী গলায় বলে,
– “আর এক কদম এগোলে তোকে আমি খু’ন করবো এনজাইমের বাচ্চা!”

.
এসব কথা ভেবেই হাসছিলো এনজাম। তবে এই জ্বরের সঙ্গে তার এক বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিছু পাগলামি… যা ভাবলে তার মন ভালো হয়ে যায় প্রতিবার।

#চলবে?

[বিশাল পর্ব। বানানে ভুল থাকতে পারে। ক্ষমা করবেন।]