নারকেল ফুলের মালা পর্ব-০২

0
7

#নারকেল_ফুলের_মালা
#ফারহানা_কবীর_মানাল

২.
যতক্ষণে তিন্নির জ্ঞান ফিরল ততক্ষণে সকাল হয়ে গিয়েছে। জানালা গলে সকালের মিষ্টি রোদের খানিকটা তার ঘরের ভেতর পড়ছে। জানালার গ্রিলের ছায়ায় মিশে অন্য রকমের নকশা তৈরি হয়েছে। সে কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইল। সরল ধরনের একটা নকশা, তবুও ভালো লাগছে দেখতে। যেন মোহনীয় ব্যাপার আছে!

তিন্নি আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসল। তার মাথায় সূক্ষ্ণ যন্ত্রণা হচ্ছে। সে এক হাতে নিজের কপাল চেপে ধরে রাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। সবকিছু মনে পড়ছে না। শেষবার জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল। এতটুকুই স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু সে তো ওই ঘরের সামনে। এখান পর্যন্ত কে নিয়ে এলো? হোসেন?

সরিফা বেগম দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকলেন। তিন্নির পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। অসম্ভব কোমল গলায় বললেন, “এখন কেমন লাগছে তোমার?”

“ভালো লাগছে আম্মা। মাথায় যন্ত্রণা আছে। তবে খুব বেশি না, হালকা ধরনের।”

“যে ভয় পেয়েছিলাম!”

“আচ্ছা আম্মা, আমাকে ঘরে আনলো কেন?”

সরিফা বেগম একটু মিইয়ে গেলেন। তরল গলায় বললেন, “হোসেন এনেছে। সে ছাড়া আর কেউ কী তোমায় উঁচু করতে পারে?”

তিন্নি হেসে ফেলল। সরিফা বেগম হাত ধরে রাখা থালা থেকে এক টুকরো আপেল উঠিয়ে তিন্নির মুখের সামনে ধরল।

“না খেয়ে খেয়ে শরীরের কী অবস্থা হয়েছে দেখেছ? রাতেও ঠিকঠাক খেতে পারোনি।”

“আম্মা, আমার তো না খেয়েই থাকা উচিত। আপনার ছেলে ছাড়া আর কেউ আমায় তুলতে পারে না। না খেয়ে খেয়ে ওজন এমন বানানো উচিত যেন সুমনও আমাকে তুলতে পারে।”

তিনি হেসে ফেললেন। তিন্নিও হাসল। তার মনে হলো– হোসেনকে নিয়ে সমস্যার কথাটা সরিফা বেগমকে বলা যায়। তিনি হয়তো তার ছেলেকে কিছু বলবেন। হোসেন কী তার মায়ের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারবে। সে সরিফা বেগমের গায়ে হাত রাখল। গলার স্বর অনেকখানি নিচু করে বলল, “একটা কথা বলব আম্মা।”

“বলো।”

“আপনার ছেলে…”

সে কথা শেষ করতে পারল না। সরিফা বেগম তাকে থামিয়ে দিলেন। থমথমে গলায় বললেন, “তোমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বিষয়ের কোন কিছু আমি জানতে চাই। শুনতেও চাই না। তোমার নিজের সমস্যার সমাধান তোমাকেই করতে হবে।”

তিনি খাবারের প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ালেন। বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন, “ওগুলো খেয়ে নাও। নয়তো আবারও মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।”

তিন্নি প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইল। সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে যায়। সরিফার বলা শেষ কথাটা মনে ধরল তার– তোমার নিজের সমস্যার সমাধান তোমাকেই করতে হবে। সে আপেলের টুকরোয় কামড় বসালো।

হোসেন ঘরের ভেতর ঢুকেই চিৎকার করে উঠল। তীক্ষ্ণ এবং তীব্র গলায় বলল, “রাত দুপুরে ঘরের বাইরে গিয়েছিলে কেন? ওই ঘরের সামনে তোমার কী কাজ?”

তিন্নি চট করে জবাব দিলো না। খানিকক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল, “ইদানিং শেষ রাতের দিকে আমার ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড রকমের পানির পিপাসা লাগে। পানি খেতে গিয়ে দেখি ঘরে পানি নেই। তাই পানি আনতে যাচ্ছিলাম।”

হোসেন ঘরের কোণে টেবিলের উপর রাখা জগের দিকে ইশারা করে বলল, “পানি তো আছে।”

“আম্মা দিয়ে গেল। এই যে ফলও কে’টে দিয়েছে।”

“খেয়ে নাও। হুটহাট অসুস্থ হয়ে পড়া ভালো কথা না। সময় করে একদিন ডাক্তার দেখিয়ে আনব।”

তিন্নি হাসল। মুখের হাসি। এই মানুষটাকে সে আর বিশ্বাস করতে পারছে না। কোথাও খুব বড় একটা সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা যা-ই হোক না কেন তাকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। সে ঠিক করল সুমনের সাথে কথা বলবে। এতদিন কিছু বলেনি ভেবে খানিকটা আফসোসও করল। হোসেন সারাদিন বাড়ি থাকে না। সন্ধ্যার পর ফেরে। সুমনের স্কুল থাকলেও সে বিকেলের দিকে বাড়িতে চলে আসে। কথা বলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর নেই। সে ঠিক করল ওই সময়েই সুমনের সাথে কথা বলবে।

দুপুরের খাওয়া শেষ। এই মুহূর্তে বাড়িতে তিনজন মানুষ আছে। তিন্নি এবং তার শ্বশুর শাশুড়ি। আকরাম সাহেব দুপুরের খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে আছেন। টিভি চলছে। তবে তিনি টিভি দেখছেন না। খবরের কাগজ দিয়ে মুখ আড়াল করে রেখেছেন। সংবাদ মিলিয়ে দেখছেন বোধহয়।

কলিংবেল বাজাচ্ছে। সুমন চলে এসেছে। তিন্নি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কেজি পাঁচেক ওজনের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘরে ঢুকল সুমন। সে একটু কুঁজো হয়ে হাঁটছে। ব্যাগের ভার সইতে তার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে ঘরের ভেতরে ঢুকল। সুমন ঘরে যেতেই সরিফা বেগম এলেন। আকরাম সাহেবের কাছে গিয়ে বললেন, “ঘরে চায়ের পাতা শেষ। চিনি নেই। একটু কষ্ট করে দোকান থেকে নিয়ে আসুন।”

আকরাম সাহেব সরু চোখে তাকালেন।

“হোসেনকে বলো। ফেরার পথে নিয়ে আসবে।”

“তাহলে সন্ধ্যায় আর চা চাইবেন না।”

আকরাম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। ফতুয়া ঠিক করতে করতে বললেন, “আর কিছু লাগবে?”

“আমার ওষুধ শেষ। ওগুলোও যদি।”

“একদম শেষ করে বলো কেন? কয়েকটা থাকতে বলতে পারো না?”

তিনি মুখ চিবিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আকরাম সাহেব চলে যেতেই সরিফা বললেন, “তিন্নি শোনো। ঘরে পান নেই। গালটা কেমন খালি খালি লাগছে। লতার মায়ের কাছ থেকে একগাল পান চিবিয়ে আসি। তুমি সুমনকে কিছু একটা রান্না দাও। নুডলস রাঁধতে পারো। সুমন নুডলস খেতে পছন্দ করে। বেশি করে ডিম দেবে। ঠিক আছে?”

তিন্নি মাথা নাড়ল। রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় কড়াই বসালো। রান্নার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ডিম পোচ তারপর নুডলস। এর চেয়ে সহজ আর কিছুই হতে পারে না। সে ফ্রিজ খুলে ডিম বের করল। হঠাৎই তার নজরে পড়ল– কৌটা ভর্তি চায়ের পাতা। চিনিও আছে। কিন্তু সরিফা যে বললেন চা পাতা শেষ, চিনি নেই। বিদ্যুৎ চমকের মতো তিন্নির মাথায় কিছু একটা খেললো। সে তড়িঘড়ি করে নুডলস রান্না করে সুমনের কাছে গেল। কোমল গলায় বলল, “সারাদিন তোমার অনেক ধকল গলছে তাই না?”

সুমন তার কথার জবাব দিলো না। শান্ত ভঙ্গিতে বসে রইল। তিন্নি তার সামনে নুডলসের বাটি রাখল। গলার স্বরের কোমলতা একটু বাড়িয়ে বলল, “গরম গরম খেয়ে নাও। ভালো লাগবে। আমি তোমার জন্য পানি নিয়ে আসছি।”

সে পানি আনতে চলে গেল। ইচ্ছে করেই একটু দেরি করে ফিরল। সুমন নুডলস খাচ্ছে। তিন্নি বলল, “শুধু খেলেই হবে? রান্না কেমন হয়েছে বলবে না?”

“ভালো হয়েছে।”

“রান্না ভালো মন্দে কী যায় আসে? তোমার পছন্দ হয়েছে কি-না সে কথা বলো।”

“ডিম বেশি দেওয়া নুডলস খেতে আমার ভালো লাগে।”

তিন্নি হাসল। সুমনের গায়ে হাত রেখে বলল, “তুমি খুব চুপচাপ সুমন। কথাবার্তা বলো না। কতদিন ধরে এখানে থাকছ। অথচ তোমার সাথে ভালো করে কথা বলাই হয়নি।”

সুমন কথার জবাব দিলো না। নির্বিকার ভঙ্গিতে খেতে লাগল।

“তুমি কী সবসময়ই এমন চুপচাপ? স্কুলে তোমার বন্ধু নেই?”

সে ডানে বামে মাথা নাড়ল। তিন্নি বলল, “সেকি কথা সুমন! এই বয়সে বন্ধু না থাকলে চলে নাকি? একসাথে খেলাধুলা, দুষ্টুমি না করলে শৈশবের আর কী মানে বলো।”

“কেউ আমার সাথে মিশতে চায় না।”

তার গলার স্বর একটু তরল শোনাল। তিন্নি বলল, “কেন মিশতে চায় না?”

“ওরা আমার সাথে মিশতে ভয় পায়।”

“ভয় পায়! ভয় পাবে কেন? তুমি কত মিষ্টি একটা ছেলে। সুন্দর করে কথা বলো। এমন কারো সাথে মিশতে কেউ ভয় পেতে পারে নাকি?”

সুমন তিন্নির হাত চেপে ধরল। সর্তক চোখে চারপাশে তাকিয়ে বলল, “দেখো আজ রাতে তুমিও ভয় পাবে। খুব বাজে একটা মানুষকে স্বপ্নে দেখবে।”

তিন্নি এতটুকু ঘনিষ্ঠতার অপেক্ষা ছিল। এবার সে আসল কথা পাড়লো। নিচু গলায় বলল, “তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“বলো।”

“রাতের বেলা তুমি অমন করে চিৎকার করো কেন?”

সুমনের মুখ কালো হয়ে গেল। কাঁপা গলায় বলল, “কাউকে বলবে না তো? ভাইয়াকেও না কিন্তু।”

“এই যে তোমার হাত ধরে কথা দিচ্ছি। কাউকে বলব না। আম্মাকেও না। তুমি আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।”

“রাতে আমি…”

“হ্যাঁ হ্যাঁ বলো। রাতে তুমি কী?”

“রাতে আমি খুব বাজে বাজে স্বপ্ন দেখি। একটা ছায়া প্রতিদিন আমাকে নিয়ে যেতে আসে। আমি ওর থেকে পালাতে চেষ্টা করি, পারি না। দৌড়াতে গিয়ে আমার হাত পা কে’টে যায়। কখনো কখনো মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ি।”

“স্বপ্ন তো মিথ্যে।”

“মিথ্যে না। সত্যি! স্বপ্নে ব্যাথা পেলে আমি খুব তীব্রভাবে সেই ব্যাথা অনুভব করতে পারি। বাস্তবে ব্যাথা পেলে এত কষ্ট হয় না।”

তিন্নি কী বলবে বুঝতে পারল না। খানিকক্ষণ ভেবে বলল, “তোমার ভাই তো তোমার কাছে ঘুমায়। তারপরও এমন ভয় পাও কিভাবে?”

“জানি না। প্রথম প্রথম ঘুমালে যখন স্বপ্ন দেখা শুরু করি, তখন ভাইয়া আমার পাশে থাকে না। অনেক হাতড়েও তাকে খুঁজে পাই না। শেষ রাতের দিকে পাই। তখন কান্না থামিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”

“তোমার ভাইয়াকে এসব বলোনি?”

“বলেছি। ভাইয়া বলেছে আমি যদি এসব কথা সবাইকে বলে দেই তাহলে ওই ছায়া আমাকে মে’রে ফেলবে। যাকে বলব তাকেও মে’রে ফেলবে। সত্যি বলছি। তুমি দেখো, আজ রাতে তুমিও বাজে বাজে স্বপ্ন দেখবে।”

তিন্নি কিছু বলবে তার আগে কলিংবেল বেজে উঠল। সে ওড়নায় চোখ-মুখ মুছে চেহারা ঠিক করার চেষ্টা করতে করতে দরজা খুলতে চলে গেল। সুমন তড়িঘড়ি করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। জড়সড় হয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল।

আকরাম সাহেব ফিরে এসেছেন। তার হাতে পেপার ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। তিন্নি আগ বাড়িয়ে তার কাছ থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে নিলো। মেকি হেসে বলল, “আব্বু আপনাকে লেবুর শরবত বানিয়ে দেই? গরমে বাইরে থেকে এসেছেন, ঠান্ডা খেলে ভালো লাগবে।”

“শরবতের প্রয়োজন নেই। এক কাপ চা বানিয়ে দাও। তোমার শাশুড়ি কোথায়?”

“আম্মা কোথায় একটা আছে যেন। ছাঁদে গিয়েছে নাকি।”

“সুমন কোথায়?”

“ঘরে আছে। কী করছে বলতে পারব না।”

তিন্নি ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘরে চলে গেল। আকরাম সাহেব উঁকি দিয়ে সুমনের ঘর দেখলেন। সে বিছানায় শুয়ে আছে। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় বসলেন।

মাগরিবের নামাজ শেষে বেশ খানিকটা সময় সে কুরআন তিলাওয়াত করল। হোসেন এখনও বাড়ি ফেরেনি। খানিকক্ষণ আগে সরিফা কল দিয়েছিলেন। হোসেন বলেছে– তার ফিরতে দেরি হবে। যেন চিন্তা না করে।

তিন্নি কুরআন তিলাওয়াত শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে ফেলল। হিজাব পরে থাকতে থাকতে ঘেমে গিয়েছে। গা কুটকুট করছে। ফ্যানের জোর বাড়িয়ে বিছানায় বসল। তার মাথায় নানান রকমের চিন্তা ঘুরছে। সুমনের সমস্যার ব্যাপারটা কিছুতেই পরিষ্কার করতে পারছে না। এই সমস্যা কী মানসিক নাকি জ্বিন পরীর? যা-ই হোক না কেন ছেলের সমস্যার কথা তো মা বাবার জানার কথা। তাহলে মামা মামি ওকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন? চিকিৎসা করাতে পারত। নাকি সুমন এখানে চিকিৎসার জন্যই আছে? ভয় পাবে এমন সন্দেহে তাকে কিছু জানানো হয়নি। তিন্নি হঠাৎ উঠে দাঁড়াল, কিছু একটা ভেবে নিজের ঘর খুঁজতে লাগল। সে সবকিছু খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কী খুঁজছে জানে না, তবে তাকে এমন কিছু একটা খুঁজে বের করতে হবে যা দিয়ে সে এই রহস্যের কিনারা করতে পারবে।

তিন্নি সময় নিয়ে তার ঘর খুঁজল। তবে কিছু পাওয়া গেল না। সে হাল ছেড়ে বিছানায় বসে পড়ল। এভাবে কি কিছু খুঁজে পাওয়া যায়? খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতো অবস্থা হয়েছে। হঠাৎই তার নজরে পড়ল ঘরের ভেতরে রাখা বুকশেলফের দিকে। এইখানে নানান ধরনের বইপত্র থাকে। হোসেনের বই। তিন্নি কখনো এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে না। তবে আজ করল। খুঁজতে গিয়ে তার হাতে একটা বই এলো। বইটা বেশ অদ্ভুত। মসৃণ চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা। কোথাও কিছু লেখা নেই। তিন্নি বইয়ের পাতা ওল্টাতে শুরু করল। বেশ পুরনো বই। কাগজগুলোতে কেমন ধুলো পড়ে গেছে। লেখাগুলো বোঝা যায় না। বিদঘুটে আকৃতির অক্ষর। আরবি নয়, কিন্তু অনেকটা তেমনই। সে বইয়ের লেখা উদ্ধার করতে পারল না।

ঘড়িতে নয়টার মত বাজে। হোসেন আসার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সে তড়িঘড়ি করে সব গুছিয়ে রাখল। রাখতে গিয়ে খেয়াল করল চামড়ার মলাট বাঁধানো বইটায় কভারের ভেতরে সাদা কাগজ মুড়িয়ে রাখা। এমনভাবে রাখা যেন সহজে কারো নজরে না পড়ে। তিন্নি কাগজটা বের করল। তাতে গোটা গোটা অক্ষরের বাংলা লেখা।

‘দু’জনের বাইরে কোন মানুষ জানলে কার্যকর হবে না। জীবনের ঝুঁ’কি বেড়ে যাবে। খুব সাবধান।’

লেখা পড়ে তিন্নির শরীর কেঁপে উঠল। পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলল। বইপত্র সাজিয়ে রেখে আবারও চোখ-মুখ ধুয়ে ফেলল।

হোসেন তীক্ষ্ণ গলায় বলল, “দরজা লাগিয়ে রেখেছ কেন?”

সে দরজায় উপরে আ’ঘা’ত করছে। বেশ জোরে শব্দ হচ্ছে। তিন্নি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। হাসার চেষ্টা করতে করতে বলল, “কাপড় বদলে নিলাম।”

“বাথরুম থাকতে ঘরের দরজা লাগতে হবে কেন?”

তিন্নি তার কথার জবাব দিলো না। হোসেন বলল, “তোমার শরীর কেমন?”

“শরীর ভালো। ভালো লাগছে।”

“ভাত দাও। খেয়ে ঘুমাব। বাকিরা খেয়েছে?”

“জানি না। তবে আমি খাইনি।”

বহুদিন পর সেদিন রাতে আবার তারা দু’জন একসাথে খেতে বসল। হোসেন নিজের মতো খাচ্ছে। তিন্নির দিকে খেয়াল দিচ্ছে না। অবশ্য তিন্নিও হোসেনকে নিয়ে ভাবছে না। তার মাথায় সুমনের ব্যাপারটা জট পাকিয়ে আছে। তারপর আবার বই। তার মানে কী সুমনের সাথে জ্বিন পরী আছে? নাকি অন্যকিছু?

হঠাৎই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। বিদঘুটে অন্ধকারে ভয় গেল চারপাশ। তিন্নির গা ছমছম করতে লাগল। সে হোসেনের হাত চেপে ধরল। হোসেন বলল, “ভয় পেয়ো না। আমি আছি।”

তার গলার স্বর খুব কোমল শোনালো।

চলবে।