নারকেল ফুলের মালা পর্ব-০৫

0
6

#নারকেল_ফুলের_মালা
#ফারহানা_কবীর_মানাল

৫.
বৃষ্টি শুরু হতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। সরিফা মোমবাতি হাতে বসার ঘরে ঢুকলেন। বিরক্ত গলায় বললেন, “বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। আইপিএস না কিনলে আর শান্তি পাচ্ছি না।”

আকরাম সাহেব তার কথার জবাব দিলেন না। শূন্য দৃষ্টিতে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিন্নি বলল, “আর এক কাপ বানিয়ে দেব?”

“দেবে? হ্যাঁ নিশ্চয়ই। দাও দাও। সামান্য আদা কুচি মিশিয়ে দেবে কিন্তু।”

সে অন্ধকার হাতড়ে রান্নাঘরে ঢুকল। চুলায় চায়ের পানি চাপাতে গিয়ে মনে হলো– তার জীবনে বড়সড় কোন সমস্যা হবে। আকরাম সাহেবের কথার ধরন সুবিধার না। তিনি কীভাবে বুঝলেন সে কৌতুহল দেখাচ্ছে? তারপর ওই রিপোর্টের ব্যাপারটাও তার কাছে মিথ্যে মনে হয়েছে। মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট হারিয়ে গেলে নতুন করে টেস্ট না করার প্রয়োজন পড়ে না। কম্পিউটার থেকে রিপোর্ট বের করলেই হয়। তিন্নি মাথা ধরে গেল।

হোসেন যথাসম্ভব দ্রুত বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। সম্ভব হলো না। বৃষ্টিতে আটকে গেল৷ কোন রকমে নিজের দু’হাতের নিচে নাড়িমুড়ি হয়ে এক দোকানে এসে উঠল৷ চায়ের দোকান। বেঞ্চি পাতানো আছে, এক পাশের পায়া ভাঙা। বসা যাবে না। দোকানের ঝাপ বন্ধ। ভেতরে কেউ আছে কি-না বোঝার উপায় নেই। দোকান খোলা থাকলে এক কাপ চা পান করা যেত। সে দোকানের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টি থামার নাম গন্ধ নেই। আধ ঘন্টার বেশি সময় ধরে হোসেন এখানে আটকে আছে৷ শীতল চোখের বৃষ্টি দেখছে। চরম বিরক্তির মুহুর্তে তার মেজাজও শীতল, তবে সেই শীতল মেজাজের সামনে এসে দাঁড়ালে বুকের র’ক্তও শীতল হয়ে যায়।

বৃষ্টি দেখলে মন নরম হয়। হোসেনেরও বোধহয় তেমন কিছু হলো। সে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।

তিন্নি মেয়েটা বেশ হাসিখুশি। সবার সাথে মিলেমিশে চলতে ভালোবাসে। সুন্দর চোখ আর উজ্জ্বল হাসি খুব সহজে তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলে। চোখের দেখায় ভালো লাগলেও হোসেন তাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার বোকামি করতে চায়নি সে। তবুও শেষ পর্যন্ত কাজটা করে বসল। কাজটা করল ভিন্ন কারণে ভিন্ন উদ্দেশ্যে।

সেদিন ছিল বুধবার। তড়িঘড়ি করে ক্লাসে ঢুকল হোসেন। টেবিলের উপর কাপড়ে মোড়ানো পুঁটলি রেখে বোর্ডে প্রশ্ন লিখতে লাগল। সারপ্রাইজ টেস্ট হবে৷ তিন্নি সামনের বেঞ্চে বসা। তার চোখ-মুখে আনন্দে ছাপ। সে কোন ব্যাপারে খুব মজা পাচ্ছে। হোসেন দ্রুত হাতে প্রশ্ন লেখা শেষ করল। গম্ভীর গলায় বলল, “যে যার মতো করে লেখা শুরু করো। কেউ কারো দিকে তাকাবে না।”

কথাগুলো বলে সে নিজের চেয়ারে বসল। তার চোখজোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্লাসের ভেতরে নজরদারি করছে। কেউ নকল করছে কি-না, একে অন্যের খাতা দেখে লিখছে কি-না। হঠাৎই এক জায়গায় তার চোখ আটকে গেল। তিন্নির দিকে। মেয়েটার বাম হাত একা একা সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। খানিক বাদে বাদে সে নিজের হাত গুটিয়ে নিচ্ছি। তবে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

হোসেন টেবিলের উপরে রাখা কাপড়ে মোড়ানো পুঁটলির দিকে তাকাল। দ্রুত হাত পুঁটুলি তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। ওটা নিয়ে তিন্নির পেছনের বেঞ্চে পাশে দাঁড়াল। আঁড়চোখে খেয়াল করল তিন্নির হাত পেছনের দিকে আসার চেষ্টা করছে। হোসেনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। রহস্যময় কুটিল হাসি। এত সহজে নিজের কাঙ্ক্ষিত বস্তু পেয়ে যাবে আশা করতে পারেনি। ভেবেছিল তুলারাশির মেয়ে খুঁজতে তার অনেক কাঠখড় পো’ড়া’তে হবে। কিন্তু কোন কিছুর প্রয়োজন হলো না।

ইসলামের দৃষ্টিতে রাশিফল বা জ্যোতিষবিদ্যা মানা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন– ‘“আসমান ও জমিনের গায়েবের খবর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।”
— (সুরা আন-নামল: ৬৫)

তবে হোসেনের এসব ভাবার সময় নেই। সে নিজের উদ্দেশ্য নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে সত্য দেখতে পাচ্ছে না। তিন্নিকে তার কাজের জন্য একদম পারফেক্ট মনে হলো। এমন মেয়েকে হাতছাড়া করা খুব বড় বোকামির কাজ।

বৃষ্টি ধরে এসেছে। সে চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। দুপা এগোতে আবারও বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি এবার বড় বড় ফোঁটায় পড়তে শুরু করেছে। হোসেন এবার আর ব্যস্ত হলো না। পেছনে ছুটে গিয়ে চায়ের দোকানে দাঁড়াল না। স্বাভাবিক পায়ে হাঁটতে লাগল৷ বৃষ্টির পানি বরফের মতো ঠান্ডা। তবে তার খারাপ লাগল না। বহুদিন বাদে সে আয়েশ করে বৃষ্টিতে ভিজল। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। তার বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি তার ব্যাথা ধুয়ে দিতে পারছে না। বরং বাড়িয়ে তুলছে। তীব্রভাবে চাওয়া জিনিসগুলো কখনো নিজের হয় না। অন্যের কাছে মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু কী আর করার! এটাই জগতের নিয়ম। কেউ একজন পেয়েছে মানে বাকি সবাই খুব বিশ্রীভাবে হারিয়েছে। হোসেন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

তিন্নি দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে। মসৃণ চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা বইটা রহস্যময়। এর ভেতরের লেখাগুলো অপাঠ্য এবং দুর্বোধ্য। এগুলো পড়তে পারলে অনেক সমস্যা মিটে যেত। কিন্তু উপায় নেই। শত চেষ্টা করেও তিন্নি এসবের কিছু বুঝতে পারছে না। আকরাম সাহেবের কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে। তিনি কীভাবে জানলে তিন্নি কৌতুহলী হয়ে পড়েছে? সে তো তার সামনে কৌতুহল দেখাচ্ছে না। গায়েবি ক্ষমতায় আকরাম সাহেব সবকিছু জেনে ফেলেছেন এ কথা তিন্নির বিশ্বাস হয় না। কেউই গায়েব জানে না। জানতে পারেও না। তবে কী এই বাড়িতে ক্যামেরা লাগানো আছে?

সে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার সময় পেল না। দরজার কড়া নড়ে উঠল। ওপাশ থেকে হোসেনের গলা শোনা গেল।

“দরজা আটকে রেখেছ কেন?”

তিন্নি বই লুকিয়ে উঠে দাঁড়াল। চোখ-মুখে ঘুমের ভাব ছড়িয়ে দরজা খুলল। সরল গলায় বলল, “আমি তো ভেবেছিলাম আপনি সুমনের কাছে ঘুমবেন। ওর হঠাৎ জ্বর এসেছে। রাতের বেলা খেতে ডাকতে গিয়ে দেখলাম জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে।”

“জ্বর! কখন থেকে জ্বর এসেছে?”

হোসেন কণ্ঠস্বর উজ্জ্বল শোনালো। তিন্নি বলল, “সন্ধ্যা থেকে।”

“ওষুধপত্র দিয়েছ নাকি?”

“না। আম্মা ওর কাছে ছিলেন।”

“আচ্ছা।”

হোসেন হাসি-হাসি মুখ করে বিছানায় বসল। কোমল ভঙ্গিতে বলল, “তাহলে মা-ই দেখুক। তুমি আমার জন্য ভাত বেড়ে নিয়ে এসো। এখানে বসেই খাই।”

“সুমনের কাছে যাবেন না?”

“যাব। এখন হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। পরে যাব। তুমি খাবার নিয়ে এসো।”

তিন্নি বেরিয়ে গেল। হতভম্ব মুখেই বের হলো। সে আশা করেনি হোসেন সুমনের কাছে যাবে না। বরং উল্টোটাই ভেবেছিল।

তার মুখে সুমনের জ্বরের খবর শুনে সরিফা বেগম আৎকে উঠেছিলেন। ব্যস্ত গলায় বললেন, “সেকি কথা! কখন থেকে জ্বর এসেছে? কী করছে?”

তিন্নি বলল, “বলছে তো একটু আগে জ্বর এসেছে।”

“জলপট্টি দিতে হবে। ওষুধ খাওয়াতে হবে। একটা কাজ করো। একটা বাটিতে ঠান্ডা নিয়ে এসো। পরিষ্কার দেখে কাপড় নিয়ে এসো। শরীর মুছে দিলে জ্বর পড়ে যায়।”

সে তার কথামতো পানি আর কাপড় নিয়ে সুমনের ঘরে গেল। আকরাম সাহেব বললেন, “তুমি এসবের মধ্যে এসো না। এখনকার জ্বর ভালো না। তোমার বেঁধে যেতে পারে।”

“না আব্বু। আমার কিছু হবে না।”

“কথা বললে কথা শুনবে মেয়ে। মুখে মুখে তর্ক করা আমি একদম পছন্দ করি না। পানি আর কাপড় রেখে নিজের ঘরে চলে যাও। যা করার তোমার শাশুড়ি করবে।”

সে আর কথা বাড়ায়নি। পানি রেখে ঘরে চলে এসেছে। রাতের খাবার সময়ে সুমনের অবস্থা জিজ্ঞেস করলে সরিফা বলেছেন, “অবস্থা ভালো। জ্বর পড়ে গেছে।”

হোসেন প্লেটের ভেতরে হাত ধুয়ে ফেলল। তৃপ্ত গলায় বলল, “রান্না ভালো হয়েছে। দিন দিন তোমার রান্নার হাত পাঁকা হচ্ছে।”

তিন্নি অল্প হাসল। হোসেন বলল, “তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।”

সে পকেট থেকে মেহেদী বের করল। অসম্ভব কোমল গলায় বলল, “তোমার ওই সুন্দর হাতজোড়া মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।”

“আমি লাগতে পারি। আমার কাছে দেন।”

“উহু! আমি নিজের হাতে লাগিয়ে দিতে চাই। এসো। আমার কাছে এসে বসো দেখি।”

তিন্নি হাত মেলে ধরল। মেহেদী লাগানোর কোন ইচ্ছে তার নেই। তবে এই মুহূর্ত সে হোসেনের মনে কোন সন্দেহ জাগাতে চায় না। হোসেন খুব মনযোগ সহকারে নকশা তৈরি করছে। হঠাৎই তিন্নির শরীর দুলে উঠল। এই নকশা তার পরিচিত। মসৃণ চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা বইটিতে সে এমন একটা নকশা দেখেছে। হোসেন হুবহু সেই নকশাই তার হাতে আঁকছে। সে হাত সরিয়ে ফেলল। চমকে ওঠা গলায় হোসেন বলল, “কী হলো? হাত সরিয়ে ফেললে কেন?”

“হাত ধরে দিয়েছে।”

“ওহ আচ্ছা।”

হোসেন একটা বালিশ নিয়ে এলো। শান্ত গলায় বলল, “বালিশের উপর হাত রাখো।”

সে হাত রাখল। হোসেন তার দুই হাত দু’টো নকশা এঁকে দিলো। ঝলমলে গলায় বলল, “চমৎকার লাগছে।”

তিন্নি হাসল।

“এক্ষুনি মুছে ফেলবে না। শুঁকিয়ে যাওয়ার পর মুছবে।”

“একটা প্রশ্ন করব?”

“হ্যাঁ। বলো।”

“মেহেদীর রং এমন কেন? বাজারে তো এই ধরনের রং পাওয়া যায় না।”

“বাচ্চা একটা মেয়ে ঝুড়িতে করে বিক্রি করছিল। সে আর তার মা মিলে পাতা বেঁটে তৈরি করেছে। এগুলো বিক্রি করে ওদের সংসার চলে। খুব মায়া লাগলো তাই ওর থেকেই কিনলাম।”

“ভালো করেছেন।”

মেহেদী শুঁকানোর পর হোসেন নিজেই তিন্নির হাত ধুইয়ে দিলো। ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে বলল, “অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ো।”

তিন্নি চোখ বুঁজলেও ঘুমালো না। ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইল। হোসেনের ঘুমের অপেক্ষায় মুহূর্ত পার করতে লাগল। দ্রুতই হোসেনের চোখে ঘুম নামল। সারাদিন অনেক খাটাখাটুনি করতে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে শরীরও বেশ ক্লান্ত। হোসেন ঘুমিয়ে পড়ার পর তিন্নি বিছানা ছেড়ে নামল। খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে বাথরুমে ঢুকে গেল। ওজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করল। কুরআন শরিফ বের করে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করল। সূরা নাস এবং সূরা ফালাক পড়ল। নিজের বুকে পিঠে ফু দিয়ে কুরআন শরিফ তুলে রাখল। তিন্নির দাদি খুব ধার্মিক মহিলা ছিলেন। সারাদিন কুরআন হাদিস নিয়ে পড়ে থাকতেন। বাচ্চা বয়সে তিনিই তিন্নিকে এসব শিখিয়েছিলেন। কোন সূরা, কোন দোয়া পড়লে রাতের বেলা খারাপ জ্বিন কাছে আসতে পারে না, মানুষের ক্ষ’তি স্পর্শ করে না– এসবও বলতেন। বহুদিন বাদে তার কথা মনে করে তিন্নির চোখ ভিজে উঠল। ভদ্রমহিলা এখন আর বেঁচে নেই। তার শিক্ষা রয়ে গিয়েছে। তিন্নি তার শেখানো উপায়ে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছে। একটা মানুষের জীবন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তির আর কী হতে পারে!

সে চোখ মুছে ফেলল। ঘুমের আগ পর্যন্ত বিড়বিড় করে আয়াতুল কুসরি পড়ে গেল। কী আশ্চর্য! গোটা রাতে সে কোন স্বপ্ন দেখল না। একদম কিছুই না। ভয় পেল না। শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে রইল।

হোসেন বেশ তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্নটা করল। গলার স্বর চড়িয়ে বলল, “তুমি কী আমায় মিথ্যে কথা বলছ?”

তিন্নি মনে মনে হাসল। চোখ মুখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটিয়ে বলল, “মিথ্যে বলব কেন? সত্যি কথা বলছি। রাতে আমি কোন স্বপ্নই দেখিনি।”

“তাহলে অমন করে কাঁদছিলে কেন?”

“জানি না। মনে করতে পারছি না।”

হোসেন নিজেকে সামলে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সুমন জ্বর কমেনি। সে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। সরিফা রান্নাঘরে। সুমনের জন্য নুডলস রান্না করছে। আকরাম সাহেব বাড়িতে নেই। তিন্নি সুমনের পাশে বসল। তার মাথায় হাত রেখে বলল, “তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না বলো?”

সুমন অল্প একটু মাথা নাড়ল। ক্লান্ত গলায় বলল, “গায়ে খুব ব্যাথা।”

“এখনকার জ্বর খুব খারাপ। ভাইরাস জ্বর। অল্পতে সারে না। তবে তুমি চিন্তা করো না। ওষুধপত্র খাও।”

“আমি মনে হয় আর বাঁচব না।”

“এমন করে কেন বলছ?”

সুমনের জ্বরে পো’ড়া ক্লান্ত শরীর হাওয়ায় দুলে উঠল। পরক্ষণেই সে আবার বিছানায় লুটিয়ে পড়ল। তিন্নির হাত ধরার চেষ্টা করে বলল, “তোমাকে একটা কথা বলব?”

“বলো। কী বলবে?”

“তুমি এখান থেকে পালিয়ে যাও। এই বাড়ি খুব খারাপ। আগের মতো ভালো নেই। এখানের মানুষগুলোও খুব খারাপ। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না আমায় পায়ের ফোসকা কীভাবে হলো? ওরা আমাকে আ’গু’নের উপর দিয়ে হাঁটিয়েছে।”

সুমন তার কথা শেষ করতে পারল না। সরিফা ঘরের ভেতরে ঢুকলেন। তিন্নি চোখমুখের অবস্থা ঠিক করতে লাগল। সরিফা অল্প হেসে সুমনের গায়ে হাত রাখলেন। নরম গলায় বললেন, “আমি সব জানি রে বাবা। কিন্তু আমার যে কিছু করার নেই। ওরা আমার হাত পা বেঁধে রেখেছে। মুখ খুললেই আমায় মে’রে ফেলবে।”

তিন্নি বলল, “আপনি সব জানেন?”

“জানি না। তবে সরাসরি কিছু বলার উপায় আমার নেই।”

“কেন নেই? তেমন হলে আপনি পুলিশের সাহায্য নেন।”

“সবকিছু পুলিশ সমাধান করতে পারে না। ওরা তাবিজ করে রেখেছে। ভালোমন্দ বুঝতে পারলে আমাকে পা’গ’ল বানিয়ে দেবে।”

“এসবের থেকে বাঁচার উপায় নেই?”

তিন্নির চোখ জ্বলছে। সরিফা অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছেন। ঠিক তক্ষুনি আকরাম সাহেব ঘরের ভেতরে ঢুকলেন। বরফ শীতল গলায় বললেন, “কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?”

কেউ তার কথার জবাব দিলো না। তিনি আবারও একই প্রশ্ন করলেন। তার গলার স্বর ক্ষুদার্থ নেকড়ের গর্জনের মতো শোনালো।

চলবে