#নিকুঞ্জ_কানন
#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ৪]
তরী ঘুম থেকে উঠেই নিজের তল্পিতল্পা গুছাতে ব্যস্ত। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে নিচ্ছে সে। আহসান তরীর ঠিক সামনে এসে বসলো। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
” বই খাতা গুলোও গুছিয়ে নিও। মায়ের কাছে শুনলাম কয়েক মাস পরেই নাকি টেস্ট পরীক্ষা তোমার? এতদিন যা করেছো সেটার চিন্তা বাদ দাও। মনোযোগ দিয়ে না পড়লে টেস্টে ভালো রেজাল্ট আসবে না।”
তরী হতবিহ্বল হয়ে বললো,
” আপনি আসলেই আমাকে পড়তে দেবেন?”
আহসান প্রতিত্তরে বললো,
” কেন আমি কী বিয়ের আগে বলেছিলাম; যে বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেবো?”
তরী ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
” আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমাকে আর পড়তে দেবেন না। আমার একটা বান্ধবী আছে জানেন? ওর বর বিয়ের পর ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে! পঁচা লোক একটা!”
আহসান তরীর হাতদুটো ধরলো। ধরে বললো,
” তুমি যতদূর পড়তে চাও পড়বে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কী বলেছেন জানো? ❝তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।❞ তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ো। নাহলে, ভবিষ্যতে আমাদের বাচ্চারা বলেই বসবে, ” মা তুমি কিছুই পারো না!”
তরী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। এসব বাচ্চাকাচ্চার কথা বলার মানে কী? লোকটা বড্ড বাজে!
গুনগুনকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে চুলায় রান্না চড়িয়েছেন মনোয়ারা। আহসানকে খুব করে বললেন দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে। আহসান কাজের ছুঁতোয় আর বসলো না। তরীকে সঙ্গে করে নিয়ে বেরিয়ে গেল। ব্যবসার কাজে নাকি আবার বাবার সঙ্গে বের হতে হবে আহসানের। মনোয়ারাও আর জোরালো ভাবে চাপ দিতে পারেননি। আহসান আর তরী চলে যাবার পরপরই; রমিজ আলী হন্তদন্ত হয়ে মনোয়ারা দরজার সামনে এসে নক করলেন। মনোয়ারা দরজা আধা খুলে কিছু বলার আগেই রমিজ আলী বললেন,
” ভাবী কালকে কী গাছে লোক উঠাইসিলেন? গাছের এই পাশের চালতা কই গেসে?”
মনোয়ারা খুন্তি হাতে বললেন,
” আমি কেন গাছে লোক ওঠাতে যাবো? কাল আমার মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছিল বিয়ের পর এই প্রথমবার এসেছে। আমি ওদের সেবাযত্ন ছেড়ে চালতা পারতে লোক ওঠাবো কীভাবে গাছে?”
রমিজ আলী আর কথা বাড়ালেন না। আনমনে দ্রুত হেঁটে চলে গেলেন। এই কর্ম তাহলে নিশ্চিত পাড়ার ছিঁচকে চোরদের কাজ!
মনোয়ারা রান্না সেরে তরীর ঘরটা গুছাতে এলেন। ঘরে বড়, মোটা চটের বস্তা দেখে কৌতুহলী হয়ে বস্তা মুখ খুললেন। খুলতেই দেখলেন বড়সড় মোটাতাজা, খাসা চালতায় ভর্তি বস্তাটা! মনোয়ারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কাল রাতে এই অনাচার কার্য তাহলে তরী-ই ঘটিয়েছে? হায়! এই মেয়ের বিয়ের পরেও কোনো জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি!
★
আহসানের কড়া আদেশ কাল থেকে তরীকে কলেজ যেতে হবে। সময়মতো পড়াও তৈরি করে রাখতে হবে। বাড়ি থেকে আসার সময় তরী কলেজের ধবধবে পোশাকটা নিয়ে এসেছিল। বিয়ের পর সে কালই প্রথম কলেজে যাবে। কলেজে তাঁকে কে দিয়ে আসবে? আহসান? তাঁর ওই উড়নচণ্ডী বুম্বা বুম্বা বাইক দিয়ে সাই করে তরীকে রেখে আসবে কী কলেজের গেটের সামনে? আজ রাতে লোকটাকে একবার জিজ্ঞেস করতে দেখতে হবে। তরী গালে হাত দিয়ে ভাবুক মেয়ের মতো বসে রইলো। আসলেই যদি আহসান তাঁকে কাল কলেজে পৌঁছে দিতে যায়; তবে কী চমৎকার একটা কান্ডই না হবে! ওই যে তরীর বান্ধবী শিউলি আছে না? তাঁকে তাঁর বর রোজ সকালে কলেজে দিয়ে যায়। আবার খেয়ালমাফিক কলেজ ছুটি হওয়ার আগে আগে; শিউলির অপেক্ষায় কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্লাসের সব মেয়েগুলো হা করে তাকিয়ে থাকে তখন। জানালা খুলে বারবার শিউলি আর শিউলির বরকে পালা করে করে দেখে। শিউলির সঙ্গে শিউলির বরের অবশ্য বেশ ভাব। যতবারই বরের প্রসঙ্গ ওঠে ততবারই শিউলি লাজে,লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তখন দেখতে বেশ লাগে তাঁকে! কাল যদি আহসান তাঁকে কলেজে পৌঁছে দিতে যায় কী দারুণ ব্যাপারটাই না ঘটবে! ক্লাসের মেয়েগুলো কী শিউলির বরের মতো আহসানকেও পালা করে করে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে? না না! তা কেন হবে? আহসানকে কেন ওই দুষ্ট মেয়েগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে? মোটেও দেখবে না তাঁরা আহসানকে। যদি দেখে তাহলে তরী তাঁদের চোখ কাঁটা কম্পাস দিয়ে গুঁতিয়ে দেবে।
সাত-পাঁচ ভাবনা ছেড়ে তরী নিজের বইখাতা-গুলোকে আহসানের পড়ার ঘরে সাজালো।কাজে যাবার সময় আহসানই তাঁকে এই ঘরের তালা খুলে দিয়ে গেছে। ঘরটা লম্বায় প্রস্থে খুব একটা বড় নয়। একটা টেবিল আছে সঙ্গে কয়েকটা চেয়ার। ঘরের এক কোনে ছোট্ট একখানা বুকসেলফও আছে। তরী গভীর মনোযোগ দিয়ে বুকসেলফের বইগুলো ঘেঁটে দেখলো। কী সব বড় বড় ক্লাসের পড়ার বই! চাকরির পড়ার বইও আছে বেশকিছু। তরীর কৌতুহলী মনে প্রশ্নরা আঁকিবুঁকি করলো। এই লোকটা তো ব্যবসা করে। তাহলে এত রাশি রাশি চাকরির বই দিয়ে তাঁর কী কর্ম?
তরী তখন পড়ার রুম থেকে সবে মাত্র বের হয়েছে। শোভা এসে তরীর হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
” তরী তোমাকে দেখতে ওইঘরে মিতালী ভাবী এসেছে। ভয় পেও না সে তোমাকে কিছু বলবে না। আমাদের পাশের বাড়িটায় থাকেন উনি। তুমি ঘোমটা-টা দিয়ে একবার দেখা করে এসো।”
তরী কাঁপা কাঁপা হাতে চায়ের কাপটা ধরলো। নতুন মানুষ দেখলেই তাঁর কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। চায়ের কাপখানা নিয়ে তরী শোভার কথা মতো বসার ঘরে গেল। মিতালী অতি আগ্রহ নিয়ে তরীর দিকে তাকালো। তরী সংকোচে চোখ নামিয়ে ফেললো। মিতালীর গোলগাল মুখে হাসি ফুটে উঠলো। গাত্র বর্ণ কালো হলেও তিনি বেজায় সুন্দরী! তরী মিতালীর দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে লম্বা সালাম দিলো। মিতালী সযত্নে চায়ের কাপটা তুলে নিলেন। ছোট্ট চুমুক দিয়ে তরীকে সূক্ষ পর্যবেক্ষনে ব্যস্ত হয়ে পরলেন। তরীর বেশ কাছে গিয়ে বসলেন। তরীর কানে ফিসফিস করে বললেন,
” শোনো, নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তোমাদের। ব্যাটা মানুষের খাউস একটু বেশিই থাকে। তুমি কিন্তু না করো না। যা চায় তাই দিও।
তরী সরল মনে এত কথার মারপ্যাঁচ বোধগম্য হলো না। সে শুধু মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। মিতালী ফের বললেন,
” পারলে যত দ্রুত সম্ভব একটা বাচ্চা নিয়ে ফেলো। আহসান তো ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরেই থাকে। তোমার বাচ্চা নিয়ে ভালোই সময় কাটবে।”
তরী এবারও আগের মতো মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। মনে তাঁর তীব্র সংকোচ! প্রথমে বুঝতে না পারলেও মিতালী আন্টির কথা এখন সে বুঝতে পেরেছে। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে শোভা যেন সুপারম্যানের মতো হাজির হলেন তরীর জন্য। মিতালী শোভাকে দেখা মাত্রই মিইয়ে গেলেন। স্বাভাবিক কথাবার্তায় প্রসঙ্গ ফেরালেন। তরী যেন বুকে প্রাণ ফিরে পেলো।
মিতালী চলে যাওয়ার পরপরই তরী আহসানের ঘরে এলো। তখন প্রায় সন্ধ্যা; আহসান তখনও কাজ সেড়ে বাড়ি ফেরেনি। এই ঘরটাকে কী প্রকৃতপক্ষে আহসানের ঘর বলা চলে? তরীর মা মনোয়ারা বলেছিল যে,❝বিয়ের পর নিজের একা বলতে আর কিছু থাকে না। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ই মিলেমিশে হয়ে যায় আমাদের।❞ তাহলে তো এখন এটা আর আহসানের ঘর না; এটা তাঁদের ঘর। আসলেই কী তরীর সবকিছুই এখন আর তাঁর একা-র নয়? এই যে অল্প কিছুতেই তরী দুঃখ পেয়ে কেঁদে ফেলে। আবার মাঝেমধ্যে খুব সূক্ষ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘন্টা খানেক হাসে এর ভাগও কী আহসানকে দিতে হবে? বিষয়টা যদিও একপাক্ষিক হবে না। তরীর সুখ দুঃখের ভাগ যদি আহসান নেয়। তবে, আহসানের সুখ দুঃখের ভাগ নিতেও তাঁর দুঃখ নেই। যদি নেবার হয় তাহলে সত্যিই নেবে। কিন্তু, আহসান যদি তরীর সুখ দুঃখের ভাগ নিতে অস্বীকার করে? তাহলে কী হবে? নাহ! আহসান লোকটা কেন তরীর সুখ দুঃখের ভাগ নেবে না? লোকটাকে তরীর স্বার্থপর কিংবা মন্দ বলে মনে হয় না।
আনমনে পায়চারি করতে করতে তরীর চোখ পরলো। আলনাতে রাখা আহসানের ধূসর রঙের একটা শার্টের দিকে। শার্টটার বুকের দিকের পকেটটায় কলমের কালি লেগে আছে। তরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে স্মৃতির পাতায় ডুব দিলো। হায়দার প্রায়ই বুক পকেটে কলম নিয়ে ঘুরতেন। কলমের কালি লিক হয়ে পুরো পকেটসহ শার্টে ছড়িয়ে যেতো। কী যে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হতো! মনোয়ারা বারবার এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও হায়দার ভুল করেই বসতেন। শেষে তরী আর মনোয়ারা দুজনে দীর্ঘ পরিশ্রম করে কলমের কালি তুলতেন। তরী আহসানের শার্টটা হাতে তুলে নিলো। বেসিনে গিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে কলমের কালি তুললো। বারান্দায় গিয়ে রশিতে শার্টটাকে মেলে দিলো। একটা সময় তরী নিজের বাবার শার্ট এভাবেই ধুয়ে দিতো। আজ সময়টা ভিন্ন; এবারের মানুষটা তরীর স্বামী। যাঁর সঙ্গে তরী নিজের সুখ দুঃখের বাটোয়ারা করেছে।
★
আহসান কাজ শেষে বাড়ি ফিরেই ঘরে গিয়ে তরীর আশায় বসে রইলো। সকালের পর তরীর সঙ্গে আর দেখা হয়নি। আগে তো কখনো এমন হয়নি। কখনো কাউকে দেখার জন্য এতটা তৃষ্ণা পায়নি। আজ কেন পাচ্ছে? এটা কী তাঁর দূর্বলতা? তরী মেয়েটা মাত্র কয়েকদিনে তাঁর মনে নিজের জন্য জায়গা করে নিলো? তরীকে দেখতে না পেলে আহসানের অসহ্য লাগে! সবকিছু থাকা সত্ত্বেও খালি খালি মনে হয়। কেমন যেন শুন্য শুন্য লাগে সবকিছু। এর কারণ কী? এটা কী কোনো অসুখ? তবে, এই রোগের পথ্য কী? তরী? হ্যাঁ, তরী-ই তো তাঁর এই রোগের কারণ। কই তরী যখন ছিল না; তখন তো আহসানের এমন লাগেনি। রোগের নাম যখন তরী। এই রোগের পথ্য ও হওয়া উচিত তরী। সবকিছুই তরী! সব!
আহসান বাড়ির বেশ পুরনো রকিং চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। তরী তখনই কোমরে কাপড় গুঁজে ঘরে এলো। এতক্ষন শোভার সঙ্গে ছিল সে। শোভা রাতের রান্না করছে। তরী পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। তরী অবশ্য হাত লাগাতে চেয়েছিল। শোভা-ই তরীকে কিছু করতে দেয়নি।
মনুষ্য জগতের কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আহসান চোখ খুললো। সামনে তাঁর তরী দাঁড়িয়ে। পাঁকা গিন্নীদের মতো কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে রেখেছে সে। আহসান তরীকে দেখেই উঠে সোজা হয়ে বসলো। বলিষ্ঠ কন্ঠে বললো,
” কাল থেকে বই খাতা নিয়ে সন্ধ্যার পর পড়তে বসবে। আমি বাড়ি এসে তোমাকে পড়া দেখিয়ে দেবো।”
তরী মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। প্রত্যুত্তরে বললো,
” আমি কিন্তু বিজনেস স্টাডির স্টুডেন্ট। আপনি আমাকে পড়াতে পারবেন?”
আহসান নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
” আমার ডিপার্টমেন্ট একাউন্টিং।”
তরী লজ্জায় আর কোনো প্রশ্ন করলো না। আলনার সামনে গিয়ে আহসানকে বললো,
” এখানে আপনার একটা ধূসর রঙের শার্ট ছিল। ওটার বুক পকেটে কলমের কালি লেপ্টে ছিল। জানেন, আপনার মতো আমার বাবাও বুকপকেটে কলম; রাখতে গিয়ে কালি লাগিয়ে ফেলতেন। আমি আর মা মিলে বাবার শার্ট ধুয়ে দিতাম। আপনার শার্টটা ধুয়ে বারান্দায় মেলে দিয়েছি। সকালের মধ্যে শুকিয়ে যাবে।”
আহসান তরীর কথা শুনে তৃপ্ত বোধ করলো। চোখেমুখে শান্তির ঝলক দেখা দিলো। মায়ের পর, রুমির পর তরী তাঁর খেয়াল রাখছে? ছোটখাটো ভুল ত্রুটিগুলোকে শুধরে দিচ্ছে? আহসান মুখ ফুঁটে খুব বেশি কিছু বলতে পারলো না। সে আজ যা অনুভব করছে তা কী সত্যি বলার মতো? শুধু ছোট্ট করে তরীকে বললো,
” ধন্যবাদ।”
তরী তাঁর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। আহসানের বুকের ব্যাথাটা আরো তীব্র হয়ে জেঁকে বসলো। তরী কোমল স্বরে বললো,
’ মা বলেছে বিয়ের পর স্বামীর কাজকে নিজের কাজ ভেবে করতে হয়। এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আজ বিকেলে মিতালী আন্টি এসেছিলেন। উনিও তো বললেন যে, আপনি যা চান তাই যেন দেই আপনাকে। আপনাকে না করতে নিষেধ করেছেন। ছেলে মানুষের খাউস নাকি একটু বেশিই থাকে।”
আহসান তরীর কথার মানে ধরতে পেরে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। তরীর সেদিকে মনোযোগ নেই। তরী নিজের মতো বিরবির করতে করতে বললো,
” আবার বললেন যে আপনি নাকি সারাদিন বাইরে থাকেন। তাড়াতাড়ি যেন বাচ্চা নিয়ে ফেলি….”
কথার ছলে আনমনে তরী আহসানের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। আহসান কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এবার কথার মানে ধরতে পেরে তরী লজ্জায় মিইয়ে গেল। মুখে আঁচল চেপে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কী লজ্জা! কী লজ্জা! কী দরকার ছিল লোকটার সামনে এসব বলার? নেহাতই সে বুঝতে পারেনি। নাহলে ভুলেও ওই লোকটার সামনে এসব লজ্জার কথা তুলতোই না! ভুল বুঝতে পেরে তরী নিজের মাথায় গাট্টা মারলো। লোকটা তাঁকে কী ভাবছে কে জানে? খারাপ ভাবছে কী? ভাবলে ভাবুক! তরী ওসব নিজে থেকে বলেনি। মিতালী আন্টি না বললে তরী বুঝি ওমন কথা মুখে তুলতো?অপরদিকে আহসান তরীর লজ্জামাখা মুখ দেখে মনে মনে বিরবির করে বললো,
” ধরলাম না ছুঁইলাম না। এখনই বাচ্চা? ”
কথাটা তরীর কান অবধি পৌঁছালো না হয়তো। কানে গেলে লজ্জায় সত্যি সত্যি সে ভিরমি খেতো!
চলবে…