নিকুঞ্জ কানন পর্ব-০৯

0
25

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[‎পর্ব ৯]

‎আগে কলেজে যেতে তরীর খারাপ লাগতো না। ক্লাসে গল্প করার জন্য হলেও যেতে মন চাইতো। কিন্তু, আজকাল কলেজে তাঁর মন-ই বসে না। মন ও মস্তিষ্কে উভয় পাশে আহসান নামক একটি ব্যাক্তি স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। তরী চাইলেও সেই সুদর্শন সুপুরুষ ব্যাক্তিত্বের মানুষটিকে উপেক্ষা করতে পারছে না। বাজে লোকটা মনের ভেতর এভাবে ঢুকে বসে আছে কেন? কী অধিকার তাঁর? অধিকারের বিষয়টিতেই তরী বারবার আঁটকে যায়। যদি, কথা ওঠে অধিকারের তবে আহসানের চেয়ে বেশি;আর কারো অধিকার খাটাবার সাধ্য নেই। তরীর ওপরে লিখিত এবং অদৃশ্য অলিখিতভাবে আহসানের দাবি আছে। লোকটা হুট করে এসে তরীর ক্ষুদ্র মনে এতটা জায়গা করে নিলো? কবে নিলো? তরী টের পেয়েছে কী? পায়নি তো; তাহলে কবে ঘটলো এই অঘটন? কে জানে!

‎তরীর কলেজ আজ নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি হলো। আজ শেষের ক্লাসটা অজ্ঞাত কারণে বাদ হয়ে গিয়েছে। তরী কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো আহসানের অপেক্ষায়। আহসান জানে না তরীর অগ্রীম ছুটির কথা।
‎তরীর পাশে ঝুমুর এসে দাঁড়ালো। প্রতিদিন টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়ে ক্লাসে আসে সে। ম্যামের কাছে বকাও খায়। তবুও কোনো লাভ হয়নি। উঁচু করে চুল বেঁধে; ঠোঁট লাল করে কলেজে আসাটা তাঁর স্বভাব। ঝুমুর তরীকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‎” ছুটি হয়ে গেছে বাড়ি যাবে না?”

‎তরী সরলতার সহিত উত্তর দিলো,

‎” উনি তো নিতে আসলেন না আজ এখনও।”

‎ঝুমুর কৌতুহলের ছলে প্রশ্ন করলো,

‎” উনি কে? তোমার উনি?”

‎তরী লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। ঝুমুর আঁড়চোখে তরীকে দেখলো। ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটা তরীর হাতে দিয়ে বললো,

‎” তোমার উনির নাম্বার মুখস্থ আছে? ফোনে ব্যালেন্স আছে; তাঁকে ফোন করে কলেজে আসতে বলো।”

‎তরী প্রথমে ইতস্তত বোধ করলো। পরমুহূর্তে ভাবলো, দুপুরে এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে; আহসানকে ফোন করাটাই ভালো।

‎প্রথম কলেই আহসান ফোন ধরলো। অপরিচিত নম্বর দেখে একটু সন্দেহ সৃষ্টি হলো মনে। তবুও ফোনটা ধরলো সে। তরীর গলার স্বর শুনে আশ্বস্ত হলো। মালের গুদাম থেকে বেরিয়ে দ্রুত বাইক স্টার্ট দিলো সে। মেয়েটা অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই। ঝুমুর আর দাঁড়ালো না। ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দিলো।

‎তরীর কলেজের গেটের সামনে আহসানের বাইক; এসে থামতেই তরী ছুটে গেল তাঁর দিকে। রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ঘামে ভিজে গেছে তাঁর শরীর। আহসান পকেট থেকে নিজের রুমালটা বের করে এগিয়ে দিলো তরীর দিকে। তরী হাত বাড়িয়ে রুমালটা নিলো। তবে, ঘাম মোছার মতো অহেতুক কাজে রুমালটা নষ্ট করলো না। এই রুমালের দাম তরীর কাছে অনেক বেশি। শক্ত করে হাতের মুঠোয় ধরে রাখলো সে রুমালটা। এটা সে কাউকে দেবে না!
‎★
‎বাড়ি ফিরেই খাবার খেয়ে তরী আহসানের ঘরে লম্বা এক ঘুম দিলো। দিনে আহসানের ঘরে থাকা নিয়ে মধুবিবির কোনো আপত্তি নেই। তবে, রাত হলেই তরীকে নিজের ঘরে না পেলে মধুবিবি বেজায় রাগ করেন। এই সুপ্ত ক্রোধের কারণ কী তা তরীর নিতান্তই অজানা। দুপুরের দিকে আহসান খাবার খেতে বাড়ি আসে। ফেরার পথেই তরীকে কলেজ থেকে নিয়ে আসে। খাওয়া শেষে পড়ার ঘরে কীসব বইপত্তর নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। তারপর আবার কাজে চলে যায়। মাঝেমাঝে সন্ধ্যায় ফেরে; কাজের চাপ বেশি থাকলে প্রায়ই আবার রাতেও ফেরে।

‎ক্লাসে বসে থেকে থেকে তরীর কোমরের দশা বেহাল! বিছানার ঠিক বামপাশে বালিশে মাথা রেখে উবু হয়ে শুয়ে আছে সে। আহসান সেই মুহূর্তেই কাজের ছলে ক্রস্ত পায়ে ঘরে এলো। তরীকে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বিচলিত হলো। তরী যে-ই পাশটায় শুয়েছে; ঠিক সেই বরাবর বিছানার নিচে টাকার বান্ডিল রেখেছিল সে। সেটা এখন নেওয়া দরকার। আজকে নতুন মাল ওঠানোর জন্য কর্মচারীকে টাকা দিতে হবে। তরীকে কী ঘুম থেকে উঠিয়ে তুলবে? আহসান গভীর মনোযোগের সঙ্গে তরীকে দেখলো। এই তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ক্লান্ত মেয়েটাকে জাগিয়ে তোলা কী ঠিক হবে? আহসান মিনিটখানেক ভাবলো। এরপর নিজে বিছানায় উঠে বসলো। তরীর মাথার পাশ থেকে তোশকের নিচ থেকে যত্ন সহকারে নিঃশব্দে টাকার বান্ডিলটা বের করলো। তরী এবার একটু নড়েচড়ে উঠলো। কাজশেষে বিছানা ছেড়ে নামার সময়ই তরী হঠাৎ তাঁর হাতে বাহু চেপে ধরলো। আহসান চমকে ফিরে তাকালো। কী হলো হঠাৎ মেয়েটার? একবার তরীর হাতের বাঁধন ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে হলো। পরোক্ষনেই কী ভেবে আহসান আর উঠলো না। নরমসূরে তরীকে বললো,

‎” ছাড়ো।”

‎তরী চোখ বুঁজে থাকা অবস্থায়ই বললো,

‎” উহুম।”

‎আহসান প্রতিত্তরে বললো,

‎” কেন?”

‎তরী নিদ-নিদ কন্ঠে বললো,

‎” ছেড়ে দিলে চলে যাবেন।”

‎আহসান নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

‎” তাহলে কী করবে?”

‎তরী নিদ্রারত অবস্থায়ই আহসানের হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

‎” রেখে দেবো।”

‎আহসান মোহনীয় সূরে বললো,

‎” কোথায় রাখবে?”

‎তরী ঘুমু ঘুমু গলায় বললো,

‎” আলমারি।”

‎আহসান মনে মনে বেজায় হাসলো! ঘুমের ঘোরে কথা বলার অভ্যাসটা তাঁর নিজেরও আছে। মধুবিবি তাঁকে কতবার যে ছোটবেলায় হুজুরের কাছে নিয়ে গেছে একারণে। তাঁর ভাষ্যমতে আহসানের সঙ্গে জ্বিন আছে। কী হাস্যকর ব্যাপার!
‎ অতঃপর ওই তরীর মতো তুলতুলে নরম বস্তাকে অবজ্ঞা করে আহসানের ফিরে যেতে হলো। আজ কাজ না থাকলে সত্যিই তরীর কথা ফেলতো না সে। ইশ! সবকিছু ফেলে চব্বিশ ঘণ্টা তরীর আশেপাশে ঘুরতে পারার সক্ষমতা যদি তাঁর থাকতো? আজকাল মাথায় কী হয়েছে কে জানে! তুলতুল নামক এক জৈনিক নারী আহসানের মাথায় পিলপিল করে ঘোরে। মাঝেমধ্যে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে সে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে। তবুও তুলতুল মাথা থেকে সরেই না! কী যে ভয়াবহ সেই রোগ। দিনরাত শুধু মাথার মধ্যে ভিরমি খায়। খুব শীঘ্রই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নাহলে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব! কিন্তু, এই রোগের চিকিৎসক কে? তুলতুল? কী অদ্ভুত বিষয়! যে-ই রোগের নাম তুলতুল। সেই রোগের পথ্যের নামও তুলতুল?নিশ্চয়ই এটি অতি চমকপ্রদ এবং বিরল রোগ। বানীতে কে? বানীতে তুলতুলের রোগী বর!

‎বিকেলে ফ্যাক্টরিতে নতুন মালের অর্ডার দিয়ে ফেরার পথে আহসান অতি নির্দয় ও করুন ঘটনার সাক্ষী হলো। ফ্যাক্টরিতে মালের অর্ডার দিয়ে ফেরার সময় নতুন একটা বিল্ডিং পড়ে। বিল্ডিংটা তখনও অসম্পূর্ণ; ওপরে কাজ চলছে তখনও। আহসান সামনে হাঁটছিল; মাজদাক ছিলেন পেছনে। সহসা কী হলো কে জানে? বড়সড় একখানা ইটের খন্ড বেখেয়ালে আহসানের কপাল ছুঁয়ে নিচে পড়লো। ঘটনা-টা এতই দ্রুত ঘটলো যে আহসান সরে যাবার মতো সময়ও পেল না। মাথায় একহাত রেখে রাস্তায়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। মাজদাক সম্পূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষ দর্শনকারী ছিলেন। রাস্তায়ই ছেলেকে ধরে তিনি বসে পরলেন। আহসানের তখন জ্ঞানহীন; মাথার বামপাশ চুয়ে চুয়ে পড়ছে তাঁর তরল লাল রঞ্জক পদার্থ।

‎পথচারী ও এলাকাবাসীদের সহায়তায় আহসানকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। মাজদাক তখন ভয়ে, আশংকায় বুকে পাথর চেপে বসে আছেন। বাড়িতে ফোন করে এই খবর দেবার মতো মানসিক অবস্থা তাঁর নেই। সুস্থ, সবল ছেলেটার একি দশা? শোভাকে কোন মুখে সে এইকথা জানাবে? ছেলেটাকে এই অবস্থায় দেখে তাঁর নিজেরও যে বুক কাঁপছে। মাজদাক নিজের মাথা চেপে ধরে কেঁদে ফেললেন। এই ছেলে তাঁর প্রাণ; ছেলের কিছু হলে তিনি বাঁচবেন না। সৃষ্টিকর্তা হয়তো সেদিন এক বাবার এরূপ করুন আর্তনাদকে হেলায় সরিয়ে দিতে পারলেন না। আনমনে করা সকল দোয়া কবুল করলেন। নার্স এসে জানালো আহসানের জ্ঞান ফিরেছে। তবে, মাথার বামপাশ ফেঁটে গেছে। তাতে পাঁচটা সেলাই পরেছে। মাজদাক দু’হাত তুলে শুকরিয়া আদায় করলেন। দ্রুত পা চালিয়ে ছেলেকে দেখতে গেলেন। আহসান তখন বেডে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। র’ক্ত ক্ষরন হওয়ায় শরীর দূর্বল; স্যালাইন চলছে।
‎★
‎শোভা রাতের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। মাজদাক বলেছিলেন ফিরতে দেরি হবে আজ। তাই বলে এত দেরি? রাত সাড়ে এগারোটা বাজতে চললো; এখনও কারো খোঁজ নেই। মধুবিবি কয়েকবার এসে ছেলে আর নাতীর খোঁজ করে গেছেন। তরী আর রুমি আহসানের অপেক্ষায় ছিল। অগত্যা শোভা তাঁদের ঠেলেঠুলে পড়তে বসিয়েছে।

‎শোভার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। স্বামী ও পুত্র দু’জনেই ঘরে ফিরলো। কিন্তু, এই ঘরে ফেরা সেই ঘরে ফেরা নয়। আহসান ফিরলো বাবার কাঁধে একহাত ভর করে। আহসানের মাথায় বড় মোটা ব্যান্ডেজের স্তর দেখে শোভা আঁতকে উঠলেন! ছেলের কী হাল? দুপুরেই তো ভালো মানুষ বাড়ি থেকে বের হলো। তবে এখন? শোভা দৌড়ে ছেলের কাছে ছুটে গেল। আহসানের পা তখনও চলছিল না। ড্রয়িং-রুমের সোফায় বসে পরলো সে। বে-প্যাঁচে পড়ে গিয়ে কবজিতে আঘাত লেগেছে। সেখানটায়ও ব্যান্ডেজ পড়েছে। স্বামীর মুখে সবটা শুনে শোভা কেঁদে ফেললো। সৃষ্টিকর্তা আজ বড় বাঁচা বাঁচিয়েছেন। মাথা একটা সংবেদনশীল অঙ্গ। সেরকম বড় কিছু হয়নি এটা তাঁর ভাগ্য। ভাত মেখে আহসানকে খাইয়ে দিলেন তিনি। আহসান খুব বেশি খেলো না। মাত্র কয়েক নলা খেয়েই মুখ ফিরিয়ে নিলো। শোভা আর জোর করলেন না। ছেলেকে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলেন। এমনিতেও আজ কম ধকল যায়নি ছেলেটার ওপরে।

‎ক্লান্ত, রূগ্ন দেহ নিয়েও আহসান আজ ঘুমোতে পারছে না। তরী একবারও এলো না তাঁর কাছে? কেন এলো না? কী এত কাজ তাঁর? হাতে কাজ থাকতেই পারে। তাই বলে এতটা নিমগ্নতা? একটাবার এলেও কী পারতো না সে? তরী-র নিকট এতটাই ফেলনা সে? তীব্র অভিমানে আহসান খেই হারিয়ে ফেললো। ব্যাথানাশক ঔষধের ঘোরে চোখজুড়ে ঘুমের রেশ নেমে এলো। বুকের ওপর ডান হাতটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো সে। শরীরে আনাচে-কানাচেতে ব্যাথার অন্ত নেই।

‎আহসানের ঘুমের স্থায়ীত্ব খুব বেশি সময় ছিল না। মিহি সূরে কান্নার শব্দ শুনে তাঁর ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ খুলেই তরীর মুখটা দেখতে পেল সে। এই দর্শন খুবই অদ্ভুত। তরীর কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে আহসানের মায়া উপচে পরলো তাঁর প্রতি। অভিমান যেন পা গুটিয়ে পালালো! তরীর পরিপাটি করে রাখা চুলগুলোর আজ আলুথালু অবস্থা। চোখ থেকে চিকন পানির ফোঁটা বেয়ে পড়ছে। থুঁতনির ডগা, নাকের ডগা কেমন লাল লাল! আহসান ভাঙ্গা গলায় বললো,

‎” কী হয়েছে তুলতুলি বেগম?”

‎নামের বিকৃতি শুনে তরীর রাগ হওয়ার বদলে আরো কান্না পেলো। কী অবস্থা হয়েছে লোকটার! এরকম হবে জানলে আজ বাইরেই যেতে দিতো না আহসানকে সে। তরী অভিযোগের সূরে বললো,

‎” আপনি ভীষণ বাজে এবং বেখেয়ালি একজন লোক। খুব খুব খুব বাজে আপনি। পথেঘাটে চলতে পারেন না। দেখেছেন আজ কী হলো? আপনি আসলেই বাজে লোক;পঁচা লোক!”

‎আহসান কন্ঠভর্তি গভীরতা নিয়ে বললো,

‎” তুমি তাহলে ভালো করে দাও। আমি অনেক বাজে! অনেক অনেক অনেক বাজে।”

‎তরী আহসানের হাতের ওপরে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো। আহসান লক্ষ্য করলো তাঁর হাত ভিজে যাচ্ছে। তরীর চোখের পানির গুনে হয়তো। তরী ক্রন্দনরত গলায় বললো,

‎” আপনার জন্য কত কেঁদেছি জানেন? আপনি সবসময় শুধু আমাকে কষ্ট দেন। আপনার মধ্যে কোনো মায়া-দয়া নেই।”

‎আহসান প্রশ্ন করলো,

‎” কেন কাঁদলে তবে?”

‎তরী চোখ মুছে বললো,

‎” আপনার কষ্ট হচ্ছে তাই কেঁদেছি। আপনার কষ্টের কথা ভাবলেই আমার কেমন যেন লাগে। কেমন কেমন যেন! অনেক কষ্ট হয়।”

‎আহসান ছোট্ট শ্বাস ফেলে;প্রশ্নের ছলে বললো,

‎” কষ্ট আমার; ব্যাথাও আমার। আর কাঁদছো কিনা তুমি?”

‎তরী পরমুহূর্তেই জবাব দিলো,

‎” কেন? যা আপনার তা কী আমার নয়?”

‎এই ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর আহসান দিতে পারলো না। উত্তরটা মুখ ফুটে বেরই হলো না! যুদ্ধের সৈনিকের দিকে ছোঁড়া তেজস্বী রাই’ফেলের গু’লির মতো; তরীর করা প্রশ্নটা তাঁর বুকে এসে বুকটাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিলো। কথাও কী মানুষের হৃদয়ে এতটা ঝড় তুলতে পারে? পারে তো; তরী আজ নিজগুনে তা প্রমান করে দিলো।
‎তরী আহসানের মাথার ক্ষতটা খুঁটে দেখতে দেখতে বলো,

‎” আপনার এমন দশা হবে জানলে আজ আপনাকে ঘর থেকে বের হতেই দিতাম না। বেঁধে হলেও রেখে দিতাম।”

‎আহসান মশকরার ছলে বললো,

‎” কী করে বাঁধবে? দঁড়ি দিয়ে নাকি আঁচল দিয়ে? ”

‎তরী জবাবে কিছু বললো না। নিজের শাড়ির আঁচলের অংশটা দিয়ে আহসানের; পরনে পাঞ্জাবির নিচের অংশটায় একটা গিট দিলো। তরীর কান্ড দেখে আহসান সত্যি সত্যিই হেসে ফেললো! সেই রাতে মধুবিবি আর বাগড়া দিতে এলেন না। তরী আহসানের ঘরেই ঘুমোলো। আহসানের ডান হাতে মাথা রেখে আহসানের বুকে মুখ গুঁজে।

চলবে…