নিকুঞ্জ কানন পর্ব-১৬+১৭

0
28

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ১৬]

” এই বউ তুমি আমার সঙ্গে দুপুরে একটু বাইরে যাবা। খাইয়া দাইয়া মাথায় ঘোমটা দিয়া আমার সঙ্গে যাইয়ো।”

তরী মধুবিবির কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বললো,

” কোথায় যাবো বুবু? উনি বকবেন না তো?”

মধুবিবি উত্তরে বললেন,

” আহসানের সাধ্য আছে আমার মুখের উপরে কিছু বলার? তোমারে নিয়া খাজা বাবার মাজারে যামু। মাজারে তোমার লাইগা মানত করসি। তোমার না পরশু থেইকা পরীক্ষা? ”

তরী বিষম খেয়ে বললো,

” মাজার?”

মধুবিবি প্রত্যুত্তরে বললেন,

” তো কী? কয়দিন আগে রুমির পরীক্ষা গেল না? রুমিরেও নিয়া মাজারে গেসিলাম। এই খাজা বাবার মাজার আমাদের অত্র এলাকায় বিখ্যাত। দূর-দূরান্ত থেইকা লোক আইসা মানত করে। মানতে যা চাইবা তাই পাইবা। আমি মানত করসি তুমি ভালো কইরা পাশ দিলে মোমবাতি দিমু। খায়া লইয়া তাড়াতাড়ি লও। দুপুর থাকতে থাকতেই আইসা পরতে হইবো। তোমার শশুর আবার এইসব পছন্দ করে না। তাঁর কাছে কিন্তু বলবা না। শুনলে পরে আমার লগে চিল্লাইবো।”

তরী মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। উপরে উপরে হ্যাঁ বললেও তরীর মনে খুব ভয়। মনোয়ারা মাজারে একদমই বিশ্বাস করতেন না। সবসময় বলতেন তরীকে, ” যা চাই তা সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হবে। মৃত মানুষের কোনো শক্তি থাকে না। এসবে বিশ্বাস করাও কুসংস্কারের অংশ।” কিন্তু, এসব এখন বুবুকে বলতে গেলে বিশাল কেলেংকারী কান্ড হবে। এমনিতেও মধু বিবির যা রাগ! এসব শুনলে তরীকে আর আস্ত রাখবেন বলে মনে হয় না।

আহসানের ফোনের সিমটা টেলিটকের। দুইমাস আগে একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল সে। প্রাইমারি লেভেলের চাকরি। আজ সেটার রেজাল্ট পাবলিশ হবার কথা। আহসান শান্ত হয়ে রেজাল্ট চেক করতে বসলো। অনেকবার সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছে সে। পরীক্ষায় টিকলেও ঘুষ নামক বস্তুটির কাছে শতবার হেরে গেছে। পরীক্ষা তো ভালোই দিয়েছিল সে। কিন্তু, এবারও হয়তো হবে না। ওই এক জায়গাতেই তাঁর পথচলা থেমে যায়।পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষ্ময়কর ব্যাপারখানা এবার ঘটেই গেল আহসানের সঙ্গে! রিটেন এক্সামে সে টিকে গেছে। কী ভয়ংকর ব্যাপার! আহসান খানিকটা সময় কেমন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। কী হলো এটা? মাজদাক সারোয়ার আহসানকে মাল বুঝিয়ে দিতে এলেন। কয়েকবার নাম নেওয়ার পরেও যখন আহসান সাড়া দিলো না। ব্যাপারটা তাঁর কাছে ঠিক সুবিধের লাগলো না। দ্রুত আহসানের পাশে এসে দাঁড়ালেন তিনি। আহসান পিছু ফিরে বাবাকে দেখে বললো,

” আমার রিটেন এক্সামের রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে বাবা। আমি বোধহয় টিকে গিয়েছি। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!”

মাজদাক সারোয়ার চমকে উঠে বললেন,

” কী? আসলেই?”

আহসান ফোনটা বাবার নিকট তুলে ধরতেই তিনিও স্তব্ধ হয়ে গেলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,

” শহরে চলে যাবি বাবা?”

আহসান ফোনটা টেবিলে রেখে বললো,

” না। ঢাকায় গিয়ে যে-ই পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম সেটাতে টিকেছিলাম। পরে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম চাকরিতে টিকলেও সেখানে জয়েন করতে ঘুষ লাগবে। আনুমানিক আট লাখের মতো। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরে মনে হলো ঢাকায় আর চেষ্টা করবো না। এখানে একটা পরীক্ষা দিয়ে দেখি। দিলাম প্রাইমারীতে এক্সাম! পরীক্ষা দিয়েই মনে হয়েছিল টিকে যাবো। কিন্তু, কাউকে বলিনি সেভাবে। ভেবেছিলাম রেজাল্টটা পাবলিশ হোক। তারপর যা হবার হবে! আমার খোদার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।”

মাজদাক সারোয়ার আহসানের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন। কেমন শুষ্ক কণ্ঠে বললেন,

” আহসান, তুমি আমার ছেলে। সেটাই তোমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। তুমি জীবনে অনেক বড় মানুষ হও। আমি সবসময় সেই দোয়া করি। আজ শুধু এটুকুই বলবো, জীবনে ভালো মানুষ হও বাবা। টাকার কাছে নিজের মনুষ্যত্ব, মানবতাকে কখনোই বিক্রি করে দিও না৷ মানুষ তখনই সবচেয়ে হিংস্র হয়ে ওঠে; যখন সে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।”

মাজদাক সারোয়ার কয়েক মুহূর্ত থেমে ফের বললেন,

” আমি সবসময় চেয়েছিলাম আমার আহসান আমার কাছে থাকুক। বড় বড় শহরের মানুষদের মধ্যখানে সব থাকলেও তাঁদের হৃদয়ে ইট-পাথরের স্তর পড়ে গেছে। সত্তা বিক্রি হয়ে গিয়েছে টাকা, নাম-ধামের কাছে। আমি তো সেই আহসানকে কখনো চাইনি। আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে খুব সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠুক। খুব সাধারণ! গ্রামের সহজ-সরল একটা মানুষ হিসেবেই বেঁচে থাকুক। তুমি যদি পড়াশোনা না করে গ্রামের কৃষকও হতে;তবুও আমার কোনো আপত্তি ছিল না।”

আহসান মুখে কিছু বললো না। হুট করে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। এই পড়ন্ত বিকেলটুকু বাবা ছেলের মধ্যেই তোলা থাকুক। আজ অবধি কম ঝড়-ঝঞ্ঝা তো যায়নি।

আহসান ফোন করে রঙ্গন, অর্ক সবাইকেই ব্যাপারটা জানালো। সৌম্য অফিসে ছিল বিধায় তাঁকে জানাতে বেশ দেরি হলো। সৌম্য বিষয়টা জানতেই আহসানকে বললো,

” অভিনন্দন বন্ধু। তবে, আমারও তোকে কিছু বলার আছে। আমি খুব এক্সাইটেড আবার খুব নার্ভাস। আমি জানি না কীভাবে কী করবো। মাথা পুরো খালি খালি রাখছে!”

আহসান বেশ নড়েচড়ে উঠলো। বিগত দুই মাসে সৌম্য যতটা মিইয়ে গিয়েছিল। আজ তাঁর গলাটা ঠিক ততটাই তরতাজা। কী হলো আজ? সৌম্য নিজেই আবার বলতে শুরু বললো,

” আমার আজকে পুষ্পিতার সঙ্গে কথা হয়েছে। একটা খুব আন-এক্সপেক্টটেড ব্যাপারে কথা হয়েছে। কথার টপিক কে জানিস? দিলশান! আমার দিলশান হায়াত!”

আহসান চমকে উঠে বললো,

” মানে? এতবছর পর দিলশান কোথা থেকে এলো?”

সৌম্য জবাবে বললো,

” সেটাই তো। আমিও তো কখনো ভাবিনি। আজ এতবছর পর দিলশানের কথা তুলতে হবে। আজ কাজের সূত্রে এতবছর পর আমাদের ব্যাচমেট পুষ্পিতার সঙ্গে কথা হলো। পুষ্পিতা আর দিলশান কতটা কাছের বন্ধু সেটা তো আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ইউ নো ওয়াট, দিলশান এখন সিঙ্গেল।”

আহসান ত্বরিত বললো,

” মানে! ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।”

সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” দিলশানের হাসবেন্ড দিলশানকে চিট করেছিল। অন্য নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। মানসিকভাবে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছিল দিলশানকে। এরপরও সবকিছু শেষে দিলশান নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জা’নোয়ারটার কাছে। নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিল সন্তানকে নিয়ে। কিন্তু হয়নি সেটা! অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে দিলশানের একটা মিসক্যারেজ হয়। বিষয়টা দিলশানের ফ্যামিলির কানে যাওয়ার পর তাঁরাই আসলে দিলশানকে ওই সম্পর্কটা থেকে সরিয়ে আনে। আহসান, জীবন আমাকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছে। আমি চাই দিলশান আমার জীবনে আসুক। ওর অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি ওর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হতে চাই।আমি এখনও চাই দিলশান আমার হোক।ওর সঙ্গে আমার ছোট্ট একটা সংসার হোক।”

আহসান মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে বললো,

” ভালো সিদ্ধান্ত। তোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাই বন্ধু। যদি দিলশান রাজি থাকে। তবে, ওর সঙ্গে একটা সুন্দর জীবন শুরু কর। বিষয়টা খুবই সিরিয়াস! তুই দিলশানের পরিবারের সঙ্গে কথা বল। দিলশানকে আগে রাজি কর। কোথাও গিয়ে যদি আমায় প্রয়োজন পড়ে। তবে, সেটা নিয়ে ভাবিস না। আমি আহসান সবসময় তোর পাশে আছি।”

সৌম্য ফোনটা রেখে চুপচাপ বসে রইলো। তাঁর সামনে ভীষণ কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। পছন্দের মানুষকে নিজের করে পাওয়ার পথ।

আহসান বাড়ি ফিরতেই তরী তাঁকে একগুচ্ছ প্রশ্নের বান ছুঁড়ে দিলো। টেবিলে বইখাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে আহসানের কাছে দৌড়ে এসে বললো,

“আপনি নাকি চাকরি পেয়েছেন? মা বলছিল রুমিকে আর বুবুকে। আচ্ছা, আপনি কী এখন চলে যাবেন? বড় বড় শহরের মানুষদের মতো স্যুট-বুট পড়বেন?জানেন আপনাকে স্যুট পড়লে সাহেবদের মতো লাগবে। কিন্তু, আপনি কী সত্যি চলে যাবেন? কোথায় যাবেন?”

আহসান খামখেয়ালী হয়ে উত্তর দিলো,

” হুম যাবো তো। শহরে চলে যাবো। তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো না। সারাদিন পড়ার জন্য কেমন বকাঝকা করি। ধরে বেঁধে শুধু তোমায় পড়তে বসাই।টিভি দেখতে দেই না। খেয়াল খুশি মতো চলতে দেই না। আমি চলে গেলেই তো ভালো। তুমি সারাদিন টিভি দেখতে পারবে। কেউ আর পড়ার জন্য চাপ দেবে না।”

তরী নিমিষেই মুখটা ভার করে ফেললো। ছটফট করতে করতে আহসানের কাছে ছুটে গিয়ে বললো,

” আমি আপনার সব কথা শুনবো। আপনি যা বলবেন তাই করবো। যেভাবে বলবেন সেভাবেই চলবো। কিন্তু তাও আপনি যাবেন না। আমি সারাদিন পড়বো। একটুও টিভি দেখবো না। আপনি চলে যাবেন না!”

আহসান ভাবুকতার সহিত উত্তর দিলো,

” আচ্ছা, মাথায় রইলো বিষয়টা। পরে ভেবে দেখবো যাবো কী যাবো না। তুমি বললে থেকে যেতে পারি। তুমি না চাইলে কী আর করার! তুমি তো আমাকে পছন্দই করো না। থাক চলে যাবো আমি। কী আর হবে এখানে থেকে? তুমি তো চাও-ই না।”

তরী প্রতিবাদ করে বললো,

” আমি চাই।”

আহসান তরীর সঙ্গে আরো কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে বললো,

” কী চাও?”

তরী অস্ফুটস্বরে বললো,

” আপনাকে চাই। আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। আমার ভালো লাগে আপনাকে।”

আহসান না চাইতেও মুখ লুকিয়ে হেসে ফেললো। কী সরল সোজা স্বীকারোক্তি! বলে দেবে কী সত্যিটা? না থাক! সেটা বরং তোলা থাকুক। তরীর নিকট থেকে সরে আসার সময়; তরীর গলায় কী যেন চকচকে বস্তু দেখতে পেল আহসান। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

” তোমার গলায় ওটা কী তুলতুল?”

তরী গলায় হাত রেখে বললো,

” তাবিজ।”

আহসান ভ্রু কুঁচকে বললো,

” কে দিয়েছে তোমায় এসব? কেন পড়েছো?”

তরী আঁচল ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,

” আজ দুপুরে বুবুর সঙ্গে মাজারে গিয়েছিলাম। আমার পরীক্ষা তাই বুবু মানত করেছে। এই তাবিজ খাজা বাবার তাবিজ। এটা পরীক্ষার দিনগুলোতে পড়ে থাকলে পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার তাবিজ এটা।”

আহসান বিরক্ত নিয়ে তাবিজটার দিকে তাকিয়ে রইলো। কীসব পুরনো দিনের মনোভাব! হয় নাকি কখনো এসব? আহসান তরীকে বললো,

” খোলো ওটা। এসব বিচ্ছিরি জিনিস পড়ে কাজ নেই।কী সব পুরনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথাবার্তা। ওসব তাবিজ-কবচের কোনো শক্তি নেই। খুলে ফেলে দাও ওটা।”

তরী মিনমিন করে বললো,

” বুবু যদি বকে? বুবু বলেছে এর ভেতরে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার দোয়া লেখা আছে। এটা যেন গলায় পরীক্ষার সময় পড়ে থাকি।”

আহসান কৌতুহলী হয়ে জবাব দিলো,

” আসলেই? তাহলে এখনই তাবিজটা খুলে দাও তো। দেখি কী এমন দোয়া লিখা আছে। যে দোয়া পড়লে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আপনা-আপনি চলে আসবে।”

তরী সঙ্গে সঙ্গে তাবিজটা খুলে আহসানের হাতে দিলো। আহসান তাবিজটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ভেতরের ছোট্ট কাগজটা বের করলো। তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

‎❝পড়িলেই পাশ করিবে।❞

চলবে….

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ১৭]

” হ্যালো কে বলছেন?”

দীর্ঘজীবন পরে পরিচিত এবং আকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে সৌম্যর বুকের ভেতর এক অদ্ভুত বিক্ষিপ্ত অনুভূতির সৃষ্টি হলো। এই নাম্বার জোগাড় করতে গিয়ে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে শুধু সৌম্যই তা উপলব্ধি করতে পারে।কিন্তু, এত বছর ধরে ভেবে গুছিয়ে রাখা কথাগুলোও কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। বুকে যেন কেউ ড্রাম পেটাচ্ছে! কী নামে ভূষিত করা যায় ঠিক এই অনুভূতিকে? সৌম্যর ভাবনার মাঝেই ফোনের ওপাশ থেকে নারী কণ্ঠটি ফের বলে উঠলো,

” হ্যালো? কে বলছেন?”

সৌম্য ঠোঁট দিয়ে জিহ্বা ভিজিয়ে বললো,

” সত্যিই চিনতে পারছো না?”

দিলশান কেমন যেন মিইয়ে গেল। যাকে সে ভাবছে সে নয়তো? কিন্তু, এতবছর পর সে দিলশানকে কেন কল দেবে? এখন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে মনোরম সংসারে ব্যস্ত থাকার কথা। দিলশানকে নিয়ে পড়ে থাকার সময় কই তাঁর? মিনিটখানেক এসব ভেবে দিলশান বললো,

” না। আপনি কে? ঠিক করে বলুন তো।”

সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“সত্যিই চিনতে পারছো না নাকি আমার কণ্ঠস্বর বক্ষঃস্থল অবধি পৌঁছাতেই পারছে না?”

কথাটা বলতে গিয়েই সৌম্য কেমন একটা নস্টালজিক অনুভব করলো। রাতে হুটহাট প্রায়ই সে দিলশানকে কল করতো। লুকিয়ে চুরিয়ে সৌম্যর সঙ্গে কথা বলার জন্য দিলশানের সেকি প্রচেষ্টা! সৌম্যর অতীতের স্মৃতিচারন বেশিক্ষন স্থানী হলো না। এরমাঝেই দিলশান বলে উঠলো,

” দয়া করে হেয়ালি করবেন না। ঠিক করে বলুন আপনি কে?”

সৌম্যের বুক চিঁড়ে আর্তনাদ করে বললো,

” দিলশান। আমার দিলশান!”

দিলশান বুক খামচে ধরে বসে পরলো! কেমন একটা অস্থিরতা তোলপাড় বয়ে গেল অন্তরীক্ষে। দিলশান আর কোনো কথা বলতেই পারলো না। গলাটা কেমন যেন ভিজে গেল। দু-চোখ দিয়ে ভেসে চললো অকূল বারিধারা। কাঁপা কাঁপা হাতেও কলটা কাটলো না। এই কণ্ঠস্বর শোনার জন্য একজীবন মুখিয়ে ছিল সে। আজ কী করে তা হেলায় ফেলে দেবে সে? সৌম্যই কথার সূর ধরে রাখতে বললো,

” কেমন আছো দিলশান হায়াত?”

দিলশান ঠোঁট কামড়ে ভেজা গলা যতটুকু সম্ভব আড়াল করে বললো,

” ভালো আছি। খুব সুখেও আছি। তোমার সংসার জীবন কেমন চলছে সৌম্য? আজ এতবছর পর তোমার কল আসবে কখনো ভাবিনি। আনএক্সপেক্টটেড ব্যাপার আরকি! তোমার ওয়াইফ কেমন আছে সৌম্য? ভাবীকে নিয়ে ঘুরে যাও একদিন?”

সৌম্য ছলছল চোখে বললো,

” আমি ভালো নেই দিলশান! যদি তোমার মতো স্বার্থপর হতে পারতাম। তাহলে হয়তো খুব সুখে থাকতাম। একটা সংসার থাকতো; স্ত্রী, সন্তান থাকতো! আফসোস! এই স্বার্থপর হতে না পারাটাই আমার জীবনের চরম ব্যর্থতা!”

দিলশান অনুভব করলো তাঁর বুকে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কালবৈশাখী ঝড়ের চেয়েও ভয়াবহ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দিলশানই বললো,

” এখনও বিয়ে করোনি সৌম্য? জীবনে সবকিছুরই নির্দিষ্ট একটা সময় থাকে। এখনও সময় আছে তুমি নিজেকে গুছিয়ে নাও। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সংসারে ভালোই আছি। তুমি কেন এখনও অতীতে পরে আছো বলো তো? নিজেকে নিয়ে একটু ভালো?”

সৌম্য চোখ বুঁজে সটানভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। কী গুছিয়ে মিথ্যেটাই না বলে দিলো দিলশান! ছলনাময়ী! সৌম্য প্রশ্নের বান ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

” তোমার গলাটা ভেজা লাগছে কেন দিলশান হায়াত? তুমি কী কাঁদছো?”

দিলশান দ্রুত চোখ মুছে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

” কোথায় ভেজা? কাল রাতে তোমার দুলাভাইয়ের অনুরোধে একটু আইসক্রিম খেয়েছিলাম। আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে তা তো জানোই। তাই গলাটা একটু বসে গেছে আরকি। ঠিক হয়ে যাবে রাতে ঘুমোলেই।”

সৌম্য অশ্রুভেজা চেখে কৃত্রিম হেসে বললো,

” আর কত মিথ্যে বলবে দিলশান হায়াত? বুক কাঁপছে না তোমার? ”

দিলশান কোনো জবাব দিতেই পারলো না। সৌম্যর তবে সবটা জানে? জানতেই পারে সত্য কখনো লুকায়িত থাকে না। তবে, কেন কল দিয়েছে সৌম্য? সান্ত্বনার নামে পরিহাস করার জন্য?

তরী আতংকিত হয়ে পুকুর পাড়ে বসে আছে। আজান পড়েছে একটু আগেই। পুকুরটা আহসানদেরই তবে এই পুকুরে কেউ গোসল করে না। মাজদাক আসলে মেয়েমানুষের পুকুরে গোসল করাটা ঠিক পছন্দ করেন না। পুকুরে মাজদাক আর আহসান শখের বশে পোনা মাছ ছেড়েছিলেন। মাছগুলো বেশ নাকি বড় হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই পিতা-পুত্র পুকুরে জাল ফেলবেন। তরীর মনটা একটুও ভালো নেই। কাল পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। কী যে হয় কে জানে! যদি আহসানের মনের মতোন রেজাল্ট না হয়? ভয়ে তরীর ম’রো ম’রো দশা প্রায়। তরীকে পুকুর পাড়ে বসে থাকতে দেখে তাঁর পিছুপিছু রুমি এলো। রুমির পরনে লাল কামিজ। আহসান তরী আর রুমিকে একই রকম সেলোয়ার-কামিজ কিনে দিয়েছে। তরীরটা নীল আর রুমিরটা লাল। তরী শাড়ি পড়ে বিধায় তাঁর কামিজের সেটটা এখনও তোলা আছে। রুমির অবশ্য নতুন জামা ফেলে রাখবার মতো এত ধৈর্য নেই। মনে বেজায় আনন্দ নিয়ে সে নতুন জামাখানা পড়ে নিয়েছে। রুমির এখন একেবারেই চিন্তা-চেতনা নেই। তরীর পরীক্ষার মাঝেই রুমির রেজাল্ট আউট হয়েছে। ফোর পয়েন্ট পেয়ে পাশ করে গেছে সে। শোভা অবশ্য রুমির রেজাল্ট নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। রুমিকে বেশ বকুনিও দিয়েছিলেন। যদিও মা-মেয়ের মন কষাকষির স্থায়িত্ব ছিল খুবই কম। মাজদাক সারোয়ার রুমির পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন,

” সবার মেধা-মস্তিস্ক এক রকম হয় না। সবার সঙ্গে মেয়েকে তুলনা দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করো না। সবাই একই বৈশিষ্ট্যের হলে তো পৃথিবীতে শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার-রাই বেঁচে থাকতো। ওকে ওর মতো ছেড়ে দাও। ওর যতটুকু যোগ্যতা ততটুকুই অর্জন করতে দাও। খামোখা মেয়ের ওপরে বোঝা চাপিয়ে দিও না।”

কেউই পরে রুমিকে আর কিছু বলতে পারেনি। রুমির খুশি আর দেখে কে? পড়া নেই শোনা নেই। সারাদিন শুধু টিভি আর পাশের বাড়ির উর্মির সঙ্গে গল্প। কী স্বপ্নের মতো জীবন! ননদ-ভাবীর গল্পের মাঝেই বাইকের আওয়াজে উভয়ই ফিরে তাকালো। আহসান এইসময়ে কখনোই বাড়ি ফেরে না। তবে কে? তরী আর রুমিকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেকে নামলো রঙ্গন। রুমি তরীর দিকে তাকিয়ে রঙ্গনকে ইঙ্গিত করে ভেংচি কেটে বললো,

” এসেছে স্বয়ং খান্নাস জ্বীন! ‎❝ফাজিল চন্দ্র দেবদাস❞ এই ভর দুপুরে আমাদের বাড়িতে কী করছে ভাবী?”

তরী জবাবে বললো,

” আহসান যাবার সময় মায়ের হাতে একটা বই দিয়ে গেছেন। বলেছেন রঙ্গন ভাই আসলে তাঁকে দিতে। বইটাই নিতে এসেছেন বোধহয়।”

তরী রুমিকে পুকুর পাড়ে ফেলে উঠে; যেতে চাইলে রুমি তরীর হাত ধরে বললো,

” যেও না ভাবী। ফাজিল চন্দ্র দেবদাসটা যাক। তারপর যাবো! এর চেহারা দেখতেও ভালো লাগে না আমার। হিটলার!”

রঙ্গন দরজায় নক করতেই শোভা বেরিয়ে এলেন। রঙ্গন শোভাকে সালাম দিয়ে বললো,

” কেমন আছেন খালাম্মা? আহসান আপনার কাছে কোনো বই দিয়ে গেছে? সকালেই আসার কথা ছিল। আম্মার শরীরটা ভালো না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেল। পরে আহসান ফোন করে বললো আপনার কাছে বইটা রেখে গেছে।”

শোভা সালামের জবাব নিয়ে বললো,

” আমি ভালো আছি বাবা। আহসান অনেকক্ষন বসে ছিল তোমার জন্য। পরে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই চলে গেল। তুমি এই রোদের মধ্যে এসেছো। বসো একটু!”

রঙ্গন ভেতরে গিয়ে বসলো। যেদিন থেকে নাহার বেগম বলেছেন রঙ্গন সরকারি চাকরি পেলেই রুমিকে বউ করে ঘরে তুলবেন। সেদিন থেকেই রঙ্গনের পড়াশোনার তোরজোর শুরু! সারাদিন পড়ার টেবিল ছেড়ে ওঠেই না সে। নাহার বেগম অবশ্য ছেলের উন্নতি দেখে বেজায় খুশি। ভার্সিটি জীবনের পরে ছেলের পড়াশোনা চাঙ্গে উঠেছিল। এখন আবার সব ঠিকঠাক হয়েছে ভেবে তিনি খুশি। শোভা রান্নাঘর থেকে এসে বললেন,

” আজকে গরুর মাংস রান্না করেছি ঝাল করে। মনে আছে আগে আহসানের সঙ্গে খেলার ফাঁকে তোমাকে আর আহসানকে কত খাইয়ে দিতাম? কত তাড়াতাড়ি চোখের পলকে বড় হয়ে গেলে তোমরা। তুমি বসো আমি খাবার বেড়ে আনছি। না খেয়ে যাবে না আজ।”

রঙ্গন প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও পরে সায় জানালো। খাওয়ার লোভে সে প্রকৃতপক্ষে বসেনি। সে বসেছে রুমিকে একটু দেখার লোভে। রুমি এতদিন স্কুলে যেতো বিধায় রুমিকে রোজ দেখাটা খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না। জ্বালাটা হয়েছে এখন! পরীক্ষার পর থেকে রুমির স্কুলে যাওয়া বন্ধ। রঙ্গনের ও আয়েশ করে রুমিকে দুদণ্ড দেখার সময় হয় না। রুমি যখন ক্লাস শেষে স্কুল থেকে বের হতো। রঙ্গন এই সেই বাহানায় চুপিচুপি লুকিয়ে থাকতো। রুমি অবশ্য তাঁকে কখনও লক্ষ্য করেনি। দেখতে পেলে অবশ্য বিপদ ছিল। রুমির যা মেজাজ! শোভা ট্রে-তে করে খাবার নিয়ে এসে রঙ্গনের সামনে রাখলেন। রঙ্গন খাবার হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। বাড়ি থেকে আসার সময় নাহার বেগম ঠেসেঠুসে ভাত খাইয়ে পাঠিয়েছেন। রুমির জন্যই খেতে বসা! রুমি কোথায়? রঙ্গন খাবার মুখে পুরে বললো,

” খালাম্মা আহসানের কাছে শুনেছিলাম রুমি এবার পরীক্ষা দিয়েছে। রেজাল্ট আউট হয়নি এখনও?”

শোভা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

” হ্যাঁ। ফোর পয়েন্ট পেয়েছে রুমি। আর বলো না! মেয়েটার পড়াশোনার দিকে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কতবার কত টিচার রাখলাম বাড়িতে। কীসের কী? ফাঁকিবাজ মেয়ে টিচারকে গুনেও দেখে না। আহসানের বকুনিতে, জোরাজুরিতেই যা একটু পড়তো। পড়ার টেবিলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগই ছিল না। আহসান ঠেলেঠুলে কোনো রকমে এইবার সামলে নিয়েছে। আমি যে ওকে নিয়ে কী করি!”

রঙ্গন বিরবির করে বললো,

” সেটাই তো! এত পড়ে কী হবে? বিয়ে দিয়ে দিন আমার সঙ্গে। আমার বউ আমি ঠিক বুঝে নেবো।”

শোভা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললেন,

” কিছু বললে বাবা?”

রঙ্গন কৃত্রিম হেসে বললো,

” বললাম যে খাবারটা খুবই মজা হয়েছে খালাম্মা। একেবারে ছোটবেলার মতো!”

শোভা হেসে রঙ্গনের প্লেটে আরো খাবার তুলে দিলেন। অতঃপর বললেন,

” দোয়া করো তোমার বোনটার জন্য। আল্লাহ যেন ওকে একটু সুবুদ্ধি দেন।”

রঙ্গন মুখে হাসি রাখলেও মনে মনে শোভাকে ভেংচি কেটে বললো,

“বোন না ছাঁই! ওটা আমার বউ হয়। বউ! রুমি বউ!”

বহুকষ্টে খাবার শেষ করে;শোভাকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগেই পুকুর পাড়ে চোখ পরলো। ওটা রুমি না? লাল জামা পড়ে দুই বিনুনি বেঁধে বসে আছে যে? রঙ্গন বাইক রেখে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে তরীকে সালাম দিয়ে বললো,

” কেমন আছেন ভাবী?”

রুমির দিকে তাকিয়েও বললো,

” কেমন আছো রুমি?” খালাম্মার কাছে শুনলাম পাশ করেছো। মিষ্টি কোথায়?”

তরী কিছু বলার আগেই রুমি বললো,

” কষ্ট করে পড়লাম আমি। পরীক্ষা দিলাম আমি! পাশও করলাম আমি। সেখানে আপনি মিষ্টি খেতে চাচ্ছেন কেন?”

তরী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললো,

” আমি ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”

রঙ্গন হেসে জানালো সেও ভালো আছে। তরীর সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে কৌশল করে আঁড়চোখে বারবার রুমিকে দেখলো।৷ মেয়েটা কেন যে তাঁকে দেখলেই মুখটা ভোঁতা করে রাখে! একটু ঠোঁট এলিয়ে মিষ্টি হাসলেও তো পারে। বড় হওয়ার পর রুমি কখনোই তাঁর সঙ্গে হেসে কথা বলেনি। পাঁজি মেয়ে রুমি!

কাজের চাপে আহসান আজ দুপুরে বাড়িতে ফেরেনি। মাজদাক সারোয়ার এসেছিলেন। যাওয়ার সময় আহসানের জন্য টিফিনবাক্সে খাবার নিয়ে গেছেন। সবকিছু শেষ করে ফিরতে ফিরতে আটটা বাজলো। ঘরে ঢুকতেই দেখলো তরী এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কাল সারারাত রেজাল্টের টেনশনে মেয়েটা ছটফট করেছে। ঘুম হয়নি ঠিকমতো। আহসান বিছানায় উঠে তরীকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডোবালো। তরী আহসানের অস্তিত্ব টের পেয়ে নিদ নিদ গলায় বললো,

” আপনি আজ দুপুরে এলেন না কেন?”

আহসান তরীর কপালের সঙ্গে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

” কেন? তুমি মিস করেছিলে আমায়?”

তরী সপাটে কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললো,

” উহুম! একটুও না! আপনি একটা পঁচা বাজে লোক। আপনাকে একটুও মিস করিনি।”

আহসান আর কিছু বললো না। তরীর গালটা আঁজলায় পুরে গভীর চুমু খেলো।তরীও কী কম যায় নাকি? লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আহসানের গালে, ঘাড়ে আর নাকে টুপ করে সেও চুমু খেলো। আহসান তরীর পিঠে নাক ঘষতে ঘষতে বললো,

” আমার তুলতুল!”

তরী পাশ ফিরে আহসানের বুকে মাথা রেখে বললো,

” আজকে আমার মনটা একটুও ভালো নেই। কাল সকালে রেজাল্ট দেবে জানেন?”

আহসান তরীর থুতনিতে চুমু খেয়ে বললো,

” দিক! তাতে কী?”

তরী ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বললো,

” বোর্ডে যদি ভুল খাতা দেখে? যদি রেজাল্ট ভালো না হয়? যদি ফেল আসে?”

আহসান মজার ছলে বললো,

” আসুক।ফেল আসলে একটা সুন্দর রিক্সাওয়ালা ধরে তোমায় বিয়ে দিয়ে দেবো!”

তরী হতাশ দৃষ্টিতে আহসানের পানে চাইলো। এই সিরিয়াস মুহূর্তেও লোকটা তাঁকে নিয়ে এভাবে মজা করছে? বাজে লোক!

রাতে ভয়ে তরী ঠিকঠাক ঘুমোতেই পারলো না। সকাল এগারোটায় যখন রেজাল্ট পাবলিশ হলো; আহসান ফোন হাতে নতমুখে তরীর কাছে গিয়ে বললো,

” এত খারাপ রেজাল্ট কী করে করলে তরী? তোমাকে কী আমি কিছুই পড়াইনি?”

তরী ভয়ে কেঁদে ফেললো। কান্নাভেজা চোখে বললো,

” কত পেয়েছি আমি? অনেক বেশিই খারাপ হয়েছে? ”

আহসান মুখ উঁচু করে ফোনটা তরীর দিকে তাক করে বললো,

” হ্যাঁ অনেক খারাপ! এ প্লাস!”

তরী বড়বড় চোখে আহসানের দিকে তাকালো। আহসান দু’পাটি দাঁত বের ফোন হাতে কোমরে হাত চেপে হেসেই যাচ্ছে। তরী কিছু বলতে পারলো না। অকস্মাৎ তরী ঢলে পরলো নিচে! আহসান দ্রুত তরীকে কোলে তুলে নিলো। পাশ করার খুশিতে বেহুশ হয়ে গেল মেয়েটা? কী সাংঘাতিক ব্যাপার!তরীকে নিয়ে নিশ্চয়ই পত্রিকায় কলাম ছাপা হবে। টাইটেল হবে, ‎❝ পাশ করার খুশিতে বেহুশ হয়ে স্বামীর কোলে ঢলে পরেছেন হবু একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী নাভানা রশিদ তরী!❞

চলবে…