নিকৃষ্ট মানব বাসনা পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
1867

#নিকৃষ্ট_মানব_বাসনা
অন্তিম পর্ব
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়

শালিক কল কাটলো।থানার সামনে দীর্ঘক্ষন বসে রইলো।রেশমির দেখা নেই।এক পর্যায়ে শালিক বিরক্ত হয়ে রিক্সা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।মনে ক্ষীণ সন্দেহ হলো,রেশমি এতোবার করে বারণ কেনো করছে!আর বারবার বলছিলো বাজেভাবে ফেঁসে যাবে,কি এমন হয়েছে তাদের মধ্যে যে ফেঁসে যাবে?

শালিক সন্ধায় রেশমির নাম্বারে কল দিলো।কয়েকবার রিং হওয়ার পর রেশমি কল রিসিভ করলে শালিক কঠিন স্বরে

” তুই আসলি না কেনো? ”

রেশমি চুপ করে রইলো।শালিক বললো ” কি হলো কিছু বলছিস না যে? তুই ঠিক আছিস? ”

” হুম ”

” কতক্ষণ বসে ছিলাম থানার সামনে।তুই আসলি না কেনো? ”

” শালিক, তুই কি এ বিষয়ে তোর বাবাকে কিছু বলেছিস? ”

” না তো।কেনো? ”

” সত্যিই বলিসনি? ”

” না বলিনি।বাবাকে কিভাবে এই বিষয়ে বলবো? ”

” তবে….. ”

কিছু একটা বলে রেশমি চুপ হয়ে গেলো।শালিক জিগ্যেস করলো

” তবে কি? ”

রেশমির স্বর জ”ড়িয়ে এলো।জরানো স্বরে বললো ” ন..না,কিছু না ”

” কাল আমি আসবো তোর মেসে।আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।বাবা দোষী,তার শাস্তি প্রাপ্য! ”

রেশমির হাসির শব্দ ভেসে এলো।শালিক হতভম্ব হয়ে বললো ” তুই হাসছিস? ”

” মানুষটাই থাকবে না,শাস্তি দিয়ে করবি কি ”

” মানে? ”

” কাল এলে বলবো ”

” তুই ঠিক আছিস রেশমি? তোর কথাবার্তা কেমন যেন লাগছে ”

” আমি ঠিক আছি।আজ থেকে মহাসুখে থাকবো।কলঙ্ক ধুয়েমুছে ছাফ করে ফেলবো।কাল এলে কথা হচ্ছে তাহলে,এখন রাখি ”

“হু ”

শালিক কল কাটলো।প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে।ঘর অন্ধকার করে বসে আছে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।অচেনা নাম্বার।কল রিসিভ করলে

” উপজেলা থানা থেকে বলছি ”

শালিক কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।নিজেকে সামলে ” জি বলুন ”

” আপনি গত পরশু রাতে কল করে একজনের নামে রিপোর্ট করিয়েছিলেন ”

” জি ”

” আপনি বলেছেন পরেরদিন ভোরেই থানায় উপস্থিত হবেন।আমরা ঠিকানা অনুযায়ী দোষীকে এরেস্টের চেষ্টা করেছি।আপনার পক্ষ থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে অপমানিত হয়েছি।ফেন বন্ধ কেনো আপনার? ”

শালিক বুঝে উঠতে পারলো না এখন কি বলবে।রেশমি বারবার বলে দিয়েছে পুলিশি ঝামেলায় না জরাতে।ও তো জানেনা আমি আগেই পুলিশকে বিষয়টা জানিয়েছি।ফোনের ওপাশ থেকে

” আপনি কি কোনো ট্রাপে আছেন?আপনার পরিচয়, ঠিকানা বলুন।আমরা চেষ্টা করবো ”

” স্যার আপাতত আমি অভিযোগ তুলে নিতে চাচ্ছি ”

পুলিশ অফিসার কঠিন স্বরে ” থানাকে কি আপনাদের হোটেল মনে হয়? ইচ্ছে হলো অর্ডার দিলেন,ইচ্ছে হলো অর্ডার ফিরিয়ে নিলেন ”

” স্যার আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ”

” অভিযোগ ক্লোজ করছি তাহলে।ভবিষ্যতে যদি কোনো অসুবিধায় পড়েন তাহলে অবশ্যই জানাবেন ”

” অবশ্যই স্যার।ধন্যবাদ ”

কল কে”টে শালিক বড় একটা হাফ ছাড়লো।ঘরে মায়ের প্রবেশ।

” কোথায় ছিলিস সারাদিন? ”

” কলেজে ”

” সারাদিন কলেজে কি? ”

” কলেজ শেষ করে রেশমির মেসে ছিলাম ”

” ও পড়াতে আসছে না কেনো? ”

” আর আসবে না।সামনে পরিক্ষা,প্রিপারেশন নিবে ”

” ওর বেতন তো দেওয়া হয়নি ”

” কাল যাবো ওর মেসে।টাকাটা দাও,আমি দিয়ে দিবো ”

” আচ্ছা তোর বাবা ফিরুক,নিয়ে দিবোনি ”

” বাবা কোথায় গেছে ”

” কোথায় যে গেছে।কল দিলাম ফেন বন্ধ।সেই সকালে গেছে। বাপ মেয়ে দুজনেই লাপাত্তা,ভয়ে আমার হাত পা শুকিয়ে গেছে ”

” ভয়ে মানুষের মুখ শুকায়,তোমার হাত পা শুকায়? ”

” একদম মজা করবি না।তোর ফোন বন্ধ কেনো? ”

” চার্জ ছিলো না ”

” সারারাত ভুতের মতো ফোন দেখিস,চেহারার কি অবস্থা করছিস ”

” আমায় ভুত লাগলেও তোমায় কিন্তু আজ দারুণ সুন্দর লাগছে।কোন শাড়ি পড়েছো এটা? ”
” বের করা শাড়িটাই তো পড়েছি ”

” সুন্দর লাগছে দেখতে।একটু মাথা টিপে দাও তো,মাথা ধরেছে খুব ”

শালিক বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো,মা মাথা টিপে দিচ্ছে।

পরেরদিন সকালে শালিকের ঘুম ভেঙ্গলো মায়ের ডাকে।মায়ের দিকে তাকিয়ে

” কি হয়েছে মা? ”

” তোর বান্ধবী রেশমি নাকি গ”লায় দরি দিছে।এলাকায় তো তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ”

শালিকের শরীর কেঁপে উঠলো।আজ তো ওর সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিলো।শালিক বিস্মিত হয়ে

” কি বলছো,রেশমি? ”

” হ্যা।মোড়ের দোকানে সবাই বলাবলি করছিলো।ব”ডি নাকি পুলিশ নিয়ে গেছে ”

” ওর সাথে তো কাল রাতেও কথা হলো।আজ আমাদের দেখা হওয়ার কথা ”

” আজকালকার মেয়েদের মনে যে কি চলে।কি এমন হলো যে জীবন দিতে হলো!শুনে থেকে মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে।কতো লক্ষী মেয়েটা ”

শালিক থম মেরে বসে রইলো।আকষ্মিক এতবড় একটা সংবাদ তার হজম করতে সময় লাগছে।রেশমি সত্যিই সুই”সাইড করেছে!শালিক মনে মনে ভাবে ” তবে কি ওর মৃ”ত্যুর কারণ বাবা!কাল সারাদিন নাকি বাবা বাসায় ছিলো না।রেশমিও আমায় বললো থানার সামনে আসবে,কিন্তু আসেনি।বাবা কি রেশমির সাথে দেখা করেছে?কি কথা হয়েছিলো তাদের মধ্যে যে রাতারাতি মর”ণঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে হলো! ”

এরপর কেটে গেলো তিন বছর।আজ শালিকের বিয়ে।বিদায় বেলায় শালিককে জরিয়ে ধরে মায়ের রোনাজারি ” তোর বাবার কত ইচ্ছে ছিল ধুমধামে তোর বিয়ে দিবে।সেই যে হারিয়ে গেলো,আর দেখা নাই লোকটার! ”

শালিকের বাবার দেখা সত্যিই নেই।রেশমির আ”ত্নহ”ত্যার দিন থেকেই তিনি নিখোঁজ।পুলিশও অনেক খুঁজেছে,পায়নি।এই কয়েক বছরেও তিনি বাড়ির কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।হঠাৎ করেই একটা মানুষ পুরোপুরি হারিয়ে যায় কিকরে এ এক বিষ্ময়।

শালিকের ধারণা রেশমির সাথে তার বাবার যোগাযোগের পরই রেশমি আ”ত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়।কিন্তু কি এমন হয়েছিলো সেটা জানার আগ্রহ শালিকের রয়েই যায়।

————সমাপ্ত——————