নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১০.
নিতুনের পাশের চেয়ারে বই হাতে বসে আছে স্নেহা। খোলা পৃষ্ঠার হাইলাইট করা লাইনগুলো হতে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে ও। তবে বেশিরভাগ জানা প্রশ্নের উত্তরও নিতুন ঠিকঠাক দিতে পারছে না। এর পিছনে কারণ হলো তার অমনোযোগী আচরণ। আপাতত তার সবটুকু মনযোগ মিসের কানের দিকে। সে ভূত দেখার মতো মুখ করে মিসের কানের দিকে তাকিয়ে আছে। যথাযথ জবাব না পেয়ে নিতুনের দিকে তাকাতেই স্নেহা লক্ষ্য করে ব্যাপারটা। তার খেয়াল হয় যে তখন ক্যাম্পাসের সামনে চুল খোপা করার পর সেই চুল খোলার কথা আর মনে ছিল না তার। এর আগে যেদিন পড়াতে এসেছিল সেদিন তো খোলা চুল দিয়ে কান ঢেকে রেখেছিল সে। কিন্তু আজ অসাবধানবশত ব্যাপারটা মাথা থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এখন নিতুনের এই কৌতূহলের মুখে পড়তে হলো তার। মিসকে তাকাতে দেখে নিতুন আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে বসে,
“মিস, আপনার কি গতকাল এক্সিডেন্ট হয়েছে কোনো? এজন্যই আসেন নি? কানে কি বেশি ব্যথা পেয়েছেন?”
নিতুনের প্রশ্নের পিঠে স্নেহা থমথমে গলায় জবাব দেয়,
“পড়ার বাহিরে অন্য কোনো বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছি আমি তোমাকে।”
“হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে দেখে চিন্তা হচ্ছে বলে আমি প্রশ্ন করলাম।”
“তোমার এসব জেনে লাভ নেই। পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি আরেকবার রিভিশন দিয়ে নাও। এবার পড়া ধরলে যদি না পারো তাহলে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না।”
নিতুনের আর সাহস হয় না মিসকে ঘাটানোর। তবে তার কৌতূহলও দমে না। অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারের প্রতি তার আগ্রহ বরাবরই বেশি। তাই তো বইয়ের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে কল্পনা করতে থাকে মিসের সঙ্গে কী হয়েছে? সাভারে কী কানকাটা ছিনতাইকারীর আনাগোনা শুরু হয়েছে? তারা কী দিনে দুপুরে মেয়েদের কান কেটে দেয়? কী ভয়ংকর ব্যাপার! ভাইয়া ফিরলে ভাইয়াকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে হবে।
__________
ঢাকা শহরে অবস্থিত রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের বিকেল বেলার দৃশ্য। উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল এবং সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেন্টারেই বর্তমানে অবস্থান করছে সামিউল। একটা টি শার্ট এবং ট্রাউজার পরিহিত তার চোখে মুখে ঘুম এবং বিরক্তির ছাপ। তার হাতে রয়েছে একটা কাগজ এবং কলম। সেল্ফ রিফ্লেকশন নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে সকলকে। অন্যরা খোলা অডিটোরিয়ামের মেঝেতে বসে লেখায় মশগুল হলেও সামিউলের সেদিকে ধ্যান নেই। সে ভিন্ন এক জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে-ই জগত জুড়ে কেবল ক্ষোভ, প্রতিহিংসা এবং আগুন জ্বলজ্বল করছে। ভাবনায় ডুবে থাকা সামিউলের হাতের কলম যেন আপন গতিতে চলছে। কাগজ জুড়ে অদ্ভুৎ সব আঁকিবুকি করছে। তার ঠোঁট দুটো কণ্ঠে প্রবল ঘৃণা নিয়ে বিড়বিড়িয়ে উঠে,
“আমাকে এই জাহান্নামে পাঠিয়ে তুই গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছিস! তোকে সামনে পেলে আমি তোর হাজারটা টুকরা করবো। হাজারটা!”
প্রচণ্ড ক্রোধ থেকেই সামিউল হাতের কলমটা আছড়ে ফেলে। তার পাশে বসে থাকা উনিশ বছর বয়সী রবী ব্যাপারটা লক্ষ্য করে প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?”
সামিউল চোয়াল শক্ত রেখে জবাব দেয়,
“এই জাহান্নামের মতো জায়গাটা অসহ্যকর লাগছে আমার।”
রবী অবাক হয়ে চারিপাশে তাকায়। জাহান্নামের মতো জায়গা? সামিউলের কথার সঙ্গে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের পরিবেশের আকাশ পাতাল তফাৎ। প্রাকৃতিক এবং পরিষ্কার পরিবেশের এই জায়গাটাকে মোটেও জাহান্নাম তূল্য বলা যায় না। বরং এই সুন্দর জায়গাটা একটা চমৎকার নিয়ম এবং রুটিনের মধ্যে দিয়ে চলে। সময়মতো খাবার দেওয়া হয়, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন এক্টিভিটিস করানো হয়, সময়মতো কাউন্সিলিং করানো হয়, বিশাল প্রজেক্টরে মুভি দেখার সুযোগ রয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে বাগানে মুক্ত পরিবেশে হাঁটার সুযোগও রয়েছে। এতো চমৎকার পরিবেশ এবং নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়া অসংখ্য মানুষ নিজের আসক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। রবীও তাদের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘ সাত মাস রিহ্যাবে থাকার পর এখন সে প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে। এইতো আর একটা মাস! তারপরই সে ফিরে যেতে পারবে নিজের পরিবারের কাছে। রবী ভালো করেই জানে প্রথম প্রথম সকলেরই এখানে মানিয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হয়। তাই সে একজন বড়ো ভাইয়ের ন্যায় সামিউলের পিঠ চাপড়ে দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করে বলে,
“তুমি বোধহয় এখানে থাকাটাকে শাস্তি হিসেবে ভাবছো। কিন্তু এটা শাস্তি নয় বরং একটা সুযোগ তোমার জন্য। সকলে এ-ই সুযোগ পায় না, বোকা। যে-ই জিনিসে আসক্ত হয়ে আমরা সবাই এখানে আসি সেটা আমাদের ধ্বংস। এই-যে এই জায়গাটা দেখছো, এখানে আমাদের সে-ই ধ্বংস ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। আমি জানি নেশার আসক্তি ছাড়ার যন্ত্রণা কতটুকু। কিন্তু সে-ই যন্ত্রণা সহ্য করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাশক্তি না থাকলে কেউ-ই তোমাকে সুস্থ করে তুলতে পারবে না। বুঝলে?”
সামিউল মনে স্নেহার প্রতি পুষে রাখা ক্রোধ নিয়েই রবীর দিকে তাকায়। রবীর এতো কথার ভীড়ে শেষ কথাটাই তার কানে বাজলো। এই লোক কি তাকে অসুস্থ বললো? সামিউল কিছু বলার পূর্বেই তাদের সামনে এসে উপস্থিত হয় একজন কাউন্সিলর। ভদ্রলোক আশপাশেই ঘুরঘুর করায় রবীর কথাগুলো উনার কানে গিয়েছেন। তিনি সপ্রতিভ হেসে বলেন,
“কি চমৎকার উপলব্ধি! রবী, তুমি কিন্তু চাইলে আমাদের সেন্টারেই কাউন্সিলর হিসেবে জয়েন করার যোগ্যতা রাখো। তোমার ইম্প্রুভমেন্ট আসলেই চোখে পড়ার মতো!”
রবী সামান্য হেসে বলে,
“আপনাদের কারণে সম্ভব হয়েছে, স্যার।”
রবী এবং কাউন্সিলরের এতো ইতিবাচক কথা সামিউলের পছন্দ হয় না। সে ডুব দেয় অন্য ধ্যানে। যেখানে সে নিজের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশটা কীভাবে করবে সে-ই পরিকল্পনা করছে।
__________
নিতুনকে পড়ানো শেষে সবেই বাসা থেকে বেরিয়েছে স্নেহা। গেট পাড় করে বাড়ির আঙিনার বাহিরে পা রাখতেই সে দেখে একটা বাইক এসে থেমেছে তার সামনে। হুট করে সামনে এরকম বাইক এসে থামা দেখে স্নেহা ক্ষেপে যেতো যদি না বাইকে থাকা ব্যক্তিটি পুলিশের পোশাক পরিহিত হতো। ব্যক্তিটা কে হতে পারে তা আন্দাজ করেই স্নেহা নীরবে পাশ কেটে চলে যেতে চাচ্ছিলো। তবে অয়ন বাইকের চাবিটা ঘুরিয়ে হেলমেট খুলতে খুলতে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, মিস। কেমন আছেন? ভালো হলো যে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো।”
স্নেহা পা থামিয়ে দাঁড়ায়। অয়নের উচ্চারিত তৃতীয় বাক্যটা কানে যেতেই যেন তার কিছু একটা মনে পড়ে যায়। সে অয়নের দিকে ফিরে নিমপাতার মতো মুখ করে সালামের জবাব নিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্নটাকে উপেক্ষা করে গিয়ে বলে,
“টাকার জন্য ডেকেছেন না? আমার মনে আছে। এক মিনিট দাঁড়ান…”
বলতে বলতে স্নেহা নিজের কাধে ঝুলন্ত টোটে ব্যাগটার ভেতর উঁকি দিয়ে ওয়ালেট খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্নেহার ব্যাগকে একটা ছোটখাটো খিচুড়ির হাড়ি বলা যায়। খিচুড়িতে যেমন চাল, ডাল, সবজি, মাংস, মশলা সব পাওয়া যায় তেমন স্নেহার ব্যাগেও মোটামুটি সবই পাওয়া যায়। এভাবে দাঁড়িয়ে হয়রান হয়ে ব্যাগে ওয়ালেট খুঁজে না পেয়ে স্নেহার মেজাজ খারাপ হয়। সে ব্যাগটা কাধ থেকে নামিয়ে অয়নের বাইকের সামনের অংশের উপর রেখে ভেতরে ওয়ালেট অভিযান চালানো শুরু করে। অয়ন তখনও হেলমেট হাতে বাইকে বসে বিস্মিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে স্নেহার পানে। সে তো কেবল নিতুনকে নিয়ে একটু কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু এই মেয়ে সেটাকে টাকার দিকে টেনে নিয়ে গেলো? হতাশ অয়ন কিছু বলার সুযোগ পায় না। তার আগেই স্নেহা ব্যাগ হাতড়ে একে একে অপ্রয়োজনীয় জিনিস ঘাটতে থাকে।
একটা পানির বোতল, কিছু সেন্টার ফ্রেশের প্যাকেট, একটা নোটপ্যাড, দুটো কলম, একটা ফোন, একটা মোটা বই, নাপা, হিস্টাসিন, ঝাণ্ডু বাম, একটা ক্ল ক্লিপ, একটা ভ্যাসলিনের কৌটা, ইয়ারফোন, একটা পেপার কাটার, ২৫০ এমএল এর একটা পেপার স্প্রের বোতল, একটা গোলাকার হাতপাখা এবং একটা আপেল। অয়নের সামনেই ব্যাগ রেখে খোঁজায় এতসব বিচিত্র জিনিস অয়নের অদেখা রয় না। বিস্ময়ে তার মুখ হা হয়ে আসে। এই সাদা রঙের টোটে ব্যাগের ভেতর এতো কিছু আছে তা বাহির থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই। তবে স্বস্তির বিষয় হলো চিরুনী অভিযান চালিয়ে এসবের ভীড়ে স্নেহা নিজের ছোট্ট ওয়ালেট খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। সে ব্যাগটা নিজের কাধে তুলে ওয়ালেট থেকে দুটো একশো টাকার নোট বের করে অয়নকে ইশারা করে নেওয়ার জন্য।
অয়ন ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ সেই টাকার নোট দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে, অতঃপর চোখ তুলে স্নেহার মুখের পানে তাকায়। স্নেহা বিরক্তি নিয়ে আবারও ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে নোট দুটো রাখার জন্য। অয়ন না চাইতেও কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
“আমি তো টাকার জন্য ডাকি নি।”
স্নেহার কপালে গুণে গুণে চারটা ভাজ পড়ে। সে প্রশ্ন করে,
“তাহলে?”
“আমি তো এভাবেই হালচাল জিজ্ঞেস করতে এবং নিতুনের ব্যাপারে কথা বলতে ডেকেছিলাম।”
স্নেহার গরম মেজাজে তেল ঢালার মতো কাজ করে অয়নের কথা। সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
“তাহলে এতক্ষণ চুপ ছিলেন কেন? আমি যখন গাধার মতো ব্যাগে ওয়ালেট খুঁজে মরছিলাম, তখন এটা বলতে পারেন নি? মুখে তালা মেরে তাকিয়ে কি তামাশা দেখছিলেন?”
অয়নের সঙ্গে কেউ কখনো এই টোনে কথা বলে নি। এরকম ঝাঁঝাল টোনে সে অভ্যস্তও নয়। তা-ই কিছুটা ভড়কে যায় সে। দ্বিধায় পড়ে যায় যে সে কি ভুল কিছু করলো না-কি। চরম রাগ নিয়েই স্নেহা ব্যাগে ওয়ালেটটা ভরে উল্টো রাস্তা ধরে হাঁটতে নিলে অয়ন মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আমার টাকা…”
কথাটুকু বলে অয়ন নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এটা কী বললো সে? কেনই বা বললো? ছিঃ, কি ছ্যাচড়াদের মতো টাকা চেয়ে বসলো সে! অয়ন তো সরি বলতে যাচ্ছিলো। নার্ভাস হয়ে যাওয়ায় মুখ দিয়ে ভুলভাল কথা বেরিয়ে গিয়েছে তার। স্নেহা ততক্ষণে থেমেছে। ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় থাকা নোট দুটো অয়নের দিকে এগিয়ে দিয়ে ধরে। অয়নের মুখখানা এবার অসহায় দেখায়। সে কিছুটা ভীত গলায় বলে,
“এখানে এক টাকা বেশি আছে। আমি এটা নিতে পারবো না। দেওয়ার হলে যত পাওনা, কড়ায় গণ্ডায় সেটুকুই দিবেন।”
স্নেহা নিজের দু চোখ বুজে নিলো। রাগে তার কপালের শিরা দপদপ করতে শুরু করেছে। মনে মনে নিজের রুমমেট ঐন্দ্রিলার গোষ্ঠী উদ্ধার করছে সে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে ওই মেয়ের মুখদর্শন হয়েছিল তার। সুন্দর মানুষের মুখ দেখে দিনটা সুন্দর ভাবে অতিবাহিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখানে ঘটনা ঘটে গেলো উল্টো। তার দিনটা কাটছে পাগল ছাগলদের খপ্পরে পড়ে। কি এক জ্বালা!
স্নেহাকে চোখ বুজে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে অয়ন আরেকটু ভয় পেল। আশ্চর্য! মেয়েটা রেগে গেলো কেন? অয়ন ভাবলো এখানে কথা না বাড়িয়ে আস্তে করে কেটে পড়াটা সমীচীন হবে। তবে সে সে-ই সুযোগ পেলো না। তার আগেই স্নেহার ভয়ংকর রাগের সম্মুখীন হতে হলো তাকে। স্নেহা ফট করে চোখ খুলে দু কদম এগিয়ে এসে ঠিক বাইক এবং অয়নের মুখোমুখি দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“আমি ঢ্যামনা মানুষ অপছন্দ করি। কথাটা মাথায় রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই স্নেহা সেখান থেকে প্রস্থান করলো। অয়ন পাথরের মূর্তির ন্যায় নিজের জায়গায় স্থির রইল। তাকে ঢ্যামনা বলা হয়েছে এটা তাকে মোটেও রাগিয়ে দিচ্ছে না। বরং স্নেহার চোখ থেকে ঝরে পড়া রাগ, ঘেমে থাকা রণচণ্ডী রূপ এবং সে-ই সঙ্গে ঝাঁঝাল কথার ধরণে সে আটকে রইল। যেন সাধারণের মাঝে কোনো অসাধারণ ব্যাপার সেটা।
__________
সময়টা তখন প্রায় সন্ধ্যা। ভারী পর্দা, গাঢ় কাঠের আসবাব এবং বইয়ের তাক দিয়ে মোড়া রুমটিতে যেন রাজনীতির অভিজাত সৌন্দর্য আর প্রভাব একসঙ্গে ফুটে উঠেছে। মাঝখানে গাঢ় মেহগনি কাঠের তৈরী টেবিলে বসে আছেন এমপি আখতারুজ্জামান সাহেব। বয়স্ক রাজনীতিবীদ হলেও উনার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, বরং অভিজ্ঞতা এবং ক্ষমতার অদৃশ্য চিহ্ন বহন করছে। হাতের সাদা কাপে থাকা গরম গরম মালাই চা থেকে উষ্ণ ধোঁয়া উঠছে। সে-ই গরম চায়ের কাপেই এক চুমুক বসিয়ে আমোদে চোখ বুজে নেন তিনি। ঠিক তখনই উনার রুমে প্রবেশ করেন উনার সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া। চোখেমুখে সচেতন উত্তেজনা নিয়ে সেক্রেটারি বলে,
“স্যার…”
জাহাঙ্গীর কিছুটা তোতলাচ্ছে। সামান্য দুঃশ্চিন্তায় তোতলানো তার বহু পুরনো অভ্যাস। আখতারুজ্জামান চোখ তুলে তাকান। হাতের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে উনি বলেন,
“বলো।”
“এইমাত্র খ… খবর পেলাম, স্যার। ওই যে র… র… রাসেল, যাকে আটক করা হয়েছে। এএসপি ওকে এখনো ছেড়ে দেয় নি।”
এক মুহূর্ত নীরব রইলো এমপি আখতারুজ্জামান। অতঃপর সামান্য হেসে বলেন,
“নাদান ছেলে মানুষ! নতুন নতুন বদলি হয়ে ঢাকায় এসে বোধহয় রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝতে পারছে না। আহারে! ডিসি সাহেবের আলাভোলা ছেলেটা! পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে জড়িয়ে যে রাজনীতি বুঝে না, সে বেশিদিন টিকে না।”
জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া মাথা নেড়ে বলে,
“স্যার, এখন কী ক… করবেন? ছেলেটাকে ধরে রাখলে আপনার অনেক খবরই কিন্তু ব… বের করতে সক্ষম হবে উনারা। অলরেডি মনে হয় রাসেলের ফোন চেকিং এ চলে গিয়েছে।”
আখতারুজ্জামান চোখে মুখে অভিজ্ঞতার ছাপ নিয়ে বলে,
“উকিল সাহেবকে কল করো। উনাকে সামলাতে বলো এসব। এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে নিজেও স্ট্রেস নিবে না এবং আমার মাথাও খেতে আসবে না। বুঝতে পেরেছো?”
“জ্বি, স্যার।”
জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া বেরিয়ে যায়। আখতারুজ্জামান সাহেব চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক বসিয়ে ফোন হাতে তুলে নেন। অতঃপর কাউকে ফোন করে কিছু একটা বুঝিয়ে দেন তিনি।
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]